Announcement

Collapse
No announcement yet.

আকিদা সিরিজ: ২য় পর্ব - তাওহিদের পরিচয়, গুরুত্ব ও প্রকারভেদ || শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আকিদা সিরিজ: ২য় পর্ব - তাওহিদের পরিচয়, গুরুত্ব ও প্রকারভেদ || শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহ

    * আকিদা সিরিজ: ২য় পর্ব - তাওহিদের পরিচয়, গুরুত্ব ও প্রকারভেদ *

    শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ





    গত মজলিসে আমরা ইমানের পরিচয় এবং আরকানুল ইমান নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। মুমিন হতে হলে এই ছয়টি রুকনের সবগুলোর ওপর ইমান আনতে হবে। একটি রুকনও যদি কেউ অস্বীকার করে সে মুমিন হতে পারবেনা। এই মজলিসে আমরা প্রথম রুকন (الإيمان بالله) বা তাওহিদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এভাবে প্রতিটি রুকন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।


    তাওহিদের পরিচয়:
    তাওহিদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রখ্যাত মুহাক্কিক শাইখ খালিদ মুহাম্মদ আলি আল-হাজ বলেন:
    هُوَإفْرَادُاللهِ يُبْحَانَهُ وَتَعالی بِالْعِبَادَهُ٭ وَنَفْيُ الْمَثَلِ وَالنَّضِيْرِ عَنْهُ٭ وَعَدْمُ الْإِشْرَاكِ بِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَی
    'তাওহিদ হলো, আল্লাহ তাআলাকে একমাত্র মাবুদ ও উপাস্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া, তাঁর অনুরূপ ও সমকক্ষের অস্তিত্বকে প্রত্যাখ্যান করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। '(আল-কাশশাফুল ফারিদ:২/৯)
    শাইখ মুহাম্মদ বিন আহমদ সাফারিনি হাম্বলি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
    هُوَ إِفْرَادُ الْمَعْبُوْدِ بِالْعِبَادَةِ مَعَ اعْتِقَادِ وَحْدَتِهِ ذَاتًا وَصِفَاتٍ وَأَفْعَالًا
    'তাওহিদ হলো, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং সত্তা, গুণাবলি ও ক্রিয়াকর্মের বিচারে আল্লাহ তাআলাকে অনন্য ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা। (লাওয়ামিউল আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ:১/৫৭)
    তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম, তাওহিদ হলো তিনটি জিনিসের নাম:
    - আল্লাহ তাআলা এক, অদ্বিতীয় ও অনন্য হওয়ার নিরষ্কুশ স্বীকৃতী।
    - একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা।
    - কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা।


    প্রিয় ভাই! তাওহিদ ইমানের সর্বশ্রেষ্ঠ রুকন। এর গুরুত্ব ও ফজিলত এত বেশি যে তা এই অল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আমরা এখানে কেবল সামান্য ইশারা করার চেষ্টা করতে পারি।


    তাওহিদের গুরুত্ব ও ফজিলত
    পৃথিবীতে মানব ও জিন জাতি সৃষ্টির চূড়ান্ত লক্ষ্যই হলো তাওহিদ প্রতিষ্ঠা
    আল্লাহ সুবহানুহু তা'আলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন:
    وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
    'আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদত করার জন্য।'(সূরা যারিয়াত,৫১:৫৬)


    নবি-রাসুল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীতে তাওহিদ প্রতিষ্ঠা
    তাওহিদের আওয়াজ বুলন্দ করার লক্ষ্যেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যুহে যুগে প্রতিটি জাতির কাছে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা জাতিকে সর্বপ্রথম তাওহিদের দিকেই আহ্বান করেছেন। শিরক ও জাহেলি আচার-প্রথাকে তাঁরা কওমের মন-মনস থেকে ঝোঁটিয়ে বিদায় করেছেন। নবি-রাসুল প্রেরণের এই মহান লক্ষ্যের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
    وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّـهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
    'আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মাঝেই রাসুল প্রেরণ করেছি।'(সুরা নাহল, ১৬:৩৬)


    তাওহিদ ইসলামের বৃহত্তম বুনিয়াদ
    সহিহ মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺইরশাদ করেন :
    بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَی خَمْسَةٍ٭ عَلَی أَنْ يُوَحَّدَالله٭ وَإِقَامِ الصَّلاةِ٭ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ٭ وَصِيَامِ رَمضَانَ٭ وَالْحَجِّ
    'ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বস্তুর উপর প্রতিষ্ঠিত- আল্লাহর তাওহিদের স্বীকৃতি, সালাত প্রতিষ্ঠা, জাকাত প্রধান, রমাদানের সিয়াম এবং হজ।' (সহিহুল মুসলিম:১৬)


    তাওহিদের সাক্ষ্যদানকারী জান্নাতে যাবে
    সহিহ বুখারিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন:
    مَامِنْ عَبْدٍ قَالَ٭ لَا إِلَهَ إِلَّا الله٭ ثُمَّ مَاتَ عَلی ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الجَنَّةَ
    'যে বান্দা আল্লাহর তাওহিদের সাক্ষ্য দেবে এবং তাওহিদের ওপর মৃত্যুবরণ করবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।'(সহিহুল বুখারি:৫৮২৭)


    তাওহিদের সাক্ষ্যদানকারীর জন্য জাহান্নাম হারাম
    সহিহ মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহﷺইরশাদ করেন:
    مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا الله٭ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُلُ اللهِ٭ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ
    'যে ব্যক্তি আল্লাহর তাওহিদ ও মুহাম্মদﷺরিসালাতের স্বীকৃতি দেয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।' (সহিহুল মুসলিম: ২৯)


    তাওহিদ গুনাহ মাফের কারণ
    এমনকি তাওহিদের বিশুদ্ধ বিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন:
    يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً ‏
    'হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে, আমার কাছে ক্ষমার আশা রাখবে, তোমার সব গুনাহ আমি ক্ষমা করে দেব-এতে আমি কোনো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার পাপরাশি যদি আকাশের উচ্চতাও ছুঁয়ে যায় তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব- এতে আমি কোন পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি এত বেশি গুনাহ কর, যা জমিনের বিস্তারকে ঢেকে দেয়, তারপর আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে আমার কাছে আস, তবে জমিনের বিস্তৃতি পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে আমি তোমার কাছে হাজির হবো।' (সুনানুত তিরমিজি:৩৫৪০)
    সুবহানাল্লাহ! প্রিয় ভাই, একটু ভেবে দেখুন- তাওহিদের কত গুরুত্ব! কত ফজিত!! এক কথায় বলতে গেলে, দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সাফল্য ও কল্যাণ নির্ভর করে তাওহিদের ওপর। এবার আমরা তাওহিদের প্রকারগুলো নিয়ে আলোচনা করব।


    তাওহিদের প্রকারভেদ:
    তাওহিদকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
    1. (تَوْحِيْدُ الرُّبُوْبِيَّةِ) প্রভুত্বের ক্ষেত্রে তাওহিদ।
    تَوْحِيْدُ الْإُلُوْهِيَّةِ٭ 2) ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহিদ।
    تَوْحِيْدُ اﻵَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ٭. 3) নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তাওহিদ।
    এখানে আমরা সংক্ষেপে এই তিন প্রকার তাওহিদের পরিচয় তুলে ধরব।


    ১. (تَوْحِيْدُ الرُّبُوْبِيَّةِ) প্রভুত্বের ক্ষেত্রে তাওহিদ:
    তাওহিদের প্রথম প্রকার হলো (تَوْحِيْدُ الرُّبُوْبِيَّةِ) বা প্রভুত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা। তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উলামায়ে কেরাম বলেন:
    هُوَ إِفْرَادُ اللهِ بِأَفْعَالِهِ
    "তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ হলো, আল্লাহ তাআলার আফআল ও কাজকর্মে কাউকে শরিক না করা।'
    সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই গোটা বিশ্বজগতের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। তিনি এর একচ্ছত্র অধিপতি। সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি আমাদের রিজিক দেন। তাঁর হাতেই আমাদের জীবন ও মরণ। এই মহাজগতের সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ তার কোনো শরিক নেই।


    ২.(تَوْحِيْدُ الأُلُوْهِيَّةِ) উপাস্যত্বের ক্ষেত্রে তাওহিদ:
    তাওহিদের দ্বিতীয় প্রকার হলো (تَوْحِيْدُ الأُلُوْهِيَّةِ) বা আল্লাহ তাআলাকেই ইবাদতের একমাত্র মালিক বলে বিশ্বাস করা। তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উলামায়ে কেরাম বলেন:
    هُوَ إِفْرَادُ اللهِ بِسَائِرِ الْعِبَادَاتِ الْمَشْرُوْعَةِ
    "তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ হলো, শরিয়াহ যত কিছুকেই ইবাদত মনে করে, সব ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করা, এতে কাউকে শরিক না করা। "
    সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে যত কথা, কাজ ও বিশ্বাস ইবাদতের আওতায় পড়ে সবকিছু কেবল আল্লাহর জন্যই নিবেদিত করা। যেমন : সালাত, জাকাত, সওম, হজ, ইতিকাফ, মান্নত, জবেহ, ভয়, আশা, দোয়া ইত্যাদি।


    ৩.(تَوْحِيْدُ الأَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ) নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তাওহিদ:
    তাওহিদের তৃতীয় প্রকার হলো (تَوْحِيْدُ الأسمَاءِ وَ الصِّفَاتِ) বা নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তাওহিদ। উলামায়ে কেরাম এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন:
    هُوَ الْإِيْمَانُ بِكُلِّ مَا وَرَدَ فِيْ الْقُرْآنِِ الْكَرِيْمِ وَالْحَدِيثِ الصَّحِيحِ مِنْ أَسْمَاءِاللهِ وَصِفَاتِهِ تَعَالَی
    "তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত হলো, কুরআনুল কারিম ও সহিহ হাদিসে আল্লাহ তাআলার যত নাম ও গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে সবগুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করা।" যেমন : (سَمِيْعٌ) (بَصِيْرٌ) (حَكِيٌْ) (يَدٌ) (إِسْتِوَاءٌ) ইত্যাদি।


    এই পর্বে আমরা আপনাদেরকে তাওহিদের তিনটি প্রকারের সঙ্গে এখানে সংক্ষেপে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আগামী মজলিসগুলোতে প্রতিটি প্রকার নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ


    আকিদা সিরিজ: ২য় পর্ব - PDF লিংক।

    https://archive.org/download/2020072...F%E0%A6%9C.pdf

    https://mega.nz/file/3LwjBSKY#kBE2Q4...3OFJEV0UIZJCvA

    https://www97.zippyshare.com/v/RAmcF47T/file.html


    আকিদা সিরিজ: ১ম পর্ব লিংকঃ

    https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232489%3B
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

  • #2
    প্রিয় ভাই! অনেক অনেক শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা! জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!
    نحن الذين بايعوا محمدا، على الجهاد ما بقينا أبدا

    Comment


    • #3
      জাযাকুমুল্লাহ প্রিয় ভাই!
      আল্লাহ শায়েখকে উত্তম বদলা দান করুন।
      আমিন।
      "এখন কথা হবে তরবারির ভাষায়, যতক্ষণ না মিথ্যার অবসান হয়"

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ, অনেক উপকারী খেদমত।
        আল্লাহ তা‘আলা কবুল করুন ও বারাকাহ দান করুন। আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X