Announcement

Collapse
No announcement yet.

সংশয় নিরসন সিরিজ_ জিহাদ সিরিজ _ * দ্বিতীয় সংশয়: জিহাদের শর্ত-ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তির গুহাম&#

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সংশয় নিরসন সিরিজ_ জিহাদ সিরিজ _ * দ্বিতীয় সংশয়: জিহাদের শর্ত-ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তির গুহাম&#






    সংশয় নিরসন সিরিজ-জিহাদ সিরিজ
    দ্বিতীয় সংশয়: জিহাদের শর্ত-ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তির গুহামুখ।

    ★★ বিশ্বজোড়ে মুসলমানরা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছে, সম্মিলিত ক্রুসেডার বাহিনীর সামরিক সংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক হামলার মুখে ইসলামের প্রদীপ আজ নিভু নিভু। দ্বীনের হিফাজতের একমাত্র জিহাদ হারিয়ে মুসলমানরা আজ বড়ই অসহায়, এহেন নাজুক পরিস্থিতে একথা অস্বীকার করা কোনো উপায় নেই, যে মুসলমানদের ঘুরে দাড়াঁনোর একমাত্র উপায় জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। কিন্তু পরম দুঃখের বিষয় হল যখনই আল্লাহর একদল বান্দা জিহাদের ঝান্ডা উচুঁ করতে চেয়েছে। একশ্রেনী পথহারা বিভ্রান্ত আলেম তাদেঁর পথে বাধাঁ হয়ে দাড়িঁয়েছে জিহাদের স্বচ্ছ বিধানকে তারা উম্মতের সামনে ঘোলাটে করে তুলেছে।

    " জিহাদের প্রশ্ন উঠলেই বলা হচ্চে শর্ত পাওয়া যায়নি। তাই জিহাদ করা হারাম।এমনকি কেউ ইদাদ বা জিহাদের প্রস্তুতি ও সামার্থ্য অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বললেও তাকে নানান কূটচালে থামিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। অথচ সালাতের শর্ত পাওয়া যায়নি বলে তারা কেউ সালাত থেকে বিরত থাকার কথা বলে না। বরং শর্তগুলো পূর্ণ করে তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করতে বলে।অজু না থাকলে অজু করে নিতে বলে। কাপড় নাপাক থাকলে পাক কাপড় সংগ্রহ করতে বলে।
    জিহাদ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ বিধান। এর অস্বীকারকারীরা যেমন কাফির তেমনি এতে মুজতাহিদ ফকিহদের নীতিবহির্ভূত কোনো তাবিলকারীও কাফির। সালাত, সওম, জাকাত ইত্যাদির শর্ত,হুকুম ও বিধান যেমন উম্মাহর ফকিহগণ সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন এবং মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে আমল করে এসেছেন, ঠিক তেমনি জিহাদের শর্ত ও বিধানসমূহও তাঁরা পরিস্কার ভাষায় বর্ণনা করেছেন। এতে কোনোরূপ সংশয়ের অকাশ নেই।
    কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হলো, জিহাদ থেকে বিরত থাকার মানসে বর্তমানে একশ্রেণির আলেম নিজেদের পক্ষ থেকে জিহাদের জন্য এমন সব শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, যার অস্তিত্ব সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ তো দূরের কথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কোনো কিতাবেও নেই। এমন অদ্ভুত সব শর্তের কথা বলছে, যা কিয়ামত পর্যন্ত পূর্ণ হবে না। ইদাদ ও জিহাদের প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করতে উম্মাহ ফকিহগণকে পাশ কাটিয়ে তারা ইচ্ছেমতো শর্ত তৈরি করছে আর উম্মতের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ইংরেজ-বিরোধী জিহাদকে থামিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে উপমহাদেশে সর্বপ্রথম এই ধরনের বাতিল শর্তের আবিস্কার করে কাদিয়ানিরা। পরবর্তীকালে কোনো কোনো হকপন্থী আলেমও নিজের অজান্তেই ফেঁসে যান কাদিয়ানিদের এই চক্রান্তে।
    আজ আমরা আলোচনা করব জিহাদের শর্ত নিয়ে। কুরআন-সুন্নাহ মন্থন করে উম্মাহর ফকিহগণ জিহাদের কী কী শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন তার ওপর সংক্ষেপে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব। ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে যত শর্তের কথা এসেছে সামান্য পর্যালোচনাসহ সবগুলো শর্ত আমাদের আলোচনায় থাকবে।

    জিহাদের শর্তসমূহ
    [[১]]
    মুসলমান হওয়া।
    উম্মাহর ফকিহগণ এ ব্যাপারে একমত যে জিহাদ ফরজ হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। কাফেরের জন্য জিহাদ নেই। ইমাম তাকে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে অভিযানে যাওয়ার অনুমতি দেবেন না। কেননা, জিহাদে কাফেরের অংশগ্রহণে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশষ্কাই প্রবল। উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হন, তখন এক মুশরিক মুসলমানদের পক্ষে অস্ত্র ধরার আগ্রহ প্রকাশ করে। তার বীরত্ব ও শক্তিমত্তার দিকে তাকিয়ে সাহাবারাও খুশি হন।
    ★ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করেন:
    تُوْمِنُ بِاللهِ وَرَسُوْلِه؟
    " তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ইমান রাখ? সে বলে, না।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
    فَرْجِعْ؛ فَلَنْ أَسْتَعِيْنَ بِمُشْرِكٍ
    " তবে ফিরে যাও। আমি কক্ষনো কোনো মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না।
    (সহিহ মুসলিম:১৮১৭)

    [[২]]
    হুঁশজ্ঞান ঠিক থাকা
    পাগল কখনো মুকাল্লাফ বা শরয়ি বিধান পালনে আদিষ্ট নয়। তাই তার জন্য জিহাদ নেই। হযরত আলি রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
    رُفِعَ القلمُ عن ثلاثةٍ عنِ النَّ ئمِ حَتَّی يستيقظَ وعنِ الصَّبيِّ حَتَّی يحتلمَ وعنِ المجنونِ حَتَّی يعقلَ
    " তিন ধরনের লোকের ওপর থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। ২. নাবালক, যতক্ষণ না সে সাবালক হয়। ৩. পাগল, যতক্ষণ না তার হুঁশজ্ঞান ফিরে আসে।
    (আবু দাউদ: ৪৪০৩)

    [[৩]]
    সাবালক হওয়া
    নাবালক শিশুর ওপরও জিহাদ ফরজ নয়। কারণ, সে মুকাল্লাফ নয়। তার শরীর যুদ্ধের উপযোগীও নয়। সাবালক হওয়া পর্যন্ত তার ওপর শরিয়তের হুকুম-আহকাম পালনের দায়িত্ব আসে না। আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযিআল্লাহু আনহু বলেন:
    عَرَ ضَنِي رَسُولُ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ فِي الْقِتَالِ وَأََنَاابْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ سَنَةً فَلَمْ يُجِزْنِي وَعَرَضَنِي يََوْمَ الْجَنْدَقِ وَأَنَا ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً فَأَجَازَني
    " উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। তখন আমার বয়স চৌদ্দ বছর। তিনি আমাকে (জিহাদের) অনুমতি দিলেন না। খন্দকের দিন তিনি আমাকে দেখলেন। তখন আমার বয়স পনের বছর। তিনি আমাকে (যুদ্ধে গমনের) অনুমতি দিলেন। (মুসলিম:১৮৬৮)
    * নাবালক হওয়ার কারণেই উসামা বিন জাইদ রাযিআল্লাহু আনহু, জাইদ বিন সাবিত রাযিআল্লাহু আনহু, জাইদ বিন আরকাম রাযিআল্লাহু আনহু ও বারা বিন আজিব রাযিআল্লাহু আনহু প্রমুখ সাহাবিগণ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

    [[৪]]
    পুরুষ হওয়া

    মহিলাদের ওপর জিহাদ ফরজ নয়। কেননা, তাদের শরীর যুদ্ধের উপযোগী নয়। হজরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়ামাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেন, 'হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম, মহিলাদের ওপর কি জিহাদের দায়িত্ব আছে? তিনি বললেন :
    نَعَمْ عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لَا قِتَالَ فِيْهِ اَلْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ
    " হ্যাঁ তাদের জন্যও জিহাদ আছে। তবে তা এমন জিহাদ, যাতে কোনো যুদ্ধ নেই। আর তা হলো, হজ ও ওমর। (মুসনাদু আহমাদ : ২৫৩২২; হাদিসটি সহিহ। এর রিজাল সবাই নির্ভরযোগ্য এবং সবাই বুখারি, মুসলিমের রাবি।)
    * তবে শর্ত সাপেক্ষে তারাও জিহাদে যেতে পারবে। উল্লেখ্য যে, জিহাদ যখন ফরজে কিফায়া থাকে, এটি তখনকার কথা। জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেলে তাদের জন্যও জিহাদে অংশগ্রহণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। উম্মাহর সর্বকালের সমস্ত ফকিহের ঐকমত্যে তিন অবস্থায় জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়:
    [[১]]
    কাফেররা যখন কোনো মুসলিম ভূমিতে আক্রমণ করে।
    [[২]]
    নাফিরে আম তথা খলিফা যখন কোনো ব্যক্তি বা গোত্রকে জিহাদের আহবান করে।
    [[৩]]
    মুসলিম ও কাফের বাহিনী যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়।

    * হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত ইমাম আল্লামা কাসানি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
    فَأَمَّا إذَا عَمَّالنَّفِيرُ بِأَنْ هَجَمَ الْعَدُوُّ عَلَی بَلَدٍ فَهُوَفَرْضُ عَيْنٍ يُفْتَرَضُ عَلَی كُلِّ وَاحِدٍ مِنْ آحَادِالْمُسْلِمِينَ مِمَّنْ هُوَ قَادِرٌعَاَيْهِ
    " শত্রুরা মুসলিম শহরে আক্রমণ করার কারণে যখন নাফিরে আম হয় তখন জিহাদ প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের ওপর (পুরুষ হোক কিংবা নারী) ফরজে আইন হয়ে যায়। (বাদায়িউস সানায়ি: ৭/৯৮)

    [[৫]]

    দৈহিক সক্ষমতা:
    শারীরিকভাবে অক্ষম ও দুর্বল ব্যক্তির ওপর জিহাদ ফরজ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
    لَيْسَ عَلَی الأَعْمَی حَرَجٌ وَلَا عَلَی الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَی الْمَرِيضِ حَرَجٌ
    " ( জিহাদে অংশগ্রহণ না করাতে) অন্ধের জন্য কোনো গুনাহ নেই ; খোঁড়ার জন্য কোনো গুনাহ নেই এবং রুগ্ন ব্যক্তির জন্যও কোনো গুনাহ নেই। ( সূরা ফাতহ: ১৭)
    * অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
    لَيْسَ عَلَی الضُّعَفَاء وَلاَ عَلی الْمرْضَی
    " (যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করাতে) দুর্বল লোকদের কোনো গুনাহ নেই এবং অসুস্থ লোকদেরও কোনো গুনাহ নেই....। (সূরা তাওবা: ৯১)
    * এই দুই আয়াতসহ অন্যান্য আয়াত, হাদিস ও শরিয়তের মূলনীতির আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম নিম্নোক্ত কয়েক শ্রেণির ব্যক্তিকে মাজুর বা অক্ষম বলে গণ্য করেছেন :
    ★ ১.অন্ধ। ২.খোঁড়া। ৩. অত্যধিক রুগ্ন। ৪.অতিশয় দুর্বল। ৫.অতি বৃদ্ধ ৬.পঙ্গু।

    ♦ উল্লেখ্য যে, এই সকল ব্যক্তি তখনই মাজুর ও অক্ষম বলে গণ্য হবে যখন এসব ওজর ও সমস্যা এমন পর্যায়ের হবে যে, তাদের পক্ষে আর যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। অতএব, হালকা-ঝাপসা দেখে, সামান্য খোঁড়া কিন্তু যুদ্ধ করতে সক্ষম, হালকা সাধারণ অসুস্থ, বৃদ্ধ হলেও এত বেশি বৃদ্ধ নয় যে, যুদ্ধ করতে অক্ষম, হাত-পায়ে ঈষৎ বিকলাঙ্গতা আছে কিন্তু যুদ্ধে সক্ষম এ ধরনের লোক অক্ষম হিসাবে গণ্য হবে না।
    (দেখুন, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/৫৮-৫৯; ফাতাওয়ায়ে শামি: ৬/২০১-২০৫; আল-মুগনি: ১০/৩৬৭)َ

    [[৬]]
    আর্থিক সক্ষমতা।
    পরিবারের ভরণপোষণের খরচ মিটিয়ে জিহাদের জন্য অস্ত্র ক্রয় ও রাহাখরচের সামর্থ্য থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
    وَلاَ عَلَی الَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ مَايُنفِقُونَ حَرَجٌ
    " যাদের কাছে (জিহাদে যাওয়ার জন্য) প্রয়োজনীয় অর্থ নেই তাদের কোনো অপরাধ নেই।
    (সূরা তাওবা:৯১)
    ♦ যুদ্ধ যদি আপন শহরের নিকটে হয় তবে জিহাদ ফরজ হবে। কারণ এক্ষেত্রে রাহাখরচের প্রয়োজন হচ্ছে না। আর যদি যুদ্ধক্ষেত্র এত দূরে হয় যে, তার যাওয়ার খরচ নেই এবং সেখানে পৌঁছার কোনো উপায়ও নেই, তখন তার জিহাদে অংশগ্রহণ করা ফরজ হবে না।
    আল্লাহ তায়ালা বলেন:
    وَلَا عَلَی الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتُ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِِلكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّاْوَّأَعْيُنُهُمْ تَفِضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا ألاَّ يَجِدُواْ مَا يُنفِقُونَ
    "ওদেরও কোনো অপরাধ নেই, যারা আপনার নিকট বাহনের জন্য এলে আপনি তাদের বলছিলেন, তোমাদের জন্য আমি কোনো বাহন পাচ্ছি না। তারা অর্থব্যয়ে অসামর্থ্যজনিত দুঃখে অশ্রুবিগলত নেত্রে ফিরে গেল।
    (সূরা তাওবা: ৯২)
    ★ হ্যাঁ, মুসলমানদের খলিফা যদি অর্থকড়ির ব্যবস্থা করে দেন কিংবা জিহাদে যোগ দেওয়ার অন্য কোনো উপায় বের হয় তবে তার জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ করা ফরজ।
    ♦ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আল্লাহ তাআলা বলেন:
    انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوابِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
    " অভিযানে বের হয়ে পড়ো হালকা রণসম্ভার নিয়ে বা ভারি রণসম্ভার নিয়ে এবং জিহাদ করো আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে! '
    ( সূরা তাওবা : ৪১)
    * উক্ত আয়াতসহ আরও বহু আয়াত ও হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, জিহাদের সামর্থ্য দুই প্রকার:
    {১} জিহাদ বিন নাফ্স বা সশরীরে যুদ্ধ করার সামর্থ্য।
    {২} জিহাদ বিল মাল জিহাদের কাজে সম্পদ ব্যয় করার সামর্থ্য।
    যার উভয় প্রকারের সামর্থ্য আছে তার জন্য উভয়টা ফরজ। আর যার একটার সামর্থ্য আছে তার জন্য একটা ফরজ। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    فَأَوْجَبَ فَرْضَ الْجِهَادِ بِالْمَالِ وَالنَّفْسِ جَمِيعًا فَمَنْ كَانَ لَهُ مَالٌ وَهُوَ مَرِيضٌ أَوْ مُقْعَدٌ أَوْ ضَعِيفٌ لَا يَصْلُحُ لِلْقِتَالِ فَعَلَيْهِ الْجِهَادُ بِمَالِهِ بِأَنْ يُعْطِيَهُ غَيْرَهُ فَيَغْزُوبِهِ كَمَا أَنَّ مَنْ لَهُ قُوَّةٌ وَجَلَدٌ وَأَمْكَنَهُ الْجِهَادُ بِنَفْسِهِ كَانَ عَلَيْهِ الْجِهَادُ بِنَفْسِهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ ذَا مَالٍ وَيَسَارٍ بَعْدَ أَنْ يَجِدَ مَايَبْلُغُهُ وَمَنْ قُوِيَ عَلَی الْقِتَالِ وَلَهُ مَلٌ فَعَلَيْهِ الْجِهَادُ بِالنَّفْسِ وَالْمَالِ
    * আল্লাহ তাআলা মাল ও জান উভয়টি দিয়ে জিহাদ করাকে ফরজ করেছেন। যার মাল আছে, কিন্তু সে অসুস্থ কিংবা পঙ্গু অথবা দুর্বল, যার ফলে সে যুদ্ধের সামর্থ্য রাখে না, তার জন্য মাল দিয়ে জিহাদ করা ফরজ। আর তা এভাবে যে, সে অন্যকে মাল দিয়ে দেবে। সে এই মাল দিয়ে যুদ্ধ করবে। আর যার শারীরিক সামর্থ্য আছে এবং যুদ্ধ করতে সক্ষম, সে যদি সম্পদশালী ও প্রাচুর্যের অধিকারী নাও হয়, তবুও জিহাদে পৌঁছার মতো ব্যবস্থা হয়ে গেলে, তাকে যুদ্ধে শরিক হতে হবে। সম্পদশালী ও যুদ্ধে সক্ষম ব্যক্তির জন্য জীবন ও সম্পদ উভয়টি দিয়ে জিহাদ করা ফরজ।' (আহকামুল কুরআন : ৩/১৫১)

    [[৭]]
    স্বাধীন হওয়া।
    ★ গোলামের ওপর জিহাদ ফরজ নয়।'
    (কানজুদ দাকায়েক: ৩৬৯; আল-মুগনি: ৯/১৯৮)
    হ্যাঁ, যদি জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায় তখন তার জন্যও জিহাদ অংশ গ্রহণ করা ফরজ। এতে তার মালিকের অনুমতিরও কোনো দরকার নেই। (বাদায়িউস সানায়ি: ৭/৯৮)
    [[৮]]
    মা-বাবার অনুমতি।
    ★ মা-বাবা যদি অনুমতি না দেন তাহলে ফরজে কিফায়া জিহাদে অংশগ্রহণ করা যাবে না। হাদিসে এসেছে, জনৈক সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন: (أحَيُّ وَالِدَاكَ) "তোমার মা-বাবা কি জীবিত আছেন? " সে উত্তর দেয়, হ্যাঁ, জীবিত আছেন। তিনি বলেন:
    (فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ) "তবে তাদের সেবা করার চেষ্টা করো। '' (বুখারি : ৩০০৪)
    কিন্তু জিহাদ যখন ফরজে আইন হয়ে যায় তখন মা-বাবার অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই।
    (বাদায়িউস সানায়ি: ৭/৯৮)
    [[৯]]
    কর্জদাতার অনুমতি।
    ★ জিহাদ যদি ফরজে কিফায়া হয় তবে ঋণ পরিশোধ করেই জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য না থাকলে ঋণদাতার অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। ঋণদাতা অনুমতি না দিলে ফরজে কিফায়া জিহাদে অংশগ্রহণ করা যাবে না। তবে জিহাদ যদি ফরজে আইন হয় তবে ঋণদাতার অনুমতি না নিয়েই জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। ( আল-বাহরুর রায়েক: ৫/৭৭-৭৮)
    ♦♦ কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকহের কিতাবাদিতে এই শর্তগুলোর কথাই বিবৃত হয়েছে এবং হাজার বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ এর ওপরই আমল করে এসেছে। দুঃখের বিষয়, একশ্রেণির দুনিয়ালোভী আলেম জিহাদের জন্য এমন সব শর্ত আবিস্কার করছে, যার কোনো অস্তিত্ব শরিয়তে নেই। হকের ধ্বজাধারী কতিপয় দারুল ইফতা থেকে প্রকাশিত কিছু ফতোয়ায়ও দেখা যাচ্ছে আজগুবি সব শর্তের ছড়াছড়ি। শর্তগুলো এমনভাবে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, ভাবলে মনে হয় কিয়ামত পর্যন্ত যেন জিহাদ কোনোভাবে ফরজ হতে না পারে তার জন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা। জিহাদে তালাব ও জিহাদে দাফ এর শর্তগুলোকে পরস্পর গুলিয়ে তারা দ্বীনের এই মহান বিধানকে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করার চেষ্টা করছে।
    ★ আজ পৃথিবীর কোথাও জিহাদে তালাব বা আক্রমণাত্মক জিহাদ নেই। সব জায়গায় জিহাদে দাফ বা প্রতিরোধমূলক জিহাদ চলছে। জিহাদে দাফ এর জন্য শরিয়ত উল্লেখযোগ্য কোনো শর্তই আরোপ করেনি বরং
    ♦ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَأَمَّا قِتَال الدَّفْعِ فَهُوَ أَشَدُّ أَنْوَاعِ دَفْعِ الصَّائِلِ عَنِ الْحُرْمَةِ وَالدِّيْنِ وَاجِبٌ إِجْمَاعًا فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِيْ يُفْسِدُ الدِّيْنَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ مِنْ دَفْعِهِ فَلَا يُشْتَرَطُ لَهُ شَرْطٌ كَالزَّادِ وَالرَّاحِلَةِ بَلْ يُدْفَعُ بِحَسَبِ الْإِمْكَانِ وَقدْ نَصَّ عَلَی ذَلِكَ الْعُلَمَاءُ أَصْحَابُنَا وَغَيْرُهُمْ
    " আর প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ জিহাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। মুসলমানদের মর্যাদা ও দ্বীনের হেফাজতের জন্য আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করা সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ। যে আগ্রাসী শত্রু মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টিকে ধ্বংস করে, ইমান আনার পর তাকে প্রতিরোধ করার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো ফরজ নেই। আর এর জন্য কোনো শর্তও প্রযোজ্য নয় (যেমন পাথেয় ও বাহন)। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে হবে। আর হুকুমটি আমাদের মাজহাবের উলামাসহ অন্যান্য মাজহাবের উলামারাও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
    (আল-ফাতাওয়াল কুবরা : ৪/৬০৮)
    ★★ প্রিয় উপস্থিতি! সামনের পর্বগুলোতে বিভ্রান্ত আলেমদের জুড়ে দেওয়া শর্তগুলোর যথার্থতা নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
    ♦♦ পরিশেষে, হাদিস শরিফের প্রাসঙ্গিক একটি অংশ দিয়েই শেষ করছি আজকের আলোচনা:
    مَا بَلُ أَقْوامٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ مَنْ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَلَيْسَ لَهُ وَإِنْ اشْتَرَطَ مِائَةَ شَرْطٍ
    * লোকদের কী হলো তারা এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে ব্যক্তি এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই সেই ওই শর্তের হকদার হবে না ; যদিও সে একশত শর্ত আরোপ করে। ' (বুখারি: ২৭৩৫)
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

  • #2
    মাশাআল্লাহ,,,
    আল্লাহ তা'আলা ভায়ের মেহনত কবুল করুন,,,
    আমিন
    মুমিনের একটাই স্লোগান,''হয়তো শরীয়াহ''নয়তো শাহাদাহ''

    Comment


    • #3
      মাশা আল্লাহ খুবি জরুরী আলোচনা
      আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল বিভ্রান্তি ও গোমরাহি থেকে হিফাজতে রাখুন, ফিতনা সৃষ্টি কারীদের ফাঁদ থেকে যেন নিরাপদে থাকতে পারি সেই তাওফীক দান করুন, আমিন।
      ইয়া আল্লাহ আপনি ভাইয়ের এই মেহনত কবুল করে জান্নাত লাভের ওয়াসিলা বানান, আপনি উনার মেহনতে বারাকাহ দিন আমিন, আমিন আমিন আমিন।
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment

      Working...
      X