Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির); ১১- বিভিন্ন প্রকার তা’যির

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির); ১১- বিভিন্ন প্রকার তা’যির

    কুরআন সুন্নাহয় সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত কয়েকটি তা’যির উপরে উল্লেখ করা হল, নতুবা তা’যিরের ধরণ অসংখ্য। যাকে যেভাবে শাস্তি দিলে দমন হবে, সেটাই তার তা’যির। তবে কাউকে যদি প্রহারের মাধ্যমে তা’যির করার প্রয়োজন হয়, তাহলে সর্বোচ্চ কয়টি বেত্রাঘাত করা যাবে এ নিয়ে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে।

    এখন তা’যির সংক্রান্ত আইম্মায়ে কেরামের কিছু বক্তব্য উল্লেখ করছি। তাতে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।


    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) বলেন,
    وليس لأقل التعزير حد بل هو بكل ما فيه إيلام الانسان من قول وفعل وترك قول وترك فعل فقد يعزر الرجل بوعظه وتوبيخه والاغلاظ له وقد يعزر بهجره وترك السلام عليه حتى يتوب إذا كان ذلك هو المصلحة كما هجر النبى وأصحابه الثلاثة الذين خلفوا وقد يعزر بعزله عن ولايته كما كان النبى وأصحابه يعزرون بذلك وقد يعزر بترك استخدامه فى جند المسلمين كالجندى المقاتل إذا فر من الزحف فان الفرار من الزحف من الكبائر وقطع أجره نوع تعزير له وكذلك الأمير إذا فعل ما يستعظم فعزله عن إمارته تعزير له وكذلك قد يعزر بالحبس وقد يعزر بالضرب وقد يعزر بتسويد وجهه وإركابه على دابة مقلوبا كما روى عن عمر بن الخطاب رضى الله عنه أنه أمر بمثل ذلك فى شاهد الزور. اهـ
    “তা’যিরের সর্বনিম্ন পরিমাণের কোন নির্ধারিত সীমা নেই। বরং প্রত্যেক এমন কথা ও কাজ কিংবা প্রত্যেক এমন কথা বা কাজ পরিত্যাগ করা, যার দ্বারা ব্যক্তির কষ্ট হবে, সেটা দিয়েই তা’যির হতে পারে। কোন সময় ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে, ধমকি দিয়ে ও কঠোরতা করে তা’যির করা যায়। আবার কোন সময় তাওবা না করা পর্যন্ত বয়কট করে ও সালাম দেয়া বন্ধ রাখার মাধ্যমে করা যায়। এমনটা করা যায় যখন এটাই মাসলাহাত বলে মনে হয়। যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম ঐ তিন সাহাবিকে বয়কট করেছিলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত মুলতবী ছিল।

    কখনো নিজ পদ থেকে অপসারিত করে দেয়ার দ্বারাও তা’যির হতে পারে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম এভাবে তা’যির করতেন। আবার কখনো মুসলিম বাহিনিতে না নেয়ার মাধ্যমেও তা’যির হতে পারে; যেমন- যোদ্ধা সৈনিক যদি যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে। কেননা, ময়দান ছেড়ে পালানো কবীরা গুনাহ। আর তার প্রতিদান বন্ধ করে দেয়াও তার জন্য এক প্রকার তা’যির। তদ্রূপ আমীর যদি জঘন্য কিছু করে ফেলে, তাহলে তাকে তার নেতৃত্ব থেকে অপসারিত করে দেয়া তার তা’যির। তেমনি কখনো কখনো বন্ধী করার মাধ্যমে তা’যির করা যেতে পারে, কখনো প্রহারের মাধ্যমে করা যেতে পারে, আবার কখনোও চেহারায় চুন-কালি মেখে কালো করে বাহনের উপর উল্টো করে বসিয়ে ঘুরানোর মাধ্যমেও হতে পারে, যেমনটা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার সাথে এমনটা করার আদেশ দিয়েছেন।” - মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৩৪৪



    এখানে তা’যিরের আরোও কয়েকটি পদ্ধতি পাওয়া গেল:

    ছয়. শরীয়তসম্মত এমন কথা বলা, যার দ্বারা অপরাধীর কষ্ট হতে পারে।
    সাত. তার সাথে শরীয়তসম্মত এমন কাজ করা, যার দ্বারা তার কষ্ট হতে পারে।
    আট. তার সাথে শরীয়তসম্মত এমন কথা পরিত্যাগ করা, যার দ্বারা তার কষ্ট হতে পারে।
    নয়. তার সাথে শরীয়তসম্মত এমন কাজ পরিত্যাগ করা, যার দ্বারা তার কষ্ট হতে পারে।
    দশ. উপদেশ দেয়া।
    এগার. ধমক দেয়া।
    বার. কঠোরতা করা।
    তের. সালাম না দেয়া।
    চৌদ্দ. পদ থেকে অপসারিত করে দেয়া।
    পনের. সেনাবাহিনিতে না নেয়া।
    ষোল. আমীরকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া।
    সতের. চেহারায় চুন-কালি মেখে কালো করে বাহনের উপর উল্টো করে বসিয়ে ঘুরানো।



    ইবনুল কায়্যিম রহ. (৭৫১হি.) বলেন,
    وتختلف مقاديرها وأجناسها وصفاتها باختلاف أحوال الجرائم وكبرها وصغرها وبحسب حال المذنب في نفسه والتعزير منه ما يكون بالتوبيخ وبالزجر وبالكلام ومنه ما يكون بالحبس ومنه ما يكون بالنفي ومنه ما يكون بالضرب. اهـ
    “তা’যিরের পরিমাণ, ধরণ ও সিফাত অপরাধের অবস্থাভেদে, অপরাধ ছোট ও বড় হওয়া ভেদে এবং অপরাধীর নিজের অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তা’যির হতে পারে ধমক দেয়া, তিরস্কার করা ও কথার মাধ্যমে। হতে পারে বন্দী করা ও এলাকা থেকে নির্বাসন দেয়ার মাধ্যমে। হতে পারে প্রহারের মাধ্যমে।” - আততুরুকুল হুকমিয়্যাহ: ১/৩৮৪


    এখানে আরেকটি পাওয়া গেল:
    আটার. তিরস্কার করা।


    ‘আদদুররুল মুখতার’ গ্রন্থকার (১০৮৮হি.) বলেন,
    (و) التعزير (ليس فيه تقدير بل هو مفوض إلى رأي القاضي) وعليه مشايخنا زيلعي لأن المقصود منه الزجر، وأحوال الناس فيه مختلفة بحر. اهـ
    “তা’যিরের কোন নির্ধারিত পরিমাণ নেই, বরং তা কাযির বিবেচনার উপর ন্যস্ত। ... কেননা, এর উদ্দেশ্য- (অপরাধ থেকে) বিরত রাখা। আর লোকজনের অবস্থা এক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।” - আদদুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারের সাথে ছাপা): ৪/৬৪


    তিনি আরো বলেন,
    (ويكون به و) بالحبس و (بالصفع) على العنق (وفرك الأذن، وبالكلام العنيف، وبنظر القاضي له بوجه عبوس، وشتم غير القذف). اهـ
    “তা’যির হতে পারে প্রহারের দ্বারা, বন্দী করার দ্বারা, গর্দানে চপেটাঘাতের দ্বারা, কানমলা ও রূঢ় কথার দ্বারা, কাযি সাহেব তার প্রতি ভ্রুকুচিত চেহারায় তাকানোর দ্বারা, অপবাদ নয় এমন গালি দেয়ার দ্বারা।” - আদদুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারের সাথে ছাপা): ৪/৬১

    অবশ্য সারাখসী রহ. মুসলমানকে গর্দানে চপেটাঘাতের মাধ্যমে তা’যির করতে নিষেধ করেছেন। যিম্মিকে করলে করা যেতে পারে।


    এখান থেকে আরোও পাওয়া গেল:
    উনিশ. কানমালা।
    বিশ. কাযি সাহেব ভ্রুকুচিত চেহারায় তাকানো।
    একুশ. অপবাদ নয় এমন গালি দেয়া।




    উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা তা’যিরের একুশটি পদ্ধতি পেলাম:
    এক. বর্জন ও বয়কট।

    দুই. নির্বাসন

    তিন. বন্দী।

    চার. প্রহার।

    পাঁচ. হত্যা।

    ছয়. শরীয়তসম্মত এমন কথা বলা, যার দ্বারা অপরাধীর কষ্ট হতে পারে।

    সাত. তার সাথে শরীয়তসম্মত এমন কাজ করা, যার দ্বারা তার কষ্ট হতে পারে।

    আট. তার সাথে শরীয়তসম্মত এমন কথা পরিত্যাগ করা, যার দ্বারা তার কষ্ট হতে পারে।

    নয়. তার সাথে শরীয়তসম্মত এমন কাজ পরিত্যাগ করা, যার দ্বারা তার কষ্ট হতে পারে।

    দশ. উপদেশ দেয়া।

    এগার. ধমক দেয়া।

    বার. কঠোরতা করা।

    তের. সালাম না দেয়া।

    চৌদ্দ. পদ থেকে অপসারিত করে দেয়া।

    পনের. সেনাবাহিনিতে না নেয়া।

    ষোল. আমীরকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া।

    সতের. চেহারায় চুন-কালি মেখে কালো করে বাহনের উপর উল্টো করে বসিয়ে ঘুরানো।

    উনিশ. কানমলা।

    বিশ. কাযি সাহেব ভ্রুকুচিত চেহারায় তাকানো।

    একুশ. অপবাদ নয় এমন গালি দেয়া (ওহে আহমক!)।




    এগুলো তা’যিরের কয়েকটি পদ্ধতি মাত্র। নতুবা এর কোন নির্ধারিত পরিমাণ ও পদ্ধতি নেই, যেমনটা অনেকবার বলা হয়েছে। যেখানে শরীয়তসম্মত যে পদ্ধতি কার্যকর মনে হবে সেটাই প্রয়োগ করা হবে। তবে কারো ক্ষেত্রে প্রহারের দ্বারা তা’যির উপকারী মনে হলে তখন সর্বোচ্চ কয়টি বেত্রাঘাত করা যাবে- সেটার একটা সীমারেখা আছে। সামনে এর বিবরণ আসছে ইনশাআল্লাহ।

  • #2
    মাশাআল্লাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা , আল্লাহ তাআলা আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন । আমিন
    ভাই আপনার আলোচনা শেষ হলে পিডিএফ করে দিলে উপকার হবে ইনশাআল্লাহ ।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ। খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, ভাই আপনার কাজ আগাইনিয়ে যান,আল্লাহ তায়ালা আপনার ইলমের মধো বরকত দান করুন,আমিন।
      ভাই আপনার আলোচনা শেষ হলে পিডিএফ আকারে দেওয়ার অনুরোদ রইল,ইনশাআল্লাহ

      Comment

      Working...
      X