Announcement

Collapse
No announcement yet.

সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী পর্ব ১-২-৩

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী পর্ব ১-২-৩

    সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী
    পর্ব-১

    সম্মানিত উপস্থিতি আজকে আমরা রাসুল (সঃ) এর প্রিয় ব্যক্তি যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) এর জীবনি নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ্।
    প্রিয় উপস্থিতি আসুন শুরুতেই জেনে নিই কিভাবে তিনি রাসুল (সঃ) এর প্রিয় ব্যক্তিদের অন্তুর্ভুক্ত হলেন। যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) তিনি যখন ছোট ছিলেন, তার বয়স যখন আট বছর তখন তিনি তার মায়ের সাথে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।

    পথিমধ্যে হঠাৎ কিছু শত্রু বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ করে বসে। এবং তাকে ধরে নিয়ে উকাজের বাজারে গোলাম হিসেবে বিক্রি করে দেই। আর ঘটনা ক্রমে হযরত খাদিজা (রাঃ) এর ভাতিজা হাকিম ইবনে হিজাম উকাজের বাজার হতে বেশ কয়েকটি গোলাম ক্রয় করে আনে। যার মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। হাকিম ইবনে হিজাম যখন উকাজের বাজার হতে মক্কায় ফিরে আসে তখন হযরত খাদিজা (রাঃ) তার সাথে দেখা করতে যায়, তখন হাকিম ইবনে হিজাম (রাঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আমার ফুফু আমি আজ উকাজের বাজার হতে বেশ কিছু গোলাম ক্রয় করে এনেছি, এই গোলামদের মধ্যে থেকে আপনার যেটা পছন্দ হবে সেটাই আপনার জন্যে উপহার। হযরত খাদিজা (রাঃ) সব গোলামদের মধ্যে হতে যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) কে বাছাই করলেন। কেনন তাকে দেখতে খুবিই ভদ্র এবং শান্ত মনে হচ্ছিল। অতপর হজরত খাদিজা (রাঃ) যখন হযরত রাসুল (সঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন তখন তিনি যায়েদ ইবনে হারেসা কে রাসুল সঃ এর কাছে সোপর্দ করে দিলেন। যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) আট বছরের ছোট বালক তখন রাসুল (সঃ) এর তত্তাবধানে পতিপালিত হতে লাগল।
    রাসুল (সঃ) তাকে খুব আদর স্নেহ করে লালন পালন করতে লাগল। অপর দিকে যায়েদের পরিবার তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান কে খুব খোজাখুজি করছিলো কিন্তু তারা তাকে কোথাও খুজে পাচ্ছিল না। অতপর হজের মৌসুমে হজ পালনের উদ্দেশ্যে যায়েদের গোত্রের কিছু লোক মক্কায় আগমন করল, তারা যখন মক্কায় আসলো তখন যায়েদের সাথে তাদের সাক্ষাত হয়ে গেলো, যায়েদ তাদের কে চিনলো, তারাও যায়েদ কে চিনলো হজ শেষে তারা বাড়িতে যেয়ে যায়েদের বাবাকে বলল,আপনার সন্তান যায়েদের সন্ধান পেয়েছি, সে মক্কায় এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির তত্তাবধানে আছে। এই কথা শুনা মাত্রই যায়েদের পিতা হারেসা তার ভাই কা’ব কে নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা দিল তারা তাদের কলিজার টুকরো সন্তান কে মুক্ত করার জন্যে মুক্তিপণ হিসেবে সাথে করে অনেক পরিমাণ টাকা পয়সা নিয়ে নিল।

    তারা মক্কায় যেয়ে রাসুল (সঃ) এর সাথে দেখা করলো এবং বলল, হে আব্দুল মোত্তালিবের সন্তান আপনারা হচ্ছেন পবিত্র ভুমির অধিবাসী, আপনারা হচ্ছেন আল্লাহর ঘরের প্রতিবেশী, আপনারা হাজীদের পানি পান করান, অভাবগ্রস্ত দের সাহায্যে করেন, দুশ্চিন্তা গ্রস্তদের চিন্তা মুক্ত করেন, আমরা শুনেছি আমাদের সন্তান আপনার কাছে আমরা তাকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে এসেছি, তাকে মুক্ত করতে যত টাকা লাগে আমরা দিব, আমরা আশা করছি আপনি অনুগ্রহ করে তাকে মুক্ত করে দিবেন, রাসুল (সঃ) তাদের কে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের সন্তান কে.? তারা বলল, আপনার গোলাম যায়েদই হচ্ছে আমাদের সন্তান।
    রাসুল (সঃ) বললেন ঠিক আছে কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই একটি বিষয়ে আগে আমরা একমত হই, সেটা হল আমি তোমাদের সামনে যায়েদ কে ডাকব যায়েদ যদি তোমাদের সাথে চলে যেতে চাই তাহলে নির্দ্বিধায় তোমাদের সাথে তাকে দিয়ে দিব আমার কোন আপত্তি থাকবে না, এবং আমাকে কোন ধরনের মুক্তিপনও দেয়া লাগবে না, আর যায়েদ যদি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে না চাই তাহলে জোর করে তোমরা যায়েদ কে নিয়ে যেতে পারবে না।
    তারা বলল, আপনার কথা ঠিক আছে আমরা আপনার সাথে একমত আপনি আমাদের উপর ইনসাফ পূর্ণ ফায়সালা করেছেন আমাদের ব্যাপারে উত্তম ফায়সালা করেছেন। রাসুল (সঃ) যায়েদ কে ঢাকলেন এবং আগত ব্যক্তিদের ইংগিত করে বললেন, এরা কারা? যায়েদ উত্তর দিল একজন হচ্ছেন আমার পিতা, হারেসা ইবনে শুরাবিল আরেকজন হচ্ছেন আমার চাচা কা’ব।
    রাসুল (সঃ) বললেন, হে যায়েদ তারা তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছে তুমি চাইলে তাদের সাথে চলে যেতে পার আর চাইলে আমার কাছেও থাকতে পার, এ কথা শুনে ছোট যায়েদ নির্ধীদায় বলে উঠল, হে আমার মনিব আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না আমি আপনার কাছেই থাকব।
    এ কথা শুনে যায়েদের বাবা রাগান্বিত হয়ে উঠল ধবংস তোমার জন্যে হে যায়েদ তুমি তোমার বাবা মায়ের পরিবর্তে এই গোলামের জীবন কে পছন্দ করলে.! তখন যায়েদ বলল হে আমার বাবা আমি আমার এই মনিব কে এত ভালো পেয়েছি যে আমি তার থেকে কখনও আলাদা হব না, আমি তাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, আমি সারা জীবন তার সাথেই থাকব।
    ছোট যায়েদের এই উত্তর শুনে রাসুল (সঃ) তার হাত ধরে তাকে কাবা প্রাংগনে নিয়ে গেলেন এবং কাবা প্রাংগনের সামনে হাজরে আসওয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে সঝুড়ে ঘোষণা করলেন,ইয়া মা’শারাল কুরাইশীন, হে কুরাইশ সম্প্রদায় তোমরা সাক্ষী থাক আজকে থেকে যায়েদ আমার সন্তান। সে আমার উত্তরাদীকারি হবে আমি তার উত্তরাধিকারী হব। এই দৃশ্যেটি যায়েদের বাবা ও চাচা স্বচক্ষে প্রত্যেক্ষ করল তাদের অন্তর আনন্দে ভরে গেল এবং তারা সন্তুষ্টি চিত্তে যায়েদ কে রেখে বাড়িতে ফিরে গেল। ঐ দিনের পর থেকে লোকেরা যায়েদ কে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ, মুহাম্মদের পুত্র যায়েদ বলে ঢাকতে লাগল। অতপর ইসলাম যখন পালক পুত্রের প্রথাকে রহিত করল এই আয়াত নাযিল হল, “”ওদোউহুম আবা আকুম”” তোমরা তাদের কে তাদের পিতার নামে ঢাক, তখন থেকে আবারও যায়েদ ইবনে হারেসা ঢাকা হত। যায়েদ ইবনে হারেসা (রঃ) যখন সবকিছুর চেয়ে রাসুল (সঃ) কে বেশি ভালোবেসে ছিলেন, বাবা মা আত্নীয় স্বজন সব কিছুর উপর রাসুল (সঃ) কে প্রাধান্য দিয়েছিলেন সেদিন হয়ত তিনি জানতেন না, তিনি কত বড় সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন তখনও তিনি জানতেন না, তিনি যাকে ভালোবেসেছেন, তিনি যাকে সব কিছুর চেয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন,তিনি হচ্ছেন গোটা মানব জাতির সর্দার, তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ)।
    কে বাস্তবায়ন করবেন এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে আবারও ন্যায় ইনসাফের রাজত্ব কায়েম হবে। সমগ্র পৃথিবী তে আবারও শান্তি ফিরে আসবে, আর তিনিই হবেন পৃথিবীতে রাজত্ব প্রতিষ্টায় প্রথম ভিত্তি প্রস্তর। এই ভাবনা গুলো তখন যায়েদের মনে মোটেও ছিল না, এভাবেই কয়েকবছর অতিবাহিত হয়ে গেল তারপর তার নবি মুহাম্মাদ (সঃ) কে সত্য দ্বীন সহকারে মানব জাতির নিকট রাসুল হিসেব প্রেরণ করলেন। আর যায়েদ (রঃ) হলেন সেই সকল সৌভাগ্যেবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা সর্বপ্রথম রাসুল (সঃ) এর উপর ঈমান এনেছিলএই সৌভাগ্যের চেয়ে বড় সৌভাগ্য উত্তম সৌভাগ্য আর কি হতে পারে।
    হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রঃ) তিনি যেভাবে রাসুল (সঃ) কে ভালোবাসতেন ঠিক তেমনি ভাবে রাসুল (সঃ) ও তাকে ভালোবাসতেন। রাসুল (সঃ) তাকে নিজের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলেন, তিনি কোথাও গেলে রাসুল (সঃ) তার পথ পানে চেয়ে থাকতেন, তিনি ফিরে এলে তার আগমনে আনন্দিত হতেন, তাকে দেখে খুব খুশি হতেন। যায়েদ (রঃ) এর শাক্ষাতে রাসুল (সঃ) খুবই আনন্দিত হতেন। এমন একটি আনন্দের মুহুর্ত আয়েশা (রঃ) তুলে ধরেছেন, তিনি বলেনঃ যায়েদ ইবনে হারেসা একদিন রাসুল (সঃ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্যে মদিনায় আসলেন, রাসুল (সঃ) সেই সময় ঘরের মাঝে বিবস্ত্র অবস্থায় ছিলেন অর্থাৎ রাসুল (সঃ) এর নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত শুধু ডাকা ছিল এমন অবস্থায় যায়েদ এসে দরজায় আওয়াজ দিলেন, রাসুল (সঃ) এই অবস্থায় দরজার দিকে ছুটে গেলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। আয়েশা (রঃ) বলেন,আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি এই ছাড়া রাসুল সঃ কে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখিনি।
    সকল মুসলমান্দের নিকট যায়েদের প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি প্রসিদ্ধ ছিল তাই যায়েদ (রঃ) কে হিব্বু রাসুলিল্লা তথা রাসুল (সঃ) এর প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে সম্ভোধন করত। অষ্টম হিজরী তে প্রিয় জনের বিচ্ছেদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়া’লা তার রাসুলের পরিক্ষা নিতে চাইলেন, রাসুল সঃ হারেসা ইবনে উমাইল আল আছরি .রঃ কে একটি পত্র দিয়ে বসরার শাসকের নিকট পাঠালেন, ঐ পত্রে বসরার শাসক কে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয় হয়েছিল অতপর ঐ পত্র বাহক যখন জর্ডানে পূর্বে অবস্থিত মুতা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন গাসসানের শাসক শুরা বিল ইবনে আমর তাকে বন্ধি করল এবং তাকে শক্ত করে বেধে তার শিরচ্ছেদ করল, এই সংবাদ যখন রাসুল সঃ এর নিকট পৌছল তখন রাসুল সঃ এর নিকট এটি খুবই কষ্টদায়ক মনে হল কেননা এতি পুর্বে রাসুল সঃ এর বার্তাবাহক কে এভাবে হত্যা করা হয়নি তাই রাসুল (সঃ) মুতার যুদ্ধের জন্যে তিন হাজার একটি বাহিনী গঠন করলেন আর সেই বাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে রাসুলে প্রিয় ব্যক্তি যায়েদ ইবনে হারেসা (রঃ) কে নিযুক্ত করলেন।
    রাসুল সঃ বললেন এই যুদ্ধে যদি যায়েদ ইবনে হারেসা রাঃ আক্রান্ত হয় তারপর জাফর ইবনে আবু তালেব সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবে,জাফর ইবনে আবু তালেব যদি আক্রান্ত হয় তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবে, আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহাও যদি আক্রান্ত হয় তাহলে মুসলমানের মধ্যে হতে সবাই পরামর্শ করে একজন কে সেনা প্রদান হিসেবে নিযুক্ত করবে।
    যায়েদ ইবেন হারেসা রাঃ মুসলিম বাহিনী কে নিয়ে মুতা অভিমুখে রওনা হলেন, তারা যখন জর্ডানের পূর্ব পাশে অবস্থিত মা’য়ান নামক স্থানে পৌছলেন তখন সংবাদ পেলেন রুম সম্রাট হীরাক্লিয়াস এক লক্ষ যুদ্ধাকে নিয়ে গাসসানের শাসক শুরা বিল আমর কে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে আসছে এবং তার সাথে আরবের এক লক্ষ্য মুশরিক বাহিনী এসে একত্রিত হয়েছে এবং এই বিশাল বাহিনী মুসলমানের অদুরের ছাউনি ফেলেছে।
    মুসলমানরা এই মুহুর্তে কি করবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দুই দিন অতিবাহিত হয়ে গেল, তাদের মধ্যে হতে কেউ কেউ বলল, আমরা রাসুল সঃ এর কাছে বার্তা পাঠাই তাদের সৈন্য সংখ্যার ব্যাপারে রাসুল সঃ কে অবগত করি দেখি রাসুল সঃ আমাদের কি বলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা বলে উঠলেন, হে আমার জাতি আল্লাহর কসম করে বলছি আমরা কখনোই সংখ্যা, শক্তি এবং আধিক্যর উপর নির্ভর করে যুদ্ধ করি না বরং আমরা এই দ্বীনের জন্যে যুদ্ধ করি দ্বীনকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ করি, সুতরাং তোমরা যার জন্যে বের হয়েছ তার দিকেই ধাবিত হও আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের দুটি কল্যানের মধ্যে হতে যেকোন একটির ওয়াদা করেছেন, হয়ত বিজয় হয়ত শাহাদাত।
    মুসলিম বাহিনীর সকলেই বলে উঠল আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা সত্যই বলেছে, মুতা প্রান্তরে উভয় বাহিনী মুখোমুখি হল এক দিকে দুই লক্ষ বাহিনী অপর দিকে মাত্র তিন হাজার কিন্তু স্বল্প সংখ্যক মুসলিম বাহিনী এমন বীরত্বের সাথে কাফেরদের পিছু নিল যে কাফিরদের অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। রোমানরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা রঃ রাসুলে দেয়া কালিমার ঝান্ডা কে সমুন্নত রাখার জন্যে এমন ভাবে যুদ্ধ করলেন বীরত্বের ইতিহাসে যার কোন উপমা খুজে পাওয়া যায় না। অবশেষে শত শত বর্ষার আগাতে তার শরির ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল তিনি রক্তাক্ত অবস্থাই জমিনে লুটিয়ে পরলেন অতপর জাফর ইবনে আবু তালেব কালেমার ঝান্ডা কে সমুন্নত করলেন, তিনিই বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তার সাথির সাথে গিয়ে মিলিত হলেন।
    অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা কালেমার ঝান্ডাটিকে ধারণ করলেন, তিনিও সাহসীকতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে তার উভয় সাথির সাথে গিয়ে মিলিত হলেন অতপর সাহাবায়ে কেরাম পরামর্শ করে হযরত খালেদ বিন ওয়লিদ রঃ কে সেনাপ্রদান হিসেবে নিযুক্ত করলেন। তিনি ছিলেন নও মুসলিম, তিনি বিচক্ষনতার সাথে মুসলিম বাহিনী কে নিয়ে সরে পরলেন এবং মুসলমানের ধবংষের হাত থেকে রক্ষা করলেন। অতপর রাসুল সঃ এর নিকট যখন মুতার সংবাদ পৌছল তিনি যখন শুনলেন তার নিজের পুত্র সহ তিনজন সেনাপতিই শহিদ হয়েছে তখন তিনি খুবই দুঃখিত হলেন তার এই দুঃখ পূর্বের সকল দুঃখকে ছাড়িয়ে গেল।
    রাসুল সঃ যায়েদের পরিবার কে সান্ত্বনা দিতে গেলেন, বাড়িতে যাওয়া মাত্রই যায়েদের ছোট মেয়েটি রাসুল সঃ কে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। তখন রাসুল সঃ ও কান্না থামিয়ে রাখতে পারলেন না। রাসুল সঃ স্বশব্দে কেদে ফেললেন সাদ ইবনে ওবাদা রঃ রাসুল সঃ কে বললেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ আপনিও ক্রন্দন করছেন, রাসুল সঃ বললেন, এটা প্রিয় জনের বিরহে প্রিয়জনের কান্না, এটা আল্লাহ তা’য়ালা যায়েদ ইবনে হারেসা রঃ এর উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। তিনিও আল্লাহ তা’য়ালার উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন।



    সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী
    পর্ব-২


    “হযরত সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী(রা)”

    নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লিআলা রসুলুহুল কারীম আম্মাবাদ।সম্মনিত উপস্হিতি, আজকে আমরা বিশিষ্ট সাহাবী সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রাঃ) এর জীবনী নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।প্রিয় উপস্হিতি, সাঈদ ইবনে আমের সে ছিল ঐ সকল হাজারো মানুষদের মধ্য থেকে একজন। যারা কুরাইশদের ডাকে সারা দিয়ে খুবাইব (রাঃ) হত্যার দৃশ্যকে দেখার জন্য মক্কার অদুরে তানাঈম প্রান্তরে একত্রিত হয়েছিল।হযরত খুবাইব (রাঃ) তিনি ছিলেন রাসুল (সাঃ) একজন প্রিয় সাহাবী। তাকে মক্কার মুশরিকরা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে বন্দী করেছিলো। এবং তাকে হত্যা করে বদরের যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প করেছিলো।মক্কার মুশরিকরা খুবাইব (রাঃ) বন্দী করে তাকে টেনে হেচরে তানাঈম প্রান্তরে দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। আর পিছন দিক থেকে যুবক -যুবতী, নারী ও বৃদ্ধরা করোতালী দিয়ে উল্লাশ করছিলো। এবং শ্লোগানে শ্লোগানে তাতুজ্জার জয়ধ্বনি উচ্চারিত করছিলো। খুবাইব (রাঃ) যখন হত্যার জন্য নির্দিষ্ট স্হানে নিয়ে আসা হলো। তিনি যখন শূলী কাষ্ঠের সামনে দারিয়ে আছেন। তখন সাঈদ ইবনে আমেরের অনুসন্ধানী দৃস্টি খুবাইব (রাঃ) দিকে নিবদ্ধ হলো। তিনি দেখলেন খুবাইব (রাঃ) সেই কঠিন মূহুর্তেও নিঃচিন্তে দারিয়ে আছেন। তার চেহারায় বিন্দু পরিমানও আতঙ্কের ছাপ নেই।নারী শিশুদের শোরগোলের মাঝে সাঈদ ইবনে আমের হঠাত করে হযরত খুবাইব (রাঃ) প্রশান্ত কস্ঠশ্বর শুনতে পেলেন মৃতু্্য আগ মূহুর্তে তিনি কুরআইশ নেতৃবৃন্দদের লখ্য করে বলছিলেন, তোমরা যদি আমাকে দুরাকাত নামাজ পরার সুযোগ দিতে। মুশরিকরা তাকে দুরাকাত নামাজ পরার সুযোগ দিলো। সাঈদ ইবনে আমের (রাঃ) খুবাইব (রাঃ) দিকে তাকিয়ে রইলেন, তিনি দেখলেন সে কাবার দিকে ফিরে দুরাকাত নামাজ আদায় করল। কতই না সুন্দর ছিলো সেই নামাজ কতই না সুন্দর ছিলো সেই মনোরম দৃশ্য। অতঃপর নামাজ শেষ করে তিনি কুরআইশ নেত্ববৃন্দের দিকে ফিরলেন।এবং তাদেরকে লখ্য করে বললেন। তোমরা যদি এই ধারনা না করতে যে আমি মৃতু্্যর ভয়ে নামাজকে দীর্ঘায়িত করছি।তাহলে আমি আমার নামাজকে আরো দীর্ঘয়িত করতাম। আমি আরো দীর্ঘাসময় নিয়ে নামাজ আদায় করতাম। অতঃপর সাঈদ ইবনে আমের (রাঃ) স্বচোক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন, যে মক্কার মুশরিকরা দাড়ালো অস্ত্র দিয়ে খুবাইব (রাঃ) এক একটি অঙ্গকে কর্তন করছিলো। আর বলছিলো তুমি কি চাও তোমার স্হানে মুহাম্মদকে রাখা হবে আর তুমি নিরাপধে পরিবারের নিকট ফিরে যাবে। সাঈদ ইবনে আমের (রাঃ) লখ্য করলেন রক্তাত্ব খুবায়ের অতান্ত্য দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলেন, অতন্ত্য অবিচল কন্ঠে বলে উঠলেন। আমি নিরাপদে আমার পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যাবো আর মুহাম্মদ (সাঃ) এর পায়ে একটি মাত্র কাটা বিদ্ধ হবে আমি এটাও বরদাস্ত করতে পারবো না। এই জবাব শুনা মাত্রই মক্কার কাফিররা অট্ট হাসিতে ফেটে পরল এবং তারা চিতকার করে বলতে লাগল তাকে হত্যা করো, তাকে হত্যা করো, তাকে শূলীতে চরাও। খুবাইব (রাঃ) শূলে চরানো হলো শূলীবিদ্ধ খুবায়েব আকাশের দিকে চিতকার দিয়ে বললেন, “”আল্লাহুম্মা আহসিহিম আদাদা ওয়াকতুলহুম বাদাদা ওয়াল তুগাদিরমিনহুম আহাদা””। হে আল্লাহ আপনার কাছে বিচার দিচ্ছি আপনি এদের সংখ্যাগুলোকে গুনে রাখুন। এদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করুন। আপনি এদের কাউকে ছারবেন না। অবশেষে অসংখ্যা তীর তরবারীর আগাতে খুবাইব (রাঃ) দেহটি ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে গেল। তার পবিত্র আত্নাটি আকাশে দিকে উরে গেল। আর তার নিশ্প্রান দেহটি জমিনেই পরে রইল। কুরাইশরা মক্কায় ফিরে এলো। কালের আবর্তে খুবাইব (রাঃ) শাহাদাতের বিস্ময়কর ঘটনাটি সবাই ভুলে গেল। কিন্তু সাঈদ ইবনে আমর এক মুহূর্তের জন্যও খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু শাহাদতের সেই মর্মান্তিক দৃশ্যটি ভুলতে পারল না। তিনি যখন ঘুমাতেন তখন স্বপ্নের মাঝেও তার সামনে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর শাহাদাতের সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি ভেসে উঠতো। জাগ্রত অবস্থাতেও তার স্মৃতিপটে বারবার সেই দৃশ্যটি ভেসে বেড়াতো । খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর কথা মনে পড়লেই তিনি স্থির থাকতে পারতেন না। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু চিন্তা করতেন মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও কিভাবে একজন মানুষ এত সুন্দর করে নামাজ আদায় করতে পারে। সাঈদ ইবনে আমেরের কর্ণকুহরে খুবাইবের বদ দোয়া সেই শব্দগুলো বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল তিনি ভাবছিলেন কখন জানি আসমানী আযাব এসে মক্কা নগরীকে গ্রাস করে নেয়। কখন জানি আকাশ থেকে বিশাল প্রস্তর খন্ড নিক্ষেপ করে মক্কা নগরীকে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া হয়। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাঈদ ইবনে আমের কে এমন কিছু বিষয় শিক্ষা দিয়ে গেলেন যা তিনি ইতিপূর্বে জানতেন না। তিনি তাকে শিক্ষা দিয়ে গেলেন প্রকৃত জীবন হচ্ছে তাওহীদের আকীদার উপর অটল থেকে আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিসর্জন দেয়া। তিনি আরো শিক্ষা দিলেন যে মানুষের ঈমান যখন পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন তার থেকে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রকাশ পায়।খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সাঈদ ইবনে আমের কে আরেকটি বিষয় শিক্ষা দিয়ে গেলেন। যেই মানুষটি কে তার সাথীরা এতো ভালবাসে, যেই মানুষটির জন্য তার সাথীরা হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দেয়। নিশ্চয়ই তিনি আসমানী সাহায্যপ্রাপ্ত নবী। অতঃপর সাঈদ ইবনে আমেরের অন্তরকে আল্লাহ তাআলা ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিলেন। তিনি সকল মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কুরাইশের পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন এবং তারা যে সকল বাতিল ইলাহের ইবাদত করে তাদের থেকেও সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। এবং তিনি সকলের সামনে সুউচ্চ কণ্ঠে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলেন। সাঈদ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রিয় রাসুলের সান্নিধ্য লাভের জন্য হিজরত করে মদীনায় চলে গেলেন। মদিনায় যেয়ে তিনি সব সময় রাসুল সাঃ এর পাশেই থাকতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তিনি খাইবারের যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে সকল যুদ্ধে তিনি রাসুল সাল্লাহু সাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর সন্তুষ্ট অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। পরবর্তীতে আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর খিলাফতের সময় তিনি ইসলামের উন্মুক্ত তরবারী হয়ে যান। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু তিনি ছিলেন প্রকৃত মুমিনদের এক অনন্য উপমা। তিনি দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রধান্য দিয়েছিলেন। দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাতকে ক্রয় করেছিলেন। খলীফাতুল মুসলিমীন আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার তাকওয়া ও পরহেজগারীতার ব্যাপারে ভাল করেই অবগত ছিলেন। তাই তারা সাঈদ ইবনে আমের এর উপদেশ ও দিকনির্দেশনাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখতেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফতের শুরুর দিকে সাঈদ ইবনে আমর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কাছে গেলেন। এবং তাকে লক্ষ্য করে বললেন। হে উমর শুনে রাখ তুমি তোমার জনসাধারণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহর ব্যাপারে কাউকে ভয় করবে না। মনে রাখবে তোমার কথা যাতে তোমার কাজের বিপরীত না হয়। কেননা সর্বোত্তম কথাই সেটা যেটাকে কাজে পরিণত করা হয়। হে উমর তুমি দূরবর্তী ও নিকটবর্তী সকল মুসলমানদের প্রতি খেয়াল রাখবে। তুমি তাদের জন্য তাই পছন্দ করবে যা তুমি তোমার নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য পছন্দ করো। এবং তাদের জন্য ঐ সকল জিনিসকে অপছন্দ করবে যা তুমি নিজের জন্য ও তোমার পরিবারের জন্য অপছন্দ করো। তুমি সত্য জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভয় করবে না। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন হে সাঈদ? এটা কে করতে পারে। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন। হে উমর তুমি পারবে, এবং তোমার মত আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মার শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন তারাই পারবে। ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। এবার সুযোগ পেয়ে গেলেন। তিনি বললেন হে সাঈদ আমি তোমাকে হিংসের গভর্নর নিযুক্ত করতে চাই? তখন তিনি বললেন হে উমর আল্লাহর কসম করে বলছি তুমি আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না। এ কথা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একটু রাগান্বিত হলেন, এবং বললেন এটা কেমন কথা তোমার আমার মাথায় দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিবে। আর তোমরা দূরে সরে থাকবে। আল্লাহর কসম এবার আমি তোমাকে ছাড়ছি না অতঃপর তাকে হিনসের গভর্নর নিযুক্ত করা হলো। এবং তাকে বলা হলো আমি কি তোমার জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করব। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন আমি রাষ্ট্রীয় ভাতা দিয়ে কি করবো। যদি আমাকে ভাতা দেওয়া হয় তাহলে এটা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি হিংসে চলে গেলেন কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর হিনস নগরী থেকে একটি বিশ্বস্ত প্রতিনিধি দল মদিনায় আসলো। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন তোমরা আমাকে তোমাদের নগরীর দরিদ্র লোকদের একটি তালিকা তৈরি করে দাও। যাতে করে আমি তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারি। অতঃপর তারা একটি তালিকা তৈরি করে দিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর যখন সেই তালিকাটি তে চোখ বুলাচ্ছিলেন তখন তিনি দেখতে পেলেন কয়েকটি নাম এর পরের নামটি হচ্ছে সাঈদ ইবনে আমের। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন কে এই সাঈদ ইবনে আমের। তখন তারা বলল উনিই হচ্ছেন আমাদের আমির। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাদেরকে বললেন তোমাদের আমির ও কি দরিদ্র। প্রতিনিধিদলটি বলল আল্লাহর কসম করে বলছি কখনো দিনের পর দিন এমন অতিবাহিত হয় যে তার চুলায় আগুন পর্যন্ত জ্বলে না। এ কথা শুনে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন। এমন কি এমনটি চোখের পানিতে দাড়ি ভিজে গেল। তিনি 1000 দিনার একটি থলে তাদের হাতে দিয়ে বললেন সাঈদ ইবনে আমের এর নিকট আমার সালাম পৌঁছাবে তাকে বলবে ওমর ইবনে খাত্তাব এগুলো আপনাকে আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য দিয়েছেন। প্রতিনিধিদলটি সাঈদ ইবনে আমেরের বাড়িতে এলো এবং তাকে আমিরুল মুমিনীনের পক্ষ থেকে সালাম দিয়ে বলল। আমিরুল মোমেনীন আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য এই দিনারগুলো পাঠিয়েছেন। সাঈদ ইবনে আমের দিনারের থলিটি দেখামাত্রই বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলেন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সাঈদ ইবনে আমের ভয়ার্ত কণ্ঠ শুনে দৌড়ে ছুটে এলেন এবং আশ্চর্যনিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। কি হয়েছে আমীরুল মুমিনীন কি ইন্তেকাল করেছেন। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন না। বরং এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। তার স্ত্রী বললেন তাহলে কি মুসলিম বাহিনী কোথাও পরাজিত হয়েছে, সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন না বরং তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ। তার স্ত্রী বললেন তাহলে বলোনা কি হয়েছে? সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু আমার আখেরাতকে ধ্বংস করার জন্য দুনিয়া আমার উপর চেপে বসেছে আর ফেতনা আমার ঘরে এসে উপস্থিত হয়েছে। তার স্ত্রী তখনও দীনার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার স্ত্রী বললেন ফেতনাকে দূরে সরিয়ে দিন। নিজেও তা থেকে বেঁচে থাকুন। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন তুমি কি এই ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করবে। তিনি বললেন হাঁ অবশ্যই করবো। তারপর সাঈদ ইবনে আমের দিনার গুলো কে ভাগ করে অনেকগুলো থলেতে ভরলেন এবং হিনসের দরিদ্র মুসলমানদের মাঝে তা বন্টন করে দিলেন। এর কিছুদিন পর আমিরুল মুমিনিন ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জনসাধারণের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য শামে এলো। হিংসের অধিবাসীরা তাদের গভর্নরদের ব্যাপারে সব সময় বেশি অভিযোগ করত। ওমর রাদিয়াল্লাহু পৌঁছামাত্রই অধিবাসীরা তার সাথে দেখা করতে এলো হযরত ওমর রাঃ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা তোমাদের আমিরকে কেমন পেয়েছ? তখন তারা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর নিকট তাদের আমিরের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ উত্থাপন করলেন। যার প্রত্যেকটি অভিযোগই একটি অপরটির তুলনায় গুরুতর ছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন অতঃপর আমি তাকে ও তাদেরকে একই মজলিসে একত্রিত করলাম। আল্লাহ তা’আলার নিকট দোয়া করতে থাকলাম আল্লাহতায়ালা যেন সাঈদ এর ব্যাপারে আমার ধারনাকে ভুল প্রমাণিত না করেন। সাঈদ ইবনে আমের ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর মজলিসে উপস্থিত হলো। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাদের আমিরের ব্যাপারে তোমাদের কি কি অভিযোগ আছে। তারা বলল আমাদের প্রথম অভিযোগ হলো অনেক দেরি করে ঘর থেকে বের হন? আমি বললাম হে সাঈদ এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি? সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু তখন কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। তারপর বলতে লাগলেন আল্লাহর কসম করে বলছি আমি এই বিষয়টি কারো সামনে বলতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে আসলে আমার ঘরে কোন চাকর চাকরানী নেই এজন্য প্রত্যেক দিন সকালে আমি আঠা গুলাই তারপর খামিরা তৈরি করি। তারপর আমার নিজ হাতে পরিবারের জন্য রুটি বানাই। অতঃপর অজু করে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য বাহিরে বের হয়ে আসি। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন তারপর আমি অভিযোগকারীদের বললাম তোমাদের আর কোন অভিযোগ আছে কি? দ্বিতীয় অভিযোগ হলো তিনি রাতে আমাদের কারো ডাকে সাড়া দেন না। আমি বললাম হে সাঈদ এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি? আল্লাহর কসম করে বলছি এ বিষয়টিও আমি কারো সামনে প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই প্রকাশ করতে হচ্ছে। আসলে আমি আমার দিনের সময় গুলোকে জনসেবা মূলক কাজের জন্য নির্ধারণ করেছি। আর রাতের সময় গুলোকে আমার রবের ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছি। ওমর (রাঃ) বলেন এরপর আমি অভিযোগকারীদেরকে বললাম তোমাদের আর কোন অভিযোগ আছে কি? তারা বলল হা! আমাদের তৃতীয় অভিযোগ হলো! প্রত্যেক মাসে একদিন তিনি ঘর থেকে বাহিরে বের হন না। আমি বললাম হে সাঈদ এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি? সাঈদ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হে আমীরুল মুমিনীন এই পরিধেয় কাপড় ছাড়া আমার আর কোনো কাপড় নেই। তাই মাসে একবার কাপড় টিকে ধৌত করি এবং শুকানোর অপেক্ষায় ঘরে অবস্থান করি। দিন থেকে কাপড় শুকানো শেষ হলে ঘর থেকে বের হই। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন তারপর আমি তাদেরকে বললাম তোমাদের আর কোন অভিযোগ আছে কি? তারা বলল হা আছে। আমাদের চতুর্থ অভিযোগ হলো। মাঝেমধ্যে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন ফলে তিনি তার মজলিসে উপস্থিত হতে পারেন না। আমি বললাম হে সাঈদ এর কারণ কি? সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন আমি মুশরিক অবস্থায় খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর মৃত্যু যন্ত্রণা দেখেছি। আমি দেখেছি কিভাবে মুশরিকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করছিল। তার শরীর থেকে এক একটি অঙ্গ কেটে ফেলা হচ্ছিল। আর তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল। তুমি কি চাও তোমার স্থানে মোহাম্মদ কে রাখা হবে। আর তুমি নিরঅপরাধে বাড়ি ফিরে যাবে। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছিলেন আল্লাহর কসম করে বলছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হবে আর আমি নিরাপধে পরিবার পরিজন এর নিকট ফিরে যাব এটা কিছুতেই হতে পারে না। আল্লাহর কসম করে বলছি আমার সেই দিনের কথা মনে পড়ে, যখনই খুবাইব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হত্যার দৃশ্যটি আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন আমি আমার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তখন আমাকে আমার নিজের কাছেই খুব অপরাধী মনে হয়। কেননা আমি তো সেখানে উপস্থিত থেকেও খুবাইবের জন্য কিছুই করতে পারিনি এবং আমার মনে হয় আল্লাহ তাআলা হয়তো আমাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।আমি অচেতন হয়ে যায়। এ কথা শেষ হওয়া মাত্রই ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আবেগজনিত কন্ঠে বলে উঠলেন। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যিনি সাঈদ এর ব্যাপারে আমার ধারনা কে সত্য প্রমাণিত করেছে। তারপর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু মদিনায় ফিরে এলেন। সাঈদ ইবনে আমের নিকট 1000 দিনার পাঠিয়ে দিলেন। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু এর স্ত্রী দিনার গুলো দেখা মাত্রই। আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন এবং বলল হয়তো আমাদের কষ্ট দূর হবে। আপনি এই দিনার গুলো দিয়ে একজন গোলাম ক্রয় করে আনুন। আর কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন। সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু তার স্ত্রীকে বললেন, এই দিনার গুলো দিয়ে এর চেয়ে ভালো কিছু করা যায় না। স্ত্রী বললেন সেটা আবার কি? সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন এই দিনার গুলোকে আমরা এমন এক মহান সত্তা র নিকট আমানত রাখবো। যিনি আমাদের তীব্র প্রয়োজনের সময় আমাদের কাছে এগুলোকে ফিরিয়ে দিবেন। স্ত্রী বললেন আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে এটা কিভাবে রাখব। সাঈদ ইবনে আমের (রা বললেন, আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ঋন দিবো। স্ত্রী আনন্দ ভরা কন্ঠে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তাই করুন। হযরত সাঈদ ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু মজলিস থেকে উঠার আগেই দিনার গুলোকে বিভিন্ন থলের মাঝে ভাগ করে রাখলেন এবং পরিচিত একজনকে ডেকে বললেন। যাও এই থলেটি অমুক বিধবা নারীকে দিয়ে আসো। যাও এই থলেটি ঐ এতিমদের দিয়ে এসো। এই থলেটি অমুক মিসকিনদের দিয়ে এসো। এই থলেটি অমুক ব্যক্তি দরিদ্র সন্তানদের দিয়ে এসো। এভাবে বন্টন করতে করতে সব দিনারগুলোকে শেষ করে ফেললেন। আল্লাহ তাআলা সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর উপর রহম করুন। তিনি নিজের প্রয়োজন থাকা সত্বেও সর্বদা অন্যকে প্রাধান্য দিতেন। হে আল্লাহ আমাদেরকে তার মত জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন। আমিন। ওমা আলাইনা ইল্লাল বালা।

    মুল কন্ঠকার শায়েখ তামিম আল আদনানী (হাফিঃ)
    সাহাবীদের ঈমানদিপ্ত কাহিনী
    পর্ব-৩


    সম্মানিত উপস্থিতি আজকে আমরা রাসুল (সাঃ) এর বিশিষ্ট খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক আল-আনসারী রাঃ এর জীবনী নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করবো ইন শা আল্লাহ্। আনাস ইবনে মালিক ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় নিষ্পাপ এক ছোট বালক তার মা তাকে শিখিয়ে ছিলো কালেমাতু শাহাদাহ। তার কমল হ্নদয় পূর্ণ করে দিয়েছিল মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ (সা) এর ভালোবাসায়।ছোট্ট আনাস রাসুলের গল্প শুনতে শুনতে ভালোবাসায় পাগল পারা হয়ে গিয়েছিলো।সে সব সময় ভাবতো হায় আমি যদি মক্কায় ছুটে যেতে পারতাম প্রিয় রাসুলের চেহারা খানি একবার দেখতে পেতাম অথবা তিনিই যদি ইয়াসরিপে চলে আসতেন আমাকে সাক্ষাতের সুযোগ করে দিতেন তার এই আশা আকাংখার কিছু দিন অতিবাহিত হতে না হতেই মদিনায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল প্রিয় রাসূল (সা) তার সাথি আবু বক্কর সিদ্দিক রা. কে নিয়ে মদিনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এই সংবাদ শুনা মাত্রই মদিনার প্রতিটি ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগল প্রতিটা হ্নদয় আনন্দে মেতে উঠলো সবাই ব্যাকুল হয়ে রাসূল (সাঃ) এর পথ প্রানে তাকিয়ে রইলো। এরপর প্রতি দিন সকালেই শিশু বালকেরা হই চই করে গুঁজব ছড়াতো যে মোহাম্মদ (সাঃ) এসে পরেছে একথা শুনা মাত্রই ছোট্ট আনাসও শিশু বালকদের সাথে বেরিয়ে যেতো কিন্তু কাওকে না পেয়ে চিন্তিত ও বিষন্ন মনে ঘরে ফিরে আসতো।
    কোন এক আলোকিত সকালে মদিনার বড় বড় পুরুষ লোকেরা সুউচ্চ কণ্ঠে গোষনা করলো মোহাম্মদ (সাঃ) ও তার সাথি মদিনার কাছাকাছি চলে এসেছে একথা শুনা মাত্রই মদিনার পুরুষেরা দলে দলে বের হয়ে গেলো রাসূল (সাঃ) কে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ছোট্ট শিশু কিশোরদের অন্তরেও উপচেয়ে পরা আনন্দ উল্লাস আর সেই শিশু কিশােরদের অগ্রভাগেই ছিলেন আন্নাস বিন মালেক রা. রাসূল (সাঃ) তার সঙ্গী আবু বক্কর রা. কে নিয়ে মদিনায় আগমন করলেন ছোট্ট শিশু কিশোরেরা বিভিন্ন কবিতা আবৃতি করে রাসূল (সাঃ) কে অভিবাদন জানাতে লাগলো রাসূল (সাঃ) ও আবু বক্কর রা. সারি বদ্ধ মানুষের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন অন্তপুরের মহিলারাও বাড়ির ছাদের উপর বসে বসে রাসূল (সাঃ) এর
    এর আগমনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখছিল আর একে অপরকে জিঙ্গাসা করছিলো যে কোনটি তিনি কোনটি মোহাম্মদ (সাঃ)!
    রাসুলের আগমনের সেই দিনটি ছিলো এক অবিস্মরণীয় দিন। আনাস বিন মালেক রা. মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই দিনটির কথা ভুলতে পারেননি।
    তার শতাধিক বছরের জীবনে রাসুল সঃ এর আগমনের সেই দিন টি অবিস্বরনীয় হয়ে ছিল। রাসুল সঃ সবেমাত্র মদিনায় এসেছেন এখনও তিনি মদিনায় এসে স্থির হতে পারেন নি এমন সময় আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর মা উমাইসা বিনতে মিলহান তার ছোট বালক কে নিয়ে রাসুল সঃ এর কাছে এসে উপছিত হলেন, তিনি রাসুল সঃ কে সালাম দিয়ে বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আনসাদের প্রতিটি নারী পুরুষ কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়ে দিয়েছে কিন্তু আমি এমন এক হতভাগা যে আমার কাছে এমন কিছুই নেই যা আপনাকে হাদিয়া দিব। ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার ছোট এই বালক টিকে আপনার খেদমতের জন্যে উৎসর্গ করছি। দয়া করে আপনি আমার এই হাদিয়া টুকু গ্রহণ করুন আপনি তাকে আপনার খাদেম হিসেবে নিয়ে নিন। রাসুল সঃ শিশু বালক টিকে পেয়ে খুব খুশি হলেন এবং হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাকে গ্রহণ করলেন। রাসুল সঃ তার পবিত্র কোমল হাত টি তার মাথায় বুলিয়ে দিলেন এবং তাকে তার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন। আনাস বিন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু মাত্র দশ বছর বয়সেই প্রিয় নবীর খেদমতের সৌভাগ্যে অর্জন করেছিলেন এবং রাসুল সঃ এর ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি তার তত্তাবধানে ছিলেন। আনাস বিন মালেক রঃ দীর্ঘ দশ বছর রাসুল সঃ এর খেতমত করেছেন। এই দীর্ঘ দশ বছর বয়েসে তিনি রাসুল সঃ এর কাছ থেকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন যার মাধ্যমে তিনি তার আত্নাকে পরিশুদ্ধ করেছিলেন এবং তিনি রাসুল সঃ এর অসংখ্য হাদিস দ্বারা নিজের অন্তর কে পরিপূর্ণ করেছিলেন। তিনি রাসুল সঃ এর জীবনী এবং রাসুল সঃ এর উত্তম আখলাক সম্পর্কে এমন কিছু বিষয় জেনে ছিলেন যা অন্য কেউ জানতো না। আনাস রাদিআল্লাহু আনহু রাসুল সঃ এর কাছ থেকে এত পরিমাণ আদর স্নেহ পেয়েছিলেন যা কোন সন্তান তার পিতা মাতার কাছ থেকেও পাই না। আনাস বিন মালেক রঃ রাসুল সঃ এর উন্নত চরিত্র ও মহত্তম স্বভাব দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আসুন রাসুল সঃ এর ছোট খাদেম আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর মুখ থেকেই শুনি এমন কিছু উত্তম চরিত্র এবং স্নেহপূর্ণ ব্যবহারে কথা। কেননা তিনিই তো রাসুল সঃ এর আখলাক সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত ছিলেন। আনাস বিন মালেক রঃ বলেন রাসুল সঃ হলেন সর্বত্তোম চরিত্র এবং প্রশস্ত হ্নদয়ের অধিকারী ছিলেন, তিনি বলেন রাসুল সঃ আমাকে একদিন কোন একটি কাজে পাঠালেন, আমি সেই কাজের উদ্দেশ্যে বের হলাম কিন্তু পতি মধ্যে যেয়ে দেখলাম বাচ্চারা খেলা ধুলা করছে আমিও তাদের সাথে খেলাধুলায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম এবং আমাকে যে কাজের জন্যে পাঠানো হয়েছিল সে কাজের কথা ভুলে গেলাম, হঠাৎ করে আমি অনুভব করলাম আমার পেছনে কে যেন দাড়িয়ে আছে এবং হালকা ভবে আমার কাপড় ধরে টানছে আমি পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম, দেখলাম রাসুল সঃ দাড়িয়ে আছেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, হে আনাস.! তোমাকে যে কাজের জন্যে পাঠিয়েছিলাম সে খানে কি যাও নি.? আমি হতভম্ব হয়ে বললাম হ্যাঁ এক্ষুণি যাচ্ছি ইয়া রাসুলুল্লাহ।
    আল্লাহর কসম করে বলছি আমি দশ বছর ধরে রাসুল সঃ এর খেদমত করেছি আমি যখন ভুল কাজ করেছি তিনি কখনও আমাকে বলেন নি হে আনাস তুমি এইটা কেন করলে, আবার যখন কোন কাজ করিনি কখনও তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেননি তুমি এইটা কেন করলে না।
    রাসুল সঃ যখন আনাস রাদিআল্লাহু আনহু কে ঢাকতেন তখন তিনি তার নাম টিকে ছোট করে অতি আদর মেখে বলতেন হে উনাইস.! আবার কখনও বলতেন হে বুনাইয়া.! হে আদরের পুত্র। তিনি তাকে প্রচুর পরিমাণে উপদেশ দিতেন। রাসুল সঃ এর উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। রাসুল সঃ এর ইন্তেকালের পর আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু আনহু আশি বছরেরও বেশি জীবিত ছিলেন। তিনি এই দীর্ঘ সময়ে মানুষের অন্তর সমুহকে ইলমে নববী দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছিলেন। মানুষের মাঝে দ্বীনের জ্ঞান বিতরনে ব্যস্ত ছিলেন। সাহাবী এবং তাবীঈনদের মধ্যে থেকে যখনি কেউ কোন বিষয়ে দ্বিদাধন্দে পরত যখনি ইসলামের কোন বিষয়ে বুঝতে জটিলতা সৃষ্টি হত তখনি তারা সেই বিষয় টি পরিষ্কার ভাবে বুঝতে আনাস বিন মালেকের কাছে দৌরে ছুটে আসত আর তিনি ইলমি নববীর মাধ্যামে তাদের সকল অস্পষ্ট তাকে দূর করে দিতেন। আনাস বিন মালেক রঃ জীবনে যত দিন বেচে ছিলেন তিনি সবসময় মানুষের সামনে রাসুল সঃ এর কথা বলতেন। রাসুল সঃ এর সাথে সাক্ষাতের দিন টিতে তিনি অনেক অনিন্দিত হয়েছিলেন আবার রাসুল সঃ এর বিচ্ছেদের দিনটিতেও তিনি অনেক ক্রন্দন করেছিলেন। এই জন্যেই তিনি রাসুল সঃ এর সাথে প্রথম যেদিন সাক্ষাত হয়েছিল সেই দিনটির কথা যখন আলোচনা করতেন তখন তিনি খুবই আনন্দিত হতেন আবার যখন রাসুল সঃ এর ইন্তেকালের দিনটির কথা আলোচনা করতেন তখন তিনি অঝোর ধারায় কাদতে থাকতেন এবং তার পাশে যারা থাকত তারাও কেদে ফেলত। তিনি বলতেন আমি রাসুল এর মদিনায় আগমনের দিনটি কে দেখেছি আবার রাসুল সঃ এর মদিনা ছেড়ে বিদায়ের দিনটিও দেখেছি এই দুটি দিন কখনও এক হতে পারে না এই দুটি দিনের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে তিনি যেদিন মদিনায় এসছিলেন পুরো মদিনা আলোকিত হয়ে গিয়েছিল আর তিনি যেদিন তার রবের ঢাকে সাড়া দিয়ে মদিনা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন পুরো মদিনা অন্ধাকারাচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। রাসুল সঃ আনাস বিন মালেকের জন্যে একাধিক বার দুয়া করেছিলেন, তার মধ্যে থেকে একটি দুয়া হল.(………) হে আল্লাহ আপনি তাকে সম্পদ ও সন্তান দান করুন এবং তার জীবনে বরকত দান করুন। আল্লাহ তা’আলা রাসুল সঃ এর এই দুয়া কে কবুল করেছিলেন। আনাস বিন মালেক রঃ আনসারদের মধ্যে থেকে সব চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি তার জীবদ্দশায় এক শতাধিক সন্তান ও নাতির চেহারা দেখে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তা’আলা তার জীবনেও বরকত দিয়েছিলেন তিনি দীর্ঘ এক শতাব্দী এর সাথে আরও তিন বছর জীবিত ছিলেন। আনাস বিন মালেক রঃ কিয়ামতের মাঠে রাসুল সঃ এর শাফায়াতের ব্যাপারে তীব্র আশাবাদী ছিলেন তিনি প্রায়ই বলতেন আমি কিয়ামতের মাঠে রাসুল সঃ এর সামনে হাজির হয়ে বলব ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার দিকে একটু লক্ষ্য করুন আমি হচ্ছি আপনার ছোট খাদেম উনাইস। আনাস বিন মালেক রঃ যখন মৃত্যু মুখে উপনিত হলেন তখন তিনি তার পরিবার কে বললেন তোমরা আমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এই কালিমার তালকীন কর অতপর তিনি এই কালিমা পাঠ করতে করতে মৃত্যু বরন করলেন এবং তিনি অসিয়ত করেছিলেন রাসুল সঃ এর ছোট লাঠিটি যেন তার সংগে কবরে দাফন করে দেয়া হয়, তার কথা মতই লাঠিটি তার কাফনের সাথে জড়িয়ে কবরে দাফন করে দেয়া হল।
    অভিনন্দন আনাস বিন মালেক রঃ এর জন্যে আল্লাহ তা’আলা তার উপর পরিপূর্ণ অনুগ্রহ করেছিলেন। তিনি রাসুল সঃ এর সহচার্যে কাটিয়েছিলেন দীর্ঘ দশটি বছর হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তৃতীয় ব্যক্তি অন্য দু’জন হলেন আবু হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু আনহু এবং আব্দুল্লাহ এবনে উমর। আল্লাহ তা’আলা তাকে ও তার মমতাময়ী মা গুমাইসা বিনতে মিলহান কে মুসলিম জাতির পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করন, আমিন।
    ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-26-2023, 02:04 PM.
    চিঠিটি তাদেরকে পৌঁছে দাও, দূরে থেকে দেখো তারা কি জবাব দেয় … (নামল, ২৮)

  • #2
    আখি....পোষ্টটি এক সাথে না করে,পর্ব হিসেবে দিলে পড়তে ভালো হতো।
    আল্লাহ সুবঃ আপনার মেহনাত কে কবুল করুন,আমীন।
    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ আখি।

      Comment

      Working...
      X