Announcement

Collapse
No announcement yet.

দলিলের বিপরীতে আকাবিরের অজুহাত কি গ্রহণযোগ্য?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দলিলের বিপরীতে আকাবিরের অজুহাত কি গ্রহণযোগ্য?

    আমাদের উপমহাদেশের অনেকের মাঝে কঠিনভাবে আকাবিরপ্রীতি কাজ করে। এটাকে আকাবিরপ্রীতি না বলে আকাবিরপুঁজাও বলা যায়। আকাবিরপ্রীতি ও আসলাফের অনুসরণ মন্দ তো নয়ই; বরং তা উপকারী ও প্রয়োজনীয়ও বটে। কিন্তু যখন সত্য ও স্পষ্ট দলিলের পথে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তখন অবশ্যই সেটা নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য বলে বিবেচিত হবে। হক তালাশের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হলো এ ধরনের অন্ধ আকাবিরপুঁজা। অনেকে আছেন, যারা আকাবির অনুসরণ ও আকাবির মানার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। একটাকে আরেকটার সাথে মিলিয়ে জগাখিচুরি বানিয়ে ফেলে। অথচ উভয় দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে আকাশ-পাতাল ব্যবধান, যা সচেতন লোকেদের অজানা নয়। আকাবিরপুজার ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহ.-এর একটি ঘটনা ও তাঁর ঐতিহাসিক বাণী আমাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। সত্যসন্ধানীদের জন্য এটা উদ্দীপক ও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে; যদি আল্লাহ তার কল্যাণ চান। অন্ধপ্রীতির এ কৃষ্ণ পথের পথিকদের জন্য এটা হবে চরম এক চপেটাঘাত। চলুন তাহলে শুনে আসি সে শিক্ষনীয় ঘটনাটি। ইমাম শাতিবি রহ. তাঁর ‘আল-মুওয়াফাকাত’-এ বর্ণনা করেন : ‘আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহ. বলেন, আমি একবার কুফায় গেলে কুফার আলিমগণ আমার সাথে নাবিজে তামার (নেশা উদ্রেককারী খেজুর ভেজানো পানি) এর হুকুম নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলো। আমি বললাম, প্রমাণ নিয়ে এসো। তোমরা এটা বৈধতাসংক্রান্ত যেকোনো সাহাবি থেকে এর প্রমাণ পেশ করো। তোমরা যাঁর থেকেই বৈধতার বর্ণনা পেশ করো না কেন, আমি যদি তাঁর থেকেই এ ব্যাপারে অবৈধ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করতে না পারি তাহলে তোমাদের দলিল ঠিক আছে, আমি তোমাদের কথা মেনে নেব। অতঃপর তারা যে সাহাবি থেকেই বৈধতার বর্ণনা পেশ করে আমি তাঁর থেকে এ ব্যাপারে কঠোরতাসংক্রান্ত বর্ণনা উল্লেখ করলাম। এক পর্যায়ে বাকি থাকলেন শুধু আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.। কিন্তু তাঁর থেকেও বিশুদ্ধ সূত্রে নাবিজে তামারের বৈধতাসংক্রান্ত তাদের কাছে কোনো দলিল ছিল না। এরপর আমি নাবিজে তামারের বৈধতার প্রবক্তাকে লক্ষ্য করে বললাম, আরে বোকা, ভালো করে শুনে রাখো, যখন আমি তোমার নিকট নবি সা. ও তার সাহাবিদের থেকে এ ব্যাপারে কঠোরতা ও নিষেধাজ্ঞার বিশদ বিবরণ পেশ করেছি, এমতাবস্থায় আজ যদি এখানে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বসে থাকতেন আর তোমাকে বলতেন, এটা তোমার জন্য হালাল, তথাপিও তোমার সতর্ক, চিন্তিত ও সন্ত্রস্ত হওয়া উচিত ছিল। ইতিমধ্যে একজন বলে উঠল, তাহলে ইমাম নাখয়ি রহ., ইমাম শাবি রহ. আরও অমুক অমুক ফকিহ; তারা কি হারাম পানীয় পান করেছেন? তখন আমি তাদের বললাম, দলিল পেশ করার সময় আকাবির ও বড়দের নাম বলা বন্ধ করো। ইসলামি ইতিহাসে কত ব্যক্তিত্ব আছেন, যাদের ইসলামে কত বেশি অবদান রয়েছে, যাদের ছিল অগাধ ইলম, তথাপি হয়তো তাঁদের থেকে কোথাও পদস্খলন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কারও জন্য কি তাদের এসব পদস্খলন দিয়ে দলিল পেশ করা ঠিক হবে? তাও যদি মানতে না চাও তাহলে তোমরা বলো, আতা রহ., তাউস রহ., জাবির বিন জাইদ রহ., সাইদ বিন জুবাইর রহ. ও ইকরামা রহ.—এদের ব্যাপারে তোমাদের মন্তব্য কী? তারা উত্তরে বললো, তাঁরা সবাই শ্রেষ্ঠ ও ভালো আলেম ছিলেন। তখন আমি বললাম, তোমরা নগদে এক দিরহামের বদলে দুই দিরহামের লেনদেনকে কেমন মনে করো? তারা বললো, হারাম। তখন আমি বললাম, কিন্তু তোমাদের এসব আকাবির তো এটাকে হালাল মনে করতেন। তাহলে (তোমাদের দৃষ্টিতে) তারা কি হারাম খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন?! তখন তারা নিরুত্তর হযে গেল এবং দলিলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল।’ (আল মুওয়াফাকাত : ৫/১৩৭-১৩৮, প্রকাশনী : দারু ইবনি আফফান, কায়রো) আজ যদি আমরা কোনো দলিলভিত্তিক আলোচনা করি তখন কেউ বলে ওঠে, ওহে, তুমি বুঝি তাদের থেকে বেশি বুঝে ফেলেছ? শাইখুল হাদিস রহ., মুফতি আমিনি রহ.-এর কোনো মতকে দলিলের আলোকে যাচাই করতে গেলেই একদল লোক বলে ওঠে, ওহ হো, তুমি কী এমন হয়ে পড়েছ যে, তাদের ভুল ধরছ? একবার শবে বরাতের রোজার হাদিসটি আমলযোগ্য না হওয়া নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম, যা ছিল মাসিক আল-কাওসারের তাহকিকের বিপরীত। এতে চারদিকে হইহই রব পড়ে গেল! কত মানুষের কত যে কথা শুনতে হলো!! হইচইয়ের ধরণ থেকে অনুমিত হলো, তাহকিকের অধিকার কেবল নিজেদের পছন্দের ঘরানার লোকেদের; যদিও সেটা ভুল হোক। পক্ষান্তরে অন্যদের তাহকিক ও আলোচনা স্পষ্ট দলিলভিত্তিক হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। আসলে দ্বীন কি এমনই? শরিয়তের দলিলগুলো শুধু ব্যক্তির আবরণে ঢেকে দিলেই কি আখিরাতে পার পাওয়া যাবে; বিশেষত যখন সত্য ও স্পষ্ট দলিল আমার সামনে উপস্থিত? এ বিষয়ে আমাদের চিন্তার বড় অভাব! কর্মপন্থা আমাদের ভুলে ভরা! এজন্যই ইমাম আওজায়ি রহ. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আলিমদের ব্যক্তিগত ভুল-বিচ্যুতিগুলো গ্রহণ করবে (ধীরে ধীরে) সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।' (আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ১০/৩৫৬, হা. নং ২০৯১৮, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত) আল্লাহ আমাদের সঠিক সমঝ দান করুন, সত্য তালাশ ও অনুসরণে নির্ভিক হওয়ার তাওফিক দান করুন, বিপথগামীদের পথ থেকে রক্ষা করুন এবং সিরাতে মুসতাকিমের পথিক হিসেবে কবুল করুন।
    লেখাটি এক ভাই থেকে সংগ্রহ করা।
    শত্রু অভিমুখী যুদ্ধা।

  • #2
    মাশাআল্লাহ,,,জাযাকাল্লাহ,,।
    অনেক সুন্দর ও উপকারী আলোচনা।
    আল্লাহ তায়া'লা আমাদেরকে আকাবির পুজা থেকে হিফাজত করুন,আমীন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআন সুন্নাহ মেনে দীনের পথে অবিচল রাখুন ৷
      এবং আকাবির পুঁজা থেকে হিফাজত করুন ৷ আমিন
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        আলহামদুলিল্লাহ,, আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন আমীন।
        والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ, উপকারী পোস্ট।
          আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দলীলের বিপরীতে আকাবির পূজা থেকে হিফাযত করুন। আমীন
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment

          Working...
          X