Announcement

Collapse
No announcement yet.

ঈমানদীপ্ত দাস্তান এর স্বরুপ সন্ধানে (পর্ব- ২)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ঈমানদীপ্ত দাস্তান এর স্বরুপ সন্ধানে (পর্ব- ২)

    ঈমানদীপ্ত দাস্তান এর স্বরুপ সন্ধানে (পর্ব- ২)

    ঈমানদীপ্ত দাস্তান বই সম্পর্কে সামগ্রিক মূল্যায়ন শেষে এবার আমরা একটু ভেতরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখবো আলতামাশ কীভাবে কল্পনাকে ইতিহাস বলে চালিয়ে দিয়েছেন।
    ১। ঈমানদীপ্ত দাস্তানের প্রথম খন্ডের শুরুতে লেখক সাইফুদ্দিন গাজির কাছে প্রেরিত সুলতানের একটি চিঠি তুলে দিয়েছেন। এরপর সিরিয়া ও মিসরের পরিস্থিতি, আলী বিন সুফিয়ানের তৎপরতা, এক সেনা অফিসার নাজির সাথে আলি বিন সুফিয়ানের কৌশল, নাজিকে হত্যা, ক্রুসেডারদের আক্রমন ও তাদের পরাজয়ের কথা লিখেছেন। (১)

    -
    সাইফুদ্দিন গাজির নামে সুলতানের যে পত্রের কথা এসেছে তা পুরোটাই বানোয়াট। সুলতান এমন কোনো পত্র কাউকে লেখেননি। তবে একবার তিনি একজন আমির মুজাফফর আকরা কে একটি বাক্য বলেছিলেন, যা এই বানোয়াট পত্রের একটি বাক্যের সাথে মিলে যায়। সুলতান ওই আমিরকে বলেছিলেন, তুমি এই পাখিদের সাথে খেলা করতে থাকো, সামনে যে বিপদ আসছে, তার চেয়ে এটা নিরাপদ তোমার জন্য। (২)
    স্ট্যানলি লেনপুলের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক যা লিখেছেন তার পুরোটাই বানোয়াট। (৩) গনিমতের মাল ৩ ভাগ করার কথা লেনপুল লেখেননি, জামিয়া নিজামিয়ায় গনিমতের মাল পাঠানোর কথাও লেখকের মনগড়া। লেখকের সবচেয়ে বড় অপরাধ তিনি স্ট্যানলি লেনপুলের উদ্ধৃতি দিয়ে পাঠককে বিশুদ্ধ ইতিহাস পাঠের অনুভূতি দিচ্ছেন অথচ পুরোটাই তার বানোয়াট কথা, যার সাথে লেনপুলের কোনো সম্পর্ক নেই। সুলতান জামেয়া নিজামিয়ায় পড়েছেন এটাও বানোয়াট। তিনি জীবনে কখনো বাগদাদ যাননি।
    নাজি নামের যে সেনা অফিসারের কথা লেখক লিখেছেন এমন কারো অস্তিত্ব ইতিহাসে নেই। তবে সে সময় সুলতানের প্রাসাদের দায়িত্বে একজন সুদানী অফিসার ছিল। আল্লামা নুয়াইরি তার নাম লিখেছেন জাওহার। (৪) স্ট্যানলি লেনপুল তার নাম লিখেছেন নাজাহ। সম্ভবত একেই লেখক নাজি নাম দিয়ে বিশাল বানোয়াট গল্প ফেঁদে বসেছেন। অথচ লেনপুল কর্তৃক নাজাহ লেখাটাই বড় ধরনের ভুল। এই নাম আরব ইতিহাসবিদদের কেউ লেখেননি। ইতিহাসে নাজাহ ছিলেন আরেকজন ব্যক্তি, যিনি ৫৬৯ হিজরীতে সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ধরা পড়েন এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এই ব্যক্তি বড় কোনো সেনা অফিসারও ছিল না। (৫)
    সুলতানের সময়কার আরেকজন নাজাহ ছিলেন আব্বাসি খলিফার সভাসদ। (৫) সুলতান সালাহুদ্দিনের একশো বছর আগে আরেকজন শাসক ছিলেন নাজাহ নামে। (৬) তিনি ৪২১ হিজরিতে ইয়ামান দখল করেন। (৭) ইতিহাসে আরেকজন নাজাহর সন্ধান পাওয়া যায়, তিনি ছিলেন আব্বাসি খলিফা মুতাযিদ এর পুলিশ অফিসার। (৮) ফলত দেখা যাচ্ছে, স্ট্যানলি লেনপুল কর্তৃক এই নাম উল্লেখ করাটাই ভুল। তার আসল নাম জাওহার। সমস্যা হলো স্ট্যানলি লেনপুল শুধু নাজাহ নাম উদ্ধৃত করেছেন, আর লেখক একে নাজি বানিয়ে এক বিশাল গল্প বানিয়ে ফেলেছেন, যেখানে একে একে উপস্থিত হয়েছে জেকির মত নর্তকী ও গোয়েন্দা অফিসার আলী বিন সুফিয়ান। বলাবাহুল্য প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক, পুরো ঘটনাটি কাল্পনিক। (৯)
    ২। আলতামাশ লিখেছেন, একজন ইতিহাসবিদ সিরাজুদ্দিন লিখেছেন, সুদানিরা ক্রুসেডারদের আগমনের আগেই বিদ্রোহ করে বসে। (১০)
    -
    আফসোসের বিষয় হলো, সিরাজুদ্দিন নিজেই একটি কাল্পনিক চরিত্র, যার নাম নিয়ে আলতামাশ ইতিহাস লেখার ভান করেছেন মাত্র। এই নামে কোনো আরব ইতিহাসবিদের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। হ্যা, এ সময় মিসরে সুদানিদের একটি বিদ্রোহের পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছিল তবে তাতে কাল্পনিক চরিত্র আলী বিন সুফিয়ান কিংবা জেকির হাত ছিল না, বরং এটি ছিল সুলতানের সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের কাজ। (১১)
    ৩। লেখক ১১৬৯ সালে ক্রুসেডারদের একটি হামলার বিবরণ দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, এই যুদ্ধে সুলতান সরাসরি অংশ নেন এবং নেতৃত্ব নিজের হাতে রাখেন। (১২)
    -
    এই যুদ্ধ সংঘঠিত হয় ৫৬৫ হিজরীর সফর মাসে। খ্রিস্টিয় হিসেবে সময়টা ছিল ২৩ অক্টোবর ১১৬৯ খ্রিস্টাব্দ। দিময়াতের উপকূলে ৫০ দিন পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে সুলতান অংশ নেননি বরং তিনি এ সময় কায়রো ছিলেন। সে সময় তিনি সুলতান নুরুদ্দিন জেংগিকে লেখা এক পত্রে বলেন, এ মুহুর্তে আমি কায়রো ত্যাগ করলে এখানে বিদ্রোহের সম্ভাবনা আছে। (১৩)
    ৪। আলতামাশ লিখেছেন, জেকি ও আলি বিন সুফিয়ানের ঘটনা মারাকেশের একজন ইতিহাসবিদ আসাদুল আসাদি লিখেছেন। (১৪)
    -
    মজার ব্যাপার হলো জেকি আর আলি বিন সুফিয়ান তো পরের কথা, খোদ আসাদুল আসাদিরই কোনো অস্তিত্ব ইতিহাসে নেই।
    ৫। প্রথম খন্ডে দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক যে রুপসী নারীদের গল্প বলেছেন তাও বানোয়াট। আল কামিল ফিত তারিখ বা অন্যান্য ইতিহাসগ্রন্থে সে সময়কালের ইতিহাস পাঠ করলে যে কেউ নিশ্চিত হবে লেখক এখানে কতবড় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
    ৬। সুদানিদের হামলার বিবরণ দেয়ার পর আলতামাশ লিখেছেন, তিন চারজন ঐতিহাসিক যাদের মধ্যে লেনপুল ও উইলিয়াম অন্যতম, তারা লিখেছেন, এটি ছিল সুলতান আইয়ুবির নিপুন কৌশল। (১৫)
    -
    লেনপুল এমন কিছুই লেখেননি। উইলিয়াম দ্বারা কে উদ্দেশ্য তাও স্পষ্ট নয়। যদি উইলিয়াম অব টায়ার হয় তাহলে তার লেখাতেও এমন কিছুর উল্লেখ নেই।
    ৭। সুদানিদের বিদ্রোহের ইস্যুতে আলতামাশ লিখেছেন, সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে আরব থেকে বিশাল একটি বাহিনী আসছে। সত্যি সত্যি নুরুদ্দিন জেংগির একটি বাহিনী আসে। ঐতিহাসিকদের কারো মতে এই বাহিনীর সংখ্যা ৪ হাজার, কারো মতে আরো বেশি।
    -
    সেনা আসার এই সংবাদ কেউই ছড়ায়নি, বরং লেখক নিজেই ছড়িয়েছেন। সে সময় আরব থেকে কোনো বাহিনী আসেওনি। সুলতান নুরুদ্দিন জেংগির একটি বাহিনী এসেছিল তাও এই বিদ্রোহ দমন করতে নয় বরং বিদ্রোহের কয়েক মাস পর। এই বাহিনী কায়রো আসেনি বরং তাদের গন্তব্য ছিল দিময়াত। লেখক সেনাসংখ্যা নিয়ে ইতিহাসবিদদের যে মতবিরোধ বর্ননা করেছেন তাও মনগড়া। (১৬)
    ৮। প্রথম খন্ডের শেষ অংশে লেখক ম্যাগনামা মারইউসের এক বিশাল গল্প এনেছেন। এই বিশাল গল্পের শেষে তিনি লিখেছেন, ম্যাগনামা মারইউস মুসলমান হয়ে যায়। সুলতানের ইন্তেকালের পরেও ১৭ বছর বেচে ছিল সে। সে ছিল সুলতানের কবরের খাদেম। তার ইসলামি নাম রাখা হয় সাইফুল্লাহ। বাহাউদ্দিন শাদ্দাদের ডায়েরিতে তার সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আছে। আরবী ভাষায় লেখা এই ডায়রি আজও অক্ষত আছে। (১৭)
    -
    আরবী ভাষায় লেখা বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের বইটি আজও অক্ষত আছে, কিন্তু তাতে অক্ষত নেই ম্যাগনামা মারইউসের ইতিহাস। শুধু বাহাউদ্দিন ইবনু শাদ্দাদ কেন, অন্য কোনো ইতিহাসবিদের বইতেই তার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। লেখক এখানেও প্রতারণা করেছেন পাঠকের সাথে। নিজের কল্পনাকে তিনি বাহাউদ্দিন ইবনু শাদ্দাদের লেখা বলে চালিয়েছেন। ফলে পাঠক এই অংশ পড়ে ভাবতে বাধ্য হয় সে আসলে সত্য ইতিহাস পড়ছে।


    টীকা
    ১। দেখুন ঈমানদীপ্ত দাস্তান, ১/৭-৮।
    ২। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/৫৭১। আর রওযাতাইন, ২/৪০০।
    ৩। বাংলা অনুবাদে অনুবাদক স্ট্যানলি লেনপুলের উদ্ধৃতি আনেননি। তবে মূল উর্দুর ১২ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃতিটি আছে।
    ৪। নিহায়াতুল আরব, ৮/১২। মুফাররিজুল কুরুব, ১/১৭৪, টীকা দ্রষ্টব্য।
    ৪। আর রওযাতাইন, ২/২৮৪।
    ৫। সিয়ারু আলামিন নুবালা, ২২/২১৩।
    ৬। সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৮/১৩১।
    ৭। আল মুখতাসার ফি আখবারিল বাশার, ১/২৫৩।
    ৮। মুরুজুয যাহাব, ২৩৯।
    ৯। নাজি সংক্রান্ত বানোয়াট গল্প বাংলা অনুবাদে ১৪ থেকে ৬০ নং পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিবৃত হয়েছে, যার পুরোটাই মিথ্যা।
    ১০। সিরাজুদ্দিনের এই উদ্ধৃতি উর্দু সংস্করণের ৫৫ নং পৃষ্ঠায় আছে। তবে বাংলা অনুবাদে অনুবাদক এখানে কিছু আলোচনা বাদ দিয়েছেন ফলে উদ্ধৃতিটি বাদ গেছে।
    ১১। আল কামিল ফিত তারিখ, ১০/১৯।
    ১২। ঈমানদীপ্ত দাস্তান, ১/৬০।
    ১৩। আল কামিল ফিত তারিখ, ১০/২২। আর রওযাতাইন, ২/১৩৯।
    ১৪। উর্দু সংস্করণ – ৫৭। বাংলা অনুবাদে অনুবাদক এই অংশ বাদ দিয়েছেন।
    ১৫। ঈমানদীপ্ত দাস্তান, ১০৫।
    ১৬। আন নুজুমুয যাহিরা, ৬/৭।
    ১৭। উর্দু সংস্করণ – ১০৫। পরশমনী থেকে প্রকাশিত বাংলা অনুবাদে বাহাউদ্দিন শাদ্দাদের উদ্ধৃতিটি নেই। তবে আসাদ বিন হাফিয তার ক্রুসেড সিরিজে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। দেখুন ক্রুসেড ১/১৬০।
    (চলবে, ইনশাআল্লাহ)


    ******************


    সংগ্রহীত পোস্ট


    ******************


    প্রথম পর্বের লিংক-
    ঈমানদীপ্ত দাস্তান – একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা ।। প্রথম পর্ব
    https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232476%3B
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    মাশা-আল্লাহ,, [[ ভাইজান ]] আশাকরি এ-ই সিরিজটি চলমান থাকবে। আল্লাহ আপনাদের কাজগুলো কবুল করুন, আমীন। সুপ্রিয় ভাই, আমাদের সমকালীন কতক শাইখদের কিতাব/ বইগুলোকেও এভাবে ভেরিফাই করার অনুরোধ করছি।
    উদাহরণ স্বরুপ।
    মাও,ফরিদ মাসুদের ডিজিটাল ফতুয়া।
    খন্দকার আব্দুল্লাজ জাহাঙ্গীর হুজুরের [ ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ]
    আঃ রাজ্জাক বিন ইউসুফ হুজুরের [ কে বড় সফলকাম ]
    খেলাফত ও জাহালত[ লেখক, জানা নাই]
    খাওয়ারিজম,[ লেখক, জানা নাই]
    ========
    এ-ই বইগুলোকেও ভেরিফাই করা সময়ের দাবী।
    والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

    Comment


    • #3
      আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস অধ্যয়নের তাওফীক দিন।
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment


      • #4
        Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
        আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস অধ্যয়নের তাওফীক দিন।
        আমিন ছুম্মা আমিন।

        Comment


        • #5
          Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
          আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস অধ্যয়নের তাওফীক দিন।
          আমিন! ইয়া আল্লাহ!
          হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

          Comment


          • #6
            Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
            আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস অধ্যয়নের তাওফীক দিন।
            আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
            মুসলিম হয়ে জন্মেছি আমি ইসলাম আমার ধর্ম
            লড়বো আমি খোদার পথে এটাই আমার গর্ব।

            Comment


            • #7
              গুনাহের পরিত্রাণ:
              হযরতের কথা আমার বাস্তব অনুভূতি: আমি আমার গুনাহ থেকে বাঁচতেই জিহাদের পথ বেছে নিয়েছি। কেননা, জীবন যেখানে উৎসর্গ; গুনাহ সেখানে শূন্য।

              Comment


              • #8
                Originally posted by تبليغ الدين View Post
                গুনাহের পরিত্রাণ:
                হযরতের কথা আমার বাস্তব অনুভূতি: আমি আমার গুনাহ থেকে বাঁচতেই জিহাদের পথ বেছে নিয়েছি। কেননা, জীবন যেখানে উৎসর্গ; গুনাহ সেখানে শূন্য।
                খুব সুন্দর কথা বলেছেন ভাই....জাযাকাল্লাহ
                আল্লাহ আমাদেরকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। আমীন
                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment

                Working...
                X