Announcement

Collapse
No announcement yet.

কাঁটাতারের বেড়া: পর্ব - ৫

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কাঁটাতারের বেড়া: পর্ব - ৫

    বি.দ্র: এই কাহিনীতে কিছু ভাইয়ের সফরের অভিজ্ঞতা গল্পাকারে যুক্ত করা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাও (যেগুলো বাস্তবে ঘটেছে)। তবে ঘটনার ৯০ শতাংশ কল্পনায় আঁকা যা অদূর ভবিষ্যতে ঘটবে ইনশাআল্লাহ। লেখনীতে উল্লেখিত সব ব্যক্তির নাম, জায়গার নাম এবং রুট সম্পূর্ণ কাল্পনিক। লেখার সঠিক গতি-প্রকৃতি বজায় রাখার জন্য ভবিষ্যৎ সময়কালকে কখনো অতীত এবং কখনো বর্তমানের আঁচরে চিত্রায়িত করা হয়েছে।







    ------------------------

    অঙ্গারপোতা দহগ্রাম ছিটমহল।
    ১৯৭১ এর পরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে ভারত কর্তৃক অন্যায়ভাবে দখলকৃত ছিটমহলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি, যা তিন বিঘা করিডোর নামে পরিচিত। পঞ্চগড় জেলাস্থ উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী একটি ছিটমহল এটি যা অঙ্গারপোতা দহগ্রামের মুসলিমদেরকে দুইভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলা থেকে দহগ্রামের সাথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটির উপর এই করিডোরটি স্থাপিত। করিডোরের দুইপাশে দু’টি “ইনট্রান্স গেট” তৈরি করা হয়েছে। দুটি গেট-ই সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এরা চাইলেই এই অঞ্চলের মুসলিমরা দুইপাশে যাতায়াত করতে পারে আর যদি এরা যাতায়াতের সুযোগ না দেয় তাহলে এই ছিটমহল তথা তিন বিঘা করিডোরের উত্তরাংশের সমস্ত বাসিন্দাকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়।


    করিডোরের দক্ষিন-পূর্বাংশ অর্থাৎ সম্মুখভাগে আধা কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের প্রথম চেকপোষ্ট এবং উত্তর-পূর্বাংশ অর্থাৎ পশ্চাৎভাগে পরবর্তী দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের দ্বিতীয় চেকপোষ্ট। চেকপোষ্ট দু'টির দায়িত্বে আছেন ল্যান্স নায়েক আফতাব উদ্দীন যিনি আনসার আল ইসলামের এই গোপন মিশনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।


    ল্যান্স নায়েক আফতাব উদ্দীনের পৈতৃক নিবাস ছিলো সিলেট। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে সিলেটে নিকটাত্মীয় তেমন কেউ না থাকায় সম্পত্তি বিক্রি করে ২০০৪ সালে স্বস্ত্রীক ঢাকায় চলে আসেন তিনি। সাথে ছিলো তের বৎসর বয়সী একমাত্র মেয়ে রুবাইয়্যা। বর্তমানে খিঁলগা ফ্লাইওভার থেকে পূর্ব দিকের আবাসিক এলাকায় নিজস্ব দোতলা একটি বাড়ি আছে উনার। দেশকে নিয়ে চলমান ষড়যন্ত্র সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই অবগত ছিলেন তিনি। মনে মনে খুব আক্ষেপ করতেন চোখের সামনে নিজ দেশের, দেশের জনগণের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে। ২০০১ সালে যখন বিডিআর বিদ্রোহের জঘন্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ প্রেমিক বিডিআর কর্মকর্তা এবং জওয়ানদের চাকুরীচ্যূত এবং কারাবন্দী করা হয় তখন থেকেই তিনি প্রতীক্ষা করছিলেন এমন কোন তৃতীয় শক্তির যা এই দেশ, এই জনগণ সর্বোপরি মুসলিম জনসাধারণকে ষড়যন্ত্রের এই কালো থাবা থেকে উদ্ধার করবে। পরর্তীতে আল্লাহ’র পছন্দনীয় বান্দাদের মধ্য থেকে এমনই এক বাহিনী বাংলার জমীনে আত্মপ্রকাশ করে যার জন্য দিনের পর দিন তিনি সহ আপামর জনসাধারণ প্রহর গুণছিলো। নামাজে সববময় দোয়া করতেন আফতাব সাহেব। কিন্তু কোনভাবেই তিনি এই বাহিনীর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সুমহান রবের কৃপায় এক বিরাট সুযোগ তার বাড়ির দোরগোড়ায় চলে আসে।


    এটি ছিলো ২০১৮ সালের ফেব্রূয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ। ল্যান্স নায়েক আফতাব উদ্দীন দু’ মাসের ছুটিতে ঢাকাস্থ নিজের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তখন। মেয়ে রুবাইয়্যা মেডিকেলে পড়া শেষ করে সবেমাত্র ইনটার্নশীপ করছিলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে। কিন্তু দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারনে বন্ধ হয়ে ছিলো ওদের ইনটার্নশীপ। সেই বৎসরে আনসার আল ইসলাম বেশ কিছু সফল অপারেশন সম্পন্ন করার কারণে উন্মাদ হয়ে উঠেছিলো তাগুত সরকার। মুজাহিদদের সফলতায় গোপনে আনন্দাশ্রু ঝরাতেন আফতাব উদ্দীন কিন্তু কোন এক অজানা আশঙ্কায় নিজ স্ত্রী-কণ্যাকে তিনি কখনো নিজের মনোভাব ব্যক্ত করার সাহস পাননি।


    ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩ তারিখ রাত ১২ টার পর খিঁলগা পুলিশ ফাঁড়িতে এ্যাম্বুস করে আনসার আল ইসলামের এক দুর্ধর্ষ গেরিলা ইউনিট। অপারেশন সফল হয় কিন্তু আহত হয় গেরিলা ইউনিটের দুই সদস্য আর পালাতে গিয়ে এদের মধ্যে একজন মূল টিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ আক্রমণ শুরু করার পূর্বেই মালিবাগ রুট থেকে আগত এক টহল ইউনিটের আকস্মিক ঘেরাওয়ে পড়ে গিয়েছিলো মুজাহিদরা। কিন্তু উভয় দল কারো অবস্থান সম্পর্কে পূর্ব থেকে ছিলো অজানা। অপরদিকে মুজাহিদদের রেকি টিমের তথ্যানুসারে কথা ছিলো মালিবাগ থেকে আগত টহল ইউনিট ১২ টার পূর্বেই পুলিশ ফাঁড়ি অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে যাবে। কিন্তু কোন কারণে সেদিন বিলম্ব হয়েছিলো আর এই তথ্যটি গেরিলা ইউনিটের কাছে ছিলো না। যার কারনে পশ্চাৎদিক থেকে কোন পাল্টা আক্রমণ না আসার ব্যাপারে তারা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো।


    মূল টিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খিঁলগা আবাসিক এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ে তাকবীর। পালাতে গিয়ে একটি গুলি লাগে ডান হাতে আর একটি গুলি বাম পায়ের উরু ছুঁয়ে চলে যায়। সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় সে, মাথাটা বো করে ঘুড়ে ওঠে। কোন রকমে একটা গাছ ধরে টাল সামলিয়ে নেয় তাকবীর। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কোন ভাবেই আত্মসমর্পন করা যাবে না তাকবীর, যদি শত্রুর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েই যাও তাহলে অন্তত একটা শত্রুকে সাথে নিয়ে মরতে হবে – মনে মনে নিজেকে কথাগুলো শুনিয়ে দেয় সে। পালানোর সময় ধাক্কা খেয়ে হাতের রাইফেলটা কোথায় যেন ছিটকে পড়েছে ওর। তাই হোলস্টার থেকে সাইলেন্সার লাগানো সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু ক্যালিবারের প্রিয় সেমি অটোমেটিক পিস্তলটি হাতে তুলে নেয় তাকবীর। মেইন রোড থেকে পূর্ব দিকে নেমে যাওয়া রাস্তাটা ধরে সামনে এগুতে থাকে সে। পূর্ব দিকে কিছুদূর যাওয়ার পরে ডানে মোড় নেয় আবার। অন্ধকারে একটা মোটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। এদিকের একটা ল্যাম্পপোষ্ট নষ্ট থাকায় বেশ কিছুখানি জায়গা অন্ধকার হয়ে ছিলো। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দিক চেনার চেষ্টা করে তাকবীর। কিন্তু রক্তক্ষরণের কারণে এবং ব্যথায় পালানোর চেয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। সামনে একটা দোতলা বাড়ি লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় আবার। কেমন জানি মাথা গুলিয়ে উঠছে হঠাৎ, ঝিমঝিম করছে পুরো শরীর, গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে যেন, ঢোক গিলতে কষ্ট হচ্ছে খুব। অনেক কষ্টে বাড়ির পিছন দিকটাতে গিয়ে একটা অন্ধকার মতো জায়গা খুঁজে নিয়ে পাঁচিল ধরে কিছুক্ষণ দম নেয় আবার। মাথার ঝিমঝিম ভাব বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত, মনে হচ্ছে সামনের পাঁচিলটা ওর সামনে লাফাচ্ছে। ব্যথায় ডান হাত নাড়াতেই পাড়ছে না কোনভাবে। তারপরেও অনেক কষ্টে পাঁচিলের উপর উঠে বসে সে। যেই না উঠে বসেছে ওমনি সাই করে মাথাটা ঘুরে যায় ওর। হাত থেকে পিস্তলটা নিচে পড়ে যায়। বুঝতে পারে জ্ঞান হারাচ্ছে সে। শরীরের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিস্তলের মতই ঝুপ করে নিচে পড়ে যায় তাকবীর।



    প্রচন্ড ফায়ারিংয়ের শব্দে বিছানায় ধড়ফড় করে উঠে বসে রুবাইয়্যা। পাশের ঘড়ে মা রোকসানাও জেগে যান। বাবা ল্যান্স নায়েক আফতাব উদ্দীন কি একটা দাপ্তরিক কাজে পিলখানা সদরে গিয়েছেন, রাত ১১ টার দিকে ফোন করে জানিয়েছেন রাতে ফিরতে পারবেন না। বাড়িতে রুবাইয়্যা, ওর মা এবং পাহারাদার মোস্তাক ছাড়া আর কেউ নেই। ভয় পেয়ে মাকে ডাক দেয় রুবাইয়্যা, রোকসানা বেগমও ভয় পেয়ে ছুটে আসেন মেয়ের ঘড়ে। পনের মিনিটের মধ্যে গোলাগুলি থেমে যায়। পুলিশের পেট্রোল কারগুলো সাইরেন বাজাতে বাজাতে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি শুরু করে। দোতলার পিছনের দিকের ঘড়টাতে থাকে রুবাইয়্যা। পাশের ঘড়ে ওর বাবা-মা। নিচের তলা সাধারণত ফাঁকাই পড়ে থাকে। ঘড়িতে ১ টা বেজে ১৭ মিনিট। মা-মেয়ে দুজনেই দরজা খুলে পিছনের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। গলা বাড়িয়ে মোস্তাককে ডাক দেয় রুবাইয়্যা,


    - মোস্তাক, মোস্তাক .......

    - জ্বী আপা, জবাব দেয় মোস্তাক

    - কিছুর শব্দ পাওনি তুমি?

    - হ পাইছি, মনে হয় টেনাসমিটার (ট্রান্সমিটার) বাষ্ট হইছে

    - ওরে গর্দভ, পনের মিনিট ধরে ট্রান্সমিটার বাষ্ট হয়? বাহিরে গোলাগুলি হইছে তারই শব্দ হচ্ছিল এতোক্ষণ। তুই ভয় পাসনি তো আবার? হাসি চেপে রেখে প্রশ্ন করেন রোকসানা বেগম

    - খালাম্মা যে কি কয়, হে হে করে জবাব দেয় মোস্তাক


    হঠাৎ ঝুপ করে কিসের শব্দ শুনে থেমে যায় সবাই। অন্ধকারে কিছু বুঝতে না পেরে মোস্তাককে জিজ্ঞেস করে রুবাইয়্যা,

    - মোস্তাক ভাই, কিসের যেন শব্দ হলো পাঁচিলের ওদিকে।

    - হ, আমিও শুনতে পাইছি। আচ্ছা আমি দেইখ্যা আসতাছি।

    একটু পরে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে মোস্তাক। পিলে চমকে ওঠে মা-মেয়ে দুজনেই।


    - মোস্তাক কি হয়েছে, চেচাচ্ছিস কেন?

    - আপা.... খালাম্মা....... একটা মানুষ


    মা-মেয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে, ঢোক গিলতে গিলতে রাগত স্বরে রোকসানা বেগম বলেন,


    - একটা লোক দেখে তাকে না ধরে তুই চিল্লাচ্ছিস কেন অ্যা? চোর দেখে কি তুই পালিয়ে থাকিস নাকি!

    - খালাম্মা মানুষটা মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে, মাটিতে পড়ে আছে


    কি করবে বুঝতে পারে না দু’জনেই। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকাতে থাকে খালি। এমন সময় ফোন বেজে ওঠে রুবাইয়্যার। দৌড়ে গিয়ে ফোন রিসিভ করে সে, আফতাব উদ্দীন ফোন করেছেন।

    - হ্যালো বাবা

    - মা রুবাইয়্যা তোমরা কি গোলাগুলির শব্দ পেয়েছো?

    - হ্যা বাবা, কাছেই কোথাও হবে। গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে আমার।

    - তোমার আম্মা কোথায়?

    - আম্মা’র ও ঘুম ভেঙ্গে গেছে, আমার ঘড়েই আছে এখন। বাবা কিছু কি জানতে পেরেছো কি হয়েছে?

    - হ্যা মা, খিঁলগা পুলিশ ফাঁড়িতেই একটা এ্যাম্বুস হয়েছে। পুলিশ তো ধারণা করছে আনসার আল ইসলামের কোন গেরিলা ইউনিট এই হামলা করেছে। সবগুলো টিভি চ্যানেল ঘটনাস্থল থেকে এখন লাইভ টেলিকাস্ট করছে। আমি আরো কিছু জানতে পারলে তোমাদেরকে জানাচ্ছি। তোমরা টেনশন না করে ঘুমিয়ে পড়ো। সমস্যা হলে আমাকে ফোন করো।


    বাবাকে লোকটার কথা বলতে গিয়ে-ও থেমে গেলো রুবাইয়্যা। বললে এখন বাবা শুধু শুধু টেনশন করবে।


    - ঠিক আছে বাবা

    - আচ্ছা মা, রাখলাম। পরে ফোন করবো


    - কি বললো তোর বাবা? উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন রুবাইয়্যার মা।

    - আম্মা, মোস্তাককে বলবো আরেকবার লোকটাকে ভালোভাবে দেখে আসতে? জবাব না দিয়েই প্রশ্ন করলো রুবাইয়্যা।

    - আচ্ছা বল, দ্বিধা জড়িত কন্ঠে জবাব দিলেন তিনি। কিন্তু তোর বাবা কি বললো?


    বাবার বলা কথাগুলো মা’কে শোনালো রুবাইয়্যা। এরপর দু’জনেই আবার একসাথে বেলকনিতে বেড়িয়ে আসলো।

    - মোস্তাক, তুমি আরেকবার গিয়ে ভালো করে দেখো তো লোকটা আহত কি না?

    - জ্বী আচ্ছা বলে মোস্তাক পাঁচিলের দিকে দৌড়ে দিলো। একটু পরে ফিরে এসে বললো, জ্বী আপা লোকটা আহত। ডান হাতে মনে হয় গুলি লেগেছে। রক্ত পড়চে এখনো।

    - আম্মা কি করবো এখন?

    - বুঝতে পারছি না মা। মোস্তাককে কি বলবো লোকটাকে পাঁচিলের ওপাশে রেখে আসতে?

    - বিপদগ্রস্থ লোকটাকে কি বাইরে রেখে আসা ঠিক হবে আম্মা? রক্তক্ষরণের মাত্রা বেশি হলে লোকটা মারাও যেতে পারে। একজন আহত লোক আল্লাহ’র ইচ্ছাতেই আমাদের বাড়িতে এসেছে। হয়তো আল্লাহর কোন পরিকল্পনা আছে এতে। এক কাজ করি, মোস্তাককে বলে লোকটাকে নিচের তলায় নিয়ে আসি?

    - আচ্ছা নিয়ে আসতে বল, চিন্তাক্লিষ্ট কন্ঠে উত্তর দিলেন রোকসানা বেগম

    - মোস্তাক, লোকটাকে নিচ তলায় নিয়ে আসো। আমি নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি।

    - জ্বী আচ্ছা।


    মা-মেয়ে দু’জনেই নিচের তলায় নেমে গেলেন। রুবাইয়্যা দরজা-জানালার সমস্ত পর্দা ভালো করে মেলে দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলো। একটু পরে লোকটাকে কাঁধে করে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘড়ে প্রবেশ করলো মোস্তাক। মা-মেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো অমায়িক চেহারার এক যুবক ওদের বাড়ির গেষ্ট রুমে আহত হয়ে পড়ে আছে। আহত হওয়া সত্বে-ও মুখমন্ডল থেকে জ্যোতি ঠিকরে পড়ছে যেন। সম্বিৎ ফিরে পেতেই রুবাইয়্যা খেয়াল করলো যুবকের ডান হাতের ক্ষত স্থান থেকে এখনো রক্ত পড়ছে। এক ছুটে উপরের তলায় উঠে গেলো সে এবং একটু পরেই হন্তদন্ত হয়ে হালকা সার্জারীর কাজে ব্যবহৃত সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে ফিরে এলো।


    - আম্মা, উনার ডান হাতে একটা গুলি আটকে আছে। গুলিটা বের করে ব্যান্ডেজ না করা পর্যন্ত রক্ত বন্ধ হবে না। তুমি একটু কষ্ট করে এক
    গ্লাস দুধ গরম করে আনো। আর মোস্তাক এখানে বসে থাকুক। ও আমাকে একটু হেল্প করতে পারবে।

    - আচ্ছা, বলে উঠে গেলেন রোকসানা বেগম।


    দশ-পনের মিনিটের মধ্যেই গুলি বের করে ব্যান্ডেজ করে ফেললো রুবাইয়্যা। একটু পরে আহত যুবক বিড়বিড় করে মুখ নাড়াতে শুরু করলো। রোকসানা বেগম দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে রুবাইয়্যার পাশে এসে দাড়ালেন। মোস্তাক হা করে যুবকের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো।


    - আম্মা, কিছুক্ষনের মধ্যেই উনার জ্ঞান ফিরবে। জ্ঞান ফিরলেই উনাকে দুধটুকু খাইয়ে দিতে হবে। মোস্তাক তুমি উনার ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে মাথা হালকা উপরে তুলে দুধ খাইয়ে দেবে। একটু একটু করে, একসাথে সবটুকু খাওয়াবে না। জ্ঞান ফেরার পরে প্রথমেই পানি খেতে চাইতে পারেন উনি।


    রোকসানা বেগম দুধের গ্লাস টেবিলের উপর রেখে পানি আনতে গেলেন। একটু পরে ফিরে এসে দেখেন যুবক চোখ মেলেছে। কিন্তু একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো তাকবীর। কিছুক্ষণ পর আবার চোখ মেলে পানি খেতে চাইলো সে। মোস্তাক রোকসানা বেগমের হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ওর মাথাটা সামান্য উঁচু করে কয়েক ঢোক পানি খাইয়ে দিলো। আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো তাকবীর।


    - আপনি ভয় পাবেন না, আহত অবস্থায় আপনি আমাদের পাঁচিল থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। আপনি যেই হোন, আপাতত নিরাপদে আছেন।


    বলতে গিয়ে গলা কেঁপে গেলো রুবাইয়্যার। আবার চোখ মেলে তাকালো তাকবীর। দৃষ্টিতে ভয় এবং বিস্ময়। একে একে তিনজনের দিকেই দৃষ্টিপাত করলো সে।


    - আমি আপনার হাত থেকে গুলিটা বের করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। আপনি দুধটুকু খেয়ে নিলে তাড়াতাড়ি সুস্থবোধ করবেন।


    বলে মোস্তাকের দিকে ইশারা করলো রুবাইয়্যা। মোস্তাক পূর্বের ন্যায় গ্লাস থেকে একটু একটু করে দুধ খাইয়ে দিলো তাকবীরকে। অর্ধেক গ্লাস খেয়ে গ্লাস সরিয়ে দিলো সে। রুবাইয়্যা ইশারা করায় গ্লাস টেবিলের উপর রেখে দিলো মোস্তাক।


    - আপনি কি কিছু বলবেন?

    - এখন কয়টা বাজে?

    - দুইটা তেত্রিশ মিনিট, ঘড়ি দেখে জবাব দিলো রুবাইয়্যা।

    - আমি ফজরের সময় এখান থেকে বেড়িয়ে যাবো।

    - আপনি চাইলেও যেতে পারবেন না, কারণ আপনাকে এখন ব্যথা নাশক এবং ঘুমের ঔষধ খেতে হবে। খুব ইমারজেন্সী থাকলেও কমপক্ষে দুইদিন আপনি নিজেই বের হতে পারবেন না। আচ্ছা আপনি যেই হোন না কেন আমি আপনাকে আশ্বস্থ করছি এই দুইদিন বাহিরের কেউ জানবে না যে আপনি আমাদের এখানে আছেন। আমাদেরকে ভরসা করলে নিজের বিষয়ে কিছু বলতে পারেন আপনি।


    মোস্তাকের দিকে তাকালো তাকবীর। ওর চোখের ভাষা বুঝতে পেরে রুবাইয়্য বললো,


    - ভয় নেই, এ হচ্ছে মোস্তাক। আমাদের একজন বিশ্বস্ত কেয়ারটেকার, ছোট বেলা থেকেই আমাদের সাথে আছে। ওই তো আপনাকে কাঁধে করে এখানে নিয়ে এসেছে।

    - পাঁচিল থেকে আমি যেখানে পড়ে গিয়েছিলাম ওখানে আমার একটা পিস্তল পড়ে আছে। দয়া করে মোস্তাককে বলুন ওটা নিয়ে আসতে।


    মোস্তাক সাথে সাথে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। এতোক্ষণ চুপ করে ওদের কথোপোকথন শুনছিলেন রোকসানা বেগম। পিস্তলের কথা শুনে একটু হকচকিয়ে গেলেন উনি।


    - বাবা তোমার নাম কি? জিজ্ঞেস করলেন রোকসানা বেগম

    - তাকবীর....

    - তুমি কি পুলিশ ফাঁড়িতে...... তাকবীর রোকসানা বেগমের দিকে তাকানোর কারণে এতোটুকু বলেই থেমে গেলেন উনি।

    - জ্বী আন্টি, আমি ওখানে ছিলাম....


    নিজের ভিতরে চেপে রাখা কৌতূহল ধরে রাখতে পারছিলো না রুবাইয়্যা। জিজ্ঞেস করলো সে,


    - আপনি কি একা ছিলেন?

    - না, আমার সাথীরা নিরাপদে ফিরে গেছে। আমি পালাতে গিয়ে আহত হওয়ার কারণে ওদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। দ্রুততার কারণে ওরা
    বুঝতে পারেনি আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি।

    - আপনারা কি পুলিশ ফাঁড়িতে এ্যাম্বুস করেছিলেন?

    - হ্যা


    কথা বলতে গিয়ে থেমে গেলো তাকবীর। মোস্তাক ফিরে আসছে। পিস্তলটা দুই হাতে এমনভাবে ধরে নিয়ে আসছে দেখে মনে হচ্ছে খুব ওজন ওটার। হাত বাড়িয়ে পিস্তলটা ফিরিয়ে নিলো তাকবীর। বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না, বাধ্য হয়ে আবার শুয়ে পড়লো সে।


    - আমি দুইটা ঔষধ দিচ্ছি। এগুলো এখনি খেয়ে নিন। তারপরে লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে। মোস্তাক আপনার সাথেই থাকবে এখানে, কোন
    কিছুর প্রয়োজন হলে ওকে জানাবেন। আমি সকালে এসে আপনাকে একবার দেখে যাবো। আশা করছি প্রয়োজনের চেয়ে কম সময়ের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। মোস্তাক তুমি ওনাকে ঔষধ দুইটা খাইয়ে দাও। উনি একা খেতে পারবেন না।


    এই বলে রুবাইয়্যা ওর মাকে নিয়ে দোতলায় চলে গেলো। মোস্তাক তাকবীরের মাথা সামান্য উঁচু করে ধরে পূর্বের ন্যায় খুব সাবধানে ঔষধ দুইটা খাইয়ে দিলো।


    - ভাইয়া, আপনি এবার ঘুমাইয়া পড়েন

    - তুমি ঘুমাবে না মোস্তাক?

    - ভাইয়া আমি তো রাতে ঘুমাই না, পাহারা দেই।

    - ও আচ্ছা, বলে চোখ বন্ধ করে ফেললো তাকবীর। ক্লান্তিতে সারা শরীর যেন তলিয়ে যাচ্ছে ওর। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো সে।


    রাতের শেষ প্রহরে মুষলধারে শুরু হলো বৃষ্টি। আর রুবাইয়্যার মনে তখন ঝড় বয়ে চলছিলো এই কথা ভেবে যে, আগামীকাল কিভাবে ওর বাবাকে তাকবীরের বিষয়ে জানাবে।



    পরেরদিন দুপুর বেলা বাড়ি ফিরলেন আফতাব উদ্দীন। খেতে বসে কথা বলছিলেন মেয়ের সাথে। মা রোকসানা বেগম ওদের পাতে খাবার তুলে দিতে দিতে কথা শুনছিলেন। রবাইয়্যা বুঝতে পারছে না কিভাবে তাকবীরের বিষয়টা উপস্থাপন করবে ওর বাবার সামনে। ওর বাবার মুখে কখনো মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কিছু শোনেনি ও। কিন্তু তারপরেও বলতে কেমনজানি ভয় হচ্ছে ওর। যদি ওর বাবার দ্বারাই এই যুবকের কোন ক্ষতি হয়ে যায়, যাকে সে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে! এই আশঙ্কায় দুরু দুরু বুক কাঁপছিলো ওর।


    - বাবা, কালকের বিষয়ে আর কিছু জানলে পরে?

    - হ্যা মা, ওটা আনসার আল ইসলামের একটা গেরিলা ইউনিট ছিলো। কাল রাতেই সংগঠনটি দ্বায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। পুলিশ তো স্বীকার করছে না কিন্তু আমরা ঠিকই বুঝতে পেরেছি যে, এই সংগঠনের গেরিলা ইউনিটগুলো খুবই দুধর্র্ষ। ওদের একজনকেও আটক করতে বা
    মারতে পারেনি পুলিশ। আর ওরা.... ম্যাসাকার করে দিয়ে গেছে।

    - বাবা, এই সংগঠনের বিষয়ে তোমার মতামত কেমন?

    - কেন মা, হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?

    - এমনি জানতে চাচ্ছি, তেমন কিছু না।

    - আচ্ছা মা তোকেই একটা প্রশ্ন করি, আজ পর্যন্ত আনসার আল ইসলাম যতগুলো অপারেশন সম্পন্ন করেছে বা কাজ করেছে এর মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যায় অথবা জনসাধারণের ক্ষতি হয় এমন কোন কিছু কি তোর চোখে পড়েছে কখনো?

    - না বাবা তা পড়েনি, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তাহলে এদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে কেন?

    - খারাপ ধারণা পোষণ করে না বরং করানো হয়। কারণ এই সংগঠন সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে যে হারে জনসমর্থন অর্জন করেছে তাতে সরকার তো অবশ্যই ভারতের ঘুম পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া মানুষ তো সাধারণত টিভি-পত্রিকা থেকে এসব খবর দেখে যার কারণে মিথ্যা ছাড়া ওরা আর কিছুই জানতে পারে না। আর মিথ্যার স্বভাবটাই তো এমন যে, বারবার শুনলে সেটা সত্য বলে মনে হয়।

    - আচ্ছা বাবা একটা কথা জিজ্ঞেস করি, তুমি যদি এই সংগঠনের কাউকে পেয়ে যাও তাহলে কি করবে?


    খাওয়া বন্ধ করে মেয়ের দিকে তাকালেন আফতাব উদ্দীন। রোকসানা বেগম ইতস্ততভাবে একবার স্বামীর দিকে আর একবার মেয়ের দিকে তাকাচ্ছিলেন।


    - তোর বাবার প্রতি তোর ধারণা কেমন মা?

    - আমি আমার বাবার বিষয়ে খুব সুধারণা পোষণ করি। এবং আমি তোমাকে সারাজীবন সততার উপর পেয়েছি।

    - তাহলে শুনে রাখ, যদি একবার ওদের সাক্ষাৎ পেতাম তাহলে নিজের ঈমান রক্ষার জন্য, দেশকে বাঁচানোর জন্য, দেশের জনগনকে এই
    জালিম শাসকের জুলুম থেকে বাঁচানোর জন্য ওদের আনুগত্য গ্রহণ করে নিতাম।



    বলতে গিয়ে গলা ধরে গেলো আফতাব উদ্দীনের। গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক ঢোক পানি খেয়ে নিলেন উনি। মা-মেয়ে দু’জনেই স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললো এতোক্ষণে।


    - বাবা, যদি বলি তোমার বাড়িতে ওদের-ই একজন আহত মুজাহিদ আশ্রয় নিয়েছে তাহলে বিশ্বাস করবে?

    - এটা এমন এক সৌভাগ্যের কথা যে ভাবতেও সাহস হয় নারে মা।

    - বাবা, আল্লাহ সেই সৌভাগ্য তোমার ঘড়ে নিয়ে এসেছেন

    - মানে...



    খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো আফতাব উদ্দীনের। স্ত্রী রোকসানা বেগমের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন উনি। দেখলেন মুচকি মুচকি হাসছে তার স্ত্রী। মেয়েও হাসছে মিটমিট করে।


    - মা, তুই কি তোর বাবার দুর্বলতা জানতে পেরে মজা করছিস?

    - বাবা আসো আমার সাথে, বলে হাত ধরে বাবাকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেলো রুবাইয়্যা।

    - এই কি করছিস, তোর বাবাকে খাওয়াটা শেষ করতে দে। বলে রোকসানা বেগমও ওদের পিছুপিছু নিচে নেমে গেলো।


    গেষ্ট রুমের দরজা বাহির থেকে তালা দেয়া ছিলো। তালা খুলে সালাম দিয়ে বাবাকে সহ ভিতরে প্রবেশ করলো রুবাইয়্যা। তাকবীর হতভম্ব হয়ে শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। সালামের উত্তর দিতেও ভূলে গেছে সে।


    - ইনি হচ্ছেন ল্যান্স নায়েক আফতাব উদ্দীন, আমার বাবা রুবাইয়্যা বললো।

    - আসসালামুআলাইকুম, সালাম দিলো তাকবীর

    - আর বাবা উনি হচ্ছেন আনসার আল ইসলামের একজন গেরিলা যোদ্ধা যিনি গতকাল আহত হয়ে তোমার বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

    - ওয়ালাইকুমুসসালাম, সালামের জবাব দিয়ে তাকবীরের দিকে এগিয়ে গেলেন আফতাব সাহেব। কিছুক্ষণ তাকবীরের দিকে তাকিয়ে থেকে পরম স্নেহে আলিঙ্গন করলেন ওকে। তাকবীরের কাছে পুরো পরিস্থিতি সহজ হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যেই। হঠাৎ করেই এই পরিবারের প্রতি পরম ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করলো সে।। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতে অন্তর বিগলিত হয়ে উঠলো ক্ষণিকের মধ্যেই। বারবার মনে পড়তে থাকলো কুরআনের একটি আয়াত,

    "নিশ্চয় কষ্টের পরেই আছে সুখ...."

    অন্তর ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসলো কিছু কথা, অন্তরের সাথে সাথে দু'চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুবিন্দুগুলোও যেন জানান দিচ্ছিলো ওর মনের আকুতি -


    "রব আমার! আমার মাবুদ! আমার মালিক...... আপনার দুর্বল এক বান্দার পক্ষে আপনার মহীমা বোঝার কোনই সাধ্য নাই। পরওয়ারদেগার, যার শরীর কে আপনার দ্বীনের জন্য রক্তাক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন তার হৃদয়কে আপনার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে দিন। মাবুদ হে, আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে দিন আর তাগুতকে উদ্ভ্রান্ত করে রাখুন। ইয়া আল্লাহ আমরা তো ক্ষমতার মসনদ চাই না, তাগুতের মসনদ উল্টিয়ে দিয়ে আপনার কালিমার ঝান্ডা উড়াতে চাই। আমাদের কে দুনিয়ার মোহ থেকে হিফাজত করুন এবং মুক্ত রাখুন সম্পদের লোভ থেকে। বরং আপনি আমাদের জন্য জান্নাতে আপনার পাশে একটি ঘড় নিমার্ণ করে দিন যেমনটি আপনি ফেরাউনের স্ত্রী'র জন্য কবুল করেছেন। মাবুদ আমার, কিছুই চাই না আমরা .......শুধু আপনাকে চাই...... আপনার দিদার চাই............"




    এক আকস্মিক ঘটনার মধ্য দিয়ে আনসার আল ইসলাম খুঁজে পেয়েছিলো এমন এক আফতাব উদ্দীন ও তার পরিবারকে, দ্বীনের জন্য যাদের প্রয়োজনীয়তা ছিলো অপরিসীম। আর যে পরিবার মুজাহিদদের সাক্ষাৎ পাওয়ার আশায় নীরবে দিনের পর দিন প্রতীক্ষার প্রহর গুণেছিলো।




    ৪র্থ পর্বের লিঙ্ক:
    https://dawahilallah.com/showthread....6%AC-%E0%A7%AA




    to be continued inshaaAllaah...
    Last edited by Mujaheed of Hind; 04-20-2017, 07:18 AM.

  • #2
    জাযাকাল্লাহ আখি...
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
    আল-&#248হে রব আপনার যে প্রিয় বান্দারা জান্নাতের সবুজ পাখি হয়ে আপনার আরশের নিচে এসে ঘুমায় তাদের সাথী হবার তৌফীক দান করুন... আমীন ইয়া আরহামার রাহীম!!!

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ!
      মহান আল্লাহ আপনার এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
      Last edited by Mullah Murhib; 04-11-2017, 08:11 AM.
      বর্বর হিংস্র হায়েনার বিষাক্ত থাবায় আমাদের মা-বোন আর ভাইদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে আমাদেরই নিজ ভূমি। আর তুমি........তবুও তুমি বসে থাকবে ? জেনে রেখো! তোমাকে অবশ্যই এ নির্যাতিত উম্মার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে।

      Comment


      • #4
        জাজাকাল্লাহ আখি ইন. এবার একটু সময় বেশি লাগলো আগের তুলনায়
        পরেরটার অপেক্ষায় থাকবো ইন...

        Comment


        • #5
          ভাই,আপনার লেখাটা অনেক সুন্দর লাগছে। ভাই, অবশ্যঈ লেখা বন্ধ করবেন না।

          Comment


          • #6
            ভাই,যাজাকুমুল্লাহ খাইরান। অনেক অনেক অনেক সুন্দর হচ্ছে।

            তবে অনুরোধ করব আরেকটু কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে যান। কারণ ভবিষ্যতে যদি কোন ভাই এমন বিপদে পড়ে তো অবচেতন মনেই এমন এক আফতাব সাহেব বা রুবাইয়্যার আশা করবে। আর এটা কি বাস্তবে হওয়ার মত ভাই?
            মুমিনদেরকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব
            রোম- ৪৭

            Comment


            • #7
              Originally posted by আবু মুহাম্মাদ View Post
              ভাই,যাজাকুমুল্লাহ খাইরান। অনেক অনেক অনেক সুন্দর হচ্ছে।

              তবে অনুরোধ করব আরেকটু কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে যান। কারণ ভবিষ্যতে যদি কোন ভাই এমন বিপদে পড়ে তো অবচেতন মনেই এমন এক আফতাব সাহেব বা রুবাইয়্যার আশা করবে। আর এটা কি বাস্তবে হওয়ার মত ভাই?
              আখি ফিল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন

              উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলে যে কোন মাধ্যম থেকে আল্লাহর সাহায্য আসতে পারে এবং যারা সত্যের কাঙ্গাল তাদেরকে আল্লাহ কখনো নিরাশ করেন না এই বিষয়টা তুলে ধরা । আল্লাহ চাইলে কাফেরদের মাধ্যমেও দ্বীনের উপকার সাধিত হয়। আর এখানে আফতাব উদ্দীনকে তো ধার্মিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে যিনি মুজাহিদদের হিত্যাকাঙ্খী ছিলেন। তাছাড়া, মুজাহিদদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরাহ বাস্তবতাকে হার মানায় এরকম অনেক নজির আছে।

              আমরা আশা করি, তাগুত বাহিনীর মধ্য থেকে ভবিষ্যতে এমন কেউ কেউ মুজাহিদদের সাথে যুক্ত হবেন যাদের মনে আল্লাহ সত্যের বীজ বপন করেছেন অথবা তাদের মধ্যে অপেক্ষায় থাকা কেউ।

              আখি, সম্পূর্ণ লিখাটা এক্সপেরিমেন্টালি প্রকাশ করা হচ্ছে। বই আকারে প্রকাশের সুযোগ হলে ভেরিফাই করেই করা হবে ইনশাআল্লাহ। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় কাঁট-ছাট হবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক ভাই নাসিহা দিচ্ছেন, এটা আমাদের জন্য সহায়ক হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ....

              আখি, লিখনীর বিষয়ে যেকোন পরামর্শের জন্য অনুরোধ রইলো

              মাআসসালাম


              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ ... জাযাকাল্লাহ

                Comment


                • #9
                  যাজাকুমুল্লাহ খাইরান, ভাই দ্রুত চালিয়ে যান ইং

                  Comment


                  • #10
                    মাশা আল্লাহ্*। ভাই, ৬ষ্ট পর্ব কই?

                    Comment


                    • #11
                      Originally posted by Abu musa View Post
                      মাশা আল্লাহ্*। ভাই, ৬ষ্ট পর্ব কই?

                      কয়েকদিনের মধ্যেই পাবেন ইনশাআল্লাহ....

                      Comment


                      • #12
                        জাযাকাল্লাহু খাইর আখি।
                        সত্যিই অসাধারন হয়েছে।
                        দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার,ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।

                        Comment


                        • #13
                          আল্লাহু আকবার পড়তে গিয়ে বার বার শিহরিত হইতে ছিলাম,আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়ার বুকে আপনার দ্বীনকে বুলন্দ করার জন্য কবুল করেন।
                          আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তার পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।

                          Comment

                          Working...
                          X