Announcement

Collapse
No announcement yet.

হে বোন! গিবত থেকে বাঁচুন - শাইখ যুবাইর আল হাসান হাফিজাহুল্লাহ্ (Transcript)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হে বোন! গিবত থেকে বাঁচুন - শাইখ যুবাইর আল হাসান হাফিজাহুল্লাহ্ (Transcript)

    হে বোন! গিবত থেকে বাঁচুন - শাইখ যুবাইর আল হাসান হাফিজাহুল্লাহ্


    আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন ওয়াস্সলাতু ওয়াস্সালামু আলা রসূলিহীল নাবিয়্যিল আমীন ওয়া আ'লা আলীহি ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন।

    প্রিয় বোন! আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলবো। যা সাধারণত আমাদের বর্তমান সমাজ প্রেক্ষাপটে অতি তুচ্ছ ও নগণ্য একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ এটি এমন এক জঘণ্য বিষয় যা ঐক্যের সুরম্য প্রাসাদকে ভেঙে তছনছ করে দেয়। এটা এতটাই ভয়াবহ বিষয় যা একই পিতা-মাতার সন্তান ও একই পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরেও পরস্পরের মাঝে টেনে দেয় দূরত্বের এক অদৃশ্য পর্দা। খুব কাছাকাছি অবস্থান করেও একজন অন্যজন থেকে থাকে যোজন যোজন দূরে। একে অপরের প্রতি হৃদয়ে জ্বালিয়ে রাখে ক্রোধের অগ্নিশিখা। এটা এতটাই মামুলি হয়ে গেছে যে প্রতিদিনই কথা বার্তায় জেনে বা না জেনে আমরা কারো না কারো গীবত করেই থাকি।

    প্রিয় বোন! এই জঘণ্য কবীরা গুনাহ; যাকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিনার থেকেও জঘণ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ, তা না হলে আজ আমাদের কোনো মজলিসই যেন পূর্ণতা পায়না! ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ সর্বত্রই আজ বইছে এই গীবতের বন্যা। আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই অশান্তির পেছনে আজ কোনো না কোনো ভাবে এই গীবত জড়িয়ে আছে।

    প্রিয় বোন! আসুন আমরা জেনে নেই গীবতের পরিচয়। ‘গীবত’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ‘দোষারোপ করা’, ‘পরচর্চা করা’, ‘পরনিন্দা করা’, ‘কুৎসা রটানো’, ‘কারো পিছনে সমালোচনা করা’ ইত্যাদি। অর্থাৎ, ‘কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা, যা শুনলে সে কষ্ট পেত; তাকেই গীবত বলা হয়।’

    সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো গীবত কি জিনিস?’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘আল্লাহ্, আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন।’ তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে; তাই হল গীবত।’ তখন জনৈক সাহাবী বললেন, ‘আমি যা বলি যদি তা আমার ভাইয়ের মাঝে থাকে তাহলে কি গীবত হবে?’ তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যা বলেছ তার মধ্যে যদি তা বিদ্যমান থাকে তবে তুমি তার গীবত করলে, আর যদি তা না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে।’

    সুতরাং বুঝা গেল গীবত হচ্ছে কারো সম্পর্কে এমন সত্য কথা বলা যা শুনলে সে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে আমাদের অনেকের মাঝেই এই ভুল ধারণাটি বিদ্যমান, যে- আমি যার সম্পর্কে কথাগুলো বলছি সে তো সত্যি কাজটি করছে! কিন্তু আমাদের মধ্যে এই ধারণাটি নেই, যে- কারো সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে কোন খারাপ সত্য কথা বলাই হচ্ছে গীবত। আর যদি মিথ্যা বানিয়ে বলা হয় তবে তা হবে সেই ব্যক্তিকে মিথ্যাচার করা, যেটা আরো জঘণ্যতম কবিরা গুনাহ্।

    প্রিয় বোন! এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গীবত চর্চার ক্ষেত্রে আজ আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ কেউই খুব একটা পিছিয়ে নেই। তবে এক্ষেত্রে আমাদের বোনরা একটু বেশিই অগ্রসর।

    যেমন- সুনানে নাসাইতে বর্ণিত হয়েছে: একবার ঈদের সালাতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা বেশি বেশি দান খয়রাত কর, কেননা তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামের ইন্ধন।’ তখন একজন মহিলা বলে উঠলো, ‘কেন? হে আল্লাহর রাসুল!’ তখন আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কেননা তোমরা অত্যাধিক গীবত করো এবং স্বামীর নাফরমানী করো।’

    প্রিয় বোন! লক্ষ্য করুন; এখানে মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গীবত সম্পর্কে কত মারাত্মক রকমের হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করলেন!
    আমরা মনে করি এই একটি হাদীসই আমাদের বোনদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে - গীবতের মতো এই ভয়ঙ্কর ব্যাধি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য।

    এছাড়াও পবিত্র কুরআনে মাজিদে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমরা কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করাকে পছন্দ করবে! বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃনাই করো। সুতরাং আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।’’

    উপরোক্ত আয়াত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গীবত এতটাই জঘণ্যতম অপরাধ যে তা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমতুল্য।
    প্রিয় বোন! বস্তুত গীবত এমন একটি কুৎসিত অভ্যাস; দুঃখজনক ভাবে আমাদের সকলের মাঝেই কম বেশি বিদ্যমান। আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষফোঁড়ার মতো ভয়ঙ্কর এই ব্যাধি। গীবতের কুফল কতটা বিস্তৃত তা একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে আমাদের নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে।

    পরকালে গীবতের শাস্তি:
    সম্মানিত বোন! গীবত এতটা ভয়ঙ্কর কবিরা গুনাহ যা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত ভয়াবহ কিছু শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে:

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মেরাজের রাতে যখন আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরি এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমন্ডলে ও বুকে আচড় মারছিলো, আমি বললাম হে জিবরীল! এরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গীবত করত এবং তাদের মান-সম্মানে আঘাত হানত।’ মাআযাল্লহ্!

    রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের গীবত করে এক লোকমা ভক্ষণ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে এর জন্য জাহান্নাম হতে সমপরিমাণ ভক্ষণ করাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষ ত্রুটির বর্ণনার পোশাক পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তাঁকে অনুরূপ জাহান্নামের পোশাক পড়াবেন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কুৎসা রটিয়ে খ্যাতি ও প্রদর্শনীর স্তরে পৌঁছবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কেয়ামতের দিন ঐ খ্যাতি ও প্রদর্শনীর জায়গাতেই জাহান্নামে স্থান দিবেন।’’

    প্রিয় বোন! ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত করা যেমন নিষেধ তেমনি গীবত শোনাও নিষেধ। যে ব্যক্তি গীবত শুনে সে গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। সুতরাং যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গীবত করে, তখন তাকে থামতে বলুন। আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনভাবেই গীবত করা যাবে না এবং শোনাও যাবে না।

    আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে গীবতের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
    ‘...তোমাদের সন্তানের মাঝে সৃষ্টি করো জিহাদপ্রেম, তারুণ্যের তেজ ও দিগ্বিজয়ের দূরন্ত নেশা। মুসলমানের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকো…’’ - শাইখ আবদুল্লাহ্ আযযাম রহিমাহুল্লাহ্

  • #2
    আল্লাহ আমাদেরকে ও আমাদের বোনদেরকে আমলের তাওফিক দিন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X