Announcement

Collapse
No announcement yet.

মিয়ানমারে গেরিলা যুদ্ধঃ ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে সম্ভাব্য প্রভাব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মিয়ানমারে গেরিলা যুদ্ধঃ ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে সম্ভাব্য প্রভাব

    মিয়ানমারে গেরিলা যুদ্ধঃ ভারত ও বাংলাদেশের সাথে সীমান্তে সম্ভাব্য প্রভাব

    গেরিলাযুদ্ধ গুলোর একটি কমন প্যাটার্ন হলঃ যে দেশে যুদ্ধ হবে, তার পাশের দেশে বর্ডারের কাছাকাছি কিছু আশ্রয়স্থল ( সেইফ হাউজ) প্রতিষ্ঠা করা যেগুলোতে গেরিলাদের প্রশিক্ষণ চলতে থাকে এবং একটি বিদ্রোহী সরকার প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে স্বীকৃতি আদায় সহ যুদ্ধ চালানোর বৈদেশিক অর্থ সরবরাহ ও বিশেষ করে অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ চলমান রাখা হয়। ফিদেল ক্যাস্ট্রো-চে গুয়েভারাদের যুদ্ধ গুলো থেকে শুরু করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পেরিয়ে অধুনা আফগানিস্তানে মার্কিন মোকাবিলার যুদ্ধে এই ধরনের আশ্রয়স্থলের দেখা মেলে। কখনো সরাসরি নিজের, কখনোও বা প্রভু/জোটবদ্ধ রাষ্ট্রের স্বার্থে পাশের দেশটি এমন আশ্রয় দিয়েও থাকে বা দিতে বাধ্য হয়।

    পাশের দেশ মিয়ানমারে গত ৭ সেপ্টম্বর ২০২১ থেকে সামরিক জান্তা সারকারের বিরুদ্ধে অবশেষে গেরিলা যুদ্ধ শুরু হয়েছে[১] । যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট ( NUG) নামক দল বা বিদ্রোহী সরকার যার বেশির ভাগ সদস্য অং সান সুচি'র পার্টি ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ( NLD) থেকে আসা। সুচি নিজেও আছে [২]।

    কতোই তো বিদ্রোহ ইত্যদি হয়। এটা হালে পানি পাবে কি? অনেকে বলছেন পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে যদি আন্তর্জাতিক হাত থাকে, বা প্রক্সি খেলোয়াড়দের গভীর ইন্টারেস্ট জড়িত থাকে। এই যেমন গতকালই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিদ্রোহী সরকার কে স্বীকৃতি দিয়ে দিল [৩]! এর আগে ফ্রান্সের সিনেট দ্বিধাহীন ভাবে মিয়ানমারের এই বেসামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ভোট দিয়েই রেখেছে। এছাড়া আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চেজ রিপাবলিক, অস্ট্রেলিয়া এবং সাউথ কোরিয়া তে এদের অফিস / দফতর সেট করা হয়েছে যা অনেকটা স্বীকৃতির মতই ব্যাপার [৪]।

    এখন হালে পানি পেলে পেল, তাতে আমাদের কি?
    এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে একটি গেরিলাযুদ্ধের মঞ্চ সজ্জিত হতে যাচ্ছে যার বাও বাতাস বাংলাদেশের কানেও লাগতে পারে। কেননা, গেরিলা যোদ্ধারা / বা রিফিউজিরা আশ্রয়স্থলের খোঁজে পাশের দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশের বর্ডারে ঢুকতে চাইবে ! ইতিমধ্যে ভারতের মিজোরামে ১২০০০ শরনার্থি ঢুকে বসে আছে [৫]।

    এখানে তাহলে সম্ভাব্য খেলা ও খেলোয়াড়দের ইন্টেরেস্ট গুলো কি কি?

    চীন
    মালাক্কা প্রণালি হয়ে তেল আনার সামুদ্রিক রাস্তা নিয়ে চীন সব সময়ই চিন্তায় থাকে। একারণে বিকল্প স্থল ও জল পথের কনসেপ্ট নিয়ে মেগা প্রজেক্ট তার বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। এর মিয়ানমার অংশে বেশ কিছু প্রজেক্টে ইনভেস্টও করেছে একারণে রাজনৈতিক আবহাওয়া উত্তাল থাকলে সে ক্ষতির হুমকিতে থাকে। [৬] । মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে চাউপিউ (Kyaukphyu) পোর্ট থেকে ডাইরেক্ট কুনমিং পর্যন্ত তার একটি তেল-গ্যাসের লাইন অলরেডি হয়ে গিয়েছে [৭], এবং চাউপিউ তে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন করার কাজ এগিয়ে চলেছে [৮]।
    ( উল্লেখ্য, এটি রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়া সেই আরাকানেই অবস্থিত)



    একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরপাক খায়, কেন চীন দুই দিকেই বাতাস দেয় - সামরিক সরকারকেও হাতে রাখে, বেসামরিক দল সু চি'র এন এল ডি'র সাথেও সু সম্পর্ক রাখে। উত্তর টা অনেক টা এরকম যে মালাক্কা প্রণালীর বিকল্প পথ হিসাবে গ্যাস পাইপলাইনের প্রোজেক্ট টা নিয়েছিল আগের সামরিক জান্তা সরকারের সময় তখন তারা পাবলিক ওপিনিয়নের অত বেশি ধার ধারেনি। কিন্তু অং সাং সুচির সাথে মিলে থিয়েন সিয়েন এর সরকার এলে পরে তাদের এই %৯৫ সম্পন্ন হওয়া তেল-গ্যাস পাইপলাইন সহ দুইটি বড় বড় প্রোজেক্ট লোকাল জনসাধারণ ও এন জি ওদের বাধার মুখে পড়ে - মিয়িতসুন ড্যাম ও লেটপাডাং কপার মাইন প্রোজেক্ট । [৯] । চায়না ভালকরেই জানে - শুধুমাত্র সামরিক সরকারের উপর ভরসা করে মিয়ানমারে তার এত বড় বড় প্রোজেক্ট নিরাপদ রাখা যাবে না - কথায় কথায় আক্রমণের শিকার হবে। একারণে এন্টি চায়না সেন্টিমেন্ট কে ঘুরিয়ে দিতে এবং মিয়ানমারের জনগণের হৃদয় জয় করতে সে এন এল ডি কেও সাপোর্ট দিতে শুরু করে। এখন আবার ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এন এল ডি 'র সরকার ভেস্তে গিয়ে সামরিক সরকার এসেছে - এবং দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি আগস্ট ২০২১ এর চায়নার এম্বাসেডর সেন হাই সামরিক জান্তার নিয়োগ করা এম্বাসেডর এর সাথে একটি ভার্চুয়াল মিটিং এ স্টেট এ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (SAC) তথা চলমান সামরিক সরকারের কাউন্সিল টি কে সে দেশের সরকার হিসাবেই মানছে (!) আবার পাশপাশি সু চির এন এল ডি কেন ভেস্তে গেল সে ব্যাপারেও কথা বলছে। [১০] ! সামনে হয়ত দেখা যাবে NUG শক্তিশালী হলে চায়না তাকে কাছে টেনে নিয়েছে - যে কোন মূল্যে তার বিলিয়ন ডলার প্রোজেক্ট বাচানোটাই বড় কথা।

    বলে রাখা ভাল অপর দিকে সু চি' র নতুন বিদ্রোহী সরকার NUG আমেরিকা ও পশ্চিমের মদদের দিকেই তাকিয়ে আছে। তাদের বলে বলেই আগাচ্ছে।


    ভারত
    ভারতের স্বার্থ হল সিত্তু পোর্ট। যেটি চাউপিউ থেকে মাত্র প্রায় ১০০ কিমি এর মত কাছাকাছি! কোন কারণে যদি ভারতের চিকেন নেক আক্রান্ত হয় তাহলে সে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ট্রানজিট গুলো ব্যবহার করে রসদ নিবে। এখন এমন যদি হয়, বাংলাদেশ কখনো চীনের বলয়ে চলে যায় এবং ভারতকে ট্রানজিট না দিতে চায় তখন কি হবে। তখন সে এই সিত্তু পোর্ট ব্যাবহার করে 'কালাদান' মাল্টিমোডাল প্রোজেক্ট এর মাধ্যমে সহজেই কলকাতা থেকে কালাদান হয়ে মিজোরামে রসদ পৌছাতে পারবে। একারণে মায়ানমার কে তার হাতে রাখা দরকার।


    ( উল্লেখ্য, কালাদান প্রোজেক্ট এর এই সিত্তুও রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়া সেই আরাকানেই অবস্থিত)

    আমেরিকা
    আমেরিকা চায় তার রাইভাল চায়নার বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ যেন সফল না হয়। মিয়ানমারে সে যেন হোঁচট খায়। একারণে সে NUG কে পৃষ্ঠপোষকতা করতে চাইবে এবং সেখানে একটি ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ চলাতে চাইবে। ইতিমধ্যে নির্মিত হওয়া চায়নার প্রোজেক্ট গুলোতে গেরিলাদের দিয়ে আঘাত করাতে চাইবে - পরিবেশে নষ্টের ধোয়া তুলে। আর এই কাজটা সে করতে চাইবে ভারতের মাধ্যমে।

    এর অর্থ মাইনকা চিপায় ভারতঃ
    - একাধারে মিয়ানমার সরকারের সাথে সম্পর্ক ভাল রেখে কালাদান প্রোজেক্ট জারি রাখতে হবে
    - আবার রিফিউজিও নিতে হচ্ছে ( ইতিমধ্যে ১২০০০)
    - পাশাপাশি আমেরিকার অনুরোধে NUG গেরিলাদের আশ্রয়স্থলও দিতে হতে পারে সাথে অস্ত্র-গোলাবারুদ ।

    বাংলাদেশ
    বাংলাদেশের ভাবনা দুটি।
    - NUG এর গেরিলারা বাংলাদেশ সীমান্তেও ঢুকে পরতে পারে
    - ভারত ( আমেরিকা) অনূরোধ করতে পারে তুমিও আমাদের হয়ে কিছু প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দাও NUG গেরিলাদের।

    এখন হিসাব টি সম্ভবতঃ মিলে যায়, কেন সেদিন হঠাত আব্দুল মোমেন বলে উঠল - মিয়ানমার থেকে কেউ এলে আমরা এখন থেকে গুলি চালাব [১১] । ! তার মানে বাংলাদেশ এই খেলায় কিছুদিন নিউট্রাল থাকবে এবং পরে কোন এক দিকে চলে যাবে / যেতে হবে। তা না হলে ১২ লাখের বাইরে ফ্রেশ রিফিউজি নিতে হবে আরও ।

    রোহিঙ্গাদের সবাইকে ভাসানচরে নেওয়ার ব্যাপারে ইউ এন এইচ সি আর এর সাথে অবশ্য একটি চুক্তি হয়েছে এর মধ্যে। [১২]

    মুহিবুল্লাহ মাসটার হত্যাকাণ্ড একটি ভাল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যেটি মিয়ানমার আর্মিও করিয়ে থাকতে পারে।(সম্ভাবনা) । [১৩]। সরল সমীকরণ - রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফিরতের রাজনৈতিক / বা সিস্টেমেটিক পথ বন্ধ করা।
    আর একটি সম্ভাব্য সমীরকরণ - কাজটি ভারতের, যাতে NUG এর কিছু গেরিলা ক্যাম্প বাংলাদেশ তার সীমান্তে করতে বাধ্য হয় এবং অস্ত্র সরবরাহে সাহায্য করে - এই অঞ্চলের কনফ্লিক্টে বাংলাদেশের মেরুকরণ হয় - ভারত-আমেরিকার মুখাপেক্ষী করে রাখা যায়।

    অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং ARSA
    মিয়ানমারে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে যারা সামরিক ক্যু এর সুবাদে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করেছে। [১৪] প্রসঙ্গক্রমে Arakan Rohingya Salvation Army (ARSA) এর মত সংগঠন গুলো ও কি NUG কে সাপোর্ট করছে? করাটা বিচিত্র নয় - সামরিক জান্তা উভয়ের কমন এনিমি ( একই শত্রু)।

    সারকথাঃ
    বাংলাদেশ- মায়ানমার এবং ভারত - মায়ানমার সীমান্তে কিছু গেরিলা কার্যক্রম হবার সম্ভাবনা রয়েছে, যেগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবার সম্ভাবনা বিচিত্র নয়।



    সূত্র সমূহঃ কমেন্ট বক্সে
    সূত্র টিপসঃ গুগল বা ডাক ডাক গো সার্চ
    "যতদিন পৃথিবীতে ফিতনা আছে, ততদিন জিহাদ প্রাসংগিক।
    আর যুগে যুগে কিছু মানুষের ফিতরাতই হচ্ছে ফিতনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, তাঁদের কোন যুক্তির প্রয়োজন পড়ে না
    "


  • #2
    আর একটি গুরুত্বপূর্ন সমীরকরণ টানতে ভুলে গিয়েছি -

    চায়না, ইন্ডিয়ার সাথে প্রায় পুরো বর্ডার জুরে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।

    গত সপ্তাহে ইন্ডিয়ান সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে লাদাখের লেহ তে ভিজিটে গিয়ে নিজেই বলেছে - পূর্ব লাদাখ থেকে শুরু করে তাদের ইস্টার্ন কমান্ড পর্যন্ত ( অর্থাৎ সিকিম - তাওয়াং - অরুণাচল প্রদেশ এর সাথে বর্ডার এলাকার জন্য তাদের যে আর্মি কমান্ড দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সে বরাবর ) চায়না তার মিলিটারি ডেপ্লয়েমেন্ট বাড়িয়েছে।



    ইউটিউবে ইন্ডিয়া টুডে কে দেওয়া একটি ইন্টারভিউতেও সে এমনটি স্বীকার করে নিয়েছে । ( সার্চ করলে পাওয়া যেতে পারে)

    এর একটি সম্ভাব্য সমীকরণ এটা হওয়াও বিচিত্র নয় যে, যদি ভারত কোয়াড এর ফাঁদে পরে মিয়ানমারে চলমান গেরিলা যুদ্ধের কোন সুরতে চীনের বিলিয়ন ডলার প্রজেক্ট গুলোতে ভুলেও আঘাত করে তাহলে তাদের লাইন অফ এ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বরাবর ভারতকে তার উত্তর সীমান্ত বরাবর এঙ্গেজ করার হুমকি প্রস্তুত থাকছে।
    "যতদিন পৃথিবীতে ফিতনা আছে, ততদিন জিহাদ প্রাসংগিক।
    আর যুগে যুগে কিছু মানুষের ফিতরাতই হচ্ছে ফিতনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, তাঁদের কোন যুক্তির প্রয়োজন পড়ে না
    "

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, সুন্দর বিশ্লেষণ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X