Announcement

Collapse
No announcement yet.

গণতন্ত্রকে যারা মরা গরুর মতো জায়েয বলেন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গণতন্ত্রকে যারা মরা গরুর মতো জায়েয বলেন

    মুফতি কাজি ইব্রাহিম সাহেব গণতন্ত্রকে মরা গরুর মতো জায়েয বলেছেন। অর্থাৎ গণতন্ত্র হারাম তবে নিরুপায় হয়ে করতে হচ্ছে। এজন্য জায়েয। যেমন- নিরুপায় অবস্থায় মরা গরুর গোশত খাওয়া জায়েয। এ ধরণের আরো যুক্তি আরো অনেকেই দিয়ে থাকেন।


    তারা যদি গণতন্ত্রকে হারাম মনে করে থাকেন, তাহলে গণতন্ত্রে যোগ দেয়ার আগে বুঝে নিতে হবে: কোনো হারামে লিপ্ত হওয়া কখন বৈধ হয়?

    হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরয। হারামে লিপ্ত হওয়া হারাম। যেমন, নিরপরাধ মুসলমানকে হত্যা করা হারাম। হত্যা করা থেকে বেঁচে থাকা ফরয। হত্যা করা হারাম।

    গণতন্ত্র যদি হারাম হয়ে থাকে, তাহলে তাতে লিপ্ত হওয়া হারাম। তা থেকে বেঁচে থাকা ফরয।


    নিরুপায় অবস্থায় কি সব হারাম বৈধ হয়ে যায়?
    সাধারণত অনেকে মনে করেন, নিরুপায় অবস্থায় সব হারাম বৈধ হয়ে যায়। ব্যাপকভাবে এ কথা সহীহ নয়। নিরুপায় অবস্থায় সকল হারাম বৈধ হয়ে যায় না। নিরুপায় অবস্থায় কেবল সেসব হারামই বৈধ হয়, যেগুলোকে আল্লাহ তাআলা নিরুপায় অবস্থায় বৈধ করেছেন। যেমন, মৃত প্রাণী ভক্ষণ। এটা নিরুপায় অবস্থায় বৈধ। কিন্তু কোন নিরপরাধ মুসলমানকে হত্যা করা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। যদি কারো মাথায় অস্ত্র ঠেকানো হয় যে, যদি তুই মৃত প্রাণীর গোশত না খেয়েছিস, তাহলে তোকে হত্যা করে দেব; তাহলে তার জন্য তা খাওয়া হালাল। কিন্তু যদি কারো মাথায় অস্ত্র ঠেকানো হয় যে, যদি তুই অমুক মুসলমানকে হত্যা না করিস, তাহলে তোকে হত্যা করে দেব; তাহলে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য মুসলমান হত্যা জায়েয হবে না। যদি হত্যা করে, তাহলে হারাম হবে। আল্লাহ তাআলা মাফ না করলে জাহান্নামী হবে।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا} [النساء- 93]
    “যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে জেনে-শুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যাতে সে সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তার উপর রুষ্ট হবেন ও তাকে লা’নত করবেন। আর তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন মহা শাস্তি।”- নিসা ৯৩


    আল্লাহ তাআলা অন্যায়ভাবে মুসলমান হত্যা হারাম করেছেন। অন্য কোন আয়াতে বা হাদিসে এর বৈধতা দেননি। অতএব, নিরুপায় অবস্থায় এবং জীবন বাঁচানোর স্বার্থেও কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা জায়েয নয়।

    ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
    لو أكره رجل رجلا على قتل مسلم معصوم فإنه لا يجوز له قتله بإتفاق المسلمين وإن اكرهه بالقتل. اهـ
    “কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে কোন নিরপরাধ মুসলমানকে হত্যা করতে বাধ্য করলে তার জন্য তাকে হত্যা করা জায়েয হবে না- যদিও তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে। এ ব্যাপারে সকল মুসলমান একমত।”- মাজমুউল ফাতাওয়া ২৮/৫৩৯


    আল্লামা মারগিনানি রহ. (৫৯৩ হি.) বলেন,
    "وإن أكرهه بقتله على قتل غيره لم يسعه أن يقدم عليه ويصبر حتى يقتل، فإن قتله كان آثما" لأن قتل المسلم مما لا يستباح لضرورة ما. اهـ
    “যদি হত্যার ভয় দেখিয়ে কাউকে অন্য কোন মুসলমান হত্যা করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে হত্যার অনুমোদন হবে না। নিজেকে হত্যা করা হলেও বিরত থাকবে। যদি হত্যা করে ফেলে তাহলে গুনাহগার হবে। কেননা, যতই জরুরত ও নিরুপায় অবস্থা হোক, কোন মুসলমান হত্যা বৈধ নয়।”- হিদায়া ৩/২৭৪, কিতাবুল ইকরাহ




    নিরুপায় অবস্থায় কাকে বলে?
    গণতন্ত্রকে যারা মরা গরুর মতো জায়েয বলেন, তাদের কাছে প্রশ্ন- নিরুপায় অবস্থা কাকে বলে?

    যখন হারাম করলে ফায়েদা ও লাভ হবে, কিন্তু না করলে ক্ষতি হবে না- তাকে জরুরত বলে না। একে নিরুপায় অবস্থা বলে না।

    যখন হারাম না করলে লোকসান বা কষ্ট হবে- একেও জরুরত বা নিরুপায় অবস্থা বলে না।

    নিরুপায় অবস্থা বলে একে যে, হারামে লিপ্ত না হলে জীবন চলে যাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। কিংবা কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হওয়া বা দীর্ঘ দিনের জন্য বা অত্যন্ত জুলুমপূর্ণ জেলে আটক হওয়া প্রায় নিশ্চিত। একে জরুরত বলে। একে নিরুপায় অবস্থা বলে।



    যখন কোন ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে যে, যদি এই হারামে লিপ্ত না হয়, তাহলে তার জীবন চলে যাবে বা কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট হবে কিংবা জেলে বন্দী হবে- তাহলে তাকে বলা হবে, সে নিরুপায় অবস্থার সম্মুখীন। এই নিরুপায় অবস্থায় আল্লাহ তাআলা কিছু হারামে লিপ্ত হওয়া জায়েয করেছেন। যেমন- মদ, শুকর বা মৃত খাওয়া।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ} [البقرة- 173]
    “তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শুকরের গোশত এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। অবশ্য যে ব্যক্তি চরম নিরুপায় অবস্থায় পতিত হয় (ফলে এসব নিষিদ্ধ বস্তু হতে কিছু খেয়ে নেয়) আর তার উদ্দেশ্য মজা ভোগ করা না হয় এবং (প্রয়োজনের) সীমা অতিক্রম না করে, তার কোন গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”- বাকারা ১৭৩


    অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,
    {فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ} [المائدة-3]
    “কেউ যদি ক্ষুধার তাড়নায় নিরুপায় হয় (ফলে হারাম বস্তু ভক্ষণ করে) আর গুনাহের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তা না করে, তাহলে আল্লাহ্ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”- মায়েদা ৩


    ক্ষুধার তাড়নায় যখন জীবনের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং হারাম ছাড়া অন্য কোন হালাল খাবার না পাওয়া যায়, তখন আল্লাহ তাআলা হারাম ভক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন। তবে দুই শর্তে:

    ক. মজা সম্ভোগের জন্য খেতে পারবে না।
    খ. প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেতে পারবে না। যতটুকুতে জীবন বাঁচে শুধু ততটুকু।


    আয়াতে আল্লাহ তাআলা ক্ষুধার তাড়নায় জীবনের আশঙ্কা হলে প্রয়োজন পরিমাণ হারাম ভক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন। আইম্মায়ে কেরাম এ থেকে বের করেছেন, ক্ষুধার তাড়নায় জীবনের আশঙ্কা হলে যেমন হারাম ভক্ষণ বৈধ, অন্য কোন কারণে জীবনের আশঙ্কা হলেও হারাম ভক্ষণ বৈধ।


    এখানে লক্ষণীয় যে, নিরুপায় অবস্থায় আয়াতে শুধু হারাম ভক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অন্য কোন হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমতির কথা আয়াতে নেই। তবে অন্যান্য আয়াত ও হাদিসের দ্বারা আরো কিছু হারাম ও কুফরে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। বিশেষত যেসব বিষয় একান্ত আল্লাহ তাআলার হক, যেগুলোতে বান্দার ক্ষতি হয় না, সেগুলোর বৈধতা আছে। বিস্তারিত ফিকহের কিতাবাদিতে দেখা যেতে পারে।


    বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের আলোকে নিরুপায় অবস্থা বলতে- জীবনের আশঙ্কা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্টের আশঙ্কা বা দীর্ঘ মেয়াদী কিংবা অতিশয় জুলুমপূর্ণ জেল সাব্যস্ত হয়। বিস্তারিত ফিকহের কিতাবাদিতে দ্রষ্টব্য।


    তাহলে সারকথা দাঁড়াল:
    - শরীয়তের স্বাভাবিক নিয়ম, হারামে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়।
    - একান্ত নিরুপায় ও জীবনের আশঙ্কামূলক ক্ষেত্র হলে কোন কোন হারামে লিপ্ত হওয়া বৈধ। আর কিছু হারাম এমন আছে, যেগুলোতে কোন অবস্থাতেই লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়। জীবন গেলেও না।


    গণতন্ত্রকে যারা হারাম বলা সত্বেও জায়েয বলেন, তাদের নিকট প্রশ্ন:
    # গণতন্ত্র কোন ধরণের হারাম? নিরুপায় অবস্থায় যে ধরণের হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি আছে সে ধরণের হারাম, না’কি যে ধরণের হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি নেই সে ধরণের হারাম?

    যদি উত্তর হয়, যে ধরণের হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি নেই, সে ধরণের হারাম- তাহলে তো পরিষ্কার যে, গণতন্ত্র করা যাবে না। নিরুপায় হলেও না।
    আর যদি উত্তর হয়, যে ধরণের হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি আছে সে ধরণের হারাম; তাহলে:

    প্রথমত জিজ্ঞেস করি, কুরআন সুন্নাহয় এর দলীল কি?

    দ্বিতীয়ত: জায়েয হলে সকলের জন্য জায়েয, না’কি একান্ত নিরুপায় যারা তাদের জন্য জায়েয?

    এটার উত্তর একটাই যে, একান্ত নিরুপায় যারা কেবল তাদের জন্যই জায়েয, বাকিদের জন্য হারাম।


    তাহলে বেশির চেয়ে বেশি এটা বলা যায়, গণতন্ত্রে যোগ না দিলে যাদের প্রাণ যাবে বা জেল-জুলুমের শিকার হবে, কেবল তাদের জন্যই জীবন বাঁচে পরিমাণ বা জেল-জুলুম দূর করা যায় পরিমাণ জায়েয। এর বেশি জায়েয নয়। বাকিদের জন্যও জায়েয নয়।


    যেমন, কারো পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, সে ভোট না দিতে গেলে তাকে গ্রেফতার করা হবে, তাহলে তার জন্য ভোট কেন্দ্রে যাওয়া জায়েয। তবে যদি ভোট না দিয়ে পারা যায় বা না ভোট দেয়া যায় বা ভোট নষ্ট করে ফেলার সুযোগ থাকে, তাহলে ভোট দেয়া জায়েয হবে না। কেননা, গ্রেফতারি থেকে বাঁচার জন্য শুধু ভোট কেন্দ্রে যাওয়াই যথেষ্ট। গোপন কক্ষে যখন ভোট দেবে, তখন কেউ সামনে থাকবে না। তাই ভোট দিতে সে বাধ্য নয়। হ্যাঁ, কাউকে যদি সামনাসামনি ভোট দিতে বলে, তাহলে তার কথা ভিন্ন।


    তাহলে গণতন্ত্রকে যারা মরা গরুর মতো জায়েয বলেন, তাদের কথা মতোও কেবল তাদের জন্যই জায়েয, যারা নিরুপায়। যাদের গ্রেফতারি বা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য গণতন্ত্র নামক হারামে লিপ্ত হওয়া ভিন্ন কোন উপায় নেই। তাও কেবল ততটুকুই জায়েয, যতটুকুতে গ্রেফতারি বা মৃত্যু প্রতিহত হয়। এর বেশি নয়। যাদের গ্রেফতারি বা মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হবে না, তাদের জন্য জায়েয নেই। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বেশি বলার সুযোগ নেই। তাহলে তারা ঢালাওভাবে সকলের জন্য – এমনকি মাহদি আলাইহিস সালামের আগমন পর্যন্ত- কিভাবে গণতন্ত্রকে জায়েয বলছেন?

  • #2
    যাজাকাল্লাহ ভাই!
    অনেক সুন্দর একটি পোস্ট।
    ভাই কেউ যদি নির্বাচনে এমনেই ভোট দেয় যে দূর্নীতিকে চাক্ষুষ দেখার জন্য। অন্তর থেকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে তাহলে তারো কি গোনাহ হবে।
    আমার পরিচিত একজন ভাই ভোটার না হওয়া সত্যেও ভোট দিয়েছেন যদিও ভোট দেয়ার ইচ্ছা তার ছিল না। ভোটকেন্দ্র দেখতে গিয়ে অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ভোট দেয়ায় তিনি ও ভোট দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্র কে কুফরি মনে করেন। আই কাজকি তার কুফর হবে???
    জীবনের ছোট -বড় সকল বিষয়ে সুন্নাহর উপর আমল করো, সর্বপরকার বিদ'আত থেকে দূরে থাকো! আল্লাহকে যদি ভালোবাসো, আল্লাহর নবীকে অনুসরণ কর।

    Comment


    • #3
      কুফর হবে না। তবে এমনটা করা উচিৎ হয়নি। ইস্তিগফার করা উচিৎ।

      Comment


      • #4
        Originally posted by ইলম ও জিহাদ View Post
        মুফতি কাজি ইব্রাহিম সাহেব গণতন্ত্রকে মরা গরুর মতো জায়েয বলেছেন।
        উনার ভ্রান্তির জবাব দেওয়ার জন্য জাযাকাল্লাহ আমাদের ফোরামের আলেম ভাইদের কাছ থেকে এই রকম একটা জবাবের অপেক্ষাই ছিলাম
        কাজী ইব্রাহীম সাহেবের ভ্রান্তির জবাব https://dawahilallah.com/showthread.php?11970
        ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

        Comment

        Working...
        X