Announcement

Collapse
No announcement yet.

কোরআনের আলো ||৪|| তাফসিরে সূরা মুহাম্মাদ || ৩য় পর্ব || কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কোরআনের আলো ||৪|| তাফসিরে সূরা মুহাম্মাদ || ৩য় পর্ব || কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা!

    তৃতীয় পর্ব

    কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা--

    সূরার প্রথম আয়াতে যে মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই মুমিনদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই মূলনীতি হলো এই যে,আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যে বিধান নাযিল হয়েছে, সেটাই চিরন্তন ও শাশ্বত মহা সত্য। সেই মহা সত্য পৃথিবীতে শুধু টিকে থাকার জন্যে নয়--বরং মানব জাতির জীবন ও মূল্যবোধের উপর তার আধিপত্যশীল ও পরাক্রান্ত হবারও অধিকার রয়েছে, যাতে সমগ্র মানবজাতি সত্যের সাথে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় এবং তার ভিত্তিতে নিজেদের জীবনকে গড়ে তোলে। আর যারা কুফুরী করেছে, তারা বাতিল ও মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই বাতিল ও মিথ্যার উৎখাত হওয়া উচিত। মানব জীবনের উপর তার তাদের কোনো প্রভাব বিস্তার আদৌ সমীচীন নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
    فاذا لقيتم الذين كفروا فضرب الرقاب حتي اذا اثخنتموهم فشدوا الوثاق فاما منا بعد و اما فداء حتي تضع الحرب اوزارها
    'অতঃপর যখনই তোমরা কাফেরদের মুখোমুখী হবে,তখনই তাদের গরদানে মারতে থাকবে। যখন তোমরা তাদেরকে ভালো মতো হত্যা করে সারবে,তখন বাদবাকীদেরকে শক্তভাবে বেঁধে ফেলো তারপর হয় অনুগ্রহ দেখিয়ে তাদের ছেড়ে দিও, নচেত মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিও--যতক্ষণ যুদ্ধ বিরতি না হয় ততক্ষণ.....। '

    এখানে মুখোমুখী হওয়া দ্বারা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে মুখোমুখী হওয়া বুঝানো হয়েছে, নিছক মুখোমুখী হওয়া নয়।কেননা এই সূরা নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আরব উপদ্বীপে মুশরিকরা দু'শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলো, যুদ্ধরত ও সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ। তখনো সূরা তাওবা নাযিল হয়নি, যা মুশরিকদের মেয়াদী চুক্তিকে মেয়াদ পর্যন্ত ও অমেয়াদী চুক্তিকে চার মাস পর্যন্ত সীমিত করে দিয়েছিলো এবং সেই মেয়াদের পর মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপে যেখানেই পাওয়া যাক, ইসলাম গ্রহন না করলে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছিলো। কেননা সূরা তাওবা নাযিল হয়েছিলো ইসলামের কেন্দ্রীয় ভুখণ্ড আরব উপদ্বীপকে একমাত্র ইসলামের আবাস ভূমি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে।
    (মনে রাখতে হবে, সূরা তাওবার এই বিধান আরব উপদ্বীপের বাহিরের মুশরিকদের উপর প্রযোজ্য নয়, সেখানে মুশরিকরা জিযিয়া দিয়ে বসবাস করতে চাইলে তা গ্রহন করা হবে।--সম্পাদক

    মুখোমুখী হবার পর গর্দান মারা তথা হত্যা করার যে নির্দেশ এখানে দেয়া হয়েছে,সেটা স্বভাবতই তাদেরকে ইসলাম গ্রহনের দাওয়াত দেওয়া ও তা তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যাখানের পরই কার্যকর হবে-- তার আগে নয়। সূরার পটভূমি ও আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংগতি রেখে এখানে হত্যার কার্যক্রমটিকে প্রত্যক্ষভাবে ও অনুভবযোগ্য করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে,বলা হয়েছে
    حتي اذا اثخنتمو هم فشدوا الوثاق
    'যখন তোমরা তাদেরকে ভালোভাবে হত্যা করে সারবে,তখন বাদবাকীদেরকে শক্তভাবে বেঁধে ফেলো।... আয়াতে 'ইছখান' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হলো,ব্যাপক ও চরমভাবে হত্যা করা, যতক্ষণ না শক্তির শক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের পরাজয় নিশ্চিত হয় এবং পুনরায় আক্রমন বা আত্ণরক্ষা করার ক্ষমতা আর না থাকে,একমাত্র তখনই, তার আগে নয়।

    যারা জীবিত ধরা পড়বে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে এবং কঠোরভাবে গ্রেফতার করা হবে--যতক্ষণ শত্রুর শক্তি অবশিষ্ট থাকবে। তাদের পুনরাক্রমণের সম্ভাবনা খতম করাই হবে এই হত্যার উদ্দেশ্য।

    অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে,এই আয়াতের ব্যাখ্যা এটাই। এই ব্যাখ্যা অনুসারে এই আয়াত ও সূরা আনফালের সেই আয়াতের বক্তব্যে কোনো বিরোধ থাকে না, সে আয়াতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলমানদেরকে বদর যুদ্ধে বেশি করে যুদ্ধবন্দী গ্রহনের জন্যে ভর্ৎসনা করা হয়েছিলো। কেননা আল্লাহর দৃষ্টিতে আরো বেশি সংখক মুশরিককে হত্যা করাই ছিলো শ্রেয়। সূরা আনফালের সেই দু'টো আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন--
    ما كان لنبي ان يكون له اسري حتي يثخن في الارض

    কোনো নবীর পক্ষে এটা সংগত নয় যে,পৃথিবীতে আল্লাহর শত্রুদের নিপাত না করা পর্যন্ত যুদ্ধবন্দী গ্রহন করবে।'(আয়াত ৬৭-৬৮)

    সুতরাং সর্বপ্রথম কাজ হলো, শত্রুর শক্তি ধ্বংস করা ও তার প্রতাপ খর্ব করার জন্যে হত্যা ও রক্তপাত করা,এরপর গ্রেফতারী। এর যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট। কেননা যুদ্ধের প্রথম উদ্দেশ্যই হলো, ইসলামের প্রতি বৈরী আগ্রাসী শক্তিকে ধ্বংস করা, বিশেষত যখন সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলমানদের শক্তি কম ছিল এবং মুশফিকরা সংখ্যাগুরু ছিলো। সে সময়ে একজন অমুসলিমকে হত্যা করা শক্তির ভারসাম্য রক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের শক্তি ধ্বংস করা এবং তাদেরকে আক্রমণ ও আত্মরক্ষায় সক্ষম করে দেয়ার জন্য যখন যতটা জরুরি, তখন ততটা নিপাত করার পক্ষে যে আদেশ সর্বকালেই প্রযোজ্য। তবে এরপর যাদেরকে বন্দী হিসেবে গ্রহণ করা হবে, তাদের ব্যাপারে কি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে, সেটা সূরা মুহাম্মদের এই আয়াতের স্থির করে দেয়া হয়েছে। কুরআনের একমাত্র এই আয়াতেই বন্দীদের ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। সে নীতি হলো, হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে, নতুবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে।' অর্থাৎ হয় কোনো বিনিময় ছাড়াই তাদেরকে মুক্তিদেয়া হবে,নচেত কোনো অর্থ, কাজ বা মুসলিম বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে।
    আয়াতে তৃতীয় কোনো নির্দেশনা নেই। অর্থাৎ মুশরিক বন্দীদেরকে দাস হিসাবে গ্রহন বা হত্যা করা বা অন্য কোনো কিছু করার অবকাশ নেই। তবে বাস্তবে এরুপ ঘটেছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম) ও খলীফারা কোনো কোনো বন্দীকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাস হিসাবে গ্রহন করেছেন নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কিছু বন্দীকে তারা হত্যাও করেছেন।
    এখানে আমি এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বিশিষ্ট হানাফী ইমাম আবুবকর আল জাসসাস (রহ এর কিতাব 'আহকামুল কুরআন' এ ও তার টীকায় বর্নিত কিছু বক্তব্য উদ্বৃিত করছি। উদ্বৃতির পর আমি নিজের মতামতও ব্যক্ত করব। আল্লাহ তায়ালা বলেন 'যখন তোমরা কাফেরদের মুখোমুখী হবে,তখন গর্দান মারতে থাকবে..., এ প্রসংগে ইমাম আবুবকর জাসসাস রহঃ বলেন, আয়াতের এ অংশটির সুস্পষ্ট বক্তব্য এই যে, এই সময়ে কাফেরদেরকে হত্যা করা জরুরী। অবশ্য ব্যাপক হত্যাকান্ড ঘটানোর পরের কথা স্বতন্ত্র। এ ধরনের কথা আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেছেন,
    'কোনো নবীর পক্ষে সমীচীন নয় যে, পৃথিবীতে ব্যাপক হত্যাকান্ড না ঘটানো পর্যন্ত বন্দী গ্রহন করবে।...'
    এ বক্তব্য সঠিক,সুতরাং উভয় আয়াতে কোনো বিরোধ নেই।
    হযরত ইবনে আব্বাস( রা থেকে বর্নিত আছে, তিনি বলেছেন, এটা বদর যুদ্ধের দিনের ব্যাপার। তখন মুসলমানরা সংখ্যায় ছিলো কম।পরে যখন তাদের সংখ্যা বেড়ে গেলো এবং তাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি জোরদার হলো, তখন বন্দীদের সম্পর্কে এই আয়াত নাযিল হয় 'হয় অনুগ্রহ করো,নচেত মুক্তিপণ গ্রহন করো' এ সময় আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানদেরকে সুযোগ দিলেন-- হয় তাদেরকে হত্যা করে ফেলুক,নচেত দাসদাসীতে পরিনত করুক, নচেত মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দিক।আবু উবায়েদ নামক জনৈক বর্ননাকারী বলেন, এটা হযরত ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় আমরাও ওটা বর্জন করেছি। তবে বন্দীদেরকে হত্যা করার কোনো বৈধতা আয়াতে পাওয়া যায় না। আয়াতে কেবল অনুগ্রহ প্রদর্শন অথবা মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তিদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

    ইমাম সুদ্দী রহঃ এর মতে,
    فاما منا بعد و اما فداء
    হয় অনুগ্রহ প্রদর্শন করো,নচেত মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দাও,এ আয়াত 'মানসূখ (রহিত)
    فاقتلوا المشركين حيث و جدتموهم
    'মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো' সূরা তাওবার এ আয়াত দ্বারা ওটা রহিত হয়ে গেছে। আবু বকর বলেন, 'যখন তোমরা কাফেরদের মুখোমুখী হবে,তখন গর্দান মারতে থাকো।' 'কোনো নবীর পক্ষে এটা সংগত নয় যে, তার হাতে বন্দীরা থাকবে, যতক্ষণ না ব্যাপক হত্যাকান্ড সংঘটিত করে...' এবং তাদেরকে যদি যুদ্ধের ভিতরে পাও, তবে তাদেরকে ও তাদের পিছনে যারা রয়েছে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দাও'-- এ তিনটি আয়াতের হুকুম রহিতত নাও হতে পারে এবং এটা স্হায়ী নির্দেশ হতে পারে। কেননা আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের সর্বতোভাবে দমন ও পরাজিত না করা পর্যন্ত ব্যাপকভাবে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন এবং বন্দী হিসাবে তাদের আটক করতে নিষেধ করেছেন। এ আদেশ আল্লাহ তায়ালা তখনই দিয়েছেন যখন মুসলমানদের সংখ্যা কম ছিল এবং তাদের শত্রুদের সংখ্যা বেশি ছিল। যখন হত্যা করে ও বিতাড়িত করে সম্পূর্ণভাবে দমন ও পরাস্ত করা সম্পন্ন হবে, তখন অবশিষ্টদের কে বন্দি করা যাবে। সুতরাং ইসলামের প্রথম অবস্থায় মুসলমানরা কখনো পতিত হলে তখন তাদের জন্য এই নির্দেশকে বহাল রাখা কর্তব্য। সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহিমাহুল্লাহ বলেন আমার মতে,
    فاقتلوا المشركين حيث و جدتموهم

    'মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা করো'এ আদেশ কেবল আরব উপদ্বীপের মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু সূরা মুহাম্মদের নির্দেশটি সর্বাবস্থায় ও সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সর্বাত্মক হত্যা ও দমন অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর অবশিষ্ট শত্রুদেরকে বন্দি করা যাবে। সূরা তাওবার নাযিলের পর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফারা এটাকেই এ ব্যাপারে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে ছাড়া বন্দীদেরকে হত্যা করা বৈধ নয়। সেই ব্যতিক্রমধর্মী বিশেষ অবস্থাগুলোর বিবরণ পরে আসছে।

  • #2
    জাজাকাল্লাহ

    Comment


    • #3
      জাজাকাল্লাহ।
      আল্লাহ আপনার কাজের মধো বারাকাহ দান করুন,আমিন।

      Comment


      • #4
        ভাই, অত্যন্ত সুন্দর হইছে । লিখার ধরনও মাশা-আল্লাহ চমৎকার । আল্লাহ আপনার লিখাতে আরো বারাকাহ দান করুক । আমীন ।
        Imma As Shoria Wa Imma As Sahada

        Comment

        Working...
        X