Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামপ্রচারে তরবারীর ভূমিকা (চতুর্থ পর্ব:- দাসপ্রথা বহাল রাখার হিকমত ও তাৎপর্য)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামপ্রচারে তরবারীর ভূমিকা (চতুর্থ পর্ব:- দাসপ্রথা বহাল রাখার হিকমত ও তাৎপর্য)


    যুদ্ধবন্দীদের গোলাম-বাঁদী বানানোর হিকমত

    (গত পর্বগুলোতে আমরা ইসলাম প্রচারে আক্রমণাত্মক জিহাদ ও জিযয়ার হিকমত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। (লিংক কমেন্টে) এ পর্বে ইসলাম প্রচারে গোলাম-বাঁদী বানানোর হিকমত নিয়ে আলোচনা করবো। তবে বিষয়টি জটিল হওয়ায় প্রবন্ধ দীর্ঘ হয়ে গেছে। তাই দুই পর্বে ভাগ করে প্রবন্ধটি পেশ করবো ইনশাআল্লাহ)

    এ মাসয়ালায় এসে বহু রথী-মহারথীদেরও পা পিছলে গেছে। এমনকি গত শতাব্দী থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত শুধু হাতেগোণা দুই একজনই পাওয়া যায় যারা এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা রাখে। অন্যথায় অধিকাংশই এ বিধানের ব্যাপারে বিভিন্ন ওজরখাহী করতে থাকে, মনগড়া নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে থাকে, যেমন তারা বলে, “ইসলাম ঐ যমানার পারিপার্শ্বিক কারণে যুদ্ধবন্দীদের গোলাম বানানোর আদেশ দিয়েছে। যেহেতু কাফেররাও তখন বন্দীদের গোলাম বানাতো তাই মুসলমানদের জন্য গোলাম বানানো ব্যতীত কোন উপায় ছিল না” ইত্যাদি। মূলত এসব হলো পাশ্চাত্যদের নিকট নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি বন্ধক রেখে দেওয়ার ফলাফল। তাই বর্তমান আকাবিররাও ওদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই ভালো-মন্দ নির্ণয় করে থাকেন। কাফেরদের দৃষ্টিতে মানুষকে গোলাম বানানো মন্দ তাই তাদের নিকটও তা মন্দ।

    অথচ রাসুলের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, কাফেরদের গোলাম বানানো অত্যন্ত প্রশংসনীয় বিষয়, কেননা এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে তাদের উত্তম জীবনাচার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবে এবং এর প্রভাবে তারা ধীরে ধীরে মুসলমান হয়ে যাবে। আবু হুরাইরা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «عجب الله من قوم يدخلون الجنة في السلاسل» صحيح البخاري: (3010)

    “আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তিদের দেখে অবাক হন যাদেরকে শিকলাবদ্ধ করে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।” -সহিহ বুখারী: ৩০১০

    হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,

    قال ابن الجوزي: (معناه أنهم أسروا وقيدوا، فلما عرفوا صحة الإسلام دخلوا طوعا فدخلوا الجنة، فكان الإكراه على الأسر والتقييد هو السبب الأول، ولما كان هو السبب في دخول الجنة أقام المسبب مقام السبب) .... (فتح الباري: 6/145)

    “ইবনুল জাওযী রহ. বলেন, হাদিসের অর্থ হলো তাদেরকে বন্দী করে নিয়ে আসা হবে, যখন তারা ইসলামের সত্যতা বুঝতে পারবে তখন স্বেচ্ছায় ইসলামে প্রবেশ করবে। সুতরাং বন্দী করাটা হবে ইসলাম গ্রহণের কারণ আর ইসলাম গ্রহণ হবে জান্নাতে প্রবেশের কারণ। তাই বন্দী করে নিয়ে আসাকেই জান্নাতে প্রবেশের কারণ বলা হয়েছে।” -ফাতহুল বারী: ৬/১৪৫

    এরপর হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,

    ونحوه ما أخرجه من طريق أبي الطفيل رفعه: رأيت ناسا من أمتي يساقون إلى الجنة في السلاسل كرها. قلت: يا رسول الله من هم؟ قال قوم من العجم يسبيهم المهاجرون فيدخلونهم في الإسلام مكرهين. (فتح الباري: 6/145)

    “উল্লেখিত হাদিসটির মত আরেকটি হাদিস হলো যা (ইমাম বাযযার) আবুত তুফাইল রাযি. এর সূত্রে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমি আমার উম্মতের কিছু ব্যক্তিকে জোরপূর্বক জান্নাতের দিকে নিয়ে যেতে দেখেছি। আবুত তুফাইল বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হলো কিছু অনারবী লোক, যাদেরকে মুহাজিররা বন্দী করে নিয়ে আসবে, ফলে তারা বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে।” -ফাতহুল বারী: ৬/১৪৫

    অর্থাৎ তাদেরকে নিজেদের অবস্থায় ছেড়ে দিলে তারা কখনোই ইসলাম গ্রহণ করতো না। কিন্তু যখন তাদেরকে জোরপূর্বক বন্দী করে নিয়ে আসা হলো, এবং তারা কুরআনের আয়াত ও রাসূলের হাদিস শুনলো এবং মুসলমানদের জীবনাচার দেখলো তখন স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করলো।

    ইমাম ইবনে হিব্বান রহ. (মৃ: ৩৫৪ হি.) বলেন,

    والقصد في هذا الخبر: السبي الذي يسبيهم المسلمون من دار الشرك، مكتفين في السلاسل يقادون بها إلى دور الإسلام، حتى يسلموا فيدخلوا الجنة، ولهذا المعنى أراد صلى الله عليه وسلم بقوله في خبر الأسود بن سريع: أو ليس خياركم أولاد المشركين، وهذه اللفظة أطلقت أيضا بحذف (من) عنها يريد: "أو ليس من خياركم". ) صحيح ابن حبان، 1 : 344 ط. مؤسسة الرسالة، 1408 هـ(

    “এ হাদিসের উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধবন্দীদের মুসলামনরা কাফের রাষ্ট্র থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ইসলামী রাষ্ট্রে নিয়ে আসবে। ফলে তারা ইসলাম গ্রহণ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ অর্থেই অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে মুশরিকদের সন্তানরা’ (যাদেরকে তোমরা বন্দী করে নিয়ে এসে মুসলমান বানাও)।” -সহিহ ইবনে হিব্বান, ১/৩৪৪

    عن أبي حازم، عن أبي هريرة رضي الله عنه، كنتم خير أمة أخرجت للناس، قال: «خير الناس للناس تأتون بهم في السلاسل في أعناقهم، حتى يدخلوا في الإسلام». صحيح البخاري: 4557

    “আবু হাযেম রহ বলেন, ‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি যাদের উত্থান হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, ‘তোমরা মানবজাতির জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর, তোমরা তাদেরকে শিকলাবদ্ধ করে নিয়ে আসবে, ফলে তারা ইসলামে প্রবেশ করবে’।” -সহিহ বুখারী: ৪৫৫৭

    হাদিসের ব্যাখায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,

    أي أنفعهم لهم وإنما كان ذلك لكونهم كانوا سببا في إسلامهم

    অর্থাৎ তোমরা মানব জাতির জন্য সবচেয়ে উপকারী ও কল্যাণজনক, কেননা তোমরা তাদের ইসলাম গ্রহণের কারণ হবে। -ফাতহুল বারী: ৮/২২৫

    কাফেরদের গোলাম বানানোর দ্বারা তারা কিভাবে দলে দলে মুসলমান হয়েছে- ইমাম নববীর নিম্নোক্ত বক্তব্য থেকে এর সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়, তিনি বলেন,

    معظم عساكر الإسلام في بلاد الشام ومصر سبوا ثم هم اليوم بحمدالله يسبون الكفار وقد سبوهم في زماننا مرارا كثيرة يسبون في المرة الواحدة من الكفار ألوفا شرح النووي على مسلم (18/ 21)

    “বর্তমানে শাম ও মিসরের সেনাবাহিনীর অধিকাংশই হলো যুদ্ধবন্দী গোলাম, তারা যুদ্ধবন্দী হয়ে ইসলামগ্রহণ করেছে, এরপর আলহামদুলিল্লাহ তারাই এখন হাজার-হাজার কাফেরকে বন্দী করছে। -শরহু মুসলিম, ১৮/২১

    ইমাম ইবনে কুদামা মাকদিসী রহ. (মৃ: ৬২০ হি.) বলেন,

    ومنع أحمد من فداء النساء بالمال؛ لأن في بقائهن تعريضا لهن للإسلام، لبقائهن عند المسلمين وجوز أن يفادى بهن أسارى المسلمين؛ لأن النبي - صلى الله عليه وسلم - فادى بالمرأة التي أخذها من سلمة بن الأكوع، ولأن في ذلك استنقاذ مسلم متحقق إسلامه، فاحتمل تفويت غرضية الإسلام من أجله. ولا يلزم من ذلك احتمال فواتها، لتحصيل المال. فأما الصبيان، فقال أحمد: لا يفادى بهم؛ وذلك لأن الصبي يصير مسلما بإسلام سابيه، فلا يجوز رده إلى المشركين. (المغني: 9/224 ط. مكتبة القاهرة: 1388هـ)


    “ইমাম আহমদ রহ. নারী যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছেন। কেননা তারা মুসলমানদের সংস্পর্শে থাকলে তাদের ইসলাম গ্রহণের আশা থাকে। তবে তাদের মাধ্যমে বন্দী বিনিময় করা যেতে পারে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামা বিন আকওয়া রাযি. এর বাঁদীর মাধ্যমে বন্দী বিনিময় করেছেন। তাছাড়া নারীদের মুসলিম হওয়া সুনিশ্চিত নয়, পক্ষান্তরে তাদের বিনিময়ে যাদের মুক্ত করে আনা হবে তারা তো মুসলিম। কিন্তু বাচ্চাদের মাধ্যমে বন্দী বিনিময় করা যাবে না। কেননা বাচ্চারা মুসলিমদের দাস হওয়ার কারনে তারাও মুসলিম হয়ে যাবে, তাই তাদেরকে কাফেরদের নিকট ফেরত দেওয়া যাবে না।” -আলমুগনী, ৯/২২৪

    এ থেকে আমরা দুটি বিষয় বুঝতে পারি,
    ১. নারীদের বন্দী করে দাসী বানালে তাদের মুসলিম হওয়ার আশা থাকে।
    ২. শিশুরা বন্দী করে আনার দ্বারাই মুসলিম হয়ে যাবে। এমনকি তারা পরবর্তীতে নিজেদের পূর্বের ধর্মে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলেও তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। বরং নাবালেগ হলে বন্দী-প্রহার ইত্যাদি শাস্তির মাধ্যমে জোরপূর্বক ইসলামে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে। আর বালেগ হলে তাদের ক্ষেত্রেও মুরতাদের বিধান প্রযোজ্য হবে।

    যারা দাবী করেন, ইসলাম স্বাধীনভাবে যে কোন ধর্ম পালনের অনুমতি দেয়, তাদের নিকট প্রশ্ন, এখানে এই শিশুদের স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের সুযোগ দেওয়া হলো কোথায়?


    মূলত শিশুরা ধর্মের ক্ষেত্রে তাদের লালনপালনকারীদের অনুসরণ করে, তাই যদি তারা মুসলমানদের ঘরে বেড়ে উঠে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা মনে-প্রাণে মুসলিম হিসেবেই বেড়ে উঠবে। যেমনটা আমরা রাসুলের প্রসিদ্ধ হাদিস থেকে জানতে পারি, “প্রতিটি শিশুই স্বভাবধর্ম ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু তারা পিতা-মাতা তাকে ইহুদী-খৃষ্টান বা অগ্নিপূজারী বানায়। -সহিহ বুখারী, ১৩৫৮ সহিহ মুসলিম, ২৬৫৮ তাই শিশুদের ধর্মগ্রহণে কোন ইখতিয়ার দেওয়া হয়নি।

    পক্ষান্তরে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষদের যদি জোরপূর্বক মুসলমান বানানো হয় তাহলে তারা মুখে কালেমা পড়লেও অন্তর হতে ইসলাম গ্রহণ করবে না, তাই তাদেরকে জোরপূর্বক মুসলমান বানাতে বলা হয়নি। বরং বিভিন্ন কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে মুসলমান হওয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে।

    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (প্রথম পর্ব- ‘তলোয়ারে নয় উদারতায়’ শীর্ষক শ্লোগানের উৎপত্তি; সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)

    https://dawahilallah.com/showthread....%26%232488%3B)

    ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (দ্বিতীয় পর্ব- আক্রমণাত্মক জিহাদের হিকমত ও তাৎপর্য)

    https://dawahilallah.com/showthread....%26%232479%3B)

    ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (তৃতীয় পর্ব, জিযয়ার বিধানের হিকমত ও তাৎপর্য)

    https://dawahilallah.com/showthread....%26%232479%3B)
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

    Comment


    • #3
      আলহামদুলিল্লাহ্ খুব সুন্দর আলোচনা,আল্লাহ্ ভায়ের ইলমে বারাকাহ দান করুন,জিহাদি কাজে সংযোগ সকল ভাইকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন,মিডিয়াগুলোকে হেফাযত করুন আমিন।

      Comment


      • #4
        খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিধানটি আজ মুসলিমরা ভুলে গেছে।
        ان المتقین فی جنت ونعیم
        سورة الطور

        Comment

        Working...
        X