Announcement

Collapse
No announcement yet.

ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ

    ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ



    ঈমান অর্থ্ বিশ্বাস। আর এই ঈমানই আমাদের মূল জিনিস কারণ ঈমান ছাড়া কো ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না। সূরা আসরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সকল মানুষকেই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন। কিন্তু পরের আয়াতেই ৪টি গুণ সম্পন্ন মানুষদেরকে এই ক্ষতির বাইরে রেখেছেন। আর এই ৪টি গুণের প্রথমটিই হচ্ছে ঈমান।
    আর বিনষ্টকারী বলতে এমন কিছুকে বুঝায়, যার অস্তিত্বের কারণে অন্য কোনো জিনিস বিনষ্ট বা বাতিল হয়ে যায়। এ কথা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সালাত বিনষ্ট বা বাতিল হওয়ার যেমন কিছু কারণ ও বিষয় আছে, ঠিক তেমনিভাবে ঈমান বিনষ্টকারী কিছু কারণ ও বিষয় আছে। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি সালাতরত (নামাজরত) অবস্থায় সালাত বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর যে কোনো একটি, যেমন সালাতের মধ্যে শব্দ করে হাঁসলে, কিছু খেলে অথবা কিছু পান করলে তার সালাত যেমন বাতিল হয়ে যাবে, ঠিক তেমনি ঈমান বিনষ্টকারী কিছু বিষয় আছে, যার মধ্যে বান্দা পতিত হলে তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সে কাফের-মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে।
    ঈমান বিনষ্টকারী বেশ কিছু কারণ আছে। ইমাম ইবনুল কাইউম রহ. ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.সহ অন্যান্য বিদ্বান এরকম ১০টি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও কারণগুলো ১০ এর ভিতর সীমাবদ্ধ নয়। আরও বেশ কিছু ঈমান ভঙ্গের কারণ আছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই প্রবন্ধে প্রধান প্রধান ১২ টি ঈমান বিনষ্টকারী বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করতে যাচ্ছি।

    ঈমান বিনষ্টকারী প্রধান বারটি বিষয় নিম্নে দেয়া হলো:

    ১। আল্লাহর সাথে শরীক করা: আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
    অর্থ্:
    “নিশ্চয়ই তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক কর, তোমার সকল আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” [সূরা যুমার: ৬৫]
    রাসুল সা. যখন শিরক করলে ছাড় পেতেন না, তখন তাঁর উম্মাত শিরক করলে ছাড় পাবার কোন সম্ভাবনাই আর বাকি থাকল না। এই শিরক এমন এক গুনাহ, যার থেকে মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পাবার আগে তওবা করে যেতে না পারলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। আল্লাহ আরও বলেন:


    অর্থ্:
    “কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম।”
    [সুরা মায়েদা:৭২]

    আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা, সাহায্য চাওয়া, কাউকে ভয় করা, অন্যের উপর ভরসা করা, অন্যের উদ্দেশ্যে মানত-মানসা করা, অন্যকে উপকার ও অপকারের মালিক মনে করা, আল্লাহর যেমন ক্ষমতা, অন্য কারো এরূপ ক্ষমতা রয়েছে বিশ্বাস করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবাহ করা, মাজারে সিজদাহ করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আইন বিধানদাতা মানা, মানব রচিত আইনের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়া ইত্যাদি সবই শিরক; যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।

    ২। আল্লাহ এবং বান্দার মাঝখানে এমন মাধ্যম বানানো যার কাছে বান্দা সুপারিশ কামনা করে এবং তার ওপর তাওয়াক্কুল করে:
    মহান আল্লাহ বলেন: অর্থ্:
    “তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন অন্যদের ইবাদত করে, যারা না পারে তাদের ক্ষতি করতে আর না পারে কোন ভাল করতে। তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বল(হে মুহাম্মদ)! তোমরা কি আল্লাহকে আসমান ও জমিনের মধ্যকার ঐ জিনিসের ব্যাপারে সংবাদ দিতে চাও, যা তিনি জানেন না। তারা যে সমস্ত শির্ক করছে আল্লাহ পাক এর থেকে পবিত্র ও উচ্চ।”
    [সূরা ইউনুস:18]

    এটা হচ্ছে আউলিয়া এবং নেককার লোকদের কবরে যারা যায়, তাদের অধিকাংশের অবস্থা। তারা সেখানে গিয়ে কবরবাসীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ইবাদতে লিপ্ত হয়। কবরবাসী আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবে এ বিশ্বাসে তাদের কাছে দোয়া করে। তাদের উদ্দেশ্যে মানত করে। পশু যবাই করে। তাদের কাছে সাহায্য কামনা করে এবং কবরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। এসব কাজ কুফর ও শিরক যা কিনা ঈমান ভঙ্গের কারণ।

    মক্কার কাফিররা নবী-রাসুল ও ওলী-আউলিয়াদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করে তাদের মূর্তি বানিয়ে তাদের পূঁজা করত। আর তারা বলত:
    অর্থ্: “আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।” [সুরা যুমার:৩]

    আর এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা বলেন:
    অর্থ্: “নিশ্চয়ই আল্লাহ হেদাআত করেন না তাকে যে মিথ্যাবাদী কট্টর কাফের।”
    [সূরা যুমার:৩]
    এই আয়াতে আল্লাহ তাদের শুধু কাফির না, কট্টরপন্থী কাফির বলেছেন। অথচ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করে, শুধুমাত্র এ জন্যই করে যাতে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে। কিন্তু এই কারণেই তারা আল্লাহর নিকটবর্তী না হয়ে বরং মুশরিক ও কট্টরপন্থী কাফিরে পরিণত হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাসূলগণ আল্লাহ ও বান্দাদের মধ্যে মাধ্যম বটে, কিন্তু এর অর্থ্ শুধু সংবাদ পৌঁছানের মাধ্যম।

    ৩। মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করা অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের কুফরী মতবাদতকে সঠিক মনে করা: মহান আল্লাহ বলেন:
    অর্থ্: “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” [আল ইমরান: ১৯]
    অন্যত্র তিনি বলেন,
    অর্থ্: “কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায়, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” [সুরা আলে ইমরান:৮৫]

    এখানে সন্দেহ দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে, মুসলিম উম্মাহ যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করে; তার কুফরীর ব্যাপারে কোনো মুসলিমের সন্দেহ পোষণ করা।

    যেমন ইহুদী, নাসারা, মাজুসি (অগ্নি পুজারি), বৌদ্ধ, জৈন, মূর্তি পূজারী হিন্দু, পৌত্তলিকদের শিরক ও কুফরীর ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর কোনো দ্বিমত নেই। তাই কোনো মুসলমান এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। করলে সেও ইজমার দলীল দ্বারা কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
    এ দৃষ্টিকোন থেকে জাহেলি যুগের মুশরিক যারা নিজেদের মুশরিক হওয়ার ব্যাপারে নিজেরাই স্বাক্ষ্য প্রদান করেছিলো, আর বর্তমান যুগের মুশরিক যারা ইসলাম ও ঈমানের দাবী করে অথচ আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হককে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করে, এই দুই ধরণের মুশরিকদের মধ্যে কোন পার্থ্ক্য নেই। আল্লাহ বলেন: অর্থ্: হে ঈমানদারগণ নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র।” [সূরা তওবা: ২৮]
    আজকাল অনেক নামধারী মুসলিমদের দেখা যায়, ইসলামের পাশাপাশি বিধর্মীদের ধর্ম্ বিশ্বাসকেও সঠিক মনে করে থাকে আর বলে, যে যে ধর্ম্ আছে সে সে ধর্মে থেকে জান্নাতে যেতে পারবে। এই আকীদাহ রাখা মাত্রই একজন মুসলিম দাবীদার কাফিরে পরিণত হয়ে যাবে। নেতা-নেত্রীদের অনেককেই দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় সমাবেশে গিয়ে বিধর্মীদের আকীদার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়ে থাকে। এদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই; পায়ুপথ থেকে বায়ূ বের হওয়ার সাথে সাথে যেমন অজু ভেঙ্গে যায়, ঠিক তেমনি এইরূপ কুফরী আকীদা করার সাথে সাথে ঈমান ভেঙ্গে যায়।
    ৪। রাসূল সা. কর্তৃক আনীত দ্বীন, অথবা (পূণ্য কাজের) সওয়াব অথবা (পাপের জন্য) শাস্তি এবং দ্বীনের যে কোনো বিষয়ে রং-তামাশা, বিদ্রুপ করা:
    আল্লাহ তায়ালা বলেন: অর্থ্: “আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা কোন ওজর পেশ করো না। নিশ্চয় ঈমানের পর তোমরা কুফরি করেছ।।” [সূরা তাওবা: 65-66]

    আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে অনেক নাট্যানুষ্ঠানে ও সিনেমায় খারাপ চরিত্রের অভিনয়ের জন্যে দাঁড়ি, টুপি ও ইসলামী পোষাককে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আল-কুরআনের কোন শব্দ বা আয়াত, কোন ঘটনা প্রসঙ্গে বিশেষ কোনো নবীর নাম, কেউ কেউ এমন বিকৃতভাবে উচ্চারণ করেন যাতে বিদ্রুপ বুঝা যায়। এ ধরনের বিদ্রুপ উদ্দেশ্যমূলক হোক বা হাসি ঠাট্টামূলক হোক, সবই কুফুরী। আবার রাসুল সা. এর ব্যাঙ্গ কার্টুন প্রতিযোগিতা করা হয়। যা শুধু ঈমান ধ্বংসের কারণই নয় বরং এই কাজের কারণে তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

    আল্লাহর রাসূল সা. এর অপমানকারীরা, ব্যাঙ্গকারীরা, বিদ্রুপকারীরা অতীতেও তওবা ও ক্ষমার সুযোগ পায়নি, ইনশাআল্লাহ আজও পাবে না।


    আউস গোত্রের সাহাবী কর্তৃক কাব বিন আশরাফকে হত্যা, খাযরায গোত্রের সাহাবী কর্তৃক আবু রাফেকে হত্যা, কাবা ঘরের গিলাফ ধরে থাকা ইবনে খতালকে হত্যা এবং যে সকল মহিলা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে খারাপ কবিতা পড়েছিল তারা দাসী এবং মহিলা হওয়া সত্বেও তাদেরকে ক্ষমা না করে হত্যা করার ঘটনাগুলো কিয়ামত পর্য্ন্ত আমাদের জন্য দলিল হয়ে থাকবে।

    অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
    “আল্লাহ এই কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের উপর আদেশ করছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর কোন আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে ততক্ষণ পর্য্ন্ত বসবে না যতক্ষণ পর্য্ন্ত তারা অন্য আলোচনায় লিপ্ত হয়। (এমনটি করলে) তোমরা তো তাদের মতই হয়ে গেলে। আল্লাহ তা‘আলা সব কাফির ও মুনাফিকদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন।” [সূরা নিসা:140]


    আবু বকর সিদ্দীক
    মাসিক: আত্-তাহরীদ জুন/২০১২
    [বাকি ৮টি ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে পোষ্ট করা হবে]
    Last edited by imanupdate; 11-20-2015, 09:59 PM.

  • #2
    মাশাল্লাহ আখি imanupdate। পরবর্তি অংশটুকু এই পোস্টেই রিপ্লে আকারে দিলে পোস্ট পুর্ন হবে ইনশাআল্লাহ।
    জাঝাকাল্লাহ
    কাফেলা এগিয়ে চলছে আর কুকুরেরা ঘেঊ ঘেঊ করে চলছে...

    Comment


    • #3
      ঈমান ভঙ্গের কারণ বাকি ৮টি

      ৫। যাদু: যাদুর মধ্যে রয়েছে (যাদু মন্ত্র দ্বরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিছিন্নতা সৃষ্টি করা; উভয়ের মধ্যে পরষ্পরের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করা)। তাছাড়া “তাওলার” আশ্রয় নেয়া । আর তাওলা হচ্ছে (যাদু মন্ত্রের সাহায্যে) স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে বশীভূতকরণ, যাতে স্ত্রীর ভালবাসায় স্বামী পাগল প্রায় হয়ে থাকে। এটা শিরক হওয়ার কারণ হচ্ছে, এর দ্বারা বিপদাপদ দূর করা এবং উপকার বা কল্যাণ সাধনের বিষয়টিকে গাইরুল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা হয়। এটা নিঃসন্দেহে কুফরী। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
      অর্থ্: “তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফির হয়ো না” [সূরা বাক্বারা:102-103]

      ৬। মুসলিমদের বিরূদ্ধে মুশরিকদের পক্ষ নেয়া ও সহযোগিতা করা:
      আল্লাহ তায়ালা বলেন:
      অর্থ্: “হে মুমিনগণ! ইহুদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয়ই তাদেরই একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।” [সুরা মায়েদা: আয়াত 51]
      বলার অপেক্ষা রাখে না সৌদি আরবসহ সারা বিশ্বের মুসলিম নামধারী শাসকরা আজ এতে লিপ্ত। চারদিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর যেই প্রান্তেই একদল মর্দে মুজাহিদ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করার জন্য দাঁড়াচ্ছে, তাঁদেরকে এই মুসলিম নামধারী তাগুত নেতারা অমুসলিম কাফের তাগুত শাসকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর মুসলিম নামধারী অনেকে ইহুদী-খ্রিস্টান, তাগুত শাসকদের সাথে মুখে মুখ আর সুরে সুর মিলিয়ে মর্দে মুজাহিদদের জঙ্গি, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নামে নামকরণ করছে।
      আর এই মুসলিম নামধারী তাগুত শাসকেরা নিজেদের ভূমিকে খুলে দিয়েছে এই ইহুদি খ্রিস্টান শাসকদের জন্য এবং নিজেদের সেনাবাহিনী দ্বারা তাদের অবিরাম মদদ দিয়ে চলছে। এমনকি এই মর্দে মুজাহিদদের অবর্ত্মানে তাদের বিবি বাচ্চাদেরও তুলে দিচ্ছে এই বিধর্মী তাগুত শাসকদের হাতে।

      ৭। মূর্তি, প্রতিমা, মানব রচিত সংবিধান ইত্যাদিসহ অন্যান্য তাগুতকে সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধা করার জন্য শপথ করা: অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের স্থান হবে ধ্যান ধারণা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে। দ্বীনের প্রতি ভালবাসা এবং গাইরুল্লাহর প্রতি ক্রোধ ও ঘৃণার মাধ্যমে। দ্বীনের প্রকাশ হবে মুখে স্বীকৃতির মাধ্যমে এবং কুফরী কথা পরিত্যাগের মাধ্যমে। এমনিভাবে দ্বীনের স্থান হবে অঙ্গ-প্রতঙ্গে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো কার্য্কর করা এবং যাবতীয় কুফরী কর্ম্ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে।
      এ তিনটি বিষয়ের কোন একটি বিষয়ে যদি বান্দা ভিন্নমত অবলম্বন করে তাহলে সে কুফরী করলো এবং দ্বীন পরিত্যাগ করলো বলে বিবেচিত হবে। [আদদুরার আস সানিয়া: 8/78]
      সুতরাং যে ব্যক্তি মূর্তি প্রতিমা বা মানব রচিত সংবিধানকে সম্মান দিল অথবা এগুলো রক্ষার জন্য শপথ করল, সে মূলত: তাগুতকে স্বীকার করে নিল। আর তাগুতকে অস্বীকার করা ব্যতিত কারো ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না।

      ৮। মুহাব্বত ও ভালবাসার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অথবা কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করাঃ আল্লাহ বলেনঃ
      অর্থ্: আর মানুষের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে সমকক্ষ দাঁড় করায় এবং তাদের প্রতি তেমনি মুহব্বত বা ভালবাসা পোষণ করে, যেমন ভালবাসা উচিৎ একমাত্র আল্লাহকে। কিন্তু যারা ঈমানদার আল্লাহর প্রতি তাঁদের ভালবাসা সবচেয়ে বেশী।” [সুলা বাক্বারা:165]
      এই আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য গাইরুল্লাহকে ভালবাসা কাফেরদের স্বভাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বুঝা গেল গাইরুল্লাহকে ভালবাসা কুফরী কাজ; যা ঈমান ভঙ্গের একটি কারণ।

      ৯। যে ব্যক্তি মনে করে যে, রাসুল সা. এর নিয়ে আসা বিধানের চেয়ে অন্য বিধান পরিপূর্ণ্ বা উত্তমঃ মহান আল্লাহ বলেন:
      অর্থ্: “না, (হে মুহাম্মদ) তোমার রবের কসম! তারা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক হিসেবে মেনে নিবে। অত:পর তুমি যাই ফয়সালা করবে, সে ব্যাপারে তারা নিজেদের মনে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করবে না বরং ফয়সালার সামনে নিজেদেরকে সম্পূর্ন্ রূপে সমর্প্ণ করবে।” [সুরা নিসা: 65]
      অর্থ্: “তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে আমি আজ পরিপূর্ণ্ করে দিলাম ও আমি সম্পূর্ণ করলাম তোমাদের উপর আমার নিয়ামত এবং আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে কবুল করলাম।”[সূরা মায়েদা: 3]
      অতএব যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস করবে যে, রাসুল সা. এর হিদায়াতের চেয়ে অপর কারো হিদায়াত অধিক পূর্ণাঙ্গ অথবা রাসুল সা. এর দেয়া বিধি-বিধানের চেয়ে অপর কারো বিধি-বিধান অধিক সুন্দর। তবে সে ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
      আজকাল লক্ষ লক্ষ মুসলিম নামধারী ব্যক্তি এ ধরনের বিশ্বাসে লিপ্ত। কেউ রাসুল সা. এর রেখে যাওয়া রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থ্নীতি, রাষ্ট্রনীতি ও আইন বিধানের চেয়ে অন্যদের আবিষ্কৃত এ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে অধিক সুন্দর মনে করছে। কেউ আবার রাসুল সা.-এর হিদায়াতের চেয়ে বিভিন্ন ভন্ড, ভ্রান্ত পীর-ফকীরদের তরীকার হিদায়াতরূপী বিদয়াতকে অধিক পূর্ণাঙ্গ মনে করছে।
      জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, পূঁজিবাদ, ধর্ম্ নিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র সুফীবাদ ইত্যাদির প্রেমিকরা কি প্রকৃত অর্থে মুসলিম থাকতে পারে?

      ১০। যে ব্যক্তি রাসুল সা. এর আনীত কোন বিষয়কে অপছন্দ করে: যে ব্যক্তি রাসুল সা. এর আনীত কোন জিনিসকে ঘৃণা করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। যদিও বাহ্যিকভাবে সে এর উপর আমল করে। ইরশাদ হচ্ছে-
      অর্থ্: “এটা এজন্য যে, এরা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তাকে ঘৃণা করে, ফলে আল্লাহ তাদের আমলকে বাতিল করে দিয়েছেন।”[সুরা মুহাম্মদ: 09]
      আজকাল অনেক নামধারী মুসলিমকেই পর্দা, দাঁড়ি, ইসলামী রাজনীতি, ইসলামী শিক্ষা, আযান ইত্যাদিকে ঘৃণা করতে দেখা যায়। এ ধারাটি এদেরে উপর প্রযোজ্য। আর মুসলমান নামধারী কিছু মুরতাদ-কাফের আছে আমাদের সমাজে। তাদেরই একজন বলেছেন, আযান শুনলে আমার বেশ্যার আওয়াজের কথা মনে পড়ে। এদের উপর মুরতাদের হত্যা বিধান কার্য্কর করা খুবই জরুরী।

      ১১। কোন কোন মানুষকে মুহাম্মদ সা. এর শরীআতের উর্দ্ধে মনে করা: ঐ ব্যক্তি কাফের, যে মনে করে যে, কিছু মানুষ চেষ্ট-সাধনায় এমন পর্যায়ে উপনীত হতে পারে যে, তখন তার আর রাসুল সা. এর শরীয়ত মান্য করার প্রয়োজন থাকে না। এ ব্যাপারে তারা মুসা (আ.) ও খাজির (আ.) এর ঘটনাকে তাদের এ ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে।
      অথচ সে ঘটনার সাথে তাদের এ ধারনার আদৌ কোন সামাঞ্জস্য নেই। কেননা, প্রথমত খাজির (আ.); মুসা (আ.) এর সম্প্রদায় ও তাঁর (মুসার) সীমানার বাইরে ছিলেন। দ্বিতীয়ত: বিশুদ্ধ মতে খাজির (আ.) সৃষ্টির ভাঙ্গা-গড়া বিষয়ক নবী ছিলেন। তাই তিনি মুসা (আ.) এর শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। অনেক ভ্রান্ত বাতেনী মারেফতপন্থী ব্যক্তিবর্গ্ নিজেদের রাসুল সা. এর শরীয়ার বাইরে মনে করে। তারা বলে, আমরা তো হাক্বীকতের মঞ্জিলে পৌছে গেছি। অতএব সাধারণের জন্যে উপযোগী শরীয়াহ আমাদের কোন প্রয়োজন নাই। অথচ রাসুল সা. বলেন:
      অর্থ্: “এ উম্মাতের কোন ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান যদি আমার কথা শোনে, অত:পর আমার উপর ঈমান না আনে, তবে সে জাহান্নমীদের অন্তর্ভূক্ত।” [সহীহ মুসলিম:403]
      আল্লাহ তাঁর সর্ব্ শ্রেষ্ট ওলী ও তাঁর রাসূল সা. কে বলেন:
      অর্থ্: “আর তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর মৃত্যু আসা পর্য্ন্ত।” [সূরা হিজর:99]

      ১২। আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়া: আল্লাহর বাণী: অর্থ্: “আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে।” [সুরা কাহাফ: 57]
      অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
      অর্থ্: যারা কাফের তারা ভীতি প্রদর্শিত বিষয়সমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সুরা আহকাফ:3]
      আমাদের দেশে এমন লোকের অভাব নেই। অনেকে আছেন কয়েকটা ডিগ্রী লাভ করেও ওজুটা ঠিকমত করতে পারে না। জিজ্ঞেসা করলে উত্তর দেন ফজরের সালাত বার রাকাত।
      অনেকে পূজামন্ডপে বা আশ্রমে গিয়ে সুপ্রসন্ন ও সন্তুষ্টচিত্তে ওম্ শান্তি, ওম্ শান্তি –অভিবাদন, শঙ্খ ধ্বনির অভিনন্দন গ্রহণ করে। পৌত্তলিকদের হাতে, নিজের কপালে সিঁদুর-তিলক লাগালে যে কী হয়, সে মাসআলাটুকুও তারা জানে না।
      তিনি কি তখন আল্লাহর বান্দা ও রাসূলের উম্মাত থাকনে না কি রাম-দাস হয়ে যান সে পার্থ্ক্যটুকুও জানার সৌভাগ্য ও জ্ঞান তার নেই।
      আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে্ জানার এ অনাগ্রহ ও অনীহাকেই সর্ব্ শেষ এ ধারায় সর্ব্ সম্মতভাবে ওলামায়ে ইসলাম কুফুর বলেছেন। এক কথায় আল্লাহর দ্বীন শেখা থেকে বিরত থাকা, দ্বীনি বিধান অনুযায়ী আমল না করা ও দ্বীন কায়েম করার আন্দোলন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ থেকে বিরত থাকাই হল দ্বীন থেকে বিমুখ থাকা। যারা দ্বীন থেখে বিমুখ থাকবে, দ্বীন শিক্ষা করবে না, দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জান মাল বাজি রাখবে না বা জিহাদ ও কিতালকে এড়িয়ে চলবে, তাদের মুসলিম দাবী করার অধিকার নেই। তাদের পুণরায় ঈমান নবায়ন করতে হবে।

      হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার আল হাফিয নামের উসীলায় ঈমান ধ্বংসকারী আকীদাহ, কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন এবং আপনার আর রহমান, আর রাহীম ও আল গাফুর নামের উসীলায় আমাদের ভূলগুলো ক্ষমা করে দিন। আমীন!

      Last edited by imanupdate; 11-20-2015, 10:02 PM.

      Comment


      • #4
        ঈমান ভঙ্গের কারণ সমুহের আরো দীর্ঘ কোন আর্টিকেল বা কোন হযরতের বয়ান পাওয়া যাবে কি? ভাই। যাতে ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে উদাহরণসহ উল্লেখ করা থাকবে যা সহজেই নিজে বুঝে অন্যকেও স্পষ্টভাবে বুঝানো সম্ভব হবে।

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ, খুবই উপকারী পোস্ট।
          আসলেই ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ নিয়ে আরো বিশদভাবে দাওয়াহ এর কাজ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
          আল্লাহ তা‘আলা সকলকে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment


          • #6
            "হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার আল হাফিয নামের উসীলায় ঈমান ধ্বংসকারী আকীদাহ, কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন এবং আপনার আর রহমান, আর রাহীম ও আল গাফুর নামের উসীলায় আমাদের ভূলগুলো ক্ষমা করে দিন। আমীন! "
            আমাদের সকলকে হেফাজত করুন
            فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِيَآءَ الشَّيْطٰنِ

            Comment

            Working...
            X