Announcement

Collapse
No announcement yet.

হাসান উলুবাতলিঃ ইতিহাসে অবহেলিত এক মহান যোদ্ধার ইতিকথাঃ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হাসান উলুবাতলিঃ ইতিহাসে অবহেলিত এক মহান যোদ্ধার ইতিকথাঃ

    হাসান উলুবাতলি
    ইতিহাসে অবহেলিত এক মহান যোদ্ধার ইতিকথা


    কনস্টান্টিনোপল। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। ক্রুশপূজারিদের স্বর্গরাজ্য। সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের নেতৃত্বে উসমানি বাহিনী কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করে আছে। ৫৩ দিন গত হয়ে গেছে, কিন্তু কনস্টান্টিনোপল পতনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, তখনকার সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত দুর্গপ্রাচীর ছিল কনস্টান্টিনোপলের দুর্গপ্রাচীর। ক্রমবর্ধমান শক্তিধর উসমানি সাম্রাজ্যের হাত থেকে রক্ষা করতে ক্রুশপূজারিরা দুর্গপ্রাচীরকে খুবই মজবুত করে রেখেছে। মাত্র ২৪ বছর বয়সী তরুণ উসমানি সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ কনস্টান্টিনোপল জয় করা ছাড়া সালতানাতের রাজধানী বুরসায় না ফিরে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করেছেন।

    হাসান উলুবাতলি। জন্ম ১৪২৮ সালে। তুরুস্কের বুরসা প্রদেশের অন্তর্গত কারাচাবের নিকটস্থ উলুবাত নামক গ্রামে। ২৫ বছর ছুঁই ছুঁই একজন তাগড়া নওজোয়ান। উসমানি সাম্রাজ্যের দুর্দান্ত জেনোসারি বাহিনীর মারকুটে সৈনিক। স্কটিশ ইতিহাসবিদ লর্ড কিনরোজের লেখা “দ্য অটোমান সেঞ্চুরিস” অনুযায়ী তিনি খুব দীর্ঘদেহী ব্যক্তি ছিলেন। “উলুবাতলি হাসান” নামের অর্থ “উলুবাতের হাসান”। কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সময় তাঁর বীরোচিত ভূমিকার কারণে আজও তাকে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

    কনস্টান্টিনোপল অবরোধে হাসান উলুবাতলিও অংশ নেন। কিন্তু লাগাতার আক্রমণ ও কামান দাগানো সত্ত্বেও কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরে এতটুকু চিড় ধরানো যাচ্ছিল না। জয়ের আশা একেবারে দুরাশায় পর্যবসিত হতে চলেছে। গোটা উসমানি বাহিনীর মধ্যে হতাশার কালো ছাপ প্রতীয়মান হতে শুরু করেছে। স্বয়ং সুলতান মুহাম্মাদও বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাহলে কী তিনিও তাঁর পূর্বপুরুষদের মতো ব্যর্থ হবেন?! কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে?! অথচ তাঁর গুরু শাইখ আক শামসুদ্দিন সেই ছোটকাল থেকেই তাঁর কোমল অন্তরে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের স্বপ্নের বীজ বুনে রেখেছেন!


    ১৪৫৩ সালের ২৯ শে মে। অবরোধের শেষ দিন। ফজরের নামাজের পর উসমানি বাহিনী কাড়ানাকাড়া আর রণসঙ্গীত বাজাতে শুরু করে। যুদ্ধের দামামা কনস্টান্টিনোপলের শক্ত প্রাচীর ভেদ করে শহরের ভেতর প্রভাব সৃষ্টি করে। উসমানিরা চুড়ান্ত আঘাত হানে। কিন্তু না; দেয়াল-পতনের কোনো নামগন্ধ নেই! খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক সেই মুহূর্তে হাসান উলুবাতলি যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। একাই দুর্গের প্রাচীরে চড়ে বসবেন বলে ঠিক করেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। একটি তলোয়ার, একটি ছোট ঢাল এবং উসমানি পতাকা হাতে নিয়ে তিনি দুর্গপ্রাচীরের দিকে যাত্রা করেন। তার সাহসিকতায় সাহস পায় আরও ৩০ জন সৈন্য। তারা তাকে অনুসরণ করে। তার উদ্দেশ্য ছিল দুর্গপ্রাচীরে উসমানি ঝাণ্ডা উড্ডীন করা।

    দুর্গপ্রাচীরের চারিদিকে তুমুল যুদ্ধ চলছে। তরবারির ঝনঝনানি আর শাঁ শাঁ করে আসা তীরবৃষ্টি উপেক্ষা করে দেয়ালের দিকে তীব্র বেগে অগ্রসর হতে থাকেন হাসান। তাঁর পিছু পিছু তার অনুসারীরা। একে একে তাদের ১৭ জন তীরের আঘাতে জমিনে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু তিনি ছুটে চলছেন। হঠাত একটি তীর এসে তাঁর গায়ে লাগে। তিনি এতে পিছপা হন না। যন্ত্রণা উপেক্ষা করে এগিয়ে যান। এরপর মই বেয়ে প্রাচীরের উপর উঠতে থাকেন। আরো একটা তীর এসে লাগে তাঁর গায়ে। তিনি পড়তে পড়তে নিজেকে রক্ষা করেন। সব যাতনা সহ্য করে উপরে উঠতেই থাকেন। অবশেষে দুর্গপ্রাচীরে চড়ে বসেন তিনি! আরো কয়েকটি তীর এসে তাঁকে বিদ্ধ করে। কিন্তু সব ব্যথা ভুলে গিয়ে; প্রাচীরের উপর থেকে ক্রুশের পতাকা সরিয়ে, সেকানে উসমানি পতাকা উড্ডীন করেন!

    তখন বৃষ্টির মতো তীর তার দিকে ধেয়ে আসছিল। তীরের আঘাতে আঘাতে তিনি ঝাঁঝরা হচ্ছিলেন। তবুও নিজের শরীর দিয়ে পতাকা রক্ষা করে যেতে থাকলেন। ঠিক সেই সময় তার কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয় তার অনুসারীদের মধ্য থেকে ১২ জন অনুসারী। তারা তাকে ঘিরে দাঁড়ায়। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না হাসান; ঢলে পড়লেন এবং সাথে সাথেই শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে নিলেন। তাকে পরখ করে দেখা যায়, ২৭টি তীর বিদ্ধ ছিল তার শরীরে!

    কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরে উসমানি পতাকা উড়তে দেখে, উসমানি সেনাদের মনোবল সাংঘাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়। চূড়ান্ত আঘাত হানার নির্দেশ দেন সুলতান। গগনবিদারী শব্দে ফেটে পড়তে শুরু করে উসমানীয় কামানগুলো। অল্পক্ষণের মধ্যেই প্রাচীরের দুর্বল অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়। একসময় দেয়াল ধ্বসে পড়ে। সেই ফাটল দিয়ে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো উসমানি সেনারা ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে। বিজিত হয় কনস্টান্টিনোপল। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয় দেড়হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী রোমান সাম্রাজ্য ও তার সভ্যতা। আর সে জায়গা পূরণ করে নেয় ইসলাম। এজন্য কনস্টান্টিনোপলের নাম পালটিয়ে রাখা হয় ইসলাম্বুল। মানে ইসলামের শহর। ইসলাম্বুল থেকে পরে ইস্তাম্বুল।

    [আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাদিগকে শুহাদাদের পদাংক পূর্ণরুপে অনুস্মরন করার তাওফিক দান করুন আমিন আমিন আমিন ইয়া রব্বাশ-শুহাদাই ওয়াল মুজাহিদিন।]
    ---------
    সূত্র: ﺑﺼﻤﺎﺕ ﺧﺎﻟﺪﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﺍﻟﻌﺜﻤﺎﻧﻲ : ২৮, মূল: জন আলপেজুভেন্স, ভাষান্তর: ড. আবির শান্নাবি

    বিঃদ্রঃ লিখাটি সংগৃহিত ও পরিমার্জিত

    হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

  • #2
    আল্লাহু আকবার। খুবই ঈমানদীপ্ত উপাখ্যান। আল্লাহপাক উনার শাহাদাহ কবুল করুন, সেই সাথে অন্যান্যদের এবং আমাদেরও, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

    Comment


    • #3
      Originally posted by আহমাদ সালাবা View Post
      আল্লাহু আকবার। খুবই ঈমানদীপ্ত উপাখ্যান। আল্লাহপাক উনার শাহাদাহ কবুল করুন, সেই সাথে অন্যান্যদের এবং আমাদেরও, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
      আমিন আমিন আমিন বি রহমাতিকা ইয়া আরহামুর-রহিমিন
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment


      • #4
        যাযাকাল্লাহু খাইরান.. ইয়া আখি..!!
        আশাকরি এরকম দূর্লভ ঈমানদীপ্ত দাস্তানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবন.. ইনশাআল্লাহ্..।।
        যদি তোমরা জিহাদে বের না হও তবে তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দিবেন এবং অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৯)

        Comment


        • #5
          Originally posted by আহমাদ সালাবা View Post
          আল্লাহু আকবার। খুবই ঈমানদীপ্ত উপাখ্যান। আল্লাহপাক উনার শাহাদাহ কবুল করুন, সেই সাথে অন্যান্যদের এবং আমাদেরও, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
          আমিন, ইয়া রব্বাল আলামিন।
          ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

          Comment


          • #6
            ইসলামী কোন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে এটার রেফারেন্স নিতে পারলে ভাল হতো ভাই।
            লিখার মধ্যে যা ভুল তা আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে
            আর যদি সঠিক হয় তাহলে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত

            Comment


            • #7
              ভাই আবু মাহমু, আপনি Ulubatli Hasan লিখে উইকিপিডিয়াতে সার্চ করেন।

              Comment

              Working...
              X