Announcement

Collapse
No announcement yet.

একটি হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা ও তার মান সম্পর্কে জানতে চাই? খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • একটি হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা ও তার মান সম্পর্কে জানতে চাই? খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষ

    বর্তমানে একজন প্রসিদ্ধ পীরের বয়ানে নিচের হাদীস দ্বারা জিহাদ করার চাইতে যিকির করা উত্তম মর্মে একটি অডিও আমার হস্তগত হয়েছে। তাই বিজ্ঞ আলিম-উলামা, বিশেষকরে ইলম ও জিহাদ ভাইয়ের নিকট বিনীত আবেদন এই হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা ও মান সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখে উত্তর প্রদান করে বাধিত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা ভাইদের জন্য তা সহজ করে দিন। আমীন


    নিচে মুসনাদে আহমাদ থেকে হাদীসটির মূল আরবী ইবারত দেয়া হলো-


    এই হাদীসটির মান উল্লেখ করতে গিয়ে প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা শুয়াইব আরনাউত কর্তৃক তালীক ও তাহকীককৃত মুসনাদে আহমাদের নুসখায় নিচের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে-



    তারপর হায়াতুল মুসলিমীন নামক কিতাব থেকে তার অনুবাদ পেশ করা হলো-

    হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে রেওয়ায়ত আছে যে, (একদা) হুযুর আলাইহিস সালামের দরবারে জিজ্ঞাসা করা হইল, হুযুর! বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় মর্তবার কে হইবে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ “ যে সকল নর-নারী খুব বেশী করিয়া আল্লাহর যিকর করিতে থাকিবে, তাহারাই (সবচেয়ে বড় মর্তবার হইবে), আরয করা হইল, হুযুর! যাহারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করিবে, তাহাদের চেয়েও কি (উপরোক্ত যাকেরীনদের মর্তবা অধিক)? হুযৃর বলিলেন, যদি কোন ব্যক্তি (আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করিতে গিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে) কাফের এবং মুশরিকদের মধ্যে এত পরিমাণ তলওয়ারবাজী করিয়া থাকে যে, তাহার তলওয়ার টুটিয়া গিয়াছে এবং সে নিজেও রক্তাক্ত হইয়া গিয়াছে, তবে তাহা অপেক্ষাও আল্লাহর যাকেরীনের মর্তবা বড়। কারণ, জেহাদও আল্লাহর যিকরের উদ্দেশ্যেই হইয়া থাকে।”-আহমাদ
    (সূত্র: থানবী রহ.-এর কিতাব “হায়াতুল মুসলিমীন” অনুবাদক: হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রঃ)। প্রকাশক: এমদাদিয়া পুস্তকালয় (প্রাঃ) লিঃ,ঢাকা। প্রকাশকাল: নভেম্বর, ২০০৯ইং। পৃষ্ঠা নং-১০৮)

    *******************************************
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    মুহতারাম ভাই, শায়খ আলবানী রহ. এবং শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. উভয়ই হাদিসটিকে যয়ীফ বলেছেন। এ জাতীয় আরো কিছু হাদিস আছে। যদি সহীহও হয়ে থাকে, তথাপি হাদিস দ্বারা মুজাহিদদের তুলনায় পীরদের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝা যায় না। কারণ, পীরেরা খানকায় বসে শুধু যিকির করেন, আর মুজাহিদগণ জিহাদের ময়দানে আল্লাহর যিকিরের পাশাপাশি নিজেদের জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেন। যিকিরে যিকিরে কাটাকাটি ধরলে জান মাল বিলিয়ে দেয়ার দিক থেকে মুজাহিদগণ শ্রেষ্ঠ। অধিকন্তু যারা জিহাদ ছেড়ে খানকায় বসে আছেন, তারা জিহাদের ফরয বিধান ছাড়ার গুনাহয় লিপ্ত। পক্ষান্তরে মুজাহিদগণ এ গুনাহে লিপ্ত নন। এ দিক থেকেও মুজাহিদগণ শ্রেষ্ঠ। যাহোক, এ হল মোটামুটি কথা। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সকল মুজাহিদ সকল পীর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ ব্যাপারে আপনি এ পোস্টটি দেখতে পারেন:


    জিহাদ উত্তম না যিকির উত্তম?

    তিরমিযি শরীফের একটি হাদিস নিয়ে এক ভাই দ্বিধাদ্বন্ধে ছিলেন। হাদিসের তরজমা তিনি এই উল্লেখ করেছিলেন,

    “আবূদ দারদা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শক্রর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলার যিকর।

    মু'আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা'আলার যিকরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই।”

    মূল হাদিসটি (সুনানে তিরমিযি: ৩৩৭৭) এই-
    عن أبي الدرداء رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه و سلم: ألا أنبئكم بخير أعمالكم وأزكاها عند مليككم وأرفعها في درجاتكم وخير لكم من إنفاق الذهب والورق وخير لكم من أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم ؟ قالوا بلى، قال: ذكر الله تعالى. فقال معاذ بن جبل رضي الله عنه: ما شيء أنجى من عذاب الله من ذكر الله

    ভাইয়ের পেরেশানীর কারণ সম্ভবত এই যে, এ হাদিসে যিকিরকে জিহাদের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে, অথচ জিহাদের ফজিলত সীমাহীন। অধিকন্তু এ হাদিসকে কেন্দ্র করে যিকিরপন্থীরা জিহাদ তরকের বাহানা খোঁজবে। ইনশাআল্লাহ আমি হাদিসটির সহীহ ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

    প্রথমে মনে রাখতে হবে, কোন আমলের ফজিলত বেশি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, অন্য সকল ফরয-নফল বাদ দিয়ে এটাতেই লিপ্ত থাকতে হবে। এমনটা মনে করা সুস্পষ্টই গোমরাহি। যেমন ধরুন- নামাযের ফজিলত অনেক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সারাক্ষণ শুধু নামাযেই ব্যস্ত থাকবে; হজ্ব করবে না, যাকাত দেবে না, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেবে না... ইত্যাদি। বরং যার উপর যে যে বিষয় ফরয তাকে তা আদায় করতে হবে। ফরয দায়িত্ব আদায়ের পর বা পাশাপাশি অন্যান্য আমল করতে কোন অসুবিধা নেই। যে যত আমল করবে তার তত প্রতিদান মিলবে।

    জিহাদ ও যিকিরের ক্ষেত্রেও একই কথা। যিকিরের ফজিলত যদি জিহাদের চেয়ে বেশিও হয়ে থাক, তাহলে এর অর্থ এই নয় যে, ফরয জিহাদ ছেড়ে যিকিরে মশগুল থাকবে। এটা তখন ফরয নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত ছেড়ে যিকিরে মশগুল থাকার মতোই হবে। বরং যিকিরের ফজিলতের অর্থ: নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-জিহাদ-কিতাল ইত্যাদি ফরয আদায়ের পাশাপাশি যিকিরেরও পাবন্দি করবে। ফরয ছেড়ে যে যিকিরে লিপ্ত থাকবে সে গোমরাহ হওয়ার ব্যাপারে আশাকরি কারো দ্বিমত নেই। ফরয জিহাদ ছেড়ে খানকাহ ও যিকির মশগুল ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা।

    দ্বিতীয়ত: আমলের সওয়াব তার কষ্টের ভিত্তিতে নয়, আমলের মর্যাদা হিসেবে। যে আমলের মর্যাদা বেশি তার সওয়াবও বেশি- যদিও তা সহজ হয় আর অন্যগুলো কঠিন হয়। যেমন- ঈমান আনা অনেক সহজ কাজ। কিন্তু এর প্রতিদান অন্য সকল আমলের চেয়ে বেশি। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-জিহাদ-কিতাল ইত্যাদি সকল আমলের চেয়ে ঈমানের প্রতিদান বেশি, অথচ এসবগুলোর তুলনায় ঈমান সহজ। এ বিষয়টি ইজ্জুদ্দীন ইবনে আব্দুস সালাম রহ. পরিষ্কার আলোচনা করেছেন তার [ক্বাওয়ায়িদুল আহকাম ফি মাসালিহিল আনাম] কিতাবে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন,
    ومما يدل على أن الثواب لا يترتب على قدر النصب في جميع العبادات ... والحاصل بأن الثواب يترتب على تفاوت الرتب في الشرف. اهـ

    “সকল ইবাদতে সওয়াবের পরিমাণ যে কষ্টের ভিত্তিতে নয় তার দলীল- এরপর তিনি উপরোক্ত হাদিসসহ যিকির সংক্রান্ত আরো হাদিস উল্লেখ করেন। তারপর বলেন- সারকথা: সওয়াব নির্ধারিত হয় আমলের মর্যাদার কম বেশ এর ভিত্তিতে।” (ক্বাওয়ায়িদুল আহকাম ফি মাসালিহিল আনাম: ১/৪৮)

    অতএব, কোন আমলের মর্যাদা বেশি হলে তার সওয়াবও বেশি- যদিও তা অন্যান্য আমলের চেয়ে অনেক সহজ হয়। আর কোন আমলের মর্যাদা কম হলে তার সওয়াবও কম- যদিও তা অন্যান্য মর্যাদাবান আমলের চেয়ে কষ্টসাধ্য হয়।

    এবার আমরা আলোচ্য হাদিসে আসি। এ হাদিসে আল্লাহ তাআলার যিকিরকে ইনফাক তথা যাকাত, দান-খায়রাতসহ অন্য সকল আর্থিক ইবাদাতের চেয়ে এবং জিহাদের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। এখানে যিকির দ্বারা কি উদ্দেশ্য?

    দু’টি উদ্দেশ্য নেয়া যায়:
    ১. কলবি যিকির। তথা সার্বক্ষণিক আল্লাহ তাআলার ইয়াদ ও নিয়তের পরিশুদ্ধি। যদি এমনটি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে স্পষ্ট যে, পরিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন আমলই সহীহ না। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, জিহাদ-কিতাল ইত্যাদি কোন কিছুই পরিশুদ্ধ ও খালেছ নিয়ত ছাড়া সহীহ না। খালেছ নিয়ত ছাড়া সওয়াব পাওয়া যায় না। তদ্রূপ, আল্লাহ তাআলার ইয়াদ ছাড়া শুধু ভাসা ভাসা আমলের দ্বারাও তেমন সওয়াব পাওয়া যায় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহ তাআলার যিকির অন্য সকল আমল হতে উত্তম হওয়া স্বাভাবিক। এ কারণেই হাদিসে মু’মিনের নিয়তকে তার আমলের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। কাযি ইবনুল আরাবী রহ. এমনটিই বলেছেন।

    হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
    وأجاب القاضي أبو بكر بن العربي بأنه ما من عمل صالح الا والذكر مشترط في تصحيحه فمن لم يذكر الله بقلبه عند صدقته أو صيامه مثلا فليس عمله كاملا فصار الذكر أفضل الأعمال من هذه الحيثية ويشير إلى ذلك حديث نية المؤمن ابلغ من عمله اهـ

    “কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবী রহ. এ হাদিসের এই জওয়াব দিয়েছেন যে, প্রতিটি নেক কাজ সহীহ হওয়ার জন্য যিকির শর্ত। যে ব্যক্তি- উদাহরণস্বরূপ- তার সাদাকা বা তার রোযা আদায়ের সময় অন্তরে আল্লাহ তাআলাকে ইয়াদ না করবে, তার আমল কামেল নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে যিকির (তথা আল্লাহ তাআলার ইয়াদ) সর্বোত্তম আমল। হাদিস: ‘মু’মিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম’- এ দিকেই ঈঙ্গিত করে।” (ফাতহুল বারি: ১১/২১০)

    উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী নিছক মৌখিক যিকির জিহাদ ও অন্যান্য আমল থেকে উত্তম সাব্যস্ত হয় না। আর যিকির যদি বিদআতি যিকির হয, তাহলে তো উত্তম হওয়ার প্রশ্নই আসে না। হানাফি মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম ইবনুল মালাক রহ. (৮৫৪হি.) এ হাকিকতটিই তুলে ধরেছেন। তার যামানার জাহেল সুফিদের খণ্ডনকল্পে আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,
    المراد من هذا: هو الذِّكر القلبي ... لا الذِّكر اللِّساني المشتمل على صياحٍ وانزجاعٍ، وشدةِ تحريكِ العنقِ واعوجاجٍ، كما يفعله بعض الناس زاعمين أن ذلك جالبٌ للحضور، وموجبٌ للسرور، حاشا لله، بل هو سبب للغَيبة والغرور. اهـ

    “এখানে যিকির দ্বারা কলবি যিকির উদ্দেশ্য ... মৌখিক যিকির উদ্দেশ্য নয়, যে যিকিরে থাকে চিল্লা-ফাল্লা আর হৈ-হুল্লোর, জোরে জোরে ঘাড় নাড়ানো আর বক্র অঙ্গভঙ্গি। যেমনটা কতক লোক করে থাকে। মনে করে- এমন করলে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও অন্তরের প্রশান্তি অর্জন হবে। আল্লাহর পানা। কিছুতেই না। এসব বরং আল্লাহ তাআলা থেকে দূরে সরা ও প্রবঞ্চনার কারণ।” (শরহু ইবনিল মালাক আলাল মাসাবিহ: ৩/৯২)

    ২. দ্বিতীয়ত যিকির দ্বারা যেকোন যিকির উদ্দেশ্য নয়, বরং কামেল যিকির উদ্দেশ্য। আর তা হবে আল্লাহ তাআলার আযমত ও ইস্তিহজার সহ যিকরে লিসানি তথা মৌখিক যিকির ও কলবি যিকিরের সমন্বিত যিকির। তাহলে এ যিকিরের জন্য কয়েকটি বিষয় জরুরী:

    ক. অন্তরে আল্লাহ তাআলার আযমত ও বড়ত্বের অনভূতি।

    খ. ইস্তিহজার তথা আল্লাহ তাআলাকে হাজির নাযির মনে করে, তিনি আমাকে দেখছেন আমি তার সামনে আছি- এমন অনুভূতি নিয়ে যিকির করা।

    গ. যিকিরের মা’না-মাফহুম তথা অর্থ ও মর্ম বুঝে যিকির করা।

    ঘ. যিকির মাসনুন যিকির হওয়া বা শরীয়তসম্মত অন্য কোন যিকির হওয়া।


    এ গেল যিকিরের কথা। আর যেসব আমলের তুলনায় এ যিকিরকে উত্তম বলা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা হল- সেগুলোতে যথাযথ আল্লাহর ইয়াদ নেই, ইস্তিহযার এবং আযমত ও বড়ত্বের উপলব্ধি নেই। শুধু ভাসা ভাসা আমল। এমন ধরণের আমলের তুলনায় পূর্বোল্লিখিত যিকিরকে উত্তম বলা হয়েছে। অতএব, যে ব্যক্তি জিহাদ করছে কিন্তু জিহাদরত অবস্থায় তার মুখে আল্লাহর যিকির নেই, অন্তরে আল্লাহর ইয়াদ ও আযমতের উপলব্ধি নেই- তার এ জিহাদের তুলনায় পূর্বোক্ত কামেল যিকিরের সওয়াব বেশি। যদিও তার জিহাদে কষ্ট হচ্ছে বেশি, কিন্তু যথাযথ লিসানি ও কলবি যিকিরের সমন্বয় না থাকার কারণে তার জিহাদের সওয়াব কমে গেছে। আর কমবেই বা না কেন, জিহাদরত অবস্থায় তো অন্তরে আল্লাহ তাআলাকে অধিক পরিমাণে ইয়াদ করার এবং যবান আল্লাহ তাআলার যিকিরে মশগুল রাখার আদেশ স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।
    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ}
    “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোন বাহিনির সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহ তাআলাকে অধিক পরিমাণে স্বরণ করতে থাক, যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার।” (আনফাল: ৪৫)
    ইমাম জাসসাস রহ. বলেন,
    وقوله تعالى: {واذكروا الله كثيرا} يحتمل وجهين: أحدهما: ذكر الله تعالى باللسان، والآخر: الذكر بالقلب، وذلك على وجهين: أحدهما: ذكر ثواب الصبر على الثبات لجهاد أعداء الله المشركين وذكر عقاب الفرار؛ والثاني: ذكر دلائله ونعمه على عباده وما يستحقه عليهم من القيام بفرضه في جهاد أعدائه. وضروب هذه الأذكار كلها تعين على الصبر والثبات ويستدعى بها النصر من الله والجرأة على العدو والاستهانة بهم. وجائز أن يكون المراد بالآية جميع الأذكار لشمول الاسم لجميعها. اهـ
    “আল্লাহ তাআলার বাণী- ‘এবং আল্লাহ তাআলাকে অধিক পরিমাণে স্বরণ করতে থাক’ এর দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে:

    এক. মুখে আল্লাহ তাআলার যিকির করা।
    দুই. অন্তরের যিকির।

    অন্তরের যিকির আবার দুই ধরণের:
    এক
    . আল্লাহর দুশমন মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে সুদৃঢ় ও অটল-অবিচল থাকার সওয়াব এবং যুদ্ধ হতে পলায়নের শাস্তির কথা স্বরণ করা।

    দুই. আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলী, বান্দাদের উপর আল্লাহ তাআলার নেয়ামতরাজি এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদের যে ফরয দায়িত্ব তাদের উপর তার পাওনা রয়েছে- সেগুলো স্বরণ করা।


    এই সব ধরণের যিকির অটল অবিচল থাকতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলার নুসরত লাভ এবং শত্রুর উপর দুঃসাহসিকতা দেখানো ও তাদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার মাধ্যম হবে।

    অধিকন্তু আয়াতের দ্বারা সব ধরণের যিকিরই উদ্দেশ্য হতে পারে। কেননা, যিকির শব্দ সব ধরণের যিকিরকেই বুঝায়।” (আহকামুল কুরআন: ৩/৮৬)


    পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে, যথাযথ কলবি ও লিসানি যিকির সহ, আল্লাহ তাআলার আযমত ও ইস্তিহজার সহ, সওয়াবের আশা ও শাস্তির ভয় নিয়ে আল্লাহ তাআলার দ্বীনের বিজয়ের উদ্দেশ্যে জিহাদ করবে- তার এ জিহাদের প্রতিদান উপরোক্ত কামেল যিকিরের চেয়েও বেশি। কেননা, এখানে দু’টি আমলের সমন্বয় ঘটেছে:

    ক. কামেল যিকির।
    খ. জিহাদ।

    অতএব, এমন মুজাহিদের জিহাদের সওয়াব ঐসব ব্যক্তির কামেল যিকিরের চেয়ে বেশি, যারা বাড়িতে বা মসজিদে বসে, পূর্ণ ধ্যান খেয়ালে, পূর্ণ আযমত ও ইস্তিহজারের সাথে, অর্থ ও মর্ম বুঝে বুঝে মাসনুন ও শরীয়তসম্মত যিকিরে লিপ্ত আছে। কেননা, এসকল ব্যক্তির আমল হল একটা। তা হচ্ছে- শুধু যিকির। পক্ষান্তরে মুজাহিদের আমল দু’টি: ক. যিকির। খ. জিহাদ। কাজেই তার সওয়াব বেশি।

    হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
    أشرت إليه مستشكلا في أوائل الجهاد مع ما ورد في فضل المجاهد انه كالصائم لا يفطر وكالقائم لا يفتر وغير ذلك مما يدل على افضليته على غيره من الأعمال الصالحة، وطريق الجمع والله اعلم ان المراد بذكر الله في حديث أبي الدرداء الذكر الكامل، وهو ما يجتمع فيه ذكر اللسان والقلب بالتفكر في المعنى واستحضار عظمة الله تعالى، وان الذي يحصل له ذلك يكون أفضل ممن يقاتل الكفار مثلا من غير استحضار لذلك، وان أفضلية الجهاد انما هي بالنسبة إلى ذكر اللسان المجرد، فمن اتفق له انه جمع ذلك كمن يذكر الله بلسانه وقلبه واستحضاره وكل ذلك حال صلاته أو في صيامه أو تصدقه أو قتاله الكفار مثلا فهو الذي بلغ الغاية القصوى. اهـ

    “কিতাবুল জিহাদের শুরুতে এ হাদিসের দিকে ঈঙ্গিত করে এসেছি। মুজাহিদের যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তার দাবি হল- জিহাদ অন্য সকল নেক কাজের চেয়ে উত্তম। যেমন- মুজাহিদ ঐ রোযাদারের মতো যে কখনোও রোযা ভাঙে না। ঐ ইবাদাত গুজারের মতো যে, কখনও বিরতি দেয় না। এছাড়াও অন্যান্য ফজিলত। এতদসত্ত্বেও এ হাদিসে যিকিরকে উত্তম বলাটা (বাহ্যত) মুশকিল মনে হয়। -ওয়াল্লাহু আ’লাম- উভয়ের সমন্বয় এভাবে হবে যে, আবুদদারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসে আল্লাহ তাআলার যিকির দ্বারা কামেল যিকির উদ্দেশ্য। আর কামেল যিকির হল ঐ যিকির, যে যিকিরে মৌখিক যিকির এবং অর্থ ও মর্মে ফিকির করে করে আল্লাহ তাআলার আযমতের খেয়াল রেখে অন্তরের যিকির- উভয়টার সমন্বয় ঘটবে। যার মাঝে এমন যিকির পাওয়া যাবে সে ঐ ব্যক্তি থেকে উত্তম- উদাহরণত- যে ব্যক্তি এই অবস্থা ব্যতিরেকে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর (ইস্তিহজার বিহীন) জিহাদ উত্তম হল (ইস্তিহজার বিহীন) মৌখিক যিকিরের চেয়ে। অতএব, যে ব্যক্তি এ উভয়টির সমন্বয় ঘটাবে; যেমন- উদাহরণত- ঐ ব্যক্তি, যে তার নামাযে, তার রোযায়, তার সাদাকায় বা কাফেরের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের হালতে ইস্তিহজারের সাথে তার যবানে ও অন্তরে আল্লাহ তাআলার যিকির করবে- তাহলে সে-ই (ফজিলতের) চূড়ান্ত দরজায় উপনীত হতে সক্ষম হবে।” (ফাতহুল বারি: ১১/২১০)

    সারকথা দাঁড়াল-
     ইস্তিহজারের সাথে কামেল যিকিরের সওয়াব, ইস্তিহজার বিহীন জিহাদ ও অন্যান্য আমলের চেয়ে বেশি।
     ইস্তিহজার বিহীন জিহাদের সওয়াব, ইস্তিহজার বিহীন যিকিরের চেয়ে বেশি।
     ইস্তিহজার বিশিষ্ট জিহাদ ও অন্যান্য আমলের সওয়াব, ইস্তিহজার বিশিষ্ট কামেল যিকিরের চেয়ে বেশি।

    এ থেকে এই ফলাফল দাঁড়াচ্ছে যে, যেসকল মুজাহিদ পূর্ণ ইখলাস ও যিকিরের সাথে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত আছেন তাদের জিহাদ, ঐসব শিরিক ও বিদআতমুক্ত মুখলিস অলী, দরবেশ ও পীর মাশায়েখদের যিকিরের চেয়ে উত্তম, যারা ইস্তিহজার ও আযমতের সাথে, অর্থ ও মর্ম খেয়াল করে করে যিকিরে লিপ্ত আছেন। কেননা, তারা যে ধরণের যিকিরে লিপ্ত আছেন, মুজাহিদগণও এমনই- কিংবা তার চেয়ে উত্তম- যিকিরে লিপ্ত আছেন। অতিরিক্ত এই যে, মুজাহিদগণ আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজেদের জান-মাল ও সর্বস্ব ব্যয় করছেন আর তারা তা করছেন না। অতএব, যিকিরের দিক থেকে মুজাহিদগণ এবং মুখলিস ও শরীয়তের অনুগামী অলী দরবেশগণ সমানে সামান। আর মুজাহিদগণের শ্রেষ্টত্ব যে, তারা যিকিরের পাশাপাশি জিহাদেও লিপ্ত আছেন। অতএব, উক্ত হাদিস থেকে অলী দরবেশগণের উপর মুজাহিদগেণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।


    বি.দ্র.
    ভুলে গেলে চলবে না যে, জিহাদ বর্তমানে ফরযে আইন। যিকির করা ফরয নয়, মুস্তাহাব। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জিহাদ ছেড়ে যিকিরে লিপ্ত আছেন, তারা- যদি সব ধরণের শিরিক বিদআত থেকে মুক্ত থাকেন- তাহলে অন্তত এতটুকু বলতে হবে যে, ফরযে আইন তরকের গুনাহে লিপ্ত আছেন। আর যেসব মুজাহিদ ইস্তিহজার ও কামেল যিকির ছাড়া শুধু জিহাদে লিপ্ত আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত যে, তারা নফল যিকিরের ফজিলত না পেলেও অন্তত কোন ফরয তরকের গুনাহে লিপ্ত নন। অতএব, এ হিসাবে জিহাদে লিপ্ত যেকোন মুজাহিদ- যদি তিনি অন্যান্য গুনাহ থেকে বিরত থাকেন, জিহাদ তরককারী- যদিও অন্য সকল ফরয আদায়কারী হয়ে থাকেন- যেকোন যিকিরকারীর চেয়ে উত্তম। কেননা, যিকিরকারী ফরযে আইন তরকের গুনাহে লিপ্ত, আর মুজাহিদ নফলে লিপ্ত না থাকলেও কোন ফরয তরকের গুনাহে লিপ্ত নন। আর স্পষ্ট যে, আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত ব্যক্তি কিছুতেই ঐ ব্যক্তির মতো নয়, যে আল্লাহর সবগুলো ফরয আদায়ে লিপ্ত আছেন এবং কোন ধরণের নাফরমানীতে লিপ্ত নন।

    যাহোক, সর্বদিক থেকে সকল মুজাহিদকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এর হিসাব নিকাশ আল্লাহ তাআলার দায়িত্বে। আমার উদ্দেশ্য এতটুকু দেখানো যে, উপরোক্ত হাদিস জিহাদ ছেড়ে ঘরে বা খানকায় বসে থাকার বৈধতা দেয় না, মুজাহিদদের উপর খানকাহবাসীদের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণ করে না।
    والله سبحانه وتعالى أعلم، وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمع

    Comment


    • #3
      আখি,আপনার এ পোস্টটি ও উপরের ভাইয়ের প্রশ্নটি সহ পিডিএফ চাই।
      ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

      Comment


      • #4
        Originally posted by ইলম ও জিহাদ View Post
        মুহতারাম ভাই, শায়খ আলবানী রহ. এবং শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. উভয়ই হাদিসটিকে যয়ীফ বলেছেন। এ জাতীয় আরো কিছু হাদিস আছে। যদি সহীহও হয়ে থাকে, তথাপি হাদিস দ্বারা মুজাহিদদের তুলনায় পীরদের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝা যায় না। কারণ, পীরেরা খানকায় বসে শুধু যিকির করেন, আর মুজাহিদগণ জিহাদের ময়দানে আল্লাহর যিকিরের পাশাপাশি নিজেদের জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেন। যিকিরে যিকিরে কাটাকাটি ধরলে জান মাল বিলিয়ে দেয়ার দিক থেকে মুজাহিদগণ শ্রেষ্ঠ। অধিকন্তু যারা জিহাদ ছেড়ে খানকায় বসে আছেন, তারা জিহাদের ফরয বিধান ছাড়ার গুনাহয় লিপ্ত। পক্ষান্তরে মুজাহিদগণ এ গুনাহে লিপ্ত নন। এ দিক থেকেও মুজাহিদগণ শ্রেষ্ঠ। যাহোক, এ হল মোটামুটি কথা। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সকল মুজাহিদ সকল পীর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ ব্যাপারে আপনি এ পোস্টটি দেখতে পারেন:


        জিহাদ উত্তম না যিকির উত্তম?

        তিরমিযি শরীফের একটি হাদিস নিয়ে এক ভাই দ্বিধাদ্বন্ধে ছিলেন। হাদিসের তরজমা তিনি এই উল্লেখ করেছিলেন,

        “আবূদ দারদা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শক্রর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলার যিকর।

        মু'আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা'আলার যিকরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই।”

        মূল হাদিসটি (সুনানে তিরমিযি: ৩৩৭৭) এই-
        عن أبي الدرداء رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه و سلم: ألا أنبئكم بخير أعمالكم وأزكاها عند مليككم وأرفعها في درجاتكم وخير لكم من إنفاق الذهب والورق وخير لكم من أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم ؟ قالوا بلى، قال: ذكر الله تعالى. فقال معاذ بن جبل رضي الله عنه: ما شيء أنجى من عذاب الله من ذكر الله

        ভাইয়ের পেরেশানীর কারণ সম্ভবত এই যে, এ হাদিসে যিকিরকে জিহাদের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে, অথচ জিহাদের ফজিলত সীমাহীন। অধিকন্তু এ হাদিসকে কেন্দ্র করে যিকিরপন্থীরা জিহাদ তরকের বাহানা খোঁজবে। ইনশাআল্লাহ আমি হাদিসটির সহীহ ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

        প্রথমে মনে রাখতে হবে, কোন আমলের ফজিলত বেশি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, অন্য সকল ফরয-নফল বাদ দিয়ে এটাতেই লিপ্ত থাকতে হবে। এমনটা মনে করা সুস্পষ্টই গোমরাহি। যেমন ধরুন- নামাযের ফজিলত অনেক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সারাক্ষণ শুধু নামাযেই ব্যস্ত থাকবে; হজ্ব করবে না, যাকাত দেবে না, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেবে না... ইত্যাদি। বরং যার উপর যে যে বিষয় ফরয তাকে তা আদায় করতে হবে। ফরয দায়িত্ব আদায়ের পর বা পাশাপাশি অন্যান্য আমল করতে কোন অসুবিধা নেই। যে যত আমল করবে তার তত প্রতিদান মিলবে।

        জিহাদ ও যিকিরের ক্ষেত্রেও একই কথা। যিকিরের ফজিলত যদি জিহাদের চেয়ে বেশিও হয়ে থাক, তাহলে এর অর্থ এই নয় যে, ফরয জিহাদ ছেড়ে যিকিরে মশগুল থাকবে। এটা তখন ফরয নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত ছেড়ে যিকিরে মশগুল থাকার মতোই হবে। বরং যিকিরের ফজিলতের অর্থ: নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-জিহাদ-কিতাল ইত্যাদি ফরয আদায়ের পাশাপাশি যিকিরেরও পাবন্দি করবে। ফরয ছেড়ে যে যিকিরে লিপ্ত থাকবে সে গোমরাহ হওয়ার ব্যাপারে আশাকরি কারো দ্বিমত নেই। ফরয জিহাদ ছেড়ে খানকাহ ও যিকির মশগুল ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা।

        দ্বিতীয়ত: আমলের সওয়াব তার কষ্টের ভিত্তিতে নয়, আমলের মর্যাদা হিসেবে। যে আমলের মর্যাদা বেশি তার সওয়াবও বেশি- যদিও তা সহজ হয় আর অন্যগুলো কঠিন হয়। যেমন- ঈমান আনা অনেক সহজ কাজ। কিন্তু এর প্রতিদান অন্য সকল আমলের চেয়ে বেশি। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-জিহাদ-কিতাল ইত্যাদি সকল আমলের চেয়ে ঈমানের প্রতিদান বেশি, অথচ এসবগুলোর তুলনায় ঈমান সহজ। এ বিষয়টি ইজ্জুদ্দীন ইবনে আব্দুস সালাম রহ. পরিষ্কার আলোচনা করেছেন তার [ক্বাওয়ায়িদুল আহকাম ফি মাসালিহিল আনাম] কিতাবে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন,
        ومما يدل على أن الثواب لا يترتب على قدر النصب في جميع العبادات ... والحاصل بأن الثواب يترتب على تفاوت الرتب في الشرف. اهـ

        “সকল ইবাদতে সওয়াবের পরিমাণ যে কষ্টের ভিত্তিতে নয় তার দলীল- এরপর তিনি উপরোক্ত হাদিসসহ যিকির সংক্রান্ত আরো হাদিস উল্লেখ করেন। তারপর বলেন- সারকথা: সওয়াব নির্ধারিত হয় আমলের মর্যাদার কম বেশ এর ভিত্তিতে।” (ক্বাওয়ায়িদুল আহকাম ফি মাসালিহিল আনাম: ১/৪৮)

        অতএব, কোন আমলের মর্যাদা বেশি হলে তার সওয়াবও বেশি- যদিও তা অন্যান্য আমলের চেয়ে অনেক সহজ হয়। আর কোন আমলের মর্যাদা কম হলে তার সওয়াবও কম- যদিও তা অন্যান্য মর্যাদাবান আমলের চেয়ে কষ্টসাধ্য হয়।

        এবার আমরা আলোচ্য হাদিসে আসি। এ হাদিসে আল্লাহ তাআলার যিকিরকে ইনফাক তথা যাকাত, দান-খায়রাতসহ অন্য সকল আর্থিক ইবাদাতের চেয়ে এবং জিহাদের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। এখানে যিকির দ্বারা কি উদ্দেশ্য?

        দু’টি উদ্দেশ্য নেয়া যায়:
        ১. কলবি যিকির। তথা সার্বক্ষণিক আল্লাহ তাআলার ইয়াদ ও নিয়তের পরিশুদ্ধি। যদি এমনটি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে স্পষ্ট যে, পরিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন আমলই সহীহ না। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, জিহাদ-কিতাল ইত্যাদি কোন কিছুই পরিশুদ্ধ ও খালেছ নিয়ত ছাড়া সহীহ না। খালেছ নিয়ত ছাড়া সওয়াব পাওয়া যায় না। তদ্রূপ, আল্লাহ তাআলার ইয়াদ ছাড়া শুধু ভাসা ভাসা আমলের দ্বারাও তেমন সওয়াব পাওয়া যায় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহ তাআলার যিকির অন্য সকল আমল হতে উত্তম হওয়া স্বাভাবিক। এ কারণেই হাদিসে মু’মিনের নিয়তকে তার আমলের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। কাযি ইবনুল আরাবী রহ. এমনটিই বলেছেন।

        হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
        وأجاب القاضي أبو بكر بن العربي بأنه ما من عمل صالح الا والذكر مشترط في تصحيحه فمن لم يذكر الله بقلبه عند صدقته أو صيامه مثلا فليس عمله كاملا فصار الذكر أفضل الأعمال من هذه الحيثية ويشير إلى ذلك حديث نية المؤمن ابلغ من عمله اهـ

        “কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবী রহ. এ হাদিসের এই জওয়াব দিয়েছেন যে, প্রতিটি নেক কাজ সহীহ হওয়ার জন্য যিকির শর্ত। যে ব্যক্তি- উদাহরণস্বরূপ- তার সাদাকা বা তার রোযা আদায়ের সময় অন্তরে আল্লাহ তাআলাকে ইয়াদ না করবে, তার আমল কামেল নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে যিকির (তথা আল্লাহ তাআলার ইয়াদ) সর্বোত্তম আমল। হাদিস: ‘মু’মিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম’- এ দিকেই ঈঙ্গিত করে।” (ফাতহুল বারি: ১১/২১০)

        উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী নিছক মৌখিক যিকির জিহাদ ও অন্যান্য আমল থেকে উত্তম সাব্যস্ত হয় না। আর যিকির যদি বিদআতি যিকির হয, তাহলে তো উত্তম হওয়ার প্রশ্নই আসে না। হানাফি মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম ইবনুল মালাক রহ. (৮৫৪হি.) এ হাকিকতটিই তুলে ধরেছেন। তার যামানার জাহেল সুফিদের খণ্ডনকল্পে আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,
        المراد من هذا: هو الذِّكر القلبي ... لا الذِّكر اللِّساني المشتمل على صياحٍ وانزجاعٍ، وشدةِ تحريكِ العنقِ واعوجاجٍ، كما يفعله بعض الناس زاعمين أن ذلك جالبٌ للحضور، وموجبٌ للسرور، حاشا لله، بل هو سبب للغَيبة والغرور. اهـ

        “এখানে যিকির দ্বারা কলবি যিকির উদ্দেশ্য ... মৌখিক যিকির উদ্দেশ্য নয়, যে যিকিরে থাকে চিল্লা-ফাল্লা আর হৈ-হুল্লোর, জোরে জোরে ঘাড় নাড়ানো আর বক্র অঙ্গভঙ্গি। যেমনটা কতক লোক করে থাকে। মনে করে- এমন করলে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও অন্তরের প্রশান্তি অর্জন হবে। আল্লাহর পানা। কিছুতেই না। এসব বরং আল্লাহ তাআলা থেকে দূরে সরা ও প্রবঞ্চনার কারণ।” (শরহু ইবনিল মালাক আলাল মাসাবিহ: ৩/৯২)

        ২. দ্বিতীয়ত যিকির দ্বারা যেকোন যিকির উদ্দেশ্য নয়, বরং কামেল যিকির উদ্দেশ্য। আর তা হবে আল্লাহ তাআলার আযমত ও ইস্তিহজার সহ যিকরে লিসানি তথা মৌখিক যিকির ও কলবি যিকিরের সমন্বিত যিকির। তাহলে এ যিকিরের জন্য কয়েকটি বিষয় জরুরী:

        ক. অন্তরে আল্লাহ তাআলার আযমত ও বড়ত্বের অনভূতি।

        খ. ইস্তিহজার তথা আল্লাহ তাআলাকে হাজির নাযির মনে করে, তিনি আমাকে দেখছেন আমি তার সামনে আছি- এমন অনুভূতি নিয়ে যিকির করা।

        গ. যিকিরের মা’না-মাফহুম তথা অর্থ ও মর্ম বুঝে যিকির করা।

        ঘ. যিকির মাসনুন যিকির হওয়া বা শরীয়তসম্মত অন্য কোন যিকির হওয়া।


        এ গেল যিকিরের কথা। আর যেসব আমলের তুলনায় এ যিকিরকে উত্তম বলা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা হল- সেগুলোতে যথাযথ আল্লাহর ইয়াদ নেই, ইস্তিহযার এবং আযমত ও বড়ত্বের উপলব্ধি নেই। শুধু ভাসা ভাসা আমল। এমন ধরণের আমলের তুলনায় পূর্বোল্লিখিত যিকিরকে উত্তম বলা হয়েছে। অতএব, যে ব্যক্তি জিহাদ করছে কিন্তু জিহাদরত অবস্থায় তার মুখে আল্লাহর যিকির নেই, অন্তরে আল্লাহর ইয়াদ ও আযমতের উপলব্ধি নেই- তার এ জিহাদের তুলনায় পূর্বোক্ত কামেল যিকিরের সওয়াব বেশি। যদিও তার জিহাদে কষ্ট হচ্ছে বেশি, কিন্তু যথাযথ লিসানি ও কলবি যিকিরের সমন্বয় না থাকার কারণে তার জিহাদের সওয়াব কমে গেছে। আর কমবেই বা না কেন, জিহাদরত অবস্থায় তো অন্তরে আল্লাহ তাআলাকে অধিক পরিমাণে ইয়াদ করার এবং যবান আল্লাহ তাআলার যিকিরে মশগুল রাখার আদেশ স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।
        আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
        {يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ}
        “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোন বাহিনির সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহ তাআলাকে অধিক পরিমাণে স্বরণ করতে থাক, যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার।” (আনফাল: ৪৫)
        ইমাম জাসসাস রহ. বলেন,
        وقوله تعالى: {واذكروا الله كثيرا} يحتمل وجهين: أحدهما: ذكر الله تعالى باللسان، والآخر: الذكر بالقلب، وذلك على وجهين: أحدهما: ذكر ثواب الصبر على الثبات لجهاد أعداء الله المشركين وذكر عقاب الفرار؛ والثاني: ذكر دلائله ونعمه على عباده وما يستحقه عليهم من القيام بفرضه في جهاد أعدائه. وضروب هذه الأذكار كلها تعين على الصبر والثبات ويستدعى بها النصر من الله والجرأة على العدو والاستهانة بهم. وجائز أن يكون المراد بالآية جميع الأذكار لشمول الاسم لجميعها. اهـ
        “আল্লাহ তাআলার বাণী- ‘এবং আল্লাহ তাআলাকে অধিক পরিমাণে স্বরণ করতে থাক’ এর দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে:

        এক. মুখে আল্লাহ তাআলার যিকির করা।
        দুই. অন্তরের যিকির।

        অন্তরের যিকির আবার দুই ধরণের:
        এক
        . আল্লাহর দুশমন মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে সুদৃঢ় ও অটল-অবিচল থাকার সওয়াব এবং যুদ্ধ হতে পলায়নের শাস্তির কথা স্বরণ করা।

        দুই. আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলী, বান্দাদের উপর আল্লাহ তাআলার নেয়ামতরাজি এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদের যে ফরয দায়িত্ব তাদের উপর তার পাওনা রয়েছে- সেগুলো স্বরণ করা।


        এই সব ধরণের যিকির অটল অবিচল থাকতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলার নুসরত লাভ এবং শত্রুর উপর দুঃসাহসিকতা দেখানো ও তাদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার মাধ্যম হবে।

        অধিকন্তু আয়াতের দ্বারা সব ধরণের যিকিরই উদ্দেশ্য হতে পারে। কেননা, যিকির শব্দ সব ধরণের যিকিরকেই বুঝায়।” (আহকামুল কুরআন: ৩/৮৬)


        পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে, যথাযথ কলবি ও লিসানি যিকির সহ, আল্লাহ তাআলার আযমত ও ইস্তিহজার সহ, সওয়াবের আশা ও শাস্তির ভয় নিয়ে আল্লাহ তাআলার দ্বীনের বিজয়ের উদ্দেশ্যে জিহাদ করবে- তার এ জিহাদের প্রতিদান উপরোক্ত কামেল যিকিরের চেয়েও বেশি। কেননা, এখানে দু’টি আমলের সমন্বয় ঘটেছে:

        ক. কামেল যিকির।
        খ. জিহাদ।

        অতএব, এমন মুজাহিদের জিহাদের সওয়াব ঐসব ব্যক্তির কামেল যিকিরের চেয়ে বেশি, যারা বাড়িতে বা মসজিদে বসে, পূর্ণ ধ্যান খেয়ালে, পূর্ণ আযমত ও ইস্তিহজারের সাথে, অর্থ ও মর্ম বুঝে বুঝে মাসনুন ও শরীয়তসম্মত যিকিরে লিপ্ত আছে। কেননা, এসকল ব্যক্তির আমল হল একটা। তা হচ্ছে- শুধু যিকির। পক্ষান্তরে মুজাহিদের আমল দু’টি: ক. যিকির। খ. জিহাদ। কাজেই তার সওয়াব বেশি।

        হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
        أشرت إليه مستشكلا في أوائل الجهاد مع ما ورد في فضل المجاهد انه كالصائم لا يفطر وكالقائم لا يفتر وغير ذلك مما يدل على افضليته على غيره من الأعمال الصالحة، وطريق الجمع والله اعلم ان المراد بذكر الله في حديث أبي الدرداء الذكر الكامل، وهو ما يجتمع فيه ذكر اللسان والقلب بالتفكر في المعنى واستحضار عظمة الله تعالى، وان الذي يحصل له ذلك يكون أفضل ممن يقاتل الكفار مثلا من غير استحضار لذلك، وان أفضلية الجهاد انما هي بالنسبة إلى ذكر اللسان المجرد، فمن اتفق له انه جمع ذلك كمن يذكر الله بلسانه وقلبه واستحضاره وكل ذلك حال صلاته أو في صيامه أو تصدقه أو قتاله الكفار مثلا فهو الذي بلغ الغاية القصوى. اهـ

        “কিতাবুল জিহাদের শুরুতে এ হাদিসের দিকে ঈঙ্গিত করে এসেছি। মুজাহিদের যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তার দাবি হল- জিহাদ অন্য সকল নেক কাজের চেয়ে উত্তম। যেমন- মুজাহিদ ঐ রোযাদারের মতো যে কখনোও রোযা ভাঙে না। ঐ ইবাদাত গুজারের মতো যে, কখনও বিরতি দেয় না। এছাড়াও অন্যান্য ফজিলত। এতদসত্ত্বেও এ হাদিসে যিকিরকে উত্তম বলাটা (বাহ্যত) মুশকিল মনে হয়। -ওয়াল্লাহু আ’লাম- উভয়ের সমন্বয় এভাবে হবে যে, আবুদদারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসে আল্লাহ তাআলার যিকির দ্বারা কামেল যিকির উদ্দেশ্য। আর কামেল যিকির হল ঐ যিকির, যে যিকিরে মৌখিক যিকির এবং অর্থ ও মর্মে ফিকির করে করে আল্লাহ তাআলার আযমতের খেয়াল রেখে অন্তরের যিকির- উভয়টার সমন্বয় ঘটবে। যার মাঝে এমন যিকির পাওয়া যাবে সে ঐ ব্যক্তি থেকে উত্তম- উদাহরণত- যে ব্যক্তি এই অবস্থা ব্যতিরেকে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর (ইস্তিহজার বিহীন) জিহাদ উত্তম হল (ইস্তিহজার বিহীন) মৌখিক যিকিরের চেয়ে। অতএব, যে ব্যক্তি এ উভয়টির সমন্বয় ঘটাবে; যেমন- উদাহরণত- ঐ ব্যক্তি, যে তার নামাযে, তার রোযায়, তার সাদাকায় বা কাফেরের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের হালতে ইস্তিহজারের সাথে তার যবানে ও অন্তরে আল্লাহ তাআলার যিকির করবে- তাহলে সে-ই (ফজিলতের) চূড়ান্ত দরজায় উপনীত হতে সক্ষম হবে।” (ফাতহুল বারি: ১১/২১০)

        সারকথা দাঁড়াল-
         ইস্তিহজারের সাথে কামেল যিকিরের সওয়াব, ইস্তিহজার বিহীন জিহাদ ও অন্যান্য আমলের চেয়ে বেশি।
         ইস্তিহজার বিহীন জিহাদের সওয়াব, ইস্তিহজার বিহীন যিকিরের চেয়ে বেশি।
         ইস্তিহজার বিশিষ্ট জিহাদ ও অন্যান্য আমলের সওয়াব, ইস্তিহজার বিশিষ্ট কামেল যিকিরের চেয়ে বেশি।

        এ থেকে এই ফলাফল দাঁড়াচ্ছে যে, যেসকল মুজাহিদ পূর্ণ ইখলাস ও যিকিরের সাথে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত আছেন তাদের জিহাদ, ঐসব শিরিক ও বিদআতমুক্ত মুখলিস অলী, দরবেশ ও পীর মাশায়েখদের যিকিরের চেয়ে উত্তম, যারা ইস্তিহজার ও আযমতের সাথে, অর্থ ও মর্ম খেয়াল করে করে যিকিরে লিপ্ত আছেন। কেননা, তারা যে ধরণের যিকিরে লিপ্ত আছেন, মুজাহিদগণও এমনই- কিংবা তার চেয়ে উত্তম- যিকিরে লিপ্ত আছেন। অতিরিক্ত এই যে, মুজাহিদগণ আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজেদের জান-মাল ও সর্বস্ব ব্যয় করছেন আর তারা তা করছেন না। অতএব, যিকিরের দিক থেকে মুজাহিদগণ এবং মুখলিস ও শরীয়তের অনুগামী অলী দরবেশগণ সমানে সামান। আর মুজাহিদগণের শ্রেষ্টত্ব যে, তারা যিকিরের পাশাপাশি জিহাদেও লিপ্ত আছেন। অতএব, উক্ত হাদিস থেকে অলী দরবেশগণের উপর মুজাহিদগেণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।


        বি.দ্র.
        ভুলে গেলে চলবে না যে, জিহাদ বর্তমানে ফরযে আইন। যিকির করা ফরয নয়, মুস্তাহাব। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জিহাদ ছেড়ে যিকিরে লিপ্ত আছেন, তারা- যদি সব ধরণের শিরিক বিদআত থেকে মুক্ত থাকেন- তাহলে অন্তত এতটুকু বলতে হবে যে, ফরযে আইন তরকের গুনাহে লিপ্ত আছেন। আর যেসব মুজাহিদ ইস্তিহজার ও কামেল যিকির ছাড়া শুধু জিহাদে লিপ্ত আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত যে, তারা নফল যিকিরের ফজিলত না পেলেও অন্তত কোন ফরয তরকের গুনাহে লিপ্ত নন। অতএব, এ হিসাবে জিহাদে লিপ্ত যেকোন মুজাহিদ- যদি তিনি অন্যান্য গুনাহ থেকে বিরত থাকেন, জিহাদ তরককারী- যদিও অন্য সকল ফরয আদায়কারী হয়ে থাকেন- যেকোন যিকিরকারীর চেয়ে উত্তম। কেননা, যিকিরকারী ফরযে আইন তরকের গুনাহে লিপ্ত, আর মুজাহিদ নফলে লিপ্ত না থাকলেও কোন ফরয তরকের গুনাহে লিপ্ত নন। আর স্পষ্ট যে, আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত ব্যক্তি কিছুতেই ঐ ব্যক্তির মতো নয়, যে আল্লাহর সবগুলো ফরয আদায়ে লিপ্ত আছেন এবং কোন ধরণের নাফরমানীতে লিপ্ত নন।

        যাহোক, সর্বদিক থেকে সকল মুজাহিদকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এর হিসাব নিকাশ আল্লাহ তাআলার দায়িত্বে। আমার উদ্দেশ্য এতটুকু দেখানো যে, উপরোক্ত হাদিস জিহাদ ছেড়ে ঘরে বা খানকায় বসে থাকার বৈধতা দেয় না, মুজাহিদদের উপর খানকাহবাসীদের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণ করে না।
        والله سبحانه وتعالى أعلم، وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمع
        মুহতারাম ভাই,আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
        আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment


        • #5
          ইলম ও জিহাদ ভাই,উপরের পোস্টসহ আপনার পোস্টটির পিডিএফ চাই।
          والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

          Comment


          • #6
            জিহাদ এমন আমল, যেখানে গেলে আল্লাহর কথা স্বরণ হবেই। আপনার সামনে অস্ত্রসজ্জিত শুত্রু, তখন কি আল্লাহর স্বরণ থেকে বিরত থাকা যায়???
            ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

            Comment


            • #7
              Originally posted by Bara ibn Malik View Post
              জিহাদ এমন আমল, যেখানে গেলে আল্লাহর কথা স্বরণ হবেই। আপনার সামনে অস্ত্রসজ্জিত শুত্রু, তখন কি আল্লাহর স্বরণ থেকে বিরত থাকা যায়???
              কখনো না। যিকর ও জিহাদের সমন্বয় হলেই কেবল কামিল মু’মিন হওয়া যাবে। ইনশা আল্লাহ
              সাথে অন্যান্য আমাল তো আছেই।
              ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

              Comment


              • #8
                Originally posted by Bara ibn Malik View Post
                আখি,আপনার এ পোস্টটি ও উপরের ভাইয়ের প্রশ্নটি সহ পিডিএফ চাই।
                https://my.pcloud.com/publink/show?c...q06ALXhfSxYWLy

                Comment


                • #9
                  সেই প্রসিদ্ধ পীরের অডিও বয়ানে জিহাদ ও মুজাহিদীনদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিষোদগার করা হয়েছে। জিহাদী কর্মকান্ডকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় ফিতনা বলা হয়েছে। আর মুজাহিদীন কেরামকে জযবাওয়ালা বলা হয়েছে, যারা কুরআন-সুন্নাহ ও হক্কানী উলামায়ে কেরামকে অনুসরণ না করে, নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে বলা হয়েছে। তাদের জিহাদী কর্মকান্ডের কারণেই নাকি আলিমরা, মুসলমানরা টুপিওয়ালারা, দাড়িওয়ালারা, বোরকাওয়ালীরা এক ভয়ানক বিপদের সামনাসামনি হওয়া লাগছে। সর্বোপরি তারা নাকি ইসলামের খেদমতের নাম দিয়ে ইসলামকে ডোবানোর কাজ করছে..এ জাতীয় আরো বহু কথা। বহু ধরনের অপব্যাখ্যা তিনি করেছেন। যা লিখতে কলম বিরক্তি বোধ করছে। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)
                  এই পীরের মত আরো বহু পীররা একই ধরনের কথা বলে থাকেন। এ জন্য আমার কাছে আপাতত আমাদের সম্মানিত শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য উল্লেখ করাকে সমচীন মনে করছি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন


                  বিকৃত সূফীবাদ সম্পর্কে আন-নাসর মিডিয়া থেকে প্রকাশিত শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ “ইসলামী বসন্ত”-দশম খন্ডের প্রথম পর্বে নিচের মন্তব্য উল্লেখ করেছেন-
                  “আমাদের কাফির শক্ররা মৌলিক দু’টি কারণে আমাদেরকে পরাজিত করেছে। যথা:
                  এক: আমাদের উপর তাদের অস্ত্রের শ্রেষ্টত্ব থাকা।
                  দুই: রাজনৈতিক বিশৃংখলা। যা মুসলমানদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
                  আমাদের উপর তাদের অস্ত্রের শ্রেষ্টত্ব থাকার ব্যাপারে কথা হলো: তারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে আমাদের থেকে অগ্রগামী হয়ে গেছে এবং তাতে আমাদেরকে পিছনে ফেলে গেছে। কারণ, মুসলমানরা কয়েক শতাব্দি পর্যন্ত তাদের বোধশক্তিকে তর্কশাস্ত্রের কুটিল প্রশ্নের জালে ও বিকৃত সুফিবাদের রহস্যের সন্ধানে ব্যয় করেছে। ফলে তারা তাদের প্রতি নির্দেশিত ধর্মের বিধান আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিজীব নিয়ে এবং স্থল স্থাপত্য বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করা থেকে বিরত থেকেছে। অন্যদিকে তাদেরকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, এমন নিষিদ্ধ বিতর্ক ও চিন্তা-ভাবনা নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়েছিল।
                  এর জন্য শুধু আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রানীর “ ত্ববাকাতুল আউলিয়া” নামক কিতাবটির উপর একবার দৃষ্টি বুলানোই যথেষ্ট হবে। তাতে আপনি দেখতে পাবেন যে, বিকৃত সুফিবাদ মুসলমানদের বোধশক্তি, মন-মানসিকতাকে কি পরিমাণ অধঃপতিত করেছিল। অথচ তিনি তাঁর যুগের বড় বড় উলামায়ে কেরামের মাঝে অন্যতম একজন ব্যক্তি ছিলেন!!!
                  সুতরাং এই কিতাব ও এ জাতীয় অন্যান্য কিতাবে শা‘রানী সুস্পষ্টভাবেই পাপাচারী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, স্বেচ্ছাচারী বরং সুস্পষ্ট কুফর প্রকাশকারীদের একটি গ্রুপের বন্ধুত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মুরীদদের আহবান করেছেন। এমনিভাবে তিনি মুরীদদেরকে আহবান জানিয়েছেন যেন তারা শাইখকে দ্বীন বা বোধশক্তি অথবা শিষ্টাচারবিরোধী কিছু করতে দেখলে প্রতিবাদ না করে। তাছাড়া তাতে এমন কিছু কিচ্ছা-কাহিনী চালিয়ে দিয়েছেন, যা উল্লেখ করতে কলম ও জবান দুটোই বিরক্তি অনুভব করে।
                  বিশেষকরে আবদুল্লাহ মাজযুব সম্পর্কে যে দুঃখজনক তামাশার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে সেখানে পারদর্শী আলেম ও অধিক কাশফ হয় বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অথচ সে হাশীশ নামক মাদকদ্রব্যের পাত্র তৈরী ও বিক্রয় করত। এটাকে তার কারামাতের মধ্যে গণ্য করত যে, যে ব্যক্তি তার থেকে হাশীশ (মাদকদ্রব্য) ক্রয় করবে, সে তা (হাশীশ) থেকে তাওবা করবে এবং পুনরায় তার দিকে ফিরে যাবে না। (শাযারাতুয যাহাব, খন্ড নং-৮, পৃষ্ঠা নং-২২১, আল-কাওয়াকিবুস সা’য়িরাহ, খন্ড নং-১ পৃষ্ঠা নং-২৮৭)
                  এখানে হাশীশের ব্যবসা করাকে আওলিয়ায়ে কেরামের কাজ বলে গন্য করা হয়েছে! অথচ এখানে উল্লেখ করা হলো না যে, কি কারণে ক্রয়-বিক্রয় করার আগে ক্রেতা ও বিক্রেতা তাওবা করল না?! আল্লাহর কোনো ওলীর জন্য কি হারাম মাল গ্রহন করা জরুরী??!! তাওবাকারী ব্যক্তি প্রথমে হাশীম পান করে মাতাল হবে, যাতে করে তার তাওবার রোকন পূরণ হয়???!!!
                  উম্মাহর বিজয়ের একটি শর্ত হলো হাশীশের ব্যবসা থেকে পবিত্র থাকা। মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন:
                  وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ.
                  অনুবাদ: “যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না।” (সূরা মুহাম্মাদ-৩৮)
                  তিনি (শা‘রানী) তাদের (পীরদের) পাপাচারিতার ব্যাপারে নিন্দা করতে ও তাদের অসম্মান করতে নিষেধ করছেন, যারা তাদের সম্মানহানী করবে তাদের ঘৃণা করেছেন। অথচ তাদেরকেই জ্ঞানী বলে দেওয়া হল?! (শাযারাতুয যাহাব, খন্ড নং-৮, পৃষ্ঠা নং-৩৭৩)
                  এমনভাবেই দু’টি বিচ্যুতির সংমিশ্রন ঘটে। তা হলো: তর্কশাস্ত্রের সম্মান ও বিকৃত সূফিবাদের কল্পকাহিনী।
                  এই দুটি বিচ্যুতিই মুসলমানদের বোধশক্তিকে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিজীব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা থেকে বিরত রেখেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন:
                  قُلْ سِيرُوا فِي الأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ثُمَّ الله يُنشِئُ النَّشْأَةَ الآخِرَةَ.
                  অনুবাদ:“ হে নবী! আপনি বলুন: ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর, কিভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টি।” (সূরা ‘আনকাবূত, আয়াত নং-২০)
                  তিনি আরো ইরশাদ করেন:
                  أَوَلَمْ يَنظُرُواْ فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا خَلَقَ الله مِن شَيْءٍ.
                  অনুবাদ: “তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার সম্পর্কে।” (সূরা আ‘রাফ, আয়াত নং ১৮৫)
                  তর্কশাস্ত্র হলো গ্রীক দর্শনের নীতিমালার উপর নির্ভরশীল, যাকে আধুনিক বিজ্ঞান ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিয়েছে। এটি উলামায়ে কেরামের বোধশক্তিকে কুটিল প্রশ্নের জালে ক্লান্ত করে দিয়েছে, যা বুলেট ছুড়তে পারে না, কামান তাগাতে পারে না এবং জাহাজে ভ্রমন করতে পারে না! অপরদিকে বিকৃত সূফীবাদ তাদেরকে দুনিয়াতে থেকে অদৃশ্য করে দিয়েছে, তাদেরকে অন্যায়-অশ্লীল কাজের বাধা প্রদান করতে নিষেধ করে দিয়েছে এবং পাপাচারীদের ও স্বেচ্ছাচারীদের, এমনকি সুস্পষ্ট কুফরী প্রকাশকারীদের বন্ধুত্বকে তাদের জন্য সুশোভিত করে দিয়েছে। তাদের থেকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের মর্যাদা, শরীয়তের শাসনব্যবস্থার মর্যাদা, মু‘মিনদের প্রতি ভালবাসা ও কাফিরদের সাথে সম্পর্কহীনতার মর্যাদা উঠে গেছে....!!!
                  এ কারণেই যে ব্যক্তি বিকৃত সুফিবাদের সাথে জড়িত, তার জন্য শরীয়তের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে ফাসিক, মুরতাদ শাসকের শাসনব্যবস্থা গ্রহন করে নেয়া সহজ হয়ে গেছে। বহুবার মাশায়েখরা তার (শাসকের) প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন, এমনকি অনেকসময় তাকে আল্লাহর ওলী বলে গণ্য করে করেছেন। উদাহারণস্বরূপ সায়্যিদ মুহাম্মাদ আল-হাযরামী সম্পর্কে শা‘রানী বর্ণনা করেছেন যে, তিনি জুমু‘আর খুৎবা দানের সময় বললেন: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তোমাদের জন্য ইবলীস (আ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ-প্রভু নেই।”
                  (ত্বাবাকাতুশ শা‘রানী, খন্ড নং-২, পৃষ্ঠা নং-৯৪ তাফসীরুল মানার থেকে বর্ণনাকৃত, তাফসীরুল মানার, খন্ড নং-১১, পৃষ্টা নং-৩৪৭-৩৪৮)
                  এমনিভাবে মুসলমানদের ভূমিগুলি জোড়জবরদস্তি করে দখল করে নেওয়ার ক্ষেত্রে যারা কাফিরদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়াটা সূফীদের জন্য সহজ হয়ে গেছে। অনেকবার মাশায়েখরা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। পাশাপাশি তারা ইসলামী ভূমির উপর আক্রমণকারী কাফিরদের বিপরীতে সশস্ত্র জিহাদ ছেড়ে দেওয়াকে মেনে নিয়েছে। কারণ, মাশায়েখরা ও ভন্ড ওলীরা এ ব্যাপারে অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করেন। তারা মানুষের চাহিদা পুরা করবে বরং তাদের কুকুরগুলি তাদের চাহিদা পূরণ করবে। যেমনটি শা‘রানী ও অন্যান্যরা আবুল খাইর আল-কুলিবাতি থেকে বর্ণনা করেছেন। ( আল-কাওয়াকিবুস সা’য়িরাহ, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-৭১, শাযারাতুয যাহাব, খন্ড নং-৮, পৃষ্ঠা নং-৪১)
                  আর এ কারণেই আমেরিকানরা ঘোষণা দিচ্ছে যে, ভ্রান্ত সূফীদের গ্রুপকে সমর্থন করা উচিত। র*্যান্ড ইনস্টিটিউটও এই উপর জোর দিয়েছে। “মডারেট ইসলামী নেটওয়ার্ক বিনির্মাণ” নামক বইয়ে এসেছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের সম্ভাব্য অংশীদাররা তিনটি গ্রুপের বিভক্ত। যথা:
                  ক) ধর্মনিরপেক্ষ, খ) উদার মুসলিম, এবং গ) মডারেট ঐতিহ্যবাদীরা, যাদের মধ্যে সূফিবাদীরাও রয়েছেন।
                  “সিভিল ডেমোক্র্যাটিক ইসলাম” নামক বইয়ে তাদেরকে আধুনিকতাবাদীদের মাঝে গণ্য করা হয়েছে। তাদেরকে সমর্থন করা ও তাদের অবস্থা আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলা হয়েছে।
                  এর মাধ্যমে আমেরিকানদের, পশ্চিমাদের ও ইথিওপিয়ানদের সোমালিয়ায় সূফিবাদী গ্রুপদেরকে সমর্থনের বাস্তবতা আরো সুচারূপে স্পষ্ট হয়। যারা ক্রুসেডার জোটের সারিতে থেকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
                  পাশাপাশি মার্কিন শাসনের অধীনস্ত মিশরীয় ইহুদীবাদী সিসির দারুল ইফতা সোমালিয়ায় হরকাতু শাবাবিল মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে সূফিবাদের আন্দোলনকে সমর্থনের উপর গুরুত্বারোপ করেছে।
                  যে সময়ে মুসলমান উলামায়ে কেরামের বোধশক্তি তর্কশাস্ত্রের অসার বিতর্কে ও বিকৃত সূফিবাদের রহস্যের সন্ধানে নিমগ্ন, ঠিক সেই সময়ে ইউরোপ জেগে উঠে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ফলে গির্জার দার্শনিক তামাশা থেকেও নিষ্কৃতি পেতে শুরু করে। পাশপাশি প্রকৃতির গোপন রহস্য উন্মোচনেও অগ্রসর হতে শুরু করে এবং মুসলমানদের পরাজিত করার প্রচেষ্টা হিসাবে ও সম্পদলাভের লালসায় ভৌগোলিক বিভিন্ন অনুসন্ধান-আবিষ্কার শুরু করে।
                  এক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিলেন পর্তুগালের রাজা হেনরি। তার ক্রুসেডার নৌবাহিনী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণায় ভরপুর ছিল, যাকে শা‘রানী (শা‘রানীর জন্ম ৮৯৮হিজরী মোতাবেক ১৪৯৩ ইংরেজী। আল্লামা যিরিকলীর আল-আ‘লাম, খন্ড নং-৪, পৃষ্ঠা নং-১৮০) জন্মের প্রায় চল্লিশ বছর পূর্বে পঞ্চম পোপ নিকোলা কর্তৃক একটি চিঠিতে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাতে লেখা ছিল: “নিশ্চয় আমার এক মহান আনন্দ হলো এটা জানানো যে, আমাদের প্রিয় সন্তান পর্তুগালের রাজা হেনরী, তার পিতা রাজা জং কিং-এর হুবহু পদচিহৃ অনুসরণ করে মাসীহের সৈন্যদের মধ্য থেকে একজন সক্ষম সৈনিকরূপে আল্লাহর শক্র ও মাসীহের শক্র কাফির মুসলমাদের বিরুদ্ধে যাত্রা করবে।”
                  এই সেই হেনরী, শা‘রানী জন্মের প্রায় ৮০বছর আগে যে তার পিতা প্রথম কিং-এর সাথে মুসলমানদের থেকে সেতু বিজয়ে অংশীদার ছিলেন। এরপর তিনি যখন রাজত্বের দায়িত্ব গ্রহন করলেন, তখন ইউরোপে প্রথম একাডেমি অব ন্যাভিগেশন সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন। সামুদ্রিক বিষয়ের ব্যাপারে অভিজ্ঞ একদল বিজ্ঞানী তাতে অন্তর্ভুক্ত করেন। তদ্রুপ তিনি একটি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এমনিভাবে তিনি আফ্রিকান উপকূল থেকে আগত বিদেশী জাহাজগুলির তথ্য সংগ্রহের কাজ করেন। যেমনভাবে তিনি জাহাজ নির্মাণের উন্নতিতেও কাজ করেছিলেন, এমনকি সেই সময়ে জাহাজের মালামাল আশি থেকে একশ টন পর্যন্ত বহন করতে সক্ষম ছিল।
                  তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় অভিযান প্রেরণ করেন। অতঃপর পর্তুগিজরা বিষুবরেখা অতিক্রম করে এবং শা‘রানী জন্মের প্রায় পাচঁ বছর আগে উত্তমাশা অন্তরীপে (Cape of Good Hope) পৌঁছে। তারপর শা‘রানী জন্মের পাচঁ বছর পর তারা হিন্দুস্থানে পৌঁছেছিল।
                  নৌবাহিনীর রাজা হেনরি খ্রিস্টান ধর্ম বিস্তারের জন্য আফ্রিকায় একটি পর্তুগিজ-খ্রিস্টান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। অ্যাবিসিনিয়ার রাজা সেন্ট জন সেখানে পৌঁছানোর জন্য ঘানা শহর সম্প্রসারিত করেছিলেন, যেন মুসলমানদের বিতাড়নে অথবা তাদেরকে ধর্মান্তকরণে সেখান থেকে আধ্যাত্মিক এবং সামরিক সাহায্য করা যায়।
                  উলামায়ে কেরাম যখন ভিত্তিহীন তর্কশাস্ত্র ও সূফীবাদের কল্পকাহিনীতে নিমগ্ন, তখন এসব কিছু হয়ে গেছে। অথচ এই সূফীবাদকেই হাশিশ ব্যবসায়ী ও নাস্তিকরা পবিত্র মনে করে।”

                  (ইসলামী বসন্ত, দশম খন্ড, প্রথম পর্ব, পৃষ্ঠা নং ৬-৯)
                  ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                  Comment


                  • #10
                    মাশাআল্লাহ, ইলম ও জিহাদ ভাই সুন্দর ইলমী উত্তর দিয়েছেন, এ বিষয়ে দারুল উলূম অর্গানাইজেশনেও সুন্দর একটি প্রবন্ধ আছে, বিষয়টির পূর্ণাঙ্গতার জন্য সেটি এখানে কপি করে দিচ্ছি,


                    জিহাদ না করে যিকির?

                    “আবূদ দারদা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শক্রর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার যিকর।

                    মু’আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার যিকরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই।”

                    মূল হাদিসটি (সুনানে তিরমিযি: ৩৩৭৭) এই-

                    عن أبي الدرداء رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه و سلم: ألا أنبئكم بخير أعمالكم وأزكاها عند مليككم وأرفعها في درجاتكم وخير لكم من إنفاق الذهب والورق وخير لكم من أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم ؟ قالوا بلى، قال: ذكر الله تعالى. فقال معاذ بن جبل رضي الله عنه: ما شيء أنجى من عذاب الله من ذكر الله

                    এই হাদিসের কারণে অনেক ভাই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান কারণ এ হাদিসে যিকিরকে জিহাদের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে, অথচ জিহাদের ফজিলত সীমাহীন। এছাড়া হাদিসকে কেন্দ্র করে অনেকে জিহাদ তরকের বাহানা খুঁজতে পারে।

                    বিষয়টি এভাবে চিন্তা করা যেতে পারে।

                    ধরুন কারো সৌন্দর্যের প্রশংসায় বলা হল –

                    তার পুরো শরীরের মধ্যে ঠোট দুটি সবচেয়ে সুন্দর। সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক, সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর। চোখের চেয়ে বেশী উন্মাদনা সৃষ্টিকারী, নাকের চেয়ে বেশী হৃদয়গ্রাহী, গালের চেয়ে বেশী উজ্জ্বল…

                    তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায় সেগুলোর মোকাবেলায় এটি একা বেশী সুন্দর? নাকি সেগুলোর সাথে থেকে সুন্দর ?

                    এমনিভাবে আ’মালের সাথে যদি যিকির থাকে তাহলে সেটি আল্লাহর নৈকট্যের যেমন উসিলা হবে যিকির শূন্য আমাল তেমন হবেনা। যিকর শূন্য গাফেলতের নামাযের চেয়ে ইহসানের নামাযের মূল্য বেশী।

                    ইহছানের অর্থ কী …?

                    “আল্লাহ কে আমি দেখছি /আল্লাহ আমাকে দেখছেন, এই ধ্যান নিয়ে কাজ করা”। তাই নয় কি? আপনি যদি ইহসান আদায় করতে গিয়ে আল্লাহ আমাকে দেখছেন এই ধ্যান নিয়ে বসে থেকে নামাযের সময় পার করে দেন, আর দলীল পেশ করেন যে,

                    إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ

                    “নামাজ অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে নিষেধ করে আর আল্লাহর যিকির সবচেয়ে বড়।”

                    وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي

                    “আমার স্মরণের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো ”

                    যেমন পাকিস্তানের যিকরি গ্রুপ নামাজ বাদ দিয়ে ৫ ওয়াক্ত যিকির করে থাকে। তাহলে আপনিই বলুন! এই ইহসানি যিকির আর যিকির বিহীন নামাযের মধ্যে ‘কোনটি উত্তম’ তা নিয়ে কোন প্রশ্ন হতে পারে?!

                    একজন ‘ধ্যান’ করে কিন্তু নামাজ পড়েনা, অন্যজন ‘ধ্যান’ ছাড়া নামাজ পড়ে, কে উত্তম ?!

                    জিহাদ যখন ফরযে আইন (অথবা বর্তমানের খবর না থাকার কারণে হয়তো কেউ কেউ কিফায়া বলবেন; এখন কাফি পরিমানে) সেটি আদায় হওয়া ছাড়া কেউ যদি মন-যবান দ্বারা যিকিরে ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকেন আর জিহাদ তরকের ফিসকের সাথে থাকা হয়, তাহলে সে কি যিকির বিহীন মুজাহিদ থেকে উত্তম হয়ে যাবে? যিকির যেমন যবানের দ্বারা হয় তেমন অন্তর দ্বারাও হয়, আবার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারাও হয়। এসব ধাপের মধ্যে কিছু আছে ফরজ।

                    যেমন কিরাত পড়া(যবানের যিকর)।

                    নিয়্যত করা(অন্তরের যিকর)।

                    রুকুসিজদা করা(অংগ প্রত্যঙ্গের যিকর)।

                    কোন এক প্রকারের ফরজ দিয়ে অন্য প্রকারের ফরজ আদায় করার চিন্তা করা যায়না। কোন ভাবেই এক প্রকারের ফরজ এর মুকাবিলায় অন্য প্রকারের নফল মুস্তাহাবকে দাঁড় করানো যাবে না। এখন মাথা নুইয়ে রুকু করা আর কপাল ঠেকিয়ে সিজদা করা এটি ও যিকর আবার সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়া এটিও যিকর। আবার অন্তরে সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লার অর্থ খেয়াল করে ধ্যান করা সেটিও যিকির। তবে মাথা নুইয়ে পিঠ দিয়ে রুকু করা এটি ফরজ আর তাসবীহ পড়া সুন্নত…।

                    কোনটি উত্তম বলুন?! যখন নামাজের উদ্দ্যেশ্যই হলো যিকির!

                    বলুন! নামাজের মধ্যে লম্বা কিয়াম উত্তম না লম্বা সিজদা উত্তম?

                    মুজতাহিদগণের সে ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে কিন্তু কেউ কি একটি ছেড়ে অপরটি লম্বা করার কথা বলেছেন?

                    যেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিচ্ছেনঃ

                    “হে নামাজী ! তোমার খুশু তোমাকে আল্লাহর যে সান্নিধ্যে পৌছাঁবে শুধু রুকু সে সান্নিধ্যে পৌছাবে না …”

                    “হে মুজাহিদ ! তোমার যিকির তোমার জন্য আল্লাহর যে নুসরত বয়ে আনবে তোমার আঘাতে সে কাজ হবেন…”

                    (আল্লাহু আলাম)

                    মোট কথা প্রত্যেক আমলের সাথেই যিকিরের সম্পর্ক আছে ,

                    إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ

                    এই আয়াতে বলা হয়েছেঃ

                    “আল্লাহর দিকে পবিত্র বাণী (যিকর) আরোহণ করে , আর সেটি আমলে সালিহকে উন্নত করে।”

                    আয়াতের আরেকটি স্বীকৃত তাফসীর হলঃ “আল্লাহর দিকে পবিত্র বাণী আরোহন করে এবং আমলে সালিহ তাকে উপরে উঠায় ।”

                    এখন আমল বাদ দিয়ে যিকর করলে এই যিকর কাকে উপরে উঠাবে? আর যিকর ছাড়া আমল উন্নত হবে কিভাবে? প্রত্যেক আমলকারী কে বলা হচ্ছে আমলের অহমিকায় না থেকে সেটিকে আল্লাহর স্মরণে ন্যাস্ত করতে।

                    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিনিয়ত যিকিরের সাথে থাকতেন। সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এই হাদিস শুনে জিহাদ ছেড়ে যিকরে বসে যাননি , যেমনটি পাকিস্তানের যিকরি গ্রুপ শুরু করেছে। তারা নামাজের বিকল্প যিকরি গ্রুপ হয়েছে আর এখন কিছু লোক জিহাদের বিকল্প যিকরি হওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত! গোমরাহি কিন্তু একই।! আল্লাহ তায়ালা সঠিক বুঝ নসীব করুন।
                    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 06-20-2021, 04:06 PM.
                    الجهاد محك الإيمان

                    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

                    Comment


                    • #11
                      Pdf দেওয়ার জন্য ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
                      ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

                      Comment


                      • #12
                        Originally posted by আদনানমারুফ View Post
                        মাশাআল্লাহ, ইলম ও জিহাদ ভাই সুন্দর ইলমী উত্তর দিয়েছেন, এ বিষয়ে দারুল উলূম অর্গানাইজেশনেও সুন্দর একটি প্রবন্ধ আছে, বিষয়টির পূর্ণাঙ্গতার জন্য সেটি এখানে কপি করে দিচ্ছি,


                        জিহাদ না করে যিকির?

                        “আবূদ দারদা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শক্রর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার যিকর।

                        মু’আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার যিকরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই।”

                        মূল হাদিসটি (সুনানে তিরমিযি: ৩৩৭৭) এই-

                        عن أبي الدرداء رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه و سلم: ألا أنبئكم بخير أعمالكم وأزكاها عند مليككم وأرفعها في درجاتكم وخير لكم من إنفاق الذهب والورق وخير لكم من أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم ؟ قالوا بلى، قال: ذكر الله تعالى. فقال معاذ بن جبل رضي الله عنه: ما شيء أنجى من عذاب الله من ذكر الله

                        এই হাদিসের কারণে অনেক ভাই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান কারণ এ হাদিসে যিকিরকে জিহাদের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে, অথচ জিহাদের ফজিলত সীমাহীন। এছাড়া হাদিসকে কেন্দ্র করে অনেকে জিহাদ তরকের বাহানা খুঁজতে পারে।

                        বিষয়টি এভাবে চিন্তা করা যেতে পারে।

                        ধরুন কারো সৌন্দর্যের প্রশংসায় বলা হল –

                        তার পুরো শরীরের মধ্যে ঠোট দুটি সবচেয়ে সুন্দর। সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক, সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর। চোখের চেয়ে বেশী উন্মাদনা সৃষ্টিকারী, নাকের চেয়ে বেশী হৃদয়গ্রাহী, গালের চেয়ে বেশী উজ্জ্বল…

                        তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায় সেগুলোর মোকাবেলায় এটি একা বেশী সুন্দর? নাকি সেগুলোর সাথে থেকে সুন্দর ?

                        এমনিভাবে আ’মালের সাথে যদি যিকির থাকে তাহলে সেটি আল্লাহর নৈকট্যের যেমন উসিলা হবে যিকির শূন্য আমাল তেমন হবেনা। যিকর শূন্য গাফেলতের নামাযের চেয়ে ইহসানের নামাযের মূল্য বেশী।

                        ইহছানের অর্থ কী …?

                        “আল্লাহ কে আমি দেখছি /আল্লাহ আমাকে দেখছেন, এই ধ্যান নিয়ে কাজ করা”। তাই নয় কি? আপনি যদি ইহসান আদায় করতে গিয়ে আল্লাহ আমাকে দেখছেন এই ধ্যান নিয়ে বসে থেকে নামাযের সময় পার করে দেন, আর দলীল পেশ করেন যে,

                        إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ

                        “নামাজ অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে নিষেধ করে আর আল্লাহর যিকির সবচেয়ে বড়।”

                        وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي

                        “আমার স্মরণের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো ”

                        যেমন পাকিস্তানের যিকরি গ্রুপ নামাজ বাদ দিয়ে ৫ ওয়াক্ত যিকির করে থাকে। তাহলে আপনিই বলুন! এই ইহসানি যিকির আর যিকির বিহীন নামাযের মধ্যে ‘কোনটি উত্তম’ তা নিয়ে কোন প্রশ্ন হতে পারে?!

                        একজন ‘ধ্যান’ করে কিন্তু নামাজ পড়েনা, অন্যজন ‘ধ্যান’ ছাড়া নামাজ পড়ে, কে উত্তম ?!

                        জিহাদ যখন ফরযে আইন (অথবা বর্তমানের খবর না থাকার কারণে হয়তো কেউ কেউ কিফায়া বলবেন; এখন কাফি পরিমানে) সেটি আদায় হওয়া ছাড়া কেউ যদি মন-যবান দ্বারা যিকিরে ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকেন আর জিহাদ তরকের ফিসকের সাথে থাকা হয়, তাহলে সে কি যিকির বিহীন মুজাহিদ থেকে উত্তম হয়ে যাবে? যিকির যেমন যবানের দ্বারা হয় তেমন অন্তর দ্বারাও হয়, আবার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারাও হয়। এসব ধাপের মধ্যে কিছু আছে ফরজ।

                        যেমন কিরাত পড়া(যবানের যিকর)।

                        নিয়্যত করা(অন্তরের যিকর)।

                        রুকুসিজদা করা(অংগ প্রত্যঙ্গের যিকর)।

                        কোন এক প্রকারের ফরজ দিয়ে অন্য প্রকারের ফরজ আদায় করার চিন্তা করা যায়না। কোন ভাবেই এক প্রকারের ফরজ এর মুকাবিলায় অন্য প্রকারের নফল মুস্তাহাবকে দাঁড় করানো যাবে না। এখন মাথা নুইয়ে রুকু করা আর কপাল ঠেকিয়ে সিজদা করা এটি ও যিকর আবার সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়া এটিও যিকর। আবার অন্তরে সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লার অর্থ খেয়াল করে ধ্যান করা সেটিও যিকির। তবে মাথা নুইয়ে পিঠ দিয়ে রুকু করা এটি ফরজ আর তাসবীহ পড়া সুন্নত…।

                        কোনটি উত্তম বলুন?! যখন নামাজের উদ্দ্যেশ্যই হলো যিকির!

                        বলুন! নামাজের মধ্যে লম্বা কিয়াম উত্তম না লম্বা সিজদা উত্তম?

                        মুজতাহিদগণের সে ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে কিন্তু কেউ কি একটি ছেড়ে অপরটি লম্বা করার কথা বলেছেন?

                        যেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিচ্ছেনঃ

                        “হে নামাজী ! তোমার খুশু তোমাকে আল্লাহর যে সান্নিধ্যে পৌছাঁবে শুধু রুকু সে সান্নিধ্যে পৌছাবে না …”

                        “হে মুজাহিদ ! তোমার যিকির তোমার জন্য আল্লাহর যে নুসরত বয়ে আনবে তোমার আঘাতে সে কাজ হবেন…”

                        (আল্লাহু আলাম)

                        মোট কথা প্রত্যেক আমলের সাথেই যিকিরের সম্পর্ক আছে ,

                        إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ

                        এই আয়াতে বলা হয়েছেঃ

                        “আল্লাহর দিকে পবিত্র বাণী (যিকর) আরোহণ করে , আর সেটি আমলে সালিহকে উন্নত করে।”

                        আয়াতের আরেকটি স্বীকৃত তাফসীর হলঃ “আল্লাহর দিকে পবিত্র বাণী আরোহন করে এবং আমলে সালিহ তাকে উপরে উঠায় ।”

                        এখন আমল বাদ দিয়ে যিকর করলে এই যিকর কাকে উপরে উঠাবে? আর যিকর ছাড়া আমল উন্নত হবে কিভাবে? প্রত্যেক আমলকারী কে বলা হচ্ছে আমলের অহমিকায় না থেকে সেটিকে আল্লাহর স্মরণে ন্যাস্ত করতে।

                        রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিনিয়ত যিকিরের সাথে থাকতেন। সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এই হাদিস শুনে জিহাদ ছেড়ে যিকরে বসে যাননি , যেমনটি পাকিস্তানের যিকরি গ্রুপ শুরু করেছে। তারা নামাজের বিকল্প যিকরি গ্রুপ হয়েছে আর এখন কিছু লোক জিহাদের বিকল্প যিকরি হওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত! গোমরাহি কিন্তু একই।! আল্লাহ তায়ালা সঠিক বুঝ নসীব করুন।
                        আঁথি ফিল্লাহ,
                        জাযাকাল্লাহু আহসানাল জাযা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ তা‘আলা আপনার ইলমে ও আমালে বারাকাহ নসীব করুন। আমীন
                        আপনার শেষের কথাটা খুব ভালো লেগেছে-
                        “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিনিয়ত যিকিরের সাথে থাকতেন। সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এই হাদিস শুনে জিহাদ ছেড়ে যিকরে বসে যাননি , যেমনটি পাকিস্তানের যিকরি গ্রুপ শুরু করেছে। তারা নামাজের বিকল্প যিকরি গ্রুপ হয়েছে আর এখন কিছু লোক জিহাদের বিকল্প যিকরি হওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত! গোমরাহি কিন্তু একই।! আল্লাহ তায়ালা সঠিক বুঝ নসীব করুন।” আমীন
                        Last edited by Munshi Abdur Rahman; 06-20-2021, 04:07 PM.
                        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                        Comment


                        • #13
                          যিকিরের প্রকৃত মর্মার্থ সম্পর্কে যারা অজ্ঞ তারাই জিহাদের মাঝে আর যিকিরের মাঝে প্রার্থক্য করেন।

                          Comment

                          Working...
                          X