Announcement

Collapse
No announcement yet.

|| কেন এই বাধভাঙা স্রোত? কী এর অন্তর্নিহিত কারণ? ||

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • || কেন এই বাধভাঙা স্রোত? কী এর অন্তর্নিহিত কারণ? ||



    কেন এই বাধভাঙা স্রোত? কী এর অন্তর্নিহিত কারণ?






    এক ভাই জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে একটা প্রশ্ন করব। ইনসাফের সঙ্গে উত্তর দেবেন। কোনো অন্যায় পক্ষপাতিত্ব করবেন না।

    বললাম, জি বলতে পারেন।

    তিনি বললেন, উম্মাহর মধ্যে সাধারণভাবে পরিচিত মান্যবররা প্রায় সবাই অস্থির ও উদ্বিগ্ন। তারপরও তরুণ মেধাবী তালিবুল ইলমরা, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকরা ও ইসলামপ্রিয় জনতা কেন একদিকে ঝুঁকে পড়ছে? কোনোরকম বাধা দিয়েই তাদেরকে ঠেকানো যাচ্ছে না। যত উঁচু বাঁধই করা হচ্ছে, তারা সব ডিঙিয়ে ঠিকই স্রোতের উলটো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রকৃত কারণ কী? কী জাদু করা হয়েছে সবাইকে?

    আমি বললাম, আপনি অনেক সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। বাস্তবে এই প্রশ্ন হাজার জনের। কেউ হয়তো মুখ ফুটে বলছে আর কেউবা আড়াল করে রাখছে। তবে কৌতূহল সবার ভেতর আছে। এমনকি আমি ও আপনিও এর বাইরে নই। তাহলে আসুন, ভূপৃষ্ঠের বুকে সবচে সত্যবাদী মনীষী থেকেই আমরা এর জবাব শুনে নিই। তাহলে ভেতরে আর কোনো সংকোচ থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

    সালামা ইবনু নুফায়ল কিন্দি রা. বর্ণনা করেছেন :

    كُنْتُ جَالِسًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَذَالَ النَّاسُ الْخَيْلَ وَوَضَعُوا السِّلَاحَ وَقَالُوا لَا جِهَادَ قَدْ وَضَعَتْ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَجْهِهِ وَقَالَ كَذَبُوا الْآنَ الْآنَ جَاءَ الْقِتَالُ وَلَا يَزَالُ مِنْ أُمَّتِي أُمَّةٌ يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ وَيُزِيغُ اللَّهُ لَهُمْ قُلُوبَ أَقْوَامٍ وَيَرْزُقُهُمْ مِنْهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ وَحَتَّى يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ وَالْخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُوَ يُوحَى إِلَيَّ أَنِّي مَقْبُوضٌ غَيْرَ مُلَبَّثٍ وَأَنْتُمْ تَتَّبِعُونِي أَفْنَادًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ وَعُقْرُ دَارِ الْمُؤْمِنِينَ الشَّامُ

    (একদিন) আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, লোকেরা ঘোড়ার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে, অস্ত্রশস্ত্র রেখে দিয়েছে এবং তারা বলছে, এখন আর কোনো জিহাদ নেই। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। এ কথা শুনে তিনি তার প্রতি লক্ষ করে বললেন, তারা মিথ্যা বলছে। এখন, এখনই জিহাদ এসেছে। আর সর্বদা আমার উম্মতের একদল হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করতে থাকবে। আল্লাহ তাদের জন্য অনেক সম্প্রদায়ের অন্তর ঘুরিয়ে দেবেন। আর আল্লাহ তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের দ্বারা রিজিক দান করবেন।

    আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটের সাথে কল্যাণ সম্পৃক্ত করে রেখেছেন। আমাকে এ কথা ওহি দ্বারা জানানো হয়েছে যে, অচিরেই আমাকে তুলে নেয়া হবে (ইন্তিকাল হবে); (চিরদিন) আমাকে রাখা হবে না। আর তোমরা আমার পরে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তোমরা একে অন্যের সাথে মারামারি-কাটাকাটি করবে। আর ইমানদারদের নিরাপদ ঠিকানা হবে শামে। [সুনানুন নাসায়ি : ৩৫৬৩]

    উপরিউক্ত হাদিসটি সহিহ। এবার আসুন, এর কয়েকটা পয়েন্টের দিকে আরেকবার নজর দিই :

    ১. এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, লোকেরা ঘোড়ার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে, অস্ত্রশস্ত্র রেখে দিয়েছে এবং তারা বলছে, এখন আর কোনো জিহাদ নেই। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। এ কথা শুনে তিনি তার প্রতি লক্ষ করে বললেন, তারা মিথ্যা বলছে। এখন, এখনই জিহাদ এসেছে।

    রাসুলুল্লাহ ﷺ এ কথাটি বলছেন তার জীবনের শেষের দিকে, যেমনটা হাদিসের প্রথমাংশ ও শেষাংশ থেকে অনুমিত হয়। তাহলে ‘এখন, এখনই জিহাদ এসেছে’ বাক্যটিকে তার আক্ষরিক অর্থে নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, জিহাদ ফরজ হয়েছে প্রথম হিজরিতেই। বদরযুদ্ধও সংঘটিত হয়েছে দ্বিতীয় হিজরিতে। এত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এই বাক্যের কী অর্থ?

    আসলে জিহাদ পৃথিবীতে এসেছে চিরকালের জন্য। কিয়ামত অবধি তথা দাজ্জাল ধ্বংস হওয়া অবধি তা চলবে। এখনো পৃথিবীতে দাজ্জাল আসেনি। দাজ্জাল আসার পরের সময়টাও একেবারে কম নয়। কারণ, সে ৪০ দিন বাঁচবে; কিন্তু তার প্রথম দিনই হবে এক বছরের সমান। সে হিসেবে এখনো দাজ্জাল ধ্বংস হতে বহুবছর বাকি। আর এখনই যদি কেউ বলে বসে, জিহাদ শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তা হাস্যকর বৈ কী! জিহাদ তো মাত্র শুরু হলো। মানজিল তো আভী বহুত দূর হ্যায়।

    ২. সর্বদা আমার উম্মতের একদল হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করতে থাকবে।

    রাসুলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘কিতাল’, যার বঙ্গানুবাদ যুদ্ধ ও লড়াই। শব্দ ‘জিহাদ’ হলে কিছু লোক এর অপব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা চালাত। এখন তো আর সেই পথ খোলা নেই। সহিহ মুসলিমের হাদিসেও একই শব্দে একই কথা জানানো হয়েছে। সুতরাং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে দাজ্জাল ধ্বংস হওয়া অবধি মুসলিম ও কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে। তথাকথিত শান্তির দাঁড়কাকরা এটা কখনোই বন্ধ করতে পারবে না।

    এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘এখন, এখনই জিহাদ এসেছে। আর সর্বদা আমার উম্মতের একদল হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করতে থাকবে।’ তিনি জিহাদের বিবরণ দিতে গিয়ে কিতালের কথা উল্লেখ করলেন। তার মানে, স্বাভাবিকভাবে জিহাদ মানেই কিতাল। জিহাদ শব্দটির শরয়ি ও পারিভাষিক অর্থ তা-ই। গণতান্ত্রিক নির্বাচন, কৃচ্ছ সাধন, সাহিত্যচর্চা ইত্যাদি জিহাদ শব্দের মূল অর্থ কখনোই নয়।

    ৩. আল্লাহ তাদের জন্য অনেক সম্প্রদায়ের অন্তর ঘুরিয়ে দেবেন।

    রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর এই বাক্যটিই আপনার প্রশ্নের উত্তর বহন করে। রাসুল ﷺ যখন বর্তমান, তখনই এই কথা উঠেছে যে, আর জিহাদের দরকার নেই। জিহাদ শেষ হয়ে গেছে। তাই তরবারি ও ঘোড়াও ছেড়ে দিয়েছে। সোনালি যুগেই যদি এরকম ঘটতে পারে, তাহলে পরবর্তীকালে এটা হওয়া তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই কথাগুলো যারা বলেছে বা এই কাজগুলো যারা করেছে, তাদেরও মুখভর্তি দাঁড়ি ছিল। বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রাকটিস করত। পরনে শুভ্র বসন ও সফেদ আলখেল্লাও শোভা পেত। এতদ্*সত্ত্বেও এই মুনাফিকি তারা করেছে। সুতরাং পরবর্তী সময়ে এটা আরও বেশি, অনেক বেশি হবে—এটাই স্বাভাবিক।

    তারা এগুলো করে হয়তো অনেক অন্ধভক্তকে ঠিকই নিজেদের দলে ভেড়াতে সফল হবে; কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আল্লাহ তাআলা বহু সম্প্রদায়ের অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুজাহিদদের দিকেই ঘুরিয়ে দেবেন। তাদেরকে হুমকি-ধমকি, ষড়যন্ত্র, শাস্তি , ভয় কিংবা বহিষ্কার কোনোকিছুর দ্বারাই প্রভাবিত করা যাবে না। কারণ, তাদের অন্তরের এই পরিবর্তন মুজাহিদদের জাদুর কারণে হয়নি; বরং আল্লাহ তাআলার কুদরতের দ্বারা হয়েছে। আর আল্লাহ যখন বান্দার অন্তর বিশেষ কোনো দিকে ঘুরিয়ে দেন, তখন কেই-বা তা রুখতে পারে!

    ৪. তোমরা আমার পরে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তোমরা একে অন্যের সাথে মারামারি-কাটাকাটি করবে।

    যারা হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে নবি ﷺ-এর মানহাজ অনুসারে কিতাল করে যাচ্ছে, তারা তো আর তাঁর তরিকা থেকে সরে যায়নি; বিভক্তও হয়নি। কিন্তু অন্যদের পরিণাম তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। নববি মানহাজ ছাড়ার কারণেই আজ তাদের এই পরিণতি হয়েছে। কিতাল ছেড়েও তারা সুখী হতে পারেনি। একে অন্যের সাথে দ্বন্দ্ব-বিবাদ-মারামারিতে লিপ্ত। কাকে রেখে কার নাম বলব উদাহরণ হিসাবে? কাউকে নির্দিষ্ট করার দরকার নেই। চক্ষুষ্মানরা দৃষ্টি মেললে নিজেরাই এর উত্তর বের করতে পারবে। এটা মূলত আল্লাহ তাআলার পাকড়াও। হায়, তবুও যদি তারা বুঝত!



    লেখকঃ বিশিষ্ট আলেম ও দাঈ



    সংগৃহীত


    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

  • #2
    সব ভাইয়েরা লেখাটি পড়ি, ইনশা-আল্লাহ।
    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

    Comment


    • #3
      সুবহানাল্লাহ! মুজাহিদীনদেরকে কেউ কখনো কোনভাবেই থামাতে পারবেনা, কারণ আল্লাহ তায়ালা তাদের অটলও অবিচল রাখবেন !! আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment


      • #4
        সম্মানিত আখি আহমাদ সালাবা! আপনি হাদিসটির নির্বাচিত অংশ (وَيُزِيغُ اللَّهُ لَهُمْ قُلُوبَ أَقْوَامٍ ) এর যে অর্থ করেছেন এবং তার আলোকে যে দলিল দিয়েছেন, তার মধ্যে একটু সমস্যা আছে। শব্দটির দু’টি অর্থ হতে পারে। তার মধ্যে আপনি যেটি বলেছেন, সেটি একটি। কিন্তু এটা প্রাধান্যপ্রাপ্ত নয়। এটা স্বভাবিক অর্থ নয়। এটা একটা দূর্ববর্তী সম্ভাবনা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রথম ও মূল অর্থ করা হয়েছে: “তাদের জন্য একদল লোকের অন্তরকে বক্র করে দিবেন।”

        অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে দিবেন। ফলে তারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন এবং তাদের থেকেই গনিমত হিসাবে রিযিক লাভ করবেন।

        সম্মানিত ভাই! আশা করি খুশিই হবেন।

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ ৷ পড়েছি ৷
          আল্লাহ ভাইকে উত্তম প্রতিদান দিক ৷ আমীন ৷
          আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
          আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ,
            খুব সুন্দর আলোচনা
            মুমিনের একটাই স্লোগান,''হয়তো শরীয়াহ''নয়তো শাহাদাহ''

            Comment


            • #7
              প্রিয় শাইখের লেখনী।

              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ।
                আল্লাহ আপনার মেহনতকে কবুল করুন,আমিন।
                ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

                Comment

                Working...
                X