Announcement

Collapse
No announcement yet.

মন জুড়ানো মুহুর্ত

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মন জুড়ানো মুহুর্ত

    মন জুড়ানো মুহূর্ত
    আল্লাহ আযযা ওয়াজাল কুরআনে বলেন:

    “অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ। যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাজে।” (২৩:১-২)

    এবং

    “তোমরা নামাযসমূহ ও মধ্যবর্তী নামাযের (আসর) ব্যাপারে যত্নবান হও এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও।” (২:২৩৮)

    রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সালাত ইসলামের খুঁটি”।

    আল-মিরাজের দিনে রাসূলুল্লাহকে (সা) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের যে আদেশ দান করেছিলেন, তা ছিল তাঁর এবং সমগ্র উম্মাহর প্রতি আল্লাহর তরফ থেকে এক অসামান্য উপহার! সালাতকে কখনোই আমরা এভাবে দেখতে পারব না যে সালাতের দ্বারা আমরা আল্লাহকে ‘পুরস্কৃত’ করছি বা কোনরূপ প্রতিদান দিচ্ছি। কেননা আমাদের পক্ষে আল্লাহকে প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়, না সালাতের সাহায্যে, না অন্য কোন কাজের মাধ্যমে। বরং সালাতের বিধান দেওয়া হয়েছে যেন আমরা এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারি। সালাত কেবল ইসলামের একটি খুঁটি কিংবা একটি ফরয দায়িত্ব থেকেও বেশি কিছু: এটি আপনার সাথে গোটা বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহ তা’আলার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম।

    সালাতকে একটি ‘হটলাইন’ এর সাথে তুলনা করা যায় যা দিয়ে আপনি যেকোন সময় আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এজন্য সালাফগণ বলতেন “যদি আপনি আল্লাহর সাথে কথা বলতে চান, তাহলে সালাত আদায় করুন আর যদি আপনি চান আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলুক, তাহলে কুরআন পড়ুন”। সালাত হলো যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্তির পথ, অস্থিরতায় প্রশান্তি। এটি আপনাকে স্বস্তি দেবে, শান্ত করবে, আস্থা যোগাবে। সালাতের মাধ্যমে আপনি যেকোনো বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য চাইতে পারবেন – হোক তা যুদ্ধের মত গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় অথবা রান্না বা কাপড়ের দাগ তোলার মত তুচ্ছ কোন কাজেও! সালাত যে কোন বিষয়ে আল্লাহর দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ পাওয়ার উপায়। লোকে সঙ্গ পেতে বা বিনোদনের খোঁজে অনেক সময় এমনিতেই টেলিভিশন বা রেডিও ছেড়ে রেখে দেয়, হয়তো সে শুনছেও না বা দেখছেও না। নিঃসন্দেহে সালাহ এসব “সঙ্গের” চাইতে উত্তম সঙ্গ দান করে।

    সালাত আপনাকে সুযোগ করে দেয় আল্লাহর সামনে অন্তরটা মেলে ধরবার, তাঁর কাছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজার। লম্বা সফরের পর, বা কোন বিপদে পড়লে, অথবা অসুস্থতায় কিংবা পথ হারিয়ে যাবার পর ফিরে আসতে পেরে সন্তান যেভাবে বাবার বুকে পরম নির্ভরতায় আশ্রয় নেয়, সালাতও তেমনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় পাবার মাধ্যম। আল্লাহর দয়া ও ক্ষমতার মাঝে হৃদয়ের প্রশান্তি খুঁজে পাবার মাধ্যম। সালাতের উপকারিতার শেষ নেই, তবে তা পেতে হলে আপনাকে এর জন্য দাম দিতে হবে, এবং তাতে বিনিয়োগ করতে হবে।

    আপনার সালাতকে মনে করুন একটি ঘোড়ার মত। যখন আপনার ঘোড়ার বয়স অল্প, তখন আপনি না এতে চড়তে পারেন, না পারেন অন্য কাজে ব্যবহার করতে। কিন্তু আপনি যদি একে ভালোভাবে দেখাশোনা করেন, প্রতিদিন পরিষ্কার করেন, প্রশিক্ষণ দেন, খাওয়া-দাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যা করেন, এর ওপর খরচ করে একে বড় করতে থাকেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে কাজটি কষ্টসাধ্য হলেও এই ঘোড়াটিই একসময় পরিণত হয়ে আপনার জন্য এক শক্তিশালী, বিশ্বস্ত ও বাধ্য ঘোড়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। যখনই আপনার প্রয়োজন হবে, এটি আপনার খেদমতে হাজির থাকবে। সফরে, যুদ্ধে কী বিপদ থেকে পালাতে যখনই দরকার পড়বে আপনি এর পিঠে চড়তে পারবেন।

    অনুরূপ আপনার সালাত। আপনার সালাত যখন দুর্বল, অল্পবয়সী ও অপরিণত, তখন সেটাকে বোঝার মত মনে হবে। প্রথম প্রথম সালাতের জন্য এ কাজগুলো করা খুব কঠিন মনে হবে: ওযূ করা, সময়মত আদায় করা, অর্থ-না-জানা সূরাগুলো মনযোগ দিয়ে পাঠ করা ও মুখস্থ আওড়ে যাওয়া, কিংবা ব্যস্ততা বা ক্লান্তির মাঝেও সালাত আদায় করা ইত্যাদি। তবে আপনি যদি লেগে থাকেন, অনেক চেষ্টা করেন, তাহলে চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনার সালাতই আপনাকে সাহায্য করবে। সালাত আপনাকে দেবে অন্তরের প্রশান্তি, স্থিরতা, দৃঢ়তা, শক্তি, সুখ, আশাবাদ ও সাহস। আর কেবল তখনই আপনার সালাত আপনার বোঝা হবার পরিবর্তে পরম উপভোগ্য বিষয়ে পরিণত হবে।

    কিছু লোক অভিযোগ করে যে তারা বছরের পর বছর সালাত আদায় করছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সালাত তাদের কোন উপকারে আসে নি! বাস্তবতা হলো – সালাত তাদেরকে উপকার করতে ব্যর্থ হয় নি, বরং তারাই ব্যর্থ হয়েছে সঠিকভাবে সালাত আদায় করতে। সালাত আপনাকে কখনোই ব্যর্থ করবে না যদি না আপনি প্রথমে সালাতকে ব্যর্থ করে দেন। ভেবে দেখুন, আপনি কি এমন একজন যার কাছে সালাত উপভোগ্য নয়, বরং বোঝা স্বরূপ? যদি তা-ই হয়, সালাতের আগে পরে নিজের কাজের প্রতি লক্ষ্য করুন। আপনি কি তাড়াহুড়া করে সালাত আদায় করতে যান? কোনরকমে সালাত আদায় করেন যাতে করে যতো দ্রুত সম্ভব সালাত থেকে উঠে চলে আসতে পারেন? ভাবুন, সালাতের মাঝে কি আপনি তড়িঘড়ি করেন? সালাম ফেরানোর পরেই চট করে উঠে পড়েন? এই ব্যাপারগুলো যদি ঘটে থাকে, তাহলে বলা যায় যে আপনি সালাত থেকে উপকৃত হচ্ছেন না।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা বাক্বারায় বলেন:

    তোমরা নামাযসমূহ ও মধ্যবর্তী নামাযের (আসর) ব্যাপারে যত্নবান হও এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও। (২:২৩৮)

    সুতরাং ধীরেসুস্থে সালাতের দিকে যান, শান্তভাবে সালাত আদায় করুন। তাহলেই আপনি শান্তি পাবেন। আপনার মন যদি সারা দিনের কাজকর্ম ও চিন্তার জগতে ঘুরপাক খায়, তাহলে একটু সময় নিন একে শান্ত করতে। আপনার অস্থির মনকে ভাবুন এক কাপ চায়ের মত, যা চামচ দিয়ে নাড়া দেওয়া হয়েছে। চামচ সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথেই এটি থেমে যায় না, একটু সময় নেয়। একইভাবে, সালাত আদায় করার আগে যা করছিলেন, সে সব কাজ বন্ধ করে একটু শান্ত হয়ে বসুন। প্রয়োজন থাকলে প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিন, তারপর সুন্দর করে ওযূ করুন। পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে নিন ও কাপড় পরিচ্ছন্ন কিনা দেখে নিন। শত হোক, আপনি কিছুক্ষণের মাঝে নিজেকে বিশ্বজগতের মালিকের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন!

    আযান দিন, যদি ইতিমধ্যে দেওয়া না হয়ে থাকে, তারপর সুন্নাহ সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ান।
    সুন্নাহ আদায়ের পর সালাতের স্থানে বসেই কিছু যিকির করুন।
    যখন আপনি নিশ্চিন্ত বোধ করবেন এবং ফরয সালাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবেন, তখন দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করুন। ধীরে ধীরে, সালাতের প্রতিটি কাজের মাঝে যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে সালাত আদায় করুন। শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে প্রশান্ত অবস্থাতেই কেবল ফরয সালাত আদায় করুন।
    সালাত শেষ হয়ে গেলেই উঠে দৌড় দিবেন না, একটু সময় নিয়ে সালাহ-পরবর্তী যিকির আদায় করুন।

    যখন আপনি আপনার সালাতে প্রচুর সময় ও শ্রম দিতে শুরু করবেন, তখনই আপনার জন্য সালাত বোঝা হবার বদলে আনন্দের ক্ষণ হয়ে দাঁড়াবে। সালাতে দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেও তখন আপনি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবেন না। আপনি এক ওয়াক্ত সালাতের পর পরবর্তী ওয়াক্তের জন্য অধীর হয়ে থাকবেন এবং ওয়াক্ত হওয়া মাত্র আদায় করে ফেলবেন। সালাতরত অবস্থায় আপনার মনে হবে যদি এ সালাত সারাজীবন ধরে চলতে থাকতো, আর কখনো শেষ না হতো! এ পর্যায়ে পৌঁছে সালাতের গুরুত্ব আপনার কাছে খাওয়া, পান করা ও যেকোনো বিনোদনের চেয়ে বেশি দামী মনে হবে, আপনি সালাত ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতেও পারবেন না। আর সে সময়েই আপনার কাছে সালাতকে মনে হবে সেই সবল সুঠাম ঘোড়ার মতো, যার পিঠে যখন ইচ্ছা তখনই চড়ে যাওয়া যায়।

  • #2
    আখি, জাগিয়ে তুলার মত। আল্লাহ কবুল করুন, আমীন।
    ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

    Comment


    • #3
      আখি, জাগিয়ে তুলার মত। আল্লাহ কবুল করুন, আমীন।

      Comment


      • #4
        ما شاء الله
        আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
        হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সবাইকে সাআদাতের জীবন এবং শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন।

        Comment

        Working...
        X