‘মা, আমাকে আরেকবার বলো না, কিভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল?’
‘সোনামণি, আমি তো তোমাকে আগেও একবার বলেছি, এটি অনেক অনেক বছর আগের ঘটনা। এক শতাব্দী অনেক দীর্ঘ সময়।’
‘কিন্তু, মা, আবার বলো না।’
‘আচ্ছা, শোনো তা হলে, এটি খুবই জটিল বিষয়। তুমি কি সত্যি, সত্যিই শুনতে চাচ্ছ?’
‘হ্যাঁ, মা।’
‘এটি তো খুবই দুঃখের গল্প। পৃথিবীটা তখন একভাবে সাজানো ছিল এবং একসময় সেটি ভেঙে পড়ে। আর তখন কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারান।’
‘ওহ, তাই, পৃথিবীটা তখন কেমন ছিল?’
‘তখন জোর করে প্রভাব বিস্তার করা কয়েকটি সাম্রাজ্য ছিল। তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাসরত বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত এবং সেই সব অঞ্চলের কিছু মানুষ বহুদূরের কোনো শাসকের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার চাইতে নিজেরাই নিজেদের শাসন করতে চাইতো।’
‘ও, আচ্ছা।’
‘এদের মধ্যে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য একটি। এর রাজধানী ভিয়েনার মানুষরা নানা রঙের বল নিয়ে নাচত, সেখানে তাদের অসংখ্য চোখ ধাঁধানো বড় বড় প্রাসাদ ছিল। তারা বলকান নামে অভিহিত ইউরোপের গরিব অঞ্চলগুলো শাসন করত। কিন্তু সেখানকার মানুষ তা অপছন্দ করতেন। ১৯১৪ সালের একদিন বলকান শহর সারায়েভোতে এক বসনীয় সার্ব যুবক অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ও তার স্ত্রীকে হত্যা করেন। ওই যুবক অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন।’
‘এটা তো খুবই দুঃখজনক, মা। ধরো, গান বন্ধ হয়ে গেছে। তো তাতে কি হয়েছে?’
‘এ ঘটনায় অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য খুবই ক্ষিপ্ত হয়। তারা সার্বিয়াকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করার আহ্বান জানান। সে সময় ভিয়েনার শাসকের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। কারণ উদীয়মান শক্তি জার্মানি ছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অপর দিকে, সার্বিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল ক্ষমতাধর রাশিয়ার। এদিকে, সার্বিয়া অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের আহ্বানে সারা দেবে কিনা সে ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল। সোনামণি, তুমি যেমন হোমওয়ার্ক নিয়ে সমস্যায় পড়ো, ঠিক তেমন। পরে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরীই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।’
‘তারপর?’
‘তারপর জার্মানি যুদ্ধ ঘোষণা করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। রাশিয়ার বন্ধু আবার ফ্রান্স। বিভিন্ন কারণে জার্মানি আবার ফ্রান্সের অপছন্দের তালিকায় ছিল। পরে জার্মানি বেলজিয়ামের মাধ্যমে দ্রুত হামলা চালায় ফ্রান্সের ওপর। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয় ব্রিটেন। তারা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ সবের মধ্যে দুর্বল অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানি ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের পাশে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে উদীয়মান শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষ নেয়। বছর কয়েক পর এক কোটি ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। পতন হয় অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়, অটোমান, জার্মানি ও রাশিয়ান সাম্রাজ্যের পতন হয়।’
‘এক দম্পতিকে হত্যার কারণে এত কিছু হলো? এটা তো অদ্ভুত ব্যাপার, মা।’
‘মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঘটনা বড় আকার ধারণ করে, মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলে এবং দৃষ্টিভিঙ্গও বদলে যায়। যার ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বড় ধরনের গণ্ডগোল বাধে।’
‘মা, এমনটা তো আর কখনো হবে না, তাই না?’
‘না, হবে না।’
‘আচ্ছা, এখনো কি কোনো সাম্রাজ্য অবশিষ্ট আছে?’
‘আমেরিকার কোনো সাম্রাজ্য না থাকলেও, কেউ কেউ অবশ্য আমেরিকাকে সাম্রাজ্য বলে থাকে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ। বিশ্বজুড়ে তাদের সৈন্য নিয়োজিত আছে এবং বিভিন্ন মানুষ দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তার জন্য এদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমেরিকা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।’
‘মা, তার মানে তুমি শুরুতে যেমনটা বলেছিলে তেমন, যে পৃথিবী একসময় একভাবে সাজানো ছিল এবং তারপর সেটি ভেঙে পড়ে আর এ সময়টায় অসংখ্য মানুষ মারা যান।’
‘না, ঠিক তা নয়, সোনামণি। কোথায় মারা গেছে বলো তো?’
‘সিরিয়ায়, মা। সিরিয়া কী?’
‘সিরিয়া হলো একটি ছোট্ট দেশ। সেখানে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ বসবাস করে। অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়লে দেশটি অস্তিত্ব লাভ করে।’
‘কেন মানুষ সেখানে যুদ্ধ করছে?’
‘এটি জটিল বিষয়। তুমি কি সত্যি, সত্যি জানতে চাও?’
‘হ্যাঁ, মা।’
‘আচ্ছা, শোনো। সেখানে এক নিষ্ঠুর, শ্বৈরশাসক সম্রাটের মতো আচরণ করেছিল এবং সিরিয়ার কিছু মানুষ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তখন সেই অত্যাচারী শাসক তাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করে। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্য দেশগুলোও তা মেনে নিতে পারেনি। তারা বলেছে যে, তারা বিদ্রোহীদের পক্ষ নেবে কিন্তু আসলে তা হয়নি।’
‘কেন?’
‘কারণটা তোমাকে আগেই বলেছিলাম, আমেরিকা আগের মতো শক্তিশালী নেই। এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে।’
‘বুঝলাম, তাহলে কী হবে?’
‘ওই শ্বৈরশাসকের ক্ষমতাধর বন্ধু হলো রাশিয়া। রাশিয়ার আবার আরেকটি ক্ষমতাধর বন্ধু আছে, ইরান। এ দুটি দেশ ওই অত্যাচারী শাসককে সমর্থন করেছে।’
‘তার মানে ওই শাসক জিতে গেছে।’
‘না, তেমনটা নয়। যারা এই শ্বৈরশাসকের হাত থেকে নিস্তার পেতে চেয়েছিল, তাদের বেশির ভাগই ছিল সুন্নি মুসলিম। তাদের পক্ষে ছিল সুন্নিপ্রধান দেশ সৌদি আরব এবং তারা ইরানকে ঘৃণা করে এবং রক্ষণশীল সুন্নিদের সমর্থন করে। এ ছাড়া তুর্কি অটোমান সাম্রাজের উত্তরাধিকারী ছিল এবং তারা সিরিয়ার শাসককে ঘৃণা করে বলে বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি সম্প্রদায়কে ওই শ্বৈরশাসকের চেয়েও অনেক বেশি ঘৃণা করে। তাই যেসব উগ্র সুন্নিরা গলা কেটেছে, কুর্দিদের হত্যা করেছে এবং পশ্চিমাদের গুলি করে হত্যা করছে, তাদের গোপনে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
‘মা, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আরেকটু সহজ করে বলবে?’
‘অটোমান সাম্রাজের মতো সিরিয়াও ভেঙে পড়েছে। রাশিয়া এখন সিরিয়ান শাসকের শত্রুদের ওপর বোমা হামলা করছে। আর আমেরিকা বোমা হামলা চালাচ্ছে ‘গলাকর্তনকারীদের’ ওপর। ফ্রান্সও একই কাজ করছে। এসবের মধ্যে তুরস্ক রাশিয়ার একটি বিমান ভূ-পাতিত করেছে। তাই তুরস্কের ওপর ক্ষেপেছে রাশিয়া। তুর্দিরা ১০০ বছর আগে যা করতে পারেনি, এখন তা করতে চাচ্ছে, তারা সিরিয়ার ক্ষমতায় বসতে চাচ্ছে। সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। যে যুদ্ধ এখন সিরিয়ায় তীব্র আকার ধারণ করছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে শত শত লোক নিহত হয়েছে।’
‘কিছু মানুষ এক অত্যাচারীর হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছে বলে এত সব হলো?’
‘ওই যে, মাঝে মাঝে ছোট ছোট ব্যাপারগুলো অনেক বড় আকার ধারণ করে। পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বড় ধরনের গণ্ডগোল বাধে।’
‘আচ্ছা মা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেমন হবে?’
‘চিন্তা কোরো না, লক্ষ্মীসোনা, পরিস্থিতি এখন ভিন্ন।’
‘পুরোপুরি।’
‘হ্যাঁ, পুরোপুরি ভিন্ন। আমরা ভালো আছি, স্বাধীন আছি এবং সুখে আছি। হ্যাপি থ্যাংকসগিভিং মাই লাভ।’
লেখক : রজার কোহেন অনুবাদ : সাবরিনা সোবহান
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/77894
Results 1 to 4 of 4
Thread: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
-
01-08-2016 #1
- Join Date
- May 2015
- Location
- WORLD
- Posts
- 168
- جزاك الله خيرا
- 139
- 138 Times جزاك الله خيرا in 66 Posts
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী। (১১০ঃ১-৩)
-
01-09-2016 #2
- Join Date
- Oct 2015
- Posts
- 883
- جزاك الله خيرا
- 1,169
- 871 Times جزاك الله خيرا in 438 Posts
সুন্দর হয়েছে।
-
05-08-2017 #3
অনেক সুন্দর।
-
05-15-2017 #4
- Join Date
- Nov 2016
- Posts
- 64
- جزاك الله خيرا
- 0
- 47 Times جزاك الله خيرا in 30 Posts
জাযাকাল্লাহ...
হে আল্লাহ তুমি ভাইয়ের কলমকে আরো আরো ধারালু বানিয়ে দাও। বাতিলের মোকাবেলায় তাকে হিমালয় পর্বতসম উঁচু করে দাও। আমীন।
Similar Threads
-
জীবন, মৃত্যু ও শাহাদাত
By power in forum আল জিহাদReplies: 1Last Post: 11-24-2015, 12:32 PM -
আল্লাহ কতৃর্ক নাযিলকৃত বিধান দিয়ে দেশ চা&#
By tayfamansura in forum ফতোয়াReplies: 2Last Post: 11-11-2015, 08:12 PM -
দুনীয়াবী ব্যক্তিগত প্রতিশোধের স্পৃহাকে &
By Alif in forum মানহাযReplies: 1Last Post: 08-08-2015, 07:54 PM -
ধৈর্য্য ধরো হে আমার হৃদয় (নাশিদ)
By Abdullah in forum অডিও ও ভিডিওReplies: 3Last Post: 07-29-2015, 07:45 PM