Announcement

Collapse
No announcement yet.

“ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৭

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৭

    তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন- পঞ্চম পরিচ্ছেদ:দাগিস্তান: উপায় শেষ হওয়ার পর সাহায্য- প্রথম বিষয়: ককেশাসের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ভাবনা- দ্বিতীয় ভাগ: রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াইয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


    (পূর্ব প্রকাশের পর)

    গ. ইমাম শামিল রহ. এর আন্দোলন:

    ইমাম শামিল রহ. হলেন দাগিস্তানের ইমামগণের মধ্যে তৃতীয় ইমাম, যিনি ইমাম গাজী ও ইমাম হামযা বেগের পর মুসলিম ককেশাশের জিহাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি একজন আমলদার আলেম ও মুজাহিদ। তিনি একাধারে ২৫ বছর রাশিয়ানদেরকে অস্থির করে ছেড়েছেন। তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেছেন এবং আল্লাহ তাকে যে অবিচলতা, দৃঢ়তা ও জিহাদী প্রকৃতির নেয়ামত দান করেছেন, তার মাধ্যমে আজও পর্যন্ত তিনি চেচেন ও ককেশাশী জিহাদের সূর্যপুরুষে পরিণত হয়েছেন। বরং প্রকৃতপক্ষে তিনি উনবিংশ শতাব্দির মুসলিম উম্মাহর জিহাদের প্রতীক ছিলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার জিহাদগুলোকে অনেক দেশের জনগণের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাইলফলক মনে করা হয়।

    ইমাম শামিল রহ. তার শায়খ ইমাম গাজীর মতই দাগিস্তানি বংশোদ্ভুত ‘উর’ গোত্রের লোক ছিলেন এবং যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করেছি- ইমাম গাজীর সহযোগী ছিলেন। যে যুদ্ধে ইমাম গাজী রহ. শহীদ হন, তাতে তিনি আহন এবং খুব অলৌকিকভাবে বেচেঁ গিয়ে চেচনিয়ার দিকে পলায়ন করেন, যেখানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনার সাথে স্বাগতম জানানো হয় এবং ১৮৩৪ খৃষ্টাব্দে দাগিস্তানের ইমাম হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এটি ছিল ককেশাশের ইতিহাসের বৃহৎ একটি অধ্যায়ের সূচনা। ইমাম শামিল রহ. এর প্রতিষ্ঠিত এই স্বাধীনতা আন্দোলনই ইতিহাসে ‘ককেশাশি যুদ্ধ’ নামে পরিচিত হয়।

    এ বৎসরই ইমাম শামিল রহ. সমস্ত গোত্রপ্রধান ও বড় বড় কাযীদেরকে ককেশাশের পবর্তমালার মধ্যখানে একটি এলাকায় একত্রিত হওয়ার আহ্বান করেন। তারা সেখানে কাজের বিষয়ে পরামর্শ করেন। ইমাম শালিম রহ. রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে ইসলামী লড়াইকে উন্নতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যাবশ্যকীয় নীতিমালা প্রণয়ন করেন। সমস্ত গোত্রগুলোকে এক জনগণের পরিণত করেন। অঞ্চলগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগের জন্য একজন করে এমন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন, যে নিজের ঘাড়ে শরয়ী, সামাজিক ও সামরিক বিষয়াবলীর দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। বিচারকার্যের জন্য একটি উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করেন, যার কার্যালয় ছিল চেচনিয়ায়। তার লক্ষ্য ছিল শরয়ী বিধানাবলী কার্যকর করা। অস্র ও সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য কতগুলো কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

    ইমাম শামিল রহ. নিজ নেতৃত্বে দেশ শাসনের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ করেন। ককেশাশের সমস্ত জনগণ তার পাশে জড়ো হয়। কারণ তিনি মুসলমানদের অন্তরে ইসলামের বিধানাবলী গভীরভাবে প্রোথিত করেছিলেন এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর প্রাণশক্তিতে গড়ে তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, ইমাম শামিল রহ.কে সর্বপ্রথম চেচনিয়ায় সরকারি শাসনব্যবস্থার প্রবর্তক হিসাবে গণ্য করা হয়।

    ইমাম শামিল রহ. তিন বছরের মধ্যে ককেশাশের সিংহভাগ এলাকা থেকে রাশিয়ানদেরকে বিতাড়িত করতে সমর্থ হন, তাদেরকে শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানি আস্বাদ করান। তার সংবাদগুলো ইউরোপের সকল প্রান্তে পৌঁছে যায়। তার সাহসিকতা নিপীড়িত জাতিসমূহের জন্য আদর্শে পরিণত হয়। যা রাশিয়াকে অস্থির করে তোলে। ফলে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে। তার বিরুদ্ধে ৩ লাখ সৈন্যের একটি বাহিনী প্রস্তুতি করে। তারা চতুর্দিক থেকে হামলা করতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ১৮৫৯ সালে ইমামকে বন্দি করতে সক্ষম হয়।

    তিনি লড়াইয়ের এ সময়গুলোতে খেলাফতে উসমানিয়া থেকে সহযোগীতা লাভের অনেক চেষ্টা করেন। যেহেতু তাদেরকে উম্মতে মুসলিমার প্রতিনিধি মনে করা হয়। কিন্তু ইমাম রাশিয়ার সাথে তার দীর্ঘ ২৫ বছরের ঘোরতর যুদ্ধে তাদের থেকে কোন সাহায্যই লাভ করেননি। এর ফলে পরিশেষে ইমাম পরাজিত হন এবং মহান ইমাম শামিলকে গ্রেফতার করা হয়।

    ইমাম শামিল রহ.কে গ্রেফতারের মাধ্যমে রাশিয়া ককেশাশের পরাজয় এবং ককেশাশি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে, যার ফলে ইসলামী ভূমির বিরাট অংশ খেলাফতে উসমানিয়া থেকে হাতছাড়া হয়ে যায় এবং শুধু চেচেন বা ককেশাশি জনগণের উপরই নয়, বরং সমস্ত উম্মতে মুসলিমার উপর মারাত্মক আঘাত লাগে, যার অশুভ পরিণাম আজও পর্যন্ত তারা ভোগ করছে।

    ১৮৫৯ সালে কায়সারি রাশিয়ার এই ঘোষণা সত্ত্বেও আজও পর্যন্ত ককেশাশি মুসলিমগণ রাশিয়ান আধিপত্যবাদের জন্য কঠিন হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন এবং সেখানকার মুজাহিদীন ও জনগণ রাশিয়ান জঙ্গীদের মোকাবেলা করতে ক্লান্ত হচ্ছেন না।

    ইমাম শামিল রহ. দশ মাস রাশিয়ানদের নিকট বন্দি থাকার পর তারা তাকে মৃত্যুর পূর্বে হজ্জের জন্য হিজাজে সফর করার অনুমতি দেয়।
    ইমাম শামিল রহ. ইস্তাম্বুলে পৌঁছলে তুর্কি সুলতান তাকে নিজের সাথে সরাসারি সাক্ষাৎ লাভের মর্যাদা দান করেন। কথিত আছে, যখন সুলতান তাকে হাত দেন, তখন ইমাম শামিল রহ. বলেছিলেন:

    “আমি ককেশাশে দীর্ঘ ২৫ বছর অপেক্ষা করেছি এ হাতটি আমার দিকে প্রসারিত হওয়ার জন্য।”

    ইমাম শামিল রহ. মদিনা মুনাওয়ারায় ১৮৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তার প্রতি প্রশস্ত রহমত নাযিল করুন এবং ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!

    ঘ. ইমাম শামিল রহ. এর পরে মুসলিম ককেশাশে জিহাদ:

    তারপর দালালরা সেসকল উলামা ও নেতৃবৃন্দকে পরিস্কার করার দায়িত্ব পালন করতে থাকে, যারা লড়াইয়ের মূল্য ভিত্তি ছিলেন। যেন শায়খ শামিলের জিহাদের ফল নষ্ট করে ফেলা যায়।

    অত:পর রাশিয়া ককেশাশি জনগণের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ ও বহিস্কারকরণ নীতি অনুসরণ করে। ফলে ১৮৬০ সালে উত্তর ককেশাশের নাগরিক ৩.২ মিলিয়ন থেকে ১৮৯৭ সালে ১.৬ মিলিয়নে নেমে আসে।

    ইমাম শামিলের যুদ্ধগুলোর সময়েই শিরকাস ও তুর্কি ককেশাশিয়ানগণ পশ্চিম ককেশাশের উত্তরাঞ্চলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু তারা ছিলেন বিভক্ত। তাদের একক নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল। ১৮৬০ সালে রাশিয়া তাদের উপর বিজয় লাভ করার পর আগ্রাসন, হত্যা ও নির্বাসনের রাজনীতি শুরু করে। যার ফলে তাদের মধ্য হতে ১.২ মিলিয়ন মানুষ পালিয়ে যান।

    ককেশাশের যুদ্ধে পরাজয়ের পর কিছু কিছু চেচেন মুসলিম কুফরী শাসনের অধীনে জীবন যাপন করতে অনাগ্রহী হয়ে তুরস্কে এবং কেউ কেউ সিরিয়া ও জর্দানে হিজরত করেন। এতদসত্ত্বেও যারা অবশিষ্ট ছিলেন, তারা নিজেদের ভূমিকে মুক্ত করার জন্য লড়াই-যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তারা ককেশাশ যুদ্ধে ইমাম শামিল রহ. এর পরাজয়ের দু’বছর পর ১৮৬১ সালে রাশিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হাওয়া প্রবাহিত করেন। ১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে ইমাম আলবাজ আলদানির নেতৃত্বে আরেকবার বিদ্রোহ করেন। কিন্তু অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে বিদ্রোহ দমন করা হয় এবং তার ১১ জন নেতাকে জারজুনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আল্লাহ তাদের প্রতি ভরপুর রহমত নাযিল করুন!

    ২- সেভিয়েত ইউনিয়ন ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াই

    ক. ১৯১৭ ও ১৯১৯ এর মধ্যবর্তী সময়ে রাশিয়ান গৃহযুদ্ধের সময় মুসলিম ককেশাশের আন্দোলন:

    প্রথম বিশ^যুদ্ধের সময় মুসিলমগণ লক্ষ্যণীয় মাত্রায় জেগে উঠেন এবং এটাকে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করেন। একারণে তারা সাম্যবাদি কমিউনিষ্ট আন্দোলনকে সমর্থন করেন, যা লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে রাশিয়ান জারসিষ্টকে উৎখাত করে।

    লেনিন ব্যাপক সমর্থন লাভের জন্য ওই সকল অঞ্চলের আঞ্চলিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়, যাদেরকে রাশিয়ান জারসিষ্টরা জুলুম করত। এ সমস্ত অঞ্চলের পৃথিকীকরণ ও স্বাধীনতার ব্যাপারে বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রগুলো স্বাধীনতা লাভ করে এবং তারা একটি ফেডারেল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

    যখন কমিউনিষ্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, তখন লেনিন মুসলিম দেশগুলোতে চড়াও হওয়ার আদেশাবলী প্রকাশ করতে থাকে। ফলে রাশিয়ান সেনারা এ সকল অঞ্চলগুলো পদদলিত করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে জারসিষ্ট শাসনামলের থেকেও নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য পদ্ধতিতে গোষ্ঠীগত উচ্ছেদ ও নির্বাসন অভিযান চালায়।

    লেনিন প্রায় ৮০ লাখ মুসলিমকে হত্যা করে এবং তার উত্তরাধিকারী স্টালিন ২ কোটির অধিক মুসলিমকে হত্যা করে। তেমনভিাবে অধিকাংশ মসজিদ ও ইসলামী মাদরাসাগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ককেশাশকে কয়েকটি অঞ্চল ও ছোট ছোট রাষ্ট্রে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়। বলশেভিকদের জাতীয় স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে প্রকৃতপক্ষে তারা আরো অধিক জুলুম ও ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এমন শাসন, যা বস্তুবাদ ও নাস্তিকতা নিয়ে গর্ব করে।

    খ. গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের আন্দোলন:

    চেচেনগণ কঠোর রাশিয়ান আগ্রাসনের শিকার হন কমিউনিষ্ট জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘঠিত করার পর। তন্মধ্যে ১৯৩৪ সালে ইবরাহিম কালডক্ট এর বিদ্রোহ এবং ১৯৪০ সালে হাসান ইসরাইলুভের বিদ্রোহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কমিউনিষ্টরা লোহা ও আগুনের মাধ্যমে সেগুলো দমন করত।

    ত্রিশের দশকে সেভিয়েত নেতারা অনেক চেচেন মুসলিমকে দলবদ্ধভাবে কৃষিক্ষেত্রে কাজ করতে বাধ্য করে এবং তাদের ধর্মীয় নিদর্শনগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক চেষ্টা করে। এই রাজনীতির ফলে চেচেন মুসলিমগণ অনেক ভোগান্তির শিকার হন এবং তাদের আকিদা ও পুরোনো জীবনধারা ঠিক রাখার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হন।

    এ সময়ই বলশেভিকরা হত্যা ও কারারূদ্ধকরণ অভিযান শুরু করে। এর টার্গেট ছিল চেচেন জাতির বিচক্ষণ ও শ্রেষ্ঠ লোকদের নির্মূল করা। বিশেষভাবে টার্গেট ছিল ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। ১৯৩৭ এ ১৫ হাজার দ্বীনি আলেম ও চিন্তাবিদকে জারযুনিতে গুলি করে হত্যা করা হয়। অনেক সংখ্যককে সাইবেরিয়ায় দেশান্তর করা হয় বা কারারূদ্ধ করা হয়।

    গ. চেচেনদেরকে জোরপূর্বক দেশান্তর:


    ষ্টালিন সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঘোষণা করল: চেচেন, ইঙ্গুশ ও ক্রিমিয়ার জনগণ বিশ্বাসঘাতক জনগণ। তারা জার্মানিকে সহযোগীতা করেছে। এর ভিত্তিতে ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে উক্ত অঞ্চলের জনগণকে দীর্ঘ রেল ভ্রমণের মাধ্যমে কাজাখস্তান ও বরফাচ্ছাদিত সাইবেরিয়ায় দলবদ্ধভাবে নির্বাসনের অভিযান শুরু করে। তাদের সকল ভূমি ও মালিকানাধীন বস্তুগুলো বিরান হয়ে পড়ে থাকে। কয়েক দশক হাজার লোক, ক্ষুধা, রোগ-ব্যাধি, কষ্ট, নির্যাতন ও জুলুমের কারণে নিহত হন।

    যদিও জোরপূর্বকভাবে নির্বাসনের সরকারি বৈধতার দলিল ছিল নাৎসিদের সাথে যোগসাজস, কিন্তু বড় বিষয় হল, ষ্টালিন তার স্বভাবগত নিষ্ঠুরতা, কমিউনিষ্টবাদি কঠোরতা ও ককেশাশি বংশোদ্ভুত হওয়ার কারণে ককেশাশিদের পূর্ববর্তী বিভিন্ন আন্দোলন ও তুর্কিদের দ্বারা তাদের প্ররোচিত হওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার টার্গেট করেছিল।

    তুর্কিদের উপর ষ্টালিনের চাপ শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্বে, যার ফলে যুদ্ধের আশঙ্কাও ছিল। তার দাবি ছিল সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা (যেমন উরজ ও জর্দান, যেগুলো রাশিয়া ১৮৭৮ সালে তুর্কিদের থেকে দখল করে নেয় এবং তারপর লেনিন ১৯২১ সালে তা পুনরুদ্ধার করে।) ছেড়ে দেওয়া এবং বসফরাসের উপর রাশিয়ার অধিকার মেনে নেওয়া। রাশিয়া এই নীতির উপর চলতে থাকে। অবশেষে ১৯৪৬ সালে আমেরিকা তাকে সুস্পষ্টভাবে একথা বুঝায় যে, যেকোন রুশ হামলার বিরুদ্ধে তারা তুর্কিদের সাহায্য করবে।

    তখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যে, ষ্টালিন এর পূর্বপ্রস্তুতি স্বরূপ যে সমস্ত জনগণ যুদ্ধ শুরু হলে তুর্কিদের সহযোগীতা করতে পারে তাদেরকে দেশান্তরিত করে দিবে। যেমন করাচিয়ান, বুলগেরিয়ান, টাইটার্স, কোয়ান্টাম, তুর্কি বংশোদ্ভুত মেসখাটি এবং তুর্কিদের পুরাতন মিত্র চেচেন।
    সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার চেচেন ও ইঙ্গুশকে রেলে ভরা হয়। কিন্তু যখন ক্রুশ্চেভ প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ্যে বললেন, তখন সরকারি প্রতিবেদনগুলো ৪ লক্ষ্য লোককে নির্বাসন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে। যা খুব দৃঢ়ভাবে একথার প্রতি ইঙ্গিত করে যে, ৭৮ হাজার লোক পথে বা রেল থেকে নামানোর সময় ক্ষুধায় বা কাযাখস্তানের সমতল ভূমিতে ঠাণ্ডায় মারা পড়ে।

    হাজার হাজার লোক রেলেও পৌঁছতে পারেনি। ৬ টি পাহাড়ি এলাকা- যার অধিবাসীদেরকে শীত ঋতু হওয়ার কারণে স্থানান্তর করা কঠিন ছিল- এনকেভিডি বাহিনী তাদেরকে মসজিদ ও ওয়ার্ডসমূহে একসাথে জড়ো করে হত্যা করেছে। এমনিভাবে অসুস্থদেরকে হাসপাতালে হত্যা করেছে!!
    কতিপয় চেচেন যোদ্ধা পাহাড়ে আত্মরক্ষা গ্রহণ করে। তারা সেখান থেকে রাশিয়ান বাহিনী ও রাশিয়ান কলোনীগুলোতে আক্রমণ করতেন। যার ফলে রাশিয়ান বাহিনী পাহাড়ি অঞ্চলে স্থির হতে পারেনি।

    খিবাখ হত্যাকাণ্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনকেভিডি অফিসার কর্ণেল জেফসিয়ানি তার প্রধান গুরু প্রিয়ার নিকট যে প্রতিবেদন জমা দেয়, তাতে পরিস্কারভাবে বলে:

    “নির্বাসন অসম্ভব হওয়া এবং দুই পাহাড়ি অভিযানের লক্ষ্য সময়সূচি অনুযায়ী পুরা করার বিশেষ প্রয়োজনে খিবাখ জনপদের ৭০০ অধিবাসিকে পরিস্কার করা আবশ্যক ছিল।”

    তার পুরস্কার স্বরূপ প্রিয়া পত্র মারফত জেফশিয়ানিকে পদক পরানো ও পদোন্নতি দানের সংবাদ পাঠায়। এমনিভাবে ষ্টালিন ককেশাশে রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল পদক্ষেপের জন্য এনকেভিডিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অভিভাদন জানায়।

    কমিউনিষ্ট রাশিয়া এতটুকুতেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এমন যেকোন দলিল মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রমাণ করতে পারে যে, এখানে চেচনিয়া ভূমি ছিল। ফলে চেচনিয়ার গ্রন্থাগার ও সংরক্ষণাগারগুলোকে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ইতিহাসের সকল পান্ডুলিপি ও প্রকাশনাসমূহ থেকে শূণ্য করে ফেলে। চেচনিয়ার শায়খ, ইমাম ও চিন্তাবিদগণের সকল রচনা ও ইসলামী কাজগুলোও ধ্বংস করে ফেলে।

    রাশিয়ান বই-পুস্তক থেকে চেচনিয়া ও জোরপূর্বক নির্বাসিত জনগণের যেকোন ধরণের আলোচনা মুছে ফেলে। ইতিহাস, সাহিত্য ও বিভিন্ন শাস্ত্রীয় কিতাব থেকে এ ধরণের আলোচনা দূর করে ফেলে। স্কুলের বইসমূহ এবং কবি ও লেখকদের রচনাগুলোকে পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হয়। এ সংক্রান্ত শব্দের পরিবর্তে অন্যান্য শব্দ স্থাপন করা হয়। এভাবে বস্তুগত উচ্ছেদের সাথে তাল মিলিয়ে সাংস্কৃতিক উচ্ছেদও সম্পন্ন করা হয়।

    ১৯৫৭ সালে, অর্থাৎ চেচেন জনগণকে নির্বাসনের অন্যায় আদেশ জারির ১৩ বছর পর সেভিয়েত প্রেসিডেন্ট ক্রশ্চেভ ঘোষণা করে, চেচনিয়া ও ক্রিমিয়ার মুসলমাদের প্রতি যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তারা তা থেকে মুক্ত। অতঃপর তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয়। ফলে তাদের অনেকে ফিরে আসে। ফিরে আসাদের মধ্যে একজন হলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জাওহার দুদায়েভ। যখন চেচেন জনগণকে নির্বাসিত করা হয়, তখন তিনি পিতামাতার কাঁধে চলা ছোট্ট শিশু। নিজ জীবনের ১৩ টি বছর বন্দিশিবিরে কাটিয়েছেন।

  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ,, আল্লাহ আপনাদের কাজগুলো কবুল করুন আমীন।
    আল্লাহ আপনি আমাকে মুজাহিদ হিসেবে কবুল করুন আমীন।
    আল্লাহ, আমাকে মুজাহিদ হিসেবে কবুল করুন আমীন।

    Comment


    • #3
      ইমাম শামিল রহ. মদিনা মুনাওয়ারায় ১৮৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তার প্রতি প্রশস্ত রহমত নাযিল করুন এবং ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment


      • #4
        Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
        ইমাম শামিল রহ. মদিনা মুনাওয়ারায় ১৮৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তার প্রতি প্রশস্ত রহমত নাযিল করুন এবং ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!
        আল্লাহুম্মা আমীন। আল্লাহুম্মা আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X