Announcement

Collapse
No announcement yet.

নসীম হিজাজী কিংবা এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নসীম হিজাজী কিংবা এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ

    [ক]


    আলাপটা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি…

    ২০০৪ সালের কথা। ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। সে সময় নসীম হিজাজি ও আলতামাশের বইপত্র খুব চলতো। আব্বুকে বললাম, এগুলো কিনে দিন। এখানে ইসলামের ইতিহাস আছে। পড়বো। আব্বু বললেন, কোনো বই নিজে পছন্দ করে পড়া ঠিক হবে না। আগে কোনো আলেমের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

    তখন আমরা হাজারিবাগ থাকি। একদিন আব্বু মিরপুর নিয়ে গেলেন, মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন সাহেবের কাছে। হুজুরকে বললেন, আমার ছেলে নসীম হিজাজির বই পড়তে চায়। এই বইগুলো কেমন?

    হুজুর বললেন, এগুলো উপন্যাস, ইতিহাস নয়। এখানে ইতিহাস আছে সামান্যই, বেশিরভাগই লেখকের কল্পনা। এসব বই পড়ে যা জানবে, তার কতটুকু সত্য, আর কতটুকু মিথ্যা তা যাচাই করার উপায়ও নেই।

    কিছুটা হতাশ হলাম। তবে উপকার হলো বেশি। হুজুর এক কথায় আমার চিন্তা শুদ্ধ করে দিলেন। ঐতিহাসিক উপন্যাস যে ইতিহাস নয়, বরং উপন্যাসের একটা প্রকার মাত্র, একথা হুজুর আমার মাথায় গেঁথে দিলেন।

    বছর দুয়েক পরে এক আত্মীয়ের বাসায় গেলাম, কুমিল্লায়। রাত কাটালাম সেখানেই। তার বাসায় আলতামাশের একটি বই দেখে পড়া শুরু করি। সেটি ছিল ঈমানদীপ্ত দাস্তান। সালাহুদ্দিন আইয়ুবী ও ক্রুসেডের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা। বইটা বেশ ভালো লাগলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো, আলতামাশ এই বইতে ঐতিহাসিকদের প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এই বই পড়ে আমার মনে হলো, মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন সাহেবের কথাগুলো নসীম হিজাজির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও আলতামাশের বইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আলতামাশের বইতে কল্পনা থাকলেও এখানে ইতিহাসের পরিমান অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, আলতামাশ প্রচুর রেফারেন্স দিয়ে লিখেছেন, ফলে এটাকে নিছক উপন্যাস বলে ছোট করার মানে হয় না।

    নিজের এই সিদ্ধান্তের উপর বেশ তৃপ্তি অনুভব হলো। দ্রুত বাজারে আলতামাশের যত বইয়ের অনুবাদ পেলাম সব কিনে ফেলি। কয়েক মাসের মধ্যে দেখা গেল আলতামাশের সব বই আমার পড়া শেষ। পড়া শেষে নিজেকে এগিয়ে থাকা পাঠক মনে হলো। অনেক ইতিহাস জেনে ফেলেছি, এটা অন্তরের গভীর থেকেই বিশ্বাস শুরু করলাম। বিভিন্নজনকে বলে বেড়ালাম, নসীম হিজাজি না পড়লেও আলতামাশ পড়। অনেক ইতিহাস জানতে পারবে।

    আমার এই ভুল বুঝতে পারি প্রায় এক দশক পর। ২০১৭ সালের দিকে একজন উস্তাদ আমাকে কিছুদিন তার সান্নিধ্যে রেখেছিলেন। তার বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা হয়। উস্তাদের ব্যক্তিগত মাকতাবা আমার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উস্তাদের সংগ্রহে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিল ফিত তারিখ, তারিখুত তাবারি, শাজারাতুয যাহাব, ওফায়াতুল আইয়ান এই বইগুলো ছিল। সে সময় আমার কোনো কাজ ছিল না। দিনের কিছু অংশ কাটতো উস্তাদের সাথে নানা বিষয়ে কথা বলে, বাকি সময় কাটতো এসব বইয়ের পাতা উল্টে। সে সময় একবার ইতিহাসের একটি তথ্য নিয়ে এক ভাইয়ের সাথে মৃদু তর্ক হলো। ভাইটি ইতিহাসের বিষয়ে আলতামাশের বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন কারণ, আলতামাশ ইবনু কাসিরের সুত্রে কথাটি লিখেছিলেন। এদিকে কদিন আগেই আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ওই অংশ পড়ার কারনে আমার জানা ছিল ইবনু কাসির এই কথা বলেননি। তো একটা ধাক্কা খেলাম। আলতামাশ ইবনু কাসিরের নামে এমন এক কথা লিখেছেন, যেটা ইবনু কাসির লিখেননি। ভাবলাম, এক কাজ করি, বেকার বসে আছি, আলতামাশের বইগুলোর রেফারেন্স চেক করে দেখি। তার রেফারেন্সগুলো বিশুদ্ধ কিনা দেখা যাক।

    বাসা থেকে আলতামাশের বইপত্র সব নিয়ে যাই। একের পর এক বই খুলে ইতিহাসগ্রন্থের সাথে মেলাতে থাকি। যতই সামনে এগুতে থাকি, ততই বুঝতে পারি, আলতামাশ সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত স্পষ্ট ভুল ছিল। আমি যদি মুফতি সাহেবের পরামর্শ মেনে চলতাম তাহলে এই দশ বছরে এতগুলো ভুল ও বানোয়াট তথ্যকে বিশুদ্ধ ইতিহাস মনে করে বসে থাকতাম না।

    আলতামাশের লেখার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই ভদ্রলোক নিজের পক্ষ থেকে বানোয়াট একটা তথ্য দেন, তারপর একে কোনো ঐতিহাসিকের নামে চালিয়ে দেন। যেমন শমসিরে বেনিয়াম গ্রন্থে তিনি সাজ্জাহর সাথে মুসাইলামার সাক্ষাতের ঘটনা নিজের মত করে লিখে ঐতিহাসিক তাবারির নামে চালিয়ে দিয়েছেন। অথচ তারিখুত তাবারিতে এমন বর্ননা নেই। ‘আওর এক বুত শিকন পয়দা হুয়া’ গ্রন্থে তিনি সুলতান মাহমুদ গজনভীর সাথে আব্বাসি খলিফা কাদের বিল্লাহর সম্পর্কের যে ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন ঐতিহাসিক কাসেম ফেরেশতার নাম দিয়ে, তার কোনো সত্যতা নেই। তারিখে ফেরেশতাতেও এসব তথ্য নেই। তার প্রতিটি বইতেই এমন প্রচুর তথ্য পেলাম, যেখানে তিনি ঐতিহাসিকদের নামে নিজের কল্পনা চালিয়ে দিয়েছেন। এটি যে স্পষ্ট প্রতারণা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

    সম্প্রতি, মাওলানা ইসমাইল রেহান আলতামাশের ‘দাস্তান ঈমান ফারুশোকি’ বইয়ের সকল তথ্য ও রেফারেন্স পর্যালোচনা করে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম ‘দাস্তান ঈমান ফারুশোকি এক তাহকিকি জায়েজা’। এখানে তিনি আলতামাশের এসব প্রতারণা বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।

    এই আলাপ তুললাম কেনো?

    কারণ, এখনো আমাদের অনেকেই মনে করেন সাধারণ মানুষের ইতিহাস পড়ার জন্য নসীম হিজাজি আলতামাশের বইগুলো বেস্ট। এগুলো পড়লে ইতিহাস জানা যায়, জিহাদি প্রেরণা জাগ্রত হয়। মোটাদাগে দুইটি পয়েন্টই ভুল।

    [১] এসব বইতে বিশুদ্ধ তথ্যের পরিমান এতই সামান্য, যা কিনা খড়ের গাদায় করোনা ভাইরাস খোজার মতই কঠিন একটি বিষয়। আর কোন তথ্য বিশুদ্ধ কোনটা অশুদ্ধ এটা বুঝতে হলেও দীর্ঘ অধ্যয়ন ও জানাশোনা দরকার। আমার অভিজ্ঞতা তো বললামই। মুফতি দিলাওয়ার সাহেব (দা বা) তার গভীর পড়াশোনা দ্বারা এসব বইয়ের হাকিকত আমাকে বলে দিয়েছিলেন। অথচ, এর বাস্তবতা বুঝতে আমার সময় লেগেছে প্রায় এক যুগ।

    [২] এসব বইতে জিহাদ ও মুজাহিদদের যে চিত্রায়ন করা হয়, তা ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর। মুসলিম মুজাহিদরা কখনো এমন প্রেমিক পুরুষ ছিলেন না। জিহাদের ফাঁকে ফাঁকে প্রেম করার যে চিত্রায়ন দেখানো হয়, মুজাহিদদের আঁচল এই কালিমা থেকে মুক্ত। এসব বইতে দেখানো হয় মুজাহিদরা অভিযানের ফাঁকে কারো প্রেমে পড়ে যান, কদিন দ্বীনি কথাবার্তা বলেন, পরে বিয়ে করে ফেলেন। রিজালের কিতাবে আমরা মুজাহিদদের যে জীবনের কথা পাই, তা মোটেও এমন নয়। আলতামাশ ও নসীম হিজাজির বই এসব প্রেমের বিবরণে ভরপুর। এক্ষেত্রে এই লেখকরা কোনো নীতি-নৈতিকতার ধার ধারেননি। যেমন, আলতামাশ তার শমসিরে বেনিয়াম গ্রন্থে হজরত খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা) এর সাথে এক মেয়ের পাশাপাশি বসার কাল্পনিক ঘটনা খুব রসালো ভাবে উপস্থাপন করেছেন। নাউজুবিল্লাহ। এমন শত শত উদাহরণ দেয়া যাবে।

    মোটাদাগে বলতে গেলে, ইতিহাস জানতে আমাদের ইতিহাসের বইই পড়তে হবে। জিহাদের ফজিলত জানতে, জিহাদের প্রেরণা জাগাতে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারকের ‘কিতাবুল জিহাদ’ কিংবা ইবনুন নাহহাসের ‘মাশারিউল আশওয়াক’ তো আছেই। এর বাইরে কেউ উপন্যাস পড়তে চাইলে সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। তিনি উপন্যাস মনে করে পড়বেন। কিন্তু ব্যক্তিগত এই কাজের বৈধতা দিতে গিয়ে উপন্যাসকে ইতিহাসের বই বলে প্রচার করা কিংবা এখান থেকে জিহাদি প্রেরণা পাওয়া যায়, এটা বলা তো অন্যায়।

    সম্প্রতি ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বিভিন্ন সিরিয়াল নিয়ে বেশ আলাপ হচ্ছে। দ্বীনি ঘরানার অনেকে এগুলো বেশ উৎসাহের সাথে প্রমোট করছেন। এর পক্ষে নানা যুক্তিও দাঁড় করানো হচ্ছে। এসব সিরিয়াল দেখার বিধান কী হবে তা বিজ্ঞ মুফতিরাই ফতোয়া দিবেন ইনশাআল্লাহ। এ সম্পর্কে আমার বলার কিছু নেই। তবে কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন আছে। সেগুলো তুলে ধরি।

    [১] যারা এসব সিরিয়াল দেখেন তাদের সাথে আলাপে জেনেছি, এসব সিরিয়ালে মিউজিক থাকে। নারীদের উপস্থিতিও থাকে বেশ। এই দুইটি বিষয় কোন কোন শর্তে বৈধ? এক ভাই যুক্তি দিয়েছেন হিন্দি সিরিয়ালে নারীদের কূটনামী দেখানো হয়। তুর্কি সিরিয়ালে এসব কূটনামি নাই। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। নারী কূটনা হোক কিংবা সরল, এতে দৃষ্টি হেফাজতের মাসআলায় কোনো পরিবর্তন আসে না।

    [২] অনেকে বলছেন যারা হলিউড মুভিতে অভ্যস্ত তারা এটা দেখতে পারে সমস্যা নাই। তাহলে দুই ক্ষতির অপেক্ষাকৃত কমটা বেছে নেয়া হল। এখানে প্রশ্ন হলো, এই সমাধান কি কোনো বিজ্ঞ ফকিহ ও মুফতি দিয়েছেন নাকি নিজে নিজে বানানো হয়েছে। আজকাল এক সমস্যা হচ্ছে, সবাই সব বিষয়ে ‘আমার মনে হয় ব্যাপারটা এমন’ বলে মতামত দিচ্ছে। অথচ, বাস্তবতা হলো সবার মনে হওয়ার লেভেল এক না। সবার মনে হওয়া গুরুত্বপূর্ণও না।
    হাদিস শাস্ত্রের উপর পূর্ন দখল আছে এমন হাফেজে হাদিস যদি কোনো হাদিস সম্পর্কে বলেন, আমি এই হাদিসটি চিনি না, বা শুনিনি তাহলে সেই বর্ননা মুহাদ্দিসদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু আমি আপনি যদি কোনো হাদিস সম্পর্কে এ কথা বলি? তাহলে এতে আমাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতাই প্রকাশ পাবে। হাফেজে হাদিস কোনো হাদিস না জানা মানে ওই হাদিসের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ, আর আমরা কোনো হাদিস না জানা মানে, আমাদের জানার পরিধি কত কম সেটা স্পষ্ট হওয়া। তফাতটা এখানে।

    তো দিরিলিস বা এজাতীয় সিরিয়াল সম্পর্কে যারা এমন সমাধান বলে দিচ্ছেন, প্রশ্ন হলো তারা এই বিষয়ে এভাবে সমাধান দেয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা। বা তারা যাদের থেকে কপি করেছেন, তারাই এই সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার রাখেন কিনা। কিছু মানুষ আছে মাইডিয়ার টাইপ। এদের কাছে দুনিয়ার সব গ্লাস অর্ধেক ভরা। কোনো কোনো গ্লাস যে পুরো খালি থাকে, এটা তারা মানতে চান না। এমন লোকদের বক্তব্য নেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা দরকার।

    যদিও বলা হচ্ছে, হলিউড মুভির পরিবর্তে এসব সিরিয়াল দেখা হবে, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে দেখছি, এসব সিরিয়ালের প্রতি মুভি এডিক্টদের ঝোঁক কমই, এগুলোর প্রতি মূল আকর্ষণ দ্বীনদার ঘরানার, যারা এতদিন মুভি সিরিয়াল এসব কিছুই দেখতেন না। তো এমন দ্বীনদার, যারা এতদিন এগুলো দেখতেন না, এখন দেখা শুরু করেছেন এই ব্যাপারটা আমরা কীভাবে দেখবো? এ সম্পর্কে করনীয়ই বা কী হবে?

    এমন বহু মানুষ দেখেছি যারা দ্বীনের পথে এসে সাথে সাথে মুভি দেখা ছেড়ে দিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। এখন যে নতুন উসুল বানানো হচ্ছে, হলিউড মুভি ছাড়ার জন্য কম ক্ষতিকর তুর্কি সিরিয়াল দেখা উচিত, এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? এই কম ক্ষতিকর তুর্কি সিরিয়াল দেখার সময়সীমা কতদূর? কী পরিমান তুর্কি সিরিয়াল দেখলে এই মুভি নেশা একেবারেই কেটে যাবে? মুভি নেশা কাটার পর এই তুর্কি সিরিয়ালের নেশা কাটাবে কীভাবে? এর জন্য কি আবার তুলনামূলক কম ক্ষতিকর কিছু নিয়ে আসতে হবে? এত ধাপ অতিক্রম না করে এক ধাপেই কি মুভি দেখা ছাড়ার সুযোগ নেই? ব্যাপারটা কি এতই অসম্ভব?

    [৩] এসব সিরিয়ালে যে ইতিহাস বলা দেখানো হচ্ছে, চরিত্রগুলো যেভাবে সত্যায়ন করা হচ্ছে এই বিষয়টি কি কেউ নিজে যাচাই করেছে ? বা ইতিহাসে পারদর্শী কাউকে জিজ্ঞেস করেছে ? নাকি নিজ থেকেই বলে দিচ্ছে ‘এখানে ইতিহাস খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে’।

    [৪] এসব সিরিয়ালে বরেণ্য মুসলিম ব্যক্তিত্বদের চরিত্রে যারা অভিনয় করছে তারা এ যুগের মানুষ। এরা স্রেফ অভিনেতা। টাকার জন্য যে কিছুতে অভিনয় করে। নানাভাবে এদের ফিসকও স্পষ্ট। এমনকি এদের কেউ কেউ আছে পাঁড় সেক্যুলার। কোনো ভিডিও দেখলে সাধারনত এর দৃশ্য আমাদের মাথায় গেঁথে যায়। এখন কেউ একজন এমন সিরিয়াল দেখলো। ধরা যাক, মুহাম্মদ আল ফাতিহকে নিয়েই। এরপর যখনই মুহাম্মদ আল ফাতিহর আলোচনা আসবে তার মাথায় ঘুরবে ওই সেক্যুলার নায়কের চেহারা। তার মনে হবে মুহাম্মদ আল ফাতিহের চেহারা, গঠন সবই ছিল ওই নায়কের মত।
    এই বিষয়টি কেমন? কোনো অস্বস্তি লাগে কিনা? না লাগলে কেন লাগে না ?

    [৫] এসব সিরিয়ালে অবৈধ প্রেম ভালোবাসা ও নাজায়েজ সম্পর্ককে যেভাবে হালকা করে দেখানো হয়, এটা আমরা কীভাবে নেই? এই হারাম বিষয়টাকি সিরিয়ালের প্রভাবে আমাদের কাছে হালকা হয়ে উঠে?

    [৬] সর্বশেষ কথা, এই বিষয়ে যারা ধুমধাম ফয়সালা শুনিয়ে দিচ্ছি, একশো একটা শক্ত যুক্তি হাজির করছি, তারা কি এই বিষয়ে কথা বলার অথরিটি? যদি না হই, তাহলে আমরা কি এই বিষয়ে কোনো প্রাজ্ঞ আলেমের সাথে কথা বলেছি? না বললে কেন বলিনি?

    এই প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরলাম। কোনো কিছু প্রমোট করার আগে এবং অন্যকে উৎসাহ দেয়ার আগে আমরা এই বিষয়ে আরেকটু চিন্তাভাবনা করতে পারি। শেষ করার আগে প্রিয় ভাই Omar Ali Ashraf এর একটা কথা উদ্ধৃত করবো, যা তিনি গতকাল এক লেখায় লিখেছেন,

    ‘যে জাতিকে জাগাতে কুরআনের আদেশ পারে না, রাসুলের হাদিস পারে না, সিরিয়া, ইরাকসহ বিধ্বস্ত জনপদগুলোতে মুসলামানের লাশ আর কান্না পারে না, পারে শুধু কিছু সিরিয়াল(!) তাদের ইনসাফের প্রতি আল্লাহ রহম করুন’।


    [খ]


    ইনবক্সে ও কমেন্টে অনেকে সাইমুম সিরিজ ও ক্রুসেড সিরিজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। সবাইকে আলাদা আলাদা উত্তর দেয়া কষ্টকর। তাই এখানেই মোটাদাগে কয়েকটি কথা বলে দিচ্ছি।

    ১। সাইমুম সিরিজ ও ক্রুসেড সিরিজ দুটিই সাহিত্যের বই। কেউ এগুলো পড়লে সাহিত্যের বই মনে করে বিনোদনের জন্য পড়বেন। এগুলোকে জ্ঞানের বই কিংবা ধর্মীয় বই মনে করার কিছু নেই। এসব বই থেকে কর্মপন্থাও শেখার নেই। এই মৌলিক বিষয়টি স্পষ্ট থাকলে আর বেশি কথা বলার দরকার হয় না। সমস্যা হলো, এই বিষয়টি অনেকের কাছেই স্পষ্ট না। অনেকেই ক্রুসেড সিরিজকে ইতিহাসের বই মনে করেন, সাইমুম সিরিজকে উম্মাহর অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি নির্দেশিকা মনে করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে দুয়েকটি পর্যবেক্ষন বলতেই হয়।

    ২। ক্রুসেড সিরিজটি যদিও আসাদ বিন হাফিজের নামে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তার মৌলিক কোনো লেখা নয়। এটি এনায়েতুল্লাহ আলতামাশের দাস্তান ঈমান ফারুশোকি গ্রন্থের অনুবাদ। অনুবাদটিও আসাদ বিন হাফিজের নয়। এটি অনুবাদ করেছিলেন আবদুল হক নামে আরেকজন অনুবাদক। ক্রুসেড সিরিজ যখন প্রীতি প্রকাশন থেকে খন্ডে খন্ডে বের হত, তখন বইয়ের প্রচ্ছদে থাকতো আসাদ বিন হাফিজের নাম। ভেতরের পৃষ্ঠায় লেখা থাকতো, আলতামাশ রচিত ও আবদুল হক অনুদিত ‘দাস্তান ঈমান ফারুশোকি’র ছায়া অবলম্বনে। এর কয়েকবছর পর মাসিক আদর্শ নারীতে এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সেখানে এর নাম ছিল ‘ষড়যন্ত্রের কবলে ইসলামি দুর্গ’। মূল – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ। অনুবাদ- আসাদ বিন হাফিজ। এটি ছিল প্রীতির ওই ক্রুসেড সিরিজটাই, কিন্তু এখানে আসাদ বিন হাফিজকে পরিচিত করানো হয় অনুবাদক বলে। কিছুদিন পর প্রীতি ভলিউম আকারে ক্রুসেড সিরিজ ছাপায় ‘মহাকালের মহানায়ক’ নামে। এখানে ভেতরে বাইরে কোথাও আলতামাশের নাম ছিল না। আরো পরে অরণ্য প্রকাশনী থেকে ক্রুসেডসমগ্র নামে সবগুলো ক্রুসেডখন্ড প্রকাশিত হয়। এখনো এটি প্রকাশিত হচ্ছে। এখানে কোথাও আলতামাশের নাম নেই। লোকজন একে জানছে আসাদ বিন হাফিজের মৌলিক রচনা বলেই। কিন্তু এটি মূলত আলতামাশের বইয়ের অনুবাদ। তাই ক্রুসেড সিরিজ নিয়ে কথা না বলে আমরা মূল বই দাস্তান ঈমান ফারুশোকি নিয়েই কথা বলবো। কারণ, এই বইয়ের আরেকটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে পরশমনি প্রকাশন থেকে। ঈমানদীপ্ত দাস্তান নামে।

    আলতামাশের এই বইতে মৌলিক সমস্যা দুটি। প্রচুর বিকৃত ও বানোয়াট তথ্য লিখে ঐতিহাসিকদের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করলেও অনেক বিশাল বই হয়ে যাবে। যারা এসব জানতে আগ্রহী তারা মাওলানা ইসমাইল রেহানের ‘দাস্তান ঈমান ফারুশোকি এক তাহকিকি জায়েজা’ বইটি পড়ে নিতে পারেন। একইসাথে এই বইতে নর-নারীর অবৈধ সম্পর্কের যে রসালো বর্ননা দেয়া হয়েছে, তা যে কোনো ভদ্র পাঠকের জন্য খুবই অস্বস্তিকর। মুবি-বালিয়ান-নাজি-উম্মে আম্মারা-রেশমা এই চরিত্রগুলো যেভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে তা খুবই আপত্তিকর।

    আলতামাশের এই বই সম্পর্কে আমাদের যে মূল্যায়ন ক্রুসেড সিরিজ সম্পর্কেও সেই মূল্যায়ন। কারণ ক্রুসেড সিরিজ এটিরই অনুবাদ। অবশ্য আসাদ বিন হাফিজ ক্রুসেড সিরিজে বেশ কিছু বিষয় বাদ দিয়েছেন। তবে ভুল ইতিহাস আর আপত্তিকর অংশ ঠিকই রয়ে গেছে, সেগুলো বাদ দেননি।

    ৩। এবার আসি সাইমুম সিরিজের কথায়। এটি একটি থ্রিলার সিরিজ। আহমাদ মুসা এই সিরিজের কেন্দ্রিয় চরিত্র। বিশ্বের যেখানে মুসলমান নির্যাতিত হয়, সে সেখানেই ছুটে যায়। নানাভাবে তাদের সমস্যা সমাধান করে। সাইমুম সিরিজ সম্পর্কে বলতে গেলে পেছনের দুয়েকটি কথাও টানা দরকার। ১৯৬৪ সালে সেবা প্রকাশনী থেকে কাজি আনোয়ার হোসেন লেখা শুরু করেন কুয়াশা সিরিজ। দুবছর পর ১৯৬৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত লেখেন মাসুদ রানা সিরিজ। এই সময় রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর সিরিজও চলছিল। এই সিরিজগুলো খুবই জনপ্রিয় ছিল। তবে এসব বইতে অশ্লীলতা ও ঈমান-বিধ্বংসী অনেক কথাই ছিল, বিশেষ করে মাসুদ রানা সিরিজে এই সমস্যা ছিল খুবই প্রকট। এই বিষয়টি দেখে আবুল আসাদ সিদ্ধান্ত নেন বিকল্প একটি সিরিজ দাঁড় করানোর। ১৯৭৬ সালে তিনি লেখেন অপারেশন তেল আবিব-১ বইটি। বইটি জনপ্রিয় হলে তিনি সিরিজটি নিয়মিত লিখতে থাকেন। এখন পর্যন্ত এই সিরিজের ৬২ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এই সিরিজের সর্বশেষ বই ‘আবার আফ্রিকার অন্ধকারে’। এই সিরিজ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ বলার আগে একটি বিষয় স্পষ্ট করে নেই।

    আবুল আসাদ যে সময়ে কলম ধরেছিলেন, ঐ সময়টায় প্রচুর সিরিজ প্রকাশিত হচ্ছিল। তরুনদের সামনে ছিল মাসুদ রানা, জাকি আজাদ এই সিরিজগুলো। অবসর থেকেও কয়েকটি সিরিজ প্রকাশিত হয়, তবে শেষ পর্যন্ত টিকে যায় মাসুদ রানা সিরিজই। জাকি আজাদ সিরিজ কয়েক দশক বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি শেখ আবদুল হাকিম আবার এই সিরিজ লেখা শুরু করেছেন। এই সিরিজগুলোর প্রায় সব বইই ছিল পশ্চিমা থ্রিলার লেখকদের বই অবলম্বনে রচিত। ফলে এসব বইতে অশ্লীলতার ব্যাপক ছড়াছড়ি ছিল। এমনকি প্রচ্ছদেও নোংরা ছবি থাকতো। এক সময় ‘প্রজাপতির ছাপওয়ালা বই মানেই অশ্লীল বই’ এমন একটি ধারনাও ছড়িয়ে পড়ে সেবা প্রকাশনী সম্পর্কে। তরুণ সমাজকে এই সকল সিরিজ থেকে ফেরাতে আবুল আসাদ উদ্যোগী হয়েছিলেন, এর সমাধানের জন্য তিনি ভিন্নপথে লেখালেখি করেছেন, এজন্য তিনি অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন। সাইমুম সিরিজের সুত্রপাত হয়েছিল আবুল আসাদের এক বৃহৎ ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই, আর সেই উদ্দেশ্য হলো যুবসমাজকে এসব অশ্লীল বইপত্র থেকে দূরে সরানো।

    এখানে একটি কথা স্পষ্ট করা দরকার। কারো উদ্দেশ্য মহৎ হলেই, তার কর্মপদ্ধতী ও কর্ম সঠিক হওয়া জরুরি নয়। আবার কারো কর্মে কোনো ভুল থাকলে তার উদ্দেশ্য শতভাগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়, ব্যাপারটি এমনও নয়। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কেউ ভুল করে তাহলে তার সেই ভুল, ভুলই থাকে, শুদ্ধ হয় না। আমরা শুধু কর্মপদ্ধতী নিয়ে কথা বলবো। কারো উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবো না। আবার উদ্দেশ্য মহৎ এই যুক্তি দিয়ে সকল কর্মের পক্ষে সাফাইও গাইবো না।

    ৪। সাইমুম সিরিজের মূল বিষয়টি ছিল যুবসমাজকে অশ্লীল সাহিত্য থেকে সরানো এবং তাদের মনে উম্মাহর প্রতি দরদ ও চেতনা জাগ্রত করে দেয়া। বিভিন্ন সাক্ষাতকারে আবুল আসাদ নিজেই এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। সাইমুম সিরিজের প্রতিটি বইয়ে পাঠকের বিভিন্ন চিঠি ছাপা হতো। সেখানে পাঠকরাও এমন অনুভূতি জানাতো।



    সাইমুম সিরিজের বড় ব্যর্থতা, এই সিরিজ অশ্লীলতার জায়গা থেকে পাঠককে সরিয়ে আনলেও পর্দা ও ফ্রি মিক্সিং ব্যাপারটি ঠিকই হালকা করে দেখিয়েছে। আহমাদ মুসা তার বিভিন্ন অভিযানে অনেক মেয়ের সাথে পরিচিত হয়। তাদের সাথে সামনাসামনি বসে কথা বলে, দ্বীনি বিষয় আলোচনা করে, এমনকি সারা জেফারসন কিংবা ডোনা জোসেফাইনের সাথে বিয়ের আগে দীর্ঘসময় তার যোগাযোগ ও দেখাসাক্ষাত অব্যাহত থাকে। সিরিজের প্রথম বইটি থেকেই এই বিষয়টি হালকা করে দেখানো হতে থাকে। এই সিরিজে পর্দা বলতে শুধু স্কার্ফ কিংবা ওড়না পরাকেই বুঝানো হয়। এই সিরিজের পাঠকদের কাছেও তাই পর্দার এই ব্যখ্যাই দাঁড়ায় যে, মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না পরলেই পর্দা হয়ে যায়। সাইমুম সিরিজের রেফারেন্স দিয়ে অনেককে তর্ক করতেও দেখেছি। এই সিরিজের কাহিনীতে বিয়ের আগে টুকটাক প্রেম দেখানো হয়। বিষয়টিকে ইতিবাচক করে ফেলা হয় পাঠকের কাছে।

    এভাবে সাইমুম সিরিজ একটি ভুল বিষয়কে প্রমোট করেছে।



    এখানে অনেকে আপত্তি তুলবেন এই বলে, এটি সাহিত্যের বই। একে নিয়ে এত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে লাভ কী? আপনারা তো হুমায়ুন কিংবা শামসুল হকের বই নিয়ে কথা বলেন না।

    দেখুন, মদ যে হারাম এটা পৃথিবীর কোনো দারুল ইফতা ফতোয়া দিবে না। ফতোয়া দিবে ওই পানীয় সম্পর্কে সমাজে যা হালাল পানীয় হিসেবে পরিচিত কিন্তু তাতে রয়েছে মদের কিছু অংশ। সাইমুমের ব্যাপারটিও এমন। লোকজন যদি একে সাহিত্য মনে করে পড়তো তাহলে এত কথা দরকার ছিল না। সমস্যা হলো, তারা একে ধর্মীয় বই মনে করে পড়ে। যারা সাইমুমের চিঠিপত্র বিভাগ পড়েছেন তারা জানেন, প্রায়ই অনেক পাঠক লিখতো, ইসলামের এই ব্যাখ্যা আগে বুঝিনি, সাইমুম সিরিজ পড়ে বুঝেছি। কেউ লিখতো, আমি বন্ধুদেরকে ইসলাম শেখার জন্য সাইমুম পড়তে বলি।

    এই যে সাহিত্যের একটি বইকে ধর্মীয় জ্ঞানের বই মনে করা, এই প্রবনতাতেই আমাদের আপত্তি। এখানেই উঠে আসে প্রশ্ন। আবারও বলি, সাইমুমের বইগুলো সাহিত্যের বই। এখান থেকে ধর্ম শেখার কিছু নেই। এজন্যই যখন সারা জেফারসনকে আহমাদ মুসা দ্বিতীয় বিয়ে করে তখন পাঠকদের অনেকেই শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। কারণ বিষয়টি তারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেনি।



    সাইমুম সিরিজকে অনেকে জিহাদি বই মনে করেন। এমনকি অনেকে আহমদ মুসাকেও বাস্তব চরিত্র মনে ফ্যান্টাসিতে ভুগতেন। তারা চিঠি লিখে জানতে চাইতেন, এই চরিত্রটি আসলেই আছে কিনা। অনেকে মনে করতেন, আহমাদ মুসা উম্মাহর জন্য লড়ে যাচ্ছেন। এই কারণে অনেকে ইতিবাচক মানসিকতা রাখেন এই সিরিজের প্রতি। তাদের বক্তব্য, এই সিরিজ তো অনেকের মাঝে জিহাদের প্রেরণা জাগাচ্ছে।

    এই কথাও ভুল। লোকজন সাইমুম পড়ে যে জিহাদি আবেগ অনুভব করে সেটা মূলত কাল্পনিক ফ্যান্টাসির জিহাদ। ময়দানের বাস্তব জিহাদ নয়। এজন্য আহমাদ মুসা নিয়ে পাঠকের অনেক আবেগ থাকলেও খোরাসানের মাটিতে যে লড়াকু কাফেলার জন্ম হয়েছে তা নিয়ে তাদের কোনো আবেগ নেই। সাইমুম ভক্ত লোকজনের সাথে আলাপ করলেই এ কথার সত্যতা মিলবে। খোরাসানের মাটিতে যখন ক্রুসেডারদের সাথে জিহাদ শুরু হয়, তখন আরবের এক সিংহপুরুষ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল আবুল আসাদ সাহেবকে। লিখিত উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তাকে আমি চিনি না, এই নামে কেউ আছে কিনা তাও জানি না। হতে পারে সে আমেরিকার সৃষ্টি।

    আবুল আসাদ সাহেবের এই উত্তরই সাইমুম সিরিজের সামগ্রিক চিত্র স্পষ্ট করে দেয়। সাইমুমের বেশিরভাগ পাঠকদের সাথে কথা বলে দেখেছি তাদের অবস্থা এমনই। কল্পিত চরিত্র আহমদ মুসার প্রতি এদের অনেক আবেগ, কিন্তু খোরাসানের লড়াকু কাফেলা এদের কাছে ‘আমেরিকার সৃষ্টি’ ‘উগ্রবাদী’ ‘শান্তিপূর্ন ইসলামকে কলুষিত করা এক দল’ ইত্যাদী।

    কারণ একটাই, কল্পিত উপন্যাস আর বাস্তব জিহাদের ময়দান এক নয়।



    সাইমুম সিরিজে আহমাদ মুসার যে কর্মপদ্ধতি দেখানো হয়, সেটাও হাস্যকর। প্রায় সব বইতেই দেখা যায়, কুফফার রাষ্ট্রের প্রধানরা বেশ ভালো মানুষ। শুধু সন্ত্রাসী সংঘঠনগুলো (ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যান, ব্ল্যাক ক্রস) এইসব ভালো মানুষ কাফের রাষ্ট্রপ্রধানদের ‘ভুল বোঝায়’। আহমাদ মুসা গিয়ে নানাভাবে ওইসব কুফফারদের ‘সঠিকটা’ বুঝিয়ে দেন, ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরেন, ব্যস সেই এলাকা থেকে সেসব সন্ত্রাসী সংঘঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। মুসলমানরা নির্যাতন থেকে মুক্ত পায়। সাইমুম সিরিজ অধ্যয়ন করলে যে কারো মনে হবে, আসলে কাফের রাষ্ট্রনায়করা ভালো মানুষ। শুধু সন্ত্রাসীরা এইসব ‘হজরত’দের ‘ভুল বোঝায়’। আহমদ মুসা সঠিকটা বুঝিয়ে দিলে তারা শুধরে যায়। মুসলমান না হয়েও ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবকে পরিনত হয়।

    একজন সাইমুম পাঠক দেখেন, মোটাদাগে আমেরিকা বা আমেরিকান আর্মির সাথে মুসলিমদের কোনো সমস্যা নেই। কোনো কুফফার রাষ্ট্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছে না। সাধারণ কাফের এবং কাফের নেতৃত্ব সবাই খুব ভালো মানুষ, আন্তরিক মানুষ, শুধু ওইসব রাষ্ট্রের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুয়েকটি সন্ত্রাসী সংঘঠনের সাথে মুসলিমদের সমস্যা। এটা সলভ করে ফেললেই সবার জীবন রুপকথার গল্পের শেষ লাইনের মত ‘অবশেষে তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো’ হয়ে যাবে।

    এভাবে আবুল আসাদ নিজের অজান্তেই কুফফারদের প্রতি একটা সফটকর্নার তৈরী করে দেন তার পাঠকদের মনে। ইসলামের সাথে কুফরের যে দ্বন্দ্ব তা থেকে পাঠকের মনোযোগ সরে যায়। পাঠকের মাথায় ঘুরতে থাকে, দ্বন্দ্বটা আসলে ইসলামের সাথে ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যান কিংবা ব্ল্যাক ক্রসের। এই যে চিন্তার বিপর্যয়, এটি খুবই ক্ষতিকর। চিন্তার এই বিপর্যয় শূন্যতা তৈরী করে, লড়াইয়ের মূল পক্ষ-বিপক্ষই যদি আপনি বুঝতে না পারেন, তাহলে পুরো ব্যাপারটিই তো আপনার কাছে অস্পষ্ট। এই লড়াই নিয়ে আপনার আবেগ জেগেই বা লাভ কী? যেখানে আপনি শত্রুকেই ঠিকমতো চিনতে ব্যর্থ হয়েছেন।

    এই গৎবাঁধা, একঘেয়ে, ক্লান্তিকর প্লট সাইমুম সিরিজের প্রতিটি বইতেই। এই পুরো ব্যাপারটি এতটাই অবাস্তব ও অসম্ভব, যা নিয়ে বিস্তারিত আলাপেরও দরকার নেই। যারা মনে করেন, সাইমুম সিরিজ পড়ে জিহাদি চেতনা জাগে, তাদের মনে রাখা উচিত বাস্তব দুনিয়া এত সরল ও মাইডিয়ার টাইপ না।

    খোরাসানের মাটিতে যখন আমেরিকান হিংস্র সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ছিল ছিন্নভিন্ন পোশাকের ‘বাস্তবতার নায়কে’রা, আহমাদ মুসা তখন এফ বি আই প্রধান জর্জ আবরাহামের বাসায় ডিনার সারছে, সারা জেফারসনের সাথে খোশগল্প করছে, হোয়াইট ঈগল প্রধানের সাথে একসাথে চলছে।

    এটাই হলো বাস্তব দুনিয়ার জিহাদ ও সাইমুমের কল্পিত দুনিয়ার লড়াইয়ের তফাত।



    যে যাই বলুক, উপন্যাস পড়ে সিরিয়াল দেখে উম্মাহর প্রতি আবেগ আসবে না, জিহাদি প্রেরণা জাগবে না, এটাই বাস্তব। শরনার্থিদের নিয়ে নির্মিত মুভি দেখে আমাদের চোখে পানি আসে, কিন্তু বাস্তব দুনিয়ার রোহিঙ্গা কিংবা সিরিয়ান শরনার্থিদের করুণ চিত্র, আমাদের চোখে পানি আনতে ব্যর্থ হয়। এজন্য উপন্যাস পড়ে বা সিরিয়াল দেখে যে আবেগ জন্ম নেয়, তাকে চুড়ান্ত কিছু মনে করাটা ভুল।

    উম্মাহর প্রতি দরদ আনতে আমাদের ফিকহ পড়তে হবে, সালাফে সালেহিনের জীবনি পড়তে হবে। বর্তমান সময়কে তাদের সময়ের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিকল্প কিছু করতে গেলে বিকল্প কিছুই হবে। মূল জিনিস থেকে তা দূরে সরবে।



    শেষ কথা

    এই দুই সিরিজকে লোকজন সাহিত্য মনে করে পড়ুক, আমাদের মাথাব্যাথা নেই। লোকজন কত সাহিত্যই তো পড়ে। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু এগুলোকে ইতিহাস ও ধর্মীয় জ্ঞানের বই মনে করলে তা নিয়ে কথা বলা ও পর্যবেক্ষন তুলে ধরা জরুরী।

    Omar Ali Ashraf ভাইয়ের পোস্ট থেকে:

    পোস্ট-১

    দিরিলিস-কুরুলুসকে জায়েয বলার ফতোয়া আপনারা দিতে পারেন না। দেখা যাচ্ছে, মাসআলা অথবা ফতোয়ার কোনো কিতাব পড়েনি, আরও সুস্পষ্ট বললে স্কুল-কলেজের যারা হলিউড-বলিউডে অভ্যস্ত, দিরিলিস-কুরুলুসকে তারা শুধু জায়েয ফতোয়াই দিচ্ছে না, যারা না-জায়েয বলছে, তাদেরকে একহাত দেখে নিচ্ছে।

    প্রিয় ভাই, আপনি যখন সিগারেট খান, একে খারাপ জেনেই খান, দিরিলিস-কুরুলুসকে না-জায়েয হিসেবে জেনে দেখতে সমস্যা কী? আপনি কি শরিয়ত নির্মাতা? যাচ্ছেতাই যে ফতোয়া জারি করছেন, সবার গুনাহর ভার বইতে পারবেন?

    দিরিলিস-কুরুলুসে নারীদের দেখানো হয়। একে বৈধতা দেওয়া বা পাপ মনে করাকে ভুল বলা কুরআনে পর্দার আয়াতকে অস্বীকার করার শামিল হয়। কোনো আয়াত অস্বীকার হলেই তাকফিরের আলাপ চলে আসে কিন্তু! তারপর আছে মিউজিক। এটাও ইসলামে সুস্পষ্টভাবে হারাম। এগুলোকে জায়েয কারার দেওয়ায় আপনার ঈমান কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, খবর আছে? মাআযাল্লাহ।

    পোস্ট-২

    অনেকে বলছেন, দিরিলিস-কুরুলুস আমাদের জযবা তৈরি করছে। ইসলামের হারানো উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলছে। সুতরাং আপনারা এটা দেখা জায়েয নেই ইত্যাদি বলতে পারেন না।

    তাদের সমীপে কই, যে জাতিকে জাগাতে কুরআনের আদেশ পারে না, রাসুলের হাদিস পারে না, সিরিয়া, ইরাকসহ বিধ্বস্ত জনপদগুলোতে মুসলামানের লাশ আর কান্না পারে না, পারে শুধু কিছু সিরিয়াল, তাদের ইনসাফের প্রতি আল্লাহ রহম করুন।

    পোস্ট-৩

    ওমর সিরিজ, খালিদ বিন ওয়ালিদ সিরিজ, এই রকম আরও যা যা আছে, যেগুলোতে নবী অথবা সাহাবিদেরকে দেখানো হয়, সেগুলো কোনো মতেই দেখা যাবে না। যে অভিনেতাদেরকে ওমর হিসেবে, খালিদ বিন ওয়ালিদ হিসেবে দেখে আপনারা আপ্লুত হচ্ছেন, বাস্তব জীবনে এরা নারীখোর, মদখোর, লম্পট। কোনো বুযুর্গ ব্যক্তিকে দিয়েও যদি সাহাবি চরিত্রে অভিনয় করানো হয়, তাও হবে চরম ধৃষ্টতা। এগুলো দেখাও সমান অন্যায়। প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে আপনি পাপ সঞ্চয় করছেন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

    পোস্ট-৪

    যারা ঈমানদীপ্ত দাস্তান, নাঙ্গা তলোয়ারের মতো ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোর প্রেম-পিরিতিকে মনে করে নিরেট ইতিহাসের বই, এগুলোকে জাস্ট উপন্যাস ভাবতে নারাজ, তাদের সুবিচারের প্রতি করুণা হয়।

    সাহাবি মহাবীরদের বিস্তারিত জীবনী আছে, তাদের সম্বন্ধে জানার জন্য সেসব পড়ুন। আপনি যে ড্রামা সিরিয়ালগুলো দেখে বাহ বাহ করছেন, এগুলোতে বড় একটা অংশ কাল্পনিক। এমনকি নামাযের যে দৃশ্য দেখানো হয়, তাও ওই একটা সিজদা বা রুকু পর্যন্তই। বাস্তব জীবনে এসব অভিনেতাদের অনেকেই সেক্যুলার-ধর্মনিরপেক্ষ-নাস্তিক। সুতরাং প্রিয় ভাই, গায়ের জোরে ফতোয়া খাটাতে গিয়ে নিজ দায়িত্বে পাপ খরিদ করার আর দুঃসাহসিকতার প্রদর্শন ঘটাবেন না।


    (সংগৃহিত)
    Last edited by বদর মানসুর; 06-01-2020, 02:21 PM. Reason: সাইমুম সিরিজ সম্পর্কে কিছু লিখা য
    আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
    জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
    বিইযনিল্লাহ!

  • #2
    খুবই উপকৃত হলাম ৷
    আমি আগে নসিম হিজাজী ও আলতামাশের বই অনেক পড়তাম ৷ পরে তাদের ছবি (ফটো) দেখার পরে কেমন যেনো ভক্তি উঠে গেছে ৷ এখন আলহামদুলিল্লাহ তাদের আসল চেহারাই বেরিয়ে এসেছে ৷ আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন ৷ আমীন ৷
    ভাই! আপনার মত রাহবরদের জন্য অন্তরের অন্তস্থল হতে রইল অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুকরিয়া ৷
    আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
    আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

    Comment


    • #3
      আল্লাহ আপনার মেহনত কে কবুল করুন
      আর আমরা আমাদের মা বোনদের কে এই বিষয়ে সতর্ক করে দিবো
      আমরা ও সতর্ক থাকবো
      وقاتلوهم حتي لا تكون فتنة ويكون الدين للله

      Comment


      • #4
        মূল লেখক এবং সংগ্রহকারী ভাই উভয়কেই জাযাকাল্লাহ, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ ধরণের উপন্যাস শুধু মিথ্যা ইতিহাস হওয়ার কারণেই পড়া ঠিক না, এমন নয়, বরং তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এগুলো অশ্লীল, যৌন সুড়সুড়িমূলক ও আখলাক বিনষ্টকারী হওয়ার কারণেও নাজায়েয। এ বিষয়ে ভাইয়েরা তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন হতে সূরা লুকমানের ৬ নং আয়াত
        وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ
        এর ব্যাখ্যা দেখে নিতে পারেন। আমাদের ফিকহের কিতাবাদীতেও অশ্লীল কবিতা পাঠকে নাজায়েয বলা হয়েছে। আল্লামা শামী রহ. বলেন,

        الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (1/ 660)
        فما كان منه في الوعظ والحكم وذكر نعم الله تعالى وصفة المتقين فهو حسن، وما كان من ذكر الأطلال والأزمان والأمم فمباح، وما كان من هجو وسخف فحرام، وما كان من وصف الخدود والقدود والشعور فمكروه كذا فصله أبو الليث السمرقندي
        الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 350)
        قال في التتارخانية: قراءة الأشعار إن لم يكن فيها ذكر الفسق والغلام ونحوه لا تكره.
        وفي الظهيرية: قيل معنى الكراهة في الشعر أن يشغل الإنسان عن الذكر والقراءة وإلا فلا بأس به اهـ.
        وقال في تبيين المحارم: واعلم أن ما كان حراما من الشعر ما فيه فحش أو هجو مسلم أو كذب على الله تعالى أو رسوله - صلى الله عليه وسلم - أو على الصحابة أو تزكية النفس أو الكذب أو التفاخر المذموم، أو القدح في الأنساب، وكذا ما فيه وصف أمرد أو امرأة بعينها إذا كانا حيين، فإنه لا يجوز وصف امرأة معينة حية ولا وصف أمرد معين حي حسن الوجه بين يدي الرجال ولا في نفسه، وأما وصف الميتة أو غير المعينة فلا بأس وكذا الحكم في الأمرد ولا وصف الخمر المهيج إليها والديريات والحانات والهجاء ولو لذمي كذا في ابن الهمام والزيلعي. وأما وصف الخدود والأصداغ وحسن القد والقامة وسائر أوصاف النساء والمرد قال بعضهم: فيه نظر، وقال في المعارف: لا يليق بأهل الديانات، وينبغي أن لا يجوز إنشاده عند من غلب عليه الهوى والشهوة لأنه يهيجه على إجالة فكره فيمن لا يحل، وما كان سببا لمحظور فهو محظور اهـ.

        তূর্কী সিরিয়ালগুলো কতটুকু অশ্লীল তা আমার জানা নেই। তবে অশ্লীল হোক না না হোক সর্বাবস্থায় এগুলো নাজায়েয় হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

        এ লেখা থেকে আরেকটি বিষয়ও বুঝে আসে। আলেমদের একেবারে বাদ দিয়ে দেয়া, তাদের কথার কোন মূল্য না দেয়া, এটা ঠিক নয়। বরং সাধারণ মাসায়েলগুলো আমরা আলেমদের থেকে জেনে আমল করবো। শুধু জিহাদ, হাকিমিয়্যাহ, ওয়ালা-বারা ইত্যাদি বিষয়ে তাদের ভুল ফতোয়া মানবো না। আলকায়েদার নায়েবে আমীর শহিদ উহাইশী রহ. এমনটাই বলেছেন। আসলে এসব মাসয়ালায় আলেমগণ পরিবেশের প্রভাবে হক কথা বলতে পারছেন না। আমরা যখন জিহাদের মাধ্যমে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে দিতে পারবো, তখন হয়তো, আলেমগণ এসব বিষয়ে আমাদের চেয়েও ভালো বলতে পারবেন।

        যেহেতু মুজাহিদ আলেমের সংখ্যা কম, তাছাড়া তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগও সম্ভব হয় না, তাই অনেক সময় জিহাদী মানহাজের ভাইয়েরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এটা ঠিক নয়। নিজস্ব ঘরানার লোক ব্যতীত অন্যদের ফতোয়া গ্রহণ না করা তো গোমরাহ দলগুলোর বৈশিষ্ট্য, আলকায়েদার মানহাজ নয়। তাই ভাইদের নিকট আবেদন থাকবে, আপনারা কোন বিষয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিবেন না, বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জেনে নিবেন। এটাই কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা এবং সালাফের আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

        { فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ} [النحل: 43]

        তোমরা না জানলে আলেমদের জিজ্ঞাসা করো। -সূরা নাহল, ৪৩

        ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন,

        عن جابر، قال: خرجنا في سفر فأصاب رجلا معنا حجر فشجه في رأسه، ثم احتلم، فسأل أصحابه فقال: هل تجدون لي رخصة في التيمم؟ قالوا: ما نجد لك رخصة وأنت تقدر على الماء، فاغتسل فمات، فلما قدمنا على النبي - صلى الله عليه وسلم - أخبر بذلك، فقال: "قتلوه قتلهم الله، ألا سألوا إذ لم يعلموا، فإنما شفاء العي السؤال، إنما كان يكفيه أن يتيمم ويعصر -أو يعصب، شك موسى- على جرحه خرقة، ثم يمسح عليها ويغسل سائر جسده سنن أبي داود ت الأرنؤوط (336)

        একযুদ্ধে কোন এক সাহাবীর গোসল ফরয হয়ে যায়। তিনি ছিলেন যখমী-আহত। গোসল করলে তার মৃত্যুর আশংকা ছিলো। তিনি অন্যদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার জন্য গোসল না করার কোন অবকাশ আছে কিনা? গোসলের ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করার মাসয়ালা তাদের জানা ছিল না। তারা বললেন, আমরা তোমার জন্য গোসল না করার অবকাশ দেখছি না। ঐ আহত সাহাবী গোসল করলেন। ফলে তার মৃত্যু হয়ে গেল। এ সংবাদ রাসুলের কাছে পৌছলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন, তারা যখন জানতো না তখন তারা কেন (যারা জানে) তাদের জিজ্ঞাসা করলো না। অজ্ঞতার ওষুধ তো জিজ্ঞাসা করা। -সুনানে আবু দাউদ, ৩৩৬

        ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,

        إعلام الموقعين عن رب العالمين (1/ 10 دار الكتب العلمية – ييروت الطبعة: الأولى، 1411هـ - 1991م)
        والذين حفظت عنهم الفتوى من أصحاب رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مائة ونيف وثلاثون نفسا، ما بين رجل وامرأة، وكان المكثرون منهم سبعة: عمر بن الخطاب، وعلي بن أبي طالب، وعبد الله بن مسعود، وعائشة أم المؤمنين، وزيد بن ثابت، وعبد الله بن عباس، وعبد الله بن عمر

        ফতোয়া প্রদানকারী সাহাবীর সংখ্যা একশত তিরিশজনেরও বেশী, এদের মধ্যে সাতজন সাহাবী অধিক পরিমানে ফতোয়া প্রদান করতেন, তাঁরা হলেন- উমর বিন খত্তাব, আলি বিন আবু তালিব, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা, যায়েদ বিন ছাবিত, আব্দুল্লাহ বিন উমর এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস। ইবনে হাযম রহ. বলেন, তাঁদের প্রত্যেকের ফতোয়া সংকলন করা হলে তার প্রতিটিই বেশ বড় কিতাবে পরিণত হবে।

        ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি রহ. বলেন,

        لم يكن في أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم من له صحبة يذهبون مذهبه ويفتون بفتواه ويسلكون طريقته إلا ثلاثة عبد الله بن مسعود وزيد بن ثابت وعبد الله بن عباس (العلل لابن المديني ص: 42 المكتب الإسلامي - بيروت الطبعة: الثانية، 1980)

        “রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মাঝে শুধু তিনজন সাহাবী এমন ছিলেন, মানুষ যাদের মাযহাব অনুযায়ী চলতো এবং তাদের ফতোয়া অনুযায়ী ফতোয়া দিতো, তাদের পথ অনুসরণ করতো, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, যায়েদ বিন সাবেত এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস।” –আলইলাল, পৃ: ৪০

        الجهاد محك الإيمان

        জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

        Comment


        • #5
          একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মডারেটর ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, https://banglaaqis.wordpress.com/ এ সাইটে আসাদ বিন হাফিযের রহস্য সিরিজ ক্রুসেড রযেছে, আর এই সিরিজটাও অত্যন্ত অশ্লীল ও যৌন সুড়সুড়িমূলক। এর কাহিনীও ইমানদীপ্ত দাস্তানের মতো মিথ্যা-বানোয়াট, লেখক সেখানে থেকেই নকল করেছেন হয়তো। তাই এ সিরিজটা সেখান হতে বাদ দেয়া দরকার। আমাদের বক্তব্যে ইতমিনান না হলে অন্যান্য আলেমদের সাথে পরামর্শ করে নেয়া যেতে পারে, কিন্তু বিষয়টাতে অবহেলা করা ঠিক হবে না।
          الجهاد محك الإيمان

          জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

          Comment


          • #6
            Originally posted by আদনানমারুফ View Post
            একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মডারেটর ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, https://banglaaqis.wordpress.com/ এ সাইটে আসাদ বিন হাফিযের রহস্য সিরিজ ক্রুসেড রযেছে, আর এই সিরিজটাও অত্যন্ত অশ্লীল ও যৌন সুড়সুড়িমূলক। এর কাহিনীও ইমানদীপ্ত দাস্তানের মতো মিথ্যা-বানোয়াট, লেখক সেখানে থেকেই নকল করেছেন হয়তো। তাই এ সিরিজটা সেখান হতে বাদ দেয়া দরকার। আমাদের বক্তব্যে ইতমিনান না হলে অন্যান্য আলেমদের সাথে পরামর্শ করে নেয়া যেতে পারে, কিন্তু বিষয়টাতে অবহেলা করা ঠিক হবে না।
            জি ভাইজান, আসাদ বিন হাফিযের রহস্য সিরিজ ক্রুসেড এটা আলতামাসের লেখাটারই অনুবাদ।

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহ। ভালো একটি বিষয় সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

              Comment


              • #8
                Originally posted by muhammad sadik View Post
                খুবই উপকৃত হলাম ৷
                আমি আগে নসিম হিজাজী ও আলতামাশের বই অনেক পড়তাম ৷ পরে তাদের ছবি (ফটো) দেখার পরে কেমন যেনো ভক্তি উঠে গেছে ৷ এখন আলহামদুলিল্লাহ তাদের আসল চেহারাই বেরিয়ে এসেছে ৷ আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন ৷ আমীন ৷
                ভাই! আপনার মত রাহবরদের জন্য অন্তরের অন্তস্থল হতে রইল অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুকরিয়া ৷
                আপনার জন্য-ও আমার পক্ষ থেকে রইল অনেক অনেক ভালোবাসা। উহিব্বুকা ফি-ল্লাহ!
                আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
                জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
                বিইযনিল্লাহ!

                Comment


                • #9
                  Originally posted by arif mahmud View Post
                  আল্লাহ আপনার মেহনত কে কবুল করুন
                  আর আমরা আমাদের মা বোনদের কে এই বিষয়ে সতর্ক করে দিবো
                  আমরা ও সতর্ক থাকবো
                  আল্লাহুম্মা আমীন।
                  জ্বি, আমরা সকলেই সতর্ক থাকবো এবং অন্যদেরকে-ও সতর্ক করবো ইনশা-আল্লাহ।
                  আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
                  জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
                  বিইযনিল্লাহ!

                  Comment


                  • #10
                    মূল লেখক এবং সংগ্রহকারী ভাই উভয়কেই জাযাকাল্লাহ
                    আদনান মারুফ ভাইকে-ও আল্লাহ আযযা ওয়া জাল উত্তম বিনিময় দান করুন,আমীন।
                    আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
                    জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
                    বিইযনিল্লাহ!

                    Comment


                    • #11
                      জাযাকাল্লাহ আঁখি, গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সামনে এনেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন।
                      মুহতারাম ভাইগন! শফিউদ্দিন সরদারের উপন্যাসে যে ঐতিহাসিক তথ্যগুলো থাকে, সেগুলোর সত্যতা জানার কোনো উপায় থাকলে জানানোর অনুরোধ করছি, আমি উনার কয়েকটা বই পড়েছি,পড়তে ভালোই লেগেছে।

                      Comment


                      • #12
                        Originally posted by আদনানমারুফ View Post
                        একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মডারেটর ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, https://banglaaqis.wordpress.com/ এ সাইটে আসাদ বিন হাফিযের রহস্য সিরিজ ক্রুসেড রযেছে, আর এই সিরিজটাও অত্যন্ত অশ্লীল ও যৌন সুড়সুড়িমূলক। এর কাহিনীও ইমানদীপ্ত দাস্তানের মতো মিথ্যা-বানোয়াট, লেখক সেখান থেকেই নকল করেছেন হয়তো। তাই এ সিরিজটা সেখান হতে বাদ দেয়া দরকার। আমাদের বক্তব্যে ইতমিনান না হলে অন্যান্য আলেমদের সাথে পরামর্শ করে নেয়া যেতে পারে, কিন্তু বিষয়টাতে অবহেলা করা ঠিক হবে না।
                        মুহতারাম ভাই, ক্রুসেড সিরিজ সম্পর্কে কিছু লিখা নতুন করে উপরের পোস্টে সংযুক্ত করা হয়েছে।
                        আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
                        জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
                        বিইযনিল্লাহ!

                        Comment


                        • #13
                          উপরের পোস্টে "সাইমুম সিরিজ" নিয়ে আরো কিছু লিখা সংযুক্ত করা হয়েছে। লিখাটি যদিও খুব বড়, কিন্তু লিখাটি পড়লে উপন্যাস বিষয়ক অনেক কিছু ভাইদের কাছে ক্লিয়ার হবে ইনশা-আল্লাহ। তাই সব ভাইয়ের নিকট লিখাটি পড়ার ও প্রচার-প্রসার করার বিনীত অনুরোধ রইল।
                          আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
                          জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
                          বিইযনিল্লাহ!

                          Comment


                          • #14
                            ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই খুব সুন্দর ভাবে বিষয় টি তুলে ধরার জন্য

                            Comment


                            • #15
                              মাশা আল্লাহ, খুবই মুফিদ আলোচনা। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
                              আল্লাহ তা‘আলা আপনার খেদমতকে কবুল করুন এবং আমাদেরকে পরিপূর্ণ হিদায়াত দান করুন। আমীন
                              ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                              Comment

                              Working...
                              X