Announcement

Collapse
No announcement yet.

মাসউল ভাইদের আনুগত্য ফরজ কেন? - শাইখ ফকিহ আতিয়ুল্লাহ আল-লিবি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মাসউল ভাইদের আনুগত্য ফরজ কেন? - শাইখ ফকিহ আতিয়ুল্লাহ আল-লিবি

    শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহ রহ. বলেন: ‘আমিরের আনুগত্য বিষয়ক যে নুসুস ও দালাইল বর্ণিত হলো, এতে প্রধান আমিরের অধীনস্ত অন্যান্য আমির ও দায়িত্বশীলদের আনুগত্যও অন্তর্ভুক্ত। যেমন বর্তমান সময়ে জিহাদরত মুজাহিদ জামাতগুলোর আমিরের আনুগত্য কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন ভূখণ্ডে তামকিন ও শাসনক্ষমতা প্রাপ্ত মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের আনুগত্য।

    দৃষ্টান্ত স্বরূপ আফগানিস্তানের কথা বলা যায় যেখানে তালিবান মুজাহিদরা দেশের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। জিহাদের আমিরের হুকুম তার শাসন ও নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ইমামে আজমের মতো এবং (اَلسَّمْعُ وَالطَّاعَةُ) বিষয়ক হাদিসগুলো তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ তার আনুগত্য ফরজ এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম সাব্যস্ত হবে। তবে জিহাদি জামাতগুলোর শরয়ি হুকুম-আহকাম সর্ব ক্ষেত্রে (اَلْإِمَامَةُ الْعُظْمَى) তথা কেন্দ্রীয় খিলাফাহর মতো নয়। তবে নুসুসের অর্থগত উমুম ও ব্যাপ্তির কারণে অনেক ক্ষেত্রে উভয়ের হুকুম অভিন্ন হবে। যেমন, মুসলমানদের মাঝে বিভেদ তৈরি করে, তাদের ঐক্য বিনষ্ট করে কিংবা তাদের শক্তি ও প্রতিপত্তি ধ্বংস করে এমন সব ধরনের কাজ হারাম। এই কাজগুলো কেন্দ্রীয় খিলাফাহর ক্ষেত্রে যেমন হারাম, তেমনি জিহাদি জামাতগুলোর ক্ষেত্রেও হারাম।

    অপর দিকে হকের ওপর ঐক্যবদ্ধ থাকা, যথাসম্ভব এক আমিরের অধীনে কাজ করা ফরজ। কারণ এগুলো ছাড়া জিহাদ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আর ফিকহি মূলনীতি হলো, (مَا لَا يَتِمُّ الْوَاجِبُ إلَّا بِهِ فَهُوَ وَاجِبٌ) ‘যে কাজ সম্পাদন করা ছাড়া কোনো ফরজের ওপর আমল করা অসম্ভব হয়, সে কাজটিও ফরজ সাব্যস্ত হয়।’

    সুতরাং শরিয়াহর মূলনীতি অনুযায়ী অসংখ্য দলিল দ্বারা যেহেতু জিহাদি জামাতগুলোর বৈধতা বরং ফরজ হওয়া সাব্যস্ত হচ্ছে, সেহেতু দ্বীনের কল্যাণের অনিবার্য দাবি হলো, জিহাদি জামাতগুলোর হুকুম অনেক ক্ষেত্রে (اَلْإِمَامَةُ الْعُظْمَى) তথা কেন্দ্রীয় খিলাফাহর মতো হবে। হাদিসে এই ব্যাপারে যত আহকাম এসেছে তার মধ্যে এক বড় অংশ আমিরের আনুগত্যের বিষয়ে। আর এখানে আমির মানে স্বয়ং কেন্দ্রীয় আমিরও হতে পারেন বা কেন্দ্রীয় আমির কর্তৃক নিয়োগকৃত আঞ্চলিক আমির ও মাসউল হতে পারেন বা অন্য কোনো আমিরও হতে পারেন—যেমন সফরের আমির; কিংবা জিহাদের আমিরও হতে পারেন যাকে মুসলমানরা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ (আত-তাজাকিরুল জিয়াদ, আলমুজাহিদ আব্দুল্লাহ খালিদ আল-আদম: ৩৬ পৃষ্ঠা)



    শাইখ ফকিহ আতিয়্যাতুল্লাহ রহ. এর এই বক্তব্য থেকে আমরা কী বুঝতে পারলাম?


    আমরা কয়েকটি বিষয় বুঝতে পারলাম। জিহাদ পরিচালনা মূলত কেন্দ্রীয় খিলাফাহ ও খলিফাতুল মুসলিমিনের দায়িত্ব। এখন যেহেতু উম্মাহর কেন্দ্রীয় খিলাফাহ নেই, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে যে ফরজে আইন জিহাদ চলছে তা খিলাফাহ ব্যবস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠা ও মুসলমানদের ওপর কাফিরদের আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য। জিহাদ ব্যক্তির কাজ নয়, জামাতের কাজ। আর জামাত আমির ছাড়া হতে পারে না। ফরজ জিহাদ পরিচালনা করা যেহেতু জামাত ও আমির ছাড়া সম্ভব নয়, ফিকহের মূলনীতি অনুযায়ী জামাত কায়েম করা ও আমির নির্ধারণ করাও ফরজ। আর কেন্দ্রীয় খিলাফাহর অনুপস্থিতির কারণে শরয়ি নুসুসের উমুম ও ব্যাপকতার দাবি অনুযায়ী জিহাদি জামাতগুলো অনেক ক্ষেত্রে খিলাফাহর স্থলাভিষিক্ত সাব্যস্ত হবে এবং খিলাফাহর অনেক হুকুম-আহকাম জিহাদি জামাতগুলোর ব্যাপারেও প্রযোজ্য হবে। আর জিহাদি জামাতের আমিরও খলিফার মতো (اَلسَّمْعُ وَالطَّاعَةُ) তথা আনুগত্যের অধিকারী হবেন।

    প্রিয় ভাই!
    জামাতের আমির তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি নেতৃত্ব দেন না। এমনটি করা সম্ভবও নয়। আমিরের নির্দেশগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করে তার অধীনস্ত মাসউল ও দায়িত্বশীলরা। তাই মাসউল ও দায়িত্বশীলদের নির্দেশ মূলত আমিরেরই নির্দেশ। মাসউলের আনুগত্য আমিরেরই আনুগত্য। আনুগত্য ছাড়া কখনো জামাত চলতে পারে না। দায়িত্বশীলদের প্রতিটি বৈধ নির্দেশ পালন করা আপনার জন্য ফরজ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে (اَلسَّمْعُ وَالطَّاعَةُ) এর এই আজিমুশশান ফরজ ইবাদত যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দিন। (আমিন)





    আশ-শাইখুল মুজাহিদুল ফাকিহ আতিয়্যাতুল্লাহ আল-লিবি রহ. এর আলোচনার মূল আরবি


    مسألة مهمة ذكرها شيخنا الشهيد عطية الله:

    قال تقبله الله: وهذه الأحاديث النبوية والنصوص الشرعية التي ذكرت في وجوب السمع والطاعة والوفاء للأمراء بيعاتهم وعدم الخروج عليهم....إلخ أنما هي شاملةٌ للأمراء ممن هم دون الإمام الأعظم، كأمراء الجماعات المجاهدة في وقتنا هذا، أو الممكنة تمكينا غير كامل في بعض نواحي البلاد الإسلامية ونحوها، (كما كانت دولة طالبان في معظم أفغانستان مثلا) فهذه تأخذ في محل ولايتها حكم الإمام الأعظم وتنطبق عليها الأحاديث الواردة في السمع والطاعة والوفاء وتحريم الخروج عليها... أما الجماعات المجاهدة فليس لها حكم الإمامة العظمى في كل ما ورد من أحكام شرعية، ولكن تجتمع معها في بعض الأحكام بمقتضى العموم المعنوي، مثل عموم تحريم الشقاق بين المسلمين وتفريق كلمتهم وإضعافهم وإذهاب ريحهم... وعموم وجوب أضداد ذلك من الاجتماع على الحق وعلى أمير واحدٍ قدر الإمكان والائتلاف... وأن الجهاد لا يقوم ولا يمكن إلا بها فهي واجبةٌ بقاعدة ما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب، وأنها جائزة بأصل الشرع بأدلة متعددة، فلما كانت مشروعة، بل واجبةً، اقتضت المصلحة المتحققة الضرورية أن تكون هذه الجماعات المجاهدة تأخذ الكثير من الأحكام التي وردت في الإمامة العظمى، ثم إن الكثير من الأحكام الورادة في الحديث هي معلقة بطاعة الأمير، الذي يشمل كل تأميرٍ سواء كان الإمام الأعظم نفسه، أو أميراً من جهته، أو غيرهما كأمير سفرٍ مثلا، أو أمير جهادٍ وحرب عيّنه المسلمون في حربِ عدوهم.اهـ
    Last edited by Ahmad Zaqi; 07-04-2021, 11:50 AM. Reason: বানানভুল সংশোধন
    শাহাদাত জান্নাতের সংক্ষিপ্ততম পথ

  • #2
    সম্মানিত ভাই! আপনি খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয় তুলে এনেছেন, আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন,
    মিডিয়ার ভায়েরা সহ সকল মুজাহিদ ভাইদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন, আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দিন,
    আল্লাহুম্মা আমিন।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ,,
      খুব সুন্দর ও চমৎকার আলোচনা।
      মুমিনের একটাই স্লোগান,''হয়তো শরীয়াহ''নয়তো শাহাদাহ''

      Comment


      • #4
        আমাদের প্রত্যেক মামুর ভাইয়ের নিকট আবশ্যক বিষয়। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুক, আমীন।

        Comment


        • #5
          আসসালামু আলাইকুম
          আল্লাহ্ তা'আলা আপনার ই্লমে আমলে বারাকাহ দান করুন।
          আমাদেরকে শ্রবণ ও আনুগত্যশীল বানান। আমীন ইয়া রব্বাল 'আলামীন।
          যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ ,অনেক সুন্দর আলোচনা, আল্লাহ তা`আলা আপনার মেহনতকে কবুল করুন।
            আমিন
            হয়তো শরীয়াহ নয়তো শাহাদাহ

            Comment


            • #7
              সম্মানিত ভাই! এই আলোচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল। আমিরের হুকুম পালন করার গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক সময় আমিরের সামান্য কথা আমার কাছে সামান্য মনে হলেও এর প্রতিঘাত কিন্তু সামান্য বয়ে আনে না বরং এর জন্য নিজের সাথে সাথে তাঞ্জিমের ও চরম মূল্য দিতে হয়। তাই ভাইয়েরা আমরা যেন আমাদের আমিরের সকল বৈধ হুকুম মেনে চলতে পারি, আমিন। আমিরের কোন সিদ্ধান্ত সঠিক না হয়ে ভুল হলে যে তা অবৈধ তেমন নয়। কাজেই এই বিষয় ভালো ভাবে ধারনা না থাকলে অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। কারন কমান্ডার এর কমান্ড পালন করতে ভুল হলে কেমন বিপদ হয় তা আমরা রসুল সাঃ এর জীবনে সাহাবিদের (রাঃ) দেখেছি উহুদ এর যুদ্ধে। তাই এই ভুল আমাদের মাঝে হবে না এটা ভাবা আরো একটা ভুল হবে। তাই এই বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে।

              Comment


              • #8
                বর্তমান পৃথিবীতে আনুগত্যের সমস্যা যেমন আছে, তেমনি সেচ্ছাচারিতার সমস্যাও আছে। বর্তমানে আনুগত্যের ঘাটতি ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সেচ্ছাচারিতার সমস্যা দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন হাসিনা, মুহাম্মদ বিন সালমান, মোদি। এভাবে পুরো বিশ্ব।

                পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রভাব অনেক সময় মানুষের অজান্তেই খুব সুক্ষ্ণভাবে মানুষের মধ্যে কাজ করে। একারণে ইসলামী ঘরানার মধ্যেও তার কিছু দেখা যায়। মানুষ হিসাবে এরকমটা হয়ে যাওয়া অস্বভাবিকও না। কিন্তু এটা নিয়ে কম কথা বলা হয়। এটা দূর করার চেষ্টাও কম করা হয়। সেজন্য আমি এ প্রসঙ্গে বিপরীত দিকটা একটু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ভালো নিয়তে। খারাপ নিয়ত নেই্। তবু কেউ সন্দেহ করলে আমার কিছু করার নেই। কথাগুলো হল:

                আনুগত্য হবে সাংগঠনিক বিষয়ে ও কাজের বিষয়ে। মাসুলের ব্যক্তিগত রাগের কারণে বা অভিলাসী মানষিকতার কারণে যদি কোন আদেশ হয়, সেটা আনুগত্যের অন্তর্ভূক্ত নয়। সেটা মানা জরুরী নয়। সাংগঠনিক আনুগত্য মানে আল্লাহর আনুগত্য, দ্বীনের আনুগত্য। আর এটাই উদ্দেশ্য। কারো ব্যক্তিগত আনুগত্য করা উদ্দেশ্য নয়। দুনিয়াতে কেউ কারো গোলাম নয়। কেউ কারো থেকে শ্রেষ্ঠ বা সম্মানিত নয়, একমাত্র তাকওয়া ছাড়া।
                মাসুল ভাই যদি ব্যক্তিগত খাম-খেয়ালিমত আদেশ করে এই তৃপ্তি নিয়ে বসে থাকেন যে, সরাসরি গুনাহ ব্যতিত আমার যেকোন আদেশ তো মানতে হবে, তাহলে ভুল হবে। কথাটি এরকম নয়। কারণ এর থেকে কতগুলো বিষয় ইস্তেসনা বা ব্যতিক্রম আছে। তা হল:
                ১. সাংগঠনিক প্রয়োজনীয় আদেশ ছাড়া ব্যক্তিগত আদেশ-নিষেধ মানতে হয় না।

                ২. বৈধ আদেশের ক্ষেত্রেও কল্যাণ-অকল্যাণ বিবেচ্য। কারণ কুরআন-হাদিসের আলোকে ফিকহের একটি মূলনীতি হল: تصرف الامام علي الرعية منوط بالمصلحة অর্থাৎ প্রজাদের উপর ইমামের আদেশ নিষেধ মানা কল্যাণ-অকল্যাণের উপর নির্ভরশীল।

                তবে যে কেউ নিজের মনমত কল্যাণ-অকল্যাণ দেখবে, এটা আমি বলি না। যেখানে সুস্পষ্ট অকল্যাণ বা অপ্রয়োজনীয়তা দেখা যায়, সেখানকার কথা বলেছি।

                ৩. এ প্রসঙ্গে অনেকে কিছু হাদিসের মাধ্যমে ভুল বুঝেন। যে হাদিসগুলোতে এসেছে: ইমামের মাঝে অপছন্দনীয় কাজ দেখলেও তার আনুগত্য করে যেতে হবে, এগুলোর মাধ্যমে কেউ কেউ বুঝেন, উক্ত অপছন্দনীয় কাজের প্রতিবাদ করা যাবে না। মেনে নিতে হবে, সহ্য করে যেতে হবে। যতক্ষণ না শরীয়ত বিরোধী কিছু হয়। যখন শরীয়ত বিরোধী কিছু হয়, তখন আনুগত্য করা যাবে না।

                আমি বলি ভাই, এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয়। ইমামের মাঝে অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করা যাবে। বরং প্রতিবাদ করতে হবে। এটা নাহি আনিল মুনকারের অংশ। এটা দ্বীনের ফরজ বিধান। ইমাম যদি আমার উপর অন্যায় করে, সেটারও প্রতিবাদ করা জায়েয আছে। যদি অন্যের উপর করে, সেটারও প্রতিবাদ করা জায়েয় আছে এবং করতে হবে।

                হাদিসের উদ্দেশ্য হল, প্রতিবাদ করবে, ঠিক করার চেষ্টা করবে, কিন্তু বিদ্রোহ করে ক্ষমতা থেকে অপসারণের চেষ্টা করবে না। অর্থাৎ এই হাদিসগুলোতে অন্যায় ও গুনাহের কারণে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে নিষেধ করা হয়নি এবং গুনাহের কাজ মেনে নিতেও আদেশ করা হয়নি। বরং তার কারণে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য বিদ্রোহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অনেকগুলো হাদিসের মাঝে সামঞ্জস্যবিধান করার দ্বারা এবং সাহাবা-তাবিয়ীগণের আমলের দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয়।

                ৪. এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয়: সম্মান প্রদর্শন আর আনুগত্য প্রদর্শন এক কথা নয়। কিন্তু অনেককেই এটা ভুল বুঝতে দেখেছি। একজন মানুষ এমন থাকতে পারে যে, অতিভক্তি করে না, অনেকের মত অতি চাটুকারিতা করে না, ব্যক্তিগতভাবে মাসূলের একটু কথা শোনার জন্য, তার সাথে একটু তাল মিলানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে না, তবে সাংগঠনিকভাবে আল্লাহর হুকুম হিসাবে তার আনুগত্য করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ।

                সম্মানটা সবার মনের ব্যাপার। এর নির্দিষ্ট মাপকাঠিও তেমন নেই। এটা আপেক্ষিক ব্যাপারও। এটা একটা নীতিগত বিষয়, এটার সুনির্দিষ্ট আইনী রূপ সাধারণত নেই। আমিরকে সম্মান করার কথা হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে। তাই এটা করতে হবে। কিন্তু এটার জন্য নির্দিষ্ট কাজ বা নির্দিষ্ট সূরত আবশ্যক করা যায় না সাধারণত।

                কিন্তু বর্তমানে এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি দেখা যায় বেশির ভাগ মানুষের মাঝে। সব জায়াগায়ই কিছু কিছু দেখা যায়। এক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু ঘটনা ও হাদিস লক্ষণীয়, যেগুলোতে ইসলামে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করা এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করার মনোরম দৃষ্টান্ত দেখা যায়। আমি শুধু ঘটনাগুলোর প্রতি সামান্য ইঙ্গিত দিচ্ছি। কোন সূত্র বা বিস্তারিত বিবরণ এখানে উল্লেখ করবো না।

                ১. হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রাযি. একসাথে ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সাদামাটাভাবে চলছিলেন যে, কেউ বুঝতেই পারছিল না, কে রাসূল আর কে আবু বকর!!!
                এর দ্বারা আমির-মামুর একেবারে একরকম ভাবে থাকা, আমির কোন ধরণের আলাদা ভাব-সাব বা বৈশিষ্ট অবলম্বন না করার উদাহরণ পাওয়া যায়।
                ২. সম্ভবত শামায়েলে তিরযিমীর হাদিসে পড়েছি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের মাঝে এমনভাবে বসতেন যে, সাহাবাদের মধ্য থেকে তাকে একটুও পৃথকই করা যেত না। অর্থাৎ তিনি সকলের মাঝেই সাদাসিধে ভাবে বসতেন। সবার পৃথক স্থানে, ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে বসতেন না।
                ৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাটা সম্পর্কে এসেছে, তিনি সকলের মাঝে মিলেমিশে হাটতেন। সকলের সামনে আলাদা ভাব নিয়ে হাটতেন না। ফলে তাকে পার্থক্য করা যেত না।
                ৪. জাহিলী যুগে হজ্জের মধ্যে কুরাইশরা শুধু মুযদালিফায় অবস্থান করত। আর সাধারণ মানুষ মিনায় অবস্থান করত। এটা ছিল কুরাইশদের শ্রেষ্ঠত্ব ও অন্যান্যদের নিম্নতা বুঝানোর জন্য। ইসলাম এই প্রথা বিলুপ্ত করে সকলের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। সবাই সমান। সবাই যেতে পারবে মুযদালিফায় আর সবারই যেতে হবে মিনায়।
                ৫. একদা সাহাবাগণ রাসূলের মজলিসে তাঁর সম্মানে দাড়িয়ে যেতে চাইলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করে বললেন: অনারবীরা যেমন একে অপরের সম্মানে দাড়িয়ে যায়, তোমরা তেমন আমার সম্মানে দাড়িয়ে যেয়ো না।
                আরেক হাদিসে এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম কখনো রাসূলের জন্য দাঁড়াতেন না। কারণ তারা জানতেন যে, তিনি তা পছন্দ করেন না।
                এর দ্বারাও আমির-মামুর ও রাজা-প্রজার ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলা হয়েছে।
                ৬. হযরত ওমর রাযি. যখন ফিলিস্তিন যাচ্ছিলেন, তখন তার সঙ্গে তার গোলামও ছিলেন। কিন্তু তিনি এতটা সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যে, সমানভাগে কিছু সময় তিনি উটের লাগাম টানতেন আর কিছু সময় গোলাম। এমনকি বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটে এসে হযরত ওমরের ভাগে লাগাম টানার দায়িত্ব পড়ে!!!!
                আল্লাহু আকবার!!! কত সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভেদাভেদ একেবারেই মুছে দিয়েছিলেন। আল্লাহু আকবার!!
                ৭. ওমর রাযি. এর একটি গৌরবময় ঘটনা: একদা আমর ইবনুল আস রাযি. এর পুত্র জনৈক মিশরীয়র সাথে দৌড় প্রতিযোগীতায় হেরে গিয়ে তাকে প্রহার করেছিলেন আর বলেছিলেন: আমি তো সম্মানিতদের পুত্র। উক্ত মিশরীয় স্বয়ং ওমর রাযি. এর নিকট এর বিচার দেন। ওমর রাযি. নিজ হাতে আমর ইবনুল আস রাযি. এর পুত্রকে প্রহার করেন আর আমর ইবনুল আসকে লক্ষ্য করে নিম্নোক্ত ঐতিহাসিক উক্তি করেন:
                مذ كم تعبّدتم الناس وقد ولدتهم أمّهاتهم أحرارا
                “তোমরা কখন থেকে মানুষকে গোলাম বানিয়ে নিলে, অথচ তাদের মা গণ তো তাদেরকে স্বাধীন জন্ম দিয়েছে??”
                মোটকথা, মাসুলগণ নিজেদেরকে ভিন্ন রকম মনে করতে পারবেন না। সকলের মতই নিজেদেরকে সাধারণ মনে করতে হবে।
                ৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন আরবীর জন্য অনারবীর উপর কিংবা কোন অনারবীর জন্য আরবীর উপর, কোন সাদার জন্য কালোর উপর কিংবা কোন কালোর জন্য সাদার উপর কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শুধুমাত্র তাকওয়া ব্যতিত।

                Comment


                • #9
                  মাশাআল্লাহ ৷
                  ভাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন ৷
                  আল্লাহ আপনার ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুক ৷
                  আমাদেরকে পূর্ণরুপে মাসূলের আনুগত্য করার তাওফিক দান করুক ৷ আমীন ৷
                  আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
                  আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

                  Comment


                  • #10
                    আমিরের আদেশ মানার গুরুত্ব অপরিসীম শুধু এতটুকু কথা যথেষ্ট নয় বরং কেহ যদি কোন সঠিক জামাতের সাথে মিলিত থাকে তাহলে জামাতের নীতি লংঘন করলে কোন সাওয়াবের অধিকারী হবে না। জিহাদ কবুলের একটি শর্ত আমীরের আনুগত্য করা।

                    তবে এই ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাস্তবতা থেকে বাহিরে যাওয়া যাবে না। এই লেখার শিরোনাম দেয়া হয়েছে, "মাসুল ভাইদের আনুগত্য ফরজ কেন?" ফরজ শব্দটা মূল ইবারতে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ফরজ হওয়ার জন্যে শরিয়াতের অকাট্য নুসুস প্রয়োজন, তাই মূল ইবারতের অর্থ হিসেবে ওয়াজিব ব্যবহার করলেই যথেষ্ট হতো।

                    Ibnul Khattab ভাইয়ের আলোচনাও সুন্দর হয়েছে, মাশাআল্লাহ। তবে কয়েকটা পয়েন্ট আরেকটু ব্যাখ্যা করে দিলে ভাল হত। আমীর যদি বাস্তব প্রয়োজন বুঝে কোন আদেশ দেন আর মামুর তাঁর স্বল্পবুঝ বা স্বার্থের ফলে এটাকে স্বেচ্ছাচারীতা মনে করা কি উচিত হবে? অন্যদিকে আমীর যদি বাস্তবেই সেচ্ছাচারিতা করেন তাহলে মামুররা এটা কিভাবে পার্থক্য করবে? যদি আমীর সেচ্ছাচারী আদেশ দিয়েও থাকেন এবং তাঁকে বুঝেনোর পরেও মেনে না নেন, তখন তাঁর করনীয় কি হবে?

                    Comment


                    • #11
                      সম্মানিত ভাইদের উপকারী মন্তব্যগুলোর ওপর বিনীত পর্যালোচনা

                      প্রিয় ভাই!
                      এই ছোট্ট লেখাটিতে সব বিষয় আনা হয়নি। ইস্তিআব এখানে উদ্দেশ্য ছিল না। লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল কেন মাসউলদের হুকুম মানতে হবে তার দালিলিক পটভূমি উপস্থাপন। বাদ পড়া বিষয়গুলো ভাইয়েরা কমেন্টে যোগ করতে পারেন কিংবা বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে আলাদা পোস্টও দিতে পারেন। অনেক ভাই করেছেনও। আল্লাহ তাদের জাযায়ে খাইর দান করুন। আর মাসউল ভাইদের আচরণ কেমন হবে মামুরদের প্রতি এই আলোচনা ভিন্ন বিষয় হওয়ার কারণে এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এক ভাই কমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এনেছেন। মাশাআল্লাহ

                      শিরোনামে ফরজ শব্দ ব্যবহারের যাথার্থ্য নিয়ে ভাই প্রশ্ন তুলেছেন। ভাই! ফিকহের ছাত্রদের কাছে তো এটি জানা কথা যে, ফকিহগণ ফরজ শব্দের পরিবর্তে ওয়াজিব শব্দ ব্যবহার করেন। মুখাতাসারুল কুদুরির ইবারত দেখুন:
                      الزكاة: واجبة على الحر المسلم البالغ العاقل إذا ملك نصابا ملكا تاما وحال عليه الحول وليس

                      على صبي ولا مجنون وال مكاتب زكاة

                      এখানে জাকাতকে ওয়াজিব বলা হয়েছে। আমি একটি মাত্র উদাহরণ পেশ করলাম। ফকিহগণ ফরজের ক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই ওয়াজিব শব্দ ব্যবহার করেন। আর আমিরের আনুগত্যের বিষয়টি অকাট্য নুসুস দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনুল কারিমে একাধিক আয়াত এসেছে এই ব্যাপারে। সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
                      يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ

                      আর আমিরের নির্দেশ মাঠপর্যায়ের ভাইয়েরা মাসউলের মাধ্যমেই পেয়ে থাকে। তাই মাসউলের নির্দেশ মানাও ফরজ। অনেক ভাই সংশয়ে পড়েছেন মাসউল ভাইয়ের সব নির্দেশ পালন করা কি ফরজ? বিষয়টি তো সহজে বুঝে আসার কথা। যখন মাসউলের নির্দেশ পালনের কথা বলা হচ্ছে, তখন কোন নির্দেশ তা তো স্পষ্ট। নির্দেশ পালনীয় হওয়ার জন্য দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে:

                      ক. নির্দেশটি শরয়িভাবে বৈধ হতে হবে।
                      খ. নির্দেশটি তিনি যে কাজের মাসউল সে কাজের গণ্ডির মধ্যে থাকতে হবে। অর্থাৎ তানজিমের কার্যক্রমের আওতার মধ্যে কিংবা কার্যক্রমের প্রভাবাধীন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

                      আরও একটি বিষয়, ইজতেহাদি বিষয়ে নিজের ইজতেহাদ ছেড়ে আমিরের রায় অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর আমির বা মাসউল ভাই ভুল করলে তাকে সংশোধন কীভাবে করতে হবে, তার ক্ষেত্রে আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের রূপরেখা কী হবে এসব বিষয়ে আমাদের সম্মানিত শাইখগণ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেছেন। বিশেষ করে শাইখ আবু যুবাইদার আত-তাজাকিরুল জিয়াদ আমরা দেখতে পারি। ইনশাআল্লাহ এই বিষয়ে তার লেখাটির আলোকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ ভাইদের জন্য পোস্ট করা হবে ইনশাআল্লাহ।

                      ভাইদের একটি চিন্তা শেয়ার করি। আশা করি সবার বিষয়টি পছন্দ হবে। যেহেতু আমাদের আলোচ্য সব বিষয়েই আমাদের মহান শাইখগণের লেখা আছে, তাই আমরা তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি এবং তাদের ছায়ায় থেকে মন্তব্য করার চেষ্টা করি। এতে বোধহয় আমাদের লেখা ও মন্তব্যের প্রামাণিকতা ও বাস্তবতা ছুঁয়ে যাওয়ার শক্তি দুটোই যথার্থ হবে ইনশাআল্লাহ।

                      আল্লাহ আমাদের সবাইকে হকের ওপর অটল অবিচল রাখুন।
                      শাহাদাত জান্নাতের সংক্ষিপ্ততম পথ

                      Comment

                      Working...
                      X