Announcement

Collapse
No announcement yet.

সংশয় নিরসন সিরিজ_ জিহাদ সিরিজ_ । তৃতীয় সংশয়: জিহাদ বৈধ হওয়ার জন্য খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সংশয় নিরসন সিরিজ_ জিহাদ সিরিজ_ । তৃতীয় সংশয়: জিহাদ বৈধ হওয়ার জন্য খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধা



    সংশয় নিরসন সিরিজ, জিহাদ সিরিজ। তৃতীয় সংশয়: জিহাদ বৈধ হওয়ার জন্য খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্ব কি জরুরি?


    ★ এক শ্রেণির দরবারি মৌলবি বিপুল উৎসাহে জিহাদ প্রসঙ্গে প্রায়ই এই সংশয় ছড়ায় যে, খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া জিহাদ নেই। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব ছাড়া ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক প্রচেষ্টায় জিহাদ করা বৈধ নয়। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বাইরে গিয়ে কোনো ধরনের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড চালানো জিহাদ নয়, বরং সন্ত্রাস। এই ধরনের কার্যক্রমে কেউ মারা গেলে সে শহিদ হবে তো অনেক দূরের কথা, উল্টো জাহান্নামে যাবে। আফগান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, সোমালিয়াসহ আফ্রিকার বিস্তৃত অঞ্চলে যে জিহাদ চলছে তা অবৈধ জিহাদ।
    ♦সংশয় নিরসন♦

    * কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল, শরিয়াহর মূলনীতি, সালাফের কর্মনীতি ও উম্মাহর ইজমা অনুযায়ী এ মতের কোনো ভিত্তি নেই।
    "" এখানে আমরা কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও সালাফের কর্মনীতির আলোকে সংশয়টি নিরসন করার প্রয়াস পাব।

    {{১}}
    " জিহাদের নির্দেশ সম্বলিত আয়াত ও হাদিসগুলো আম ও ব্যাপক অর্থে এসেছে। সেখানে কোনো ধরনের শর্তারোপ করা হয়নি। বরং আয়াত ও হাদিসগুলো একসঙ্গে সকল মুমিন মুসলমানকে সম্বোধন করে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
    وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللّهَ سَمِعٌ عَلِيم
    " তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো, আর জেনে রাখো, আল্লাহ সবকিছু শোনেন। (সূরা বাকারা:২৪৪)
    يَا أَيُّهَاالَّذِينَ آمَنُواقَتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
    " হে মুমিনগণ! কাফেরদের মধ্যে যারা তোমাদের কাছাকাছি রয়েছে তাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাও। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখবে, আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে রয়েছেন।'
    (সূরা তাওবা: ১২৩)
    وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّی لَاتَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ
    " তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষণ না ফিতনা (শিরক ও কুফর) দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।' (সূরা আনফাল: ৩৯)
    ★★ এছাড়াও জিহাদের নির্দেশসূচক যত আয়াত কুরআনে রয়েছে কোথাও খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের শর্ত উল্লেখ করা হয়নি।
    ** অনুরুপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
    جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأََمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ
    " তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো তোমাদের সম্পদ, জীবন ও জবান দ্বারা।'
    ( সুনানু আবি দাউদ: ২৫০৪)
    ** ইমাম ইবনে হাজম রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    قَالَ تَعَالَ فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ وَهَذَا خِطَابٌ مُتَوَجِّهٌ إِلَیةكُلِّ مُسْلِمٍ فَكُلُّ أَحَدٍ مَأْمُوٌ بِالْجِهَادِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ أَحَدٌ
    "" এই আয়াতে فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সকল মুসলমানকে সম্বোধন করেছেন। সুতরাং প্রত্যেকেই জিহাদের ব্যাপারে আদিষ্ট। যদিও তার সঙ্গে কেউ না থাকে।' ( আল-মুহাল্লাহ: ৭/৩৫১)
    ** ইমাম ইবনে কুদামা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَالْجِهَادُ فَرْضٌ عَلَی الْكِفَايَةِ فَالْخِطَابُ فِيةابْتِدَائِهِ يَتَنَاوَلُ الْجَمِيعَ كَفَرْضِ الْأعْيَانِ ثُمَّ يَخْتَلِفَانِ فِي أَنَّ فَرْضَ الْكِفَايَةِ يَسْقُطُ بِفِعْلِ بَعْضِ النَّاسِ لَهُ وَفَرْضُ الْأَعْيَانِ لَايَسْقُطُ عَنْ أَحَدٍ بِفِعلِ غَيْرِهِ
    " জিহাদ আমলটি ফরজে কিফায়া.....। প্রথমে ফরজে আইনের মতো এটিতেও সকলের প্রতিই সম্বোধন করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উভয়ের মাঝে এভাবে পার্থক্য হয়ে যায় যে, ফরজে কিফায়া কতক মানুষের সম্পাদন করার দ্বারাই আদায় হয়ে যায়, আর ফরজে আইন একজনের সম্পাদন করার দ্বারা আরেকজন থেকে মাফ হয় না। ' (আল-মুগনি: ১০/৩৬৪)
    ** আল্লামা আব্দুর রহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَلَا رَيْبَ أَنَّ فَرْضَ الْجِهَادِ بَاقٍ إِلَی يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَالْمُخَاطَبُ بِهِ الْمُؤْمِنُوْنَ فَإِذَا كَانَتْ هُنَاكَ طَائِفَةٌ لَهَا مَنْعَةٌ وَجَبَ عَلَيْهَا أَنْ تُجَاهِدَ فِیْ سَبِيْلِ اللهِ بِمَا تَقْدِرُ عَلَيْهِ لَا يَسْقُطُ عَنْهَا فَرْضُهُ بِحَالٍ وَلَا عَنْ جَمِيْعِ الطَّوَائِفِ
    " এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জিহাদের ফরজিয়্যাত ( অবশ্যিকতা) কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে এবং সকল মুমিনকেই সে ব্যাপারে সম্বোধন করা হয়েছে। সুতরাং যদি কোথাও এমন কোনো সংঘবদ্ধ দল থাকে, যাদের প্রতিরক্ষা শক্তি রয়েছে তাহলে তাদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর পথে জিহাদ করা ওয়াজিব। এ ফরজিয়্যাত তাদের থেকে এবং অন্যান্য সকল দল থেকে কোনো অবস্থাতেই রহিত না। '
    ( আদ্দুরারুস সানিয়্যা: ৭/৯৮)
    ★★ রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস ফকিহগণের মতামত থেকেও বোঝা গেল, জিহাদ যখন ফরজে আইন হয়ে যায় তখন খলিফা থাকে বা না থাকার প্রশ্ন নেই। যদি খলিফা বিদ্যমান থাকে, তবে তার ওপর ফরজে আইন সবাইকে নিয়ে জিহাদের পতাকা উত্তোলন করা। অন্যথায় তিনি খলিফা হিসাবে থাকার বৈধতা হারাবেন। আর যদি খলিফা না থাকে, তবে শৃঙ্খলার জন্য নিজেদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে যোগ্য তাকে আমীর বানিয়ে তার অধীনে সবাইকে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

    {{২}}
    ** সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উবাদাহ বিন সামিত রাযিআল্লাহু আনহু বলেন:
    فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا ٭ أَنْ بَايَعَنَا عَلَی السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ٭ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا٭ وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةً عَلَيْنَا٭ وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الأََمْرَ أَهْلَهُ٭ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا٭ عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ
    *রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছ থেকে যেসব বিষয়ে ওয়াদা নিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল আমরা আমাদের সুখে ও দুঃখে, সচ্ছলতা ও দৈন্যতায় এবং নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সময়ও আনুগত্য করব। আরও ছিল, আমরা শাসকদের সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বন্দ্বে জড়াবো না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে এমন সুস্পষ্ট কুফুরি দেখতে পাই যার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো দলিল আমাদের আছে।' ( সহিহ বুখারি: ৭০৫৬)
    ## এই প্রসঙ্গে কাজি ইয়াজ রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    أَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ عَلَی أَنَّ الْإمَامَةَ لَا تَنْعَقِدُ لِكَافِرِ وَعَلَی أَنَّهُ لَوْطَرَأَعَلَيْهِةالْكُفْرُ انْعَزَلَ قَالَ وَكَذَا لَوْتَرَكَ إِقَامَةَ الصَّلَوَاتِ وَالدُّعَاءَ إِلَيْهَا ٭ فَلَوْطَرَأَ عَلَيْهِ كُفْرٌ وَتَغْيِيرٌ لِلشَّرْعِ أَوْبِدْعَةٌ خَرَجَ عَنْ حَكُمِ الْوِلَايَةِ وَسَقَطَتْ طَاعَتُهُ وَوَجَبَ عَلَی الْمُسْلِمِينَ الْقِيَامُ عَلَيْهِ وَخَلْعُهُ وَنَصْبُ إِمَامٍ عَادِلٍ إِنْ أَمْكَنَهُمْ ذَلِكَ فَإِنْ لَمْ يَقَعْ ذَلِكَ إِلَّا لِطَائِفَةٍ وَجَبَ عَلَيْهِمُ الْقِيَامُ بِخَلْعِ الْكَافِرِ
    "" এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের ইজমা হয়েছে যে, কাফির কখনো মুসলমানদের শাসক হতে পারে না। এই ব্যাপারেও ইজমা হয়েছে যে, যদি কোনো নমুলিম শাসক কাফির হয়ে যায়, তবে সে শাসকের পদ থেকে বহিস্কৃত হয়ে যায়। কোনো মুসলিম শাসক যদি সালাত কায়েম করা ছেড়ে দেয়, সালাতের দিকে আহ্বান করা ছেড়ে দেয়, তার ক্ষেত্রেও একই কথা।* শাসকের কাছ থেকে যদি কোনো কুফুর বা বিদআত পাওয়া যায় কিংবা সে যদি শরিয়ার কোনো হুকুম পরিবর্তন করে, তবে সে শাসকের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায়, তার আনুগত্য বাতিল হয়ে যায় এবং মুসলমানদের ওপর ফরজ হয়ে যায় তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, তাকে শাসন ক্ষমতা থেকে সরিয়ে কোনো ন্যায়পরায়ণ শাসক নিযুক্ত করা। যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। যদি কেবল বিশেষ কোনো দলের এই ক্ষমতা থাকে, তবে ওই দলের মানুষের ওপর ফরজ হয়ে যায়, কাফির শাসককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া।'
    (আল মিনহাজ লিল ইমামিন নববি: ১২/২২৯)
    ★★ উপরোক্ত হাদিস ও তাঁর ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট হলো, কখনো যদি মুসলিম শাসক কাফের হয়ে যায় তবে তার বিরুদ্ধেও জিহাদ করতে হবে। তাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে হটিয়ে নতুন কোনো খলিফা নিযুক্ত করতে হবে। এখন যারা জিহাদের জন্য খলিফার নেতৃত্বকে শর্ত মনে করে, তারা খলিফা যদি কাফের হয়ে যায় তখন কী করবেন? তখন তো খোদ খলিফার বিরুদ্ধেই জিহাদ করতে হবে? অতএব, জিহাদের জন্য খলিফার বিদ্যমানতা ও নেতৃত্বকে শর্ত করা সুস্পষ্ট একটি বিভ্রান্তি। আর বর্তমান জামানায় যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে, তারা কি মুসলমানদের শরয়ি খলিফা? প্রতিটি দেশের জন্য আবার আলাদা আলাদা খলিফা! তাদের কাছ থেকে কি প্রতিনিয়ত শত শত স্পষ্ট কুফুরি পাওয়া যাচ্ছে না? তারা কি আল্লাহর শরিয়াহকে পরিবর্তন করেনি? তারা কি আল্লাহর আইনকে ছুঁড়ে ফেলে মানবরচিত বিধান অনুযায়ী বিচার করছে না? সুদ, ব্যভিচার ও মদকে কি তারা হালাল করেনি? তারা কি জিহাদের সব পথ বন্ধ করে দেয়নি? ইমান ও কুফরের চলমান লড়াইয়ে তারা কি কুফরের শিবিরে যোগদান করেনি? তারা জিহাদ ও মুজাহিদদের ধ্বংস করার জন্য আটঘাট বেঁধে নেমেছে, জিহাদ করার জন্য তাদের অনুমতি নিতে হবে?!

    {{৩}}
    জিহাদ দুই প্রকার : প্রথম প্রকার হল, আক্রমণাত্মক জিহাদ।
    ★★ আর তা হলো, শত্রুভূমিতে গিয়ে আক্রমণ করা। এ প্রকারের জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্যও খলিফা বিদ্যমান থাকা শর্ত নয়। তবে যখন আমির জিহাদের নেতৃত্বে থাকবে তখন তার অনুমতি ও সিদ্ধান্ত ব্যতীত অগ্রবর্তীতা ও স্বেচ্ছাচারিতা করা যাবে না। কেননা,তাকে এ বিষয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই তার কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করা ওয়াজিব। তবে তা জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয়। তার অনুমতি ছাড়া যে জিহাদ করবে সে গুনাহগার হবে ঠিকই, কিন্তু তার জিহাদ শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা, যদি কখনো খলিফা না থাকে বা অনুপস্থিত থাকে কিংবা নিহত হয়ে যায় তাহলেও জিহাদ চালু রাখতে হবে, বন্ধ করার বিধান নেই।
    ** ইমাম ইবনে কুদামা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    فَإِنْ عُدِمَ الْإِمَمُ٭ لَمْ يُؤَخَّرْ الْجِهَادُ٭ لِأَنَّ مَصْلَحَتَهُ تَفُوتُ بِتَأْخِيرِهِ وَإِنْ حَصَلَتْ غَنِيمَةٌ٭ قَسَمَهَا أَهْلُهَا عَلَی مُمجَبِ الشَّرْعِ
    "" যদি খলিফা না পাওয়া যায় তাহলে জিহাদকে বিলম্বিত করবে না। কেননা, বিলম্ব করার দ্বারা জিহাদের ফায়েদা নষ্ট হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে যদি কোনো গনিমত অর্জিত হয় তাহলে তা শরিয়তের আহকাম মোতাবেক গনিমতের হকদারদের মাঝে বণ্টন করে দেবে।' (আল-মুগনি: ১০/৩৭৫)
    ♦♦ সুতরাং যদি খলিফা বিদ্যমান থাকা জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্তই হতো, তাহলে তা বন্ধ করে রাখা এবং খলিফা পাওয়া যাওয়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা ওয়াজিব হতো এবং মুসলমানদের কল্যাণের স্বার্থে তা চালিয়ে নেওয়ার অবকাশ থাকত না। অনুরূপভাবে গনিমত ভক্ষণও তখন বৈধ হতো না।
    তেমনিভাবে যখন খলিফা বিদ্যমান থাকবে ঠিকই, কিন্তু মুজাহিদদের জন্য তার কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করা অসম্ভাপ্রায় হয়ে যাবে, তখনও জিহাদ বিলম্বিত করা ওয়াজিব হতো। অথচ প্রয়োজনের তাগিদে খলিফার অনুমতি ছাড়াই তাদের জন্য তা চালিয়ে যাওয়া বৈধ।
    ** ইমাম ইবনে কুদামা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    فَإِنَّهُمْ لَا يَخْرُجُونَ إِلَّا بِإِذْنِ الْأَمِيِ٭ لِأَنَّ أَمْرَالْحَرْبِ مَوْكُولٌ إِلَيهِ٭ إلَّا أَنْ يَتَعَذَّرَ اسْتِئْذَانُهُ لِمُفَاجَأَةِ عَدُوِّهِمْ لَهُمْ٭ فَلَا يَجِبُ اسْتِئْذَانُهُ٭ لِأَنَّ الْمَصْلَحَةَ تَتَعَيَّنُ فِي قِتَالِهِمْ وَالْخُرُوجِ إلَيْهِ٭ لِتَعَيُّنِ الْفَسَادِ فِي تَرْكِهِمْ
    " তারা খলিফার অনুমতি ছাড়া বের হবে না। কেননা যুদ্ধের বিষয়টি তার দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। তবে যদি শত্রুর আকস্মিক হামলার কারণে তার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া অসম্ভবপ্রায় হয়ে যায়, তাহলে আর অনুমতি গ্রহণের আবশ্যকীয়তা থাকবে না। কেননা, শত্রুদের ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে সুনিশ্চিত ক্ষতি থাকায় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা ও জিহাদে বের হওয়ার মাঝেই মাসলাহাত বা কল্যাণ রয়েছে।'(আল-মুগনি: ১০/৩৯০)
    ** সুতরাং যদি খলিফার বিদ্যমান থাকা ও তার অনুমতি গ্রহণ করা আক্রমণাত্মক জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্তই হতো তাহলে তার বিদ্যমান না থাকার সময় জিহাদ শুদ্ধ হতো না, অনুরূপ বিদ্যমান থাকার সময়ও প্রয়োজনের সময় অনুমতি ছাড়া জিহাদ শুদ্ধ হতো না। কেননা শর্ত তাকে বলা হয়, যার শূন্যতায় যার জন্য তাকে শর্ত করা হয়েছিল তার শূন্যতাও আবশ্যক হয়ে পড়ে। অথচ এখানে এই দুই অবস্থায় আক্রমণাত্মক জিহাদকে ফুকাহায়ে কেরাম নাকচ করেননি। এখান থেকে বুঝা গেল খলিফা বিদ্যমান থাকা এ প্রকারের জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয়; বরং উভয় অবস্থাতেই মূল বিবেচ্য বিষয় হলো, মুসলমানদের কল্যাণ নিশ্চিত করা ও ক্ষতি বিদূরিত করা; যেমনটি ইবনে কুদামা রহিমাহুল্লাহ কারণ দর্শিয়েছেন।

    ♦দ্বিতীয় প্রকার হলো,প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ।♦
    ** এই প্রকারে খলিফা থাকাটা শর্ত কিনা, তা আরও অধিকতর স্পষ্ট ও পরিস্কার। কেননা, এ প্রকারের জিহাদ ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোনো শর্তই নেই; বরং প্রত্যেকের ওপরই তার সাধ্যমতো প্রতিরোধ করা ওয়াজিব। সুতরাং সন্তান তার বাবার কাছে, স্ত্রী তার স্বামীর কাছে, ঋণগ্রহীতা তার ঋণদাতার কাছে অনুমতি চাইবে না। অথচ এরা সকলেই অনুমতি ও আনুগত্যে আমীরের তুলনায় বেশি হকদার ছিল। তা সত্ত্বেও এ মূহূর্তে তাদের হক বাতিল হয়ে গেছে। কেননা, জিহাদ এখন সকলের ওপরই ফরজে আইন। তাই এখন খলিফার বিদ্যমানতা শর্ত হওয়া তো দূরের কথা; বরং খলিফা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তার থেকে অনুমতি গ্রহণ করা শর্ত নয়।
    ** শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَأَمَّا قِتَالُ الدَّفْعِ عَنِ الْحُرْمَةِ وَالدِّيْنِ فَوَاجِبٌ إِجْمَاعًا٭ فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِيْنَ يُفْسِدُ الدِّيْنَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ مِنْ دَفْعِهِ٭ فَلَا يُشْتَرَطٌ لَهُ شَرْطٌ بَلْ يُدْفَعُ بِحَسَبِ الْإِمْكَانِ
    "" মুসলমানদের মর্যাদা ও দ্বীনের হিফাজতের জন্য আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করা সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ। যেই আগ্রাসী শত্রু মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টিকে ধ্বংস করে, ইমান আনার পর তাকে প্রতিরোধ করার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো ফরজ নেই। আর এর জন্য কোনো শর্তও প্রযোজ্য নয় ; বরং সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে হবে। ' (আল-ফাতাওয়াল মিসরিয়্যা: ৪/৫০৮)
    ★ ইমাম ইবনে হাজাম রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    إِلاَّ أَنْ يَنْزِلَ الْعَدُوُّ بِقَوْمٍ مِنْةالْمُسْلِمِينَ فَفَرْضٌ عَلَی كُلِّ مَنْ يُمْكِنُهُ إِعَانَتُهُمْ أَنْ يَقْصِدَهُمْ مُغيْثًا لَهُمْ
    " তবে যদি শত্রুরা মুসলমানদের কোনো জনগোষ্ঠর ওপর আক্রমণ করে বসে, তাহলে তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম প্রত্যেকের ওপর তাদের সাহায্যার্থে তাদের উদ্দেশে যুদ্ধেযাত্রা ফরজ হয়ে যায়।' (আল-মুহাল্লা: ৭/২৯২)
    * ইমাম আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَمَعْلُمٌ فِي اعْتِقَادِ جَمِيْعِ الْمُسْلِمِيْنَ أَنَّهُ إِذَا خَافَ أَهْلُ الثُّغُورِ مِنْ الْعَدُوِّ٭ وَلَمْ تَكُنْ فِيهِمْ مُقَاوِمَةٌ لَهُمْ فَخَافُوا عَلَی بِلَادِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَذَرَارِبِّهِمْ أَنَّ الْفَرْضُ عَلَی كَافَّةِ الْأُمَّةِ أَنْ يَنْفِرُ إِلَيْهِمْ مَنْ يَكُفُّ عَادِيَتَهُمْ عَنْ الْمُسلِمِينَ٭ وَهَذَا لَا خِلَافَ فِيهِ بَيْنَ الْأُمَّةِ
    "" সমস্ত মুসলমান পরম বিশ্বাসে এই কথা জানে যে, যখন সীমান্তবাসীরা শত্রুর পক্ষ থেকে আক্রমণের আশষ্কা করে এবং তাদের কাছে প্রতিরোধ-ক্ষমতা না থাকার ফলে তারা নিজেদের জান, সন্তান ও শহর নিয়ে শষ্কাবোধ করে তখন সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ওপর শত্রু অভিমুখে যুদ্ধযাত্রা করে মুসলমানদের থেকে তাদের জুলুম প্রতিহত করা ফরজ হয়ে যায়। আর এ ব্যাপারে উম্মাহর কারও মাঝে কোনো দ্বিমত নেই।'( আহকামুল কুরআন: ৪/৩১২)
    ★ এটাই হচ্ছে জিহাদ ফরজে আইন হওয়ার মর্ম যে, যখনই সময় হবে তাৎক্ষণিকভাবে বেরিয়ে পড়তে হবে। সুতরং যদি তা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কোনো শর্ত থাকত, যেমন: খলিফা বিদ্যমান থাকা বা তার অনুমতি গ্রহণ করা, তাহলে শত্রুরা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করার সময় কখনোই জিহাদ ফরজে আইন হতো না। অথচ উম্মাহর কোনো ফকিহই এ কথার প্রবক্তা নন।
    *এই করণেই ইমাম মাওয়ারদি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    فَرْضُ الْجِهَاد عَلَی الْكِفَايَةِ يَتَوَلَّاهُ الْإِمَمُ مَالَمْ يَتَعَيَّنْ
    " ফরজে কিফায়া জিহাদ পরিচালনা করবেন খলিফা, যতক্ষণ না তা ফরজে আইন হয়ে যায়।'
    (আল-ইকনা: ১৭৫)

    ★★ এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেলো, জিহাদ আক্রমণাত্মক হোক বা আত্মরক্ষামূলক কোনো প্রকার জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য খলিফার বিদ্যমানতা শর্ত নয়। বিশেষ করে আত্মরক্ষামূল জিহাদে খলিফার শর্ত জুড়ে দেয়া ভয়াবহ গোমরাহি।
    {{৪}}
    ** ফিকহের কিতাবাদিতে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে জিহাদ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত, জিহাদ কর ওপর ওয়াজিব হবে এবং কখন ওয়াজিব হবে সবর বিষয়ই আলোচিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে খলিফা বিদ্যমান থাকাকে শর্ত করা হয়নি।
    * বুখারির বর্ণনায় এসেছে :
    مَابَالُ أَقْوَامٍ يَشْترِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ مَنْ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَلَيْسَ لَهُ وَإِنْ اشْتَرَطَ مِائَةَ شَرْطٍ
    "লোকদের কী হলো তারা এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই! যে ব্যক্তি এমন শর্ত আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই সে ওই শর্তের হকদার হবে না ; যদিও সে একশত শর্ত আরোপ করে।' (সহিহ বুখারি: ২৭৩৫)
    * আব্দুর রহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব রহিমাহুল্লাহ এই শর্তটির অসারতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
    بِأَيِّ كِتَابٍ أَمْ بِأَيِّ حُجَّةٍ أَنَّ الْجِهَادَ لَايَجِبُ إِلَّا مَعَ إِمَامٍ مُتْبَعٍ؟٭ هَذَا مِنَ الْفِرْيَةِ فِيْ الدِّيْْنِ وَالْعُدُوْل عَنْ سَبِيْلِِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَلْأَدِلَّةُ عَلَی بُطْلَانِ هَذَا الْقَوْلِ أَشْهَرُ مِنْ أَنْ تُذْكَرَ مِنْ ذَلِكَ عُمُوْمُ الْأَمْرِ بِالْجِهَادِ وَالتَّرغِيْبِ فِيْهِ وَالْوَعِيْدِ فِيْ تَرْكِهِ
    " কোন কিতাব বা কোন দলিল দ্বারা এটা প্রমাণিত হলো যে, আমির না থাকলে জিহাদ ওয়াজিব হয় না? এটা দ্বীনের মধ্যে মিথ্যা সংযোজন ও মুসলমানদের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার নামান্তর। এ বক্তব্যটির অসারতার প্রমাণাদি এতটাই প্রসিদ্ধ যে, তা আর উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না। তন্মধ্যে একটি হলো, জিহাদের আদেশ ও উৎসাহমূলক আয়াত-হাদিসগুলো এবং জিহাদ ত্যাগের নিষেধ ও হুঁশিয়ারিমূলক আয়াত-হাদিসগুলোর ব্যাপকতা।' ( আদ্দুরারুস সানিয়্যা: ৭/৯৭)
    * সুতরাং জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে, চাই খলিফা বিদ্যমান থাকুক বা না থাকুক।*
    ♦ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ,, ইবনে কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ এবং অন্যান্য অনেক ইমাম দলিল দিয়ে থাকেন আবু বাসির রহিমাহুল্লাহ ও তাঁর সঙ্গীসাথী কর্তৃক মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও পথরুদ্ধ করার ঘটনা দিয়ে। যে ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বীরত্বের প্রশংসা করে তাঁর শানে ইরশাদ করেছিলেন:
    وَيْلُ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ لَوْ كَانَ له أحَدٌ
    'তাঁর মায়ের জন্য আফসোস! সে তো দেখছি যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আহ! তার যদি কোনো সাহায্যকারী থাকত! [সহিহ বুখারি: ২৭৩১] (জাদুল মাআদ: ৩/৩০৯)
    ★ অথচ তখন আবু বাসির রহিমাহুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অধীনেও ছিলেন না এবং কোনো দারুল ইসলামেও ছিলেন না ; এমনকি নিজেও স্বয়ং কোনো খলিফা ছিলেন না এবং তার সাথে কোনো ঝান্ডাও ছিল না। তিনি মুশরিকদের ওপর আক্রমণ করে তাদের সাথে লড়াই করে গনিমত আহরণ করতেন এবং তা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। এটা জানার পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মৌন সমর্থন দিয়েছেন এবং তাঁর প্রশংসা করেছেন।
    ** আব্দুর রহমান বিন হাসান রহিমাহুল্লাহ এ ঘটনা দ্বারা দলিল পেশ করে বলেন:
    فَهَلْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلی الله عَليه وَسلم أَخْطَأْتُمْ فِيْ قِتَالِ قُرَيْشٍ لِأَنَّكُمْ لَسْتُمْ مَعَ إِمَامٍ سُبْحَانَ اللهِ مَا أَعْظَمَ مَضَرَّةَ الْجَهْلِ عَلَی أَهْلِهِ؟
    " রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাদেরকে বলেছেন যে কুরাইশদের সাথে লড়াই করে তোমরা ভুল করেছ? কেননা তোমরা তো কোনো খলিফার অধীনে নও! সুবানাল্লাহ! চিন্তা করে দেখুন, মূর্খদের জন্য তাদের মূর্খতা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে! ' ( আদ্দুরারুস সানিয়্যা:৭/৯৭)
    {{৫}}
    জিহাদ কায়েম করা যেমন ওয়াজিব, খলিফা নিযুক্ত করা তেমনই ওয়াজিব। তাই মুজাহিদদের জন্যে আবশ্যক হলো, পূর্ব থেকে সেখানে কোনো রাষ্ট্রীয় খলিফা না থাকলে নিজেদের মধ্য থেকে কাউকে আমির বানিয়ে নেওয়া। কেননা, খলিফা বিদ্যমান থাকা জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয় ; বরং খলিফার বিদ্যমানতার জন্য ( অর্থাৎ খলিফার খলিফা হিসাবে বাকি থাকার জন্য) জিহাদ শর্ত। কেননা, খলিফার খিলাফত তথা রাষ্ট পরিচালনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য জিহাদ কায়েম করা শর্ত। বস্তুত জিহাদ পরিত্যাগ করে কোনো খলিফা থাকতে পারে না। এটা নয় যে, খলিফা ছাড়া জিহাদ হয় না।
    * আব্দুর রহমান বিন হাসান রহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
    كُلُّ مَنْ قَامَ بِالْجِهَادِ فِيْ سَبِيلِاللهِ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَأَدَّی مَافَرَضَهُ اللهُ وَلَايَكُوْنُ الْإِمَامُ إِمَامًا إِلَّا بِالْجِهَادِ لَا أَنَّهُ لَايَكُوْنُ جِهَادٌ إِلَّا بِإِمَامٍ
    " যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করল তারা আল্লাহর আনুগত্য করল এবং আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি যা ফরজ করেছিলেন তা আদায় করল। আর কোনো খলিফা জিহাদ ছাড়া খলিফা হতে পারে না। এমনটা নয় যে, খলিফা ছাড়ে কোনো জিহাদ হয় না। ' ( আদ্দুরারুস সানিয়্যা: ৭/৯৭)
    ★ একথা সকলেরই জানা যে, খলিফার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং সে যদি জিহাদ ও জনগণকে রক্ষা করতে অক্ষম হয় তাহলে সে খিলাফতের মূল লক্ষ্য থেকেই বেরিয়ে যায়। বরং তখন তার বিদ্যমান থাকা না থাকা বরাবর হয়ে যায়। আর যদি সে মুসলমানদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তখন তার থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এমতাবস্থায় শরিয়তের দৃষ্টিতে তার খিলাফত বাতিল হয়ে যায়। কেননা, তার খলিফা থাকার উদ্দেশ্য এখানে পূরণ হচ্চে না।
    ** বুখারির বর্ণনায় এসেছে:
    وَإِنَّمَا الإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَی بِهِ
    " খলিফা হলো ঢাল স্বরূপ, যার অধীনে থেকে যুদ্ধ করা হয় এবং শত্রুর আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা হয়।'( সহিহ বুখারি : ২৯৫৭)
    # তাই খলিফা এজন্য নিযুক্ত করা ওয়াজিব, যেন সে ঢাল ও প্রতিবন্ধক হয়ে জনগণকে রক্ষা করতে পারে এবং জনগণ তার অধীনে থেকে লড়াই করতে পারে। পক্ষান্তরে সে যদি মুসলিমদের বদলে শত্রুদের ঢাল হয় তাহলে তো সে জাগতিককভাবে মুসলমানদের খলিফা হিসেবে বাকি থাকলেও শরিয়তের দৃষ্টিতে কিছুতেই খলিফা থাকতে পারে না।
    {{৬}}
    * সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :
    لَاتَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِی يُقَاتِلُونَ عَلَی الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَی يَوْمِ الْقِيَامَةِ
    " আমার উম্মতের একদল লোক সত্য দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে।'
    (সহিহ মুসলিম: ৪১২)
    ♦ এই হাদিসে বর্ণিত →একদল লোক← বলতে মুজাহিদিনে কিরাম উদ্দেশ্য। একথা বলাই বাহুল্য যে, একটি দল মানে জাতির কতিপয় লোকই হবে, পুরো জাতি নয়। আর তাদের জিহাদ ও বিজয় সেক্ষেত্রে জাতি ও খলিফা ব্যতীতই হয়ে থাকবে। কেননা, খলিফা যদি তাদের সাথে থাকতই তাহলে তো খলিফার অনুগামী হয়ে পুরো জাতিও তাদের সাথে থাকত। আর সেক্ষেত্রে তো জাতির তুলনায় এই দলটির আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য রইল না। সুতরাং উপরোক্ত হাদিসটি ইঙ্গিতাকারে এ কথারই জানান দিচ্ছে যে, মুসলমানদের একটি দল এককভাবে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারবে; যদিও-বা পুরো জাতিই তাদের পরিত্যাগ করে এবং খলিফাও তাদের সাহায্য না করে। আর যদি জিহাদ শুদ্ধ হওয়ার জন্য খলিফা বিদ্যমান থাকা বা তার অনুমতি গ্রহণ শর্তই হতো তাহলে হাদিসে বর্ণিত সেই দলটির জন্য জিহাদ করাও শুদ্ধ হতো না এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম-ও সমগ্র জাতিকে ছেড়ে তাদের এই শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতেন না।

    {{৭}}
    উম্মাহর সালাফ ও আকাবিরের আমলি ইজমাও এই বিধানটিকে আরও জোরদার করেছে। কেননা, যুগে যুগে যেখানেই শত্রুরা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করেছে, খলিফার অবিদ্যমানতা সত্ত্বেও তখনই মুসলমানরা তাদের মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে গেছে। যেমনটি ঘটেছে খেলাফতে উসমানিয়া ধ্বংসের পর এবং পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে মুসলিম বিশ্বের পতনের পর। আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইরাক ও ভারতবর্ষসহ অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উলামায়ে কেরাম ও মুজাহিদগণ তাদের ভূমি ও মর্যাদা রক্ষায় জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাদের জিহাদ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ও তাদেরকে সাহায্য করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারেও উলামায়ে কেরাম তখন ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন। অথচ তখন মুসলমানদের না ছিল কোনো কেন্দ্রীয় খলিফা, না ছিল সে অঞ্চলগুলোর জন্যে কোনো বিশেষ আমির, আর না ছিল তাদের নিকট কোনো ভারসাম্যপূর্ণ শক্তি; বরং তা ছিল আবু বাসির রাযিঅাল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদের ন্যায় কেবলই একটি দলভিত্তিক যুদ্ধ।

    # ইতিহাসের পাতা থেকে কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেয়া যাক।#
    ★ তাতারিরা যখন আব্বাসি খলিফাকে ৬৫৭ হিজরিতে হত্যা করে তখন থেকে ৬৫৯ হিজরি পর্যন্ত মুসলমানদের কোনো খলিফা ছিল না। কিন্তু এরপরও উলামায়ে কেরাম তাতারিদের বিরুদ্ধে কিতাল ফরজ হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কিতাল হয়েছে। মিসরের বীর সিপাহসালার সাইফুদ্দিন কুতজ রহিমাহুল্লাহ আইনে জালুতের জিহাদে তাতারিদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছেন। তখন তো এই প্রশ্ন ওঠেনি যে, খলিফা তো নেই, তাহলে জিহাদ ফরজ হবে কেন।
    আমাদের আকাবিরের মধ্যে সাইয়েদ আহমদ বেরলবি রহিমাহুল্লাহ-এর নাম এখানে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ' ইজ হাব্বাত রিহুল ইমান ' গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, ইংরেজ, শিখ ও মারাঠা বাহিনী যখন ইসলামকে চিরতরে নিশ্চিহৃ করে দিতে উদ্যত হয় এবং মুসলমানদের ব্যাপকহারে নিধন করতে শুরু করে তখন সাইয়েদ আহমাদ বেরলবি রহিমাহুল্লাহ মুসলমানদের সংগঠিত করতে লেগে যান। মাওলানা ইসমাইল শহিদ রহিমাহুল্লাহ ও মাওলানা আব্দুল হাই রহিমাহুল্লাহ-এর মতো যশস্বী আলিমরা তাঁর সহযোগী হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জিহাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। তিনি যখন লাহোরের মহারাজার বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্র ধরেন তখন তার সাথে ছিল মাত্র ৭০০ মুজাহিদ। পক্ষান্তরে শত্রুশিবিরে ছিল ৭,০০০ সৈনিক। এই অসম লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত মুজাহিদরাই বিজয় হয়। তখন আমাদের এই পুণ্যাত্মা পূর্বসূরিদের হাতে?! জিহাদের এই অমর সিপাহসালার বালাকোট প্রান্তরে শহিদ হন। তাঁর সাথে শহিদ হন মাওলানা ইসমাইল রহিমাহুল্লাহ ও। তাদের এই জিহাদ কি তবে অবৈধ জিহাদ ছিল?
    ভারতবর্ষ ইংরেজরা দখলে নেওয়ার পর হাজি ইমদাদুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ, কাসেম নানুতুবি রহিমাহুল্লাহ, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহিমাহুল্লাহ সহ আরো অনেকই শামেলির জিহাদ করেছেন। তখন তো এ প্রশ্ন ওঠেনি যে, খলিফা নেই, জিহাদ হবে কীভাবে।

    আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিতাল হয়েছে পনেরো বছর। তখন তো কোনো খলিফা ছিল না। আজ যারা বলছে ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই, তারাই তো তখন আফগান জিহাদ নিয়ে গৌরব করত। কিন্তু আজ যখন তাদের বন্ধুদেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হয়েছে, তখন ফতোয়াও পাল্টে গেছে। শাসকের নীতির সাথে দরবারি আলেমদেরও নীতি পাল্টেছে। আবার আজ যখন তারা আফগানে মুজাহিদদের বিজয়ের আভাস দেখতে পাচ্ছে, তখন আবার এমন একটা ভাব করছে যেন, তারা তালিবানদের সমর্থন করে। অথচ জিহাদের জন্য যেসব মনগড়া শর্ত তারা আরোপ করে, তালিবানদের কাছে তা কোনো কালেও ছিল না, আজও নেই। মোল্লা ওমর রহিমাহুল্লাহ যখন জিহাদ শুরু করেন তখন না খেলাফত ছিল, না খলিফা ছিল, না কোনো শাসকের অনুমতি তিনি নিয়েছিলেন। বরং বিবাদমান জালিম মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধেই ছিল তার জিহাদ। এদের এই সুস্পষ্ট দ্বিমুখী আচরণ দেখে আশ্চর্য না হয়ে উপায় কী!

    ♦♦শেষ কথা:♦♦
    # কাফের শত্রু যখন কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে আক্রমণ করে বসে তখন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা কখনো ফিতনার লড়াই হতে পারে না। এমন কথা উম্মতের উলামায়ে কিরামের কেউই বলেননি। বরং প্রকৃত ফিতনা হচ্ছে, সে সময় লড়াই পরিত্যাগ করা এবং তাদেরকে প্রতারোধ না করা। ফিতনা হলো, মনগড়া বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়ে উম্মতকে জিহাদ থেকে বিরত রাখা।
    * ইমাম ইবনে হাজাম রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَلَا إِثْمَ بَعْدَ الْكُفْرِ أَعْظَمَ مِنْ إِثْمِ مَنْ نَهَی عَنْ جِهَادِ الْكُفَّارِ وَأَمَرَ بِإِسّلَامِ حَرِيْمِ الْمُسْلِمِيْنَ إِلَيْهِمْ
    " যে ব্যক্তি কাফিরদের সাথে জিহাদ করতে নিষেধ করে এবং পবিত্র স্থানগুলোকে তাদের নিকট সমর্পণ করার জন্য আদেশ করে, কুফুরির পর এই ব্যক্তির গুনাহের চেয়ে বড় আর কোনো গুনাহ নেই।' (আল-মুহাল্লা: ৭/৩৩৯)
    * যেমনিভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِيْ يُفْسِدُ الدِّيْنَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ مِنْ دَفْعِهِ
    " ইমান আনার পর দ্বীন ও দুনিয়া-বিধ্বংসী আগ্রাসী শত্রুর প্রতিরোধের চেয়ে বড় কোনো ফরজ নেই।'
    ( আল-ফাতাওয়া আল মিসরিয়্যা: ৪/৫০৮)
    @ আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন। দরবারি মোল্লাদের গোমরাহি থেকে আমাদের ইমান-আমল হেফাজত করুন।আমিন, ইয়া রব্বাল আলামিন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,
Working...
X