Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইমারা সম্পর্কে নাসিরুদ্দীন আলবানী ও শায়খ বিন বায কি বলেছেন আসুন শুনি

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইমারা সম্পর্কে নাসিরুদ্দীন আলবানী ও শায়খ বিন বায কি বলেছেন আসুন শুনি

    ইমারা সম্পর্কে নাসিরুদ্দীন আলবানী কি বলেছেন আসুন শুনি
    বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
    জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী

    প্রশ্ন: হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহুবর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেনঃ ‘তাঁরা রাসূলকে কল্যাণ বিষয়ে প্রশ্ন করতেন, কিন্তু আমি কিসে অকল্যাণ আছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম...’উক্ত হাদীছ থেকে বর্তমানের ইসলামী জামাআতসমূহ সম্বন্ধে কি ইঙ্গিত পাওয়া যায়? বর্তমান সালাফী আন্দোলনের সংগঠন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?


    উত্তর: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর রাসূলের প্রতি। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুরাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীছটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে। আর তা হচ্ছে, মুসলিমদের দলে দলে বিভক্ত হওয়া আদৌ বৈধ নয়; বরং তাদেরকে একটিমাত্র ইমারতের অধীনে এবং সেই ইমারতের খলীফার তত্ত্বাবধায়নে একক জামাআত হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু যদি কখনও এমন হয় যে, মুসলিমরা দলমত নির্বিশেষে একক খলীফার বায়আত করে একক জামাআত হয়ে থাকতে পারছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর অনুসরণ প্রিয় কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো একটি দলে যোগদান করা বৈধ নয়। বিশেষ করে যখন প্রত্যেকটি দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত থাকবে আর দাবী করবে যে, তার একজন নির্দিষ্ট আমীর রয়েছে এবং ঐ আমীরের দলে দলভুক্ত সবাইকে তাঁর কাছে বায়আত করতে হবে। আর যখন এই বায়আতকে বায়আতে কুবরাবা সর্ববৃহৎ বায়আত গণ্য করা হবে, তখন বিষয়টি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। মনে রাখতে হবে, ‘বায়আতে কুবরা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফা ছাড়া অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। বিষয়টি তখন আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে, যখন প্রত্যেকটি জামাআতের একজন করে বায়‘আত গ্রহণকারী আমীর থাকেন এবং তার অনুসারীরা উক্ত বায়আতের শর্তাবলী এমনভাবে মেনে চলে যে, তাদের কারো জন্য অন্য কারো মতামত গ্রহণের বৈধতা থাকে না। আমি অন্য কোনো আমীরের কথা বললাম না, কারণ আমীর কথাটি বললে অন্তত: নামের ক্ষেত্রে হলেও আমরা যেন তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলাম। সেজন্য আমি আমীর না বলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা আলেমের কথা বললাম। অর্থাৎ তাদের দলভুক্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তি বা আলেমের সাথে দলীল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের জন্য তাঁর মতামত গ্রহণের সুযোগ থাকে না। অতএব, দলগুলির অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে সেগুলোতে যোগদান করা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়; বরং তাকে একাকী থাকতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, তার যেসব ভাই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্*র অনুসরণে আগ্রহী, সে তাদের থেকে দূরে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [التوبة: ١١٩] আর তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাক(তাওবাহ ১১৯) অর্থাৎ সত্যবাদী যেই হোক না কেন এবং যেখানেই হোক না কেন তাদের সাথে থাক। সেকারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামহুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুএর হাদীছে দলাদলির প্রত্যেকটি দলকে পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও উম্মতে মুহাম্মাদীকে নিম্নোক্ত হাদীছে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি জনগোষ্ঠী হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে; তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ এবং হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুএর হাদীছে স্ববিরোধী কোনো বক্তব্য নেই। কেননা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুএর হাদীছে একদিকে যেমন দলাদলি করতে নিষেধ করা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ্*র অনুসারী সত্যবাদী মুমিনদের সাথে থাকতে বলা হয়েছে এবং তাদেরকে একক কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এই একক ব্যক্তি যদি দলমত নির্বিশেষে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়আতকৃত ইমাম হন, তাহলে তাঁর অনুসরণ করা যরূরী। মনে রাখতে হবে, মুসলিম উম্মাহ যদি একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির হাতে বায়‘আত করে, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। আমার ধারণা মতে, দলাদলি সৃষ্টিকারীরা যদি ভয়াবহ সেই বিষয়টি জানত, তাহলে দলাদলি থেকে পশ্চাদ্*ধাবন করত এবং হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুএর হাদীছের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কাউকে তাদের আমীরহিসাবে গ্রহণ করত না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একই সময়ে দুজন খলীফার বায়আত সংঘটিত হলে শেষের জনকে তোমরা হত্যা কর অতএব, গোটা মুসলিম উম্মাহকে পরিচালনার জন্য একক খলীফা তৈরী পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে এবং অপেক্ষার এই সময়ে তাদের জন্য কোনক্রমেই ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর বা দলপ্রধান নির্ধারণ ও তাঁর হাতে বায়আত বৈধ হবে না। কারণ এই বায়আত মুসলিমদের বিভক্তি ও দলাদলিকে আরো বৃদ্ধি করবে। আমি বিভক্তি সৃষ্টির কথা না বলে বিভক্তি বৃদ্ধির কথা বললাম একারণে যে, দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিমরা ইতোমধ্যে দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভক্তির পরে প্রত্যেকটি দল যদি তাদের আলাদা আলাদা দলীয় প্রধান নির্ধারণ করে, তাহলে এই নেতৃত্ব উম্মতের মধ্যে বিভক্তি আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ ﴾ [الانفال: ٤٦] তোমরা পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। অন্যথায়, তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হবে’ (আল-আনফাল ৪৬) তবে মুসলিম উম্মাহ্*র প্রত্যেককে তার সাধ্যানুযায়ী সর্বজন স্বীকৃত একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এটিই হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির অর্থ। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কাঁধে বায়আত না থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তার জাহেলী মৃত্যু হবে’দলাদলি সৃষ্টিকারীদের মধ্যে বহু সংখ্যক মানুষ এই হাদীছটি ভুল বুঝে থাকে। তারা মনে করে, প্রত্যেকটি মুসলিমের কাঁধে কারো না কারো বায়আত অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু হাদীছটির মর্মার্থ তা নয়; বরং এর অর্থ দু’টিঃ (১) গোটা মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফা থাকলে কোনো মুসলিমের জন্য তাঁর বায়আত পরিত্যাগ করে জামাআত থেকে পৃথক থাকা বৈধ নয়। আর এই বায়আত পরিত্যাগ করে কারো মৃত্যু হলে তার মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্যু গণ্য করা হবে। (২) যদি মুসলিমদের মধ্যে এমন খলীফা না থাকে, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এমন খলীফা তৈরীর চেষ্টা করতে হবে, সবাই যার বায়আত করবে। এটিই হচ্ছে হাদীছের দ্বিতীয় অর্থ। হাদীছটির দ্বিতীয় এই অর্থকে কিছু ‘ফিক্বহী ক্বায়েদা’ সমর্থন করে। যেমন: مَا لَا يَتِمُّ الْوَاجِبُ إلَّا بِهِ فَهُوَ وَاجِبٌ‘যা ছাড়া ওয়াজিব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, সেটিও ওয়াজিব’বুঝা গেল, মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফা থাকা ওয়াজিব। এই খলীফা না থাকলে তাঁকে তৈরীর চেষ্টা করাও ওয়াজিব। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্*র এমন ইমাম না থাকলে তাদের দলে দলে বিভক্ত হয়ে থাকা ঠিক নয়। কেননা এই দলাদলি তাদের বিভক্তিকে আরো বৃদ্ধি করবে। সেজন্য আমার মতে, যারা কোনো দল বা সংগঠনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়, তাদের এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য যদি হয় সংগঠন বা দল গঠন, যেসব দলের মূলনীতি ও শর্তসমূহ অন্যান্য সংগঠনের অনেক মূলনীতি থেকে ভিন্ন, তাহলে এই হাদীছে তা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তবে মুসলিমদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে এবং তদ্*নুযায়ী আমলের জন্য তাদেরকে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে; বরং তা অপরিহার্য বিষয়। কেননা মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফা তৈরীর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মানুষকে আগে দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানী করে তুলতে হবে। অন্যথায় চূড়ান্ত এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না।([1])


    প্রশ্ন: আন্দোলনধর্মী সংঘবদ্ধ দাওয়াতী কার্যক্রম যদি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি এবং সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?


    উত্তর: বর্তমান প্রচলিত সংগঠন এবং প্রচলিত সুবিন্যস্ত দাওয়াতী কার্যক্রমে আমরা বিশ্বাস করি না। কেননা সংগঠন মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীনী দায়িত্ব পালনে অক্ষম করে ফেলে। উল্লেখ্য যে, التنظيم‘আত-তানযীম’ শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়; প্রথমত: এটি ব্যাপক অর্থে গোপন কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত: সংক্ষিপ্ত পরিসরে এটি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, আরবী ব্যকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে মুসলিমদেরকে পাঠদানের সুবিন্যস্ত বন্দোবস্তকে বুঝায়। তবে এই ধরনের প্রশ্নে সাধারণতঃ দ্বিতীয় অর্থটি উদ্দেশ্য নয়; বরং দলাদলি সম্পর্কে জানতে চাওয়াই এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য। বর্তমানে বিভিন্ন জামাআত ও সংগঠনের অবস্থা হচ্ছে, তারা পরস্পরে বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করছে, প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতি রয়েছে এবং প্রত্যেকটি জামাআতের পৃথক পৃথক অনুসরণীয় দলপ্রধান রয়েছেন। মনে রাখতে হবে, ইসলামের সাথে এসব সংগঠনের কোনই সম্পর্ক নেই। এমনিতেই আমরা দলাদলির মধ্যে বসবাস করছি, এর পরে যদি আমরা আবার নতুন নতুন দল গঠন করি, তাহলে এর মানে হচ্ছে আমরা দলাদলি ও মতানৈক্যের পরিমণ্ডল আরো লম্বা করলাম। সেজন্য আমরা প্রচলিত এসব সাংগঠনিক কার্যক্রমকে সমর্থন করি না এখানে আমি একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যে বিষয়ে বিশেষ করে ভাল মনের অনেক মানুষ সজাগ নন; বর্তমান ইসলামী বিশ্বে বিপ্লব ও জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ২০/৩০ বছর আগে ছিল না। আমার মত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা বলতে পারবেন যে, আগে এসব ছিল না। বর্তমান এই জাগরণের সাথে একই ধাঁচে যুক্ত হয়েছে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি ও কর্মপদ্ধতির দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান। ইদানীং শেষোক্ত দাওয়াতের ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং অন্যান্য দলের লোকেরা মনে করছে, দেশ এখন সালাফী দাওয়াতের দখলে। সেকারণে প্রচলিত সালাফী দাওয়াত এখন সালাফীনাম দিয়ে বিভিন্ন দল গঠনের সুযোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সালাফী দাওয়াত এসব দলাদলির অনেক ঊর্ধ্বে। সালাফে ছালেহীন কি এমন দলাদলির সৃষ্টি করেছিলেন?! কখনই না। এসব দলাদলি তো দূরের কথা তারা এমনকি রাজনৈতিক দলাদলিতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। এসব দলাদলি ইসলাম পরিপন্থী। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿ وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٣١ مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٣٢ ﴾ [الروم: ٣١، ٣٢] আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত(আর-রূম ৩১-৩২)সত্যিকার অর্থে এটিই হচ্ছে বর্তমান দলাদলির বাস্তব চিত্র। আমার মতে, কোনো দলের সাথে সালাফীশব্দটির ব্যবহার বিদ‘আতের সাথে ইসলামীশব্দটি ব্যবহারের মত। যাহোক, সালাফী দাওয়াতে বিশ্বাসীদের মন কাড়ার জন্য এখন এই শব্দটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত সালাফী দাওয়াত কখনই কোনো প্রকার দলাদলি সমর্থন করে না, যদিও বিশ্ব সেরা মানুষটিও সেই দলাদলির পুরোধা হন। কেউ দলাদলির দিকে আহ্বান করলেই বুঝতে হবে, সে সরল-সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করেছে। একদিন রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরামের সাথে বসা অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় তিনি মাটির উপর সোজা একটি দাগ টেনে নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন, ﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ﴾ [الانعام: ١٥٣] নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে(আল-আনআম ১৫৩) অতঃপর সোজা দাগটির পাশে ছোট ছোট আরো কিছু দাগ টেনে বললেন, ‘এই সোজা দাগটিই হচ্ছে আল্লাহ্*র পথ এবং এর দুপাশের দাগগুলি এমন পথ, যেগুলির প্রত্যেকটির শেষ প্রান্তে শয়তান রয়েছে। সে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছেসরল-সোজা পথটির আশপাশের পথগুলি শুধুমাত্র প্রাচীন ছূফীদের পথ নয়; বরং আধুনিক নতুন নতুন দলগুলিও উক্ত পথের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে বিভ্রান্ত যেসব পথের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর কোনো কোনটি আগে ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করত এবং রাজনীতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। যেমন: মুতাযিলা, মুরজিয়া ইত্যাদি। আবার সেসব দলের কোনো কোনটি সরাসরি রাজনৈতিক দল ছিল। যেমন: খারেজী মতবাদ, যার মূলনীতিই হচ্ছে মুসলিম সরকারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ। পরিশেষে বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট ছোট যেসব পথের কথা বলেছেন, সেগুলো তাঁর আঁকা সোজা পথের বাইরের সব পথ, মত ও পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। যদি কেউ বলে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রয়োজন রয়েছে। জবাবে আমরা বলব, শরী‘আত বিরোধী কোনো কাজ করে কোনো প্রকার কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব মুসলিমদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করে ফেলছে, প্রত্যেকটি দল নিজের মূলনীতি নিয়ে খুশী থাকছে।([2])


    প্রশ্ন: মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎকাজে এবং পরহেযগারিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে ‘সংঘবদ্ধ দাওয়াতী কাজ’-এর সঠিক ব্যাখ্যা কি হবে? কেননা কেউ কেউ মনে করেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই নেতৃত্ব এবং আনুগত্য থাকতে হবে আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আমীরের অবাধ্য হল, সে স্বয়ং আমার অবাধ্য হল’


    উত্তর: উল্লেখিত হাদীছটি ‘ছহীহ’ এর অর্থ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর খলীফা কর্তৃক নিযুক্ত আমীরের অনুসরণ করা ওয়াজিব। প্রশ্নকারী হাদীছটিকে যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, তা সঠিক নয়; বরং হাদীছটি গোটা মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমরা যেন মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, যিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্*র আলোকে আমাদেরকে পরিচালিত করবেন। যাহোক, মুসলিম উম্মাহ্*র একক খলীফা যদি আমাদের উপরে কাউকে আমীর হিসাবে নিযুক্ত করেন, তাহলে তার অনুসরণ করা ওয়াজিব।... ([3])


    তিনি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত ফেতনা সম্পর্কিত হাদীছটি উল্লেখ করার পর বলেন, ‘হাদীছটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হাদীছটিতে বর্তমান মুসলিমদের বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ আজ একদিকে যেমন মুসলিম উম্মাহ্*র প্রতিষ্ঠিত জামাআত ও খলীফা নেই, অন্যদিকে তেমনি তারা চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতির ক্ষেত্রে শতধাবিভক্ত হয়ে গেছে। হাদীছটির বক্তব্য অনুযায়ী, কোনো মুসলিম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে কোনো দল, জামাআত বা সংগঠনে যোগদান করবে না। অর্থাৎ যেহেতু এমন জামাআত বর্তমানে নেই, যাদের নেতৃত্বে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়আতকৃত একক খলীফা থাকার কথা, সেহেতু অন্য কোনো জামাআতে যোগ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই([4])


    () সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী আব্দুল আযীয ইবনে বায

    প্রশ্ন: সূদানের মুতাওয়াক্কিল ইবনে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের সূদানে একটি জামাআত আছে, যারা মানুষকে সালাফী দাওয়াত দেয়। তবে তাদের একজন প্রধান আমীর ও অনেকগুলি সাধারণ আমীর রয়েছেন এবং তারা তাদের সদস্যদেরকে প্রধান আমীরের অনুসরণ করতে বাধ্য করে। এমনকি ইজতেহাদী বিষয়েও তাদেরকে তার অনুসরণে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন।


    উত্তর: এমন সংগঠন বা দাওয়াতী কাজের এমন পদ্ধতির কোনো শরঈ ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই। প্রশ্নে ইমারত বা নেতৃত্বের যে কথাটি বলা হয়েছে, তা শুধুমাত্র মুসলিম সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; সৎকাজে যার অনুসরণ করতে হবে, অসৎকাজে নয়। কোনো দল কর্তৃক কাউকে আমীর বানিয়ে তার অনুসরণ করা মারাত্মক ভুল। কাউকে সৎকাজে ছাড়া অনুসরণ করা যাবে না। কোনো বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে বিবাদীয় বিষয় কুরআন ও সুন্নাহ্*র দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ﴾ [النساء: ٥٩] ‘অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (আন-নিসা ৫৯) সুতরাং বিভিন্ন জামাআত ও মাযহাবের অনুসারীদের উচিৎ বিবাদীয় যে কোনো বিষয়কে কুরআন ও সুন্নাহ্*র দিকে ফিরিয়ে দেওয়া। কারো জন্য বৈধ নয় যে, সে কাউকে ফায়ছালাকারী নিযুক্ত করে হক-বাতিল সবকিছুতে তার অনুসরণ করে চলবে; বরং কুরআন ও সুন্নাহকে চূড়ান্ত ফায়ছালাকারী হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।([5])


    প্রশ্ন: মুতাওয়াক্কিল বলেন, বর্তমান মুসলিম দেশসমূহে বিভিন্ন জামাআত ও সংগঠনের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে মতভেদ ও অমিলেরও কমতি নেই। এমনকি এক পক্ষ অপর পক্ষকে পথভ্রষ্ট ভাবতেও দ্বিধা করে না। এমতাবস্থায় উলামায়ে কেরামের ভূমিকা কি হতে পারে? হক তুলে ধরার জন্য এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা কি আপনি যথোপযুক্ত মনে করেন না? কারণ মুসলিম জাতির জন্য এসব মতভেদ ও বিভক্তির ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।


    উত্তর: উলামায়ে কেরামের উচিৎ আসল বাস্তবতা তুলে ধরা, প্রত্যেকটি জামাআত ও সংগঠনের সাথে আলোচনা করা এবং সবাইকে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত সরল পথে চলার নছীহত করা। যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে এবং ব্যক্তি স্বার্থে বা অন্য কোনো কারণে নিজের একগুঁয়েমি বজায় রাখবে, তার বিষয়টি জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া এবং তাদেরকে তার থেকে সতর্ক করা অপরিহার্য। তাহলে যারা তার সম্পর্কে জানে না, তারা তার থেকে দূরে থাকতে পারবেফলে সে কাউকে আল্লাহ নির্দেশিত সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।([6])


    প্রশ্ন: বিভ্রান্ত দলগুলির ক্ষেত্রে দাঈদের ভূমিকা বিষয়ে আপনার নছীহত কি? যেসব যুবক দ্বীনী দল হিসাবে পরিচিত বিভিন্ন দলে যোগদানের মন্ত্রে প্রভাবিত, তাদের ব্যাপারে আপনার বিশেষ নছীহত কামনা করছি।


    উত্তর: আমরা আমাদের সকল ভাইকে প্রজ্ঞা, সদুপদেশ এবং সদ্ভাবে তর্কের মাধ্যমে আল্লাহ্*র পথে দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নছীহত করছি। দাওয়াতী এই সার্বজনীন পদ্ধতি বিদ‘আতী ও বিভ্রান্ত দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি কোনো বিদআত দেখলে অবশ্যই সে সাধ্যানুযায়ী শরঈ পদ্ধতিতে তার বিরোধিতা করবে। আর দ্বীনের ভেতরে মানুষ যেসব নতুন নতুন বিষয়ের সৃষ্টি করে দ্বীনের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেগুলোই বিদআতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করে, যা তার মধ্যে নেই, তা-ই প্রত্যাখ্যাত’তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যার প্রতি আমাদের নির্দেশনা নেই, তা-ই প্রত্যাখ্যাত’বিদ‘আতের কিছু উদাহরণ হচ্ছে: রাফেযী মতবাদ, মু‘তাযিলা মতবাদ, মুরজিয়া মতবাদ, খারেজী মতবাদ, মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন, কবরের উপর ঘর-বাড়ি-গম্বুজ ইত্যাদি নির্মাণ, কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ। যাহোক, যারা বিদআত করবে, তাদেরকে নছীহত করতে হবে, কল্যাণের পথে তাদেরকে আহ্বান করতে হবে এবং শরঈ দলীল-প্রমাণ দিয়ে তাদের সৃষ্ট বিদ‘আতের বিরোধিতা করতে হবে। সাথে সাথে তাদের অজানা হকের কথাটি তাদেরকে বিনম্রভাবে, সুন্দর পদ্ধতিতে এবং স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা শিখিয়ে দিতে হবে। তা হলে তারা হয়তো হক কবূল করবে। বর্তমানে সৃষ্ট বিভিন্ন নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, এসব দলাদলি পরিহার করে কুরআন ও সুন্নাহ্*র পথে পরিচালিত হওয়া সবার জন্য যরূরী। এক্ষেত্রে সবাই পরস্পরকে একনিষ্ঠভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। আর এ পদ্ধতিতে তারা আল্লাহ্*র দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢ ﴾ [المجادلة: ٢٢] ‘জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম’ (আল-মুজাদালাহ ২২)তিনি তাদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী তুলে ধরে বলেন, ﴿ لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ ﴾ [المجادلة: ٢٢] ‘যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না’ (আল-মুজাদালাহ ২২)অন্যত্র তিনি আরো বলেন, ﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٩] ‘আল্লাহভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের পালনকর্তা যা তাদেরকে দেবেন, তারা তা গ্রহণ করবেনিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ, তারা রাতের খুব সামান্য অংশে ঘুমাত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং তাদের ধন-সম্পদে যাচনাকারী ও বঞ্চিতের অধিকার ছিল’ (আয-যারিয়াত ১৫-১৯) এগুলিই হচ্ছে আল্লাহ্*র দলের সদস্যদের বৈশিষ্ট্য; তারা কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষাবলম্বন করে না। কুরআন-সুন্নাহ্*র দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া এবং ছাহাবায়ে কেরাম, সালাফে ছালেহীন ও তাদের অনুসারীদের পথে চলা ছাড়া তারা অন্য কোনো দলে যোগদান করে না। আল্লাহ্*র দলের লোকেরা অন্যান্য সকল দল ও সংগঠনের লোকদেরকে নছীহত করে এবং তারা তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এবং তাদের মধ্যে বিবাদীয় বিষয়কে এতদুভয়ের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা বলে কুরআন-সুন্নাহ উভয়ের সাথে অথবা যে কোনো একটির সাথে যা মিলে যাবে, তা-ই হকপক্ষান্তরে যা মিলবে না, তা পরিহার করা অপরিহার্য। এই শাশ্বত মূলনীতি জামাআতুল ইখওয়ান, আনছারুস-সুন্নাহ, জাম্*ইয়াহ শারইয়াহ, তাবলীগ জামাআত অথবা ইসলামের দিকে সম্বন্ধিত অন্য যে কোনো দল বা সংগঠনের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। উপরিউক্ত মূলনীতির মাধ্যমে সবার সংঘবদ্ধ এবং একক দলে পরিণত হওয়া সম্ভব, যে একক দল আল্লাহ্*র দল তথা ‘আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআত’-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবে। মনে রাখতে হবে, শরী‘আত বিরোধী বিষয়ে কোনো দল বা সংগঠনের অন্ধভক্তি দেখানো বৈধ নয়।([7])


    প্রশ্ন: যুবকদের ইসলামের উপর প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য মুসলিম দেশসমূহে যেসব ইসলামী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোকে কি ইতিবাচক গণ্য করা যাবে?


    উত্তর: ইসলামী দলগুলিতে মুসলিমদের জন্য কল্যাণ আছে। তবে প্রত্যেকটি দলকে দলীলসহ হক প্রকাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে এবং পরস্পরে বিরোধপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে হবে; বরং সবাইকে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং একে অপরকে ভালবাসতে হবে। অনুরূপভাবে একে অপরকে নছীহত করবে এবং অপরের ভাল দিকগুলি প্রচার করতে হবে আর মন্দ দিকগুলি পরিহারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কুরআন ও হাদীছের দিকে দাওয়াত দেওয়ার শর্তে এসব ইসলামী দল থাকতে কোনো বাধা নেই।([8])


    প্রশ্ন: বিভিন্ন দলে দলভুক্ত যুবকদের ব্যাপারে আপনার নছীহত কি?


    উত্তর: এসব যুবকের হকের পথ তালাশ করা এবং তদ্*নুযায়ী চলা উচিৎ। যেসব বিষয়ে তাদের সমস্যা হবে, সেসব বিষয়ে উলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করে সমাধান জেনে নিবে। অনুরূপভাবে মুসলিমদের উপকার সাধিত হবে এমন বিষয়ে শরঈ দলীলের ভেতরে থেকে অন্যান্য দলের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা উচিৎ। পারস্পরির সহযোগিতা হতে হবে সুন্দর কথা ও উত্তম পদ্ধতিতে; কঠোরতা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের মাধ্যমে নয়। যুবকদেরকে আমি আরো বলব, সালাফে ছালেহীন তথা ছাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের অনুসারীগণ যেন তাদের আদর্শ হন এবং হক যেন হয় তাদের দলীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম যে আক্বীদার উপর চলেছেন, তা যেন হয় তাদের ব্রতী।([9])


    ([1]) ‘বায়আত সম্পর্কে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু–এর হাদীছের ব্যাখ্যা’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত (আল-আছালাহ আস-সালাফিইয়াহ রেকর্ডিং সেন্টার, জেদ্দা)।

    ([2]) ‘আল-হুদা ওয়ান নূর’ ক্যাসেট সিরিজের ১/৩৪০ নং ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত।

    ([3]) নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে ১০/১২/২০১২ তারিখে দুপুর ১৩:২২ টায় সংক্ষেপিত:
    http://www.facebook.com/ehab.abdelaleem.5/posts/299867513456144

    ([4]) আলী ইবনে হাসান আল-হালাবী, আদ-দাওয়াহ ইলাল্লাহ বায়নাত্*-তাজাম্মুইল হিযবী ওয়াত-তা‘আউন আশ-শারঈ (মাকতাবাতুছ-ছহাবাহ, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ: ১৪১২ হি, পৃ: ৯৮।

    ([5]) ‘শায়খ ইবনে বাযের সাথে মুতাওয়াক্কিলের সাক্ষাৎ’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত।

    ([6]) মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৪/১৩৬-১৩৭।

    ([7]) প্রাগুক্ত, ৭/১৭৬-১৭৮।

    ([8]) প্রাগুক্ত, ৫/২৭২।

    ([9]) প্রাগুক্ত, /২৭২

  • #2
    আপনি শায়খ আলবানী ও বিন বাযের ফতোয়া উল্লেখ করেছেন। বিন বাযের ফতোয়া দল করার বিপক্ষে না। দল যদি হক হয় তাহলে করা যাবে। এমনটাই তিনি বলেছেন। পোস্ট করার আগে তার বক্তব্যটা আপনার একটু পড়ে দেখার দরকার ছিল। একেবারে কপি-পেস্ট করলে চলে না। তার বক্তব্যটা দেখুন-


    প্রশ্ন: যুবকদের ইসলামের উপর প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য মুসলিম দেশসমূহে যেসব ইসলামী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোকে কি ইতিবাচক গণ্য করা যাবে?


    উত্তর: ইসলামী দলগুলিতে মুসলিমদের জন্য কল্যাণ আছে। তবে প্রত্যেকটি দলকে দলীলসহ হক প্রকাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে এবং পরস্পরে বিরোধপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে হবে; বরং সবাইকে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং একে অপরকে ভালবাসতে হবে। অনুরূপভাবে একে অপরকে নছীহত করবে এবং অপরের ভাল দিকগুলি প্রচার করতে হবে আর মন্দ দিকগুলি পরিহারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কুরআন ও হাদীছের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার শর্তে এসব ইসলামী দল থাকতে কোনো বাধা নেই।([8])


    প্রশ্ন: বিভিন্ন দলে দলভুক্ত যুবকদের ব্যাপারে আপনার নছীহত কি?


    উত্তর: এসব যুবকের হকের পথ তালাশ করা এবং তদ্*নুযায়ী চলা উচিৎ। যেসব বিষয়ে তাদের সমস্যা হবে, সেসব বিষয়ে উলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করে সমাধান জেনে নিবে। অনুরূপভাবে মুসলিমদের উপকার সাধিত হবে এমন বিষয়ে শর‘ঈ দলীলের ভেতরে থেকে অন্যান্য দলের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা উচিৎ।


    [deleted]

    [/SIZE]
    আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়াতের পথে কায়েম রাখুন। সব ধরণের গোমরাহি হতে হেফাজত করুন। আমীন।
    Last edited by Taalibul ilm; 10-17-2018, 02:30 PM.

    Comment


    • #3
      দল নিয়েও দলাদলি। দল করি বলতে এমন দল করি না, যা ইসলাম ভিন্ন। যারা দল করা নাজায়েজ বলেন আপনাদের প্রতি একটি প্রশ্নঃ খেলাফত ও মুসলিমদের হিফাজতের জন্য আপনাদের কর্মসূচি কি????
      والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ।
        আনেক সুন্দর পোষ্ট।

        Comment


        • #5
          হে আল্লাহ আপনি সকল কে কবুল করুন, সঠিক দলে শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন আমিন।
          আমি হতে চাই খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা এর মত রণকৌশল ও ওমর (রা এর মত কাফেরদের প্রতি কঠোর।

          Comment


          • #6
            উত্তর জানার জন্য ভাই! আপনি আসলে উত্তর জানতে চাচ্ছেন না। আপনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আপনি ভাইদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য কারো থেকে ধার করে পোস্ট করছেন।বিন বায ও আলবানী বাংলা শিখেছে কবে? আপনি যেখান থেকে লিখা পেয়েছেন তার রেফারেন্স দিবেন। যে রেফারেন্স দিয়েছেন তা আপনি নিজে পড়েননি ও শুনে দেখেননি। ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ধার করা পোস্ট করছেন।যারা জীবনে জিহাদ করেনি তাদের ব্যাখ্যা আপনার কাছে মুজাদিদদের থেকে ভালো লাগে। এখানে كونوا مع الصادقين এ আয়াতের এ ব্যাখ্যা শায়েখ আলবানী কোথায় পেল? এ আয়াতের ব্যাখ্যায় পূর্ববর্তীরা কি বলেছেন? আপনি তাদের ব্যাখ্যা না দিয়ে বর্তমানের একজনের ভুল ব্যাখ্যা কেন উপস্থাপন করেছেন? আপনার মতে বর্তমানে সত্যবাদী কারা? স্পষ্ট বলে দিন। কুরয়ানের আয়াতেই তো এর ব্যাখ্যা আছে। এগুলো ছেড়ে আলবানী ও বিন বাজের ফতুয়া উল্লেখ করা কি উপযুক্ত? যখন ভাইয়েরা কুরয়ান সুন্নাহর দলীল দিলেও আপনি বলেন কুরয়ান সুন্নাহর দলীল দিয়ে বলেন।হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসের ব্যাখ্যা হাদিসেই আছে । জামায়াত কাকে বলে দেখে নিন তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন। এখানে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কারো ধার করা পোস্ট করবেন না। সক্ষমতা থাকলে কপি পেস্ট না করে সরাসরি দলীল উল্লেখ করুন। আর ভাইয়েরা যে প্রশ্ন করেছেন সেগুলোর উত্তর দিন।

            Comment


            • #7
              আমি নাম বলছি না, যারা জামাআকে না জায়েজ বলেন তাদের প্রতি আমার প্রশ্নঃ খিলাফা প্রতিষ্ঠাই আপনাদের কর্মসূচি কি???
              والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

              Comment


              • #8
                আমাদের সকলের কর্মসূচি কোরআন হাদিসের নির্দেশনা। রাসূলের জিবনী ও খূলাফায়ের রাশেদার অনুসরন।

                Comment

                Working...
                X