Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল্লাহ’র সাথে অঙ্গীকার পূর্নকারী কে? ’ by: হুজাইফা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল্লাহ’র সাথে অঙ্গীকার পূর্নকারী কে? ’ by: হুজাইফা

    PDF Download Links

    https://archive.org/details/AllahrSa...karPurnoKariKe
    http://www.mediafire.com/file/211gw4...ri_ke.pdf/file
    https://sabercathost.com/9w1d/allah_...no_kari_ke.pdf



    بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
    সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি মানব জাতির জন্য পথ নির্দেশিকার ব্যবস্থা করেছেন। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক এই উম্মতের শিক্ষক, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। যিনি নিজেই জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর সাহাবাদেরকে (রা.) জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে গেছেন। ইসলামের প্রথম *যুগ থেকে এখন পর্যন্ত যত ঈমানদার ভাই ও বোন জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় অংশগ্রহণ করেছেন, যারা মহান আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁদেরকে ক্ষমা করে তাঁদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিন, আর আমাদেরকেও তাঁর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণকারী কে?

    মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য (সূরা মুলক ৬৭:২)। তিনি প্রকাশ করে দিতে চান কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যুক (সূরা আনকাবূত ২৯:৩)। আল কুরআনে মহান আল্লাহ- চিরস্থায়ী জান্নাতকে পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করে তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ অঙ্গীকারের ঘোষণা দিয়েছেন। আসুন ওহীর বিধান থেকে জেনে নেই, সেই অঙ্গীকার ও অঙ্গীকার পূর্ণকারী বান্দাদের পরিচয়?

    সূরা তাওবায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া অঙ্গীকার-
    إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [٩:١١١]
    নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ (ক্বিতাল) করে আল্লাহর রাস্তায় অতঃপর মারে ও মরে। এ বিষয়ে (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইনজীলে এবং কুরআনে; আর কে আছে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক অঙ্গীকার পালনকারী? অতএব তোমরা আনন্দিত হও সেই লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর (আল্লাহর) সাথে। আর এটাই হল মহাসাফল্য। [সূরা তাওবাহ ৯:১১১]

    এ আয়াত পাঠের পর আর কোন বিশদ বিবরণের দরকার নেই, কোন সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই যে, মুমিনদের জন্য জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হচ্ছে সেই আমল যাতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য মহাদাতা আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের অঙ্গীকার রয়েছে। বান্দা দিবে জান ও মাল মহান আল্লাহ পুরস্কার হিসেবে দিবেন জান্নাত।
    অঙ্গীকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট আলোচনার জন্য প্রথমে ‘যারা অঙ্গীকার পূর্ণকারী নয়’ তাদের আলোচনা করার পর ‘অঙ্গীকার পূর্ণকারীদের’ আলোচনা করা হবে ইংশাআল্লাহ..

    কারা মিথ্যুক ও অঙ্গীকার পূর্ণকারী নয় ?
    জিহাদের সাথে সম্পৃক্ততা ছাড়া কোন ব্যক্তি সত্যবাদী ঈমানদার হতে পারবে না। আর জীবিত কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ফিতনায় পতিত হওয়ার আশংকা থেকে মুক্ত নন।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
    عن أبي هريرة ، عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : من مات ولم يغز و لم يحدث نفسه بالغزو مات على شعبة من نفاق ـ
    আবূ হুরাইরা (রা) সূত্রে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে, সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদের আকাঙ্ক্ষাও রাখেনি, তবে সে মুনাফিকী অবস্থায় মারা গেল। [সহীহ আবু দাউদ, জিহাদ অধ্যায়, যুদ্ধ পরিহার করা অপছন্দনীয় অনুচ্ছেদ, ইফাবা: ২৪৯৪]।
    সুতরাং যারা ঈমানের ঘোষনা দেয় কিন্তু জিহাদের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই তারা নিফাকীর অংশ নিয়ে মারা যাবে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে স্পষ্ট।

    আর যারা সামর্থ্যবান হওয়া সত্বেও জিহাদে অংশগ্রহণ করবেনা তাদের জন্য হাদিসে দুঃসংবাদ বর্নিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
    حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، وَقَرَأْتُهُ، عَلَى يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ رَبِّهِ الْجُرْجُسِيِّ قَالاَ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ الْحَارِثِ، عَنِ الْقَاسِمِ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏:‏ ‏"‏ مَنْ لَمْ يَغْزُ أَوْ يُجَهِّزْ غَازِيًا أَوْ يَخْلُفْ غَازِيًا فِي أَهْلِهِ بِخَيْرٍ أَصَابَهُ اللَّهُ بِقَارِعَةٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ يَزِيدُ بْنُ عَبْدِ رَبِّهِ فِي حَدِيثِهِ ‏:‏ ‏"‏ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.
    আমর ইবনে উসমান… আবূ উমামা (রা.) নাবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি যুদ্ধের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধ করল না, অথবা কোন গাযীকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করল না বা গাযীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের কোন উপকার করল না, তাকে আল্লাহ তা’আলা কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা দ্বারা ধ্বংস করবেন। ‘কিয়ামতের পূর্বে’ কথাটি আব্দুল্লাহ ইবনে আবদ রব্বিহী তার বর্ণনায় অতিরিক্ত বলেছেন। [সহীহ আবু দাউদ, জিহাদ অধ্যায়, যুদ্ধ পারিহার কারা অপছন্দনীয় অনুচ্ছেদ, ইফাবা: ২৪৯৫]।
    যারা জিহাদের নাম শুনলে বিভিন্ন অহেতুক বাহানা, কারন বা অজুহাত দাঁড় করিয়ে জিহাদ থেকে অব্যাহতি অনুসন্ধান করে, তাদের ঈমান নেই এ ব্যাপারে আল কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
    لَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ [٩:٤٤]
    আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জিহাদ করার ব্যাপারে আপনার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করবে না, আর আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালভাবেই জানেন। [সূরা তাওবাহ ৯:৪৪]

    إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ [٩:٤٥]
    নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে, যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তরসমূহ সন্দেহে নিপতিত রয়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে। [সূরা তাওবাহ ৯:৪৫]

    জাগতিক কোন কাজের জন্য নগদ লাভের কথা শুনলে লোকে সে ব্যাপারে উৎসাহিত হয়ে থাকে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে সাহাবাগণ (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী মুজাহিদদের জন্য ক্ষমা, মর্যাদা, জান্নাতের সুখবর, জান্নাতের বর্ণনা, কিয়ামতের ময়দানে বিশেষ সম্মান, সুপারিশ করার অনুমতি লাভ এমনকি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার বর্ণনা শুনে তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হওয়ার জন্য উৎসাহিত হয়ে থাকতেন, কারণ হচ্ছে তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া বর্ণনাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন আর এজন্যই তা পাওয়ার জন্য তাঁরা প্রতিযোগিতা করতেন।

    আর যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া বর্ণনাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেনি, যারা সন্দেহের মধ্যে ছিল তারা এগুলোকে পাগলের প্রলাপ মনে করত। যারা লেবাসধারী মুসলিম তথা মুনাফিক ছিল, যারা মুসলিমদের সাথে তাল মিলিয়ে চলত অথচ অন্তরে নিফাকী বহন করত তারা জাগতিক সম্পদ ও ভোগ বিলাসের প্রতি উৎসাহিত থাকলেও তারা জিহাদের প্রতি উৎসাহিত থাকত না বরং এই জিহাদের নাম শুনলে তারা মৃত ব্যক্তির মত তাকাত কারণ তারা পরকালের ব্যাপারে কোন আশাই রাখত না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া বর্ণনাকে তারা সত্য বলে বিশ্বাসই করত না। আর এ কারণে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী মুজাহিদদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার বর্ণনা ওহীর বিধানে থাকা সত্বেও তা পাওয়ার জন্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ব্যাপারে বিশ্বাসী ঈমানদারদের মত এই মুনাফিকরা উৎসাহিত ছিলনা।


    মহান আল্লাহ এসব সন্দেহ পোষণকারী মুনাফিকদের ব্যাপারে বলেন,
    أَشِحَّةً عَلَيْكُمْ ۖ فَإِذَا جَاءَ الْخَوْفُ رَأَيْتَهُمْ يَنْظُرُونَ إِلَيْكَ تَدُورُ أَعْيُنُهُمْ كَالَّذِي يُغْشَىٰ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ ۖ فَإِذَا ذَهَبَ الْخَوْفُ سَلَقُوكُمْ بِأَلْسِنَةٍ حِدَادٍ أَشِحَّةً عَلَى الْخَيْرِ ۚ أُولَٰئِكَ لَمْ يُؤْمِنُوا فَأَحْبَطَ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا [٣٣:١٩]
    তারা (মুনাফিকরা) তোমাদের প্রতি কুন্ঠাবোধ করে। যখন বিপদ আসে, তখন আপনি দেখবেন মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চোখ উল্টিয়ে তারা আপনার প্রতি তাকায়। অতঃপর যখন বিপদ চলে যায় তখন তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরীতে অবতীর্ণ হয়। তারা মুমিন নয়। তাই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেন। এটা আল্লাহর জন্যে সহজ। [সূরা আহযাব ৩৩:১৯]

    সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী মুজাহিদদের জন্য জান্নাতের সুখবর এবং জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন মুনাফিকদের জন্য জাহান্নামের দুঃসংবাদের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তারাই মূলত জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাত যাওয়ার রাস্তা জিহাদ ফি সাবিলিল্লার ব্যাপারে উৎসাহিত নয়।
    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ [٦١:١٠]
    হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? [সূরা সাফ্ফ ৬১:১০]


    تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ [٦١:١١]
    তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা জানতে। [সূরা সাফ্ফ ৬১:১১]

    এ আয়াত দুটি থেকে স্পষ্ট যে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাওয়ার বানিজ্য হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।

    সুতরাং যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি জাহান্নাম, পুরস্কার জান্নাত, হিসাব, প্রতিদান, পরকাল, নবী, রাসূল, রাসূলগণের কথা, আসমানী কিতাব এমনকি আলকুরআনকেও বিশ্বাস করেনা, যাদের অন্তরে এখনো সন্দেহ বিদ্যমান তারাই মূলত জিহাদ ফি সাবিলিল্লার সাথে সম্পর্ক রাখেনা, এরা বাহিরে কালিমার ঘোষণা, লোকদেখানী নামায, সুনামের জন্য দান-খয়রাত, হজ্জ ও অন্যান্য দ্বীনি আমল করলেও জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন হওয়ার কারনেই এরা মুনাফিক, এরা সত্যবাদী ঈমানদার নয়। এরা মানুষের কাছে সত্যবদী হলেও আল্লাহর কাছে মিথ্যুক।


    মহাবিচারক আল্লাহ সত্যবাদী ঈমানদারদের পরিচয় সূরা হুজুরাতে তুলে ধরেন এভাবে-
    إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ [٤٩:١٥]
    নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর আর কোন সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও ধন-সম্পদ দ্বারা জিহাদ করে, তারাই সত্যবাদী। [সূরা হুজুরাত ৪৯:১৫]

    যাদের বিশ্বাসে ঘাটতি, যাদের আন্তরে এখনো সন্দেহ বিদ্যমান তারাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লার সাথে সম্পর্কহীন, তারা সত্যবাদী ঈমানদারও নয় আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার পক্ষ থেকে সূরা তাওবায় যে আঙ্গীকারের ঘোষনা দিয়েছেন তারা সেই আঙ্গীকার পূর্ণকারীও নয়।

    অঙ্গীকার পূর্ণকারী বান্দাদের পরিচয় সম্পর্কে মহাদাতা আল্লাহ সূরা আহযাবে বলেন-
    مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا [٣٣:٢٣]
    মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন আনায়ন করেনি। (সূরা আহযাব ৩৩:২৩)

    لِيَجْزِيَ اللَّهُ الصَّادِقِينَ بِصِدْقِهِمْ وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِينَ إِنْ شَاءَ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا [٣٣:٢٤]
    এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব ৩৩:২৪)
    এ আয়াতদুটি থেকে স্পষ্ট যে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে গেছেন আর যারা শহীদ হওয়ার প্রতিক্ষায় আছেন এবং আল্লাহর রাস্তায় মাল ও জান দেয়ার যে অঙ্গীকার তাতে কোন পরিবর্তন আনায়ন করেননি তারাই হচ্ছেন অঙ্গীকার পূর্ণকারী এবং সত্যবাদী, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অঙ্গীকার শুধু এদের জন্যই।

    কোন ব্যক্তি যদি ঈমানের শর্ত সমূহ পূর্ণ করেন, আর যদি তাঁর জিহাদের সাথে সম্পৃক্তততা থাকে তবে তিনি বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরন করলেও নিফাকির অভিযোগ থেকে মুক্ত। আর ঈমানদারদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া আছে।
    মহান আল্লাহ বলেন,
    وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا ۚ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا [٤:١٢٢]
    যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আমি তাদেরকে উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করাব, যেগুলোর তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা চিরকাল তথায় অবস্থান করবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য; এবং আল্লাহর চাইতে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা আন নিসা ৪:১২২)

    হাদিসে এসেছে-
    حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ أَبُو مَرْوَانَ، وَابْنُ الْمُصَفَّى، قَالاَ حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، عَنِ ابْنِ ثَوْبَانَ، عَنْ أَبِيهِ، يَرُدُّ إِلَى مَكْحُولٍ إِلَى مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، حَدَّثَهُمْ أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏:‏ ‏"‏ مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فُوَاقَ نَاقَةٍ فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَمَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْقَتْلَ مِنْ نَفْسِهِ صَادِقًا ثُمَّ مَاتَ أَوْ قُتِلَ فَإِنَّ لَهُ أَجْرَ شَهِيدٍ ‏"‏ ‏.‏ زَادَ ابْنُ الْمُصَفَّى مِنْ هُنَا ‏:‏ ‏"‏ وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ نُكِبَ نَكْبَةً فَإِنَّهَا تَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا كَانَتْ، لَوْنُهَا لَوْنُ الزَّعْفَرَانِ، وَرِيحُهَا رِيحُ الْمِسْكِ، وَمَنْ خَرَجَ بِهِ خُرَاجٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّ عَلَيْهِ طَابَعَ الشُّهَدَاءِ ‏"‏ ‏.‏
    মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি উষ্ট্রির দুধ দুইবার দোহনের মধ্যবর্তী সময়টুকু আল্লাহর পথে জিহাদ করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। যে ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের প্রার্থনা করে, অতঃপর (নিজ ঘরেই) মারা যায় অথবা নিহত হয়, তার জন্য শহীদের সাওয়াব রয়েছে। (মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী) ইবনুল মুসান্না এরপর আরো বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) আহত হয় কিংবা কোন বিপদে পতিত হয়, ক্বিয়ামাতের দিন তার এ যখমের স্থান পুর্বের মত তাজা থাকবে এবং এর রং হবে জা’ফরানের রংয়ের মত আর এর ঘ্রান হবে কস্তরীর ঘ্রানের অনুরূপ। মহান আল্লাহর পথে যার শরীরে কোন ফোড়া উঠে, তাতে শহীদের সীলমোহর অংকিত হবে। [সহীহ আবু দাউদ, জিহাদ অধ্যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে নামক অনুচ্ছেদ, ইফাবা: ২৫৩৩]।
    আসুন জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় জান ও মাল দেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করি, সে অঙ্গীকার পূর্ণ করার জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ করি, শহীদ হওয়ার ব্যাপারে প্রতিক্ষায় থাকি এবং অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন আনয়ন না করি।
    আর যারা বহুবার জিহাদে অংশগ্রহণ করা সত্বেও এখনও আল্লাহর রাস্তায় জীবন দিতে পারেননি তারা মৃত্যু পর্যন্ত জিহাদের সাথে সম্পর্ক রাখি শহীদ হওয়ার ব্যাপারে প্রতিক্ষায় থাকি এবং আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল দেয়ার অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন আনয়ন না করি।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর পক্ষ থেকে দেয়া হিদায়াতগ্রন্থ অনুসারে আমল করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদেরকে প্রকৃত ঈমানদার (সত্যবাদী) হিসেবে কবুল করুন। আর জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় অংশগ্রহণ করে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য জান ও মাল দেয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন............
    হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও প্রার্থনা শ্রবণকারী।
    দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন...
    সমস্ত প্রশংসা অংশিদারমুক্ত এক আল্লাহ’র জন্য, আমি সাক্ষ্য *দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন কল্যাণ ও অকল্যাণ দাতা নেই তাঁর কাছেই আমি তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

    রচনায়ঃ হুজাইফা
    https://archive.org/details/@hujaifa
    Last edited by nafi; 05-09-2020, 08:05 PM.

  • #2
    মাশাআল্লাহ,
    আল্লাহ আমাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে খরিদ করে নিন, আমিন।
    আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তার পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।

    Comment


    • #3
      মাশাঅাল্লাহ

      Comment

      Working...
      X