Announcement

Collapse
No announcement yet.

শবে বরাতের হাদিসের তাহকিক : একটি সমালোচনা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শবে বরাতের হাদিসের তাহকিক : একটি সমালোচনা



    শবে বরাতের হাদিসের তাহকিক : একটি সমালোচনা






    শবে বরাতের অস্তিত্বের ব্যাপারে অনেক ভাইয়ের তাহকিকই সামনে আসছে। আল্লাহ তাদের এই মেহনতের উত্তম প্রতিদান দান করুন। তবে অধিকাংশের তাহকিক দেখেই মনে হয়েছে, তাতে কপি-পেস্টের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে; যার কারণে লেখাগুলো বিভিন্নজনের হলেও বক্তব্যের ধরন অভিন্নই ছিল।

    সবাই দাবি করছেন, শবে বরাত বিষয়ক সহিহ ইবনু হিব্বানের হাদিসটি যয়িফ বা দুর্বল। তবে অনেকগুলো সমার্থক বর্ণনা থাকার কারণে হাদিসটি হাসান লি গাইরিহি পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবে। সুতরাং সবগুলো হাদিসের বক্তব্যের সারাংশ দ্বারা শবে বরাতের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। এরপর তারা এর স্বপক্ষে বিভিন্ন শাইখের বক্তব্যও উদ্ধৃত করেছেন। তবে যেগুলো আমার চোখে পড়েছে, তার কোথাওই তাহকিকের গোড়ায় পৌঁছার প্রয়াস লক্ষ করিনি।

    শাইখ আলবানিও শবে বরাতের অস্তিত্ব অস্বীকার করেননি। তবে এ হাদিসটিকে তিনি যয়িফ বলেছেন। পরবর্তীতে সমার্থক বর্ণনা থাকার কারণে সবগুলোর সারকথার আলোকে এর অস্তিত্বের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। যেহেতু শেষাবধি তিনি পক্ষে বলেছেন, তাই তাহকিককারীগণ আর কসরত না করে শেষের এই ফলাফলটাই লুফে নিচ্ছেন। আগের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না।

    যদি প্রশ্ন করি, শাইখ আলবানি রহ., শাইখ শুয়াইব আরনাউত রহ. বা অন্যান্য আরও একদল শাইখ এই হাদিসটিকে কেন যয়িফ বলেছেন? বলা হবে, হাদিসের বর্ণনাকারী মাকহুল ও মালিক ইবনু ইউখামির রহ.-এর মধ্যে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) রয়েছে। মাকহুল তার সাক্ষাৎ লাভ করেননি। এতদ্*সত্ত্বেও তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাই এই হাদিসটির বর্ণনাসূত্র বিচ্ছিন্ন। সুতরাং হাদিসটি যয়িফ।

    খুব সহজ সমীকরণ। আচ্ছা, তাদের মধ্যে যে সাক্ষাৎ ঘটেনি, এটা কীভাবে জানা গেল? বলা হবে, ইমাম জাহাবি রহ.-এর বক্তব্য থেকে জানতে পেরেছি। আর তার বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই শাইখ আলবানি রহ., শাইখ শুয়াইব আরনাউত রহ. বা অন্যান্যরা হাদিসটির ওপর হুকুম আরোপ করেছেন। আচ্ছা, ভালো কথা। তো আপনি কি ইমাম জাহাবি রহ.-এর বক্তব্য বিশ্লেষণ করেছেন নাকি উপরিউক্ত শাইখগণের তাকলিদ করেছেন? হয়তো-বা কবি এখানে নীরব।

    ইমাম জাহাবি রহ. রিজালশাস্ত্রের ওপর একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। আলোচিত মাকহুল রহ.-এর জীবনী নিয়েও তার একাধিক গ্রন্থে আলোচনা রয়েছে। মাকহুল অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একজন বর্ণনাকারী। ইমাম জাহাবি রহ. কি সব গ্রন্থেই তার ব্যাপারে এই মন্তব্য করেছেন? উত্তর হলো, না। সব গ্রন্থে তিনি এই মন্তব্য করেননি। শুধু ‘সিয়ার’ গ্রন্থে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

    আরে, এক জায়গায় করলেই তো হলো। সব জায়গায় একই মন্তব্য করতে হবে, এটা তো জরুরি নয়।

    হুম, আপনার কথা ঠিক আছে। তবে ‘সিয়ার’ গ্রন্থে তিনি কি মন্তব্য করেছেন, তা কি একটু খুলে দেখেছেন? সেখানে তিনি বলেছেন, ما أحسبه لقيهم । ‘তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে আমার মনে হয় না।’ এটা কি কোনো সুনিশ্চিত অস্বীকৃতি নাকি স্রেফ ধারণাপ্রসূত মন্তব্য? একটা ধারণাপ্রসূত মন্তব্যকে সুনিশ্চিত বক্তব্য ধরে আপনারা কীভাবে হুকুম আরোপ করে বসেন? ইমাম জাহাবি রহ. কোথাও এই ব্যাপারে সুনিশ্চিত বক্তব্যে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।

    যেহেতু এই বক্তব্যটা সুনিশ্চিত ছিল না, তাহলে ইনসাফের দাবি তো ছিল, এ প্রসঙ্গে অন্যদের বক্তব্য খুঁজে দেখা। জাহাবি রহ. তো অষ্টম শতাব্দীর মানুষ। তার পূর্বেও তো ‘জারহ ও তাদিল’ শাস্ত্রের অসংখ্য ইমাম বিগত হয়েছেন? তারা কোথাও কি স্পষ্ট ভাষায় এ ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন? অন্তত ইবনু হাজার রহ.ও কি এই ব্যাপারে মুখ খুলেছেন? আমরা আমাদের অনুসন্ধানে এমন কিছু খুঁজে পাইনি।

    তারচে মজার বিষয় হলো, মিজ্জি রহ.-এর কিতাবে তো মাকহুল রহ.-এর উস্তাদ হিসেবে মালিক ইবনু ইউখামির রহ.-এর নাম বিবৃত হয়েছে। যদিও সাক্ষাতের ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। সিয়ারের ধারণাপ্রসূত মন্তব্য থেকে আপনারা যেভাবে সুনিশ্চিত বক্তব্য বের করলেন, তাতে মিজ্জি রহ.-এর এই ইনফো থেকে কেউ যদি সাক্ষাতের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হুকুম আরোপ করে বসে, তবে তা-ও কি খুব বেইনসাফি হবে? অথচ তারা উভয়ে একই যুগের মানুষ ছিলেন। এছাড়াও তাদের উস্তাদ-ছাত্রের তালিকাসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রাখলে সাক্ষাতের ব্যাপারে ঢের সম্ভাবনা বেরিয়ে আসে।

    আচ্ছা, সাক্ষাৎ যদি কোনো ইমামের স্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত না-ও হয়, তাহলেই কি হাদিসটি যয়িফ হয়ে যাবে? সহিহ মুসলিমের ভূমিকা না পড়ে তো আর কেউ আলিম হয় না। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা আছে। মুআনআন হাদিসের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎ জরুরি নয়; বরং সাক্ষাতের সম্ভাবনা থাকাই হাদিস সহিহ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এটা কি ইমাম মুসলিমের বিচ্ছিন্ন মাযহাব নাকি মুহাদ্দিসগণও এর সঙ্গে একমত, এটা দাওরায়ে হাদিস সমাপনকারী সব আলিমেরই কমবেশি জানা থাকার কথা।

    উপরন্তু ইমাম ইবনু হিব্বান রহ.-এর গ্রন্থের নামের দিকেও একবার নজর দেওয়া যায়। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমের মতো তাঁর গ্রন্থের নামও সহিহ। ইবনু হিব্বান তার গ্রন্থে কোনো হাদিস উল্লেখ করলে সাধারণভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, হাদিসটি তাঁর মতো যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের দৃষ্টিতে সহিহ।

    হাদিসের অন্যান্য বর্ণনাকারীদের নিয়ে তো আপত্তির কোনো জো-ই নেই। এই দু-জনের ব্যক্তিত্ব নিয়েও সমালোচনা করার সুযোগ নেই। জাস্ট উভয়ের সাক্ষাতের বিষয়কে কেন্দ্র করে ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’র সেই একটি ধারণামূলক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জোয়ারের পানি এতদূর গড়িয়েছে। যাক, এরপরও তারা যে ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে হলেও এর বক্তব্য সমর্থন করেছেন ও শবে বরাতের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন, এ জন্য তারা প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার।

    হাদিসটির সনদ নিয়ে আরও কিছু কথা বলা যেত। তবে লেখা মাত্রাতিরিক্ত দীর্ঘ হয়ে গেলে পাঠক পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বিধায় আপাতত এখানেই ক্ষান্তি দিচ্ছি। ওয়াসসালাম।




    লেখকঃ বিশিষ্ট আলেম ও দাঈ



    সংগৃহীত


    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

  • #2
    খুবই উত্তম পোষ্ট ৷
    এরকম লেখা দীর্ঘ হলেও দীর্ঘ মনে হয় না ৷
    আল্লাহ এর লেখক ও প্রচারক উভয়কে উত্তম বিনিময় দান করুক ৷
    আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
    আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

    Comment


    • #3
      Originally posted by muhammad sadik View Post
      খুবই উত্তম পোষ্ট ৷
      এরকম লেখা দীর্ঘ হলেও দীর্ঘ মনে হয় না ৷
      আল্লাহ এর লেখক ও প্রচারক উভয়কে উত্তম বিনিময় দান করুক ৷

      শুকরান আখি। উত্তম বলেছেন।

      আল্লাহুম্মা আমীন।
      হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

      Comment


      • #4
        আলহামদুলিল্লাহ্ উপকৃত হলাম প্রিয় ভাই!
        আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন,
        মিডিয়ার ভাইদের সাহায্য করুন, আমিন ইয়া রব্ব।

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! হক্ক আঁকড়ে ধরা গুরাবা কিছু মুসলমানের এই ফোরাম বাংলা পড়তে পারা সারা দুনিয়ার হক্কের দিশা খোঁজা মানুষের ঠিকানা হয়ে উঠছে। আল্লাহ আপনাদের তার নিরাপত্তার চাঁদরে হেফজত করুক।
          আস্তাগফিরুল্লাহ

          Comment


          • #6
            জাযাকাল্লাহ খাইরান
            নতুন কিছু জানলাম, আলহামদুলিল্লাহ্‌

            Comment

            Working...
            X