Announcement

Collapse
No announcement yet.

মৃত্যু তোমার জন্য কবে ক্ষতিকর হল যে পালিয়ে বেড়াও? - মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী (রহ.)

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মৃত্যু তোমার জন্য কবে ক্ষতিকর হল যে পালিয়ে বেড়াও? - মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী (রহ.)

    মৃত্যু প্রকৃত জীবনারম্ভের ভূমিকা এবং মানুষের উন্নতির সোপান। ধ্বংস ব্যতিরেকে লোকালয় গড়ে ওঠা সম্ভব নয়; মাটি খনন করলেই কেবল মহামূল্য খনিজ সম্পদ লাভ করা যায়। নির্মিত ঘরবাড়ি যখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে - তখন জেনে রাখ, পুনরায় এগুলো আবাদ করবার উপায়-উপকরণও তৈরী হচ্ছে।

    প্রকৃত বাদশাহ্ই দেহের প্রাণকে ধ্বংস করেন; অতঃপর তা পুনরায় আবাদ (সজীব) করেন।
    স্বর্ণ-রৌপ্য ও মূল্যবান খনিজ সম্পদ বের করবার জন্যই তিনি ঘরকে ধ্বংস করেছেন। অতঃপর এই সম্পদ দ্বারাই তিনি পূর্বের চাইতে অধিক সুন্দর করে সৃষ্টি করবেন। -মছনবী


    মাটির দেহের এই পরাজয় এক বিরাট নির্মাণ কাজেরই আলামত। ফুলের কলি ফুটলেই ধরে নিতে হবে যে, ফলও শীঘ্রই আসছে।

    যখন ফলের আবরণ খসিয়ে দেয়া হয়েছে তখন ফল মাথা বের করবেই ;
    যখন মাটির দেহের পরাজয় ঘটেছে (অর্থাৎ মানুষের মৃত্যু) তখন, প্রাণের স্পন্দন জাগবেই। -মছনবী


    তিনি অসীম ক্ষমাশীল দাতা, প্রকৃত দানশীল। তিনি জীবনের ন্যায় মহামূল্যবান সম্পদ দান করে কি করে তা চিরতরে ছিনিয়ে নিতে পারেন? অতএব তোমাকে বুঝতে হবে, তিনি এই ক্ষীণ ও দূর্বল প্রাণ নিয়ে এক অনন্ত জীবন দান করতে চান। তিনি একে মাটির আধার (কবর) থেকে বের করে সেই নিয়ামতই দান করতে চান যা মানুষের কল্পনারও অতীত।

    (জান্নাতের নিয়ামতরাজি এমন) যা কোন চোখই দেখেনি, কোন কানই শোনেনি এবং কোন মানুষের কল্পনায়ও আসেনি। --আল হাদিস;

    যাকে এমন এক মহান বাদশাহ্ মেরে ফেলেন, (জেনে রেখ) তাকে শাহী তখতে উপবেশন এবং সর্বোত্তম মর্যাদায় ভূষিত করবার জন্যই নিজের কাছে টেনে নেন। সেই হাকীকী বাদশাহ্ অর্ধেক প্রাণ নেন এবং শত প্রাণ দান করেন এবং এমন নিয়ামত দান করেন যা তোমার কল্পনারও অতীত। -মছনবী


    উন্নতির সর্বোচ্চ সোপানে আরোহণের জন্য ধ্বংস ও বিলুপ্তি অপরিহার্য। শ্লেটের পূর্বেকার লেখা বা অংকন না ধুয়ে, না মুছে কেউ কি তাতে নতুন লেখা লিখতে পারে? মাটি খুড়ে গর্ত করে সে গর্তের মাটি ভেতর থেকে সরানো ব্যতিরেকে কি পাতালের পানি বের করা যায়? লিখবার জন্য মানুষ সাদা কাগজ এবং বপন করবার জন্য ঘাস-জঙ্গলবিহীন আগাছামুক্ত পরিষ্কার জমিরই খোঁজ করে।

    আরে বেকুব! কেউ যখন লিখতে চায় তখন আগেভাগে শ্লেটটা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নেয় ; এরপরই না তার উপর নতুন অক্ষর লিখতে শুরু করে।
    ধোয়া-মোছার সময় শ্লেটের ঘাবড়ানো উচিত নয়; বরং তার মনে করা দরকার যে, তাকে আর একটি নতুন দফতরে রূপায়িত করা হচ্ছে।
    যখন তোমাদের ঘরের নতুন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় তখন আগেকার ভিত্তিকে তুলে দেয়া হয়।
    যমীনের বুক চিড়ে যদি সুপেয় পানি বের করতে হয় তাহলে প্রথমে উপরের কাদা উঠিয়ে ফেলতে হয়। -মছনবী


    কোন জরুরী কথা লিখতে গেলে এমন কাগজ তালাশ করা হয় যার উপর কিছু লেখা হয়নি এবং যা শুভ্র ; অনুরূপভাবে কোন জমিতে বীজ বপন করতে চাইলে আগাছামুক্ত জমিতেই তা করা হয়।
    অস্তিত্বহীনতা এবং শূণ্যতাই অস্তিত্বের অধিকার জন্মায় এবং স্রষ্টার রহমতের দরিয়ায় উত্তাল তরঙ্গের সৃষ্টি করে। দানশীল দানের জন্য অনুগ্রহপ্রার্থী নিঃস্ব ফকীরকেই বাছাই করে।

    অস্তিত্ববিহীনতা থেকেই অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটতে পারে ; ধনবান লোকেরা নিঃস্ব-দরিদ্রের প্রতিই বদান্যতা প্রদর্শন করে। -মছনবী


    তুমি স্বয়ং নিজের অবস্থার প্রতিই গভীরভাবে লক্ষ্য কর। তুমি বরাবরই ক্রমোন্নতির সোপানগুলো ধাপে ধাপে অতিক্রম করে এসেছ এবং ভাঙাগড়ার এই কার্যক্রম বরাবরের মতই অব্যাহত রয়েছে। তোমরা অস্তিত্বের একটা জামা (খোলস) খুলেছ এবং অপরটি পরিধান করেছ; এক 'ধ্বংস' থেকে তোমরা আরেক 'স্থায়ীত্ব' লাভ করেছ। যদি তোমরা প্রথম অবস্থায় থাকতে তাহলে এই উন্নতি ও পরিপূর্ণতা কোথা থেকে লাভ করতে? তোমরা কাদা পানির ভেতর বন্দী থাকতে ; এখন তোমরা উন্নতির চূড়ান্ত ও শেষ সোপানে পৌঁছাতে ঘাবড়াচ্ছ কেন? তোমাদের উড়ন্ত রূহ অস্থায়ী উপাদান সম্ভূত এই বন্দীশালা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেই বা কেন?

    যেদিন তুমি অস্তিত্বের মধ্যে এলে সেদিন নিশ্চয়ই আগুন, মাটি অথবা বাতাস ছিলে।
    যদি তুমি এই অবস্থায়ই থাকতে তাহলে তোমার আজকের এ উন্নতি ও পরিপূর্ণতা লাভের সুযোগ কি করে আসত?
    পরিবর্তিত অস্তিত্ব থেকে সেই প্রথম অস্তিত্ব চলে গেল ; অতঃপর সে স্থলে নতুন অস্তিত্বের ভিত্তি স্থাপন করা হল।

    হে যুবক! সমগ্র অস্তিত্বের আবির্ভাব সে তো শূণ্যতা থেকেই ; অতএব তুমি এই ধ্বংস থেকে কেন মুখ ফেরাতে চাও?
    ওহে মিসকীন! এই সব ধ্বংস (যা তোমার দেহে ক্রমান্বয়ে প্রতিফলিত হয়েছে) তোমার জন্য কবে ক্ষতিকর হল যে, এই ধ্বংস (মৃত্যু) থেকে বেঁচে থাকার জন্য তুমি এত বেশী মনযোগী হয়েছ? -মছনবী


    মৃত্যু আসলে মৃত্যু নয়, জীবনের সূচনা মাত্র। মৃত্যুর দিন মু'মিনের জন্য শোকের সন্ধ্যা নয় ; বরং ঈদের সুবহে সাদিক।

    আমি বহু পরীক্ষা করে দেখেছি, জীবনের মাঝেই আমার মৃত্যু ; এই জীবন থেকে যখন অবসর মিলবে তখনই আমি চিরস্থায়িত্ব লাভ করব। -মছনবী


    'আরিফের মৃত্যুকে সাধারণের মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। কেননা 'আরিফ এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে আদৌ দুঃখিত কিংবা চিন্তিত হন না ; বরং মৃত্যু তার জন্য এক সুসংবাদ এবং মৃত্যুর দমকা বাতাস তার অনুকূলে এক বসন্ত সমীরণ। 'আদ জাতির উপর যে ধ্বংসাত্মক বায়ুপ্রবাহ চালনা করা হয়েছিল তা হূদ (আঃ) ও তার সঙ্গীদের জন্য ছিল আরামদায়ক প্রভাত মলয়।

    হুদ (আঃ) ঈমানদারদের চারপাশে একটি সীমারেখা টেনে দিয়েছিলেন ; 'আদ সম্প্রদায়ের উপর প্রবাহিত গযবী হাওয়ার গতি উক্ত সীমারেখায় পৌঁছে শ্লথ হয়ে গিয়েছিল।

    ঠিক তেমনই মৃত্যুর হাওয়া 'আরিফ (আল্লাহ প্রেমিক, পূণ্যবান ব্যক্তি)দের জন্য কুসুম কাননের প্রভাত সমীরণের ন্যায় কোমল ও আরামদায়ক হয়ে থাকে। -মছনবী




    *******

    বই থেকে-
    ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রপথিক - ১ম খন্ড
    সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
    আল্লাহ আমাকে মাফ করুন ও ক্ষমা করে দিন।
    হয়তো শরীয়াহ নয়ত শাহাদাহ।

  • #2
    جزاك الله خيرا

    Comment

    Working...
    X