Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল্লাহ তায়ালার সিফাত সংক্রান্ত্র আকীদার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল্লাহ তায়ালার সিফাত সংক্রান্ত্র আকীদার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত?

    একভাই আল্লাহ তায়ালার সিফাত সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন, বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমি নতুন থ্রেডে কিছুটা বিস্তারিত জবাব দিচ্ছি।

    ১। আল্লাহর অবস্থান ও আকার-নিরাকার নিয়ে আমাদের কেমন আক্বিদা রাখা উচিত? এক্ষেত্রে কোন আক্বিদা পোষণ নিরাপদ?
    আল্লাহ তায়ালার অবস্থান, তাঁর সূরত বা আকার সহ আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য সিফাতের বিষয়ে আলেমগণের দুটি প্রসিদ্ধ মতে রয়েছে।

    ১. তা’বীল। এটা অধিকাংশ মুতাকাল্লিমগণের মাযহাব। এর খোলাসা হলো, এ বিষয়গুলোর বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য না। তাই আল্লাহ তায়ালার শান উপযোগীভাবে তার ব্যাখ্যা করতে হবে।

    ২. তাফবীয। এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠ সালাফের মাযহাব। এর সারকথা হলো, এই বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহয় যেভাবে এসেছে, সেভাবেই বর্ণনা করা হবে, তার প্রতি ইমান রাখতে হবে, এগুলোর কোন ব্যাখ্যা করা যাবে না, এবং (আল্লাহ তায়ালার এ সিফাতগুলো মানুষের সিফাতের মতো) এ ধারণা করা যাবে না এবং এটাও বলা যাবে না যে, এ সিফাতগুলো কেমন?

    অবশ্য তাফবীযের পদ্ধতি নিয়ে সালাফের মাঝে কিছু সুক্ষ্ম মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু আমি যতটুকু উল্লেখ করেছি, তাতে কোন মতভেদ নেই এবং এতটুকুই আমাদের জন্য যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ। এরচেয়ে বেশি কিছু নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কোনই প্রয়োজন নেই। সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়গুলো বর্ণনা করেছেন, এর অতিরিক্ত কিছু তারা করেননি। সুতরাং তাদের জন্য যা যথেষ্ট হয়েছে, আমাদের জন্য কি তা যথেষ্ট হবে না? অনেক আলেম তো এ কথাও বলেছেন যে, “এ বিষয়ে আমাদের আকীদা, আমাদের গোত্রের বৃদ্ধা মহিলাদের আকীদার মতোই।” অর্থাৎ তাদের যেমন এসব বিষয়ে সুক্ষ্ম জ্ঞান নেই, আমাদেরও এসব বিষয়ে সুক্ষ্ম জ্ঞানের কোন প্রয়োজন নেই।

    আরেকটি বিষয়ও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সালাফী ভাইয়েরা হানাফীদেরকে মাতুরিদি বলে পথভ্রষ্ট আখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাতুরিদিদের পথভ্রষ্ট বলা ঠিক নয়। কেননা তাবীল তো শুধু মাতুরিদিরাই করেন না, আশআরীরাও করেন, তো তাবীলের কারণে পথভ্রষ্ট বলা হলে তো ইমাম নববী, হাফেয ইবনে হাজার রহ. এর মত বড় বড় আশআরী আলেমদেরও পথভ্রষ্ট বলতে হবে!

    তাছাড়া হানাফীরা মাতুরিদি এ কথাও ঢালাওভাবে ঠিক নয়। ইমাম আবু মনসুর মাতুরিদির মৃত্যু ৩৩৩ হিজরীতে, তার সমকালীন আরেকজন হানাফী ইমাম হলেন ইমাম তহাবী, যার মৃত্যু ৩২১ হিজরীতে। তার আকীদার কিতাব পৃথিবীতে আকীদার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কিতাব হিসেবে গণ্য হয়। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. তাকে “হানাফী মাযহাব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত” বলেও মন্তব্য করেছেন। ইমাম তহাবী তার আকীদার কিতাবের শুরুতে বলেছেন, তিনি এ কিতাবে যে আকীদাগুলো এনেছেন, তা ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ রহ. এর আকীদা। আর ইমাম তহাবীর আকীদা ইমাম মাতুরিদির আকীদা হতে ভিন্ন। তিনি সিফাতের মাসয়ালায় তাবীলের বিপক্ষে।

    বর্তমান হানাফী আলেমগণও সিফাতের মাসয়ালায় সালাফের মতোই তাফবীয করেন। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. ইমদাদুল ফতোয়ায় এবং আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিমে তাফবীযকেই অধিক নিরাপদ ও সতর্কতার দাবী বলেছেন। আল্লামা সাইদ আহমদ পালনপুরী বলেছেন, বর্তমান আকাবিরে দেওবন্দও তাফবীযের পক্ষে। বরং, এখনো যারা নিজেদেরকে মাতুরিদি বলে পরিচয় দেন তারাও স্পষ্টভাবে বলেন যে, সিফাতের মাসয়ালায় তারা সাধারণত তাফবীয করেন। সুতরাং এখন এ নিয়ে তর্ক অনেকটাই অর্থহীন। খোরাসানের পূর্ববর্তী কিছু হানাফী ফকিহ ইমাম মাতুরিদির অনুসারী ছিল বিধায় এখন কবর খুঁড়ে তাদের আকীদা উদ্ধার করে তা নিয়ে বিতর্কের কি ফায়েদা?

    আর আমাদের জিহাদ বৈশ্বিক জিহাদ এবং এর উদ্দেশ্য হলো পুরো ইসলামী বিশ্বজুড়ে এক ইসলামী খেলাফত কায়েম। তাই আমরা বৃহৎ ঐক্যের সার্থে যেমনিভাবে মাযহাবের ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট একটি মাযহাবকে তারজীহ দেই না, এর প্রচার করি না, বরং যে এলাকায় যে মাযহাব চলছে, তা অনুযায়ীই ফতোয়া দেই। যদিও কোন কোন মাসয়ালায় তা আমাদের মতের বিপরীত হয়, যতক্ষণ না তা কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট খেলাফ হয়। তো তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার সিফাতের ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থান এমনই হওয়া দরকার। আমরা আল্লাহর তায়ালার সিফাতের ব্যাপারে দলিলের আলোকে যার নিকট যে মতটি অগ্রগন্য তা গ্রহণ করবো। কিন্তু তার প্রচার এবং তা নিয়ে দলাদলি করে উম্মাহর ঐক্য ও জিহাদী শক্তিকে বিনষ্ট করা হতে বিরত থাকবো। নতুবা আমরা কখনোই আমাদের পরম কাঙ্খিত, মজলূম মুসলিমদের রক্ষাকবজ, আল্লাহর আইন দ্বারা পরিচালিত এক বৈশ্বিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো না।

    ২। আক্বিদার ক্ষেত্রে বাংলায় একটি নির্ভরযোগ্য আক্বিদার বই রেফার করুন, যেটা থেকে আমি আক্বিদা সংশোধন করতে পারি।
    ইমাম তহাবীর আকীদার সংক্ষিপ্ত কিতাবটিই ইনশাআল্লাহ এক্ষেত্রে যথেষ্ট। এর বাংলা অনুবাদও হয়েছে, নেটে পাওয়া যায়। আর সাথে বর্তমানে প্রচলিত কুফরের ব্যাপারে অবগতির জন্য মাওলানা আব্দুল মালেক হাফি. এর ‘ইমান সবার আগে’ এবং কাশ্মিরী রহ. এর ‘ওরা কাফের কেন’ এ দুটি কিতাব পড়ে নিতে পারেন।

    ৩। আমি শাইখ রাহমানী যেভাবে আক্বিদা ও মানহাজকে ব্যাখ্যা করতেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমি তা মানি। এটা কী আমার জন্য নিরাপদ?
    আমার জানামতে শায়েখ রহমানীর আকীদা ও মানহাজে তেমন কোন সমস্যা নেই। সালাফীরা আকীদায় ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এর অনুসরণ করেন, আর তাফবীযের পদ্ধতি নিয়ে ইবনে তাইমিয়াহর সাথে অন্যদের মতভেদ রয়েছে। তাই রহমানী সাহেবের সাথেও অন্যদের মতভেদ হবে।

    তবে এই মতভেদ হক-বাতিল বা ইমান-কুফরের নয়, কারণ আল্লামা তাকী উসমানী বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার সিফাতের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত মাযহাবগুলোর সবগুলোই হক। এক্ষেত্রে মতপার্থক্য ইখতেলাফী মাসয়ালায় মুজতাহিদ ফকিহদের মতপার্থক্যের মতোই। তিনি আরো বলেছেন, ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এর মতের স্বপক্ষে সালাফের একদল রয়েছেন। (দেখুন, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, ৫/৩৭৯-৩৮০ দারু ইহইয়াউত তুরাস) তাই রহমানী সাহেবের আকীদা কমপক্ষে সালাফের একটি দলের আকীদা হবে।

    এখন বাকী রইলো, এই মতভেদের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য মত কোনটি। তো আমি আগেও বলেছি, এ নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কোনই প্রয়োজন নেই, আর না এর সময়-সুযোগ ও যোগ্যতা আমাদের আছে। এসব তো আকীদার শাখাগত বিষয়। এরচেয়ে আকীদার মৌলিক বিষয়াদী অর্থাৎ হাকিমিয়্যাত, ওয়ালা-বারা ইত্যাদি ঠিক করা; গণতন্ত্র, নারীবাদ, জিহাদ ও হুদুদ কিসাসের প্রতি ঘৃণার মতো কুফরী বিষয়াদী সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা; আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করা; এ ধরণের কত বড় বড় কাজই তো পড়ে আছে।
    ৪। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মহিলাদের জন্য যারা রোযা রাখতে পারে না, তাদের জন্য ফিদিয়া দেয়া যাবে কিনা?
    গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মহিলারা যদি পূর্ব অভিজ্ঞতা বা দক্ষ মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শের কারণে, রোযা রাখার দ্বারা নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশংকা করে তবে তারা রোযা ভঙ্গ করে পরবর্তীতে কাযা করতে পারবে। আর কাযা অবশ্যই করতে হবে, কাযা না করে ফিদয়া দিলে হবে না।

    سنن الترمذي ت بشار (2/ 86)
    715 - حدثنا أبو كريب، ويوسف بن عيسى، قالا: حدثنا وكيع، قال: حدثنا أبو هلال، عن عبد الله بن سوادة، عن أنس بن مالك، رجل من بني عبد الله بن كعب قال: أغارت علينا خيل رسول الله صلى الله عليه وسلم، فأتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم، فوجدته يتغدى، فقال: ادن فكل، فقلت: إني صائم، فقال: ادن أحدثك عن الصوم، أو الصيام، إن الله تعالى وضع عن المسافر الصوم، وشطر الصلاة، وعن الحامل أو المرضع الصوم أو الصيام، والله لقد قالهما النبي صلى الله عليه وسلم كليهما أو إحداهما، حديث أنس بن مالك الكعبي حديث حسن
    فتح القدير للكمال ابن الهمام (2/ 355)
    (والحامل والمرضع إذا خافتا على أنفسهما أو ولديهما أفطرتا وقضتا) دفعا للحرج (ولا كفارة عليهما) لأنه إفطار بعذر (ولا فدية عليهما) خلافا للشافعي - رحمه الله - فيما إذا خافت على الولد،
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    জাযাকাল্লাহ।
    একদল তাবিলের দিকে ঝুকেছেন। আরেকদল তাফবীজের দিকে ঝুকেছেন। কিন্তু তাফবীজের ক্ষেত্রে একদল ভুল বুঝের শিকার হয়েছেন বলে দেখেছি এবং দেখেছি যে, তিনি তার সেই ভুল বুঝটা ছাত্রদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করারও প্রয়াস পেয়েছেন। সেটা হল: তাফবীজের উদ্দেশ্য নিয়ে। অর্থাৎ কুরআনে استوي علي العرش, يدلله, بيمينه, শব্দগুলো এসেছে। এখন তাফবীজ অর্থ কি এই যে, এই শব্দগুলোর আভিধানিক অর্থও করা যাবে না, বা বাংলায় অনুবাদও করা যাবে না? নাকি এর উদ্দেশ্য হল, আভিধানিক অর্থ তো করা যাবে, বাংলায় বা ভিন্ন ভাষায় আভিধানিক অনুবাদ তো করা যাবে, কিন্তু এর কাইফিয়্যাত নির্ধারণ করা যাবে না বা সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা যাবে না?

    তো যিনি ভুল বুঝেছেন, তিনি বলতে চান: এ শব্দগুলোর আভিধানিক অর্থও করা যাবে না। এবং আভিধানিক অর্থ আল্লাহর ক্ষেত্রে সাব্যস্তও করা যাবে না। বরং বলতে হবে: আল্লাহ ইস্তিওয়া গ্রহণ করেছেন, ব্যস। বলতে হবে: আল্লাহর ‘ইয়ামিন’ দ্বারা। বলতে হবে, আল্লাহর ‘ইয়াদ’ বা ইয়াদুল্লাহ।
    এজন্য যারা এগুলোর আভিধানিক অর্থ করেন, এবং সেই অর্থ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেন, তাদেরকে তারা মুশাব্বিহা, মুজাস্সিমা বলে অভিযোগ করতে থাকেন।

    কিন্তু বাস্তব তো হল এই যে, এগুলোর আভিধানিক অর্থ করা যাবে। তাই বলা যাবে যে, আল্লাহ আরশে সমাসিন হয়েছেন। আল্লাহর হাত আছে। আল্লাহর ডান হাত আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তার স্বরূপ অজ্ঞাত। তা আল্লাহ ই জানেন যে তা কেমন। তা মানুষের হাতের মত নয়। মানুষের বসার মত নয়, ইত্যাদি। এটাই ইবনে তাইমিয়া রহ. এর মাযহাব এবং সম্ভবত বর্তমান সালাফিদেরও মাযহাব।

    যদি এর আভিধানিক অর্থও করা না যায় এবং তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা না যায়, তথা এরূপ বলা না যায় যে, আল্লাহর হাত আছে, বা তিনি সমাসিন হয়েছেন, তাহলে তো আল্লাহর সিফাতকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে দেওয়া হল।

    এজন্যই যারা ওই মত পোষণ করেন, অর্থাৎ এগুলোর আভিধানিক অর্থও করা যাবে না বলেন, এরা তাদেরকে মুআত্তিলা বলে থাকেন।

    তবে যারা এটা করছেন, অর্থাৎ এগুলোর আভিধানিক অর্থ করতেও নিষেধ করছেন, তারা ভালো উদ্দেশ্যেই করছেন। তারা মনে করছেন, এতে করে সদৃশ সাব্যস্ত করার দরজা খোলে যায়। তবে তারা গভীরভাবে এই চিন্তাটা করেন না যে, আল্লাহ যখন এই শব্দগুলো কুরআনে নাযিল করেছেন, তখন আরবগণ তো অটোমেটিকই এর আভিধানিক অর্থটা বুঝবে। আরবগণ যখন পড়বেন: ‘ইয়াদুল্লাহ’, তখন প্রথম চাণ্সেই তাদের মাথায় আসবে: আল্লাহর হাত। শুধু এতটুকু ব্যাপার থাকতে হবে যে, তা মাখলুকের হাতের মত নয়। তা কেমন তা আমরা জানি না। তা শুধুমাত্র আল্লাহ ই জানেন।

    যেমন ইমাম মালেক রহ. বলেছেন:
    الاستواء معلوم وكيفيته مجهول والإيمان عنه واجب والسوال عنه بدعة

    আল্লাহর ইস্তিওয়া (সমাসিন হওয়া) জানা আছে। কিন্তু তার স্বরূপ বা পদ্ধতি অজ্ঞাত, অজানা। তার সম্পর্কে ঈমান রাখা আবশ্যক। আর তার ব্যাপারে প্রশ্ন করা বিদআত।

    Comment


    • #3
      তাফবীজের ক্ষেত্রে একদল ভুল বুঝের শিকার হয়েছেন বলে দেখেছি এবং দেখেছি যে, তিনি তার সেই ভুল বুঝটা ছাত্রদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করারও প্রয়াস পেয়েছেন। সেটা হল: তাফবীজের উদ্দেশ্য নিয়ে। অর্থাৎ কুরআনে استوي علي العرش, يدلله, بيمينه, শব্দগুলো এসেছে। এখন তাফবীজ অর্থ কি এই যে, এই শব্দগুলোর আভিধানিক অর্থও করা যাবে না, বা বাংলায় অনুবাদও করা যাবে না? নাকি এর উদ্দেশ্য হল, আভিধানিক অর্থ তো করা যাবে, বাংলায় বা ভিন্ন ভাষায় আভিধানিক অনুবাদ তো করা যাবে, কিন্তু এর কাইফিয়্যাত নির্ধারণ করা যাবে না বা সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা যাবে না?

      তো যিনি ভুল বুঝেছেন, তিনি বলতে চান: এ শব্দগুলোর আভিধানিক অর্থও করা যাবে না।
      সতর্কতার সাথে আভিধানিক অর্থ করা যেতে পারে, আল্লামা কাশ্মীরী রহ. বলেন,

      يتوهم من جامع الفصولين، وهو كتاب معتبر من معتبرات الفقه الحنفي، أنه لا يجوز ترجمة المتشابهات الواردة في صفات الله ترجمة لغوية بغير العربية.
      قال الراقم: لعله يشير إلى ما يستفاد مما ذكره في الباب الثامن والثلاثين في الكلمات الكفرية، قال في (2/216) قال: "دست خداى دراز است" (يد الله طويلة) كفر، قيل: لو عنى به الجارحة لا لو عنى به القدرة.
      قال الشيخ: والذي يظهر عندي أن يكون النهي عن تفسيره دون ترجمته اللغوية. (معارف السنن: 4/156 ط. المكتبة الأشرفية ديوبند الهند)

      “ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য কিতাব জামিউল ফুসুলাইন থেকে সংশয় তৈরী হয় যে, আল্লাহ তায়ালার সিফাতের ব্যাপারে বর্ণিত মুতাশাবিহাতের আভিধানিক অর্থ আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় করা যাবে না।

      আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. বলেন, সম্ভবত শায়েখ কুফরী শব্দসমূহের ব্যাপারে ৩৮ তম অধ্যায়ে উল্লিখিত এ মাসয়ালাটির প্রতি ইঙ্গিত করছেন- একব্যক্তি বললো, ‘আল্লাহ তায়ালার হাত প্রশস্ত’ সে কাফের হয়ে যাবে। ভিন্ন মতে, যদি এর দ্বারা অঙ্গ উদ্দেশ্য নেয় তবে কাফের হবে, শক্তি উদ্দেশ্য নিলে কাফের হবে না।

      কাশ্মিরী রহ. বলেন, আমার মতে এধরণের বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করা নিষিদ্ধ, আভিধানিক অর্থ করা নিষিদ্ধ নয়। -মাআরিফুস সুনান, ৪/১৫৬

      তাই আপনি যার কথা উল্লেখ করলেন, সম্ভব হলে তার কাছে আদবের সাথে কাশ্মিরী রহ. এর এ বক্তব্য পৌঁছানো যেতে পারে। তিনি হকের অন্বেষণকারী হলে হয়তো তার মত নিয়ে পূর্ণ পর্যালোচনা করবেন। কিংবা কমপক্ষে বিষয়টিকে ইজতিহাদী বিষয়ের আওতায় রাখবেন, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না।

      কিন্তু বাস্তব তো হল এই যে, এগুলোর আভিধানিক অর্থ করা যাবে। তাই বলা যাবে যে, আল্লাহ আরশে সমাসিন হয়েছেন। আল্লাহর হাত আছে। আল্লাহর ডান হাত আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তার স্বরূপ অজ্ঞাত। তা আল্লাহ ই জানেন যে তা কেমন। তা মানুষের হাতের মত নয়। মানুষের বসার মত নয়, ইত্যাদি। এটাই ইবনে তাইমিয়া রহ. এর মাযহাব এবং সম্ভবত বর্তমান সালাফিদেরও মাযহাব।
      ইস্তিওয়ার অর্থ সালাফ করেছেন,الصعود والارتفاع والعلو উপরে উঠা, আরোহন করা, চড়া ইত্যাদি দিয়ে, তাই এই শব্দগুলো দিয়ে অর্থ করলে তো কোন সমস্যা নেই। তেমনিভাবে ‘আল্লাহ আরশে আছেন’, এতটুকু বলতেও কোন সমস্যা নেই। বরং এ ব্যাপারে সালাফের ইজমা আছে, হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,

      وأخرج البيهقي بسند جيد عن الأوزاعي، قال: «كنا والتابعون متوافرون، نقول: إن الله على عرشه، ونؤمن بما وردت به السنة من صفاته».

      “বাইহাকী রহ. নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেন, ইমাম আওযায়ী রহ. বলেন, “অসংখ্য তাবেয়ী জীবিত থাকাবস্থায় আমরা বলতাম, আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর আছেন, এবং আমরা হাদিসে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালার সিফাতের ব্যাপারে ইমান রাখি। -ফাতহুল বারী, ১৩/৪০৬ প্রকাশনা, দারুল মারেফা, ১৩৭৯ হি.


      কিন্তু আল্লাহর তায়ালার শানে কোন সহিহ হাদিসে قعود/جلوس বসা, উপবেশন শব্দটি আসেনি। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে, কেউ কেউ আল্লাহর জন্য صفة القعود সাবেত করেছেন, কিন্তু সতর্কতার দাবী হলো, এ শব্দটি আল্লাহ তায়ালার শানে প্রয়োগ না করা। বিশেষকরে যেহেতু *ভারত উপমহাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ শব্দ প্রয়োগে ফিতনা ও কোন্দলের আশংকা রয়েছে। ইবনে উসাইমিন রহ. সহ বর্তমান সালাফীগণও এ শব্দটির প্রয়োগ না করাকেই উত্তম বলেছেন,
      ইসলামকার ফতোয়ায় এসেছে,

      الحمد لله
      أولا:
      الثابت في حق الله تعالى هو استواؤه على العرش، على ما يليق بجلاله ، وكماله ، سبحانه .
      وقد ورد ذلك في سبعة مواضع من كتاب الله، منها قوله تعالى: (إنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ) الأعراف/54
      والمشهور في تفسير الاستواء: أنه العلو والارتفاع.
      قال البخاري في صحيحه: " باب : ( وكان عرشه على الماء ) ، ( وهو رب العرش العظيم ) .
      قال أبو العالية: استوى إلى السماء: ارتفع... وقال مجاهد: استوى: علا على العرش".
      وقال البغوي رحمه الله: (ثم استوى إلى السماء): قال ابن عباس وأكثر مفسري السلف: أي ارتفع إلى السماء) انتهى من تفسير البغوي (1/78)، ونقله الحافظ في الفتح (13/417)، وقال: "وقال أبو عبيدة والفراء وغيرهما بنحوه".
      وأما الجلوس : فقد ورد في أحاديث لم تصح .
      لكن أثبته بعض السلف تفسيرا للاستواء، كما جاء عن الإمام خارجة بن مصعب الضبعي، أخرجه عبد الله بن أحمد في السنة (1/ 105) .
      وأثبت الحافظ الدارقطني: القعود، في أبيات مشهورة له.
      وعلى فرض ثبوت هذا "اللفظ" ، فإنه يجب اعتقاد نفي التشبيه.
      قال شيخ الإسلام رحمه الله: " فإذا عرف أن ما وُصفت به الملائكة ، وأرواح الآدميين ، من جنس الحركة والصعود والنزول وغير ذلك، لا يماثل حركة أجسام الآدميين ، وغيرها مما نشهده بالأبصار في الدنيا، وأنه يمكن فيها ما لا يمكن في أجسام الآدميين = كان ما يوصف به الرب من ذلك أولى بالإمكان ، وأبعد عن مماثلة نزول الأجسام .
      بل نزوله لا يماثل نزول الملائكة وأرواح بني آدم، وإن كان ذلك أقرب من نزول أجسامهم.
      وإذا كان قعود الميت في قبره ، ليس هو مثل قعود البدن، فما جاءت به الآثار عن النبي صلى الله عليه وسلم من لفظ (القعود والجلوس) ، في حق الله تعالى، كحديث جعفر بن أبي طالب رضي الله عنه، وحديث عمر بن الخطاب رضي الله عنه، وغيرهما = أولى أن لا يماثل صفات أجسام العباد" انتهى من مجموع الفتاوى (5/527).
      والأقرب التوقف في هذا اللفظ لعدم وروده في الكتاب والسنة الصحيحة ولا في أقوال الصحابة رضي الله عنهم.
      قال الشيخ ابن عثيمين رحمه الله: " فأما تفسير استواء الله تعالى على عرشه باستقراره عليه ، فهو مشهور عن السلف، نقله ابن القيم في النونية وغيره.
      وأما الجلوس والقعود : فقد ذكره بعضهم، لكن في نفسي منه شيء. والله أعلم" انتهى من مجموع فتاوى ابن عثيمين (1/ 196).
      وقال الشيخ البراك حفظه الله : " ورد في بعض الآثار نسبة الجلوس إلى الله تعالى، وأنه يجلس على كرسيه كيف شاء سبحانه . وربما أطلق بعض الأئمة هذا اللفظ أيضاً .
      وسياق كلام الشيخ [يعني : شيخ الإسلام ابن تيمية] يشعر بأن الاستواء يتضمن القعود .
      لكن الأولى التوقف في إطلاق هذا اللفظ ؛ إلا أن يثبت " انتهى من "شرح الرسالة التدمرية" ص 188
      وبناء على ما سبق :
      فلا نرى التعبير بلفظ الجلوس، إنما يقال: استوى على العرش، ويفسر الاستواء بالعلو والارتفاع.
      ومن تمسك بما جاء عن بعض السلف، فلا إنكار عليه .
      لكن يقال له: لا ينبغي أن يقال هذا أمام العامة، فربما كان فتنة لهم، وربما حملهم على التشبيه.
      وقد بان بذلك أن هذا التعبير ليس كفرا، بل هو تفسير لصفة الاستواء، مختلف فيه .
      وذكرنا أن الأظهر : التوقف في إطلاق هذا اللفظ .
      والله أعلم.

      ইসলাম ওয়েবের একটি ফতোয়ায় বলা হয়েছে,
      فالذي دلت عليه نصوص الكتاب والسنة وإجماع السلف الصالح أن الله تعالى يوصف بما وصف به نفسه، أو وصفه به رسوله صلى الله عليه وسلم، من غير تشبيه ولا تمثيل، ومن غير تأويل ولا تعطيل.
      واستواء الله عز وجل على العرش من هذا القبيل، فهو ثابت بالكتاب والسنة وإجماع سلف الأمة، فهم يعتقدون أن الله سبحانه مستوٍ على عرشه استواءً يليق بجلاله، ولا يماثل استواء المخلوقين، وأنه بائن من خلقه، وانظر أدلة ذلك في الفتوى رقم: 6707.
      ومعنى الاستواء عبر عنه أهل العلم بمعان أربعة، وهي: الارتفاع والعلو والصعود والاستقرار. وراجع ذلك في الفتاوى ذوات الأرقام التالية: 118504، 60784، 76111، 7256.
      وأمر ثان لابد من بيانه قبل النص على الجواب، وهو أن الصفات أو الألفاظ التي لم يأت الكتاب والسنة بنفيها ولا إثباتها، لم يتعرض لها السلف لا نفيا ولا إثباتا، والقاعدة في ذلك أن يستفصل قائلها، فإن أراد مثبتها معنى صحيحاً وافقناه على ذلك المعنى الصحيح، ولم نوافقه على استعمال ذلك اللفظ، وإلا فلا، والأولى هو الإعراض عن هذا اللفظ على كل حال، وقد سبق لنا تفصيل ذلك في الفتاوى ذوات الأرقام التالية: 120182، 134190، 135219 ، 134998. فنرجوا الاطلاع عليها للأهمية.
      وإذا عرف هذا، عرف أنه لا يجوز أن نقول: (إن الله جالس على عرشه) !! لأن لفظ الجلوس لم يأت به كتاب ولا سنة. بل إن هذا اللفظ أكثر ما يستعمله المبتدعة للتنفير من إثبات صفة الاستواء نفسها، حيث يفسرون الاستواء بالجلوس، ويقولون إنه من صفات الأجسام والمحدثات، وهذا محال على الله. وهكذا ترد النصوص الشرعية بدعوى مناقضتها للأدلة العقلية، وكأن أهل العلم في عصر النبوة وصدر هذه الأمة لم يكن عندهم من الفهم للنصوص الشرعية ما يفطنون به إلى مناقضة العقل وهكذا يدخل العبد في سلسلة من الانحرافات بسبب هذا الخلط وسوء الفهم عن الله ورسوله صلى الله عليه وسلم، ومثال ذلك ما قاله الإيجي في (المواقف) حيث أصل لضرورة تقديم العقل على النقل وقال: لو وجد ذلك المعارض (العقلي) لقدم على الدليل النقلي قطعا بأن يؤول الدليل النقلي عن معناه إلى معنى آخر. مثاله قوله تعالى: الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى. {طـه:5} فإنه يدل على الجلوس، وقد عارضه الدليل العقلي الدال على استحالة الجلوس في حقه تعالى، فيؤول الاستواء بالاستيلاء أو يجعل الجلوس على العرش كناية عن الملك. اهـ.
      ومن ذلك قول الرازي في (تأسيس التقديس) والذي نقله شيخ الإسلام للرد عليه في (بيان تلبيس الجهمية): أن القائلين بكونه جسما مؤلفا من الأجزاء والأبعاض لا يمنعون من جواز الحركة عليه، فإنهم يصفونه بالذهاب والمجيء، فتارة يقولون: إنه جالس على العرش وقدماه على الكرسي !! وهذا هو السكون، وتارة يقولون إنه ينزل إلى السماء الدنيا، وهذا هو الحركة. اهـ.
      وهكذا يتيسر نسف كل دليل شرعي، ولو كان قرآنا لا يأتيه الباطل من بين يديه ولا من خلفه إما بتحريفه وتزييفه، أو بتأويله وتعطيله، وإما بتحميله ما لا يحتمل ولزومه ما لا يلزم من اللوازم الباطلة.
      قال الدكتور محمد أمان في كتاب (الصفات الإلهية): خلاصة شبهتهم أنهم تصوروا - خطأ - أن النصوص التي نطقت بأن الله في السماء تدل بظاهرها على أنه تعالى مظروف في جوف السماء فشبهوه بمخلوق داخل مخلوق آخر، كما فهموا - خطأ - أيضاً من قوله تعالى: {الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى}. وما في معناه من النصوص أنه تعالى جالس على العرش، وأنه محتاج إليه، فشبهوه بإنسان جالس على سريره، محتاجاً إليه، فأرادوا أن يفروا من هذا التشبيه الذي وقعوا فيه لسوء فهمهم، فوقعوا في التعطيل. اهـ.
      [/size]
      الجهاد محك الإيمان

      জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

      Comment


      • #4
        ইস্তিওয়ার অর্থ সালাফ করেছেন,الصعود والارتفاع والعلو উপরে উঠা, আরোহন করা, চড়া ইত্যাদি দিয়ে, তাই এই শব্দগুলো দিয়ে অর্থ করলে তো কোন সমস্যা নেই। তেমনিভাবে ‘আল্লাহ আরশে আছেন’, এতটুকু বলতেও কোন সমস্যা নেই।

        আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং আমাদেরকে আপনার থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন!

        Comment


        • #5
          আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আদনান মারুফ ভাইয়ের ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুন এবং আমাদেরকে তাঁর ইলম থেকে যথাযথ ইস্তিফাদা অর্জন করার তাওফীক দান করুন,আমীন।
          বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
          কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

          Comment


          • #6
            ভাই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করেছেন জাযাকাল্লাহু খাইরান ভাই

            আল্লাহ তায়ালা নিয়ে আমাদের সমাজে যে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান রয়েছে সে গুলো হলো-

            ১. আল্লাহ তায়ালা কে খোদা বলে সম্বোধন করা অথচ এটা কুরআন সুন্নাহ কোখাও নেই

            ২. আল্লাহ তায়ালা কে সব জায়গায় বিরাজমান ও নিরাকার মনে করা এটা আকিদার একটা বিষয় দ্বীনের মুজাহিদ হয়ে যে এমন ধারণা করবে তার আকিদা বিশুদ্ধ হবে না আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলবে হেফাজত করুন আমিন





            অনেকে আবার আল্লাহ তায়ালা ক্ষুদ্ররতী হাত পা বলে থাকেন ক্ষুদ্ররত বলতে যদি শক্তি বোঝায় তাহলে সমস্যা নেই অন্যথায় উক্ত ব্যাক্তি কে কবিরা গুনাহগার হতে হবে

            আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিব বুজ দান করুন আমিন
            ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

            Comment

            Working...
            X