Announcement

Collapse
No announcement yet.

লা ইলাহা মানে কি? (জান্নাত লাভের উপায়-০৪)

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • লা ইলাহা মানে কি? (জান্নাত লাভের উপায়-০৪)

    তাওহীদের প্রথম রূকন হল কালেমার প্রথম অংশ লা ইলাহা তথা আল কুফর বিত তাগুত। যা গত পর্বে আলোচিত হয়েছে। আজকে আমরা জানবো কালেমার এই প্রথম অংশ লা ইলাহার আরো গভীর বিশ্লেষণ যার দ্বারা এর প্রকৃত মর্মার্থ বুঝে আসবে ইনশা আল্লাহ। আর সেজন্যে আপনাদেরকে সবরর ও মনোযোগের সহিত পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এই অধমের কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন ইনশা আল্লাহ।

    আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী লা ইলাহার দ্বারা এখানে লা এ নফি জিনস করা হচ্ছে। অর্থাৎ লা (নাই) বলার মাধ্যমে কোন একটি শ্রেণীকে অস্বীকার করা হচ্ছে। আর লা এর মাধ্যমে যখন কোন শ্রেণীকে অস্বীকার করা হয় তখন সেই বাক্যে দুটি অংশ অবশ্যই থাকবে। তার একটি হল ইসম তথা নামবাচক শব্দ, বাংলায় যাকে আমরা বলি উদ্দেশ্য (Subject) আরেকটি হল খবর, বাংলায় বিধেয় (Predicate).

    আমরা দেখতে পাচ্ছি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -এর মধ্যে ইলাহ শব্দটি ইসম বা নামবাচক শব্দ। কিন্তু এখানে খবর (বিধেয়) বাহ্যিকভাবে দেওয়া নেই। বরং তা উহ্য (লুকায়িত/অনুক্ত) আছে। আর তা হল বিহাক্কিন (সত্য)। অর্থাৎ লা ইলাহা (বিহাক্কিন) ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নাই।

    সুতরাং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সরল সঠিক অর্থ হল আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা'বুদ,উপাস্য (সত্যিকার ইবাদাতের যোগ্য) কেউ নেই। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর যত ইলাহ বা ইবাদাতের দাবীদার আছে তারা সকলেই বাতিল ও মিথ্যা ইলাহ। বরং সত্যিকারের ইবাদাতের যোগ্য হলেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া বাকি সব ইলাহ বাতিল,মিথ্যা। এই ঘোষণাই আমরা লা ইলাহা বলার মাধ্যমে দিয়ে থাকি। অর্থাৎ আমরা লা ইলাহা বলার মাধ্যমে সমস্ত প্রকারের বাতিল, মিথ্যা ইলাহ, তাগুতকে নফি (অস্বীকার) করি।

    আল্লাহ তা আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

    ذلك بأن اللّه هو الحق وأنّ ما يدعون من دونه هو الباطل وأنّ اللّه هو العلي الکبير

    অর্থ : এটা একারণেও যে আল্লাহই সত্য। আর তাকে (আল্লাহকে) ছাড়া তারা যাকে আহ্বান করে তা বাতিল। আর আল্লাহ সুউচ্চ, সুমহান। (সূরা হাজ্জ ২২:৬২)।

    অতএব আল্লাহই একমাত্র সত্য উপাস্য, মা'বুদ। তিনিই একমাত্র সত্য ইলাহ, সত্যিকারের ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য। তিনি ছাড়া সব উপাস্য,মা'বুদই মিথ্যা ও বাতিল।

    অর্থাৎ সমস্ত রকমের ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য শুধুমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া যা কিছুই ইবাদাতের আহ্বান জানায় তা সবই বাতিল ও মিথ্যা। আমরা সেগুলোকে তাগুত মনে করি। এবং লা ইলাহা এর মাধ্যমে এসকল তাগুতকে আমরা (নফি) অস্বীকার করি। আর এই নফি (অস্বীকার) করার উদ্দেশ্যেই আমরা কালেমাতু তাওহীদের প্রথম অংশ লা ইলাহা পাঠ করি।
    সকল ইলাহ বাদ, কেউ ইবাদাত লাভের যোগ্য নয়। বরং সমস্ত প্রকার ইবাদাত লাভের যোগ্য শুধুমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া সকল ইলাহই মিথ্যা ও বাতিল।

    মূলত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বারা চার ধরনের ইলাহকে বাতিল করা হয়েছে। যথা :

    ১) আল আলিহা : ইলাহ,পূজিত,মা'বুদ। ভক্তি,শ্রদ্ধা,ভালবাসা,বড়ত্ব,মর্যাদার সহিত যার ইবাদাত,বন্দেগী করা হয়।
    মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

    واتّخذوا من دون اللّه ألهة ليکونو لهم عزّا

    তারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য ইলাহদেরকে গ্রহণ করেছে যাতে তারা তাদের সম্মানের কারণ হয়। (সূরা মারয়াম ১৯ : ৮১)।

    ২) আল আনদাদ : সমকক্ষ, পার্থিব ব্যক্তি,বস্তু,বিষয়াদি যাকে আল্লাহর মত করে ভালবাসা,মহব্বত করা হয়। যার প্রতি আল্লাহর মত করে আসক্তি জন্মে। উদাহরণসরূপ: ধন-সম্পদ,ক্ষমতা,নারী,মদ,গান,হাওয়া-নফস-প্রবৃত্তি ইত্যাদিকে আল্লাহর সমান কিংবা তার মত করে (জানের চেয়েও বেশী প্রিয় মনে করে) ভালবাসা।

    আল্লাহ রব্বুল 'আলামীন বলছেন,

    ومن انّاس من يّتّخذ من دون اللّه أندادا يّحبّونهم کحبّ اللّه ط والّذين أمنو أشدّ حبّ للّه

    আর মানুষের মধ্যে (এমন লোকও) আছে যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে তার সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরকে আল্লাহর মত করে ভালবাসে। আর যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে...। (সূরা বাকারাহ ২ : ১৬৫)।

    ৩) আত তাওয়াগীত : সকল তাগুতদেরকে অস্বীকার করা হচ্ছে। (যা বিগত পর্বেই আলোচিত হয়েছে)।

    ৪) আল আরবাব : আল্লাহ ব্যতীত অপর কাউকে রবের আসনে বসানো। অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অপর কাউকে হালাল হারাম নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করা।

    إتخذوٓا أحبارهم ورهبانهم أربابا من دون اللّه

    তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পন্ডিত পুরোহিতদেরকে নিজেদের রব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে..।(সূরা তওবা ৯ : ৩১)।

    সারকথা এই যে, তাওহীদের এই প্রথম রূকন আল কুফর বিত তাগুত তথা লা ইলাহা এর মাধ্যমে সমস্ত প্রকার কুফর ও শিরককে উৎখাত করা হয়।
    যুগে যুগে নবী রসূলরা আল্লাহর দেওয়া এই কালেমাকে বুলন্দ (উঁচু) করতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়েছিলেন। তাদের সকলেরই দ্বাওয়াতে তাবলীগের মূল বিষয় ছিল এক ও অভিন্ন। আর তা হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

    তোমরা আল্লাহ ছাড়া সকল মিথ্যা,বাতিল উপাস্যদেরকে ছাড়ে দাও, ত্যাগ কর, বর্জন কর। সকল তাগুত,আরবাব, আলিহা,আনদাদকে অস্বীকার কর। কালেমার এই প্রথম অংশ বা রূকনটিই আজ আমরা না জানার কারণে, না বুঝার কারণে তাগুতের পূজায় লিপ্ত হচ্ছি।

    তবু থেমে নেই আমাদের তাওহীদ প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা। তারা তাওহীদের পতাকা হাতে নিয়ে আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ (বিজয়ী) করার জন্য তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে দ্বাওয়াত, কিতাল, অর্থ সাহায্য ইত্যাদি নানা উপায়ে আজকে তারা মুসলিম ভূমি থেকে তাগুতের উৎখাত ও আল্লাহর তাওহীদ (একত্ববাদ) কায়েমের সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন।

    আল্লাহ তাদেরকে সব রকমের নুসরাহ দান করুক। এবং আমাদেরকেও তাগুত বিরোধী কালেমার প্রথম অংশ, তাওহীদের প্রথম রূকন লা ইলাহা-আল কুফর বিত তাগুত সম্পর্কে জানা,বুঝা ও এর বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।

    ওমা 'আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

    চলবে.... ইনশা আল্লাহ।

  • #2
    বারাকাল্লাহু ফী 'ইলমিক।
    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

    Comment

    Working...
    X