Announcement

Collapse
No announcement yet.

আরবী-বাঙলা প্রতিবর্ণায়ন নীতি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আরবী-বাঙলা প্রতিবর্ণায়ন নীতি

    আরবী-বাঙলা প্রতিবর্ণায়ন নীতি


    রচনার প্রেক্ষিত: এ প্রবন্ধটি বিশেষত বাংলাদেশের মাদরাসাসমূহের শিক্ষক-ছাত্র, বাঙলা ভাষায় ইসলামী পাঠ্যপুস্তক-প্রণেতা এবং ইসলামী ঘরানার লেখক-পাঠকদের জন্যে। এতে আরবী ভাষার শব্দাবলি বাঙলা ভাষায় বানানের একটি সরল নিয়ম প্রস্তাব করব, ভাষাতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্বের জটিল আলোচনায় যাব না। অবশ্য তার মানে এ নয় যে, প্রস্তাবনাটি নেহাত ব্যক্তিসাধারণের খেয়াল মাত্র – বরং এতে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার ও শহিদুল্লাহর নির্দেশনা যথাসম্ভব অনুসরণ করা হয়েছে।

    ভুলের কারিগর: আরবী ভাষা ইংরেজি-বাঙলা-হিন্দি-উর্দু-ফারসির মতো কোনো আর্যভাষা নয়, বরং এটি শেমীয় গোত্রের ভাষা। আর্যভাষাসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আরবী ভাষার মিলের চেয়ে তাই অমিলই বেশি। আর্যগোত্রের ভাষাগুলোতে বানান ও উচ্চারণে অনেকখানি স্বাধীনতা নেওয়া যায়, কিন্তু আরবীতে সেই সুযোগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের ‘বাংলা একাডেমি’, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’ আরবী ভাষার এ ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করেছে, সেজন্যেই এসব প্রতিষ্ঠান বাঙলায় প্রচলিত বা অপ্রচলিত আরবী শব্দের বানানের ক্ষেত্রেও অন্যান্য বিদেশি শব্দের বানানের মতো একই নিয়ম প্রস্তাব করেছে। অথচ যাঁরা যৎসামান্য আরবী বোঝেন তাঁরাও জানেন যে, বাঙলা বর্ণে আরবী শব্দের এমন বানাননীতি কেবল অগ্রহণযোগ্য নয়, দস্তুরমতো হাস্যকরও বটে। ইদানীং কিছু ভাষামূর্খ খবরজীবীও ভিড়েছে বিকৃতির মিছিলে, একটি দৈনিক পত্রিকার নিজস্ব ‘ভাষারীতি’ ছাপানো তারই আস্ফালিত নজির।

    সমস্যা কোথায়: আরবী ভাষায় স্বরের হ্রাস-দৈর্ঘ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই ধাতু থেকে তৈরী শত শত শব্দ প্রধানত হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বরের সাহায্যেই ভিন্নার্থক বলে চিহ্নিত হয়। ভুলের কারিগরেরা বলেছেন—আরবী ভাষা থেকে আসা শব্দের বানান সবসময় ‘ই’ ‘উ’ দিয়ে লিখতে হবে, ‘ঈ’ ‘ঊ’ ব্যবহার করা যাবে না। তাদের পরামর্শ কেন অজ্ঞতাপ্রসূত, আসুন একটু খতিয়ে দেখি। ‘ওয়ালিদ’ মানে পিতা, আর ‘ওয়ালীদ’ অর্থ ছেলে। দুটো শব্দই পবিত্র কুরআনে আছে, যথাক্রমে ৩১:৩৩ ও ২৬:১৮ আয়াতে। উপসর্গ-সর্বনামের সংযুক্তি এবং বচন-লিঙ্গের পার্থক্য নিয়ে শব্দটা আছে কুরআনে আরো ১০০ জায়গায়। শব্দ দুটো বাঙলা বর্ণে লেখার দরকার হতেই পারে। সেক্ষেত্রে দুটো শব্দ যদি একই বানানে লেখা হয়, তাহলে কি সরাসরি বিপরীত অর্থের দুটি শব্দ একাকার হয়ে যাচ্ছে না? এভাবেই ‘ত্বারিক্ব’ মানে শুকতারা, কিন্তু ‘ত্বারীক্ব’ অর্থ পথ। ‘হাফির’ হলো পশুর খুর, আর ‘হাফীর’ গর্ত। ‘রাহিম’ অর্থ গর্ভ বা আত্মীয়তা, আর ‘রাহীম’ করুণাময়। ‘হাকিম’ হুকুমকর্তা, ‘হাকীম’ প্রজ্ঞাময়। ‘শাহিদ’ সাক্ষী, ‘শাহীদ’ (শহীদ) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী। ‘সাদিক’ সৎ, ‘সাদীক’ বন্ধু। ‘যাহিদ’ সন্ন্যাসী, ‘যাহীদ’ তুচ্ছ। ‘বারিদ’ ঠাণ্ডা, ‘বারীদ’ ডাক। ‘নুযুল’ আতিথ্য, কিন্তু ‘নুযূল’ অবতরণ। ‘হুর’ মুক্ত, অথচ ‘হূর’ অপ্সরা। ‘জুনুব’ অপবিত্র, কিন্তু ‘জুনূব’ পার্শ্ব। ‘তা’বুদু’ মানে তুমি ইবাদত কর, অন্যদিকে ‘(লা) তা‘বুদূ’ মানে তোমরা ইবাদত কোরো (না)—হ্রস্ব উ-কারে ‘তুমি’, দীর্ঘ ঊ-কারে ‘তোমরা’। আরবী সমস্ত ক্রিয়াপদেই হ্রস্ব-দীর্ঘের পার্থক্যে এমন অর্থপার্থক্য ঘটবে। অধিকন্তু সাধারণ কর্তৃপদ আর আধিক্যবোধক (মুবালাগা) ও স্থায়ী গুণবাচক (মুশাব্বাহা) বিশেষ্যের বানানভেদে অর্থভেদের ধরন তো আরও ব্যাপক ও মারাত্মক। যেমন ‘আলিম’ মানে জ্ঞানী, কিন্তু ‘আলীম’ সর্বজ্ঞ। কুরআনে দ্বিতীয় গুণটি শুধু আল্লাহর জন্যে প্রযুক্ত হয়েছে, মানুষ কখনোই তা হতে পারে না। একইভাবে ‘ক্বাদির’ শক্তিমান, কিন্তু ‘ক্বাদীর’ সর্বশক্তিমান। ‘সামি‘’ শ্রোতা, সামী‘’ সর্বশ্রোতা। ‘হাফিয’ রক্ষক, ‘হাফীয’ মহারক্ষক। ‘মাজিদ’ মর্যাদাবান, ‘মাজীদ’ মহিমান্বিত। ঈ-কার ঊ-কারের ব্যবধান ছাড়া কুরআনের এসব শব্দে-পরিভাষায় স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে আলাদা করব কীভাবে?

    বাঙলা বর্ণ ৫০টি, আরবী হরফ ২৮টি। বাঙলার এ আড়াই কুড়ি বর্ণ দিয়ে ঘেরাঘিরি করেও আরবীর মাত্র চৌদ্দটি হরফের আওয়াজ আদায় করা যায়। বাকি চৌদ্দটির ঠিক ধ্বনিটি বাঙলা বর্ণমালায় ধরা যায় না। এমন নাজুক অবস্থায়ও যেসব একচোখা পণ্ডিত যথাসাধ্য কাছাকাছি আসার চিন্তা না করে উল্টো আরবী ج, ذ, ز, ض, ظ এ পাঁচটি হরফের স্থলে কুল্লে এক ‘জ’ দিয়ে কাজ সারবার নীতি প্রস্তাব করেন, আমাদের আরও যে একটা ‘য’ আছে তা ব্যবহার করতে মানা করেন—তাঁরা আরবী ভাষা সম্পর্কে শুধু অজ্ঞতার কারণেই সেটা করেন নাকি কোনো দুর্বুদ্ধিও কাজ করে তাঁদের ভেতরে ভেতরে, তা নিয়ে সন্দেহ করবার শক্ত কারণ আছে বৈকি!

    কীভাবে লিখব: আরবী কুরআন-হাদীসের ভাষা। তাই বাঙলা বর্ণমালায় আরবী শব্দাবলির যথাসম্ভব শুদ্ধ ও মূলের নিকটবর্তী উচ্চারণের ব্যাপারে কোনো মুসলিম উদাসীন থাকতে পারে না। এই যথাসম্ভব শুদ্ধতা ও মূলানুগত্য রক্ষা করা, বিকারবাদীদের রুখে দাঁড়ানো এবং সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন করা বাঙলাভাষী উলামা কিরামের দায়িত্ব। আরবী-বাঙলা প্রতিবর্ণায়নে নিম্নোক্ত নিয়মগুলি মেনে চললে ভুল, বিকৃতি ও বিভ্রান্তি অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করা যায়:

    এক. আরবী ذ, ز, ض, ظ এ চারটি হরফের স্থলে বাঙলায় “য” লিখুন। যেমন— ‘আযান’, ‘যাকাত’, ‘ফরয’, ‘যুহর’, ‘যিকর’, ‘যিম্মা’, ‘যালিম’, ‘যাবূর’, ‘রিযক’, ‘যাহির’, ‘গযব’, ‘যাঈফ’, ‘মাউযূ‘’, ‘ক্বাযা’, ‘হাফিয’, ‘নাযিল’, ‘নাযিম’, ‘যাকারিয়া’, ‘যিহার’, ‘রওযা’, ‘মীযান’, ‘হিফয’, ‘নাযিরা’, ‘নাবীয’, ‘মা‘যূর’, ‘আযাব’, ‘গযল’, ‘রাফিযী’, ‘মু‘তাযিলা’, ‘আযাদ’, ‘যমযম’ ইত্যাদি।

    দুই. আরবী শব্দে ج থাকলে বাঙলায় সবসময় “জ” লিখুন। যেমন— ‘জাহিল’, ‘জাদীদ’, ‘জাযা’, ‘জিযিয়া’, ‘জুমলা’, ‘জান্নাত’, ‘জাহান্নাম’, ‘জামিদ’, ‘জামিয়া’, ‘জিহাদ’, ‘ইজতিমা’, ‘ইজতিহাদ’, ‘জিলদ্’, ‘জুমুয়া’, ‘জানাযা’, ‘জায়িয’, ‘রিজাল’, ‘বুরূজ’ ইত্যাদি।

    তিন. আরবী ث, س, ص এ ৩টি হরফের জায়গায় বাঙলায় “স” লিখুন। যেমন— ‘সানী’, ‘সালিস’, ‘সামূদ’, ‘সাওয়াব’ (সওয়াব), ‘সিক্বাহ’, ‘বাহস’ (বাহাস), ‘সুবহান’, ‘সিজদা’, ‘রাসূল’, ‘সালাম’, ‘সিলসিলা’, ‘মাসহ’, ‘সুন্নাহ’ (সুন্নাত), ‘মুস্তাহাব’, ‘সাবিত’, ‘সুলতান’, ‘সালাফ’, ‘সালিহ’, ‘সবর’, ‘সাহীফা’ (সহীফা), ‘সাদাক্বা’ (সাদকা), ‘সারফ’, ‘সালাত’, ‘সাওম’, ‘সাহাবা’, ‘সাহীহ’ (সহীহ), ‘খাসলত’, ‘সূফী’, ‘নাসীব’ (নসীব), ‘নিসাব’, ‘নাসীহা’ (নসিহত), ‘রুখসাত’ ইত্যাদি।

    চার. আরবী ভাষায় মূল স্বর-ধ্বনি মাত্র ৩টি: ‘আ’, ‘ই’, ‘উ’। এগুলোরই দীর্ঘ রূপ ‘আা’, ‘ঈ’, ‘ঊ’। (যুক্ত স্বর-ধ্বনি ‘আই’ {শিথিল উচ্চারণ ‘আয়’}, ‘আউ’ {শিথিল উচ্চারণ ‘আও’।}) বাঙলা প্রতিবর্ণায়নে আরবী শব্দের ‘দীর্ঘ আা’ ধ্বনির প্রতিফলন এখনও সহজ ও গ্রাহ্য হয়ে ওঠে নি, নানা কারণে এটি লেখা ও পড়া দুই ক্ষেত্রেই দুরূহ। তাই বাঙলায় প্রতিবর্ণায়নযোগ্য আরবী স্বর-ধ্বনি মোট ৫টি: ‘আ’, ‘ই’, ‘উ’, ‘ঈ’, ‘ঊ’। অন্যদিকে বাঙলা ভাষায় স্বর-ধ্বনি ১১টি, (৮টি মৌলিক ও ৩টি যৌগিক)। আরবীতে ‘অ’, ‘এ’, ‘ও’ এই ৩টি মৌলিক স্বর-ধ্বনির অস্তিত্ব মোটেই নেই। দেশীয় প্রচলনের প্রভাবে বাঙলা ভাষায় প্রবিষ্ট ও বহুব্যবহৃত কিছু আরবী শব্দের অ-কারযুক্ত উচ্চারণের অনিয়ম ক্ষেত্রবিশেষে শিথিলযোগ্য হলেও—যেমন ‘রহমত’, ‘বরকত’, ‘হযরত’, ‘কুদরত’, ‘যমযম’, ‘তদবির’, ‘মসজিদ’, ‘খতিব’, ‘ফরয’, ‘সফর’, ‘নবী’, ‘মযলুম’, ‘শয়তান’, ‘রফিক’, ‘যয়নব’ প্রভৃতি—কোনো আরবী শব্দে কখনোই ‘এ-কার’ এবং ‘ও-কার’ ব্যবহার করবেন না। অতএব আলেম নয়, ‘আলিম’; কোরআন নয়, ‘কুরআন’; এলেম নয়, ‘ইলম’; মোহাম্মদ নয়, ‘মুহাম্মদ বা মুহাম্মাদ’; বোখারী নয়, ‘বুখারী’; রেসালত নয়, ‘রিসালত’; খোতবা নয়, ‘খুতবা’; মেশকাত নয়, ‘মিশকাত’; হাফেজ বা হাফেয নয়, হাফিয; কোরবানি নয়, ‘কুরবানী’; কামেল নয়, ‘কামিল’; এহতেমাম নয়, ‘ইহতিমাম’; শেরক নয়, ‘শিরক’; দোয়া নয়, ‘দুয়া’ ইত্যাদি। তবে যেসব শব্দের উৎস আরবী ভাষা হলেও যুগ যুগ ধরে বাঙালি সমাজে ব্যবহৃত হতে হতে অধুনা লোকমুখে ও অভিধানে বাঙলা শব্দ বলেই গৃহীত হয়েছে এবং মূল উচ্চারণ আর ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর বলে মনে হয় না, বাঙলা শব্দ হিসেবে লেখার সময় সেসব শব্দের বাঙলা অভিধান-নির্দেশিত বানানই বহাল রাখা সঙ্গত—যেমন: ‘গোসল’, ‘এতিম’, ‘এলাহি’, ‘গোলাম’, ‘জেরা’, ‘ওযু’, ‘দোয়াত’, ‘নেকাব’, ‘মেজাজ’, ‘রেহেল বা রেহাল’, ‘রেওয়াজ’, ‘রেকাব’, ‘লোকসান’ (নুক্বসানের অপভ্রংশ), ‘মোকাম’, ‘মোসাহেব’ ইত্যাদি। আর যেসব আরবী-জাত বাঙলা শব্দের একাধিক বানান প্রচলিত ও বিকল্প বানান বোধগম্য, সেসব শব্দে মূল আরবী উচ্চারণের অধিকতর নিকটবর্তী বানানই গ্রহণ করা শ্রেয়—যেমন: কেয়ামত বাদ দিয়ে ‘কিয়ামত’, মোলাকাত না লিখে ‘মুলাকাত’, মোবারক ছেড়ে ‘মুবারক’, মোতাবেক হতে ‘মুতাবিক’ ইত্যাদি।

    পাঁচ: আরবী শব্দের যেখানে শুধু ‘যের’ (পরে ‘ইয়া সাকিন’ নেই), বাঙলায় সেখানে ই-কার দিন: যেমন— ‘ইলাহ’, ‘নিকাহ’, ‘শিমাল’, ‘ফাযিল’, ‘গাফিল’, ‘কাতিব’, ‘ফিদইয়া’, ‘ফারায়িয’, ‘মাসাদির’, ‘মুহাদ্দিস’, ‘মুফাসসির’ ইত্যাদি। আর ‘যের’-এর পরে ‘ইয়া সাকিন’ থাকলে ঈ-কার দিন: যেমন— ‘ঈদ’, ‘তীন’, ‘লীন’, ‘ঈসা’, ‘সীরাত’, ‘মীরাস’, ‘হাদীস’, ‘সহীহ’, ‘জাদীদ’, ‘শহীদ’, ‘মুস্তাক্বীম’, ‘মুরসালীন’ ইত্যাদি।

    ছয়: আরবী শব্দের যেখানে শুধু ‘পেশ’ (পরে ‘ওয়াও সাকিন’ নেই), বাঙলায় সেখানে উ-কার দিন: যেমন— ‘কুরআন’, ‘মুরশিদ’, ‘সুন্নাহ’, ‘গুন্নাহ’, ‘জুমুয়া’, ‘হুমাযা’, ‘জুমলা’, ‘ফুরকান’, ‘হুসবান’, ‘হুদহুদ’, ‘মুফরাদাত’, ‘বুরতুক্বাল’ ইত্যাদি। আর ‘পেশ’-এর পরে ‘ওয়াও সাকিন’ থাকলে ঊ-কার দিন: যেমন— ‘নূহ’, ‘রূহ’, ‘হূদ’, ‘মূসা’, ‘সূরা’, ‘রাসূল’, ‘হুদূদ’, ‘কুনূত’, ‘মাহরূম’, ‘মাসঊদ’, ‘মারদূদ’ ইত্যাদি।

    লক্ষণীয়: শব্দটি যদি আরবী না হয়ে উর্দু, ফারসি বা হিন্দি হয়, তাহলে যেরের পরে ইয়া সাকিন ও পেশের পরে ওয়াও সাকিন থাকলেও ঈ-কার ও ঊ-কার জরুরি নয়: যেমন— ‘ফারসি’, ‘উর্দু’, ‘তিসরা’, ‘শিরায’, ‘গিদড়’, ‘পেচিদগি’, ‘খুশি’, ‘পুশিদা’, ‘সুকনা’, ‘রুকনা’, ‘আফরুয’ ইত্যাদি। অধিকন্তু আরবীঘেঁষা এ তিনটি ভাষাতেই অ-কার, এ-কার, ও-কার রয়েছে: যেমন— ‘পরদা’, ‘বে-দার’, ‘রোযা’ ইত্যাদি।

    সাত: কোনো আরবী শব্দে কখনোই “ছ” ব্যবহার করবেন না। কারণ আরবী ভাষায় এ ধ্বনিটি একেবারেই অজ্ঞাত। বাংলাদেশের বহু অঞ্চলের কথ্য ভাষায় ভুল করে “ছ” বর্ণটিকে ইংরেজি face শব্দের “c” কিংবা bus শব্দের “s”-এর মতো উচ্চারণ করা হয়ে থাকে। এরই অনুসরণে অনেকে আরবী س ,ث ও ص -এর স্থলে বাঙলা “ছ” ব্যবহার করেন। স্পষ্ট যে, বাঙলা “ছ”-এর শুদ্ধ উচ্চারণ সম্পর্কে অজ্ঞতাই তাঁদেরকে এ ভুল প্রতিবর্ণায়নে উদ্বুদ্ধ করে। কেউ কেউ আবার ث ও س-এর জায়গায় “স” ব্যবহার করলেও ص-এর স্থলে “ছ” লেখেন—এঁদের ধারণা, “ছ” বর্ণটি س-এর চেয়ে ص-এরই বেশি নিকটতর। আসল ব্যাপার এর ঠিক উল্টো। س-এর সঙ্গে “ছ”-এর যতটা দূরত্ব, ص হরফটি তারও দূরতর। কারণ ص-এ ইস্তি‘লা ও ইত্ববাক সিফাত আছে, ফলে হরফটির আওয়াজ হয় মোটা যা س-এর বিপরীত। বস্তুত “ছ”-এর উচ্চারণ ইংরেজি “chh” এবং ফারসি چھ-এর মতো। ধ্বনিতত্ত্ব ঘাঁটাঘাঁটি তো সবার কাজ নয়, পুরনো নথিপত্রে বাংলাদেশের ছ-যুক্ত জায়গার নাম যেমন ‘ছাতক’ ‘খাগড়াছড়ি’ ইত্যাদির বানান দেখলেও মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাবে। অতএব আরবী ‘ছালাত’, ‘ছিয়াম’, ‘ছূফী’, ‘ছদকা’, ‘ছবর’, ‘ছাহেব’, ‘ছিদ্দীক’, ‘মিছবাহ’ বা ভুলের দিকে আরেক কদম এগিয়ে ‘মেছবাহ’ প্রভৃতি বানান মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

    আট: ব্যাপক প্রচলন ও বোধগম্যতার স্বার্থে, অর্থবিকারের শঙ্কা নেই এমন কিছু কিছু আরবী শব্দের বানানে, নিয়মের ব্যতিক্রম করা যেতে পারে। যেমন: “দ্বীন” (دين)। আমাদের প্রস্তাবিত নীতি অনুযায়ী এর বানান হয় “দীন”। কিন্তু বাঙলা ভাষায় দীন মানে দরিদ্র। অন্যদিকে বাংলা একাডেমির প্রস্তাবিত ভুল নিয়ম অনুযায়ী শব্দটির বানান হয় “দিন”। এটিও প্রসিদ্ধ বাঙলা শব্দ, এর মানে দিবস। দু দিকেই বিভ্রান্তি। ফলে দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসা “দ্বীন” বানানটি এক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে যেহেতু অভিন্ন বানানের একই শব্দের বিভিন্ন অর্থের উদাহরণ সব ভাষাতেই আছে, সেই যুক্তিতে কেউ ধর্ম অর্থে “দীন” লিখলেও লিখতে পারেন। একইভাবে ك থেকে আলাদা করার জন্যে ق=ক্ব এবং ت থেকে আলাদা করতে ط=ত্ব লেখা সাধারণ নিয়ম হলেও ক্ষেত্রবিশেষে ব-ফলা বাদ দেওয়া যেতে পারে: যেমন— ‘কায়দা’, ‘কবর’, ‘কিবলা’, ‘কিয়ামত’, ‘কাদির’, ‘কাসিম’, ‘হক’, ‘কুরআন’ এবং ‘তূর’, ‘তায়িফ’, ‘তাগূত’, ‘বাতিল’, ‘তায়্যিব’, ‘তালাক’, ‘তাহারাত’ ‘তাওয়াফ’ ইত্যাদি।

    লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
    সংগ্রহীত পোস্ট
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    মাশা আল্লাহ!
    খুব যুগোপযোগী সংগ্রহিত পোস্ট। ভায়েয়া আসুন! এটাকে মূল্যায়ন করি, সযত্নে হেফাজত করি।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ,,,জাযাকাল্লাহ,,,।
      অনেক অনেক শোকরিয়াহ,,,আপনার লিখা থেকে অনেক উপকৃত হলাম।
      আল্লাহ তা'য়ালা আপনার ইলমের মধ্যে বারাকাহ দান করুন,আমীন।
      ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

      Comment


      • #4
        মাশা আল্লাহ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
        আপনারা যারা লেখালেখি করেন, তারা এই লেখাটা অনুসরণ করতে পারেন, ইনশা আল্লাহ।
        বিশেষ করে ফোরামে যারা পোস্ট-কমেন্ট করেন, তাদের প্রতি বিনীত নিবেদন- আপনারা শুদ্ধ বানানের ব্যাপারে আরও একটু সচেতন হোন। প্রয়োজনে অভিধানের সহায়তা নিন।
        আল্লাহ তা‘আলা লেখক ও পোস্টকারীকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          আখী ফিল্লাহ! (নাকি ‘আখি’ লিখবো?)
          এরকম সংগ্রহ খুবই উপকারী ও সকলের দরকারী। সুন্দর হয়েছে, মাশাআল্লাহ।
          আরোও আরোও সংগ্রহ করে আমাদেরকে উপহার দিবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে সাহায্য করুন এবং ভাইদের কাজগুলোকে সহজ ও সুন্দর করে তাতে বারাকাহ দান করুন। আমিন ইয়া রব্বাল মুজাহিদীন।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ! খুবই উত্তম পোস্ট।

            তবে কয়েকদিন আগে ... সাহেব-ও বানানরীতি নিয়ে একটি লিখা দিয়েছেন। সেখানে দীর্ঘ-ঈ কার ও দীর্ঘ-ঊ কার ব্যবহার না করার জন্য বলেছেন। এখন কোন নিয়মের অনুসরণ করা হবে বুঝতে পারছি না।
            তবে আরবীর সাথে যতটা মুনাসাবাত রাখা যায়, ততটাই হয়তো ভালো হবে।

            আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলকে শুদ্ধ লিখার তাওফীক দান করুন, আমীন।
            Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-01-2020, 10:53 PM.
            বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
            কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

            Comment


            • #7
              Originally posted by তাহমিদ হাসান View Post
              আখী ফিল্লাহ! (নাকি ‘আখি’ লিখবো?)
              উপরে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী তো আরবীর শেষে "ইয়া" অর্থাৎ "মাদের হরফ" থাকলে দীর্ঘ-ঈ/কার দেয়ার কথা। সে হিসাবে "আখী"-ই হবে ভাই।
              বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
              কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

              Comment


              • #8
                অনেক আগে থেকেই অধম এই নীতিই গ্রহণ করে আসছি, আলহামদুলিল্লাহ। অধুনা প্রায় সবাই-ই বিশেষ গোষ্ঠীর এই ভুলনীতির দিকেই জেনে বা না জেনে ধাবিত হচ্ছেন। যার ফলে দেখা যায়, আমরা ঈদ পালন করলেন তারা করেন ‘ইদ’, আমরা ইসলামী খিলাফাহর জন্য লড়াই-সংগ্রাম করলেও, তাদের চাওয়া ‘ইসলামি খেলাফাহ’। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমরা শেষনবী মানলেও, তাদের মতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষনবি! ...

                তবে এই লেখাটি থেকে ‘ছ’ সংক্রান্ত তথ্যটি নতুন করে জানতে পারলাম। অন্তত লেখার এই অংশটি কোন ভাই যদি আমাদের প্রিয় আদীব হুজুরের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন, আশা করি তিনি হুজুরের অনেক অনেক দু‘আ পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

                এই লেখা ও পোস্ট সংক্রান্ত সকলকে অন্তর থেকে মুবারকবাদ জানাই। জাযাকুমুল্লাহু আহসানাল জাযা।
                نحن الذين بايعوا محمدا، على الجهاد ما بقينا أبدا

                Comment


                • #9
                  আবু তাহির মিসবাহ হুজুর তার "এসো কলম মেরামত করি" বইতে লিখেছেন যেখানে উ ও ঊ এর ব্যবহার নিয়ে সংশয় সেখানে উ ব্যবহার করবে। আবার ই ও ঈ নিয়ে যেখানে সংশয় সেখানে ই ব্যাবহার করবে।
                  আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তার পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।

                  Comment


                  • #10
                    Originally posted by কালো পতাকাবাহী View Post


                    উপরে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী তো আরবীর শেষে "ইয়া" অর্থাৎ "মাদের হরফ" থাকলে দীর্ঘ-ঈ/কার দেয়ার কথা। সে হিসাবে "আখী"-ই হবে ভাই।
                    শুকরিয়া কালো পতাকাবাহী ভাই...নিয়ম অনুযায়ী আখী হওয়াই যুক্তিযুক্ত, ইনশা আল্লাহ
                    পাঁচ: আরবী শব্দের যেখানে শুধু ‘যের’ (পরে ‘ইয়া সাকিন’ নেই), বাঙলায় সেখানে ই-কার দিন: যেমন— ‘ইলাহ’, ‘নিকাহ’, ‘শিমাল’, ‘ফাযিল’, ‘গাফিল’, ‘কাতিব’, ‘ফিদইয়া’, ‘ফারায়িয’, ‘মাসাদির’, ‘মুহাদ্দিস’, ‘মুফাসসির’ ইত্যাদি। আর ‘যের’-এর পরে ‘ইয়া সাকিন’ থাকলে ঈ-কার দিন: যেমন— ‘ঈদ’, ‘তীন’, ‘লীন’, ‘ঈসা’, ‘সীরাত’, ‘মীরাস’, ‘হাদীস’, ‘সহীহ’, ‘জাদীদ’, ‘শহীদ’, ‘মুস্তাক্বীম’, ‘মুরসালীন’ ইত্যাদি।
                    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                    Comment


                    • #11
                      Originally posted by কালো পতাকাবাহী View Post
                      তবে কয়েকদিন আগে ... সাহেব-ও বানানরীতি নিয়ে একটি লিখা দিয়েছেন। সেখানে দীর্ঘ-ঈ কার ও দীর্ঘ-ঊ কার ব্যবহার না করার জন্য বলেছেন। এখন কোন নিয়মের অনুসরণ করা হবে বুঝতে পারছি না।
                      তবে আরবীর সাথে যতটা মুনাসাবাত রাখা যায়, ততটাই হয়তো ভালো হবে।
                      না বুঝার তো কিছুই নেই ভাই। আপনি দু’টো লেখা-ই পড়ুন, তারপর আপনার কাছে যেটা ভালো মনে হয়, সেটার উপর আমল করুন। কারণ, কোনটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। বরং প্রস্তাবনা। তবে আপনার এই কথাটাই ঠিক-“তবে আরবীর সাথে যতটা মুনাসাবাত রাখা যায়, ততটাই হয়তো ভালো হবে।” আর এক্ষেত্রে এখানকার নিয়মটিই প্রযোজ্য হয়। কারণ, আরবীর সাথে বেশী মুনাসাবাত রাখে। শুকরিয়া
                      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                      Comment


                      • #12
                        Originally posted by মারজান View Post
                        আবু তাহির মিসবাহ হুজুর তার "এসো কলম মেরামত করি" বইতে লিখেছেন যেখানে উ ও ঊ এর ব্যবহার নিয়ে সংশয় সেখানে উ ব্যবহার করবে। আবার ই ও ঈ নিয়ে যেখানে সংশয় সেখানে ই ব্যাবহার করবে।
                        মুহতারাম ভাই- আদীব হুজুর যদি এমন বলে থাকেন, তাহলে তা বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে চলতে পারে। আরবীর প্রতিবর্ণায়ন-এর ক্ষেত্রে নয়।
                        আশা করি বুঝতে পেরেছেন ভাই। জাযাকাল্লাহ
                        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                        Comment

                        Working...
                        X