Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (পঞ্চম পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (পঞ্চম পর্ব)


    যেহেতু ইসলামে দাসপ্রথা বহাল রাখার প্রধান কারণ হলো- তাদেরকে মুসলমানদের সংস্পর্শে রেখে ইসলামগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, এজন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসদের সাথে সদাচারের প্রতি খুব বেশী উৎসাহিত করেছেন, এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। মনিব নিজে যে মানের খাবার খায় গোলামকেও সেই মানের খাবার খাওয়াতে বলেছেন। মনিব নিজে যে ধরণের পোশাক পরে তাকেও সেই ধরণের পোশাক সরবরাহ করার আদেশ দিয়েছেন। -সহিহ বুখারী, ৩০ সহিহ মুসলিম, ১৬৬১। এমনকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায়ও বারংবার একথা বলছিলেন, الصلاة وما ملكت أيمانكم “তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হও এবং দাসদাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো।” -সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৬২৫

    বলাবাহুল্য, মুসলমfনদের সংস্পর্শে থেকে যখন বন্দী দাস-দাসীরা তাদের উত্তম জীবনাচার প্রত্যক্ষ করবে, বিশেষকরে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে দেখবে, পাশাপাশি মুসলমানদের অধীনে থাকার দরুন ইসলাম গ্রহণে অন্য কোন বাধাও থাকবে না, তখন তারা সহজেই ইসলাম গ্রহণ করবে।

    ইসলামের স্বর্ণযুগে আমরা এমনটাই দেখতে পাই। সাহাবা-তাবেয়ীগণ যে কাফেরদের বন্দী করে এনেছেন তারা প্রায় সকলেই মুসলমfন হয়ে গিয়েছিলেন। বরং তাঁরা নিজেরা কিংবা তাদের সন্তানরা বড় বড় আলেম-সেনাপতি-আমির হয়ে ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। যদি এদেরকে গোলাম-বাঁদী না বানানো হতো তাহলে হয়তো তারা সারাজীবন কাফেরই থেকে যেতো।

    এখন ভাবার বিষয় হলো দুটোর মধ্য কোনটা উত্তম:-
    ১:- ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে কিছুদিনের জন্য গোলাম হওয়ার লাঞ্ছনা ও যিল্লতি সহ্য করা। বিনিময়ে মুমিন হয়ে চিরস্থায়ী আখেরাতের সফলতা লাভ।
    ২:- দুনিয়াতে গোলাম হওয়ার লাঞ্ছনা ও যিল্লতি হতে বেঁচে থাকা, বিনিময়ে আখেরাতে চিরস্থায়ী জাহান্নামে প্রবেশ করা।

    যে ব্যক্তি নিজের বিবেক-বুদ্ধি কাফেরদের নিকট গচ্ছিত রাখেনি তার বুঝতে বাকী থাকার কথা নয় যে, প্রথমটির সাথে দ্বিতীয়টার কোন তুলনাই চলে না। শায়েখ আনোয়ার আওলাকীর ভাষায়, “যদি আমার পূর্বপুরুষকে খালেদ বিন ওয়ালিদ রাযি. গোলাম বানিয়ে তার দ্বারা নিজের জুতোও পরিষ্কার করিয়ে থাকেন, তবুও তাতে আমি খুশি, কেননা এটা তার জন্য কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে জাহান্নামে যাওয়ার চেয়ে ভালো।”

    তবে যেহেতু দাস-দাসী বানানো হলো ইসলাম গ্রহণের মাধ্যম, তাই ইসলাম চায় না, দাস-দাসীরা চিরকাল দাস হিসেবেই জীবনযাপন করুক, এজন্য ইসলামে দাস মুক্তির (বিশেষ করে মুসলিম দাস মুক্তির) বহু ফযীলত ও বিধান রয়েছে। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কোন মুমিন দাসকে আযাদ করবে তো দাসের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে।”-সহিহ বুখারী ২৫১৭ সহিহ মুসলিম, ১৫০৯ সহিহ বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, “এ হাদিস শুনে আলী বিন হুসাইন রহ. দশহাজার দিরহামের বিনিময়ে খরিদকৃত একটি দাসকে আযাদ করে দেন।” -সহিহ বুখারী, ২৫১৭

    যে ব্যক্তিকে দাসীকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার পরে আযাদ করে বিয়ে করে তাকে দ্বিগুণ সওয়াবের ওয়াদা প্রদান করা হয়েছে। -সহিহ বুখারী, ৯৭ সহিহ মুসলিম, ১৫৪

    দাসী যদি মনিবের ঔরসে সন্তান জন্মদান করে তবে সে মনিবের মৃত্যুর পরে আযাদ হয়ে যায়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৫১৬ মুসনাদে আহমদ, ২৭৫৯

    দাসদাসীরা যদি মুকাতাবাত তথা বিনিময় প্রদানের শর্তে আযাদ হওয়ার চুক্তি করতে চায় তবে মনিবদেরকে এ চুক্তি মঞ্জুর করার আদেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মনিব ও অন্যান্য মুসলমানদের এই চুক্তির বিনিময় আদায়ের ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। বরং এটাকে যাকাতের একটি মাসরাফ-খাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। -সুরা নুর, ২৪ সুরা তাওবা ৬০

    তেমনিভাবে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিস্বরূপ দাস আযাদ করার আদেশ করা হয়েছে। যেমন:-

    ক. কেউ যদি কোন মুসলমানকে ভুলে হত্যা করে ফেলে তাহলে তার অপরাধের কাফফারা হলো একটি মুসলিম দাস আযাদ করা, দাস আযাদ করার সামর্থ্য না থাকলে দুইমাস লাগাতার রোযা রাখা। -সুরা নিসা, ৯২

    খ. কেউ স্ত্রীর সাথে যিহার করলে অর্থাৎ স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করলেও তার কাফফারা হলো সামর্থ্য থাকলে দাস আযাদ করা। -সুরা মুজাদালা, ৩

    গ. কেউ যদি রমযান মাসে ইচ্ছাকৃত রোযা ভেঙ্গে ফেলে তবে তার কাফফারাও হলো সামর্থ্য থাকলে দাস আযাদ করা। - সহিহ বুখারী, ১৯৩৬ সহিহ মুসলিম, ১১১১

    হাদিসে এসেছে, “কেউ যদি দাসকে থাপ্পড় মারে কিংবা প্রহার করে তো এর কাফফারা হলো তাকে আযাদ করে দেওয়া।” -সহিহ মুসলিম, ১৬৫৭

    উল্লিখিত হাদিসসমূহের কারণে সাহাবায়ে কেরাম ব্যাপক পরিমাণে দাস আযাদ করতেন, বিশেষকরে দাসদের ইসলাম গ্রহণের পর। মুয়াজ রাযি. একবার কিছু ক্রীতদাস হাদিয়া পান। তিনি নামায পড়তে দাঁড়ালে তারা পিছনে ইক্তেদা করতে আসে। তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, তোমরা কার জন্য নামায পড়ো? তারা বলে, আল্লাহর জন্য। এ কথা শুনে মুয়াজ বললেন, তবে যাও তোমরাও আল্লাহর জন্য (আযাদ)। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, ২২৩৯৩

    প্রসিদ্ধ সাহাবী হাতেব বিন আবী বালতাআ রাযি. মৃত্যুর সময় তার দাস-দাসীদের মধ্যে যারা নামায পড়ে, রোযা রাখে তাদের আযাদ করে দেয়ার ওসিয়্যত করে যান। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, ১৩৬৪৪ ও ১৩৬৪৫

    সারকথা হলো, দাসপ্রথার মাধ্যমে ইসলাম কাফেরদের মুসলমান বানানোর জন্য একটি পরিপূর্ণ নেযাম বা সিস্টেম তৈরি করেছে, যার সূচনা হবে তাদেরকে যুদ্ধবন্দী করে দাস বানানোর মাধ্যমে, আর সমাপ্তি হবে তাদেরকে আযাদ করা -বিশেষকরে ইসলাম গ্রহণ করার পরে- আযাদ করার মাধ্যমে। আর মাঝখানে তাদের সাথে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সদাচার করা হবে ইসলামের প্রতি তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যে। উল্লিখিত হাদিসগুলোর সমষ্টি থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি। এক্ষেত্রে ভুল ধারণা তৈরির কারণ হলো, অনেকেই শুধু দাস-দাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার কিংবা তাদেরকে আযাদ করার প্রতি উৎসাহিত করার হাদিসগুলো লক্ষ্য করে, কিন্তু কাফেরদের দাস-দাসী বানানোর প্রতিও যে একাধিক হাদিসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তা জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে এড়িয়ে যায়, আর এভাবেই এ ব্যাপারে তাদের একটা খণ্ডিত ধারণা তৈরি হয়। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

    এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে, যদি কাফেরদের মুসলিম বানানোই ইসলামের দাসপ্রথা বহাল রাখার প্রধান কারণ হয় তবে ইসলাম গ্রহণকেই কেন তাদের মুক্তির কারণ হিসেবে নির্ধারণ করা হলো না? কেন ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই তারা আযাদ হয়ে যাবে না?

    এ প্রশ্নের একাধিক উত্তর হতে পারে, আমার মতে এর সবচেয়ে সুন্দর উত্তর হলো, যদি ইসলাম গ্রহণকেই দাসমুক্তির কারণ হিসেবে নির্ধারণ করা হতো, তাহলে সেটা অনেকটা ঘাড়ে তলোয়ার ধরে জোরপূর্বক মুসলমান বানানোর মতোই হতো। কেননা দাসত্ব এতই ঘৃণিত বিষয় যে, কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে দাসত্বের জীবনকে মেনে নিতে পারে না। তাই যদি ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই দাসরা আযাদ হয়ে যেতো, তবে ইসলাম সম্পর্কে অবগতির পূর্বেই দাসেরা শুধু মুক্তির জন্য ইসলাম গ্রহণ করতো। এরপর হয়তো তারা পালিয়ে কাফেরদের কাছে চলে যেতো কিংবা মুনাফিক হয়ে মুসলিম সমাজে বসবাস করে আমাদের ক্ষতিসাধন করতো। ফলে দাসপ্রথা বহাল রাখার অন্যতম উদ্দেশ্য, অর্থাৎ কিছুদিন দাস হিসেবে মুসলমানদের সংস্পর্শে থেকে ইসলামের সৌন্দর্যের ব্যাপারে অবগতি লাভের পাশাপাশি তাদের সাথে মুসলিমদের উত্তম আচরণ প্রত্যক্ষ করে আন্তরিকভাবে মুসলমান হওয়া- এ লক্ষ্য অধরাই রয়ে যেতো।
    চলবে ইনশাআল্লাহ


    ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (প্রথম পর্ব- ‘তলোয়ারে নয় উদারতায়’ শীর্ষক শ্লোগানের উৎপত্তি; সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)https://dawahilallah.com/showthread....%26%232488%3B)
    ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (দ্বিতীয় পর্ব- আক্রমণাত্মক জিহাদের হিকমত ও তাৎপর্য) https://dawahilallah.com/showthread....%26%232479%3B)
    ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (তৃতীয় পর্ব, জিযয়ার বিধানের হিকমত ও তাৎপর্য) https://dawahilallah.com/showthread....%26%232479%3B)
    ইসলামপ্রচারে তরবারীর ভূমিকা (চতুর্থ পর্ব:- দাসপ্রথা বহাল রাখার হিকমত ও তাৎপর্য) https://dawahilallah.com/showthread....%26%232479%3B)
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    মাশাআল্লাহ ভাই খুব সুন্দর আলোচনা করছেন ।।
    আল্লাহ তা আলা ভায়ের মেহনতগুলো কবুল করুন ।। আমিন
    মুমিনের একটাই স্লোগান,''হয়তো শরীয়াহ''নয়তো শাহাদাহ''

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহু আহসানাল জাযা ফিদ্দারাইন!
      ভাই! খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করলেন, অনেকদিন যাবৎ এটাই আশা করছিলাম।
      মুমিনদেরকে ক্বিতালের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ। আপনি ও 'ইলম ও জিহাদ' ভাই খুব সুন্দর উত্তম কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাদের এই মেহনতকে কবুল করুন ও আমাদেরকে যথাযথ ইস্তিফাদা অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
        আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
        জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
        বিইযনিল্লাহ!

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর আলোচনা৷

          Comment

          Working...
          X