Announcement

Collapse
No announcement yet.

গণতন্ত্রের আসল রুপ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গণতন্ত্রের আসল রুপ

    পোস্ট নং-২
    বিষয়ঃ গণতন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন

    ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, "ফুকাহায়ে কিরাম বলেন, 'নামসমূহ হচ্ছে তিন প্রকার।

    এক. যেগুলোর সংজ্ঞা শরীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত। যেমন, সালাত এবং যাকাত।

    দুই. যেগুলোর সংজ্ঞা আরবী ভাষায় প্রদত্ত। যেমন الشمس والقمر والارض
    (সূর্য, চন্দ্র, যমীন-পৃথিবী) ইত্যাদি।

    তিন. যেগুলোর সংজ্ঞা জনসাধারণের কাছ থেকে অবগত হওয়া যায়। আল-ক্বাবদ (সংকুচিত করা) শব্দটি এবং " সম্মান" +আল-মুকাররাম, আল-কারীম) শব্দসমূহ যার উল্লেখ আল্লাহ করেছেন, এবং তাদের (তোমাদের স্ত্রীদের সাথে বসবাস কর সম্মানজনকভাবে'।" [মাজমু আল-ফাতাওয়া ১৩/২৮। তিনি এ গ্রন্থের অন্যান্য স্থানে (৭/২৮৬, ১৯/৫২৩) তা পুনরুল্লেখ করেছেন।

    যেহেতু গণতন্ত্র ( Democracy) শব্দটির উল্লেখ শরী'আতে নেই এবং এটি আরবি ভাষার শব্দও নয়, তাই এর অর্থ ও প্রকৃত বাস্তবতা জানার জন্য সেসব মানুষের প্রথা রীতিনীতির মুখাপেক্ষী হতে হবে, যারা এর বিধি-বিধান রচনা করেছে।
    এ প্রসঙ্গে ইবনুল কাইয়্যিম রাহি. মুফতি হওয়ার নিয়ম-কানুনের উপর রচিত 'আহকামুল মুফতি'তে বলেন : "তাঁর (মুফতি) জন্য সমর্থন (চুক্তি ইত্যাদি) , শপথ ঘোষণা অথবা শব্দের (অর্থাৎ তৃতীয় প্রকার নামসমূহ) সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যাপারে মূল ভাষাভাষীদের প্রথা না জেনে এসব শব্দ থেকে সচরাচর নিজের ধারণা করা অর্থের উপর ওপর নির্ভর করে ফাতাওয়া দান করার অনুমতি নেই। অতএব তার উচিত ঐ ভাষাভাষী মানুষ যেভাবে অভ্যস্ত এবং জ্ঞাত, সেভাবে ফাতাওয়ার প্রয়োগ করা, এমনকি যদি তা (এ শব্দের) বুৎপত্তিগত অর্থের বিপরীতও হয়। কিন্তু যখনই তিনি অন্যথা করবেন তখনই নিজেকে এবং অন্যান্যদেরকে বিপথে পরিচালিত করবেন।"
    [উলামাউল-মুওয়াক্বীন ৪/২২৮]

    এসবই হচ্ছে গনতন্ত্রের অর্থ অবগত হওয়ার জন্য যারা এর আসল জনক, তাদের কাছে বিষয়টি অর্পণ করার বাধ্যবাধকতা। এরুপে কেউই নিজের মতলব মত গণতন্ত্রকে শূরা (ইসলামি পরামর্শ) , রাজনীতি চর্চার উপায় অথবা অন্য কোন নামে বলতে পারবে না যার দ্বারা গণতন্ত্রের প্রকৃত রুপ এবং এ সংক্রান্ত ইসলামের সিদ্ধান্ত হারিয়ে যায়।

    যেহেতু গণতন্ত্র একটি পাশ্চাত্য রাজনৈতিক পরিভাষা, তাই এর প্রকৃত মর্ম অবগত হওয়ার জন্য- যার ওপর গণতন্ত্র সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নির্ভরশীল- পূর্বোল্লিখত ভূমিকা অনুযায়ী সে সম্প্রদায়ের মুখাপেক্ষী হওয়া প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে জাতির তথা জনগণের প্রভুত্ব। এ প্রভুত্ব হচ্ছে একটি নিরংকুশ এবং সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব যা অন্যকোনো কর্তৃত্ব কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়। এ কর্তৃত্বের মধ্যে রয়েছে জনসাধারণ কর্তৃক তাদের নেতা নির্বাচন এবং যে ধরনের আইনই তারা চায়, তা প্রণয়ন করার অধিকার। সাধারণতঃ, জনসাধারণ এ কর্তৃত্বের অনুশীলন করে পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ করে, যারা পার্লামেন্ট তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কর্তৃত্ব ব্যবহার করেন। 'এনাসাইক্লোডিয়া অব পলিটিক্স' এ উল্লেখ আছে, "সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা একই আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত, আর তা হচ্ছে, 'প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী জনসাধারণ'। সারকথা, গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের প্রভুত্বের নীতি"।

    (আব্দুল ওয়াহহাব আল-কিলানী সংকলিত 'এনাসাইক্লোপোডিয়া অব পলিটিক্স' ২য় খণ্ড, পৃ: ৭৫৬।)

    পূর্বোল্লিখত বর্ণনা অনুযায়ী এটা পরিস্কার যে, সংক্ষেপে গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের প্রভুত্ব, যা মূলত অন্য যেকোন কর্তৃত্বের অধীনতাহীন, আইন প্রণয়নের নিরংকুশ ক্ষমতার আধার।
    এখানে প্রভুত্বের কতগুলো সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল।

    আইনে অধ্যাপক ডক্টর আবদুল হামিদ মিতওয়ালী বলেন, শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র 'জাতির প্রভুত্বের নীতিতে পরিণত হয়েছে। অধিকন্তু, সংজ্ঞানুযায়ী প্রভুত্ব হচ্ছে সেই সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব যার উপর অন্য কোনো কর্তৃত্ব নেই। (উল্লেখ্য আল্লাহ-রাসূলের বিধানও তুচ্ছ। এমনকি তাদের সংবিধান অনুযায়ী তাদের সংবিধানের সাথে যদি অন্যকোন সংবিধান সাংঘর্ষিক হয় তবে তা পরিত্যাজ্য বলে পরিগনিত হবে। হোকনা তা পবিত্র কুরআনও।)

    (ড. মিতওয়ালীর " Ruling syatem in Developing Countries" সংস্করণ ১৯৮৫, পৃ: ৬২৫)

    পাশ্চাত্য রাজনীতিবীদ যোসেফ ফ্রাংকেল বলেন, "প্রভুত্বের অর্থ হচ্ছে, সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব যা এর উপরে অন্য কোনো কর্তৃত্ব করে না এবং যার পশ্চাতে সিদ্ধান্তসমূহ পুনর্বিবেচনা করার মত কোন বৈধ কর্তৃত্বের অধিকারী নেই।" এ মৌলিক অর্থ সাম্প্রতিককালের পরিবর্তন রুপ নয়।
    প্রভুত্বের উপর ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রদত্ত জীন বোঁদার সংজ্ঞাটি অর্থাৎ "প্রভুত্ব হচ্ছে নাগরিকদের এবং ক্ষমতাশালীদের উপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব এবং যা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়" সঠিকই থেকে যায়। অবশ্য যদিও বোঁদা তার যুগে যে প্রভুত্বের অধিকারকে রাজার সাথে বিশেষায়িত করেছিলেন,তা পরে জাতির কাছে হস্তান্তরিত হয়ে যায়।" যোসেফ ফ্রাংকেল-এর "The International Relationship" তুহামা পাবলিশিং, ১৯৮৪, পৃঃ ২৫।

    পরবর্তী পোস্টে থাকবে দ্বীনে ইসলামের সাথে ইসলামের দ্বন্ধ। জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

    চলবে→→→*
Working...
X