Announcement

Collapse
No announcement yet.

৪র্থ পর্বঃ রাজনীতির নীতিমালাঃ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ৪র্থ পর্বঃ রাজনীতির নীতিমালাঃ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা

    যুদ্ধের কৌশল অনুধাবন
    ৪র্থ পর্ব


    রাজনৈতিক স্বিদ্ধান্তের স্বাধীনতা

    রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা হচ্ছে, (নিজেদের উপর নির্ভরশীলতা ও নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে কোন রাষ্ট্রের যেকোন অবস্থান গ্রহন বা স্বিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা।) অর্থাৎ স্বাধীন স্বিদ্ধান্তের ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি হবে অন্যের শক্তিতে ভরসা না করে নিজেদের উপর নির্ভরশীলতা এবং অন্যের কোন স্বার্থ অর্জনের সাহায্যকারী না হয়ে নিজের কৌশলগত স্বার্থ ও লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা। যারা অন্য কোন শক্তিতে ভরসা করে পরিকল্পনা করে বা অন্যের স্বার্থে স্বিদ্ধান্ত নেয় তারা কখনোই রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীন নয়।

    তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় উন্নতি ও রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনের জন্য কাজ করার সক্ষমতার মাঝে পার্থক্য করা আবশ্যক। এই সক্ষমতা অনেকগুলো বিষয়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। যেমনঃ রাষ্ট্রের শক্তি, বাস্তবায়নের যোগ্যতা, আঞ্চলিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থা। অর্থাৎ এমন দেশ রয়েছে যারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ব্যাপক স্বাধীনতা ভোগ করলেও কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা অনেক সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন উত্তর কোরিয়া এবং ব্রিটেন। তবে অপ্রতুল কিছু বিপরীত উদাহরণ রয়েছে, যেমন জাপান, তাদের কাজের শক্তি অনেক থাকলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো আমরিকার সাথে সংযুক্ত থাকে।

    উপরোক্ত বিষয়টি বুঝা আমাদের জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ন। কারণ, কোন রাষ্ট্রে যুদ্ধ, আক্রমণ বা অধিপত্য বিস্তারের স্বিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক ভাবেই নেয়া হয়ে থাকে। এখন কোন রাষ্ট্রের স্বাধীন স্বিদ্ধান্তের ক্ষমতা না থাকলে তা নিজে থেকে কারো উপর আক্রমণ করতে পারবে না। ঠিক তেমনি ভাবে কারো স্বিদ্ধান্তের স্বাধিনতা থাকলেও যদি বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকে তাহলেও তার পক্ষে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

    ধরুন, আমেরিকার স্বাধীন পরিকল্পনা ও স্বিদ্ধান্ত গ্রহনে উপযুক্ততা থাকলে কোন অর্থনৈতিক ধ্বস বা অন্য কোন কারণে তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকে তাহলে তার পক্ষে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালানো সম্ভব নয়, যেমনটা আমরা সিরিয়ার যুদ্ধের ক্ষেত্রে তার সক্ষমতাহীনতার বিষয়টা লক্ষ্য করেছি।

    স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার উপযুক্ততা তিনটা মৌলিক ভিত্তি থেকে অর্জিত
    হয়ঃ

    প্রথমতঃ চলমান শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ও উন্নতির ধরনঃ

    যুদ্ধ মাধ্যমে যে রাষ্ট্র বা প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, চাই যুদ্ধ বহিরাগত শত্রুর বিরুদ্ধে হোক অথবা আঞ্চলিক শত্রু। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশাল রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। যেমন আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন ইত্যাদি।

    যে সমস্ত রাষ্ট্রগুলো কোন সাহায্য ছাড়া শুধু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলোও বিশাল পরিমাণে স্বাধীনতা ভোগ করে। যেমন ইরান এবং কিউবা।

    কিন্তু যে সমস্ত রাষ্ট্র;

    - সামরিক অভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়
    - বহিরাগত গোয়েন্দা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়
    - আধিপত্যবাদী শক্তির দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের অনুগত্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে
    - রাজতান্ত্রিক বা পরিবারতান্ত্রিক শাষক, যারা বড় কোন রাষ্ট্রের তাঁবেদার হিসেবে কাজ করে যাতে সেই পরিবারকে শাসন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখে
    এই সমস্ত প্রশাসনগুলো নিজস্ব স্বাধীন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, চিন্তা করা বা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে বড় কোন রাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ অথবা পরোক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে থামিয়ে দেয়া হয়।

    দ্বিতীয়তঃ ঐতিহাসিক এবং জাতিগত উত্তরাধিকার

    - যে সমস্ত রাষ্ট্রগুলোর পূর্বে একচ্ছত্র স্বাধীনতার ইতিহাস রয়েছে, যেমন ব্রিটেন
    - যে সমস্ত দেশগুলোর যুদ্ধ করা ও তাবেদারীকে ছুড়ে ফেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে যেমন আফগানিস্তান
    - যে সমস্ত দেশের জনসাধারণ জুলুমকে প্রতিহত করা এবং যুদ্ধে চালিয়ে যাওয়ায় অভ্যস্থ।
    এই সমস্ত কারণগুলো রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিশাল স্বাধীনতার সুযোগ এনে দেয়। কারন সেই সমস্ত দেশের জনগনের মানসিকতা স্বাধীনতা প্রিয় ও তাতে অভস্ত থাকে।

    তৃতীয়তঃ শক্তির উপাদান সমূহ

    যে সমস্ত রাষ্ট্র বিশাল বিস্তৃত ভূমি, অনেক অধিবাসী, দূর্গম অঞ্চল, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তির ইত্যাদির মাধ্যমে কৌশলগত বা স্ট্রেটেজিক শক্তির অধিকারী হয়, এগুলো তাদের জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশাল স্বিদ্ধান্তের স্বাধীনতা সুযোগ এনে দেয়। তবে সেটা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অবস্থা অথবা শাষক শ্রেনীর রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ও যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল থাকে। কারন, অনেক সময় অনেক শক্তি থাকা সত্বেও শাষকদের অযোগ্যতা বা দেশের আভ্যন্তরীন অবস্থা খারাপ থাকলে তা দিয়ে তেমন স্বাধীনতা ভোগ করা যায় না।

    রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও রক্তের মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হয়। সেই সাথে এই স্বাধীনতা শাষক শ্রেনী, রাষ্ট্রের আঞ্চলিক ও আভ্যন্তরীন পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া সম্ভব।

    কোন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা কতটুকু আছে তা জানা আমাদেরকে সেখানের বর্তমান ঘটনা প্রবাহ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোকে বুঝতে সাহায্য করে।

    সুতরাং যে সমস্ত রাষ্ট্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্বাধীন, তারা কখনো কঠিন কোনো পরিস্থিতি বা বহিরাগত চাপের কারণে বর্তমান স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েও ফেলে, তথাপি পরিস্থিতির কাঠিন্যতা ও বহিরাগত চাপ সরে যাওয়ার পরেই তার আবার স্বার্থের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।

    কিন্তু যে সমস্ত রাষ্ট্র নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাদের সমস্ত সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম বহিরাগত রাষ্ট্রের স্বার্থের সাথে মিলিত থাকে। ফলে স্বিদ্ধান্তগুলো নিজস্ব রাষ্ট্রের জন্যে বিশাল ক্ষতিকারক হলেও তাদের কিছু করার থাকে না। কারণ তারা অন্যদের আনুগত্যের ফলে ভিন্ন কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আরেকটা কারণ হচ্ছে, তাদের মূল স্বার্থই হয়ে থাকে সেই শাষক শ্রেনী বা শাসক পরিবারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা, এতে রাষ্টের জনসাধারনের যত ক্ষতিই হোক না কেন!

    সুতরাং কোন রাষ্ট্রের আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য ও স্বার্থের ব্যাপারে গবেষণা করার আগে তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাকে পরিমাপ করা আবশ্যক, যাতে আমাদের চিন্তা ও পরিকল্পনা সঠিক হয়।

    কারন কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে সে ভবিষ্যতে কি কি যুদ্ধের স্বিদ্ধান্ত নিতে পারে বা কার কার উপর আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু তার যদি স্বাধীন স্বিদ্ধান্ত নেয়ারই সক্ষমতা না থাকে তাহলে তার যত বড়ই টার্গেট থাকুক, বাস্তবায়ন করবে কিভাবে?


    রাজনৈতিক স্বার্থ ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা

    যখন আমরা কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সম্পর্ক ও স্বীদ্ধান্ত গ্রহন, চুক্তি ও যুদ্ধের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষনা করব, তখন আমাদের এটা বুঝা আবশ্যক যে, এই সবগুলোই দুইটা শব্দের উপর ভিত্তি করে চলমান থাকে, তা হল; স্বার্থ ও সক্ষমতা। তাই সমস্ত নেতা, রাজনীতিবিদ তাদের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে কোন স্বার্থ অর্জন বা শক্তি-সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই।

    রাজনৈতিক স্বার্থ হতে পারেঃ

    - ব্যক্তিকেন্দ্রিক অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে শাসন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা বা তার সম্পদ বৃদ্ধির করা। এটা হয়ে থাকে বড় রাষ্ট্র বা স্বৈরাচারী শাসন ক্ষমতায়।
    - জনগণের ব্যপক ফায়দার দিকে লক্ষ্য করে। তা হয়ে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় অথবা সেই সমস্ত শাষন ব্যবস্থা যেখানে শাষক শ্রেনীর উপর জনগণের ব্যপক প্রভাব থাকে বা যে প্রশাসনে অনেকগুলো শক্তিশালী সংস্থা অংশ থাকে, যারা স্বাধীন ভাবে সবকিছু তদারকি করতে পারে।

    রাষ্ট্রীয় স্বার্থ হতে পারে অগ্রসরমান, যেমন কোন কাজ বাস্তবায়ন করা ও নতুন অবদান রাখা। অথবা হতে পারে প্রতিরোধী, যেমন কোন ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া বা বর্তমানের শক্তি ক্ষয় রোধ করা।

    রাজনৈতিক স্বার্থ কখনো এককভাবে থাকে না বরং এটি ভিবিন্ন অংশে বিভক্ত থাকে। অর্থাৎ একটা বড় রাজনৈতিক স্বার্থ বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত হয়, যার প্রত্যেকটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রভাব বিস্তার করে এবং সবগুলোর শেষ ফলাফল একটা রাজনৈতিক স্বার্থের পূর্নাংগ রূপ দাঁড় করায়। এরপরেই আসে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও সেটাকে বাস্তবায়নের পর্যায়।

    রাজনৈতিক স্বার্থগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বদা সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল থাকে, অর্থাৎ পর্যাপ্ত শক্তি ছাড়া কোন স্বার্থই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এবং এই অবস্থা বিবেচনা করেই বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কাজের প্ল্যান নেওয়া হয়।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থ গুলো ছিলঃ-

    - শরিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূরা যমীনের আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা
    - সমগ্র বিশ্বে তাওহীদের দাওয়াত কেউ ছড়িয়ে দেয়া
    - সব ধরনের শত্রু বা বিপদ থেকে এই রাষ্ট্র, দাওয়াহ এবং মুসলমানদেরকে হেফাজত করা।

    উমাইয়া যুগ এবং আব্বাসী যুগের অধিকাংশ সময় এই ব্যপক উদ্দেশ্য গুলোর সাথে কিছু ব্যক্তিগত স্বার্থও জড়িত হয়েছিল। সেই স্বার্থগুলো হয়তো শাসক, শাসক পরিবার অথবা শাসকের গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মূল স্বার্থ ও লক্ষ্য সেটাই ছিল যা রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর সময় থেকে বাস্তবায়িত হয়ে আসছিল। তবে দুই সময়ের মধ্যে কিছু সময় হয়ত পাওয়া যাবে যখন এটাই মূল স্বার্থ ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ সময় এটাই ছিল মৌলিক স্বার্থ।

    অন্যদিকে শক্তি ও সক্ষমতাই হচ্ছে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক বা দেশীয় সর্বক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের মূল মাপকাঠি।
    স্বার্থ ও শক্তি দুইটা মিলে একে অপরকে পরিপূর্ন করে। কেননা শক্তি-সক্ষমতা রাজনৈতিক স্বার্থ গুলোকে বাস্তবায়ন করে এবং রাজনৈতিক স্বার্থ শক্তিকে বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী করে।


    শক্তি হতে পারে;
    • সামরিক অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ বা অনুগত সামরিক বাহিনী
    • অর্থনৈতিক অর্থাৎ সম্পদ প্রদান বা ব্যবসায়িক বিনিয়োগ
    • বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থাৎ সমষ্টিক বা সাদৃশ্যপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা বা আইডিওলজি তৈরি করা।


    এখানে সবচেয়ে শক্তিশালী সক্ষমতা ও প্রভাব সৃষ্টিকারী শক্তি হচ্ছে সামরিক শক্তি, অতঃপর অর্থনৈতিক শক্তি অতঃপর বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি। তবে এখানের বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রত্যেকটি শক্তির মাধ্যমেই অন্য দুইটা শক্তি অর্জন করা সম্ভব। অর্থাৎ কারো কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা থাকলে সেটা তাকে অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি অর্জনে সাহায্য করবে। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা। সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো অর্জিত হবে।


    শক্তি-সক্ষমতার প্রকারভেধঃ

    • সর্বদা চলমান যেখানে কোন ব্যঘাত ঘটে না

    এই সমস্ত রাষ্ট্রের শক্তি প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদি তোমার কাছে একটি পানি ভর্তি গ্লাস থাকে ও তা থেকে কিছু পানি পরে যায় তাহলে বাতাস জায়গা দখল করে নেবে এবং সেখানে সে কার্যকর থাকবে। এখন যদি সেই পাত্রে তেল ঢালা হয় তাহলে বাতাস বের হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি কিছু রাষ্ট্রের শক্তি এমন হয়ে থাকে। কোন স্থানে শক্তি-সামর্থের একদিকে ঘাটতি হলে অন্যদিকের শক্তি সে স্থানে জায়গা করে নেয়। সামরিক শক্তির ঘাটতি হলে অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, আবার অর্থনৈতিক শক্তি কমে গেলে বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি বেড়ে সেই ঘাটতি পূরন করে দেয়। যদিও তা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় না যেমন বাতাস, আবার অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতমূখী হয়ে থাকে যেমন তেল ও পানি।


    • সর্বদা স্থির ও ভারসাম্যপূর্ন

    কিছু রাষ্ট্রের শক্তি-সক্ষমতার এমন কিছু শক্তিশালী সাহায্যকারী ও স্তম্ভ থাকে যা তার শক্তি ও কতৃত্বকে টিকিয়ে রাখে, ফলে পুরো প্রশাসন তার দায়িত্ব আদায়ে সক্ষম থাকে। এখন যদি সেই সাহায্যকারী বা স্তম্ভে কোন ধরনের বিচ্যুতি দেখা দেয় তাহলে রাষ্ট্রের শাষন ক্ষমতার স্থিরতা নষ্ট হয়ে যায় এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখা দেয়। এটা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাজে যতক্ষণ না নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। যার মাধ্যমে স্থিরতা এবং ভারসাম্যতা ফিরে আসবে। এটা অনেকটা বীজের মত যার মধ্যে নেগেটিভ এবং পজিটিভ দুইটা অংশ থাকে। সুতরাং তুমি যে বীজগুলোকে বপন করেছ সেগুলো বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়তে থাকে স্থিরতা বা নিজের অবস্থান গড়ে তোলার জন্য।

    - কোন রাষ্ট্রের শক্তি-সামর্থ্য অনুমান করার জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সেখানের সংঘটিত বাস্তব ঘটনা সমুহ বিশ্লেষণ করা। মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারনা, রাজনৈতিক দাবি বা ব্যক্তিগত দাবি নয়।

    - যুদ্ধ ও চুক্তি দুইটাই শক্তির বিবেচনায় একই কাজের দুটি দিক। যুদ্ধের কারনে যেমন দুই পক্ষেই শক্তি ক্ষয় হয় ঠিক তেমনি চুক্তির মাধ্যমে দুই পক্ষই লাভবান হয় বাস্তবিক ময়দানের ফলাফলের ভিত্তিতে। এমনকি যদি শাসক ও অনুসারীদের মাঝে চুক্তি হয়, তাহলে শেষ ফলাফল এটা আনুসারীদের শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং তাদের অবস্থান উপরে নিয়ে আসবে, যার উদাহরণ অগনিত। যেমন; আমেরিকা যদি ইরানের সাথে প্রকাশ্যে চুক্তি করে তাহলে তাদের শক্তি বহুগুণ বেড়ে যাবে।
    তাই যে কোনো যুদ্ধ অথবা চুক্তিকে সঠিকভাবে বোঝা উচিত এবং বাস্তবতার দৃষ্টিতে তাদের শক্তির পরিবর্তনগুলো ধারাবাহিক লক্ষ্য করা উচিত যাতে শক্তি-সামর্থের শেষ ফলাফল বের করা যায়।


    - কিছু শক্তি রয়েছে সম্ভাবনাময়। যেমন, অনেকগুলো পক্ষ যদি কোন শক্তি অর্জনের জন্য যুদ্ধ করতে থাকে, পরে কোনো কারণবশত সেই পক্ষগুলোর মধ্যে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং তারা এই শক্তি অর্জনে অক্ষম হয়ে যায়। তখন যে পক্ষ বাকি থাকবে তার একার শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল সামর্থ্যরে অধিকারী হয়ে যাবে। তবে তার জন্য এই সম্ভাবনাময় শক্তিকে বাস্তব শক্তিতে রুপান্তরিত করা তখনই সম্ভব হবে; যখন পর্যাপ্ত উপযুক্ত পরিবেশ থাকবে, এটাকে গ্রহণ করার মতো সামর্থ্য থাকবে এবং সেই সম্ভাবনাময় শক্তিকে বাস্তবিক শক্তিতে পরিণত করার মতো প্ল্যান থাকবে। অন্যথায় তারা বিপরীত কোন যোগ্য পক্ষের কাছে এই সামর্থ্য সহজেই হারিয়ে ফেলবে।



    রাজনৈতিক যে কোন ঘটনা বোঝা ও বিশ্লেষণের পদ্ধতিঃ

    ১- কর্ম সম্পাদনকারী পক্ষগুলোকে নির্দিষ্ট করা, তাদের স্তর ও প্রকার নির্দিষ্ট করা
    ২- প্রত্যেক পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থসমূহ ও তাদের শক্তির পরিমাপ করা
    ৩- প্রত্যেক পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক বুঝা, সেটা যুদ্ধ হোক বা চুক্তি
    ৪- তাদের সম্পর্কে প্রভাব সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো জানা, সেটা যুদ্ধ হোক বা চুক্তি

    এভাবেই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পর্যায়ের যে কোন ঘটনার সঠিক বিশ্লেষণ করা, লক্ষ্য স্পষ্ট করা, আমাদের ওপর সেই ঘটনার প্রভাব কেমন হবে তা ধারণা করা, এই ঘটনার ভবিষ্যত সম্ভাবনাগুলো জানা এবং বর্তমানে ও ভবিষ্যতে এই ঘটনার ব্যপারে কি ধরনের পদক্ষেপ নিব তা পরিকল্পনা করা।

  • #3
    প্রিয় ভাইয়েরা,, অনেকদিন পরে দেখা হলো। নিয়মিত চাই।
    ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

    Comment


    • #4
      আল্লাহ তায়ালা কাজে বারাকাহ দান করুন, আমিন।
      প্রিয় ভাই নিয়মিত চালিয়ে যান ইনশাআল্লাহ।
      আনসারকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
      নিজে আনসার হব, অন্যকে আনসার বানানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

      Comment


      • #5
        ভাই এই লেখার অনুবাদটা একটু রিভিউ করা গেলে ভাল হবে মনে হচ্ছে মাঝখানের কিছু অংশ পড়ে তেমন কিছু বুঝা গেল না।

        Comment


        • #6
          সবগুলো পর্ব একত্রে পিডিএফ দেওয়ার বিনীত অনুরোধ।
          ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

          Comment

          Working...
          X