Announcement

Collapse
No announcement yet.

কিয়ামতের ছোট সব আলামত কি প্রকাশিত হয়ে গেছে?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কিয়ামতের ছোট সব আলামত কি প্রকাশিত হয়ে গেছে?

    কিয়ামতের ছোট সব আলামত কি প্রকাশিত হয়ে গেছে?



    অনেক দাঈ ও বক্তার মুখে শোনা যায়, কিয়ামতের ছোট সব আলামত (নিদর্শন) নাকি প্রকাশিত হয়ে গেছে। এখন শুধু বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হওয়াই বাকি। এমনকি অনেক নামীদামী লেখকের বইয়েও এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, শায়খ আমিন মুহাম্মাদ জামালুদ্দীন কিয়ামতের ছোট আলামতগুলোর বর্ণনা-সংবলিত গ্রন্থ তার রচিত ‘আল-আশরাতুস সুগরা’র শুরুতেও এই অবাস্তব দাবি করেছেন। কিন্তু কথাটা সঠিক নয়। বরং ছোট বেশ কিছু আলামত প্রকাশিত হওয়াও বাকি রয়েছে। আর বলা বাহুল্য, ছোট সব আলামত প্রকাশিত হওয়া অবধি রাতারাতি বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হতে শুরু করবে না। সুতরাং যারা মাহদির আগমনের জন্য মুখিয়ে আছে এবং তার আগমনের বিভিন্ন সময়-তারিখ নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তাদের জন্য করণীয় হলো, প্রথমে ছোট সব আলামত প্রকাশিত হওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করা। মাহদি হচ্ছে ছোট ও বড় আলামতের মধ্যে সেতুবন্ধন। কারণ, তার সময়েই ইসা আ.-এর আগমন, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই ঘটবে। আর বড় আলামতগুলো হচ্ছে ছেঁড়া তাসবিহের দানার মতো, যা প্রকাশিত হতে শুরু করলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক সবগুলোই প্রকাশিত হয়ে যাবে।

    কোন কোন আলামত এখনো প্রকাশিত হয়নি, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তুলে ধরতে চাইলে ছোটখাটো পুস্তিকা প্রয়োজন। এখানে আমরা উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করছি :

    ১. আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশআরি রহ. বর্ণনা করেন,

    حَدَّثَنِي أَبُو عَامِرٍ أَوْ أَبُو مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ، وَاللَّهِ مَا كَذَبَنِي: سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ، يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ وَالحَرِيرَ، وَالخَمْرَ وَالمَعَازِفَ، وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ، يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ، يَأْتِيهِمْ – يَعْنِي الفَقِيرَ – لِحَاجَةٍ فَيَقُولُونَ: ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا، فَيُبَيِّتُهُمُ اللَّهُ، وَيَضَعُ العَلَمَ، وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ “.

    আমার নিকট আবু আমির কিংবা আবু মালিক আশআরি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম, তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবি ﷺ-কে বলতে শুনেছেন, আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকেল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোনো অভাব নিয়ে ফকির আসলে তারা বলবে, আগামীদিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন। আর বাকি লোকদেরকে তিনি কেয়ামতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। [সহিহ বুখারি : ৫৫৯০]

    ২. আনাস রা. বর্ণনা করেন,

    أُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ.

    আমি তোমাদের সামনে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করছি, যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা করবে না। আমি আল্লাহর রাসুল ﷺ-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের কিছু আলামত হলো—‘ইলম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে; এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন নারীর জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক। [সহিহ বুখারি : ৮১; সহিহ মুসলিম : ২৬৭১]

    আবু মুসা আশআরি রা. বর্ণনা করেন; রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,

    لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَطُوفُ الرَّجُلُ فِيهِ بِالصَّدَقَةِ مِنَ الذَّهَبِ ثُمَّ لاَ يَجِدُ أَحَدًا يَأْخُذُهَا مِنْهُ، وَيُرَى الرَّجُلُ الْوَاحِدُ يَتْبَعُهُ أَرْبَعُونَ امْرَأَةً، يَلُذْنَ بِهِ مِنْ قِلَّةِ الرِّجَالِ وَكَثْرَةِ النِّسَاءِ

    মানুষের ওপর অবশ্যই এমন এক সময় আসবে, যখন লোকেরা সদকার স্বর্ণ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে; কিন্তু একজন গ্রহীতাও পাবে না। পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে এবং নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অধীনে থাকবে এবং তার আশ্রয় গ্রহণ করবে। [সহিহ বুখারি : ১৪১৪; সহিহ মুসলিম : ১০১২]

    ৩. আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন; রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,

    لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ رَجُلٌ مِنْ قَحْطَانَ يَسُوقُ النَّاسَ بِعَصَاهُ.

    কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না কাহতান গোত্র থেকে এমন এক লোক বের হবে, যে মানুষকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে নেবে। [সহিহ বুখারি : ৭১১৭; সহিহ মুসলিম : ২৯১০]

    অন্য বর্ণনায় এসেছে,

    لَا تَذْهَبُ الأَيَّامُ وَاللَّيَالِي حَتَّى يَمْلِكَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ الْجَهْجَاهُ

    রাত দিন শেষ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না জাহজাহ নামে কোনো লোক শাসনকর্তা হবে। [সহিহ মুসলিম : ২৯১১]

    ৪. আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন; রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,

    يُوشِكُ الْفُرَاتُ أَنْ يَحْسِرَ عَنْ كَنْزٍ مِنْ ذَهَبٍ فَمَنْ حَضَرَهُ فَلاَ يَأْخُذْ مِنْهُ شَيْئًا

    নিকট ভবিষ্যতে ফোরাত নদী তার ভূগর্ভস্থ সোনার খণি বের করে দেবে। সে সময় যারা উপস্থিত থাকবে, তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে। [সহিহ বুখারি : ৭১১৯; সহিহ মুসলিম : ২৮৯৪, ২৮৯৫]

    অন্য বর্ণনায় এসেছে,

    يَحْسِرُ عَنْ جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ

    স্বর্ণের পর্বত বের করে দেবে। [প্রাগুক্ত]

    ৫. আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন; রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,

    لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ قَرِيْبًا مِنْ ثَلَاثِيْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم

    কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজেকে আল্লাহর রাসুল বলে দাবি করবে। [সহিহ বুখারি : ৩৬০৯]

    যদিও নববি যুগ থেকে এ পর্যন্ত বহু ভন্ড লোক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবি করেছে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ যেই মহা প্রতারক ত্রিশ জনের ব্যাপারে উম্মাহকে জানিয়ে গেছেন, নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই, এটা হয়ে গেছে কি না। তবে দাজ্জাল শব্দ এবং হাদিসের প্রেক্ষাপট থেকে অনুমেয়, এই ত্রিশজনের ফিতনা হবে অনেক বিস্তৃত। যেমনটা মুসায়লামা কাজজাব থেকে গোলাম আহমদ কাদিয়ানি প্রমুখের ক্ষেত্রে ঘটেছে।

    এ ধরনের আরও অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো অদ্যাবধি প্রকাশিত হয়েছে বলে সুনিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং যারা দাবি করে, কিয়ামতের ছোট সব আলামত প্রকাশিত হয়ে গেছে, তাদের দাবি বাস্তবসম্মত নয়। হ্যাঁ, এর অধিকাংশ যে প্রকাশিত হয়ে গেছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। হাফিজ ইবনু হাজার রহ. ‘ফাতহুল বারি’ গ্রন্থে (১৩/৮৫) লিখেছেন, ‘বায়হাকি ও অন্যান্যরা বলেছেন, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ছোট। এর অধিকাংশ প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর এর কিছু নিদর্শন বড়, যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।’ অধিকাংশ আর সব কথা দুটো কাছাকাছি হলেও দুয়ের মর্ম ও প্রয়োগক্ষেত্রে বিস্তর তফাৎ রয়েছে।


    |সংগৃহিত|
    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

  • #2
    জাযাকাল্লাহ্ আখি,
    কোন আলিম ভাই যদি হাদিস গুলোর বিষদ আলোচনা করতেন! খুবই উপকৃত হতাম!
    আল্লাহ্ ভাইদের জন্য সহজ করে দিন আমীন।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, উপকারী পোস্ট। জাযাকাল্লাহ
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        আলহামদুলিল্লাহ,অনেক উপকারী পোষ্ট করেছে।
        আল্লাহ কবুল করুন,আমীন।
        জাযাকাল্লাহ খাইরান।
        ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

        Comment


        • #5
          এখানে যে আলামতগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো ইমাম মাহদীর আগে হবে- এর কোন দলিল আছে বলে আমার জানা নেই। বরং এগুলো মাহদীর পরে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। কোন কোনটা মাহদীর পরে হওয়ার ব্যাপারে আহলে ইলম ও হাদিসের ভাষ্যকারদের সুস্পষ্ট বক্তব্যও রয়েছে। যেমন, ৩ নং হাদিসে বর্ণিত ‘কাহতান গোত্রের একজন লোক’ -এর হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
          فتح الباري لابن حجر (13/ 77)
          قوله: "حتى يخرج رجل من قحطان" قال القرطبي في التذكرة: ولعله جهجاه المذكور في الحديث الآخر واصل الجهجاه الصياح وهي صفة تناسب ذكر العصا. قلت: ويرد هذا الاحتمال إطلاق كونه من قحطان فظاهره أنه من الأحرار، وتقييده في جهجاه بأنه من الموالي ما تقدم أنه يكون بعد المهدي وعلى سيرته وأنه ليس دونه. ثم وجدت في كتاب " التيجان لابن هشام " ما يعرف منه - إن ثبت - اسم القحطاني وسيرته وزمانه، فذكر أن عمران بن عامر كان ملكا متوجا وكان كاهنا معمرا وأنه قال لأخيه عمرو بن عامر المعروف بمزيقيا لما حضرته الوفاة: إن بلادكم ستخرب، وإن لله في أهل اليمن سخطتين ورحمتين: فالسخطة الأولى هدم سد مأرب وتخرب البلاد بسببه، والثانية غلبة الحبشة على أرض اليمن. والرحمة الأولى بعثة نبي من تهامة اسمه محمد يرسل بالرحمة ويغلب أهل الشرك، والثانية إذا خرب بيت الله يبعث الله رجلا يقال له شعيب بن صالح فيهلك من خربه ويخرجهم حتى لا يكون بالدنيا إيمان إلا بأرض اليمن انتهى. وقد تقدم في الحج أن البيت يحج بعد خروج يأجوج ومأجوج، وتقدم الجمع بينه وبين حديث: " لا تقوم الساعة حتى لا يحج البيت وأن الكعبة يخربها ذو السويقتين من الحبشة " فينتظم من ذلك أن الحبشة إذا خربت البيت خرج عليهم القحطاني فأهلكهم، وأن المؤمنين قبل ذلك يحجون في زمن عيسى بعد خروج يأجوج ومأجوج وهلاكهم، وأن الريح التي تقبض أرواح المؤمنين تبدأ بمن بقي بعد عيسى ويتأخر أهل اليمن بعدها، ويمكن أن يكون هذا مما يفسر به قوله: "الإيمان يمان " أي يتأخر الإيمان بها بعد فقده من جميع الأرض. وقد أخرج مسلم حديث القحطاني عقب حديث تخريب الكعبة ذو السويقتين فلعله رمز إلى هذا

          সুযোগ হলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
          الجهاد محك الإيمان

          জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

          Comment


          • #6
            Originally posted by আদনানমারুফ View Post
            এখানে যে আলামতগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো ইমাম মাহদীর আগে হবে- এর কোন দলিল আছে বলে আমার জানা নেই। বরং এগুলো মাহদীর পরে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। কোন কোনটার ব্যাপারে আহলে ইলম ও হাদিসের ভাষ্যকারদের সুস্পষ্ট বক্তব্যও রয়েছে। সুযোগ হলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
            আল্লাহ সম্মানীত ভাইকে সুযোগ করে দিন আমীন।

            Comment

            Working...
            X