Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদ ও মুজাহিদিন নিয়ে হযরতওয়ালাদের বিভ্রান্তি-০৪ (মালেক রহ. এর জিহাদ)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদ ও মুজাহিদিন নিয়ে হযরতওয়ালাদের বিভ্রান্তি-০৪ (মালেক রহ. এর জিহাদ)

    ইমাম মালেক রহ. এর জিহাদ

    আমরা আলোচনা করে এসেছি যে, নফসে যাকিয়্যাহ মুহাম্মাদ রহ. মদীনায় এবং তার ভাই ইব্রাহিম রহ. বসরায় খলিফা মানসূরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। ইব্রাহিম রহ.কে আবু হানিফা রহ. সমর্থন করেন, সহায়তা করেন এবং তার পক্ষে ফতোয়া দেন। আর মুহাম্মাদ রহ.কে ইমাম মালেক রহ. সমর্থন করেন এবং তার পক্ষে ফতোয়া দেন।

    ইবনে কাসীর রহ. (৭৭৪হি.) বলেন,
    وقد روى ابن جرير عن الإمام مالك: أنه أفتى الناس بمبايعته، فقيل له: فإن في أعناقنا بيعة للمنصور، فقال: إنما كنتم مكرهين وليس لمكره بيعة. فبايعه الناس عند ذلك عن قول مالك، ولزم مالك بيته. اهـ
    “ইবনে জারির (ত্ববারি) রহ. ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি লোকদের মুহাম্মাদ রহ. এর হাতে বাইয়াত হতে ফতোয়া দেন। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় যে, আমাদের গর্দানে তো মানসূরের বাইয়াত বিদ্যমান আছে (তা ভঙ্গ করে আমরা কিভাবে মুহাম্মাদকে বাইয়াত দেবো)? তিনি উত্তর দেন, তোমাদেরকে তো (বাইয়াত দিতে) জবরদস্তি বাধ্য করা হয়েছিল। আর যাকে জবরদস্তি বাধ্য করা হয় (শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে) তার বাইয়াত কার্যকর হয় না। মালেক রহ. এর ফতোয়ার কারণে তখন লোকজন তার হাতে বাইয়াত দেয়। আর মালেক রহ. আপন গৃহে বসে পড়েন (এবং বাহিরে যাওয়া বন্ধ করে দেন)।”- আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/৮৭


    কাজি ইয়াজ রহ. (৫৪৪হি.) দারাওয়ারদি রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
    أفتى الناس عند قيام محمد بن عبد الله بن حسن العلوي المسمى بالمهدي بأن بيعة أبي جعفر لا تلزم لأنها على الإكراه. اهـ
    “আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান- যিনি মাহদি উপাধী ধারণ করেছিলেন- তিনি যখন বিদ্রোহ করেন, তখন মালেক রহ. ফতোয়া দেন যে, আবু জা’ফর (মানসূর)- এর বাইয়াত মেনে চলা আবশ্যক নয়। কেননা, তা জবরদস্তি গ্রহণ করা হয়েছিল।”- তারতিবুল মাদারিক ২/১৩৪



    ইমাম মালেক রহ. এর উক্ত ফতোয়ার কথা কতক হিংসুক লোক মদীনায় মানসূরের পক্ষ থেকে নিয়োজিত তৎকালীন গভর্নর জা’ফর বিন সুলাইমানের কাছে পৌঁছায়। এতে জা’ফর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং মালেক রহ.কে অমানবিক নির্যাতন করে। ফলে মালেক রহ. আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়েন। এ পঙ্গু অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেন। বলা হয়, নির্যাতনের পর মালেক রহ. আর কখনোও বাহিরে যেতেন না। মসজিদে জামাতে শরীক হতেন না। জুমআতেও যেতেন না। কারণ, বেত্রাঘাতের কারণে তার অবস্থা এমন হয়ে পড়েছিল যে, বেশিক্ষণ অজু ধরে রাখতে পারতেন না। বলা হয়, এজন্যই তিনি জুমআয় ও জামাতে শরীক হতেন না।



    কাজি ইয়াজ রহ. মুনযির রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, বনী মাখযুমের এক ব্যক্তি মালেক রহ. এর ফতোয়ার ব্যাপারে জা’ফর বিন সুলাইমানের কাছে নালিশ করেছিল। এরপর জা’ফর তা মানসূরকে পত্র মারফত অবগত করে। মানসূর মালেক রহ.কে প্রহার করার আদেশ দেয়। কাজি ইয়াজ রহ. বর্ণনা করেন,
    فكتب بذلك جعفر إلى الخليفة فكتب إليه: أن اجلده. فجلده ومد يده بين العقابين فلذلك كان لا يأتي المسجد لإنزال ريح تخرج من موضع الكتف. اهـ
    “জা’ফর এ ব্যাপারে খলিফার কাছে পত্র লিখে। খলিফা উত্তর পাঠায়, ‘মালেককে প্রহার কর’। এতে জা’ফর তাকে বেত্রাঘাত করে। দু’টি পিলারের মাঝখানে তার হাত টানা দেয়া হয়। এ কারণেই তিনি মসজিদে যেতেন না। কারণ, কাঁধের দিক থেকে বায়ু বের হতো।”- তারতিবুল মাদারিক ২/১৩৬


    কাজি ইয়াজ রহ. ওয়াকিদি রহ. থেকে বর্ণনা করেন,
    فغضب جعفر ودعا به فاحتج عليه فما رفع إليه. ثم جره ومده فضربه بالسياط ومدت يده حتى انخلعت كتفه وفي رواية عنه ومدت يداه حتى انخلع كتفاه وكذلك اختلف على مصعب الزبيري. وقال الحنيني بقي مالك بعد الضرب مطابق اليدين لا يستطيع أن يدفعهما وارتكب منه أمر عظيم فو الله لمالك بعد ذلك الضرب في رفعة في الناس وعلو وإعظام حتى كأنما كانت تلك الأسواط حلياً حلي بها. اهـ
    “নালিশ শুনে জা’ফর ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ে। মালেক রহ.কে ডেকে দরবারে হাজির করায়। উত্থাপিত নালিশের ভিত্তিতে তাকে অভিযুক্ত করে। এরপর তাকে নিয়ে টানা-হেঁচরা করে। সটান করে টানা দেয়। তারপর চাবুক দ্বারা বেত্রাঘাত করে। তার এক হাত এত সজোরে টানা হয় যে, কাঁধ আপন জায়গা থেকে সরে পড়ে। তার থেকে অন্য বর্ণনায় আছে, উভয় হাত ধরে সজোরে টানা হয় ফলে উভয় কাঁধ আপন স্থান থেকে সরে পড়ে। ... হুনাইনি রহ. বলেন, এরপর থেকে মালেক রহ. এর উভয় হাত পঙ্গু হয়ে পড়ে। হাত নাড়ানোর সামর্থ্য তার ছিল না। তার সাথে নিদারুন অমানবিক আচরণ করা হয়। আল্লাহর কসম! এ নির্যাতনের পর থেকে লোকজনের নিকট মালেকের সম্মান ও মর্যাদা বাড়তে থাকে। যেন ঐসব চাবুক কতগুলো অলংকার ছিল আর তিনি সেগুলো পরিধান করে সুসজ্জিত হয়েছেন।”- তারতিবুল মাদারিক ২/১৩০-১৩১


    মুতাররিফ রহ. বলেন,
    فرأيت آثار السياط في ظهره قد شرحته تشريحاً ... خلعوا كتفيه حتى كان ما يستطيع أن يسوي رداءه.اهـ
    “মালেক রহ. এর পৃষ্ঠে আমি চাবুকের চিহ্ন দেখেছি। আঘাতে পৃষ্ঠে গভীর ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। ... তারা তার কাঁধ আপন স্থান থেকে সরিয়ে ফেলেছিল। এমনকি তিনি তার চাদরও সোজা করতে পারতেন না।”- তারতিবুল মাদারিক ২/১৩৩


    কাজি ইয়াজ রহ. আরো বর্ণনা করেন,
    لما ضرب مالك رحمه الله تعالى ونيل منه حمل مغشياً عليه فدخل الناس عليه فأفاق فقال: أشهدكم إني جعلت ضاربي في حل. اهـ
    “মালেক রহ.কে যখন বেত্রাঘাত ও নির্যাতন করা হল, তখন বেহুঁশ অবস্থায় তাকে বহন করে আনা হল। এরপর লোকজন তার ঘরে প্রবেশ করল। তখন তিনি হুঁশে আসেন। হুঁশে এসে বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষ্যি রাখছি যে, আমি আমার বেত্রাঘাতকারীকে মাফ করে দিয়েছি।”- তারতিবুল মাদারিক ২/১৩২



    উল্লেখ্য, বেত্রাঘাতকারী মুসলামান ছিল তাই তাকে মাফ করে দিয়েছেন। আর আমাদের বর্তমান তাগুতগুলো মুরতাদ। এদেরকে মুসলমানদের ঘাড়ে চেপে থাকতে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    وَلَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا
    “আল্লাহ কিছুতেই কাফেরদের জন্য মুমিনদের উপর (চড়াও হয়ে তাদের মূলোৎপাটন করার) কোন রাস্তা রাখবেন না।”- নিসা: ১৪১


    নির্যাতিত হওয়ার পর মালেক রহ. বলেছিলেন,
    ولقد ضرب فيما ضربت فيه محمد بن المنكدر وربيعة وابن المسيب ولا خير فيمن لا يؤذى في هذا الأمر. اهـ
    “যে পথে আমি প্রহৃত হয়েছি, সে পথে মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির, রবিআ ও ইবনুল মুসায়্যিব প্রহৃত হয়েছেন। এ পথে যার উপর কোনো নির্যাতন আসে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।”- তারতিবুল মাদারিক ২/১৩২, ছাপা: আলমাগরিব


    সুবহানাল্লাহ! লক্ষ করুন, “এ পথে যার উপর কোনো নির্যাতন আসে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।” দ্বীনের জন্য যার উপর নির্যাতন আসে না, জেল-জরিমানা, বন্দী বা রিমান্ডের শিকার হয় না: তিনি বলছেন, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। হতে পারেন তিনি অনেক বড় হযরতওয়ালা, কিন্তু মালেক রহ. এর দৃষ্টিতে তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। কোথায় মালেক আর কোথায় আমরা! আজ যদি কোন আলেম বা কোনো মুজাহিদ দ্বীনের কারণে, জিহাদের কারণে গ্রেফতার হন, রিমান্ডে যান বা ফাঁসি দেয়া হয়, তাহলে বলা হয়: সে অতি জযবাতি ছিল, ভাসা ভাসা বুঝের ছিল- গভীর বুঝ ছিল না, মাসলাহাত বুঝতো না, হেকমত জানতো না, বেশি বুঝে ফেলেছিল, বড়দের সাথে বেয়াদবির ফল ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের বিশেষণ। ইমাম মালেকের দৃষ্টিতে এদের মাঝোই কল্যাণ নিহিত। আর যারা বড় বড় হযরতওয়ালা বা বড় বড় মুদীর, আমীন, মুরুব্বী ও শাইখুল হাদিস হয়ে বসে আছেন কিন্তু দ্বীনের পথে একটা ফুলের টোকাও তাদের শরীরে পড়েনি: ইমাম মালেকের দৃষ্টিতে তাদের মাঝে কোন কল্যাণ নেই। হে আল্লাহ আমাদের হেফাজত কর। তোমার দ্বীনের জন্য কবুল কর। আমীন।





  • #2
    আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
    ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

    Comment


    • #3
      ইলম ও জিহাদ ভাই!
      ফোরামের হাদিছের দরছ কি চালু হইছে?

      নাকি না হওয়ারই ফয়ছালা হইছে,
      জানালে উপকৃত হতাম।
      فمن یکفر بالطاغوت ویٶمن بالله فقد استمسک بالعروت الوثقی'
      کم من فاة قلیلة غلبت فاة کثیرة باذن الله

      Comment


      • #4
        ما شاء الله
        بارك الله في علمك
        ইমাম মালেক রহ. এর এই নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আগে আমার জানা ছিলো না..
        কিন্তু ইমাম আবু হানিফা, হাম্বল রহ. এর ঘটনা কিছুটা জানতাম।
        আল্লাহ সুব. আপনার মেহনতগুলো দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন, আমীন।
        বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
        কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ ভাই..আপনার লেখা পড়ে অনেক আপ্লুত হলাম...
          বহুত বহুত শুকরিয়া প্রিয় ভাই...
          আল্লাহ তা‘আলা আপনার ইলমে ও কলমে এবং আমলে আরো ভরপুর বারাকাহ দান করুন। আমীন
          আপনার সকল খেদমতকে কবুল করে নিন এবং উত্তম জাযা দান করুন। আমীন
          ইনশা আল্লাহ, আমরা আপনার বাকি পর্বগুলোও খুব দ্রুতই পাব আশা করি...!
          আল্লাহ তা‘আলা আপনার সহায় হোন...আমীন
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment


          • #6
            বয়ানের স্পষ্ট ফুটেওটেছে মুসলিমদের উথ্যানে ওনারা অসন্তুষ্ট। ওনাদের মানহাজেই একমাত্র বিজয় মুসলিমদের!!! লা হাওলা.....। প্রিয় ভাই, পিডিএফ কিন্তু কিন্তু করে দিয়েন।
            ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

            Comment

            Working...
            X