Announcement

Collapse
No announcement yet.

খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৬)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৬)

    খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৬)
    ডা. খাওলা বিনতে আব্দুল আজিজ


    একদা টিভিতে পশ্চিমা মিডিয়ার একটি রিপোর্টের মাধ্যমে আমি“তাহরীকে তালেবান পাকিস্তান” এর আমীর মাওলানা ফজলুল্লাহর ব্যাপারে অবগত হলাম। ঐ রিপোর্টে তাকে “লৌহ মানব” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টারদের মতে, তিনি কাফেরদের ব্যাপারে সবচেয়ে কঠিন। তাঁর ‘তাহরীকে তালেবান পাকিস্তানের’ আমীর হওয়ার সংবাদ কুফর বিশ্বের জন্য সবচেয়ে ভয়ানক সংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। রিপোর্টে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি কোন ভাবেই নিজের উসুলের(শরীয়তের) ব্যাপারে সমঝোতা করবেন না।

    আমি চিন্তা করলাম, বর্তমান যুগে কাফেরদের মোকাবেলায় নিজেকে পূর্ণ প্রস্তুত করা এবং কোন অবস্থাতেই সঠিক পথ থেকে সরে না যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত তায়েফায়ে মানসুরার একজন সৈনিকই নিতে পারে। যার দৃঢ়তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছে স্বয়ং কাফিরগোষ্ঠী। আমি সেজদায় মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার দরবারে দুআ করলাম,“হে আল্লাহ! আপনি আমাকেও আপনার এবং আপনার প্রিয় 0রাসূল সাঃ এর দুশমনদের ব্যাপারে কঠোর বানিয়ে দিন। আমাকে এমন যোগ্যতা দান করুন যে, আমি মাওলানা ফজলুল্লাহ খোরাসানীর অধিনে থেকে জিহাদ করতে পারি।( সুবহানাল্লাহ, এই দুআর একবছর অতিবাহিত না হতেই আমার ভাগ্যে এই সুযোগটি এসে গেল।)

    আমার মাঝে হঠাৎ এধরণের পরিবর্তন দেখে পাকিস্তানে আমার পিতা-মাতা খুবই চিন্তিত ছিলেন। আমার পিতা খুবই চিন্তিত ছিলেন যে, আমি নাকি আবার যেরকম দ্রæত দ্বীনের দিকে ফিরে এসেছি, সেরকম দ্রæত দ্বীন থেকে বের হয়ে যাই। তাদের চিন্তার আরেকটি কারণও ছিল। তা হল আমি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অনৈসলামিক কার্যকলাপ এবং কাবায়েলী এলাকাগুলোতে তাদের জুলুমের ব্যাপারে অনেক কথা জিজ্ঞেস করেছি। একদিন ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও চার্স করতে গিয়ে জামেয়া হাফসা এবং লাল মসজিদে ঘটে যাওয়া ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের বিষয়গুলো আমার সামনে এল। আমার স্মরণ আছে, আমার চোখের অশ্রæ প্রবাহ শুরু হয়েছিল। নিজেকে নিয়ে অনেক আফসোস হল যে, আমি কত বছর যাবত উদাসিনতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। অথচ আমার বোনদের ইজ্জতকে পদদলিত করা হচ্ছিল। আমি তখনই পাকিস্তানে বাবার কাছে কল দিয়ে বললাম,“বাবা! বাস্তবেই কি কয়েক বছর আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ‘জঙ্গী দমন’ নামে জামেয়া হাফসায় অপারেশন করেছিল?” আব্বু লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,“এঘটনা অবশ্যই হয়েছে। তবে আমি এর বিস্তারিত কিছু জানিনা।” আমি সালাম দিয়ে ফোন বন্ধ করে দিলাম।

    লাল মসজিদে সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ নিয়ে দোটানায় পড়ে গেলাম। বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত হওয়ার নেশা আমার ঘাড়ে চেপে বসল। আমার মাঝে বিস্ময়কর এক আকর্ষণ সৃষ্টি হলো যে, আমি কখন ঐ মর্মান্তিক ঘটনায় উপস্থিত নিজ চোখে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে এমন কাউকে তা জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমাকে কে উক্ত ঘটনাস্থল পর্যন্ত নিয়ে যাবে? আমি পাকিস্তানে থাকা আমার বোন থেকে সাহায্য চাইলাম। সে আমার কথা শুনে পেরেশান হয়ে গেল। আমি চিন্তা করলাম, যেহেতু আমার এখনই পাকিস্তান যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। তাই আমার বোন থেকেই সব কিছু অবগত হতে পারবো। প্রথমে যদিও সে টাল বাহানা করেছিল। কিন্তু আমার বাধ্যবাধকতার কারণে অবশেষে রাজি হলো।

    কিছু দিন পর আমি আবার তার সাথে যোগাযোগ করলাম। সে আমাকে জানাল যে, জামিয়া হাফসা এখন আর নেই। আর এই লোকগুলো রাষ্টদ্রোহী সন্ত্রাসীদেরকে সাহায্য করতো। এখানকার ছাত্রীরা দেশে নিরাপত্তা নষ্ট করার দায়ে অভিযুক্ত ছিল। যার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে। সাথে সাথে সে আমাকে সতর্ক করে দিল যে, এই লোকগুলো আমাদের রাষ্ট্রের শত্রæ। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর মূল শত্রæ। এদের সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক আমার ভবিষ্যতের জন্য অনেক ক্ষতিকর হবে। আমার নিকট একথা বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে, যে মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে পাকিস্তানে পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন ব্যবস্থা চালু করা এবং সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে জিহাদের জ্ঞানকে সমুন্নত করার ওপর সে মাদরাসাটি সন্ত্রাসীদের বাসস্থান হয়ে যাবে।
    আমি খুব পেরেশান ছিলাম। রব্বুল ইজ্জতের কাছে দুআ করতে থাকলাম যে, হে আল্লাহ! আমাকে সঠিক পথের দিশা দিন। হক্ব এবং বাতিল পরিস্কার দেখিয়ে দিন এবং আমাকে হক্বের সঙ্গী হওয়ার তাওফীক দিন। আমি নিজেকে ফ্যামিলি থেকে বিচ্ছিন্ন অনুভব করলাম। আর তারাও আমার জিহাদী চিন্তা-ভাবনাকে ‘বর্বরতা’ ভাবতে শুরু করল। আমি তাদের সেক্যুলারি চিন্তা-ভাবনাকে ইসলামী বিরোধী মনে করতে লাগলাম। এই দিনগুলোতে আমি খুব পেরেশান ছিলাম। আমার একথা জানা ছিল যে, আমাকে তাগুত এবং তার সাহায্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে আমার মন সায় দিচ্ছিল না। আমি ঘাবড়িয়ে যাচ্ছিলাম। ভয় ছিল যে, মাতা-পিতার মহব্বত না আবার প্রতিবন্ধক হয়ে যায়! আর এটাও চিন্তা ছিল যে, সেনাবাহিনী আমাকে নজর বন্দী করে দিতে পারে। শয়তান খুব শক্তি ব্যয় করছিল, যেন আমি হেরে যাই এবং খোরাসানে হিজরতের ইচ্ছাটা মুলতবী করে দেই। আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গিকারের কথা আমি বার বার নবায়ণ করছিলাম। এই সময়টিতে শামের খবর খুব আলোচিত ছিল।
    আমার প্রিয় এক বান্ধবীর স্বামী শামে জিহাদের জন্য গিয়েছিল। আমিও শামে হিজরতে ইচ্ছা করলাম। আমার আলেমা বোন আমার সাথে একমত হতে পারছিলেন না। তিনি আমাকে পুনরায় খোরাসানে হিজরতের জন্য জোর দিতে থাকলেন। আমি তাকে পরিস্কার বলে দিলাম যে, ফ্যামিলির মুখামুখী হওয়ার মতো সাহস আমার ভেতর নেই। আর খোরাসানে হিজরতের জন্য কোন সাথীও পাচ্ছিনা। কিন্তু সে আমাকে চাপ দিচ্ছিল যেন আমি পাকিস্তানে থাকি এবং নিজ আত্মীয়-স্বজনকে উত্তম পদ্ধতিতে দাওয়াত দেই। দুনিয়ার যেখানেই জিহাদ জারি আছে তার গোড়া কোন না কোনভাবে খোরাসান থেকেই বের হয়েছে। আমি চিন্তা করলাম যে, কিছু দিন শামে থাকার পর যদি আল্লাহ তায়ালা সুযোগ দিন তাহলে খোরাসানে হিজরত করবো। অবশেষে যথেষ্ট সাধনার পর আমার এবং আমার প্রিয় সঙ্গীর শামে সফরের ব্যবস্থা হলো। আমাকে নিশ্চয়তা দেওয়া হলো যে, শামে আমাকে হসপিটালের খেদমত দেওয়া হবে। তবে সাথে সাথে এই শর্তও রাখা হলো যে, আমাকে শামে পৌঁছার সাথে সাথে আমার সঙ্গীর স্বামীর বন্ধুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। আমি পরিস্কার অস্বীকার করে দিলাম। প্রথমতঃ আমারতো বিয়ের কোন ইচ্ছাই ছিল না। আর দ্বিতীয়তঃ আমার ভয় ছিল যে, আমার সফর আল্লাহর জন্য না হয়ে না জানি বিয়ের জন্য হয়ে যায়। বিয়ের ব্যাপারেতো কোন প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু জরুরী নয় এমন বিষয়টি আমার তবিয়ত শর্ত হিসাবে মেনে নিতে পারছিলনা। তাই আমি শামে যাওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করলাম।
    বাহ্যিকভাবে যদিও আমার সব প্লান ব্যর্থ মনে হচ্ছিল। তবে আমি নিজের মাঝে একধরণে শক্তি অনুভব করছিলাম। কষ্ট যতই বাড়ছিল ঈমান ততই মজবুত হচ্ছিল। আমার হৃদয় এখন শেষ পরিণতির উপর স্থির হয়ে আছে। আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেন,“ যদি তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করো এবং ধৈর্য ধারণ করো তাহলে আমি তোমাদেরকে হেদায়াত দেব।” আমার ইচ্ছা ছিল জানÑমাল দ্বারা জিহাদ করবো যতক্ষণ না আল্লাহর দ্বীন সকল ধর্মের উপর প্রাধান্য পায়। আমার সকল কাজ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ছিল। এখনো যখন ঐ সময়ের কথাগুলো স্মরণ হয় তখন রব্বে কারীমের প্রতি অন্তহীন ভালোবাসা জাগে যে, তিনি নিজ রহমতের চাদরে আমাকে ঢেকে নিয়েছেন। আমি আমার আলেমা বোনের পরামর্শক্রমে সবসময় দ্বীনি কিতাবাদী মোতালায়ায় থাকতাম। মানুষের জেহেন যখন ইলমের নূরে আলোকিত থাকে তখন কোন সন্দেহ থাকে না। খালি মস্তিষ্ক বিভিন্ন সন্দেহ,শয়তানী খেয়ালের আবাস হয়। আল-হামদুলিল্লাহ, আমি সায়্যেদ কুতুব রহঃ এর কিতাবাদীর মাধ্যমে অনেক উপকৃত হয়েছি। এরকম আলেম, চিন্তাবীদ, এমন নেতা উম্মতে মুসলিমার উপর আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের সীমাহীন অনুগ্রহের ফল। তিনিতো ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে জান্নাতু ফেরদাউসে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু তার শাহাদাতের পর তার প্রতিনিধি হচ্ছে তাফসীর ফি জিলালিল কুরআন। যা মুজাহিদীনদের কিতাবাদির জন্য মশালের মতো কাজ করে। হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ‘একজন আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতে থাকে। এমনকি সে দুআ কবুল না হওয়ার কারণে নৈরাশ হয়ে যায় এবং দুআ করা ছেড়ে দেয়। অথচ তার দুআ কবুল হওয়ার উপক্রম ছিল।’ আমি উঠতে-বসতে দিন-রাত আল্লাহর পথে হিজরত এবং জিহাদের স্বপ্ন দেখতাম। আকুতি -মিনতি করে দুআ করতাম। খোরাসানে ইন্টারনেটে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তালেবানদের সফল হামলাগুলোর ভিডিও দেখতাম। এর মাধ্যমে নিজের মাঝে ঈমানী জযবাহ পেতাম। হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করে সীমাহীন নৈরাশ্য অবস্থায়ও দুআ করা ছাড়িনি।
    আমার প্রিয় আলেমা বোন হঠাৎ এক কাজে দেশের বাহিরে গেলেন। তিনি ছাড়া আমার চিন্তা - ধারার মতো অন্য কোন সাথী ছিল না। তাই, সারাদিন ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকতাম। এই ভয় করতাম যে, যদি বাহিরে বের হই তাহলে আবার কোন ফিতনায় পড়ে যেতে পারি। এদিকে আমার জমা করা পুঁজিও শেষ হতে শুরু করেছে। শরীয়ত অনুযায়ী জীবিকা নির্বাহ প্রায় অসম্ভব ছিল। আমি বাচ্চাদের টিউশনি করার ইচ্ছা করলাম। যখন টিউশনীর ঘোষণা দিলাম তখন থেকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে লাগলাম যে, একজন ডাক্তারের টিউশনি করানোর কী প্রয়োজন? বিস্ময়কর সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে লাগলাম। অধিকাংশ মায়েরা আমাকে ‘বর্ববরতা প্রিয়’ ভেবে তাদের বাচ্চাদেরকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। একবছর পর্যন্ত বেকার ছিলাম। উপার্জনের কোন সুরতই বের হলো না। যখনই নৈরাশ হয়ে যেতাম বাড়ীতে ফোন করার চিন্তা করতাম। অতঃপর এই চিন্তা করে বাদ দিতাম যে, তারা আমার উদ্দেশ্য বুঝবে না। পিতা-মাতার সন্তানের প্রতি স্বভাবজাত ভালোবাসার কারণে তারা অপারগ। তাই তারা আমার বর্তমান দুনিয়াবী দুরাবস্থা দেখে পেরেশান হয়ে যাবেন। আর যদি শুনে যে, আমি হিজরত এবং জিহাদের ইচ্ছা করেছি তখন হয়তো তারা ‘ব্যথা’ সহ্য করতে পারবেন না। এক সেনা অফিসারের মেয়ের তালেবানের কাতারে শামিল হয়ে যাওয়া নিশ্চয় এটা আমাদের বংশের জন্য দুর্ণামের কারণ হবে। আমি চিন্তা করছিলাম যে, আমাদের সারাটা জীবন ‘দুনিয়া কী বলবে’ এই লাল চিহ্ণটা লেগে থাকে। যদি আমাদের এই অনুভূতি হতো যে, ‘আল্লাহ কী বলবেন এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কিসে?’। এটা আমাদের জীবনের আসল চিন্তা হওয়া উচিত। ‘দুনিয়া কী বলবে’ এই চিন্তাটা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয়ের ক্ষেত্রে ছেয়ে গেছে। এটা থেকে আমরা বের হতে পারছিনা।
    যাই হোক, আমার ঈমান ছিল দূর্বল এবং ইচ্ছা ছিল টলটলায়মান। সুতরাং রব্বে কারীম যিনি আমার মতো বান্দারও রব আমার দুআ কবুল করলেন। টেলিফোনের একটি কল আমার সমস্যার সমাধান করে দিল। আজও আমি বুঝতে পারিনি যে, ঐ কলটা বাস্তবেই কি কোন মানুষ দিয়েছিল নাকি কোন ফেরেস্তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাহায্য করেছেন। ঘটনা ছিল যে, পাকিস্তান থেকে এক মেয়ে আমাকে ফোন করেছিল। সে বলল যে, সে পাকিস্তানে মেয়েদের কুরআন এবং হাদীস শিক্ষার ব্যবস্থা করে। আমিতো পেরেশান হয়ে গেলাম যে, পাকিস্তান থেকে হাজারও মাইল দূরে আমার নাম্বার ট্রেস করে আমাকে কল করা । আবার সে জানতও যে, আমি পাকিস্তানী। আমি কোন ধরণের চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি জামেয়া হাফসার ফারেগ কোন আলেমাকে চিনেন? আমি শুধু তাদের কাছেই পড়তে চাই। সে বলল, কোন সমস্যা নেই। আমি এখনই আপনাকে জামেয়া হাফসার এক আলেমার সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে মনে হলো যে, আমি স্বপ্ন দেখছি। খুব দ্রæতই আমার সাথে জামেয়া হাফসার এক আলেমার সাথে কথা হলো। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকে পরিস্কার বলে দিলাম যে, আমি মূলত তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর লাল মসজিদ আক্রমণের ব্যাখ্যা জানতে চাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমার আশার চেয়েও বেশী জিনিস জানতে পারলাম।
    কম বয়সী ছোট ছোট মা’সুম ছাত্রীদের উপর গুলি আর বোমা বর্ষণ, মসজিদে প্রবাহিত রক্ত, আল্লাহর যমীনে আল্লাহর ঘরে আল্লাহর কিতাবের বেহুরমতী। মোট কথা, বর্ণনাতীত এরকম জুলুমের কথা শুনে শ্রোতাও ছটপট করতে থাকে। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে এরকম ভয়ানক জুলুম মূর্তিপূজক বা খৃষ্টানদের সামনে সেজদাকারী বাহিনী করেনি। বরং কালিমা পাঠকারী, নামাযী এবং রোযাদার বাহিনী করেছে। এটা কোন অপরাধে? শরিয়ত কার্যকর করার ধ্বনি-ই যা সর্বদা ইংরেজদের তৈরী করা এই সেনাবাহিনীর চোখে কাঁটার মতো বিঁধত। কাফেরদের কাছে আমাদের ক্ষুধার্ত থাকা, সেজদা করা, কুরআন হেফজ করা এবং কা’বার তওয়াফ করাতে কোন অসুবিধা নেই। যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে, এমন জীবন বিধান বা সংবিধান যা তাদের জুলুমের ঠিকাদারীকে খতম করে মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে বের করে দেয় এবং এক আল্লাহ যার কোন শরীক নেই তার গোলামিতে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
    অপরদিকে যদি আমরা সকল নর-নারী আল্লাহ তায়ালার বিধান কায়েমের জন্য নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা না করি তাহলে এই আশংকা আছে যে, আমাদের ঈমান আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের দরবারে কবুল হবে না। যদি জেনে বুঝে হক্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই তাহলে হয়ত তা আমাদেরকে মুনাফেক বানিয়ে দেবে। আর এটাও স্মরণ রাখা দরকার যে, মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের দরজায় থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ, কিছুদিন এভাবে আমাদের কথা-বার্তা চলতে থাকে। আমাকে জানানো হলো যে, যখন সেনাবাহিনী লাল মসজিদে আগুন ও গোলা বর্ষণ করেছিল তখন সাতদিন পর্যন্ত আমাদের নিকট কোন পানি বা খাদ্য-দ্রব্য ছিল না। একদিন হঠাৎ এক কামরায় মধুর অনেক বোতল দেখা গেল। আমরা আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করলাম এবং পেট ভরে খেয়ে নিলাম। একদিন সাত আট বছরের একটা ছেলে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের জন্য বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে আসল এসে বলল, বাহির থেকে ভাইরা পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা বোনেরা কিভাবে খাবো যখন আমাদের ভাইরা ক্ষুধার্ত আছেন। আমরা ছেলেটাকে ভাইদের নিকট পাঠিয়ে দিলাম। সে এখনো আমাদের কাছ থেকে দৃষ্টির আড়াল হয়নি। হঠাৎ শক্তিশালী একটা বুলেট এই শিশু মুজাহিদের গায়ে এসে লাগল। সে রক্তে গড়াগড়ি করতে করতে আমাদের চোখের সামনে শহীদ হয়ে গেল। আমি তার সাথে( জামেয়া হাফসার আলেমার সাথে) আমার মাঝে যে ভয়, দৃঢ় বিশ্বাসহীনতা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো ছিল তা নিয়ে আলোচনা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি উত্তম পদ্ধতিতে আমার ইসলাহ করেছেন এবং আমার হিম্মতকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আমাকে নিজের ফোন নাম্বার এবং ঠিকানা দিয়েছেন। আমি পাকিস্তান এসে কয়েকবার তাকে ফোন করেছি এবং তার ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজেছি। কিন্তু তার কোন চিহ্ণই খুঁজে পেলাম না। আমি আব্বাকে ফোন করলাম এবং বললাম আমি একেবারেই দেশে চলে আসবো। তারা খুবই খুশী হয়েছিলেন যে, তাদের মেয়ে এখন সব সময়ের জন্য তাদের আশ্রয়ে চলে আসবে। কিন্তু সাথে সাথে আমার ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তিত ছিল। আমার আলেমা বোন বাহিরের সফর শেষ করে এসে গেছেন। তিনি আমার ফয়সালায় খুবই খুশি হয়েছিল। যে দিন তিনি এসেছিল তার দ্বিতীয় দিন আমার পাকিস্তান ফেরার ফ্লাইট ছিল।
    আজ যদি আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি যে, ঐ জযবাটা কোন জযবা ছিল যা আমাকে অন্য দেশ থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে খোরাসান হিজরত করতে বাধ্য করে দিল? তাহলে উত্তর আসবে ‘দ্বীনি গাইরাত’ বা দ্বীনি মর্যাদাবোধ। তাহলে আমি কিভাবে ঐ কাফের রাষ্ট্রে থাকতে পারি যে রাষ্ট্র ইরাক, আফগানিস্তান এবং ফিলিস্তিনে মুসলিমদেরকে গণহারে হত্যা করছে। যারা প্রকাশ্যভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে “ক্রুসেড যুদ্ধ” নাম দিচ্ছে। আর পাকিস্তানতো কাফেরদের কেনা গোলাম এবং তাদের প্রথম সঙ্গদানকারী। আমার দ্বীনি মর্যাদাবোধ তা সহ্য করতে পারেনি যে, আমি এমন দেশে থাকবো যেখানের বাচ্চারাও কোন না কোন ভাবে ইসলামের বিরুদ্ধের এই যুদ্ধে অংশীদার। আর এটা আমার দ্বীনি গাইরাতেরও তাকাজা ছিল। সুতরাং এটা কিভাবে সম্ভব যে, আমার বোনের ইজ্জত পদদলিত হবে এবং ভাইদের লাশগুলো পড়তে থাকবে। আর আমি তাদের হত্যাকারীদের আশ্রয়ে জীবন যাপন করবো?
    মোট কথা, যদি গুনাহগার এক নারীর নিজ রবের ব্যাপারে এত গায়রাত হয় তাহলে একটু চিন্তা করুন যে, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের এরকম বান্দীর উপর কতটা গায়রত হতে পারে? আজ আমি সেনাবাহিনীর সাথে যে কোন ভাবে সম্পৃক্ত নারীদেরকে বার্তা হিসাবে বলবো যে, একটু চিন্তা করুন! আপনি বা আপনার প্রিয়জন কী কারণে দাজ্জালের আর্মির অংশ হয়েছে? ডলারের মোহে কি চিরস্থায়ী আগুনে জ্বলার উপর সবর করতে হবে? আমেরিকা আল্লাহর দুশমন। আর আল্লাহর দুশমন কোন অবস্থাতেই আমাদের বন্ধু হতে পারে না “ আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্য শত্রæতা” আমাদের আক্বিদার অংশ। যদি এতে সমস্যা হয় তাহলে আক্বীদা অসম্পূর্ণ হবে। আক্বীদায় সমস্যা হওয়ার পর চাই সেজদা করতে করতে কপালকে মেহরাব বানিয়ে নেয়া হোক বা রমজানে রোযা রেখে বা হজ্ব করতে করতে হাজ্বীও হয়ে যাক তাহলেও তার সকল আমাল মরীচিকার মতো।
    এটিও লক্ষণীয় যে, যখন সর্বত্র মুসলিমরা লাঞ্ছিত এবং নারীদের উপর নির্যাতনের পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে! কত ফাতিমা আবু গারিব কারাগার থেকে মুসলিম ভাইদের সাহায্য চাইতে চাইতে চুপ হয়ে গেছে! কালিমা পাঠকারীদেরকে গৃহ থেকে বের করে এখন গৃহহীন করা হচ্ছে! সম্মানকে জানাযা দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে! আত্মমর্যাবোধকে পদদলিত করা হচ্ছে। কুরআন এবং মসজিদসমূহকে শহীদ করা হচ্ছে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাঃ এর অবমাননা করা হচ্ছে। পুরো দুনিয়া দ্বীনে ইসলামকে খতম করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মুসলমানকে শুধু এই অপরাধে যে, সে এক আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করে এবং সে প্রত্যেক কদমে আল্লাহর বিধান মানতে চায় তাকে নির্যাতনের জন্য নিশানা বানানো হয়েছে। এত নাজুক পরিস্থিতেও কি আমরা উঠে দাঁড়াবো না? এবং জালেমদেরকে বাধাঁ দিবো না? এখনো কি ক্বিতালের সময় হয়নি?
    আপনার চিন্তা করা উচিত যে, আপনার পিতা, আপনার ভাই, আপনার স্বামী এবং আপনার ছেলের অন্ধ অনুসরণ, যখন তারা সুস্পষ্টভাবে ইসলাম ধ্বংসকারী বাহিনীর অংশ হয়ে কাজ করছে আপনাকেও তাদের গুনাহের সমান সমান অংশীদার বানিয়ে দেবে। আল্লাহর কাছে আমরা এর ফলে কোন ভাবেই আযাব থেকে বাঁচতে পারবো না। আজ যদি পুলিশ স্বামী ঘরে টাকা না আনে তাহলে তাকে স্ত্রী অবশ্যই জিজ্ঞেস করে যে, কেন টাকা আনেনি? কিন্তু স্বামী যখন ওয়াজিরিস্তানে মুসলমান নারী এবং বাচ্চাদের লাশের স্তুপ বানিয়ে ফেলে, আমেরিকার মনিবদের সামনে নির্বোধ হয়ে যায়, আল্লাহ ও তার রসূল সাঃ এর সাথে শত্রæতা ক্রয় করে নেয় তখন স্ত্রী তাকে প্রশ্ন করে না যে, তুমি কেন এমন করলে? অথচ প্রথম “কেন ” শুধু দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত আর দ্বিতীয় “কেন” দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত।
    চলবে...।


    ১/ খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৫)
    https://dawahilallah.com/showthread....%26%232539%3B)
    ২/ খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৪)
    https://dawahilallah.com/showthread....-%26%232538%3B
    ৩/ খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৩)
    https://dawahilallah.com/showthread....-%26%232537%3B
    ৪/ খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-২)
    https://dawahilallah.com/showthread....-%26%232536%3B
    ৫/ খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-১)
    https://dawahilallah.com/showthread....-%26%232535%3B
    একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

  • #2
    জাযাকাল্লাহ ভাই। সবগুলো অংশ পড়লাম। আলহামদু লিল্লাহ অনেক উপকারী। পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম।

    Comment


    • #3
      মাশা'আল্লাহ। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
      প্রিয় ভাই, পর্বগুলো একত্রে একটা পিডিএফ ফাইল করে বের করলে আরো ব্যপক উপকার হতো। জাযাকুমুল্লাহ।
      ইসলামের জন্যে এমন লোকদের প্রয়োজন, যারা এই দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে থাকবে।
      =আল্লামা জুনাঈদ বাবুনগরী হাঃফিঃ

      Comment


      • #4
        আল্লাহু আকবার! জাযাকাআল্লাহ্ আখি খুব ভালো,
        আল্লাহ আমাদের সকল মিডিয়ার ভাইদের হেফাযত করুন আমিন।

        Comment


        • #5
          Originally posted by Muhammad Jainul Abedin View Post
          মাশা'আল্লাহ। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
          প্রিয় ভাই, পর্বগুলো একত্রে একটা পিডিএফ ফাইল করে বের করলে আরো ব্যপক উপকার হতো। জাযাকুমুল্লাহ।
          ইনশাআল্লাহ, সবগুলো পর্ব শেষ হলে পিডিএফ দেওয়া হবে।
          একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

          Comment


          • #6
            আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
            আমি চিন্তা করছিলাম যে, আমাদের সারাটা জীবন ‘দুনিয়া কী বলবে’ এই লাল চিহ্ণটা লেগে থাকে। যদি আমাদের এই অনুভূতি হতো যে, ‘আল্লাহ কী বলবেন এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কিসে?’।

            আল্লাহ তা'আলা আমাদের এই পূণ্যবতী বোনের মত চিন্তা করার তাওফিক দিন আমিন।

            Comment


            • #7
              আলহামদুলিল্লাহ, সব পর্বগুলোই মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। মাশাআল্লাহ, খুব ভাল লাগে।
              আল্লাহ তা‘আলা আপনার এই খেদমতকে কবুল করুন ও তাতে বারাকাহ দান করুন। আমীন
              আশা করি সামনের পর্বগুলো খুব দ্রুতই পাব। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীকদাতা।
              ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকেও ঈমানী গায়রত দান করুন! আল্লাহুম্মা আমীন
              “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

              Comment


              • #8
                আল্লাহ আমাদের বোনদের কবুল করুন আমীন
                ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

                Comment


                • #9
                  আল্লাহ তায়ালা ভাইকে অফুরন্ত জাযা খায়ের দান করুক! এত সুন্দর একটা উপহার দেওয়ার জন্য

                  Comment


                  • #10
                    আল্লাহ তায়ালা ভাইকে অফুরন্ত জাযা খায়ের দান করুক! এত সুন্দর একটা উপহার দেওয়ার জন্য।
                    প্রিয়বোন তোমার গ্রহন পথই যেন হয় আমাদের অনন্ত গন্তব্য।

                    Comment


                    • #11
                      খোরসানেই হবে আমেরিকার কবর রচনা ইনশাআল্লাহ।

                      বোন তোমার অনেক অনেক শুভ কামনা, আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফীক দান করুক তোমার গ্রহন করা পথে আমাদের অবিচল থাকার আমিন

                      Comment


                      • #12
                        জাযাকাল্লাহ খাইরান ! ভাই সবগুলো পর্বের লিংক হলে ভালো হতো ৷

                        Comment


                        • #13
                          আলহামদুলিল্লাহ, ছুম্মাহ আলহামদুলিল্লাহ খুবই সুন্দর আলোচনা।
                          প্রিয় ভাই! সবগুলো পর্ব একত্রে পিডিএফ চাই,ইনশাআল্লাহ।
                          ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

                          Comment

                          Working...
                          X