Announcement

Collapse
No announcement yet.

হাডসন ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত আল কায়েদার উপর জার্নাল।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হাডসন ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত আল কায়েদার উপর জার্নাল।

    How Al-Qaeda Works: The Jihadist Group’s Evolving Organizational Design

    মূল লেখার লিংকঃ https://www.hudson.org/research/1436...ational-design


    * লেখার ভাবানুবাদ করা হয়েছে লেখাটি দুই জন কাফির থিংক ট্যাংক Daveed Gartenstein-Ross & Nathaniel Barr এই দুইজনের লেখা। Hudson Institute থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র।


    এখানে আল-কায়েদার উত্থান তার সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু আমেরিকান বিশেষজ্ঞ মনে করেছিল ওসামা বিন লাদেন রাহিঃ এর শাহাদাতের পরে আল কায়েদা অচল হয়ে যাবে বা আল কায়েদার প্রবীণ নেতাদের হারানোর আঘাত এই দল আর কাটিয়ে উঠতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা , আধুনিক যুগের জিহাদের সুচনা লগ্নে যারা এই কাজের আঞ্জাম দিয়েছিলেন তারা ছিলেন উস্তাদ সাইয়েদ কুতুব রাহিঃ ও ইমাম আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিঃ । উনাদের ইলমী দক্ষতা ও ত্যাগের কারণে একদল যুবক উম্মাহ এর গতিপথ পরিবর্তনে জিহাদের পথ বেছে নেয়। ১৯৮০ সালে শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিঃ উনার আল কায়েদা আল সুবাহ (শক্ত ভিত্তি) নামের একটি লেখায় এমন এক দলের কথা বলেন যারা এই অন্ধকারে উম্মাহকে পথ দেখাবে কুফর শক্তিকে নির্মুল করার জন্য অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করবে।

    শাইখের এই মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়েই আল কায়েদা গঠিত হয় এবং তাকে উম্মাহ এর পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য মূলত ৩টি টার্গেট পূরণ করা জরুরী হয়ে পরে সেগুলো হচ্ছেঃ
    ১) আল কায়েদার একটি শক্তিশালী মিডিয়া গঠন যা দিয়ে তারা সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছায় দিতে পারবে,
    ২) সারা দুনিয়াতে তার আন্ডারে কাজ করা জিহাদী তানজিমদের সামরিক
    ৩) কৌশলগত দিক নির্দেশনা নিয়মিত পৌছানো ও নিজেদের খুবই পরিবর্তন সক্ষম রাখা যাতে অনেক বড় আক্রমণ বা নেতাদের হারানোর মত দুর্যোগ সহজে মোকাবেলা করতে পারে।

    কিন্তু এই গবেষণা শুধু আল কায়েদা সারা দুনিয়াতে তাদের তানজিম গুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও এর নিজের উপরে আসা আক্রমণ প্রতিহত করে টিকে থাকার কৌশল গুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।

    আল কায়েদার প্রথম মিটিং হয় ১৯৮৮ সালে, এই মিটিং এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিঃ পরিচালিত মাকতাব আল খিদমাত সাংগঠিক দুর্বলতা এর অন্তর্কলহ ও এর এই দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন এক দলের নকশা প্রণোয়ন। এর একটি উদাহরণঃ আল কায়েদা আমির ভিত্তিক শুরা সদস্য দ্বারা পরিচালিত হবে যার প্রতি সদস্যকে উপরের আদেশ মেনে চলতে হবে এবং দল প্রতি কাজের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি থাকবে যাদের দায়িত্ব থাকবে আলাদা। প্রাথমিক যুগেই তা কেমন সুসংগঠিত ছিল তার একটি প্রমাণ এই যে আল কায়েদার একজন মিলিটারি কমান্ডারের নূন্যতম যোগ্যতা তাকে কমপক্ষে ৫ বছর যুদ্ধক্ষেত্রে কাটাতে হবে , ৩০ বছর বয়স হওয়া লাগবে আর একটি ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী . ৯/১১ পরবর্তী আল কায়েদার আরেকটি বড় অর্জন হচ্ছে নির্দেশনার কেন্দ্রীকরণ ও কার্যকরণের বিকেন্দ্রীকরণ, মানে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ভাবে দেয়া হবে আর তা বাস্তবায়ন হবে স্থানীয় অথরিটির মাধ্যমে।

    আল কায়েদার নেতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ গঠন নিয়ে কমব্যাটিং টেরোরিজম সেন্টার থেকে একটি গবেষণায় কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো এমন যে, আমীর এখানকার মূল ক্ষমতার অধিকারী। আমীর সমস্ত কমান্ডার ও শুরা কাউন্সিলের মেম্বারদেরও নির্বাচন করে দেন। যদিও এই কাউন্সিলের একটি দায়িত্ব হচ্ছে আমিরকে অপসারণ কিন্তু এর কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবে নেয়া কঠিন। আমীরের এই একচ্ছত্র ক্ষমতা ও এর ব্যাপকতার কারণে আমীরের দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে পরে যার ফলে এই দায়িত্ব থাকে নির্দিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যানের উপর।
    ৯০ এর দশকে আল কায়েদার কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না তবে আফগান বাদশা জহীর শাহকে হত্যা করতে চাওয়া সান্তোসের ওসামা বিন লাদেন রহঃ এর সাথে সরাসরি সাক্ষাতের বিষয়টি একটি জিনিস পরিষ্কার করে যে, ৯/১১ এর আগের আল কায়েদাতে এখনকার মত শৃঙ্খলা বা চেইন অফ কমান্ড ছিল না। ব্যাপারটা এমন ছিল যে কেউ চাইলেই এট্যাকের প্ল্যান নিয়ে সরাসরি হাই অফিসিয়াল, অনেক সময় ওসামা বিন লাদেন রহঃ এর কাছে যাওয়ার সুযোগ পেত পরে আল কায়েদা সেটা যাচাই বাচাই করে তা পরিচালনা করার জন্য উপযুক্ত কমান্ডারকে দায়িত্ব দিত।

    সান্তোস ও ওসামা বিন লাদেন রহঃ এর বডিগার্ড নাসের আল বাহরি দুইজনের বক্তব্য থেকেই এটা স্পষ্ট যে ওসামা বিন লাদেন অপারেশন কিভাবে করতে হবে সে ব্যাপারে মাথা ঘামাতেন না বরং তা কোন একজন মিড লেভেলের কমান্ডার বা এলাকার কমান্ডার করতেন। তিনি শুধু এর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত ও দরকার হলে লজিস্টিক সাপোর্ট দিতেন।
    আল কায়েদার সেই কেন্দ্রীকরণ ও কার্যকরণের বিকেন্দ্রীকরণ আজ পর্যন্ত কার্যকর আছে বরং এই কৌশলের কারণেই আল কায়েদা তার পরিবর্তনশীল মানহাজ ধরে রাখতে পেরেছে ফলে তাদের মধ্যে বৈচিত্র বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটদের ফাকি দেয়ার নিত্য নতুন কৌশল আয়ত্ব করতে সক্ষম হচ্ছে। একি সাথে এর ফলে গ্রাউন্ডে থাকা স্থানীয় অপারেটিভ কমান্ডারদের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়া, রিস্ক নেয়া, নেতৃত্ব এইসব গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি তাদের আরেকটি সফলতা যে গুরুত্বপূর্ন লিডারদের হঠাৎ অপসারণের পরেও আল কায়েদার সাংগঠনিক কার্যক্রম দূর্বল হয়ে পরছে না।

    আল কায়েদার কাজের এই পদ্ধতি কিছু বিশ্লেষকদের মধ্যে আল কায়েদার নেতৃত্বের কার্যকরিতা নিয়ে কনফিউশন তৈরী করেছে। বিশেষ করে ৯/১১ পরবর্তী সময়ে ওসামা বিন লাদেন সহ অন্যান্য সিনিয়র কমান্ডারদের অপারেশনে সরাসরি অংশগ্রহণ না করা এই বিশ্লেষকদের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করে যে আল কায়েদা তার শাখাগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। আল কায়েদার নেতৃত্বকে বিচার করার জন্য তাদের সিনিয়র কমান্ডারদের প্রতিদিনের অপারেশন বা শাখা সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা খোঁজা খুবই অকার্যকর পদক্ষেপ যেখানে সিনিয়র কমান্ডারদের কাজ সংগঠনের সার্বিক লক্ষ্য এর বাজেট ইত্যাদি কাজ করা। এই কাজ করার পর একজন আমীরের কাজ শুধুই তত্ত্বাবধায়ন করা।


    ... চলবে ইনশাআল্লাহ।
    Last edited by s_forayeji; 07-20-2018, 10:10 AM.

  • #2
    পর্ব ২

    ওসামা বিন লাদেন রহঃ ও তার উত্তরাধিকারী আইমান আল যাওয়াহিরি হাফিঃ এই কার্যপদ্ধতির বাস্তবায়ন করেছেন। যদিও সরকারের ভিতরের ও বাইরের নানা বিশ্লেষক একে আল কায়েদার অতিরিক্ত বিকেন্দ্রীকরণ ও বিস্তারের কারণ বলেছে কিন্তু ফাযুল আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ (১৯৮৮ সালের এম্ব্যাসি বোম্বিং এর প্ল্যানার) এর জবানবন্দিতে এর থেকে ভিন্ন কথা এসেছে । একি রকম কথা আসসাফ মোগমাহেদ বলেছে, যে আল কায়েদার কর্ম পদ্ধতি উপর থেকে নিচের দিকে মানে কাজ সম্পাদনের জন্য সংগঠনের উপরের লোকদের নিচের লোকদের দরকার হয়। অথচ এই একি লোক আর্টিকেলের প্রথমে এর বিপরীত কথা বলেছিল। আসলে আল কায়েদা একটি বৈচিত্রময় ও বহু মাত্রিক সংগঠন যা যেকোন রকম যুদ্ধকৌশল গ্রহন করতে পারে।

    আল কায়েদা তার কার্যক্রম আরো দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারছে এই সংগঠনের মধ্যস্ততাকারী ও নবীন কমান্ডার নিয়োগের ফলে। কিন্তু এটি আবার সিনিয়র কমান্ডের অবাধ্য হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্বারা অন্তর্কোন্দলের মতঘটনাও তৈরি করছে। যেমন আমরা আইএস এর কথা বলতে পারি যা সৃষ্টিই হয়েছে সেন্ট্রাল কমান্ডের সাথে শাখার বিবাদের ফলে। কিন্তু এই ব্যপারটির বিপরীত প্রভাবও দেখা যায় এইভাবে যে আল কায়েদার শাখা সংগঠনের ফলে এমন শক্তি সে প্রদর্শন করতে পারে যা নিজে থেকে হয়ত তার সামর্থের বাইরে ছিল এবং এটি অন্যান্য সংগঠনের সাথে তাদের নেতৃত্বের সম্পর্ক জোরদার করে।

    আল কায়েদার সাংগঠনিক তৎপরতা ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করার জন্য আমাদের দুইটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রথম, শাখা সংগঠন বা অধিনস্ত কমান্ডারদের সাথে সিনিয়র নেতাদের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, যদিও আল কায়েদা স্থানীয় কমান্ডারদের যথেষ্ট স্বাধীনতা অপারেশন পরিচালনা করার জন্য দেয় তবুও প্রেক্ষাপট পরিবর্তন ভবিষ্যৎ কজের প্ল্যান তৈরি ইত্যাদির জন্য তা গুরুত্বপূর্ন। দ্বিতীয়ত তার অঙ্গসংগঠনদের কার্যক্রম নিজের লক্ষ্য বা নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা ও এর নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও আল কায়েদা তার শাখার কার্যক্রমের জন্য যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয় তবুও মাঝে মাঝে সমস্যা হয় যখন স্থানীয় কমান্ডার নিজের লাভ ক্ষতি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্য বা কাজের আগে চলে আসে। এই দুইটি কাজের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য আল কায়েদার নেতৃবৃন্দের সংগঠনের নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে এবং তাদের অধিনস্তদের ব্যপারেও সজাগ থাকতে হবে। ৯/১১ এর আগে আল কায়েদা যেকোন বিচ্যুতির ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিলেও বর্তমানে সেই নিয়ন্ত্রণ রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এর পিছনে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ না থাকা ক্রমান্বয়ে বিশ্বের নানা জায়গায় সংস্থার শাখা পৌছে যাওয়া অন্যতম। যদিও বর্তমানে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান লক্ষ্যে থাকার কারণে তাদের আদর্শিক নেতা হিসেবে পাব্লিক ভর্তসনার মাধ্যমে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেছে।

    আল কায়েদা নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট সম্মানবোধ ও উন্নত মানের আনুগত্য চর্চা করে। আর তাদের এই শক্ত বন্ধন প্রায় সময় যুদ্ধের ময়দানে, নিজেদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী আল কায়েদা এমন এক লক্ষ্য ও ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে যার প্রতি এর শাখা সংগঠন খুব দৃঢ় ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং এই অনন্য আনুগত্যই সংগঠনের একাত্নতা ও সংঘবদ্ধ থাকার প্রধান উৎস যা অনেক বিশ্লেষক অবমূল্যায়ন করেছিল। এবং আইসের উথ্যানের সময় এই ধারণা তাদের মধ্যে প্রবল হয় যে আল কায়েদার শাখা সমূহ এই সংগঠন থেকে আলাদা হয়ে যাবে। এই আনুগত্য আল কায়েদাকে এক দমনমূলক শক্তি দেয় যার ফলস্বরূপ আল কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বা সেন্ট্রাল কমান্ডের সাথে সংঘর্ষ করে কোন দল স্থানীয় জিহাদি সংগঠনের সাহায্য সহমর্মিতা লাভ করতে পারে না। ২০১৫ সালের বোকো হারাম এর উজ্জ্বল উদাহরণ।

    আল কায়েদার ইতিহাসে যেই পরীক্ষাগুলো তাদের সামনে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শাখা সংগঠনের সাথে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা, কার্যকর সুশৃঙ্খল অঙ্গসংগঠন ও অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আঘাতের সময় দলীয় ঐক্য। যদিও অনেক সময় এই দল অনেক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে তারপরে অনেক এনালিস্টের ভবিষ্যৎ বানীকে ভুল প্রমাণ করে, তার নির্দেশনার কেন্দ্রীকরণ ও কার্যকরণের বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করে যেই ফাউন্ডেশনের উপর আল কায়েদা গড়ে উঠেছিল তা টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছে।
    প্রথম পরীক্ষাঃ

    যদিও মনে করা হয় আল কায়েদার সাংগঠিক গঠনের উপরে প্রথম হামলা ২০০১ সালের আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমনের মাধ্যমে হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে তা হয়েছিল তার প্রায় ১ যুগ আগে ১৯৮৯ সালে। তথন ওসামা বিন লাদেন রাহিঃ এর পরোক্ষ অবদানে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বেঞ্জীর ভুট্টোর সরকারের বিপক্ষে অনাস্থা ভোট পাশ করাতে সক্ষম হয়। এরপর উনি সুদানে চলে গেলে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর কমিউনিস্ট সরকারের পতন হয় এবং জিহাদি দলগুলোর মধ্যে সশস্র সংঘাত শুরু হয়। এর ঠিক পরপর ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় ধাক্কা আসে যখন পাকিস্তানী সরকার আমেরিকার চাপে দেশ থেকে আরবদের ফেরত পাঠানো শুরু করে। এইদুই ঘটনা অই অঞ্চলে আল কায়েদার অবস্থা সংকটে ফেলে দেয়।

    এই ধাক্কা খুব তাড়াতাড়ি তারা কাটিয়ে উঠে নিজেদের কার্যক্রম সুদানে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে। সেখানে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, সম মানসিকতার জিহাদি দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, এবং কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন সৃষ্টি করার মাধ্যমে সারা বিশ্বের জিহাদি দলগুলোর সাথে যোগাযোগ তৈরী। এই কাজ সংগঠিত হয় “ইসলামিক আর্মি শুরা” নামের একটি সংস্থার সৃষ্টির মাধ্যমে। এর মধ্যে আল কায়েদার নিজেদের শুরা সদস্য ছাড়াও সৌদি, মিশর, জর্দান, লেবানন, ইরাক, ওমান, আলজেরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মরোক্ক, সোমালিয়া ও ইরিত্রিয়া এর বিচ্ছিন্ন জিহাদী সংগঠনের আমীরদের নিয়ে এক জোট গঠন। এছাড়াও আফ্রিকান দেশ যেমন চাঁদ, মালি, নাইজার, নাইজেরিয়া ও উগান্ডার জিহাদি দল ও দক্ষিণ এশিয়ার বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়ার দল গুলোর সাথে যোগাযোগ ছিল এমনকি বসনিয়ার যুদ্ধের সাথেও আল কায়েদার যোগাযোগ ছিল। এভাবেই একটি আন্তর্জাতিক জিহাদী সংগঠনের স্তম্ভ দাঁড়া করানো হচ্ছিল।

    এই সময়ে আল কায়েদার আন্তর্জাতিক কার্যক্রম সংগঠিত হয় আফ্রিকার শিং নামে খ্যাত এলাকায়। এখানেই মিশরীয় জিহাদী নেতা আবু উবাইদাহ আর বানশিরি রহঃ এর সাহায্যে আল কায়েদার নতুন অভয়ারণ্য তৈরী হয়। এখান থেকেই অত্র এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করা হত, ১৯৯৮ সালের আমেরিকান এম্ব্যাসী আক্রমণ এর একট অন্যতম সাফল্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ ছিল সোমালিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার যা পরবর্তীতে আল কায়েদার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হিসেবে দেখা দেয় এবং আল শাবাব এর মত একটি গুরুত্বপূর্ন দল তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
    তৎকালীন বিশেষজ্ঞরা সুদানে থাকা অবস্থায় আল কায়েদা গঠন সম্পর্কে আবছা ধারণা রাখত। ১৯৯৫ সালে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এই রকম একটি তথ্য দেয় যে আল কায়েদা কিছু ব্যক্তির ক্ষণস্থায়ী জোট যার কোন সাংগঠনিক রুপ নেই। অনেক এমেরিকান তো এমন বলেছিল যে ওসামা বিন লাদেন রহঃ জিহাদ জিহাদ খেলা খেলছে আর নিজের পারিবারিক সম্পদ ব্যয় করে খুব অল্পই অর্জন করেছে। ভিন্স কেনিস্ট্রারো সিআইএ এর কাউন্টার টেরোরিসমের প্রধান ১৯৯৮ সালে এই মন্তব্য করে যে, ‘যে কোন গ্রুপ বিন লাদেনকে ফান্ডের জন্য ব্যবহার করতে পারে শুধু ব্যক্তিগত হামলা চালানোর জন্য আর বিন লাদেন তা ততক্ষন করবে যতক্ষন সেগুলো তার ধর্মীয় স্বার্থ পুরণ করবে।‘ এটিই ছিল বিশেষজ্ঞ দের আল কায়েদা সম্পর্কে প্রথম অবমূল্যায়ন। হ্যা অবশ্যই তখন আল কায়েদা এত সুশৃঙ্খল ছিল না তার পরেও তারা আন্তর্জাতিক অপারেশন পরিচালনা করা, অর্থ সংগ্রহ করা ও বিশ্ব ব্যাপী জ্বিহাদীদের ট্রেনিং দেয়ার মত ক্ষমতা অর্জন করেছিল। এর কিছু নমুনা জামাল আল ফাদল (যে আমেরিকার কাছে আল কায়েদা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল দল থেকে ১০০০০০ ডলার আত্নসাতের পরে) তার জবানবন্দীতে পাওয়া যায়। অস্ত্র চালান, সারা বিশ্বে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন ছাড়াও কেমিক্যাল ল্যাবের মত কাজও তারা সেই সময়ে করতে সক্ষম হয় এবং ১৯৯৬ সালের সুদান থেকে আফগানিস্তানে উৎখাত হওয়ার আগ পর্যন্ত বৈরী পরিবেশেও এইরকম কার্যক্রম তাড়া চালিয়ে যায়।


    ... চলবে ইনশাআল্লাহ।
    Last edited by s_forayeji; 07-20-2018, 10:05 AM.

    Comment


    • #3
      বিভিন্ন প্যারাগ্রাফ অনুযায়ী ভাগ করে পোষ্ট করা উচিৎ। নতুবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা দৃষ্টির বাইরে রয়ে যায়।
      পড়তে কষ্টকর হয়।
      কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

      Comment


      • #4
        পর্ব ৩

        জিহাদীদের মহীরুহঃ
        ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আল কায়েদার তার সাংগঠনিক কার্যক্রমের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। দক্ষিণ ও পূর্ব আফগানিস্তানে থাকা অবস্থায় সে তার সর্ব ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করে। উন্নত মানের বহুমাত্রিক ট্রেনিং দান অসংখ্য নতুন রিক্রুটদের ব্যবস্থাপনা ও সারা বিশ্বে অসাধারণ অপারেশন চালানো যার মধ্যে সবার পরিচিত ৯/১১। আল কায়েদার সুদান থেকে আফগানিস্তান আসা সুখকর ছিল না, যদিও এর ফল ছিল চিন্তার বাইরে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা যেটা আল কায়েদার উপর আশে সেটা হচ্ছে তাদের সম্পদের অনেক বড় অংশ এখানে নতুন বেজ তৈরী করতে খরচ হয়ে যাওয়া ও সুদানে ওসামা বিন লাদেনের ৩০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়া। এই সব বাঁধা পেরিয়েও আল কায়েদা মাত্র ৪ বছরের মাথায় তার নতুন রিক্রুটদের বিস্ফোরণ প্রশিক্ষণ, গেরিলা যুদ্ধ, কাগজ জালিয়াতির মত অত্যন্ত সুক্ষ সুক্ষ ট্রেনিং দিতে সক্ষম হয়। যখন আল কায়েদার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও রিক্রুট বেড়ে যায় সিনিয়র কমান্ডাররা এদের প্রমোশন ও ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন সিস্টেম চালু করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ১৯৯৮ সালে সিনিয়র আল কায়েদা কমান্ডার ও প্রশিক্ষক আবদ আল হাদি আল ইরাকি রহঃ মিশরীয় সামরিক কমান্ডার সাইফ আল আদল হাফিঃ কে চিঠিতে এই রকম সুশৃঙ্খল একটি প্রসেস তৈরির ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। যেখানে নতুন রিক্রুটের শিক্ষা ধর্মীয় জ্ঞান ট্রেনিং এর পারফর্মেন্স ভিসা পাসপোর্ট ইত্যাদি সব তথ্য একটি ব্যক্তিগত ফাইলে থাকবে। এবং অনেক সময়ই আল কায়েদার এই পদ্ধতির প্রমান পাওয়া গেছে।
        ওয়াল স্ত্রীট জার্নালের রিপোর্টার এলেন কালিসন কাবুলের এক কম্পিউটার দোকানীর কাছ থেকে আল কায়েদার খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি কম্পিউটার হস্তগত করতে সমর্থ হয় সেখানে দেখা যায় কিভাবে আল কায়েদা খুব সুচারু ভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা সেই ১৯৯৮ সালেই নিজেদের মধ্যে কোড ওয়ার্ড ও ক্রিপ্টগ্রাফির মত আধুনিক কন্সেপ্ট নিজেদের মধ্যে প্রচলন করেছিল সবচেয়ে ভয়ানক যে তথ্য সেখান থেকে পাওয়া যায় তা হল কেমিক্যাল অস্ত্রের মজুদ ও তার ক্ষমতা নির্ধারনের জন্য কুকুরের উপর তা প্রয়োগ। আল কায়েদার অত্যন্ত কঠোর ও নিয়মতান্ত্রিক সাংগঠনিক নিয়মের একটি উদাহরণ এখানে পাওয়া যা তা হলোঃ ইয়েমেনের আল কায়েদা অফিসে একটি ফ্যাক্স মেশিন কেনা নিয়ে আয়মান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ জবাব চেয়েছেন ইয়েমেন অফিসে দুইটি ফ্যাক্স মেশিন থাকার পরেও কেন তারা আরেকটি ফ্যাক্স মেশিন কিনলো!!
        .
        ক্ষুদ্র বিষয়ে তদারকি ছাড়াও আল কায়েদা আরেকটি বৈশিষ্ট নিজেদের মধ্যে রেখেছিল তা হচ্ছে নিম্ন র*্যাংকের কমান্ডারদের নিজে থেকে অপারেশন প্ল্যান করার স্বাধীনতা ও আল কায়েদার লক্ষ্যের সাথে মিলে গেলে তা বাস্তবায়নে সাহায্য করা। ৯/১১ এটাক ও ইউএসএস কোলের হামলা দুইটিই নিচের কমান্ডারদের থেকে উঠে আসা প্রস্তাবের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে যদিও এর মধ্যে আল কায়েদার অনেক কমান্ডার ও লজিস্টিক সাপোর্ট এর অবদান রয়েছে।
        .
        যদি আমরা আল কায়েদার সংগঠিত ৩ টি প্রধান অপারেশনকে সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাতে দেখা যাবে যে ৯/১১ এটাকে ওসামা বিন লাদেন রহ নিজে সেই হামলার মুজাহিদ নির্বাচন করেছেন, ইউএসএস কোল এটাকের সময়ও তিনি হামলাকারী পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এখানে থেকে আল কায়েদার কার্যপদ্ধতির বিপরীত চিত্র উঠে আসে। কিন্তু বাস্তবে তা অন্যরকম যদিও আল কায়েদা তার শাখা সংগঠনকে অপারেশন পরিচালনা করার যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয় কিন্তু একি সাথে গুরুত্বপূর্ন কাজে যোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করার কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে করা হয়। কমসেকম স্থানীয় আমীর নির্বাচন অবশ্যই কেন্দ্রীয় ভাবে করা হয়। একি সাথে এমেরিকান এম্বাসী আক্রমনের ক্ষেত্রে তিনি কোন হস্তক্ষেপ করেন নি, এর কারণ এই অপারেশন পরিচালনা করেছেন আবু মুহাম্মাদ আল মাসরি রহঃ যিনি ইতোমধ্যে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছিলেন।
        .
        আল কায়েদার কার্যকরণের বিকেন্দ্রীকরণের অনেক আলামত পাওয়া গেলেও এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট ছিল যে আফগানিস্তানের শেষ বছরে আল কায়েদা অত্যন্ত শক্তিশালী পেশাদার সংগঠনের মত কাজ করেছে । তারপরেও অনেক বিশেষজ্ঞ তাদের অবমূল্যায়ন করেছে এত পরের স্টেজে এসেও অনেকে একে অনানুষ্ঠানিক ভাত্রসংঘের মত দেখেছে যা শুধু কিছু জিহাদী দলের ফান্ড ট্রেনিং ও লজিস্টিক সাপোর্ট নেয়ার জায়গা দেয়। সরকারী অফিসিয়াল এই সব মন্তব্যের কারণে আমেরিকা ৯/১১ এর মত আক্রমণ কখনো কল্পনা করতে পারে নি। যদিও ৯/১১ এর আগে কিছু গোয়েন্দা রিপোর্টে এদের ট্রেনিং বা সাংগঠনিক কার্যক্রমের চিত্র উঠে এসেছে এবং এই একটি রিপোর্টে এসেছে আফগানিস্তানে বৈশ্বিক জিহাদের প্রস্তুতি চলছে বা সেখান থেকেই সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তারপরেও বেশিরভাগ লোক আল কায়েদা সম্পর্কে উদাসীন ছিল এমনকি ৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ তেও এই ব্যপারে বিতর্ক হয়েছে যে আল কায়েদা আসলে কোন উল্লেখযোগ্য হুমকি কিনা।
        .
        কিন্তু ৯/১১ এর সেই বরকতময় হামলায় সব বিতর্কেরর অবসান হয়ে যায়। এর পরে আমেরিকার আফগানিস্তানে হামলার মাধ্যমে আল কায়েদার স্থাবর স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায় এবং এর সিনিয়র নেতৃত্বরা পাকিস্তান বা ইরানে চলে আসে। কিন্তু এই কঠিন দুর্যোগের সময়ও আল কায়েদা তার দলের ঐক্য ও কর্মপদ্ধতি বজায় রেখেছিল। এই ধ্বংসের ফলে আল কায়েদার কার্যক্রম পুঞ্জিভুত থেকে নানা দেশে ছড়িয়ে যায় এবং ৯/১১ এর আগের আল কায়েদা থেকে ৯/১১ এর পরের আল কায়েদা আরো বেশী ধরা ছোয়ার বাইরে ও আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে আত্নপ্রকাশ করে।

        আল কায়েদার পরিবর্তনঃ
        আমেরিকার আফগানিস্তানে আক্রমনের সাথে সাথে আল কায়েদার অবস্থান ও নেতৃত্ব দুইটিই হুমকির মুখে পরে। এর থেকে উত্তরণের পথ ও দলের পরবর্তী কার্যপদ্ধতি নির্ধারণের জন্য ২০০২ সালে ইরানে একটি মিটিং হয় সেখানে ওসামা বিন লাদেন রাহিঃ ও আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ ছাড়া বাকি অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিং আবু মুহাম্মদ আস সুরী (ফাঃআঃ) বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। এক আফগানিস্তান থেকে আর আন্তর্জাতিক অপারেশন পরিচালনা না করা যদিও এটা বাস্তবায়নের আগেই ইমারাতে আফগানিস্তান ভেঙ্গে পরে। দুই আল কায়েদাকে ভেঙ্গে দেয়া ও নেতৃত্ববিহীন জিহাদ এলাকা ভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করা। যদিও দ্বিতীয় প্রস্তাব আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ গ্রহন করেন নি কারণ আল কায়েদা তৈরীই হয়েছিল বৈশ্বিক জিহাদকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।
        .
        এর পরের কাজ হয় আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়া বেশীরভাগ সদস্য ও নেতারা পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান সিন্ধ পাঞ্জাবে আশ্রয় নেয় কিছু কিছু নেতৃবৃন্দ সেখান থেকে ইরানে যেয়ে সেখানকার সরকারের সাথে সহাবস্থান করে যতটুকু সম্ভব কার্যক্রম পরিচালনা করে। যদিও ইরান তাদের আশ্রয় দিয়েছিল আমেরিকান বাহিনী থেকে কিন্তু আল কায়েদার সাথে ইরানের সম্পর্ক কখনই স্থিতিশীল ছিল না।
        .
        তার পরের স্টেজ ছিল আল কায়েদার পাকিস্তানে কার্যক্রম। খালিদ শাইখ মোহাম্মদ ৯/১১ এর পরের আন্তর্জাতিক অপারেশনের দায়িত্ব নেয়। পাকিস্তানের করাচি সহ নানা জায়গায় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। কিন্তু পাকিস্তান ও আমেরিকান হামলার কারণে সেখানেও অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আল কায়েদার প্রতি ৯/১১ পরবর্তী নজিরবিহীন আগ্রাসনের পরেও তাদের টিকে থাকা ও পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাদের দলের বৈশিষ্টকে স্পষ্ট করে তোলে। যে কোন সমস্যাকে নির্দিষ্ট করে তার সমাধানে খুবই তৎপর থাকে তারা যেমন এই সময় তারা লক্ষ্য করেছে যেইসব নেতারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদেরকেই টার্গেট করা হয় ফলে তারা মোবাইল ব্যবহার ছেড়ে দিল, ব্যক্তিগত বার্তাবাহক, রেডিও, ডেড ড্রপ ইমেইল ইত্যাদি পদ্ধতি খুব তাড়াতাড়ি তারা গ্রহন করল। কিন্তু এই কাজ মূল্য ছাড়া হয় নাই কাজের গতি কমে যাওয়া নেটওয়ার্কে বিস্তৃতি ধীর হয়ে যাওয়া ও দলের মধ্যে অনেক তথ্য ছড়িয়ে যাওয়ার মত ছাড় আল কায়েদাকে দিতে হয়েছিল। কিন্তু দক্ষতা ও নিরাপত্তা এই দুইটির একটি বেছে নেয়া সব সময় জিহাদী দলগুলোর করতে হয়েছে আজও হচ্ছে।
        .
        আল কায়েদার জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচনও মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ৯/১১ এর পরের সময়ে পাকিস্তানের গোত্রীয় পাহাড়ি অঞ্চল নিজেদের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছিল। সাথে সাথে অই এলাকার বাসিন্দারা আরব মুহাজির দের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি ছিল। ফলে পাকিস্তান আর্মির নির্লিপ্ততায় আল কায়দা একটি শক্ত অবস্থান পাকিস্তানে গড়ে তোলে। এর সাথে সাথে আমেরিকার কিছু ভুল পলিসিও আল কায়েদার এই টিকে থাকার পিছনে কারণ হিসেবে কাজ করেছে যেমন যখনই আল কায়েদার নেতাদের ধরার জন্য উপযুক্ত শক্তি তারা অর্জন করেছিল তখনই তাদের এই ক্ষমতা ইরাকের দিকে স্থানান্তর করা শুরু করেছিল যা আল কায়েদার উপর আঘাত হানার সক্ষমতা ও দক্ষতা কমিয়ে দেয় । আরেকটি বিষয় হচ্ছে তারা আল কায়েদার সিনিয়র নেতাদের ধরার ফলে দলের উপরে এর প্রভাব অনেক বাড়িয়ে চিন্তা করেছিল। যেমন তারা কখনোই ভাবে নি ওসামা বিন লাদেন রহঃ বা খালিদ শাইখ মোহাম্মদ ফাঃ আঃ এর মত নেতাদের অভাব আল কায়েদা পূরণ করতে পারবে। আল কায়েদা সম্পর্কে বর্তমানে আরেকটি থিউরি প্রচলিত আছে যে আল কায়েদা একটি নেতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংগঠন থেকে ধ্বংস হয়ে এখন শুধু বিশ্বের নানা প্রান্তের জিহাদীদের আন্তিক ও আদর্শিক নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই মতের মানে হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে জিহাদীদের নেতৃত্ব দেয়ার মত এখন আর কেউ নেই আর এটি ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের কাছে জনপ্রিয় ছিল।
        .
        কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা ৯/১১ এর পরবর্তী আন্তর্জাতিক আক্রমণ গুলোর দিকে ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যায়, ২০০২ সালের বালি বম্বিং, একি বছরে মোম্বাসা ইস্রায়েলি হোটেল ও এয়ারলাইনে হামলা, ২০০৩ সালে টার্কিতে কয়েকটি হামলা ও ২০০৪ সালের রিয়াদ ও মাদ্রিদ বোম্বিং সব জায়গায় আল কায়েদার অপারেটিভ দের নেতৃত্ব স্পষ্ট। আবোটাবাদ থেকে পাওয়া ডকুমেন্টসেও এই কথা স্পষ্ট যে ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত প্রায় সব বড় বড় হামলার জন্য আল কায়েদা প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী যদিও হামলা হওয়ার মাস অনেক সময় বছর পার হলেও এতে আল কায়েদার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা যায় নাই। ২০০৫ সালের লন্ডন মাস ট্রানজিট সিস্টেমে হামলার ঘটনাও এমন যেখানে পুলিশদের থেকে আল কায়েদা কোন সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয় নি কিন্তু আল কায়েদা থেকে বের হওয়া ভিডিওতে আইমান আল জাওয়াহিরি হাফি এর বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়।



        .... চলবে ইনশাআল্লাহ

        Comment


        • #5
          ৪র্থ ও শেষ পর্ব

          আন্তর্জাতিক সংস্থাঃ
          ৭/৭ এর আক্রমনের পরেও আল কায়েদার শুধুই আদর্শিক মতবাদ থেকে অনেক বিশেষজ্ঞ বের হতে পারে নি। এ বিশ্লেষণ আরো জোরদার হয় আমেরিকার ইরাক আক্রমণ ও একিউআই আল কায়েদা ইন ইরাক তৈরী মাধ্যমে। ইরাকের আমীর আবু মুসআব আল যারকাউয়ি রহঃ এর সাথে আল কায়েদার সম্পর্ক অনেক পুরোন ও শক্ত হওয়ায় খুব সহজে আল কায়েদা ইরাকে প্রভাব বিস্তার করে এর সাথে সাথে ইরাক আক্রমনের ফলের নতুন জিহাদি রিক্রুটের ঢল নামে যা আল কায়েদার এই অবস্থা পরিবর্তনে খুব সহযোগিতা করে। যদিও অনেক আল কায়েদা সিনিয়র নেতাদের যারকাউয়ি এর সম্পর্কে দোটানায় ছিল তার হেদায়েতের আগের জীবন ও নিয়মতান্ত্রিক ইসলামের জ্ঞান অর্জন না করার জন্য, কিন্তু যখন আল কায়েদা তার গড়া ইরাকের শক্ত ভিত্তি পেয়ে গেল তখন তা উপেক্ষা করেই সৃষ্টি হল একিউআই। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি আল কায়েদা তার এই ভয়ের সত্যতা প্রকাশ পেল রক্তপাতের প্রতি প্রবল আগ্রহ, ইরাকে অন্যান্য জিহাদী দলগুলোর সাথে বৈরী সম্পর্ক ও নির্বচারে শিয়াদের হত্যার কারণে তারা আল কায়েদার সামগ্রিক লক্ষ্য থেকে তার কার্যকলাপ বিচ্যুত হয়ে পড়ে একিউআই। মুসলিমদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরবে এই কথা মাথায় রেখে তাকে আল কায়েদার পক্ষ থেকে কমপক্ষে দুইটি চিঠি পাঠানো হয়। আইমান আল জাওয়াহিরি তাকে পাব্লিক সাপোর্ট বাড়ানো ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাত করতে নিষেধ করেন ও প্রয়োজন ছাড়া শিয়াদের সাথে সংঘাতে না যেতে বলেন। তিনি বলেন যে জিহাদিরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অস্র যেটা ব্যবহার করে তা হচ্ছে সাধারণ জনগণের সহায়তা তাই এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত যা সাধারণ মানুষের জ্ঞান ও বুঝের বাইরে। ঠিক এর পরের বছর আতিয়াহ আব্দ আর রাহমান রহঃ আরো কঠোর ভাষায় তাকে সাবধান করেন তিনি বলেন রাজনৈতিক ফায়দা সামরিক ফায়দা থেকে বেশী প্রয়োজন। তিনি সাধারণ জনগনের ছোটখাট ভুল উপেক্ষা করতে বলেন ও তাদের সাথে এমন আচরণ করতে না করেন যার ফলে তারা তাদের বিপক্ষে যেয়ে শত্রুদের সাথে যোগ দেয়। এছাড়াও তিনি তাকে গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে আল কায়েদার সিনিয়র নেতাদের সাথে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত নেয়ারও নিন্দা জানান। আবু মুসআব আল যারকাউয়ি ও একিউআই এর সাথে আল কায়েদার এই টানা পোড়নে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আচ পাওয়া যায়, যার ফলে আল কায়েদা নতুন নতুন দলের সাথে যুক্ত হতে পারছে নতুন এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে নিজেদের সংগঠনের বিস্তৃতি বাড়ছে একি সাথে দলের ঐক্য নিজেদের নেতৃত্ব প্রয়োগ ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সময় আল কায়েদা আরেকটি নতুন সমস্যার মধ্যে পড়ে তা হচ্ছে নিজের শাখা সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা। কিছুদিন আগেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যেই সমস্ত নেতাদের অবস্থান ছিল ফলে যখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাচ্ছিল না পত্রবাহক দিয়ে এই কাজ করা যেত কিন্তু যখন ইরাকের সাথে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে এই কাজ সহজ ছিল না। প্রায় সময় পত্র বাহক আটক হত নিজেদের প্ল্যান তাগুত বাহিনির নজরে চলে আসত। এই সময় পত্র বাহক থেকে দূত এর মাধ্যমে যোগাযোগ কিছুটা রক্ষা করা যেত তাও সেটার ফলাফল খুবই স্বল্প ছিল। এর ফলে প্রায়ই আল কায়েদার তার শাখা সংগঠনের নিয়ন্ত্রন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। এবং যেই যেই সংগঠন আল কায়েদার বিভিন্ন কমান্ড মানতে নারাজ ছিল তাদের জন্য এটা ছিল একটি অযুহাত যদিও অনেকের কাছেই বাস্তবিক পক্ষেই নির্দেশ বা নতুন দলীয় নীতি পৌছাত না ফলে না জানার কারণেও অনেক সময় দলের স্বার্থে আঘাত করবে এমন কাজ নিজের দলের লোক দিয়ে সংগঠিত হত। যদিও ওসামা বিন লাদেন রহঃ প্রায় সময়ই শাখা সংগঠনের আমীর বা গুরুত্বপূর্ন অপারেশনের লোক নিজে বাছাই করতেন কিন্তু অনেক সময় তা হয়ে উঠত না। আল কায়েদার নেটওয়ার্ক বাড়ার সাথে সাথে নানা এলাকার নানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের লোক আল কায়েদার অধীনে একত্রিত হয়। এর মধ্যে অনেকেরই নিজেদের স্থানীয় লক্ষ্য এর সাথে দলের লক্ষ্য এক থাকত না অনেক সময় ক্রম নির্বাচনে এলাকার সমস্যা আগে থাকত । এই সব ঘটনা থেকে দলকে মুক্ত রাখার জন্য সেই সব শাখার সাপোর্ট বা ফান্ডিং বন্ধের মত একশন নিতে হয়েছিল কিন্তু বিকল্প ফান্ডিং পেলে অনেক সময় অনেকে নিজেদের আল কায়েদার সমকক্ষ অনেক সময় উচ্য মর্যাদার ভাবতেও শুরু করত। একি সময়ে কিছু কিছু শাখা সংগঠনের নিজেদের মিডিয়া আউটলেট খুলে ফেলল ফলে আল কায়েদার কন্ট্রোল সবার উপরে বজায় রাখা আরো কঠিন হয়ে পড়ে।

          ২০০৪ এর পরে থেকে বেশীরভাগ এনালিস্টদের এই বিশ্বাস আসে যে আল কায়েদা একটি বিক্ষিপ্ত সংগঠনে রুপ নিয়েছে। অনেকে ইরাকে এর সাথে তাদের সম্পর্ক নিজেদের টিকিয়ে রাখার শেষ চেস্টা হিসেবে দেখেছে। অনেকে এমন মন্তব্যও করেছে যে যারকাউয়ি ওসামা বিন লাদেন কেও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু ইরাকের সাথে এই মৈত্রী এককভাবে আল কায়েদার দুর্বলতা ভাবা যায় নি কারণ ইরাকের একটি শক্তিশালী দলেরও আল কায়েদাকে নিজেদের সাথে যুক্ত করার প্রবণতা ছিল শেষে দেখা যায় সস্পূর্ন লাভ একিউআই এরই হয়েছে উলটো দিকে আল কায়েদার নিজেদের নেতৃত্বের দূর্বলতা মানুষের কাছে প্রচার হয়েছে। দেখা যাচ্ছে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণেই অন্য ভুখন্ডেও নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল যদিও তা অনেক কারণে ফলপ্রসূ হয়নি। একি ভাবে aqim (২০০৭) ও aqip (২০০৯) এর সাথে নিজেদের আনুষ্ঠানিক সংযুক্তিও অনেকে এই ভাবেই দেখেছে। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন রহঃ এর শাহাদাত বরনের পর সবাই প্রায় এই সিদ্ধান্তে এসেছিল যে আল কায়েদার তার শাখা গুলোর উপর কোন প্রভাব অবশিষ্ট নেই। ২০১১ সালের অগাস্ট মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে এই নামে একটি আর্টিক্যাল ও প্রকাশ পেয়েছিল।

          বাস্তব চিত্র অনুধাবন করলে দেখা যায় যে নির্দেশনার কেন্দ্রীকরণ ও কার্যকরণের বিকেন্দ্রীকরণ যেই দলের মূল বৈশিষ্ট তাদের জন্য শাখা সংগঠনের বৃদ্ধি তাদের ক্রমেই শক্তিশালী করবে। যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ মূল লক্ষ্য নির্ধারন আমির নির্বাচন ও ক্ষেত্রে বিশেষে গুরুত্বপূর্ন অপারেশনের লোক নির্বাচন। যেহেতু স্থানীয় আমীরদের হাতে যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল তারা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারত। আর যেহেতু আমীর নির্বাচন কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে ছিল ফলে তাদের বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। এছাড়া এই নীতির ফলে সেন্ট্রালের সাথে স্থানীয় শাখার যোগাযোগও কম প্রয়োজন হয়।

          যদিও আল কায়েদা প্রায় সব শাখার উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সমর্থ হয় কিন্তু একিউআই এর সাথে পুরোনা ঝামেলার নিস্পত্তি হয় না এবং তাদের মধ্যে পুরাপুরি বিচ্ছেদ হয় আইএসআইএস সৃষ্টির মাধ্যমে। কিন্তু এই রকম বিদ্রোহ বা দলছুট হওয়ার ঘটনা কেন খুবই কম তা জানার জন্য এবোটাবাদ থেকে উদ্ধারকৃত কাগজপত্রের সাহায্য নিতে হবে। সেখানে উল্লেখ আছে যে আল কায়েদার সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন শাখা দলের সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন যা থেকে নিজেদের প্রভাব তার শাখা এর উপর স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। এর কিছু কিছু উদাহরণ নিচে দেয়া হলঃ

          ১। মে ২০১০ এ ওসামা বিন লাদেন রহঃ নির্দেশ দেন আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক হামলার শাখা খোলার জন্য যার দায়িত্ব থাকবে আব্দুল মালেক ড্রোউকদেল যা শুধু আমেরিকা ও পশ্চিমা স্থাপনায় আঘাত করবে। আল শাবাবের দায়িত্ব থাকবে আফ্রিকার শিং এর উপরে আর বাকি আফ্রিকার থাকবে ইউনিস আল মৌরিতানি এর হাতে।

          ২। তিনি সব শাখা সংগঠনকে আল কায়েদার সাথে করা চুক্তির সম্মান করতে বলেন ফলে পাকিস্তানের আইএসআই , পাঞ্জাবের গভর্নর নেওয়াজ শরীফের ভাই, ইরান, তুরস্ক, মৌরিতানিয়া এইসব দেশ ও দলের সাথে চুক্তি সবাই মেনে নেয়। তামিম আল আদনানি যে আইএসের মুখপাত্র ছিল সেও স্বীকার করেছে যে তারা আল কায়েদা থেকে ভেঙ্গে যাওয়ার আগে ইরানে আক্রমণ করে নি।

          ৩। এছাড়াও আল কায়েদার যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সেই শাখা ছাড়াও অন্য শাখার সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিত যার প্রভাব আজ পর্যন্ত আমরা সিরিয়ার হায়াতুত তাহরীর আশশামের সাথে ঘটনায় দেখি।

          ৪। তিনি অনেক সময় দলের ক্ষুদ্র বিষয়েও নির্দেশনা দিতেন যেমন পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান থেকে মুজাহিদদের বের করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আতিয়াহ আবদ আর রাহমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

          ৫। নেতৃত্বের অসাধারণ গুনের প্রকাশ করেছেন তিনি যখন একিউএপি এর আমির নাসির আল ওহাইশি নিজে থেকে সরে গিয়ে আনোয়ার আল আওলাকি রহঃ কে আমীর বানানোর প্রস্তাব দেন। তিনি আগে আনোয়ার আল আওলাকি রহঃ এর বায়োডাটা ও তার গুনের বর্ননা ও তাকে আমীর বানানোর কারণ জানতে চান।

          আল কায়েদার সাথে একিউআই এর সম্পর্ক সম্পর্কে আরেকটু ভাল ভাবে জানা যায় এবোটাবাদ থেকে পাওয়া ফাইল পত্রের মধ্যে। যদিও আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ ও আতিয়াহ আবদ আর রাহমান রহঃ থেকে একিউআই এর প্রতি সতর্ক বার্তা দেখে অনেকেই মনে করেছিল যে তখন আল কায়েদা তার এই শাখা উপর খুবই কম বা কোন নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু আমরা আগেই দেখেছি তামিম আল আদনানি এই কথা স্বীকার করেছে যে তারা ওসামা বিন লাদেনের ২০০৭ এর বক্তব্য অনুযায়ী ইরানের উপর হামলা বন্ধ রেখেছিল। এছাড়াও আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ কে তৎকালীন আইএসআই (একিউআই এর পরবর্তী নাম) কে তার বক্তব্যে তাদের সাথে আল কায়েদার সম্পর্ক স্পষ্ট করতে বলেন ও তাদের পক্ষে কথা বলতে বলেন। আরেকটি প্রাপকের নাম উল্লেখ ছাড়া চিঠিতে ওসামা বিন লাদেন রহঃ আইএসআই এর আমীরের শাহাদাত বরনের কথা উল্লেখ করে এই নির্দেশ দেন যেন তারা একটি সাময়িক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে আল কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতাদের আমীর নির্বাচন করার আগ পর্যন্ত। যদিও আল কায়েদার তার ইরাকি শাখাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছিল এর সাথে যোগাযোগের পর্যাপ্ত সুবিধাও ছিল না তারপরেও ওসামা বিন লাদেন হাফিঃ এর কাছে শেষ পর্যন্তও তাদের আমীর ঠিক করার মত ক্ষমতা ছিল। ২০১৩ সালে আবু বকর আল বাগদাদী যখন আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ এর সিরিয়া প্রবেশ এর নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ন উপেক্ষা করল তখনই আল কায়েদার সাথে তার ইরাকি শাখার সম্পর্ক পুরাপুরি ধ্বংস হল।

          এবোটাবাদ থেকে আল কায়েদার সাথে শাবাবের সম্পর্কের চিত্রও উঠে এসেছে। যদিও প্রথমে আল শাবাবের দূর্বল শাসন ব্যবস্থা হুদুদ এর প্রয়োগ না থাকা ইত্যাদি বিষয়ে ওসামা বিন লাদেন হাফিঃ চিন্তিত ছিলেন কিন্তু শাবাবের আমীর আহমেদ আবদি গোদান রহঃ এর কাছে উনার চিঠিতে আল শাবাবকে আল কায়েদার সাথেই রাখেন যাতে আল শাবাব আল কায়েদার ফান্ডিং অব্যাহত রাখে যদিও আল কায়েদার প্রথমে কোন ইচ্ছা ছিল না আল শাবাবকে তার শাখায় অনর্ভূক্ত করার। এছাড়াও আরেক চিঠিতে শাবাবের বায়াহ গ্রহন করার প্রমাণ আছে। মৌরিতানিয়া এর চুক্তি এর ব্যপারে আল শাবাব আমীরের মতামত ও নেয়া হয়েছিল যা শুধু গুরুত্বপূর্ন নেতা ও শাখা আমীরদের জন্য খাস ছিল। এছাড়াও সেখানে একিউআইএম এর সাথে আল শাবাবকে এক সাথে অই এলাকার অন্য জিহাদী দলগুলোকে আল কায়েদার সাথে যুক্ত করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। আল শাবাবের সাথে আল কায়েদার এই সম্পর্ক গোপন রাখার মূল কারণ ছিল যাতে আমেরিকান ও কাউন্টার টেরোরিস্ট গ্রুপের নজরদারি ছাড়াই আল শাবাব তার নেটোয়ার্ক বড় করতে পারে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।

          আল কায়েদার গোপনে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কৌশলঃ
          আল শাবাবের সাথে এই গোপন সম্পর্ক কৌশল আল কায়েদা আরব বসন্তের পরেই গ্রহন করে, যখন মিশর তিউনিসিয়া লিবিয়াতে স্বৈরাচারী শাসকের পতন হয় আল কায়েদা সেখানে প্রবেশ করার এক মোক্ষম যুযোগ লাভ করে যা আগের অবস্থায় সম্ভব ছিল না। তাই আল শাবাবকে আল কায়েদার সাথে সম্পর্ক গোপন রেখে সেখানে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে বলে এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক কাফের শক্তির বিশেষ নজর এর বাইরে রাখে। তার লক্ষ্য ছিল এমন যে আল শাবাব অই সব দেশে নিজেদের নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে ও সাধারণ জনগণের বোঝার মধ্যে থেকেই তাদের কাজ করবে যেহেতু আল কায়েদা সম্পর্কে অল্রেডী আমেরিকার প্রোপাগান্ডা সাধারণ মানুষের মনে খারাপ ধারনা তৈরী করেছে তাই তারা নিজেদের স্বার্থেই এই কৌশলের আশ্রয় নেয়। ঠিক একি রকম গোপন শাখা সংগঠনের মধ্য ছিল তিউনিসিয়ার আনসার আল শরিয়া পূর্ব লিবিয়ার আনসার আল শারীয়াহ, সিরিয়ার জাহবাত আল নুসরা ।
          ২০১৩ সালের আবু মহাম্মদ জুলানিকে তিরস্কার করে একটি চিঠিও লেখেন যে কেন সে আল কায়েদার সাথে তার সম্পর্ক পাবলিক করল কেন্দ্রীয় অনুমতি ছাড়া। বাকি দুই দলের ক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ব্যাপক অপারেশনের ফলে তাদের সাথে আল কায়েদার সম্পর্কের চিত্র তাদের কাছে আসে। আরব বসন্তের পর পর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এই গোপন শাখাদের আল কায়েদার সাথে যুক্ত করতে দোটানায় ভুগছিল তারা ভাবত যে এরা স্থানীয় জিহাদি দল আল কায়েদার আদর্শে উদবুদ্ধ কিন্তু এর সাথে কোন কেন্দ্রীয় নেতার যোগাযোগ নেই। তাদের এই ভুল ধারণার পিছনে প্রথমে আল কায়েদার তার গোপনীয়তা রক্ষা করার দক্ষতাই দায়ী ছিল। দ্বিতীয়ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিল যে যেহেতু আরব বসন্তে কোন রক্তপাত ছাড়াই স্বৈরশাসকদের পতন হয়েছে তাই মুসলিম বিশ্বে আল কায়েদার শাসক উৎখাতের রক্ত ঝরানোর নীতি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। এছাড়া ঠিক তখনই ওসামা বিন লাদেন রহঃ এর শাহাদাত বরণে তারা ভেবেছিল আল কায়েদার সাথে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু এই উচ্চাশার কারণে তারা আল কায়েদার এই গোপন অগ্রসর অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আরব বসন্ত এর পরের এই সময়ে তারা খুব সুচারু ভাবে এই সুযোগের সতব্যবহার করেছে। তৃতীয়ত আল কায়েদার বৈশ্বিক নীতি বুঝতে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়া।তারা ভাবত যে আল কায়েদা শুধু দূরের টার্গেট যেমন আমেরিকা বা ন্যাটো এইসব দিকে তার সব মনো্যোগ দেয়। আর অপর দিকে আনসার আশ শারিয়াহ শুধু স্থানীয় অপারেশন চালাচ্ছিল যা তাদের বুঝ অনুযায়ী আল কায়েদার দলীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন না। এছাড়াও বারাক ওবামার এক বক্তব্যও এই ভুলের পিছনে দায়ি ছিল যেখানে সে বলেছিল যে আরব বসন্তের এই যুগ কিছু স্থানীয় উগ্র লোকদের দ্বারা হচ্ছে যারা শুধু এলাকা দখল করতে চায়।

          আল কায়েদার প্রতি অস্বচ্ছ ধারণা আজও চলমান আছে। এই ২০১৬ সালেও অনেক বিশেষজ্ঞ এই মতামত দিয়েছে যে আল কায়েদার শক্তি ক্রমশ নিম্নমুখী কারণ তাদের শাখা গুলো দলের আগের এজেন্ডা আমেরিকা বা পশ্চিমা লক্ষ্য বাদ দিয়ে এলাকার টার্গেটের দিকে বেশী নজর দিচ্ছে ও আল কায়েদা তার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। কিন্তু তারা আরব বসন্তের সাথে পশ্চিমা টার্গেটের প্রতি আগ্রহের হিসেব খুব আনাড়িভাবে করেছে। আল কায়েদা মুলত এই দূরের শক্তির বিপক্ষে যুদ্ধ শুরু করেছিল কারণ তারা ভাবত যে আমেরিকার সাপোর্ট ছাড়া এলাকা এই পুতুল সরকার আল কায়েদার বিপক্ষে টিকে থাকতে পারবেনা কিন্তু আরব বসন্ত তাদের এই হিসাব নতুন করে করতে শিখায় যখন তারা দেখল তারা যেই সরকারকে জিহাদ করে সরাতে চাচ্চে সেই একি শাসক গাদ্দাফিকে আমেরিকা নিজে সরিয়ে দেয় অপর দিকে মিশরের হোসনি মোবারকে পতনে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ হয় না। ফলে এই আরব বসন্তের পরে আমেরিকাকে প্রথম টার্গেট হিসেবে রাখার নীতি থেকে আল কায়েদা সরে আসে এবং এলাকার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।

          উপসংহারঃ
          আল কায়েদার এই নতূন সম্ভাবনার ক্ষেত্র অবশ্যই নতুন কিছু সমস্যা নিয়ে এসেছে। যেমন আল কায়েদার সাথে আইএসআই এর বিচ্ছেদ ও আইএসআইএসের অভাবনীয় উথ্যান। কিন্তু এখানেও আল কায়েদা তার টিকে থাকার দক্ষতার চরম নৈপুণ্য প্রকাশ করেছে। নতুন সময়ে হাইয়াত তাহরীর আশ শামের সাথে এই সমস্যাকেও অনেকে সিনিয়র নেতাদের সাথে আল কায়েদার মাঠ পর্যায়ে কাজ করা দলের দূরত্ব হিসেবে দেখছে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে যে আল কায়েদা বা জিহাদী দলের কার্যক্রম এর উপর সাথে সাথে দেয়া বিশ্লেষণ থেকে খুব একটা বোঝা যায় না, বরং তাদের সুচারু সুনিপন সুদূরপ্রসারী প্ল্যান যত দিন যায় ততই স্পষ্ট হয়ে উঠে।
          যদি শাখা সংগঠনের বিদ্রোহ বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে অন্য শাখাদের মধে কেন্দ্রীয় প্রভাব কমে যাবে এছাড়াও যেসব শাখা অন্য শাখার সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে তাদের মধ্যেও শৃঙ্খলা বজায় রাখা যাবে না। এখন শুধু সময়ই বলে দিবে যে আল কায়েদা হাইয়াত তাহরীর আশ শামের এই নতুন চ্যালেন্জ কিভাবে মোকাবেলা করে।
          পরিশেষে এই প্রশ্ন আসে যে জিহাদি দলগুলোর পরবর্তী আচরণ কেমন হবে? এটা মনে রাখতে হবে যে জিহাদী দল মজ্জাগত ভাবে চোরাগোপ্তা গেরিলা দল এর উপর আল কায়েদা তার উপরে আসা অনেক রকমের পরীক্ষায় অস্বাভাবিক সফলতা দেখিয়েছে। তাই আমাদের আল কায়েদার সাংগঠনিক কাজ ভাল করে বুঝতে হবে তার দূর্বলতা চিনতে হবে এর জন্য সবার একযোগে কাজ করতে হবে।



          এই লেখার যা কিছু কল্যাণকর সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে, ভুল ত্রুটি সবই আমার কমতি। দয়া করে সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ও এই আলাহর বান্দার জন্য খাস দুয়া করবেন। ওয়া আসসালাম।

          Comment


          • #6
            জাঝাকাল্লাহ ভাই! আল্লাহ আপনাদের মেহনতকে কবুল করুন আমিন।
            আমি হতে চাই খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা এর মত রণকৌশল ও ওমর (রা এর মত কাফেরদের প্রতি কঠোর।

            Comment


            • #7
              jazakallah akhi, allah apnar mehnatke kobul korun

              Comment

              Working...
              X