Announcement

Collapse
No announcement yet.

কেমন হবে মুজাহিদের আখলাক? পর্ব:২

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কেমন হবে মুজাহিদের আখলাক? পর্ব:২

    কেমন হবে মুজাহিদের আখলাক? পর্ব: ২

    ★ الاعداد للشهادة:
    ★শাহাদাতের প্রস্তুতি:

    " لاجهاد ولا صدقة فلم تدخل الجنة"
    " জিহাদ ও না সাদাকাহ ও না, তো কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে??

    মরণ হলো সমস্ত মাখলুকের একটি অবধারিত নিয়তি। আর শাহাদাত হলো এই মরণেরই একটি সর্বোৎকৃষ্ট পথ। শাহাদাতের সুমিষ্ট সুধা মহান আল্লাহ পাক তাঁর এমন বান্দাকেই পান করিয়ে থাকেন যাকে তিনি পছন্দ করেন। যেহেতু মুমিন বান্দা এমনিতেই সর্ব অবস্থাতে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার প্রতি আদিষ্ট হয়েছে, তদ্বপরি একজন মুজাহিদ সর্বদা মৃত্যুর ক্ষেত্রসমুহে ছুটে বেড়ায়, এজন্য শাহাদাত তার জীবনের একান্ত লক্ষ্য হয়ে থাকে।
    সুতরাং শাহাদাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এবং আল্লাহ তায়ালার চয়ন ও মুহাব্বতের অনুসন্ধান করা মুমিনের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

    আমরা কিভাবে শাহাদাতের জন্য প্রস্তুতি নেব? তার কয়েকটি আমলী পদেক্ষপের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।

    ১/ সত্য তাওবা,
    শাহাদাতের প্রথম পাথেয় হলো "التوبة الصادقة " একনিষ্ঠ তাওবা।
    হাদীসে পাকের মধ্যে এর একটি উদাহরণ এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ " আল্লাহ তায়ালা এমন দুজন ব্যক্তিকে দেখে হাসেন, যাদের একজন আরেকজনকে হত্যা করল এবং উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করল। তাদের একজন আল্লাহর পথে জিহাদ করতে করতে ( তার কাফের সাথীর হাতে ) শহীদ হল। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে (হত্যাকারীকে)তাওবার তৌফিক দান করেন, ফলে সে তাওবা করে এবং ঈমান আনে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদ করতে করতে শাহাদাত বরণ করে"।( সহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায়, হাদীস নং ২৮২৬)

    বর্তমানেও অনেক নও মুসলিমদের ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত দেখা যায়।

    সালাফদের স্বর্ণযুগে অনেক মুসলিমের ক্ষেত্রে এরকম ঘটেছে যে, সে রাতে মদ পান করেছে অতঃপর তাওবা করেছে এবং অনুতপ্ত হয়েছে। এরপরেও আত্মার প্রশান্তির জন্য সকাল হতেই শাহাদাতের নেশায় জিহাদের ময়দানে ছুটে গিয়েছে যাতে করে আল্লাহর রাহে নিজের জীবন কুরবান করে আপন পাপের কাফফারা আদায় করতে পারে।

    ২/ ইসলাহে আ'মাল,
    তাওবার সাথে সাথেই নিজের আ'মালকে সংশোধন করা। এক্ষেত্রে বিলম্ব করা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
    ইবনে ওমর রাঃ বলতেন, " যখন তুমি সন্ধ্যা কর তখন (আমলের জন্য) সকালের অপেক্ষা করো না,আর যখন সকাল করো তখন বিকালের জন্য অপেক্ষা করো না। তোমার অসুস্থতার পুঁজি সুস্থতার অবস্থায় সংগ্রহ করো, আর তোমার হায়াত থেকে মওতের পাথেয় নিয়ে নাও"। ( সহীহ বুখারী, রিকাক, অধ্যায় ৩, হাদীস নং ৬৪১৬)

    হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেনঃ " অর্থাৎ তোমার জীবন থাকতে নেক আমল কর যা তোমার মৃত্যুর পরে কাজে আসবে, আর যখন তুমি সুস্থ থাক তখন নেক আমলে অগ্রগামী হও, কারণ অসুস্থতা মানুষকে নেক আমল থেকে বিরত রাখে, তাই আশংকা রয়েছে যে, সুস্থ অবস্থায় অবহেলাকারী ব্যক্তি পরলোকগমন করবে অথচ তার কোন পাথেয় থাকবে না"!! ( ফাতহুল বারী ১১/ ২৩৫)

    ৩/ জান মালের কুরবানী করা,

    জান মালের কুরবানী ব্যতিরেকে শাহাদাতের তামান্না কল্পনা বৈ কিছু নয়। কারণ জিহাদ তো হলো আল্লাহর রাহে জানমালের সর্বোচ্চ ত্যাগের নাম। এবং জিহাদের ময়দানে জানমাল উভয়টিরই প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি জানমাল কুরবানী করতে প্রস্তুত নয়, সে কিভাবে জিহাদ করবে , এবং শাহাদাতের তামান্নাই বা কিভাবে করতে পারে? আর কিভাবেই বা এত সহজে জান্নাতের আশা করতে পারে?

    বাশীর বিন খাসাসিয়াহ্ (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বায়আ'ত হতে এসে বায়আ'তের দুটি শর্ত থেকে অব্যাহতি চেয়ে বসেন। এবং বলেনঃ "জিহাদ ও সাদাকাহ্" এই দুটি শর্ত পালন করা আমার জন্য সহজ নয়। কারণ আশংকা রয়েছে যে আমি জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসব আর তখন বড় গুনাহগার হব, এবং আমার পরিবারের আত্মরক্ষা ও বাহনের কাজে আসে মত কিছু মাল ছাড়া আমার কাছে এমন কোনো মাল নেই যা আমি সাদাকাহ করব"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে নাড়া দিয়ে বললেনঃ
    "لا جهاد و لا صدقة فلم تدخل الجنة"؟

    " জিহাদও করবে না সাদাকাহ্ও না তাহলে কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে"?
    বশীর (রা) বলেনঃ " অতঃপর আমি এ দুটি শর্ত মেনেই বায়আ'ত হই"। ( মুসনাদে আহমদ,৫/২২৪)

    তো জিহাদের মাসয়ালা হলো আত্মত্যাগের, যেখানে কোনো দরদাম এবং ছাড় চলে না।

    ৪/ সাহস এবং বীরত্বের অধিকারী হওয়া:

    আত্মত্যাগের জন্য বীর ও সাহসী হওয়া জরুরী। কাপুরুষ কখনো আত্মত্যাগী হতে পারে না। এজন্য যারা নিজেদের জানমাল এবং ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে বীরবিক্রমে লড়াই করে মারা যায় হাদীসে তাদেরকেও শহীদ বলা হয়েছে। যাতে মানুষের মধ্যে জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস এবং চেতনা সদা উজ্জীবিত থাকে।
    আর জিহাদ যেহেতু আল্লাহর দ্বীনকে সুমন্নত করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের নাম, তাই আল্লাহর পথে এমন ত্যাগ ও কুরবানী করার জন্য বীরত্ব এবং সাহসিকতা অপরিহার্য।

    আল্লাহ তায়ালার পথে কেমন বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রয়োজন তার নমুনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের

    এই হাদীস থেকে বুঝা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

    " خير معايش الناس لهم رجل ممسك بعنان فرسه في سبيل الله و يطير على متنه، كلما سمع هيعة أو فزعة طار عليه إليها يبتغي القتل أو الموت مظانه".
    " মানুষের মাঝে বসবাসকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলো যে আল্লাহর পথে নিজ অশ্বের লাগাম মুষ্টিবদ্ধ রাখে এবং তার পৃষ্ঠদেশে উড়ে বেড়ায়। যখনি তার কাণে যুদ্ধের তীব্রতা ভেসে আসে তখনি সে শাহাদাতের সন্ধানে রণাঙ্গনে ছুটে যায়"। ( সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ, আলবানী, ফিতান, অধ্যায় ১৩, হাদীস নং ৩২১২/৩৯৭৭)

    ৫/ শাহাদাত কামনায় আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান হওয়া:

    খায়বার যুদ্ধে হযরত আমের বিন আকওয়া রাঃ ভুলবশত হাঁটুতে নিজের তরবারির দ্বারা আঘাত পান এবং তিনি শহীদ হয়ে যান। তিনি আত্মহত্যা করেছেন ভেবে অনেকে বলতে থাকেনঃ " حبط عمله" "তাঁর আমল বিনাশ হয়েগেছে"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনলেন, অতঃপর তাঁর দুটি অঙ্গুলী একত্র করে বললেনঃ তাঁর জন্য দুটি পুরস্কার, সে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান মুজাহিদ ছিল তার আত্মত্যাগের মধ্যে আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না, তার মতো খুব কম আরব অতিবাহিত হয়েছে"।
    তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমেরের রাঃ জন্য দুটি পুরস্কারের সাক্ষ্য দিয়েছেন একটি হলো তাঁর জিহাদে ঐকান্তিক চেষ্টা ও ত্যাগের, অপরটি হলো তাঁর শাহাদাত বরণের।

    ৬/ শাহাদাতের জন্য দৃঢ় প্রত্যয় এবং মজবুত অঙ্গীকার:

    হযরত আনাস বিন নযর রাঃ যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের করতে পারেন নি, তিনি আল্লাহর সাথে এই বলে অঙ্গীকার করেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে পরবর্তী কোন যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উপস্থিত করলে, আমি আল্লাহকে আমার চেষ্টা– কুরবানী দেখিয়ে দেব"।


    পরবর্তী বছর তিনি যখন উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, ( একটি ভুলের কারণে যখন উহুদ যুদ্ধের পরিস্থিতি পাল্টে যায়)এবং এক পর্যায়ে মুসলিমরা পিছু হটা শুরু করেন, তখন তিনি তরবারি কোষমুক্ত করে সামনে বাড়তে থাকেন আর (সায়া'দ বিন মুয়া'যকে রাঃ ডেকে ডেকে) বলতে থাকেনঃ হে সায়া'দ! তুমি কোথায়? আমি তো উহুদের দিক থেকে জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি"!! এভাবে তিনি সামনে এগুতে থাকেন আর বীরত্বের চরম সীমার প্রকাশ ঘটিয়ে শত্রুদেরকে পর্যদুস্ত করতে করতে কোনো এক সময় উহুদ প্রান্তে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। যখন শহীদদের লাশ উদ্ধার করা হচ্ছিল এবং চিহ্নিত করা হচ্ছিল তখন তাকে স্বাভাবিকভাবে চেনার কোনো উপায় ছিল না। অতঃপর তাঁর সম্মানিতা বোন তাঁর শরীরের তিলক চিহ্ন অথবা আঙ্গুলের ডগা দেখে আপন ভাইকে চেনতে পারেন। যখন তাকে চিহ্নিত করা হয় তখন তাঁর দেহে তীর– বর্শার আশিরও অধিক ক্ষত ছিল।


    লড়াইয়ের ময়দানে তাঁর প্রচন্ডতা এবং তীব্রতার বিবরণ দিতে গিয়ে হযরত সায়া'দ বিন মুয়া'জ রাঃ বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে যা করেছে আমি তার সাহস করিনি।
    তো এটি ছিল হযরত আনাস বিন নযর রাঃ এর অসীম সাহস এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের পরিচয় যে, উহুদ যুদ্ধে হযরত সায়া'দ বিন মুয়া'জ রাঃ পরিপূর্ণ বীরত্ব এবং দৃঢ়তার সাথে অবিচল ছিলেন এতদ্বসত্বেও হযরত আনাস বিন নযর রাঃ যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি তার সাহস করেননি।

    সুতরাং হে মুজাহিদ! নিজেকে শাহাদাতের জন্য প্রস্তুত করো, আর তোমার জীবনের সর্বাধিক মুল্যবান সম্পদ: সময়, এবং শক্তি–সামর্থকে আল্লাহর পথের জন্য গচ্ছিত রাখো। যাতে তুমি দ্বীনের পথে সর্বোচ্চ আত্বত্যাগের উপমা স্থাপন করতে পারো, এবং তাঁদের তালিকাভুক্ত হতে পারো যাঁদের ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা হলো وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا"
    لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ ".

    ★ শাহাদাতের তামান্না করা এবং প্রস্তুতি নেয়া জীবনের প্রতি নিরাশ হওয়া নয়ঃ

    শাহাদাতের তামান্না করা ও প্রস্তুতি নেয়া জীবনের প্রতি নিরাশার কারণ নয়, কিংবা শাহাদাতের সন্ধানে মৃত্যুর জায়গাগুলোতে ছুটে বেড়ানো আত্নহুতি নয়। যেমন আত্বরক্ষার জন্য পরিখার আশ্রয় নেয়া কাপুরুষতা নয় এবং নিরাপত্তার উপায় উপকরণ গ্রহণ করা যেমন জীবনের প্রতি টান এবং দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসার লক্ষন নয়। অনুরূপভাবে বিপদ থেকে সতর্কতা অবলম্বন না করাটাও বীরত্ব ও সাহসিকতা নয়।

    মৌলিক বিষয় হলো একজন মুসলিমের জীবন মরণ উভয়টির লক্ষ্য হলো দ্বীন। দ্বীনের তাকিদে একজন মুসলিমের মরণ যেমন মুল্যবান ঠিক দ্বীনের লক্ষ্যে তাঁর জীবন ও ততটা গুরুত্বপূর্ণ।
    বরং মুমিন ব্যক্তির জীবনের একটি দিন বৃদ্ধি হলে, তাঁর সাওয়াবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, সে আরো অনেক নতুন নতুন শত্রুকে হত্যা করতে পারে, ফলে কাফেরদের ক্রোধ–পীড়া আরও বাড়তে থাকে।
    সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এমন দুজন ব্যক্তির ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করতেছিলেন, যারা একি সাথে ইসলাম গ্রহণ করে, তাদের একজন ছিল (আমলে) অধিক পরিশ্রমী, অতঃপর সে দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ আত্বত্যাগের উপমা রেখে শাহাদাত বরণ করে , অপরজন তার একবছর পর মৃত্যু বরণ করে। তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রাঃ স্বপ্ন দেখেন যে, দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম জনের পুর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কেন এভাবে আশ্চর্যন্বিত হচ্ছো? সাহাবাগণ (রাঃ) আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের প্রথম জন কি অধিক পরিশ্রমী ছিল না, এবং সে কি জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করে নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই, তবে তোমরা বলো যে, দ্বিতীয় জন কি আরো একবছর অধিক জীবন লাভ করেনি, এবং সে আরেকটি রমজান পায়নি অতঃপর সিয়াম পালন করেনি, এবং সে এত এত সালাত ও সাজদাহ্ করেনি??? সাহাবায়ে কেরাম রাঃ বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি সাঃ বললেন, এজন্যেই তাদের দুয়ের মাঝে এমন আসমান ও জমিনের ফারাক। (সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ , আলবানী, কিতাবুত তা'বীর, অধ্যায়১০, হাদীস নং ৩১৭১/৩৯২৫)

    ৭/ দুঃখ–কষ্ট, বিপদ–আপদে এবং রণাঙ্গনে অবিচল থাকার উপর ধৈর্য–সহ্যের অনুশীলন করাঃ

    শাহাদাতের জন্য সত্যিকারের প্রস্তুতি গ্রহণকারী নিজেকে দুঃখ– কষ্টে, বিপদ–আপদে মজবুত করবে, এবং ধৈর্য সহ্যে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলবে। যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে কখনো পালাবে না, যদিও সে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

    ইমাম বুখারী রহঃ এমর্মে হাদীস বর্ণনা করেন যে, হযরত নাফে'কে (রহঃ) জিজ্ঞাসা করা হল যে, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে কি মৃত্যুর উপর বায়আ'ত দিয়েছিলেন? তিনি বললেনঃ না, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের থেকে ধৈর্য- সহ্যের উপর বায়আ'ত নিয়েছেন।

    ইমাম বুখারী রহঃ এর পরপরই হযরত সালামাহ্ রাঃ থেকে এ মর্মে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন যা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে মৃত্যুর উপর বায়আ'ত নিয়েছেন। ( সহীহ বুখারী, কিঃজিহাদ, অধ্যায় ১১০, হাদীস নং ২৯৫৮, পরের হাদীস নং ২৯৬০।)

    হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ বায়আ'হ্ সংক্রান্ত এতদ্বোভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করে বলেনঃ " মৃত্যুর উপর বায়আ'ত গ্রহণ এবং রণাঙ্গনে অবিচল থাকার উপর বায়আ'ত গ্রহণ, এ দুটি কথার মধ্যে কোনো অমিল নেই। কারণ মৃত্যুর উপর বায়আ'ত গ্রহণ করার অর্থ হলো তাঁরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবিচল থাকবে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না যদিও তা তাঁদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, বাস্তবে মৃত্যু আসুক অথবা না আসুক,আবশ্যিকভাবে মৃত্যু সংঘটিত হওয়া জরুরি নয়। মূলত হযরত নাফে' এ কথাটিকেই অস্বীকার করে বলেছেন যে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ মৃত্যুর উপর বায়আ'ত গ্রহণ করেন নি। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের থেকে ধৈর্য-সহ্যের উপর বায়আ'ত নিয়েছেন। যার অর্থ হলো যুদ্ধ থেকে পালায়ন না করা এবং ময়দানে অবিচল থাকার উপর বায়আ'ত নিয়েছেন, চাই তা তাঁদেরকে মৃত্যুর মুখে পতিত করুক বা না করুক"।

    এ ব্যখ্যার সমর্থন করে এই একটি বর্ণনা, হযরত আবু উমামাহ রাঃ তিন তিন বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি আমার জন্য শাহাদাতের দোয়া করুন"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
    " اللهم سلمهم و غنمهم"

    " হে আল্লাহ তুমি তাকে এবং তার সাথীদেরকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখুন এবং তাদেরকে গনিমত দান করুন"। (মুসনাদে আহমদ,৫/২৪৮, সহীহ।)

    তো মূল কথা হলো, একজন মুসলিমের জীবনের নিরাপত্তাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন মুসলিমের জীবিত থাকাটা মুসলিমদের সংখ্যাকে বৃদ্ধি করে, তাঁদের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কাফেরদের অন্তরকে দগ্ধ করে। এরপরেও তাঁকে অসীম দুঃখ- কষ্ট, বিপদ- আপদে এবং রণাঙ্গনে অবিচল থাকার উপর ধৈর্য ও সহনশীলতার অনুশীলন করতে হবে।

    শাহাদাতের জন্য এমন অনুশীলনই একজন মুসলিমকে সত্যের জন্য সৎসাহসী করে তুলতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

    "افضل الجهاد كلمة عدل عند سلطان جائر"

    " সর্বোত্তম জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায়ের কথা বলা"। ( সহীহ সুনানে আবু দাউদ, আলবানী, কিঃ মালাহিম, অধ্যায় ১৭, হাদীস নং ৩৬৫০/ ৪৩৪৪।)

    ইমাম গাযালী রহঃ হাদীসের পর্যালোচনা করে বলেনঃ "অর্থাৎ: দ্বীনের ব্যাপারে কঠোর ব্যাক্তিগণ যখন জানবে যে, সর্বোত্তম জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায় ও সত্য বলা, এবং যখন জানবে যে, সত্য বলতে গিয়ে হত্যার শিকার হলে শাহাদাত বরণ করবে, তখন অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায় ও সত্য বলার জন্য অগ্রগামী হয়ে নিজেদেরকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করবে। এবং এপথে সকল দুঃখ যাতনা সয়ে নেবে, এসবের উপর আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ করবে, এবং নিজেদের এমন ত্যাগের বিনিময় কেবল আল্লাহর নিকটেই আশা করবে"। ( ইহয়ায়ে উলূমিদ্দীন ২/ ৩৪৩)

    আর এমন উন্নত চেতনা ব্যতীত উম্মাহর অস্তিত্ব হলো প্লাবনের খরকুটার মত। যার অনিবার্য পরিণতি হলো শত্রুদের অন্তর থেকে উম্মাহর ভীতি দূর হয়ে যাওয়া, যা মূলত উম্মাহর অন্তরে দুনিয়ার মুহাব্বত এবং মৃত্যুর ভয় তথা ওহান ব্যাধির বিষক্রিয়া, যে ব্যাধি উম্মাহকে অপমান লাঞ্ছনায় পরিতুষ্ট এবং পরিতৃপ্ত করে রাখে।

    ৮/ খাঁটি তাওয়াক্কুলঃ
    তুমি শাহাদাতের মানযিল তখনি প্রত্যাশা করতে পার যখন আল্লাহ তায়ালার উপর তোমার ভরসা নির্ভেজাল হবে।

    ইমাম বুখারী রহঃ আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় এই বিশ্বাস নিয়ে ধৈর্যের সাথে অবস্থান করবে যে, তাকে আল্লাহর লিখিত সিদ্ধান্তই স্পর্শ করবে, তবে সে ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করবে"।

    হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেনঃ " ধৈর্যের সাথে অবস্থান করার অর্থ হলো: কোনোরুপ উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এবং অস্থিরতা বিহীন আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং তাঁর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা। (যাকে বলা হয়, "রিযা বিলকাযা") আর এটি মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তির শাহাদাতের মর্যাদা লাভের জন্য প্রথম শর্ত। আর দ্বিতীয় শর্তটি হলো, আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা এবং তাক্বদীরের প্রতি পূর্ণ ইয়াক্বীন যে, তাকে তাই স্পর্শ করবে যা আল্লাহ তায়ালা লেখে রেখেছেন"। ( সহীহ বুখারী, কিঃ মাগাযী, অধ্যায় ৩৮, হাদীস নং ৪২০২।)

    তো মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তির শাহাদাতের মর্যাদা লাভের জন্য যদি ইয়াক্বীন, তাকদীরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং আল্লাহ তায়ালার উপর উপর পূর্ণ ভরসা শর্ত হয়ে থাকে তাহলে একজন মুজাহিদের জন্যও তা জরুরি।

    ৯/ নিয়তকে সবরকমের সংমিশ্রণ থেকে পবিত্র করাঃ

    শাহাদাতের তামান্না এবং প্রস্তুতির মূলভিত্তি হলো এখলাস, এবং নিয়তের পবিত্রতা।
    খায়বার যুদ্ধের একটি ঘটনা থেকে এর গুরুত্ব অনুধাবন হয়।

    খায়বার যুদ্ধে এক ব্যক্তি অত্যন্ত সহাসিকতার সাথে লড়াই করছিল। যখনি সে শত্রু পক্ষের কাউকে বিচ্ছিন্ন হতে দেখত তখনি ক্ষুধার্ত শিকারীর মতো তার পিছু ধাওয়া করে হত্যা করে ফেলত।
    তার এমন তীব্রতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই বলাবলি করতে লাগল যে, লোকটি আমাদের পক্ষে খুব যথেষ্ট করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথা শুনলেন এবং বললেন: লোকটি জাহান্নামী। একথা শুনে এক সাহাবী লোকটির পিছু নিল। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন যে লোকটি আহত হল এবং তরবারির একটি আঘাতকে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসল। ( সহীহ বুখারী, মাগাযী, অধ্যায় ৩৮, হাদীস নং ৪২০২)

    এজন্য হাদীসে পাকের মধ্যে একথা বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের অধিকাংশ শহীদ হচ্ছে যারা বিছানায় শুয়ে মৃত্যু বরণ করছে। আর যারা শত্রুদের মোকাবেলায় নিহত হয়েছে তাদের খুব কম লোকি শহীদ, তাদের নিয়তের কারণে"। ( মুসনাদে আহমদ ১/৩৯৭)

    তো কখনো এমনও হতে পারে যে, কোন ব্যক্তি বিছানায় মৃত্যু বরণ করল কিন্তু সে শাহাদাত থেকে বঞ্ছিত নয় তাঁর একনিষ্ঠতা আর সত্যবাদীতার কারণে। আবার এমনও হতে পারে যে, কোন ব্যক্তিকে রণাঙ্গন থেকে রক্ত মাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হলো কিন্তু নাঊযুবিল্লাহ সে আল্লাহর কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত! তার নিয়তের মধ্যে অহংকার-বড়াই , দলপ্রীতি-পক্ষপাতিত্ব এবং সুনাম-সুখ্যাতির মিশ্রণ থাকার কারণে!!

    এপ্রসঙ্গে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে কয়েকটি হলো এমনঃ

    ১/ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

    " من طلب الشهادة صادقا اعطيها و لو لم تصبه"

    " যে ব্যক্তি সত্যবাদীতার সাথে শাহাদাতের সন্ধান করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করবেন যদিও সে নিহত না হয়"। ( সহীহ মুসলিম, কিঃ ইমারাহ অধ্যায় ১৪৬, হাদীস নং ১৯০৮)

    ২/ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
    "من سال الله القتل في سبيل الله صادقا ثم مات أعطاه الله اجر شهيد"

    "যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তাঁর রাহে শহীদ হয়ার কামনা করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন"। ( মুসতাদরাকে হাকিম, ফাতহুল বারী ৬/১৬)

    ৩/ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

    " من سال الشهادة بصدق بلغه الله منازل الشهداء و إن مات على فراشه"

    " যে ব্যক্তি সত্য ও একনিষ্ঠতার সাথে শাহাদাত চাইবে আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদগণের মানযিলে পৌঁছে দেবেন যদিও সে বিছানায় মৃত্যু বরণ করে "। ( প্রাগুক্ত)

    তবে অন্তরের এখলাস এবং সত্যবাদিতার খবর আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানে না।
    অন্তরের পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়তের পরিশুদ্ধতা আসবে নফসের মুহাসাবার দ্বারা।

    সুতরাং হে মুজাহিদ! তুমি তোমার নফসের মুহাসাবা করো, অন্তরের উপর নজরদারি করো, আর তোমার নফসকে এখলাসের দারিতে উঠাও, দেখ! শাহাদাতের জন্য তোমার প্রস্তুতির পরিধি কতটুকু?? যাতে তোমার শেষ পরিণাম তাঁদের সাথে হয় যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

    " فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا".

    " তো তাঁরাই আল্লাহর পুরুস্কারপ্রাপ্ত বান্দা; নাবিয়্য়ীন, সিদ্দীক্বীন, শুহাদা এবং সালিহীনের সঙ্গী হবে, আর তাঁরা সঙ্গী হিসেবে কতই না উত্তম"!! ( নিসাঃ৬৯)



    আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
    = শাহাদাতের প্রস্তুতি ও পাথেয়:
    — সত্য তাওবা
    — ইসলাহে আ'মাল
    — আত্বত্যাগ ও কুরবানী
    — জুলুম– অন্যায় প্রতিরোধে বীরত্ব ও সাহসিকতা জরুরি
    — দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করা
    — ধৈর্য ও অবিচলতার ও অনূশীলন
    — শাহাদাতের দ্বারা মৃত্যুই মুখ্য নয়, বরং লক্ষ্য হলো; আত্বত্যাগ, কুরবানী, ধৈর্য ও উৎসর্গ
    — বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য প্রয়োজন দুনিয়া বিমুখতা এবং মৃত্যুর ভালো বাসা।
    — নিয়তের পবিত্রতা
    — সত্যবাদিতা এবং ঐকান্তিকতার সাথে এমন ভাবে শাহাদাতের সন্ধান করা যে, শাহাদাত বরণ না করলেও যেন শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।

    اللهم ارزقنا شهادة في سبيلك و اجعلنا مع الذين انعمت عليهم من النبيين والصديقين و الشهداء والصالحين، آمين يارب العالمين.

  • #2
    খুবই গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা, আল্লাহ্ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন,
    আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দিন এবং মিডিয়ার সকল ভাইকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন আমীন।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ,,খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
      আল্লাহ কবুল করুন,আমিন।
      ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

      Comment

      Working...
      X