Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলাহী নসীহতঃ পর্ব ১ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও তাকওয়া অবলম্বনের কৌশল

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলাহী নসীহতঃ পর্ব ১ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও তাকওয়া অবলম্বনের কৌশল

    ইসলাহী নসীহাঃ পর্ব ১ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও তাকওয়া অবলম্বনের কৌশল




    [একটি রুটিন]

    যৌনতা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। হুজুর হলেই এই ফিতরাত হাওয়ায় মিশে যায় না। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের শারীরিক ও মানসিক যৌন চাহিদা রয়েছে। চারদিকে এত এত অশ্লীলতার মাঝে নিজের নজর, লজ্জাস্থান, চরিত্র, আত্মিক পবিত্রতা ধরে রাখা নিঃসন্দেহে বেশ কঠিন। আল্লাহর রহমতে যাদের মধ্যে অল্পবিস্তর দ্বীনের চর্চা আছে তাদের হয়তো আর দশজন জাহিল ছেলেদের মত জিনা ব্যবিচার করে বেড়ানো অত সহজ নয়। কিন্তু চোখের হেফাজত, অন্তরের পবিত্রতা ধরে রেখে ইবাদতের মাধুর্য অর্জন করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

    অনেকেই বলবে আল্লাহর ভয় মনের মধ্যে থাকলে পাপ করা সম্ভব নয়। কথা অবশ্যই সত্য, কিন্তু এটা সবসময় প্র্যাক্টিক্যাল সমাধান নয়। তাকওয়া অবশ্যই একমাত্র সমাধান কিন্তু ব্যপারটা তো এমন না যে একজন সারাদিন পাপ করে যাচ্ছে আর হঠাৎ তার মধ্যে আল্লাহর ভয় এসে সব পাপ থেকে সে বিরত হয়ে গেলো। তাই ফাহেশায় ভরপুর এই সমাজে নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা ধরে রাখতে হিমশিম খাওয়া কাউকে তাকওয়ার প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিলেই সমাধান হয়ে যায় না, তাকওয়া কীভাবে অর্জিত হবে, কীভাবে এসব ফাহেশাকে মোকাবেলা করতে হবে তার কিছু প্র্যাক্টিক্যাল উপায় বাতলে দেওয়া জরুরী।

    বিয়ে নিঃসন্দেহে এই জাহিল সমাজে নিজের চরিত্রের হেফাজত করে তাকওয়া অর্জনের এক বরকতময় মাধ্যম। কিন্তু সেটাও তো জাহিলিয়াতের এই সমাজে আর সহজ থাকলো না। আল্লাহ সবার জন্য সহজ করে দিন।
    .
    অবিবাহিত যারা অশ্লীলতা, ফাহেশায় ভরা পরিবেশের কারণে চোখের হেফাজত, চারিত্রিক সততা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তাদের জন্য আমার কাছে কিছু উপদেশ আর কৌশল আছে। আশা করি উপকারে আসবে,

    ১। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। এটা ধরে রাখতে হবে, কষ্ট করে হলেও। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন এই সালাত ফাহেশা কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর এই ওয়াদার প্রতি ইয়াকিনের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উপর লেগে থাকতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে পাঁচ বার ওজু করা, পাঁচ বার সালাতের জন্য তৈরি হয়ে মসজিদের দিকে হেঁটে যাওয়া, পাঁচ বার মসজিদে কাতারবদ্ধ হয়ে অনেকগুলো মানুষের সাথে সালাতে দাঁড়ানো এই সবকিছুর মধ্যে একটা পবিত্রতার ছোঁয়া আছে। যদি শক্ত করে এই আমলটা ধরে রাখা যায় ইনশাআল্লাহ আল্লাহ মনের ভেতর সবধরণের ফাহেশার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ তৈরি করে দিবেন।
    .
    ২। যদি নিজের কোন গোপন অশ্লীল কর্ম নিয়িমত হয়ে থাকে আইডেনটিফাই করুন সেই পাপটা কখন বেশী হচ্ছে। যেমন ধরুন, হয়তো কাজটা হচ্ছে যখন বাসায় কেউ থাকে না, যখন আপনি স্ফেসিফিক কিছু বন্ধুদের সাথে থাকেন, যখন কোন স্ফেসিফিক জায়গায় যান তখন। এবার সেই সময়, সেই মানুষগুলো আর সেই স্থান আইডেনটিফাই হয়ে গেলে চোখ বন্ধ করে তাদেরকে বর্জন করুন। কষ্ট হলেও, যেভাবেই হোক বর্জন করুন। মিনিমাম এক মাস এটা করে দেখুন, ফল পাবেন। সেই বন্ধুদের কাছে যাবেন না, ঐসব জায়গায় ভুলেও যাবেন না।

    ৩। নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখুন। অলস সময় কাটাবেন না। অলস পড়ে থাকলে নানান খারাপ চিন্তা এসে ভর করবে। সবসময় কুরআন, হাদীস, ইসলামিক পড়াশোনা করতে পারবেন এমন না। খেলাধুলা করবেন, রান্না বান্না করবেন, নিজের কোন ক্রিয়েটিভ স্কিল থাকলে সেখানে সময় দিবেন। মোটকথা কোনোভাবেই নিজেকে একা অলসভাবে থাকতে দেওয়া যাবে না।

    ৪। দাড়ি, টুপি, ইসলামিক লেবাসে থাকবেন সবসময়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী উপায় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার। এটা ধরে রাখতে পারলে কোন মেয়ের দিকে তাকাতে আপনার নিজেরই অস্বস্তি লাগবে, খারাপ কিছু দেখা, খারাপ কথা বলা, খারাপ জায়গায় যাওয়া এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তাকওয়ার কারণে না হলেও লোকচক্ষুর ভয়ে হলেও আপনি কোন ফাহেশা কাজ করতে পারবেন না। ইনশাআল্লাহ এই লোকচক্ষুর ভয়-ই একদিন আল্লাহর ভয়ে রুপ নিবে।

    ৫। এই সময়ে ফাহেশার অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক, টেলিভিশন, ইউটিউব, ইন্টারনেট এসব। কোন আহামরি গুরুত্বপূর্ণ দরকার না থাকলে এসব থেকে একেবারেই বিরত থাকা সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু জানি এই কাজ হাতে গোণা দু’একজন ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যায়
    -ফেসবুক, ইউটিউবে এড ব্লক ইউজ করা। ছবি ছাড়া ফেসবুক ইউজ করা।
    -এমার্জেন্সি না হলে স্মার্টফোন ইউজ না করা। এখন তো আবার ইসলামিক এপের জয়জয়কার, অনেকেই বলবেন স্মার্টফোন তো তাদের অনেক উপকার করে। সেক্ষেত্রে স্মার্টফোনে সিম, ইনটারনেট সংযোগ বন্ধ রাখতে পারেন।

    ৬। যারা একা রুমে থাকেন তারা রুমে ইন্টারনেট রাখবেন না। অর্থাৎ ইন্টারনেটের লাইন এভাবে থাকবে না যে, আপনি একা একা গোপনে ব্যবহার করতে পারেন। ওয়াইফাই রাউটার রাখা যাবে না, ব্রডব্যান্ড ইউজ করলে সংযোগ এভাবে থাকতে হবে যেখানে আপনি একা গোপনে ইউজ করতে পারবেন না। পিসির মনিটর এভাবে সেট করুন যাতে বাসার অন্যদের চোখে পড়ে।

    ৭। জররী কারণ ছাড়া পত্রিকা, ম্যাগাজিন এসব পড়ার কোনই দরকার নেই।

    ৮। দ্বীনি পড়াশোনা ইন্টারনেট বেইজড করবেন না। গুগলিং, এই সাইট ঐ সাইট ঘাঁটাঘাঁটির মাঝে নানান উল্টা পালটা জিনিসও চলে আসে, নফসের ধোঁকায় দু’একটা উল্টা পাল্টা সাইটে ঢুকেও পড়তে পারেন।

    ৯। যারা নিয়মিত ফেসবুক ইউজ করেন তারা বাছাইকৃত কিছু ব্যক্তি, পেজ, এসবে see first দিয়ে বাকী সবাইকে আনফলো করে দিতে পারেন। হুদাই হোমপেজ স্ক্রল করতে থাকবেন না। এতে নানান আজেবাজে জিনিসপত্রও চোখ চলে যায়।

    ১০। দ্বীনের উপর আছে এমন ভাইদের সাথে বেশী বেশী সময় কাটানো।

    ১১। প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সবসময় জটিল একাডেমিক দ্বীনি বই পড়তে হবে এমন না। মাঝে মাঝে হালকা মেজাজের কিংবা সেকুলার কিছু বই পত্রও পড়তে পারেন।

    ১২। যারা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে আছে তারা ক্লাসে এমনভাবে বসবেন না যেখান থেকে সহজে মেয়েদের দিকে চোখ পড়বে। যেমন মেয়েদের পেছনে বসবেন না। একদম সামনের বেঞ্চে বসতে পারলে সবচেয়ে ভালো। অবশ্য সেক্ষেত্রে টিচার অল্পবয়সী ম্যাডাম হলে আরেক সমস্যা। মোট কথা এমন আসন বাছাই করুন যেখান থেকে সহজেই মেয়েদের দিকে চোখ যাবে না।

    ১৩। প্রতি রাতে কিছু নফল ইবাদাত করা। একেবারে অল্প হলেও। দু’রাকাত সালাত হলেও। এবং এটা ধারাবাহিকভাবে করা। সকাল সন্ধ্যার জিকির ও দু’আগুলো যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করা। প্রতিদিন কিছু কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে ফজরের পর। এবং এটাকে নিত্য অভ্যাসে পরিণত করা। মানুষের অন্তরের উপর এগুলোর ভীষণ প্রভাব। এগুলো প্রতিদিন একটু একটু করে মানুষের অন্তরকে পরিষ্কার করে।

    ১৪। সবসময়, সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে দু’আ করা। আমরা তো অসহায়, নাদান বান্দা। নিজেকে হেফাজত করার শক্তি তো আমাদের নেই। তাই মহান রবের কাছে আশ্রয় চাওয়া। বিশেষ করে দু’আ কবুল হওয়ার যে সময়গুলো আছে সেই সময়গুলোতে নিজের ঈমান, আমল, চোখের হেফাজত, ফাহেশা কাজ থেকে হেফাজতে থাকার জন্য বেশী বেশী দু’আ করা।

    ১৫। কোন পাপ হয়ে গেলে সাথে সাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে তাওবা করা। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করা। যারা নিয়িমিত পাপাচারে লিপ্ত থাকে শয়তান একটা সময় তাদেরকে ধোঁকা দেয় এই বলে যে, “তুমি পাপও করছো আবার তাওবাও করছো, আল্লাহর সাথে তো মজাক করছো। বরং তুমি যতদিন পাপে লিপ্ত আছো ততদিন তাওবা করার দরকার নেই। আগে পাপটা পুরোপুরি ছেড়ে দাও, তারপর খালেস দিলে তাওবা করে নিবে।” শয়তানের এই ধোঁকায় পা দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন যত পাপই করেন, যত অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকেন না কেন, দুই রাক’আত সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে তাওবা করার এই আমলটা কখনো বন্ধ করবেন না। কখনো না।

    আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। যদি এখান থেকে কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন দয়া করে আমার জন্য দু’আ করবেন আল্লাহ যেন এর বিনিময়ে আমাকে মাফ করে দেন।


    সংগৃহীত
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

  • #2
    মাশাআল্লাহ, সুন্দর পোষ্ট।
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      মাশা-আল্লাহ! জাযাকাল্ল-হু খইরান, মুহতারাম খুবই উপকারী পোষ্ট। আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিম কে তা মেনে চলার তাওফিক দান করুন! আমিন!

      ইয়া আল্লাহ আপনার অনুগ্রহ ছাড়া কোরো নেক কাজ করা ও পাপ থেকে বিরত থাকা সম্ভব নয়, আপনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন! দয়া করে আমাদের অন্তর সমুহ পবিত্র করে দিন! ইয়া রাব্বুল আলামিন আমাদিগকে নফসের সকল কামনা বাসনা ও শয়তানের সকল প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন! ইয়া আল্লাহ আপনি আমাদের পাপ সমুহ ক্ষমা করে দিন! অন্তর সমুহ পবিত্র করেদিন! আমাদের প্রতি রহমের বারী বর্ষন করুন! আপনি ই আমাদের অভিভাবক সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদিগকে সাহায্য করুন! আমিন!

      ইয়া আল্লাহ জিনি আমাদের নিকট এই বাণী গুলো পৌঁছে দিয়েছেন তিনাকে কবুল করুন! তিনার দিলের সকল তামান্না পূরণ করে দিন! তিনাকে আপনার শারিয়াহ প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ খেদমত করার তাওফিক দান করুন! পরিশেষে আপনি উনাকে শাহাদাতের অমিয় শুধা আস্বাদন করান! আমিন!

      ইয়া আল্লাহ আপনি এই লিখা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে এবং যারা আরো উম্মাহর কাছে পৌঁছাবে, যারা পড়ছে যারা পড়বে, যারা অন্যকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করবে, ইত্যাদি যত জনের মেহনত রয়েছে সকলকে মাফ করে দিন! সকলকে কবুল করে নিন! সকলের জন্য উল্লেখিত দোয়া কবুল করেনিন আমিন!
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment


      • #4
        আল্লাহ আপনি আমাদের তাওফিক দান করুন আমীন।
        ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে মাফ করুক। সাথে আমাদেরও মাফ করুক। এই রকম পোস্ট খুবই দরকার ছিল। জাজাকাল্লাহ খাইরান ইয়া আঁখি।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ
            আনেক সুন্দর পোষ্ট করেছেন,
            আল্লাহ আমাদেরকে সকল ফাহেসাত কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন,আমিন।
            ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

            Comment


            • #7
              হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমল করার তাওফিক দাও সাথে সাথে সকল উম্মাহকে তাওফিক দাও
              আমিন!
              فمن یکفر بالطاغوت ویٶمن بالله فقد استمسک بالعروت الوثقی'
              کم من فاة قلیلة غلبت فاة کثیرة باذن الله

              Comment


              • #8
                মাশাল্লাহ খুবই উপকারী পোস্ট। আল্লাহ ভাই কে উত্তম জাযা দান করুন।

                Comment


                • #9
                  জাজাকাল্লাহ খাইরান
                  হয়তো শরিয়াহ,নয়তো শাহাদাহ।

                  Comment

                  Working...
                  X