অনেকেই দাবি করেন, কলমের জবাব কিভাবে কলম ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে, এটা তাঁরা বোঝেন না। এরকম একটা ব্যাপার কিভাবে নৈতিক এবং ন্যায়সঙ্গত হতে পারে - সেটা তাদের কাছে বোধগম্য না। যদি আসলেই বুঝতে চান, ব্যাপারটা বোঝা খুব কঠিন কিছু না। দুটো ভাবে আপনি ব্যাপারটা দেখতে পারেন। যেমন, কিছু ইসলামপন্থী কেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে কলমের জবাব চাপাতির মাধ্যমে দেয়াটাকেই অধিক যৌক্তিক মনে করেন সেটা বোঝার জন্য আপনি আধুনিক রাষ্ট্রের দিকে তাকাতে পারেন।
.
.
আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা Treason -কে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একারনে High Treason অধিকাংশ দেশেই, রাষ্ট্র অনুমোদিত সর্বোচ্চ শাস্তি দ্বারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেসব দেশে মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে, যেমন বাংলাদেশ; সেসব রাষ্ট্রে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এই রাষ্ট্রদ্রোহিতা কিন্তু বিভিন্নভাবে হতে পারে। কথার মাধ্যমে, লেখার মাধ্যমে, কাজের মাধ্যমে ইত্যাদি। সংঘটিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ কতোটা গুরুতর সেটা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে, নিজের আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী। এক্ষেত্রে সে অন্য কারো কাছ থেকে নৈতিকতা বা মানবতার সবক নিয়ে আসে না। সহজ ভাষায়, অপরাধ কতোটা গুরুতর তা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় শাস্তি প্রয়োগের সম্পূর্ণ অধিকার রাষ্ট্রের আছে, এবং এ ব্যাপারে সে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে। রাষ্ট্রের এই অধিকার সর্বজনস্বীকৃত।
.
.
এই ক্ষেত্রে দেখা যায়, কথা বা কলমের জবাব ক্ষেত্র বিশেষে জেল,জরিমানা,নির্যাতন, ফাঁসির দড়ি কিম্বা ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হতে পারে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারিত হয়। এখানে খেয়াল করার বিষয় হল, শাস্তি কি হবে, সেটা কোন তৃতীয় পক্ষ ঠিক করে না। যার উপর অপরাধ করা হয়েছে (i.e. রাষ্ট্র) সে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির মাত্রা ঠিক করে।রা কেউ এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। কারণ এখানে ব্যাপারটা নিছক, কথা বা বিচ্ছিন্ন একটি কাজের সাথে সম্পর্কিত না। এটা সমগ্র রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরাপত্তা এবং অস্তিত্বের সাথে জড়িত একটি বিষয়।
.
.
একইভাবে ইসলামের একটী আলাদা সংবিধান আছে কুরআন। ইসলামের সুনির্দিষ্ট কিছু বিধি-বিধান আছে। ইসলামে ইসলামদ্রোহ এবং ইসলামদ্রোহিতার সাথে কিভাবে ডিল করতে হবে সে বিষয়ে নিয়মাবলী আছে। ইসলাম এই ব্যাপারে মানুষের তৈরি মানবিকতা, বা নৈতিকতার সংজ্ঞা অনুসরণ করতে বাধ্য না। ষ্ট্রদ্রোহিদের বিচার করার সময় বাংলাদেশ যেমন পাকিস্তানের কথায় কান দিতে বাধ্য না, একইরকম ভাবে সেক্যুলার হিউম্যানিস্ট, বা লিবারেল ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি ইসলামদ্রোহিতার শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে কি ভাবলো সেটা নিয়ে মুসলিমরা মাথা ঘামাতে বাধ্য না। একারণে ইসলাম কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলামদ্রোহিতার অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডকে নির্ধারণ করেছে। এই শাস্তি তলোয়ার, চাপাতি, বন্দুক, রকেট লঞ্চার বা অন্য যে কোন কিছুর মাধ্যমে কার্যকর করা যেতে পারে।আপনি যদি আধুনিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদ্রোহিতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগের অধিকার স্বীকার করেন, সম্মান করেন এবং বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়ে থাকেন, তাহলে ইসলামের এই অধিকার নিয়ে আপনি কিভাবে প্রশ্ন তোলেন?দুটো ক্ষেত্রেই মূলনীতি এক। একটার যৌক্তিকতা মেনে নিলে, আপনাকে অপরটা অবশ্যই মানতে হবে, অন্যথায় আপনার অবস্থান নিছক হিপোক্রেসি এবং ডাবল-স্ট্যান্ডার্ডের ম্যানিফেস্টেইশান ছাড়া আর কিছুই না।
.
.
একইসাথে এটাও লক্ষণীয় যে মুসলিমদের যে অংশটা কর্মের স্বাধীনতার কথা বলছে, তাঁরা কিন্তু এই মনোপলিস্টিক সিস্টেমের ঠিক করা নিয়মকানুন অনুসারে তাঁদের চিন্তা ও কাজ পরিচালনা করবেন না। ভায়োলেন্সের মনোপলির মাধ্যমে এই সিস্টেম মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অস্ত্রের মাধ্যমে, কলমের মাধ্যমে না। অস্ত্রের মাধ্যমে, শক্তির মাধ্যমে কতৃত্ব অর্জনের পরই পশ্চিমা কলোনিয়ালিস্টরা সভ্যতা আর মানবতা চিনেছে। এই মুসলিমদের কাছে তাই অস্ত্রের জোড়ে চাপিয়ে দেয়া এই দাসত্বের ফলাফল হল কলমের মাধ্যমে করা এই অবমাননা। তাই মূল সমস্যার উৎস কলম না। মূল উৎস শক্তির জায়গায়। অস্ত্রের শক্তি এবং ভায়োলেন্সের মনোপলির কারণেই কলমের মাধ্যমে বিনা জবাবদিহিতার এই অবমাননার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাই এই মনোপলি ভাঙ্গতে হলে আপনাকে পশ্চিমাদের তৈরি করা বক্সের বাইরে চিন্তা করতে হবে। তাদের নির্ধারিত আইনের বাইরে আপনাকে যেতে হবে। আপনাকে ভায়োলেন্সের মনোপলি ভাঙ্গতে হবে, এবং সেটা কলমের মাধ্যমে হবে না।
.
.
আপনি শক্তির মাধ্যমে কিছু লোকের উপর আপনার কতৃত্ব চাপিয়ে দিলেন, তারপর বললেন এই লোকগুলো যদি কতৃত্ব ফিরে পাবার জন্য শক্তি ব্যবহার করে তাহলে সেটা বেআইনি এটা তো হয় না। এই লোকগুলো সেটা মেনে নেবে না। কোন আত্বমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি কিম্বা জাতি এটা মেনে নেবে না। মেনে নেবে শুধুমাত্র নির্বোধ, আত্বমর্যাদাহীন এবং প্রকৃতিগতভাবে দাস প্রজাতির কিছু মানুষ। মুসলিমরা নির্বোধ না এবং নিশ্চিতভাবেই তাঁরা আত্বমর্যাদাহীন না।
লিখেছেন একজন ভাই, আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন আমিন
Results 1 to 4 of 4
-
11-23-2015 #1
- Join Date
- Nov 2015
- Posts
- 8
- جزاك الله خيرا
- 0
- 10 Times جزاك الله خيرا in 6 Posts
কলমের জবাব কিভাবে কলম ছাড়া অন্য কিছু হতে প
-
The Following 2 Users Say جزاك الله خيرا to শুহাদার কানন For This Useful Post:
কাল পতাকা (11-24-2015),Taalibul ilm (11-26-2015)
-
11-24-2015 #2
- Join Date
- Jul 2015
- Location
- طاعون خوارج
- Posts
- 753
- جزاك الله خيرا
- 611
- 599 Times جزاك الله خيرا in 308 Posts
আপনি শক্তির মাধ্যমে কিছু লোকের উপর আপনার কতৃত্ব চাপিয়ে দিলেন, তারপর বললেন এই লোকগুলো যদি কতৃত্ব ফিরে পাবার জন্য শক্তি ব্যবহার করে তাহলে সেটা বেআইনি এটা তো হয় না। এই লোকগুলো সেটা মেনে নেবে না। কোন আত্বমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি কিম্বা জাতি এটা মেনে নেবে না। মেনে নেবে শুধুমাত্র নির্বোধ, আত্বমর্যাদাহীন এবং প্রকৃতিগতভাবে দাস প্রজাতির কিছু মানুষ। মুসলিমরা নির্বোধ না এবং নিশ্চিতভাবেই তাঁরা আত্বমর্যাদাহীন না।
-
11-26-2015 #3
- Join Date
- Nov 2015
- Posts
- 681
- جزاك الله خيرا
- 2,736
- 1,345 Times جزاك الله خيرا in 472 Posts
খুবই গুছানো একটি লিখা। ঐ ভাইকে আল্লাহ কবুল করুন।
কথা ও কাজের পূর্বে ইলম
-
11-07-2016 #4
- Join Date
- Oct 2016
- Posts
- 104
- جزاك الله خيرا
- 184
- 144 Times جزاك الله خيرا in 70 Posts
জাযাকাল্লাহ।
Similar Threads
-
জিহাদ ছেড়ে অন্য কাজে মশগুল হওয়া
By Hazi Shariyatullah in forum আল জিহাদReplies: 2Last Post: 07-09-2018, 11:37 PM -
নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ছাড়ছে ব্লগাররা
By Raghib Ansar in forum কুফফার নিউজReplies: 3Last Post: 11-07-2016, 03:36 PM -
কিছু অভাব অভিযোগের কথা নিয়ে এসেছিলাম কিন্
By কাল পতাকা in forum ইসলামের ইতিহাসReplies: 1Last Post: 05-12-2016, 11:27 PM