Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদ ও মুজাহিদিন নিয়ে হযরতওয়ালাদের বিভ্রান্তি-০৬ (ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. (২৪১ হি.) এর &#

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদ ও মুজাহিদিন নিয়ে হযরতওয়ালাদের বিভ্রান্তি-০৬ (ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. (২৪১ হি.) এর &#

    ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. (২৪১ হি.) এর জিহাদ


    # ইমাম যাহাবি রহ. (৭৪৮ হি.) আহমাদ বিন হাম্বল রহ. এর জিহাদের স্বতন্ত্র শিরোনাম কায়েম করেছেন। তিনি বলেন,
    من جهاده
    قال عبد الله بن محمود بن الفرج: سمعت عبد الله بن أحمد يقول: خرج أبي إلى طرسوس، ورابط بها، وغزا ... وعن أحمد، أنه قال لرجل: عليك بالثغر، عليك بقزوين، وكانت ثغرا. اهـ
    ইমাম আহমাদ রহ. এর জিহাদ:
    আব্দুল্লাহ ইবনু মাহমূদ ইবনুল ফারাজ বলেন, আমি আহমাদ রহ. এর পুত্র আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেন, ‘আমার পিতা (সীমান্ত এলাকা) ত্বরাসূসে গিয়েছেন। সেখানে রিবাতের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন’। … আহমাদ রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি এক ব্যক্তিকে বলেছেন, ‘তুমি সীমান্তে চলে যাও। কাযবিনে চলে যাও’। কাযবিন তখন সীমান্ত এলাকা ছিল।”- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/৩৩১


    যাহাবি রহ. আরো বর্ণনা করেন,
    قال عبد الله بن أحمد: خرج أبي إلى طرسوس ماشيا. اهـ
    “আহমাদ রহ. এর পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন, আমার পিতা ত্বরাসূস গিয়ে পায়ে হেঁটে।”- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/২২১


    আরো বর্ণনা করেন,
    وعن أحمد، قال: ... كنا خرجنا إلى طرسوس على أرجلنا. اهـ
    “আহমাদ রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমরা ত্বরাসূস গিয়েছিলাম পায়ে হেঁটে।”- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/৩০৮


    যাহাবি রহ. এর বর্ণনা থেকে বুঝা গেল,
    ক. আহমাদ রহ. পায়ে হেঁটে সীমান্তে গিয়েছেন।
    খ. সীমান্তে রিবাতের দায়িত্ব পালন করেছেন তথা সীমান্ত পাহারা দিয়েছেন।
    গ. যুদ্ধও করেছেন।
    ঘ. অন্যদেরকে সীমান্ত পাহারায় উদ্ধুদ্ধ করেছেন।



    # সীমান্তবাসী মুজাহিদিনে কেরাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ.কে অত্যন্ত ভালবাসতেন। অনেক সময় তারা আহমাদ রহ. এর তরফ থেকে গোলা ছোঁড়তেন। আল্লাহ তাআলা তাতে বরকত দান করতেন। যেমন এক বর্ণনায় এসেছে,
    قدم رجل من طرسوس، فقال: كنا في بلاد الروم في الغزو إذا هدأ الليل، رفعوا أصواتهم بالدعاء، ادعوا لأبي عبد الله، وكنا نمد المنجنيق، ونرمي عن أبي عبد الله. ولقد رمي عنه بحجر، والعلج على الحصن متترس بدرقة، فذهب برأسه وبالدرقة. اهـ
    “এক লোক ত্বরাসূস থেকে আসল। বলল, আমরা রোমে যুদ্ধে ছিলাম। যখন নিঝুম রাত হল দোয়ায় সকলে জোরো জোরো বলতে লাগল, সকলে আবু আব্দুল্লাহ (আহমাদ বিন হাম্বল)- এর জন্য দোয়া কর। আমরা অনেক সময় ক্ষেপণাস্ত্র ফিট করে আবু আব্দুল্লাহ (আহমাদ বিন হাম্বল) এর তরফ থেকে ছোঁড়তাম। একবার তার তরফ থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হল। শত্রু সৈন্যটি দূর্গের উপর ছিল। একটি ঢাল দিয়ে আত্মরক্ষা করছিল। পাথরটি সৈন্যটির ঢালসহ মাথা গুঁড়িয়ে দিল।”- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/২১০



    অনেক সময় সীমান্তবাসী মুজাহিদিনে কেরাম বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করে আহমাদ বিন হাম্বল রহ. এর কাছে চিঠি পাঠাতেন। তিনিও প্রতিউত্তর লিখে চিঠি পাঠাতেন। যেমন, একবার তারা এক বিদআতি লোকের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠান। আহমাদ রহ. বলেন,
    كتب إلي أهل الثغر يسألوني عن أمره، فكتبت إليهم، فأخبرتهم بمذهبه وما أحدث، وأمرتهم أن لا يجالسوه. اهـ
    “সীমান্তবাসীরা আমার কাছে এ লোকের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। আমি তার মাযহাব-মতাদর্শ ও তার আবিষ্কৃত বিদআত সম্পর্কে তাদের অবগত করিয়ে প্রতিউত্তর পাঠাই এবং তাদের আদেশ দিই, যেন তারা তার সাথে উঠাবসা না করে।”- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/২১১



    # আহমাদ বিন হাম্বল রহ. জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করতেন এবং জিহাদের কথা স্বরণ হলে কাঁদতেন। ইবনে কুদামা রহ. (৬২০ হি.) বলেন,
    قال أبو عبد الله: لا أعلم شيئا من العمل بعد الفرائض أفضل من الجهاد روى هذه المسألة عن أحمد جماعة من أصحابه، قال الأثرم: قال أحمد: لا نعلم شيئا من أبواب البر أفضل من السبيل. وقال الفضل بن زياد: سمعت أبا عبد الله، وذكر له أمر العدو؟ فجعل يبكي، ويقول: ما من أعمال البر أفضل منه. وقال عنه غيره: ليس يعدل لقاء العدو شيء. اهـ
    “আবু আব্দুল্লাহ (আহমাদ বিন হাম্বল রহ.) বলেন, ‘ফরযের পর আমার জানা মতে জিহাদের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই’।
    আহমাদ রহ. এর অনেক শাগরেদ তার থেকে এ মাসআলাটি বর্ণনা করেছেন। আসরাম রহ. বলেন, আহমাদ রহ. বলেছেন, ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর চেয়ে উত্তম কোন নেক আমল আছে বলে আমার জানা নেই’।

    ফজল বিন যিয়াদ রহ. বলেন, ‘একবার শত্রুর (তথা কাফেরদের) আলোচনা উঠল। আবু আব্দুল্লাহ (আহমাদ রহ.) কাঁদতে লাগলেন এবং আমি শুনেছি যে, তিনি বলতে লাগলেন, ‘জিহাদের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই’। অন্য কেউ

    কেউ তার থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘শত্রুর মোকাবেলার চেয়ে উত্তম কিছু নেই’।”- আলমুগনি ৯/১৯৯



    # আহমাদ রহ. এর কাছে জিহাদ এতই প্রিয় ছিল যে, খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহ- যিনি খালকে কুরআনকে সমর্থন না করায় আহমাদ রহ.কে নিদারুণ ও নির্মম নির্যাতন করেছেন- তিনি যখন বাতেনী কাফের বাবাক আলখুররামি ও তার বাহিনিকে পরাজিত করতে সক্ষম হন, তখন আহমাদ রহ. খুশি হয়ে তাকে মাফ করে দেন। ইমাম যাহাবি রহ. আহমাদ বিন সিনান রহ. থেকে বর্ণনা করেন,
    بلغني أن أحمد بن حنبل جعل المعتصم في حل يوم فتح عاصمة بابك، وظفر به، أو في فتح عمورية، فقال: هو في حل من ضربي. اهـ
    “আমার কাছে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, মু’তাসিম বিল্লাহ যেদিন বাবাকের রাজধানী বিজয় করেন এবং বাবাককে পাকড়াও করতে সক্ষম হন কিংবা যখন তিনি আমুরিয়া বিজয় করেন, তখন আহমাদ রহ. তাকে মাফ করে দেন এবং বলেন, ‘আমি তাকে আমার প্রহারের অপরাধ মাফ করে দিলাম।”- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/২৫৭-২৫৮



    মু’তাসিম বিল্লাহ আহমাদ রহ.কে কতটুকু নির্মম নির্যাতন করেছিল তা সকলের জানা। আড়াই বছর পর্যন্ত জেলে ভরে রেখেছেন। তাকে এমনও শিকল পরানো হতো যে, শিকলের ভারেই তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। খালি গায়ে দু’ হাত দুই দিকে টানা দিয়ে বেঁধে মু’তাসিম বিল্লাহর সামনে হাজির করা হল ইমাম আহমাদ রহ.কে। মু’তাসিম বিল্লাহ বললেন, আহমাদ! আমার কথায় সাড়া দাও, কুরআন মাখলূক মেনে নাও, আমি নিজ হাতে তোমার শিকল খুলে তোমাকে মুক্ত করে দেবো। আহমাদ রহ. জওয়াব দিলেন, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার মতের পক্ষে কোনো একটা আয়াত বা একটা হাদিস যদি পারেন দেখান। মু’তাসিম বিল্লাহ ভড়কে গেল। কিন্তু দরবারি মোল্লারা বুঝাল, আমীরুল মু’মিনীন! এ লোকটা কাফের হয়ে গেছে। একে হত্যা করুন। মু’তাসিম জল্লাদকে আদেশ দিল, একে চাবুক মারো। চাবুক শুরু হল। একেকটা আঘাত এমন ছিল যেন, মৃত্যু প্রতিক্ষা করছে। মু’তাসিম বিল্লাহ আবারও প্রস্তাব দিলেন, আহমাদ! আমার কথায় সাড়া দাও, কুরআন মাখলূক মেনে নাও, আমি নিজ হাতে তোমার শিকল খুলে তোমাকে মুক্ত করে দেবো। আহমাদ রহ. আগের মতোই জওয়াব দিলেন, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার মতের পক্ষে কোনো একটা আয়াত বা একটা হাদিস যদি পারেন দেখান। মু’তাসিম আবারও জল্লাদকে আদেশ দিল। আবারও চাবুক শুরু হল। আহমাদ রহ. জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। কিছুক্ষণ চাবুক বন্ধ রইল। কিছুক্ষণ পর যখন জ্ঞান ফিরল, আবার শুরু হল চাবুক। আবারও তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। আবার হুঁশে আসলেন। আবার শুরু হল। এভাবেই আহমাদ রহ.কে নির্যাতন করতো মু’তাসিম বিল্লাহ। কিন্তু যিন্দিক বাবাক আলখুররামি- যাকে বিশ বছর যাবৎ পরাজিত করা যাচ্ছিল না- তার বিরুদ্ধে যখন তিনি জয় লাভ করলেন, আহমাদ রহ. তাকে ক্ষমা করে দিলেন। জিহাদকে তিনি এমনই ভালবাসতেন।



    # ইমাম আহমাদ রহ. যদিও জালেম খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি, কিন্তু আহলে সুন্নাহর বিশিষ্ট ইমাম আহমাদ বিন নাসর আলখুজায়ি রহ. যখন মু’তাসিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে শহীদ হন, তখন তিন তার প্রশংসা করেন। ২৩১ হিজরির আলোচনায় ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
    فلما كان شهر شعبان من هذه السنة انتظمت البيعة لأحمد بن نصر الخزاعي في السر على القيام بالأمر بالمعروف والنهي عن المنكر، والخروج على السلطان لبدعته ودعوته إلى القول بخلق القرآن، ولما هو عليه وأمراؤه وحاشيته من المعاصي والفواحش وغيرها. اهـ
    “এ বছরের শা’বান মাসে গোপনে আহমাদ বিন নাসর আলখুজায়ি রহ. এর হাতে বাইয়াত সংঘটিত হয়। আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সুলতানের বিদআত, খালকে কুরআনের দিকে দাওয়াত এবং তার উমারা ও ঘনিষ্টজনদের পাপাচারসহ আরো বিভিন্ন কারণে সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য এ বাইয়াত সংঘটিত হয়।”- আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ১০/৩৩৬


    কিন্তু তিনি কামিয়াব হতে পারেননি। সুলতানের হাতে বন্দী হন এবং শহীদ হন। একদিন আহমাদ বিন হাম্বল রহ. এর সামনে তার আলোচনা উঠলে তিনি তার প্রতি আপ্লুত হয়ে বলেন,
    رحمه الله ما كان أسخاه بنفسه لله، لقد جاد بنفسه له. اهـ
    “আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহম করুন। আল্লাহর জন্য আপন প্রাণ বিলিয়ে দিতে তিনি কতই না অগ্রগামী ছিলেন। তার জন্য তিনি আপন প্রাণ উৎস্বর্গ করে গেছেন।”- আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ১০/৩৩৬


    উপরোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ইনশাআল্লাহ যে, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. একজন প্রকৃত মুজাহিদ ছিলেন। আল্লাহর রাস্তায় রিবাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বীনের পথে স্বশরীরে জিহাদ করেছেন। অন্যদের উৎসাহিত করেছেন। জিহাদকে ভালবেসেছেন। জিহাদে খুশি হয়েছেন। জিহাদকে সকল আমলের চেয়ে উত্তম মনে করেছেন।
    ***


    শেষকথা
    আইম্মায়ে আরবাআরা ব্যাপারে এ হল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশাকরি এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকেই পরিষ্কার যে, তাদের সকলেই মুজাহিদ ছিলেন। জিহাদের পথে জীবন দিয়েছেন। নির্যাতিত হয়েছেন। শহীদ হয়েছেন। আমাদের জিহাদে তারাই আমাদের অনুসরণীয়। মুজাহিদিনে কেরাম যা করছেন তাদেরই অনুসরণে করছেন। তাদের দিয়ে যাওয়া ফতোয়ার ভিত্তিতেই করছেন। কিন্তু হায়! এমনসব লোকই আমাদের নেতৃত্বের আসনে বসে গেছেন, যারা নিজেদেরকে আইম্মায়ে আরবাআর অনুসারি বলে দাবি তো করেন, কিন্তু তাদের সীরতের ব্যাপারে কোন ধারণাই তারা রাখেন না। তাদের রেখে যাওয়া আদর্শের ব্যাপারেও তারা বেখবর। যে পথে তারা জীবন দিয়ে গেছেন, সে পথকেই তারা অস্বীকার করছেন। কোনো দিন তারা সে পথে চলেননি বলেও দাবি করছেন। বরং সে পথকে অস্বীকার করতে তাদেরকেই দলীল হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। কত বড় অজ্ঞতা! কত বড় জাহালত! নয়তো কত বড় ইফতিরা! কত বড় বুহতান! কত সাংঘাতিক অপবাদ।
    ***


    ফাওয়ায়েদ
    আইম্মায়ে আরবাআর সীরত থেকে আমাদের বেশ কিছু সমকালীন মাসআলার সমাধান পাওয়া যাবে। আমরা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

    - আবু হানিফা রহ. ও মালেক রহ.সহ তৎপূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঐ সকল উলামায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে দ্বীন, যারা নিজ নিজ যামানার জালেম শাকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গেছেন, তাদের সকলের মতেই জালেম শাসক- কাফের না হলেও- তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয। অতএব, জালেম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে যে ইজমার কথা বলা হয় তা সঠিক নয়। বেশির চেয়ে বেশি এ কথা বলা যায় যে, পরবর্তী উলামায়ে কেরাম বিদ্রোহ না করার পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন।

    - যিন্দিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জরুরী। এতে কোনো দ্বিমত নেই। এজন্যই যিন্দিক বাবাক আলখুররামির বিরুদ্ধে জিহাদ ও বিজয়ে আহমাদ রহ. যারপরনাই খুশি হয়েছেন।

    - জিহাদ ফরয বা সহীহ হওয়ার জন্য ইসলাহে নফস আবশ্যক নয়। আমরা দেখেছি, আবু হানিফা, মালেক ও আহমাদ রহ.কে যারা নির্যাতন করেছে, তারাই কাফের মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছে। আইম্মায়ে কেরাম সেগুলো সমর্থন করেছেন বরং উৎসাহিত করেছেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, এসব শাসক ফাসেক ও জালেম ছিল। এতদসত্বেও আইম্মায়ে কেরাম তাদের সাথে মিলে কাফের-মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন এবং তাদের জিহাদগুলোকে সমর্থন করেছেন। বুঝা গেল, ইসলাহে নফস জিহাদের জন্য শর্ত নয়- যেমন নামায রোযার জন্য শর্ত নয়।

    - জিহাদের জন্য গোপনে বাইয়াত হওয়া এবং বাইয়াত গোপন রাখা জায়েয। যেমন, নফসে যাকিয়্যা রহ. ও তার ভাই ইব্রাহিম রহ. এর বাইয়াত গোপনে হয়েছিল। আবু হানিফা রহ. ও মালেক রহ. গোপনে গোপনেই ফতোয়া দিয়েছিলেন। তদ্রূপ, আহমাদ বিন নাসর আলখুজায়ি রহ. এর বাইয়াতও গোপনেই হয়েছিল।

    - জিহাদের পক্ষে গোপনে গোপনে ফতোয়া দেয়া জায়েয। যেমন ইমাম মালেক রহ. ও আবু হানিফা রহ. দিয়েছিলেন।

    - জিহাদের জন্য গোপনে গোপনে আর্থিক সহায়তা দেয়া জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. যায়দ বিন আলী রহ.কে গোপনে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

    - জিহাদের পক্ষে থেকে নির্যাতিত হওয়া জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. ও মালেক রহ. নির্যাতিত হয়েছেন।

    - জিহাদের অপরাধে জেলে যাওয়া জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. জেলে গিয়েছেন।

    - জিহাদের জন্য শহীদ হওয়া জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. ও আহমাদ বিন নাসর আলখুজায়ি রহ. শহীদ হয়েছেন।

    - জিহাদের জন্য ট্রেনিং নেয়া জায়েয। যেমন, ইমাম শাফিয়ি রহ. ট্রেনিং নিয়েছেন।

    - আল্লাহর রাস্তায় রিবাত তথা পাহারাদারি করা জায়েয। যেমন, ইমাম শাফিয়ি রহ. ও আহমাদ রহ. রিবাতের দায়িত্ব পালন করেছেন।

    - আল্লাহর রাস্তায় স্বশরীরে যুদ্ধ করা জায়েয, যেমন আহমাদ রহ. যুদ্ধ করেছেন।

    - অন্যকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা জায়েয। যেমন, আব হানিফা রহ. মানসূরের বিরুদ্ধে ইব্রাহিম রহ. এর পক্ষে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আহমাদ রহ. এক ব্যক্তিকে সীমান্তে গিয়ে পাহারাদারি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

    - জিহাদের কথা স্বরণ হলে কাঁদা জায়েয। যেমন, আহমাদ রহ. কেঁদেছেন।

    - শহীদের প্রশংসা করা জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. আবু ইসহাক ফাযারির ভাইয়ের প্রশংসা করেছেন। আহমাদ রহ. আহমাদ বিন নাসর আলখুজায়ি রহ. এর প্রশংসা করেছেন।

    - মুজাহিদদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের প্রয়োজনীয় মাসআলা মাসায়েল ও জিজ্ঞাসার জওয়াব দেয়া জায়েয। যেমন, আহমাদ রহ. সীমান্তবাসীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চিঠি লিখেছেন। মালেক রহ.কে মানসূরের বাইয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তা মানা আবশ্যক নয় বলে জওয়াব দিয়েছেন।

    - মুজাহিদদের বিজয়ে খুশি হওয়া জায়েয (যদিও মুজাহিদরা বা তাদের আমীর ফাসেক হয়)। যেমন, বাবাকের বিরুদ্ধে মু’তাসিমের বিজয়ে আহমাদ রহ. খুশি হয়েছেন, অথচ মু’তাসিম ফাসেক ছিল। তার বাহিনির বহু মুজাহিদিই ফাসেক ছিল।

    - জিহাদের জন্য পায়ে হেঁটে চলাও জায়েয। যেমন, আহমাদ রহ. পায়ে হেঁটে ত্বরাতূস গিয়েছেন।

    - বড় আলেম বরং সবচেয়ে বড় আলেমদের জন্যও জিহাদ জায়েয। যেমন, আইম্মায়ে আরবাআর সকলেই যুগের শ্রেষ্ট আলেম ছিলেন।

    - শাগরেদকেও জিহাদের ময়দানে নিয়ে যাওয়া জায়েয। যেমন, ইমাম শাফিয়ি রহ. তার শাগরেদ রবি বিন সুলাইমানকে নিয়ে ইস্কান্দারিয়ায় রিবাতে গিয়েছেন।

    - শাগরেদের জন্যও উস্তাদের সাথে জিহাদে যাওয়া জায়েয। যেমন, রবি বিন সুলাইমান আপন উস্তাদ শাফিয়ি রহ. এর সাথে রিবাতে গিয়েছেন।

    - ছোট বেলা থেকেই জিহাদের ট্রেনিং নেয়া জায়েয। যেমন, ইমাম শাফিয়ি রহ. ছোট বেলা থেকেই জিহাদের ট্রেনিং নিতেন।

    - যুবক বয়সে জিহাদ করা জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. যখন বনী উমাইয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ফতোয়া দিয়েছেন, তখন তার বয়স ৪১ বছর।

    - বৃদ্ধ বয়সেও জিহাদ করা জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. যখন আব্বাসীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন, তখন তার বয়স ৬৭ বছর।

    - জিহাদের জন্য যুবক বয়সেও নির্যাতিত হওয়া জায়েয, বৃদ্ধ বয়সেও জায়েয। যেমন, আবু হানিফা রহ. যখন উমাইয়াদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, তখন তিনি যুবক আর যখন আব্বাসীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, তখন তিনি বৃদ্ধ।

    - উলূমে হাদিসে মাহের হলেও জিহাদে যাওয়া জায়েয। যেমন, আইম্মায়ে আরবাআ সকলেই (বিশেষত ইমাম আহমাদ রহ.) উলূমে হাদিসে মাহের ছিলেন।

    - ফিকহে মাহের হলেও জিহাদে যাওয়া জায়েয। যেমন, আইম্মায়ে আরআবা সকলেই ফিকহে মাহের ছিলেন (বিশেষত আবু হানিফা রহ.)।

    - হাদিসের উস্তাদদের জন্যও জিহাদে যাওয়া জায়েয। মেযন, মালেক রহ. ও আহমাদ রহ. উভয়ই নিয়মতান্ত্রিক হাদিসের দরস দিতেন।

    - জাস্টিস তথা বিচারকদের জন্যও জিহাদে যাওয়া জায়েয। যেমন, ইমাম শাফিয়ি রহ. এক সময় জাস্টিস ছিলেন।
    ***
    الحمد لله رب العالمين. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.

  • #2
    আল্লাহ আপনার কাজে বারাকাহ দান করুন,আমিন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

    Comment


    • #3
      হে মহামহিম আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল অবিচল রাখুন। আমীন
      হে মহান রব, আমার সম্মানিত ভাইয়ের (ইলম ও জিহাদ) সকল মেহনতকে কবুল করুন এবং আমাদের সকলের জন্য উপকারী বানান। আমীন
      তাকে দ্বীনের মুজাহিদ হিসাবে কবুল করুন এবং শাহাদাতের অমীয় সুধা পানের তাওফিক দান করুন। আমীন
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        ভাই,সবগুলো পর্বের পোস্টগুলো পিডিএফ করে দেওয়ার অনুরোধ ছিলো। আশাকরি ভাই আমাদের অনুরোধটুকু মঞ্জুর করবেন!!!
        ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

        Comment


        • #5
          জিহাদের কথা স্বরণ হলে কাঁদা জায়েয। যেমন, আহমাদ রহ. কেঁদেছেন।
          سبحان الله

          Comment


          • #6
            Originally posted by Bara ibn Malik View Post
            ভাই,সবগুলো পর্বের পোস্টগুলো পিডিএফ করে দেওয়ার অনুরোধ ছিলো। আশাকরি ভাই আমাদের অনুরোধটুকু মঞ্জুর করবেন!!!
            আমিও আশা করছি মঞ্জুর হবে।

            Comment


            • #7
              খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো। প্রতিটি পর্ব গভির মনযোগের সাথে পড়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। এই আলোচিত বিষয়টি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করা চাই যাতে এদেশের জীহাদ ও ইসলামী শরীয়া বিরুধি লোকগুলো থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকতে পারে। এবং আল্লাহর হুকুমকে যথাযথভাবে আকরে ধরতে পারে। আল্লাহ তাআলা উক্ত আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে কবুল ফরমান ও তাদের জন্য উক্ত কাজটিকে পরকালের নাজাতের উসিলা বানান। আমিন ছুম্মা আমিন
              যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান। (সূরা যুমার-18)

              Comment

              Working...
              X