Announcement

Collapse
No announcement yet.

দায় স্বীকার একটি কল্যাণকর বৈশিষ্ট | সন্ধিক্ষণে শয়তানকে সুযোগ দিবেন না–ড. ইয়াদ কুনাইবী

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দায় স্বীকার একটি কল্যাণকর বৈশিষ্ট | সন্ধিক্ষণে শয়তানকে সুযোগ দিবেন না–ড. ইয়াদ কুনাইবী

    ﺑِﺴْــــــــــــــــﻢِﷲِﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِﺍلرَّﺣِﻴﻢ ️


    দায় স্বীকার


    বান্দার জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হল নিজের সমস্যাগুলোর পেছনে নিজের ভূমিকা খুজে বের করার চেষ্টা করা। সমস্যাগুলোর জন্য অন্যদের দায়ী করার আগে নিজের দোষত্রুটিগুলোর দিকে তাকানো। যেমন:

    • কেউ তার প্রতি অন্যায় করলে সে ভাবে –
    এগুলো আমার গুনাহর ফল। আমার গুনাহর কারণে আল্লাহ তাকে আমার বিরুদ্ধে প্রবল করেছেন।

    • স্ত্রী তাঁর অবাধ্য হলে সে ভাবে –
    হয়তো কোন মুতাবাররিজার (নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নারীর) দিকে আমি তাকিয়েছিলাম। অফিসে কিংবা ক্লাসে হয়তো কোন নারীর সাথে হাসিঠাট্টা করেছিলাম। এটা তার শাস্তি। আমি নিজের অন্তরকে আমোদিত করতে চেয়েছিলাম হারামের মাধ্যমে, তাই আমার অন্তরকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা আমার জন্য হালাল তা থেকে। হারাম থেকে বিরত থাকলে আমি স্ত্রীর কাছ থেকে আনুগত্য ও ভালবাসা পেতাম।

    • লোকেরা তাঁর প্রতি অন্যায় করলে কিংবা তাঁর প্রতি না-ইনসাফী করা হলে, সে ভাবে –
    হয়তো কেউ আমার প্রশংসায় অতিরঞ্জন করেছিল, হয়তো আমার অসত্য প্রশংসা করা হয়েছিল। কিন্তু কথাগুলো পছন্দ হওয়ায় আমি চুপ ছিলাম। আমি ভুলগুলো শুধরে দেইনি। এটা তার শাস্তি। কিংবা আমি হয়তো কারো প্রতি না-ইনসাফী করেছিলাম। তাই আল্লাহ অন্য কোন ব্যক্তিকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দিয়েছেন, এবং সেই ব্যক্তি আমার প্রতি না-ইনসাফী করছে।

    • মানুষ যখন তার সঠিক কথার ভুল অর্থ বের করে তাঁকে কষ্ট দেয়, এবং সে তাঁর অন্তরের বিদ্বেষের অস্তিত্ব অনুভব করে, তখন সে ভাবে –
    হয়তো আমি কিয়ামে দাঁড়িয়ে (তাহাজ্জুদে) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার ব্যাপার গাফেল ছিলাম। তাই তিনি আজ আমাকে কেবল নিজের ওপর ভরসা করার অবস্থায় এনেছেন যাতে আমি অনুধাবন করতে পারি যে,
    → আমার রবের সাহায্য ছাড়া এই আমি কতোটা ক্ষুদ্র, কতোটা তুচ্ছ
    → আমার কথা যতো সুন্দর, যতো গভীরতাসম্পন্ন হোক না কেন, আল্লাহ কবুল না করলে তা বিস্মৃত হবে, এবং মানুষের মাঝে এর কোন প্রভাব থাকবে না।

    সন্ধিক্ষণ


    অনেক সময় আমরা যুলুম, অবিচার ঘটতে দেখি। বেশির ভাগ মানুষ এমন পরিস্থিতিতে সঠিক কাজটা করতে পারে না।
    • ‘আমার এখন কী করা উচিত?’—এ প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না মানুষ। এমন সময়ে কী করণীয় তা বোঝা এবং তা করতে পারা বান্দার প্রতি আল্লাহ -এর সবচেয়ে বড় রাহমাহগুলোর একটি।

    এমন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষের মনে সংশয় মাথাচাড়া দেয়। প্রশ্ন জাগে • ‘কেন আল্লাহ এত-সব অন্যায় অবিচার হতে দিলেন?’

    অন্তরে এ ধরনের প্রশ্ন জড়ো হওয়ার ফলাফল হলো আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করা। যার ফলে তৈরি হয় অসহায়ত্ব ও হতাশার অনুভূতি। সংশয়ে ভোগা মানুষের জন্যে এই অসহায়ত্ব আর হতাশা আবির্ভূত হয় নতুন এক পাহাড়সম বোঝা হয়ে। একের পর এক ঝড় বইতে থাকে মনের ঘরে। মন হয়ে পড়ে অবশ, মানুষ হয়ে যায় নিষ্ক্রিয়। আর ওদিকে সমাজে বাড়তে থাকে অন্যায় ও অবিচার।

    কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে রাহমানুর রাহীম যাকে পথ দেখিয়ে দেন, তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়? সে নিজেকে প্রশ্ন করে,

    • ‘আমার দায়িত্ব কী?
    • এ মুহূর্তে আমার করণীয় কী?
    • এই অন্যায় ও অবিচারের মোকাবিলায় আমার পক্ষে কী করা সম্ভব?

    সে বোঝে, অন্যায়-অবিচারের মাত্রা যত বেশি হবে তাঁর দায়িত্বও তত বাড়বে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হবে তাঁর সংকল্প তত দৃঢ় হতে হবে। যে বান্দা এমন অবস্থায় হিদায়াতের ওপর অবিচল থাকবে, রাব্বুল আলামীন তাঁকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন। তাঁকে দেখাবেন অসাধারণ সব ফলাফল। সে অবাক বিস্ময়ে দেখবে তাঁর কথা ও কাজের অপ্রত্যাশিত ফলাফল। সে দেখবে তাঁর কাজের প্রভাব এতদূর ছড়িয়েছে, যা তাঁর কল্পনাতেও ছিল না। মহান আল্লাহ তাঁর কাজে বারাকাহ দেবেন। আমাদের কাজ তো শুধু চেষ্টা করা, সফলতা দেয়ার মালিক আল্লাহ।

    আর এ সবই সম্ভব হবে; কারণ, এই ব্যক্তি আল্লাহর হিকমাহ ও রাহমাহ নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ে সময় নষ্ট করেনি। সে কাজ করেছে। সংশয় আর হতাশার চক্রে বাঁধা না পড়ে সে নিজের দায়িত্ব খুঁজে নিয়েছে। রাব্বুল আলামীন যে দায়িত্ব তাঁর সামনে দিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে সে তা পালন করে গেছে। ভরসা রেখেছে আল্লাহর নির্ধারিত তাকদিরের ওপর। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাবান ও সর্বজ্ঞানী।

    আর এ কারণেই সে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য পেয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:

    مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّـهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّـهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ وَاللَّـهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
    “আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তাঁর অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” [তরজমা, সূরা আত-তাগ্বাবুন, ১১]

    এবং তিনি বলেন:

    لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ
    “তিনি (আল্লাহ) যা করেন, সে ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরই প্রশ্ন করা হবে।” [তরজমা, সূরা আল-আম্বিয়া, ২৩]

    বিপর্যয়ের সামনে মানুষ হয় ভেঙে পড়ে অথবা প্রতিরোধ করে। এ সময়টাতে মানুষ কী সিদ্ধান্ত নেয় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলো সন্ধিক্ষণ। এ মুহূর্তে শয়তান আপনাকে আক্রমণ করবে। মহান আল্লাহর সম্পর্কে সংশয়-সন্দেহের চোরাবালিতে টেনে নিয়ে যাবার জন্য ক্রমাগত ওয়াসওয়াসা দিতে থাকবে আপনার অন্তরে। তাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করুন এবং বলুন :

    • “কোনটি উত্তম তা আল্লাহই ভালো জানেন এবং তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি পরম করুণাময়। নিশ্চয়ই তিনি মহা প্রজ্ঞাবান।”

    • আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে প্রশ্ন করা :
    “আমার ভূমিকা কী? আমার এখন কী করা উচিত?”

    নিঃসন্দেহে আল্লাহ যেকোনো মন্দ থামিয়ে দিতে, যেকোনো যুলুম বন্ধ করতে সক্ষম। কিন্তু আল্লাহ বলে দিয়েছেন, তিনি ‘...একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান।’ তিনি দেখতে চান তাঁর ক্বাদরের ফায়সালা কীভাবে আমরা গ্রহণ করি। তিনি যাচাই করতে চান বিপদের মুখোমুখি হয়ে আমরা কেমন আচরণ করি। তাই এই সন্ধিক্ষণ গুলোতে নিজের করণীয়ের দিকে মনোযোগী হোন। সচেষ্ট হোন নিজ দায়িত্ব পালনে। শয়তানকে সুযোগ দেবেন না আপনাকে হতাশার চোরাবালিতে টেনে নিয়ে যাবার।

    — ড. ইয়াদ আল-কুনাইবী হাফিযাহুল্লাহ —

  • #2
    খুবই উপকৃত হলাম,আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনাদের কাজগুলো কবুল করুন আমীন।
    এরকম পোস্ট আরো দিলে ভালো হয়।
    ====[[[ আমাদের সমাজে খুব বেশি প্রচলিত, কারো কোন ক্ষতি/ বিপদাপদ আসলে নিজের কৃত পাপকে দোষারোপ করতে থাকে====]]]
    এক্ষেত্রে আপনার পোস্টটি ইনশা-আল্লাহ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিপদ আসলে অনেকে আবার আল্লাহকে মন্দ বলা শুরু করে দেয়, আল্লাহ শুধু আমাকেই দেখলো! ইত্যাদি নানান কিছু।নাউজুবিল্লাহ। আমার বড় মেয়ের জম্মের পরে সে অনেক অসুস্থ্য(অসুস্থ) ছিলো, তখন আমার সাথী আমাকে অনেক সাহস যুগিয়েছিলো, আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দান করুন আমীন। অনেক সাথী আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলো। বিপদে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা, এবং বন্ধুবান্ধবদের সহচার্য বিপদ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তাই আমরা যেনো মুসলিম ভাইদের বিপদের সময়ে পাশে থাকি, তাদের ভুলে না যায়। আজ কাশ্মীরের কথা খুবই মনে পড়ে, এতো বিপদ তো আমার জীবনে নাই।আমরা যারা বাংলাদেশে আছি আমাদের আশা হচ্ছে আরো সুখি কীভাবে হওয়া যায়! আর ঐ দিকে আমাদের ভাইয়েরা ইসলাম ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম। আমাদের কবে হুশ ফিরবে। আল্লাহ,, আপনি আমাদের জাগিয়ে তুলুন,আল্লাহ আমাদের আপনি কবুল যাতে করে আমাদের ভাইদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারি। আচ্ছা ভাবুন তো তারা যদি জানে আমরা তাদের জন্য কিছুই ভাবি না, তাদের অবস্থা কেমন হবে???? আমাদের খাবারের লিস্টটা আজকে দিনদিন বড় হচ্ছে, যারা নিজেদেরকে মুজাহিদ দাবী করি, নিজেরা কতটুকু ত্যাগ করছি ভাইদের জন্য???????
    والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

    Comment


    • #3
      Originally posted by খুররাম আশিক View Post
      খুবই উপকৃত হলাম,আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনাদের কাজগুলো কবুল করুন আমীন।
      এরকম পোস্ট আরো দিলে ভালো হয়।
      ====[[[ আমাদের সমাজে খুব বেশি প্রচলিত, কারো কোন ক্ষতি/ বিপদাপদ আসলে নিজের কৃত পাপকে দোষারোপ করতে থাকে====]]]
      এক্ষেত্রে আপনার পোস্টটি ইনশা-আল্লাহ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিপদ আসলে অনেকে আবার আল্লাহকে মন্দ বলা শুরু করে দেয়, আল্লাহ শুধু আমাকেই দেখলো! ইত্যাদি নানান কিছু।নাউজুবিল্লাহ। আমার বড় মেয়ের জম্মের পরে সে অনেক অসুস্থ্য(অসুস্থ) ছিলো, তখন আমার সাথী আমাকে অনেক সাহস যুগিয়েছিলো, আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দান করুন আমীন। অনেক সাথী আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলো। বিপদে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা, এবং বন্ধুবান্ধবদের সহচার্য বিপদ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তাই আমরা যেনো মুসলিম ভাইদের বিপদের সময়ে পাশে থাকি, তাদের ভুলে না যায়। আজ কাশ্মীরের কথা খুবই মনে পড়ে, এতো বিপদ তো আমার জীবনে নাই।আমরা যারা বাংলাদেশে আছি আমাদের আশা হচ্ছে আরো সুখি কীভাবে হওয়া যায়! আর ঐ দিকে আমাদের ভাইয়েরা ইসলাম ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম। আমাদের কবে হুশ ফিরবে। আল্লাহ,, আপনি আমাদের জাগিয়ে তুলুন,আল্লাহ আমাদের আপনি কবুল যাতে করে আমাদের ভাইদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারি। আচ্ছা ভাবুন তো তারা যদি জানে আমরা তাদের জন্য কিছুই ভাবি না, তাদের অবস্থা কেমন হবে???? আমাদের খাবারের লিস্টটা আজকে দিনদিন বড় হচ্ছে, যারা নিজেদেরকে মুজাহিদ দাবী করি, নিজেরা কতটুকু ত্যাগ করছি ভাইদের জন্য???????
      শেষে মর্মান্তিক কিছু কথা বলেছেন প্রিয় ভাই! কথা গুলো বক্ষ ভেদ করে কলিজাই লাগছে,
      আহঃ কতইনা বেদনা দায়োক দৃশ্য ফুটে উঠল, আল্লাহ্ কাশ্মীরের মুজাহিদদের সাহায্য করুন আমীন।

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর একটি পোস্ট।
        আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফিক দিন। আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X