Announcement

Collapse
No announcement yet.

সংশয় নিরসন; ই’দাদ কি শুধু রাষ্ট্রেরই দ্বায়িত্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সংশয় নিরসন; ই’দাদ কি শুধু রাষ্ট্রেরই দ্বায়িত্ব

    বর্তমানে আলেমদের গাঁ বাচানোর একটি কৌশল হলো, দ্বীনের যে কাজগুলো করতে সরকার বাধা দেয়, সেগুলো সরকারের দ্বায়িত্ব বলে চালিয়ে দেওয়া এবং সরকারকে সেগুলো করার জন্য নসীহত করা। সরকার পর্যন্ত তাদের নসীহত পৌঁছল কিনা এবং কাফেরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী দালাল সরকার সেগুলো শুনবে কিনা তা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। বরং তারা নিজেদের মহান দ্বায়িত্ব (?) আদায়ের জন্য কোন প্রবন্ধ-নিবন্ধ বা বকৃতায় সরকারকে নসীহত করে দেওয়াই যথেষ্ট মনে করে। আসলে তারা নিজেরাও জানেন তাদের নসীহতে কোন কাজ হবে না।

    তো এরকমই একটি বিষয় হলো ই‘দাদ বা জিহাদের জন্য সামরিক প্রস্তুতি। তারা এই মহান ফরীযাকে সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অথচ আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন এবং কারণও বলে দিয়েছেন যে, এর দ্বারা তোমরা কাফেরদের অন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করবে, যেন তারা মুসলমানদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস না পায় এবং মুসলমানরা তাদের সহজ শিকারে পরিণত না হয়।

    وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ (তোমরা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখো, তোমাদের যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্বাবল-সুরা আনফাল, ৬০) এ আয়াতের ব্যাখায় মুফাসসিরগণ কেউ কেউ বলেছেন, এই আয়াতে সকল মুসলমানকে সম্বোধন করা হয়েছে। যার দ্বারা বুঝে আসে ইদাদ ফরযে আইন। হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকিহ ইমাম ফখরুদ্দীন যাইলায়ীর (মৃ: ৭৪৩ হি.) বক্তব্য থেকেও এমনটাই বুঝে আসে, যা আমরা সামনে উল্লেখ করবো। আর এ মতটি খুবই যুক্তিসংগত, কেননা শত্রু আক্রমণ করলে জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। আর শত্রু তো যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে, তাই যে কোন সময় জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যেতে পারে। এখন যদি আগে থেকে সামরিক ট্রেনিং গ্রহণ না করা হয় তাহলে অস্ত্র হাতে তুলে দিলেও তো আমরা তা চালাতে পারবো না। তখন সেই অস্ত্র দ্বারা নিজেদের মাথায় আঘাত করা ছাড়া আমাদের আর কি বা করার থাকবে?

    অবশ্য অনেক মুফাসসির বলেছেন, স্বাভাবিক অবস্থায় ইদাদ ফরযে কেফায়া, তবে কখনো কখনো তা ফরযে আইন হয়ে যায়। অর্থাৎ যখন জিহাদ ফরযে কেফায়া থাকে তখন ইদাদও ফরযে কেফায়া থাকে আর যখন জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায় তখন ইদাদও ফরযে আইন হয়ে যায়। তো খোলাসা হলো, আলেমগণ কেউ ইদাদকে ফরযে আইন বলেছেন আর কেউ ফরযে কেফায়া বলেছেন, আর ফরযে কেফায়ার অর্থ হলো, প্রয়োজন পরিমাণ মানুষ তা করলে অন্যরা গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে, অন্যথায় সকলেই গুনাহগার হবে। কিন্তু কোন মুফাসসিরই ই’দাদকে শুধু রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব বলেননি। সুতরাং বর্তমানে কিছু কিছু আলেমদের নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য ই’দাদকে রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব বলা এবং রাষ্ট্র তা না করলে নিজেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকা, মুফাসসিরদের সর্বসম্মত মত পরিপন্থী একটা মুহদাস বা বেদআতী কথা।

    এখানে একথা বলারও *সুযোগ নেই যে, ইদাদের জন্য বিরাট বাজেট, বড় প্রকল্প ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন, যা সাধারণত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যতীত সম্ভবপর হয় না। কেননা মুফাসসিরগণ এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইদাদের জন্য সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করতে হবে, এটম/পারমানবিক বোমা বানাতে হবে, এটা জরুরী নয়, বরং মুসলমানদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করবে, হোক তা একটি সাধারণ পিস্তল বা ক্লাশিনকোভ। দেখুন, আজ, আমরা নিরস্ত্র হওয়ায় ওরা বীরের বেশে যেভাবে ইচ্ছা আমাদের মারছে, আমাদের মারতে কোন পরোয়া করছে না। এটাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
    وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُمْ مَيْلَةً وَاحِدَةً
    ‘কাফেররা চায় তোমরা তোমরা তোমাদের অস্ত্রসস্ত্র ও সামানাদি থেকে অসর্তক হয়ে যাও, তাহলে তারা তোমাদের উপর একবারে ঝাঁপিয়ে পড়বে’। -সূরা নিসা, আয়াত, ১০২ এখন আমাদের অবস্থা হয়েছে বৃদ্ধ বাঘের মত যে তার থাবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, তাই ভীতু শিয়ালের পালও তাকে আক্রমণ করতে সাহস পায়। কিন্তু যদি আমাদের সবার হাতে একটি সাধারণ পিস্তলও থাকতো, তাহলে দেখে নেওয়া যেত, ওই ন্যাড়া বৌদ্ধ ও হিন্দু মালাউনদের বুকের পাটা কতটুকু। ওদের তো দুনিয়াই সব, মৃত্যুর পরে ওদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি, আর আমাদের জন্য দুনিয়া জেলখানা, শাহাদাতের মৃত্যু আমাদের পরম আরাধ্য। ওরা মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ায়, আর আমরা মৃত্যুকে হন্য হয়ে *খুজে ফিরি। সুতরাং যদি জিহাদের জন্য মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি আমাদের অতি সাধারণ সামরিক প্রস্তুতিও থাকতো তাহলে ওরা কখনোও আমাদের সাথে লাগতে আসার সাহস পেত না ইনশাআল্লাহ। ওরা এজন্যই আমাদের মারতে পারছে যে, আমরা কুরআন-সুন্নাহ আমাদের যেভাবে জিহাদ ও শাহাদাতের জন্য পাগল বানাতে চেয়েছিল, আমরা তা না হয়ে উল্টো দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার নামে জিহাদবিদ্বেষী হয়ে বসে আছি, মুনাফিকদের গুণ মৃত্যুর ভয় নিজেদের মাঝে ধারণ করে ভীরু কাপুরুষ হয়ে গেছি, আর ইদাদকে রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব বলে নিজেরা তা সম্পূর্ণরুপে বর্জন করেছি। ফলে আমাদের ক্ষেত্রে রাসূলের ভবিষ্যতদ্বানী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছে, ‘অচিরেই তোমাদের (হত্যা এবং তোমাদের দেশ ও সম্পদ লুন্ঠন করার জন্য) ভিন্নধর্মাবলীরা একে অপরকে আহ্বান করবে, যেভাবে দস্তরখানে উপবেশনকারীরা খাবার গ্রহণের জন্য একে অপরকে আহ্বান করে। ... তোমাদের সংখ্যা হবে অনেক, কিন্তু তোমরা হবে ভাসমান খড়কুটোর ন্যায় (প্রভাবহীন)। আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের অন্তর হতে তোমাদের ভয় *উঠিয়ে নিবেন আর তোমাদের অন্তরে ঢেলে দিবেন ওয়াহান ... (অর্থাৎ) দুনিয়ার ভালোবাসা ও (শহিদি) মৃত্যুতে অনীহা’।
    (সুনানে আবু দাউদ, ৪২৯৭ মুসনাদে আহমদ 22৩৯৭, শায়েখ আওয়ামা ও শায়েখ শুয়াইব হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। দেখুন, সুনানে আবু দাউদ, তাহকীক শায়েখ শুয়াইব, ৬/৩৫৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, তাহকীক, শায়েখ আওয়ামা, ২১/৯২ মুসনাদে আহমদের আরেক হাদিসে (৮৭১৩) আছে, وما الوهن يا رسول الله؟ قال: حبكم الدنيا وكراهيتكم القتال ‘ওয়াহান হলো, দুনিয়ার ভালোবাসা ও যুদ্ধকে অপছন্দ করা’। এ হাদিস প্রমাণ করে পূর্বোক্ত হাদিসে ‘মৃত্যুকে অপছন্দ করা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শহিদি মৃত্যুকে অপছন্দ করা)

    অনেকে প্রশ্ন করেন, রোহিঙ্গারা যখন মরছেই তো ওরা তো মেরেও মরতে পারে, শুধু শুধু কেন মরছে? কিন্তু ভাইয়েরা, জেনে রাখুন, লড়াই করে মরার জন্যও অস্ত্রের প্রয়োজন। কেননা অস্ত্রধারীদের সাথে খালিহাতে মোকাবেলার জন্য যে অসীম সাহসের প্রয়োজন তা অধিকাংশ লোকেরই থাকে না। পক্ষান্তরে অস্ত্র হাতে পেলে ভীরুও সাহসী হয়ে উঠে।

    কথা দীর্ঘ হয়ে গেল, তো চলুন, এবার আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরদের বক্তব্যগুলো দেখি।

    ১. খেলাফতে উসমানীয়ার শাইখুল ইসলাম হানাফী মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় ফকিহ ও মুফাসসির আল্লামা আবুস সাউদ আফেন্দী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৯৮2 হি.) বলেন,
    {وَأَعِدُّواْ لَهُمْ} توجيهُ الخطاب إلى كافة المؤمنين لما أن المأمورَ به من وظائف الكلِّ، ... {مَّا استطعتم مّن قُوَّةٍ} من كل ما يُتقوَّى به في الحرب كائناً ما كان (تفسيير أبي السعود: 4/32 ط. دار إحياء التراث العربي)

    আল্লাহ তাআলার বাণী وَأَعِدُّوْا لَهُمْ (তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত কর…) এতে সকল ঈমানদারকে সম্বোধন করা হয়েছে। কেননা, আদিষ্ট বিষয়টি সকলেরই দায়িত্ব। ... مَّا استطعتم مّن قُوَّةٍ ( তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি) অর্থাৎ যুদ্ধের ক্ষেত্রে শক্তিবর্ধক এমন সব কিছু, চাই তা যাই হোক না কেন। -তাফসীরে আবুস সাউদ, ৪/৩২

    ২. হানাফী মাযহাবের অনুসারী আলেম আল্লামা শিহাবুদ্দীন মাহমুদ আলূসী রহিমাহুল্লাহু (মৃত্যু: ১২৭০) তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ রুহুল মাআনীতে হুবহু একই কথা বলেছেন, তার ইবারত দেখুন,
    وَأَعِدُّوْا لَهُمْ خطاب لكافة المؤمنين لما أن المأمور به من وظائف الكل .... {مَّا استطعتم مّن قُوَّةٍ} من كل ما يُتقوَّى به في الحرب كائناً ما كان. (روح المعاني: 5/220 ط. دار الكتب العلمية: 1415 هـ)

    আল্লাহ তাআলার বাণী (তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত কর…) এতে সকল ঈমানদারকে সম্বোধন করা হয়েছে। কেননা, আদিষ্ট বিষয়টি সকলেরই দায়িত্ব। ... (তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি) অর্থাৎ যুদ্ধের ক্ষেত্রে শক্তিবর্ধক এমন সব কিছু, চাই তা যাই হোক না কেন। -রুহুল মাআনী, ৫/22০

    ৩. তাফসীর জগতের উজ্জল নক্ষত্র ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহিমাহুল্লাহু (মৃত্যু ৬০৬ হি.) বলেন,
    قال أصحاب المعاني: الأولى أن يقال: هذا عام في كل ما يتقوى به على حرب العدو، وكل ما هو آلة للغزو والجهاد فهو من جملة القوة … وهذه الآية تدل على أن الاستعداد للجهاد بالنبل والسلاح وتعليم الفروسية والرمي فريضة، إلا أنه من فروض الكفايات. (التفسير الكبير: 15/499 ط. دار إحياء التراث العربي: 1420 هـ)

    মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে قوة শব্দ দ্বারা যুদ্ধের ক্ষেত্রে শক্তিবর্ধক সব কিছু উদ্দেশ্য, সুতরাং যা কিছুই যুদ্ধের মাধ্যম হয় তাই قوة বা শক্তির অন্তর্ভূক্ত। … এ আয়াত থেকে বুঝে আসে জিহাদের জন্য তীর, অস্ত্র ইত্যাদি দ্বারা প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং অশ্বচালনা ও তীরন্দাজী শিক্ষা করা ফরয, তবে তা ফরযে কেফায়াহ। -তাফসীরে রাযী, ১৫/৪৯৯

    ৪. ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহু (মৃত্যু: ৬৭১ হি.) বলেন,
    قوله تعالى: "وأعدوا لهم" أمر الله سبحانه المؤمنين بإعداد القوة للأعداء بعد أن أكد تقدمة التقوى. فإن الله سبحانه لو شاء لهزمهم بالكلام والتفل في وجوههم وبحفنة من تراب، كما فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم. ولكنه أراد أن يبتلي بعض الناس ببعض بعلمه السابق وقضائه النافذ. وكلما تعده لصديقك من خير أو لعدوك من شر فهو داخل في عدتك... وتعلم الفروسية واستعمال الأسلحة فرض كفاية وقد يتعين. (تفسير القرطبي: 8/35-36 ط. دار عالم الكتب)

    আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অর্জনে গুরুত্বারোপ করার পর মুমিনদের শক্তি অর্জনের আদেশ দিয়েছেন, আল্লাহ চাইলে ওদেরকে কথা, চেহারায় থুথু নিক্ষেপ বা (ওদের দিকে) একমুষ্ঠি মাটি নিক্ষেপ করার দ্বারাই পরাজিত করতে পারতেন, যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, কিন্তু তিনি তার ইলম ও ফয়সালা অনুযায়ী কিছু মানুষকে অপর কিছু মানুষের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। তুমি তোমার বন্ধুর জন্য যা কিছু ভালো, এবং শত্রুর জন্য যা কিছু মন্দ প্রস্তুত করে রাখো, তার সবই বা প্রস্তুতিগ্রহণের অন্তর্ভুক্ত। অশ্বচালনা শিক্ষা করা এবং অস্ত্রপাতির ব্যবহার রপ্ত করা ফরযে কিফায়া। তবে কখনো কখনো ফরযে আইন হয়ে যায়। -তাফসীরে কুরতুবী: ৮/৩৫-৩৬

    ৫. আল্লামা আবু হাইয়ান আন্দালূসী রহিমাহুল্লাহু (মৃত্যু: ৭৪৫ হি.) বলেন,
    والمخاطبون هم المؤمنون ... والظاهر: العموم في كل ما يتقوى به على حرب العدو مما أورده المفسرون على سبيل الخصوص، والمراد به التمثيل، كالرمي وذكور الخيل وقوة القلوب واتفاق الكلمة والحصون المشيدة وآلات الحرب وعددها والأزواد والملابس الباهية، حتى إن مجاهدا رُئي يتجهز للجهاد، وعنده جوالق، فقال: هذا من القوة. وأما ما ورد في صحيح مسلم عن عقبة بن عامر، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهو على المنبر، يقول: «وأعدوا لهم ما استطعتم من قوة، ألا إن القوة الرمي، ألا إن القوة الرمي». فمعناه، والله أعلم: أن معظم القوة وأنكاها للعدو: الرمي، كما جاء: «الحج عرفة». (البحر المحيط: 5/343 ط. دار الفكر: 1420 هـ)


    এ আয়াতে মুমিনদের সম্বোধন করা হয়েছে, (অর্থাৎ প্রস্তুতির আদেশ সব মুমিনের জন্য) আয়াতের স্বাভাবিক অর্থ হলো, এখানে قوة (শক্তি) দ্বারা ঐ সব কিছুই উদ্দেশ্য যেগুলো মুফাসসিরগণ দৃষ্টান্তরুপে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, তীরন্দাযী, অশ্ব প্রস্তুত রাখা, সাহসিকতা, একতা, মযবুত দূর্গ, যুদ্ধের সামগ্রী, পাথেয়, রেশমী কাপড় (যা শত্রুর চোখ ধাঁধিয়ে দেয়) এমনকি এক মুজাহিদকে স্বপ্নে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়, তার কাছে কিছু থলি ছিল, তিনি বললেন, এগুলোও قوة বা শক্তির অন্তর্ভুক্ত। আর সহিহ মুসলিমে উকবা বিন আমের রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদিস, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই শক্তি হলো নিক্ষেপণ শক্তি, নিশ্চয়ই শক্তি হলো, নিক্ষেপণ শক্তি’ তো এই হাদিসের অর্থ হলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শত্রুদের বিপক্ষে সবচেয়ে কার্যকর শক্তি হলো নিক্ষেপণ শক্তি। -আলবাহরুল মুহিত, ৫/৩৪৩

    6 - গত শতাব্দীর বরেণ্য আলেম শায়েখ জামালুদ্দীন কাসেমী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ১৩৩২ হি.) বলেন,
    وأما اليوم، فقد ترك المسلمون العمل بهذه الآية الكريمة، ومالوا إلى النعيم والترف فأهملوا فرضا من فروض الكفاية، فأصبحت جميع الأمة آثمة بترك هذا الفرض. (محاسن التأويل: 5/316 ط. دار الكتب العلميه: 1418 هـ)

    আজ মুসলমানরা এই আয়াতের উপর আমল না করে ভোগবিলাসে লিপ্ত হয়ে গিয়েছে এবং একটি ফরযে কেফায়া দ্বায়িত্ব পালন ছেড়ে দিয়েছে। তাই পুরো উম্মাহই ফরয তরকের দায়ে গুনাহগার হয়েছে। -মাহাসিনুত তা’বীল, ৫/৩১৬

    ৭ - হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকিহ ইমাম ফখরুদ্দীন যাইলায়ী রহ. (মৃ: ৭৪৩ হি.) বলেন:
    وفي الجامع الصغير: الجهاد واجب، إلا أن المسلمين في سعة، حتى يُحتاج إليهم، فقوله: «في سعة» إشارة إلى أن مباشرة القتال لا تجب في كل وقت، بل الاستعداد له كافٍ، وقوله: «حتى يُحتاج إليهم» إشارة إلى أن مباشرة القتال فرض على الكل عند الحاجة إليهم، وهو النفير العام، لأن المقصود حينئذ لا يحصل إلا بإقامة الكل، فيفترض عليهم مباشرته. (تبيين الحقائق: 3/242 ط. المطبعة الكبرى الأميرية ببولاق: 1313 هـ)

    জামিউস সগীর কিতাবে ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন: ‘জিহাদ ফরয, তবে – সকলে যুদ্ধে বের হওয়ার - প্রয়োজন না পড়লে মুসলমানদের জন্য জিহাদে না যাওয়ারও অবকাশ আছে’। মুহাম্মদ রহ. এর বক্তব্য : ‘না যাওয়ারও অবকাশ আছে’ এ থেকে বুঝা যায়, স্বশরীরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ সর্বাবস্থায় ফরয নয়, বরং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখাই যথেষ্ট। আর তাঁর বক্তব্য: ‘সকলে যুদ্ধে বের হওয়ার প্রয়োজন না পড়লে’ এ থেকে বুঝা যায়, প্রয়োজন পড়লে সকলের উপরেই স্বশরীরে যুদ্ধ করা ফরয। আর প্রয়োজনের সময়টি হচ্ছে যখন ‘নফীরে আম’ এর হালত তৈরী হয়ে যায়। কেননা, তখন সকলে যুদ্ধে বের হওয়া ব্যতীত উদ্দেশ্য অর্জন হবে না। কাজেই তখন সকলের উপরই স্বশরীরে যুদ্ধ করা ফরয হবে। -তাবয়ীনুল হাকায়িক: ৩/২৪২


    ৮ - শায়েখ সুলাইমান আল-উলওয়ান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) বলেন:
    وجعلوه إحدى فروض الكفايات، وقد يكون فرض عين على أهل القدرة من الذكور، شأنه في ذلك شأن الجهاد، منه ما هو فرض عين، ومنه ما هو فرض كفاية. اهـ

    আইম্মায়ে কেরাম ই’দাদকে ফরযে কিফায়া সাব্যস্ত করেছেন। তবে সক্ষম পুরুষদের উপর কখনো কখনো ফরযে আইন হয়ে যায়। এর হুকুম জিহাদের হুকুমের অনুরূপ। জিহাদ যেমন ফরযে আইন ও ফরযে কিফায়া দুই ভাগে বিভক্ত; ই’দাদও তেমনি। -ফতওয়া ফী তাওজীহিল উম্মাহ, পৃ: ১০

    ইদাদের সাথে সম্পৃক্ত ইলমী বিষয়গুলো নিয়ে মুফতী আব্দুল ওয়াহহাব হাফিযাহুল্লাহু ‘ইদাদ একটি ভুলে যাওয়া ফরয’ নামে একটি খুবই উপকারী কিতাব রচনা করেছেন। আমি কিতাবটির লিংক দিয়ে দিচ্ছি। যারা কিতাবটি পড়েননি তারা ইদাদের মাসায়েল জানার জন্য কিতাবটি পড়ে নিতে পারেন। তাহলে ইদাদের বিষয়গুলোতে ভাইদের কোন অসচ্ছতা থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
    ইদাদ, একটি ভুলে যাওয়া ফরয। ডাউনলোড লিংক
    https://www.pdf-archive.com/2017/05/...tten-fardh.pdf
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    মাশা,আল্লাহ!! ভাই আমি সর্বদাই অপেক্ষমাণ থাকি যে কখন আসবে ভাইর পোস্ট!!
    আল্লাহ আপনার ইলমের বাজার গরম রাখুন। এবং তার হক আদায়কারী
    হিসাবে কবুল করুণ এবং আমাদেরকেও আপনার সাথে থাকার
    তাওফীক দান করুণ। (আমিন ইয়া রব্বাল আলামিম)
    فمن یکفر بالطاغوت ویٶمن بالله فقد استمسک بالعروت الوثقی'
    کم من فاة قلیلة غلبت فاة کثیرة باذن الله

    Comment

    Working...
    X