Announcement

Collapse
No announcement yet.

কাফের জনসাধারণের উপর আক্রমনের বিধান

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কাফের জনসাধারণের উপর আক্রমনের বিধান

    সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য, যিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই, তিনি অমুখাপেক্ষী। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তারঁ পরিবারবর্গ, সংগি-সাথী, বিশ্বের সকল প্রান্তে থাকা মুমিন-মুসলিমদের উপর।

    বর্তমান সময়ের অত্যন্ত আলোচিত একটি প্রসঙ্গ হচ্ছে, "কুফফারদের জনসাধারণের উপর হামলা।" অনেকে এর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করছেন, আবার অনেকেই এর তীব্র বিরোধিতা ও সমালোচনা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, শরীয়াতে এ ধরণের হামলার কোনো বৈধতা আছে না নেই? অত্র লেখনীতে এই বিষয়টি নিয়ে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফ আস সালিহীনের বক্তব্যের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে।

    এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পূর্বে আমাদের জানতে হবে কোন ধরণের কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ বা যুদ্ধ করা বৈধ, আর কাদের বিরুদ্ধে বৈধ নয়। নিম্নে এই বিষয়ে আলোচনা পেশ করা হল।

    কাফেরদের ৪টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথাঃ

    প্রথম শ্রেণীঃ একজন কাফের যার সাথে মুসলিমদের চুক্তি আছে
    তাদের মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ স্থগিত রাখার ব্যাপারে শান্তিচুক্তি আছে। যতক্ষণ তারা চুক্তির সাথে অংগীকারবদ্ধ, শরীআহ তাদের অর্থ ও রক্তকে যে কোনো ধরণের লক্ষ্য বানাতে নিষেধ করে।

    দ্বিতীয় শ্রেণীঃ জিম্মি
    জিম্মি হচ্ছে এমন একজন কাফের, যে ইসলামের বিধান ও নিরাপত্তার অধীনে বাস করে। তারা মুসলিমদের জিজিয়া দেয়। যেহেতু তারা তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অনুগত ও জিজিয়া দেয়, তাই শরীআহ তাদের রক্ত ও সম্পদে যে কোনো ধরণের আক্রমণ করতে নিষেধ করে।

    তৃতীয় শ্রেনীঃ নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফের
    এরা হচ্ছে সেসব কাফের যারা মুসলিম ভূমিতে বসবাস না করার ইচ্ছায় প্রবেশ করে এবং একজন মুসলিম দ্বারা নিজের ও সম্পদের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত। যতক্ষণ না পর্যন্ত সে নিজের মুক্তি প্রত্যাহার করে অথবা নিরাপদ অন্য কোনো পরিবেশে না যাচ্ছে, ততক্ষণ শরীআহ তাদের রক্ত ও সম্পদে যে কোনো ধরণের আক্রমণ করতে নিষেধ করে।

    যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "আর মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তুমি তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও। তা এ জন্য যে, তারা অজ্ঞ লোক।" [আত-তাওবাহ (৯): ৬]

    অর্থ্যাৎ যদি কোনো অমুসলিম দেশ থেকে কোনো দূত বা ব্যবসায়ী বা সন্ধি করতে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তি কিংবা জিজিয়া আনয়নকারী ব্যক্তি কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করে এবং ইমাম বা নায়েবে ইমাম তাকে নিরাপত্তা প্রদান করে তবে যে পর্যন্ত সে ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থান করবে এবং স্বদেশে না পৌঁছবে, সে পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হারাম। কিন্তু আলেমগণ বলেন যে, এরুপ ব্যক্তিকে বছর ধরে বাস করতে দেয়া যাবেনা। বড়জোর তাকে চারমাস পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করার অধিকার দেয়া যেতে পারে। [তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা তাওবাঃ ৬ এর তাফসীর দ্রষ্টব্য]

    চতুর্থ শ্রেণীঃ যুদ্ধরত কাফের
    এরা হল তারা যাদের মুসলিমদের সাথে কোনো চুক্তি বা নিরাপত্তার অংগীকার নেই। এরা উপরোক্ত তিন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত না, চাই তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুক বা না করুক। "যোদ্ধা" শব্দটি তাদের সাথে একদম অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে দ্বিধাদ্বন্দের উদ্ভব হয় যে, যুদ্ধরত হল তারা, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণকারি। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। সত্য হল, এ ধরণের কাফের, যাদের মুসলিমদের সাথে কোনো চুক্তি বা নিরাপত্তার অংগীকার নেই, তাদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা যখন চাইবে তখন লড়াই করা অনুমোদনযোগ্য। আর এটাই হল আক্রমণাত্বক জিহাদ।

    আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে, আক্রমণাত্বক জিহাদ হবে সেইসব কাফেরদের বিরুদ্ধে, যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, যেখানেই তারা থাকুক। এমনকি যদি তারা মুসলিমদের প্রতি কোমলও হয় ও যুদ্ধ শুরু নাও করে।

    এ ব্যাপারে দলিল হচ্ছে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহঃ
    "তোমরা যে মুশরিকদের সাথে সন্ধি স্থাপন করেছিলে, আল্লাহ ও রসূলের পক্ষ হতে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হল।

    সুতরাং (হে মুশরিকরা!) তোমরা দেশে চার মাসকাল (নিরাপদে) চলাফেরা কর। আর জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করতে পারবে না এবং আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।

    মহান হজ্জের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এ এক ঘোষণা যে, আল্লাহর সাথে অংশীবাদীদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রসূলের সাথেও নয়। যদি তওবা কর, তাহলে তোমাদের কল্যাণ হবে, আর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করতে পারবে না। আর অবিশ্বাসীদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও।

    তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকেও সাহায্য করেনি, তোমরা তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন কর। নিশ্চয় আল্লাহ সাবধানীদেরকে ভালোবাসেন।

    অতঃপর নিষিদ্ধ মাসগুলি অতিবাহিত হলে অংশীবাদীদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে বন্দী কর, অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ সলাত পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" [সূরা আত-তাওবাহ (৯): ১-৫]

    ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, "যাদের সাথে চুক্তি হয়েছিল, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য চার মাসের সীমা নির্ধারণ করে দেন। আর যাদের সাথে চুক্তি ছিল না, তাদের জন্য হারাম মাসগুলো অতিক্রান্ত হওয়াকে সীমা নির্ধারণ করে দেন। অর্থ্যাৎ ১০ই জিলহজ্ব হতে মুহররম মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত ৫০ দিন। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়, যে পর্যন্ত না তারা ইসলাম গ্রহণ করে। আর যাদের সাথে চুক্তি আছে তারা ১০ই জিলহজ্ব ঘোষনার দিন থেকে ২০শে রবিউল আখির পর্যন্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। অতঃপর ইচ্ছা করলে মুকাবিলা করবে।" [তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা তাওবাঃ ১ এর তাফসীর দ্রষ্টব্য]

    এখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, যাদের সাথে মুসলিমরা চুক্তিবদ্ধ থাকছে না, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধের আদেশ দিচ্ছেন। এখানে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করাকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শর্ত করা হয়নি।

    আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন:
    তোমরা যুদ্ধ করো আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং সত্য দ্বীন(ধর্ম) অনুসরণ করে না, যতক্ষণ না নত হয়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। [সূরা তাওবাহ (৯): ২৯]

    এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বিখ্যাত 'আল-উম্ম কিতাবে বলেন,
    “মূল ফরজ হলো, মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে অথবা জিজিয়া দিয়ে বশ্যতা স্বীকার করে থাকে।”

    ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) আরও বলেন:
    বরকতময় আল্লাহ তাআলা কাফেরের রক্ত ও মাল বৈধ করে দিয়েছেন, তবে যদি সে জিযিয়া প্রদান করে অথবা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা চুক্তিতে থাকে তাহলে নয়। [আল-উম্ম - ১/২৬৪]

    ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন,
    মুসলিম ব্যক্তি যখন এমন কোন কাফেরের সাথে সাক্ষাত করে যার সাথে কোন চুক্তি নেই, তখন তাকে হত্যা করা জায়েজ। [তাফসীরে কুরতুবী-৫/৩৩৮]

    ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
    ইবনে জারীর (রহঃ) এই ব্যাপারে ইজমা বর্ননা করেছেন যে, মুশরিকদেরকে হত্যা করা জায়েজ, যদি তাঁর সাথে ‘আমান’ বা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি না থাকে। যদিও সে বাইতুল হারাম বা বাইতুল মাকদিসে (পূন্যময় স্থানে) গমনরত অবস্থায় থাকে। [তাফসীরে ইবনে কাছীর-২/৬]

    ইমাম তাবারী (রহঃ) বলেনঃ
    “এব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, কোনো মুশরিক যদি তাঁর গর্দানে, দুই বাহুতে দাড়িতে হারাম শরিফের সমস্ত লতা-পাতা লটকিয়ে রাখে তার যদি ‘আমান’ বা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি না থাকে তাহলে তাকে হত্যা থেকে ঐ কাজটি নিরাপত্তা দিবে না।“ [তাফসীরে তাবারী-৬/৬১]

    ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
    যেসকল কাফেরদের সন্ধিচুক্তি, আমান বা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা চুক্তি নেই, তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে কোন জিম্মাদারী নেই। চাই সে যেকোন ধর্মেরই হৌক না কেন। [রওজাতুত তালেবীন- ৯/২৫৯]

    ইবনু মুফলিহ (রহঃ) বলেন:
    কাফের এর সাথে যদি কোন ‘আমান’ না থাকে তাহলে তাঁকে হত্যা করলে কোন ধরনের দিয়ত বা কাফফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা সাধারণভাবে তাঁর রক্ত শুকুরের রক্তের ন্যায় বৈধ। [মিবদা’-৮/২৬৩]

    অতএব, যদি এইরকম কাফেরদের ব্যাপারে যদি এই নিয়ম হয়, তাহলে সেইসব কাফেরদের ব্যাপারে কেমন আচরণ হবে, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছে এবং মুসলিমদের ভূমি দখল করে রেখেছে? অবশ্যই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অগ্রাধিকার পাবে।

    যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তবে সীমালংঘন করো না, নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।" [আল-বাকারাহ ২: ১৯০]

    এখন প্রশ্ন হল, এই চতুর্থ শ্রেণী তথা হারবি বা যুদ্ধরত কাফেরদের জনসাধারণের উপর হামলা করা বৈধ কি না?

    এই প্রশ্নের উত্তর হল, তাদের নারী, শিশু ও বৃদ্ধ, যারা যুদ্ধ করতে সমর্থ নয়, তাদের উপর হামলা করা স্বাভাবিকভাবে বৈধ নয়।

    যেমন, আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক যুদ্ধে একজন নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। তখন তিনি নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), কিতাবুল জিহাদ ওয়াস-সিয়ার, হাদিসঃ ৪৩৯৭-৪৩৯৮]

    রাবাহ ইবনে রাবীহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “আমরা কোনো এক যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তিনি কিছু লোককে একস্থানে একত্রিত হতে দেখেন। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে পাঠান এবং বলেনঃ দেখ তো, এরা কেন সেখানে একত্রিত হয়েছে? তখন সে ব্যক্তি ফিরে এসে বললঃ তারা জনৈক নিহত মহিলার নিকট একত্রিত হয়েছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এ মহিলা তো কারো সাথে যুদ্ধ করতে আসেনি (একে মারা হল কেন?)। তখন এক ব্যক্তি বললঃ অগ্রবর্তী সেনাদলের নেতা হলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বললেনঃ খালিদকে বল, মহিলা ও মজুরদের যেন হত্যা না করে। [আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ জিহাদ, হাদিসঃ ২৬৬০]

    ইবনে আব্বাস (রাঃ), উমার বিন আব্দুল আজিজ (রহঃ), মুকাতিল বিন হিব্বান (রাঃ) প্রমুখ মনীষীগণ "তবে সীমালংঘন করো না......"(আল-বাকারাহ ২: ১৯০) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, শত্রুর আঙ্গিক বিকৃতি ঘটায়ো না, শিশু এবং এমন বৃদ্ধদের হত্যা করো না, যাদের যুদ্ধ করার কোনো যোগ্যতা নেই এবং যুদ্ধে কোন প্রকার অংশগ্রহণও করেনি। আর সংসার ত্যাগীদেরকেও হত্যা কোরো না। অনুরূপ গাছ-পালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং কোন অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু-হত্যা করা ইত্যাদিও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে, যা থেকে বিরত থাকতে হবে। [ বিস্তারিত দ্রষ্টব্যঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, আল-বাকারাহ ২: ১৯০ এর তাফসীর ]

    তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে তাদের নারী, শিশু, বৃদ্ধ সংসার ত্যাগীরাও আক্রমণের শিকার হওয়ার যোগ্য হতে পারে।

    () সাহায্য সমর্থনঃ
    যদি কোনো নারী, শিশু বা বৃদ্ধ যুদ্ধে সরাসরি সাহায্য করে অথবা অন্তত যদি সমর্থনও দেয়, তাহলে তারা একই দোষভুক্ত হয়ে যায়। এই শ্রেণীর লোকেরা নিরীহ বা বেসামরিক হিসেবে সাব্যস্ত হবে না বরং তারা 'রিদা' অর্থ্যাৎ তারা সমর্থক ও সাহায্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত যোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবে।

    যেমন, সালেহ (আঃ) এর সামূদ জাতির দাবি অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী সালেহ (আঃ) কে একটি উটের মৌজিজা প্রদান করেছিলেন, যেই উটটি একটি পাথরের ভূমি থেকে বের হয়ে এসেছিল। এতবড় নিদর্শন দেখার পরেও সামূদ জাতি নবী সালেহ (আঃ) কে অস্বীকার করে বসল। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এই উটের কোনো ক্ষতি না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কওমে সামূদের এক ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত সেই উটটিকে হত্যা করে ফেলল এবং এর ফলস্বরুপ আল্লাহ তায়ালা হযরত সালেহ (আঃ) ও তার অনুসারীগণ ব্যতিত পুরো কওমকেই আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।
    এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, যদিও উটটির হত্যাকারি ছিল একজন, কিন্তু উটটির এই হত্যাকান্ডে পুরো সম্প্রদায়ের সমর্থন ছিল। হযরত কাতাদা (রহঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি ওকে (উটটিকে) হত্যা করেছিল, তার কাছে সবাই গিয়েছিল। এমনকি স্ত্রীলোকেরাও এবং বালকেরাও।" যার কারণে তারা সকলেই আল্লাহর আজাবের ভাগিদার হয়ে গিয়েছিল এবং আল্লাহ তায়ালা আজাব দিয়ে পুরো সামূদ জাতিকেই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। [ বিস্তারিত দ্রষ্টব্যঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা আ'রাফ ৭ঃ ৭৩-৭৮ এবং আশ-শামস ৯১: ১১-১৫ এর তাফসীর ]

    সুতরাং আজকেও যারা মুসলিম হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণ করছে (যেমন বিভিন্ন দেশের সরকার ও সেনাবাহিনী), তারা যেমন হত্যার উপযুক্ত, ঠিক একইভাবে, যারা তাদেরকে তাদের এই হত্যাযজ্ঞে সমর্থন করছে, তারাও হত্যার উপযুক্ত।

    ইবন আব্দুল বার (রহঃ) বলেছেনঃ "নারী ও বৃদ্ধদের মধ্যে যারা যুদ্ধ করছে তাদের হত্যার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম কোনো মতপার্থক্য করেননি। আর সেই সাথে যেসব শিশু যুদ্ধ করতে সক্ষম আর যুদ্ধ করছে, তাদেরকেও হত্যা করতে হবে।" [আল-ইস্তিসকার, ১৪/৭৪]

    অন্যত্র তিনি বলেছেনঃ "তারা (ওলামায়ে কেরাম) এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুরাইদ ইবন আস-সুম্মা কে হুনায়ুনের দিন হত্যা করেছিলেন কারণ সে ছিল যুদ্ধের একজন পরামর্শদাতা ও কৌশল নির্ধারক। সুতরাং বৃদ্ধদের মধ্যে এরকম যে কেউই থাক না কেন, সকলের মতে তাকে হত্যা করা হবে।" [আত-তামহিদ, ১৬/১৪২]

    () আলাদা করতে সক্ষম না হওয়াঃ
    এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন চলে আসে তা হল, কুফফারদের মধ্যে সকলেই তো আর এইসব হত্যাযজ্ঞে সমর্থন করে না। তাহলে যারা সমর্থন করে না, তারাও কি হত্যার যোগ্য? এর জবাব নিম্নে প্রদান করা হল।

    যদি কুফফারদের এই দুই দলের মধ্যে আলাদা করা সম্ভব না হয়, কিন্তু কুফফারদের উপর আক্রমণ করা মুসলিমদের বৃহৎ স্বার্থের জন্য জরুরি হয়, তাহলে তাদের উপর হামলা করা বৈধ।

    সা'ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি অশ্বারোহীদল রাতের আঁধারে আক্রমণ চালায় এবং তাতে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের আক্রান্ত করে (তবে কি হবে)? তিনি বললেনঃ তারাও তাদের পিতাদের অন্তর্গত। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), কিতাবুল জিহাদ ওয়াস-সিয়ার, হাদিসঃ ৪৩৯৯-৪৪০১]

    ইমাম মুসলিম (রহঃ) এই হাদিস যে অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন তার শিরোনাম দিয়েছেন এভাবেঃ "রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই।"

    ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেছেনঃ "'তারাও তাদের পিতাদের অন্তর্ভুক্ত'-অর্থ্যাৎ এতে কোনো সমস্যা নেই কারণ তাদের পিতাদের ব্যাপারে হুকুম তাদের ওপর বর্তায় যেমন উত্তরাধিকার, বিবাহ, কিসাস, দিয়াত (রক্তপণ) এবং অন্যান্য আরো বিষয়। আর এক্ষেত্রে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, জরুরি অবস্থায় পড়া ছাড়া তাদেরকে হত্যা করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না; আর যে হাদিসে নারী শিশুদের হত্যা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেটা তখনই প্রযোজ্য যখন তাদেরকে পৃথক করা সম্ভব। আর রাত্রিকালীন আক্রমণ ও রাত্রিকালীন আক্রমণে নারী ও শিশু হত্যার অনুমতি সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাপারে আমাদের বিশেষজ্ঞ অভিমত, সেই সাথে মালিক ও আবু হানিফার এবং অধিকাংশের অভিমত এটাই।" [সহীহ মুসলিম বি শারহ আন নববী, ১২/৪৮-৫০]

    ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেছেনঃ "আল-বায়াত (রাত্রিকালীন আক্রমণ) এর সময় ও যুদ্ধের পরিখাগুলোতে নারী ও শিশুদের হত্যা করা বৈধ, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের পৃথকভাবে সনাক্ত করা যাচ্ছে। আর তাদের হত্যা ও পরাজিত করার জন্য (তাদের নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশ্যে) তাদের গবাদি পশুগুলোকেও হত্যা করা বৈধ। আর এ বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই।"
    তিনি আরো বলেছেনঃ "শত্রুদের রাতে আক্রমণ করা বৈধ। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, 'রাত্রিকালীন আক্রমণে কোনো সমস্যা নেই। আর রোমানদের কি রাত্রিকালীন ছাড়া অন্য কোনো সময় অবরুদ্ধ করা হয়েছিল?' তিনি আরো বলেন, 'আমরা এমন কারো কথা জানি না যিনি এই রাত্রিকালীন আক্রমণকে অবৈধ বলেছেন।"
    "সুতরাং যদি বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, তবে আমরা বলব, সেটি তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আহমাদ বলেন, 'যদি তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার ব্যাপার হয়, তবে (তা জায়েজ) না।' তিনি বলেন, আস সাবের হাদিসটি এসেছে নারী ও শিশু হত্যা নিষিদ্ধের পরে, নারী ও শিশু হত্যার ব্যাপারে তার নিষেধ এসেছে যখন তিনি ইবন আবু হুকায়িককে হত্যার জন্য লোক পাঠান আর এজন্যই এ দুটির মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব; ইচ্ছাকৃতভাবে (তাদের হত্যা) করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি।" [আল মুগনি ওয়াশ শারহ, ১০/৫০৩]

    ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেনঃ "আর এই অভিমত নেই না যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রথমে) নারী ও শিশুদের হত্যার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন এবং পরবর্তিতে তা নিষেধ করেছেন। আমাদের মতে, নারী শিশুদের হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা হল তাদেরকে ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে এবং যেসব পরিস্থিতিতে তাদেরকে ঐসব ব্যক্তি থেকে সনাক্ত আলাদা করা সম্ভব সেসব পরিস্থিতির জন্য।.......'তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত' - এই বক্তব্যের অর্থ দ্বারা তাদের দুটি বৈশিষ্ট্যের দিকে ইংগিত করা হয়; প্রথমত তারা ঈমানের পরিধিতে নেই, থাকলে তাদের রক্ত ঝড়ানো (মুসলিমদের জন্য) হারাম হত। দ্বিতীয়ত, তারা দারুল ঈমানে বসবাসকারীদের মধ্যেও গণ্য নয়, নতুবা তাদের ঘরে আক্রমণ করা নিষিদ্ধ হত। আর একারণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিকালীন আক্রমণ ও তাদের ঘরে আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনি বনু মুসতালিকের উপর আক্রমণ করেছেন যখন তারা অপ্রস্তুত ছিল। আর এ কথা সবারই জানা যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি সাপেক্ষে কেউ রাত্রিকালে আক্রমণ চালালে নারী ও শিশুদের আক্রান্ত না করে তা সম্পন্ন করতে পারবে না।......এবং তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা ঠিক নয়, যখন তাদেরকে আলাদা করা এবং চেনা সম্ভব হয়। শিশুদের হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কারণ হল তারা এখনো কুফরের উপর বয়োপ্রাপ্ত হয়নি যার জন্য তাদেরকে হত্যা করা যায়; আর নারীদের হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কারণ হল, তাদের মধ্যে যুদ্ধে জড়াবার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা নেই।" [আল ইতিবার ফি আন নাসিখ ওয়াল মানসুখ - আল হাজিমি]

    আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম কোনো কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে কামানের গোলা ব্যবহার করেছেন। আর এটা সবাই জানে যে, যখন কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়, তখন এটা দেখে না কে যোদ্ধা আর কে যোদ্ধা নয়। আর এটি এমন কাউকে গিয়ে আঘাত করতে পারে যারা হয়ত অযোদ্ধা তথা বেসামরিক।

    ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেছেনঃ "কামানের গোলা নিক্ষেপ করা জায়েজ কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়িফের বিরুদ্ধে কামান (মিনজানিক) ব্যবহার করেছিলেন আর আমর ইবনুল আস (রাঃ) ইস্কান্দারিয়ার লোকজনের উপর কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছিলেন।" [আল মুগনি ওয়াশ শারহ, ১০/৫০৩]

    ইমাম কুদূরী (রহঃ) বলেনঃ “আর তাদের বিরুদ্ধে মিনজানিক (কামান) মোতায়েন করবে। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়েফের বিরুদ্ধে করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে জ্বালাও পোড়াও চালাবে। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বোয়াইরা এলাকা (প্রয়োজনে) জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন”। [আল হিদায়া (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ জিহাদ, ২/৪৩২]

    উপরোক্ত আলোচনার সারাংশ হচ্ছে, কাফিরদের মধ্যে যাদের হত্যার উদ্দেশ্যে অভিযান পরিচালিত হয়, তাদের থেকে ঐসব নারী ও শিশুদের আলাদা করা ও চেনা সম্ভব না হলে তাদেরকে (নারী ও শিশুদের) হত্যার মাঝে কোনো পাপ নেই - যতক্ষণ না তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। আর আল্লাহ তায়ালাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

    আর এর মাধ্যমে একটা বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যারা "নিরীহ জনগণের হত্যা" ইস্যুটি কোনো সীমাবদ্ধতা বা নির্দিষ্টকরণ ছাড়াই বারবার উল্লেখ করছেন, তারা মূলত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর সাহাবী ও তাদের উত্তরসূরিদেরই দোষারোপ করছেন, তাদের ভাষ্যমতে "নিরীহ জনগণের হত্যাকারী" হিসেবে।

    একটি সংশয়ের জবাবঃ
    বিভিন্ন কুফফার দেশে অনেক মুসলিমরাও বসবাস করে। কুফফারদের উপর হামলা হলে সেক্ষেত্রে মুসলিমরাও সেই হামলার শিকার হতে পারে, যেহেতু কুফফারদের সাথেই তারা চলাফেরা করছে। এক্ষেত্রে কাফেরদের উপর কিভাবে হামলা করা যাবে, যেখানে মুসলিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?

    এই প্রশ্নের জবাব উপরোক্ত ২ নং পয়েন্টের মতই। আর তা হল, এই মুসলিমদের ততক্ষণ মারা যাবে না, যতক্ষণ তারা পৃথক অবস্থানে থাকবে। আর যদি তারা কুফফারদের সাথে সহাবস্থানে থাকে আর যদি একারণে তাদেরকে এড়িয়ে আক্রমণ করা সম্ভব না হয়, এমতাবস্থায় সেই মুসলিমদের হত্যা করা বৈধ।

    ইসলামের ফকীহগণ সেসব মুসলিমদের হত্যা করা বৈধ বলেছেন যাদেরকে কাফেররা ঢালস্বরূপ ব্যবহার করছে; যদি তারা কাফেরদের হাতে বন্দি হয় আর কাফেররা মুসলিমদের মোকাবিলা করার সময় তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।

    ইবন তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেছেনঃ "এ ব্যাপারে আলেমরা একমত হয়েছেন যে, যদি কুফফাররা মুসলিম বন্দীদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আর এই ভয় থাকে যে লড়াই না করলে মুসলিমদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, এমতাবস্থায়ও মুসলিমদের উচিত লড়াই চালিয়ে যাওয়া, যদিও এর ফলস্বরূপ মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত মুসলিমদের মারা পড়তে হবে।" [ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়াহ, ২৮/৫৩৭ ও ২০/৫২]

    ইবন কাসিম (রহঃ) বলেছেনঃ "যদি তারা মুসলিমদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে তাদের উপর আক্রমণ করা জায়েজ হবে না, যদি না (সমগ্র) মুসলিমদের ব্যাপারে আশংকা থাকে। (এক্ষেত্রে) তার উচিত তাদের (মুসলিমদের) আক্রমণ করা শুধুমাত্র কুফফারদের আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে। আর এ বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই।" [আল হাশিয়া আলা আর রাওধ, ৪/২৭১]

    ইমাম কুদূরী (রহঃ) বলেনঃ “তাদের (কাফেরদের) মাঝে মুসলিম বন্দী বা ব্যবসায়ী থাকলেও তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে বাধা নেই। কেননা তীর বর্ষণে ইসলামের কেন্দ্র থেকে প্রতিরোধের মাধ্যমে বৃহৎ ক্ষতিরোধ করা হয়। পক্ষান্তরে মুসলিম বন্দী বা ব্যবসায়ী নিহত হওয়ায় সীমিত ক্ষতি। তাছাড়া খুব কম দুর্গই কিছুসংখ্যক মুসলিম থেকে খালি হয়। সুতরাং তা বিবেচনা করে যদি বিরত থাকতে হয় তবে জিহাদের দরজাই বন্ধ হয়ে যাবে।
    যদি তারা মুসলিম বালকদের কিংবা বন্দিদের 'ঢাল' রূপে ব্যবহার করে তাহলে (আমাদের বর্ণিত কারণে) তাদের প্রতি তীর বর্ষণ থেকে বিরত থাকবে না। অবশ্য কাফিরদের প্রতি তীর বর্ষণের নিয়ত করবে। কেননা কার্যতঃ পার্থক্য করা অসম্ভব হলেও উদেশ্যগতভাবে তা সম্ভব। আর আদেশ পালনের দায়িত্ব সাধ্য অনযায়ী। আর ওই মুসলিমদের যে কজন তাদের (মুজাহিদদের) তীর বর্ষণের শিকার হবে, তাদের দিয়ত মুজাহিদদের উপর ওয়াজিব হবে না। আর কাফফারাও ওয়াজিব হবে না”। [আল হিদায়া (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ জিহাদ, ২/৪৩২]

    শেষ করছি ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) এর একটি বক্তব্য দিয়ে।
    ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেছেনঃ "নিশ্চয়ই উত্তম প্রতিশোধ নেয়া তাদের অধিকার। তাদের জন্যে মনোবল পুনরুদ্ধার ও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব বৈধ। তারপরও তারা চাইলে প্রতিশোধ গ্রহণ নাও করতে পারে, যখন সবর করাই উত্তম।
    কিন্তু এটা (সবর) কেবল তখনই করা উচিৎ, যখন এ প্রতিশোধ জিহাদের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে না বা তাদের (শত্রুদের) অন্তরে ভয় বৃদ্ধি করবে না (যাতে করে তারা বিরত থাকে) বা এমনই কিছু।
    কিন্তু, একটি বড়সড় উত্তম প্রতিশোধ যদি তাদেরকে (কাফেরদেরকে) ঈমানের দিকে দাওয়াত দেয়ার মাধ্যম হয় বা এতে করে তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়, তাহলে এক্ষেত্রে এই প্রতিশোধ হুদুদ (শরয়ী শাস্তি) ও একটি শরীয়াহ ভিত্তিক জিহাদ হিসেবে গণ্য হবে।" [ ইবন মুফলিহ কর্তৃক বর্ণিত, ৬/২১৮ ]



    সংকলনের সূত্রসমূহঃ

    ১/ একাকী জিহাদের বিধিবিধান - শাইখ হামীদ আল তামীমি
    ২/ ইসলামের দৃষ্টিতে ৯/১১ - আল্লামা হামুদ বিন উক্বলা আশ-শুয়াইবি রহঃ
    ৩/ তাফসীর ইবনে কাসীর
    ৪/ বেসামরিক হত্যার মাসায়েল
    ৫/ হারবি কুফফারদের কতল করার দলিলঃ শায়খুল হাদিস আবু ইমরান (হাফিঃ)
    ৬/ শাইখ আনোয়ার আল আওলাকির (রহঃ) লেকচার
    ৭/ জিহাদ বিষয়ক মৌলিক আলোচনা - শাইখ আব্দুল ক্বাদির ইবনে আব্দুল আযিয
    "আপনার প্রতিটি কাজে, আপনার জীবনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহকেই আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানিয়ে নিন। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই আপনার লক্ষ্য বানান। সামনের কঠিন দিনগুলোতে কেবল তিনিই আপনার ভরসা।"
Working...
X