Announcement

Collapse
No announcement yet.

কল্যাণ ও অকল্যান বিষয়ে আক্বীদাহ কেমন থাকা দরকার? (২য় পর্ব )

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কল্যাণ ও অকল্যান বিষয়ে আক্বীদাহ কেমন থাকা দরকার? (২য় পর্ব )

    আল্লহ যাকে যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তা দিয়েই তার পরীক্ষা নিবেনঃ
    এ ব্যাপারে মহাবিচারক আল্লহ তার কিতাবে বলেন,
    وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ ۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ [٦:١٦٥]
    আর তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন, উদ্দেশ্য হলো তোমাদেরকে তিনি যা কিছু দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা করবেন, নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তড়িৎ শাস্তিদাতা, আর নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা আনআম ৬:১৬৫)

    আল্লহ তার বান্দাদের মধ্যে একজনকে আর একজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যাকে আল্লহ যে বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব/নিয়ামত/অনুগ্রহ দান করেছেন তার উচিত সে ব্যাপারে আল্লহর শুকরিয়া আদায় করা কারূনের মত না বলা। আল্লহ যাকে যা দিয়েছেন সেটা বিভিন্ন বিষয়ে হতে পারে যেমন-জ্ঞান, সম্পদ, সন্তান, বুদ্ধি-বিচক্ষণতা, শারীরিক শক্তি, বিপদে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা, আমলে স্বলেহ করার তাওফিক আরো অনেক কিছু, আল্লহর নিয়ামত তো আর গুনে শেষ করা সম্ভব নয়, সেটা পরিমানে যাই হোক আর যে বিষয়েই হোক সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত যেন কোনভাবেই আল্লহর নিয়ামতকে অস্বীকার করা না হয়। আর জেনে রাখুন শুকরিয়া আদায় করলে আল্লহ বৃদ্ধি করে দিবেন আর এটাও জেনে রাখুন অস্বীকার করলে আল্লহর শাস্তি বড় কঠোর ।

    আল্লহ যাকে যা ইচ্ছা তার অনুগ্রহ দান করবেন এতে বান্দার কোন অধিকার নেইঃ
    আল কুরআনে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
    وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَىٰ قَوْمِهِ ۚ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاءُ ۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ [٦:٨٣]
    আর এটাই ছিল আমার যুক্তি প্রমাণ, যা আমি ইবরাহীম (আঃ) কে তার স্বজাতির মোকাবিলায় দান করেছিলাম, আমি যাকে ইচ্ছা করি সম্মান, মর্যাদা ও মহত্ত্ব বাড়িয়ে দিয়ে থাকি, নিঃসন্দেহে তোমর প্রভু প্রজ্ঞাময় ও বিজ্ঞ। (সূরা আনআম ৬:৮৩)
    আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা বাক্বরহতে আরও বলেন,
    وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا ۚ قَالُوا أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ ۚ قَالَ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ ۖ وَاللَّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٢:٢٤٧]
    এবং তাদের নবী তাদেরকে বলেছিলেন নিশ্চয়ই আল্লহ ত্বলূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহরূপে নির্বাচিত করেছেন; তারা বলল, আমাদের উপর ত্বলূতের রাজত্ব কিরূপে (সঙ্গত) হতে পারে? রাজত্বে তার অপেক্ষা আমাদেরই অধিকার বেশী, পক্ষান্তরে যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতাও তার নেই; তিনি (রসূল) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লহ তোমাদের জন্য তাকেই মনোনীত করেছেন এবং জ্ঞান ও দৈহিক শক্তিতে তিনি তাকে প্রচুর পরিমাণে বর্ধিত করে দিয়েছেন, আল্লহ তার রাজত্ব যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন এবং আল্লহ হচ্ছেন প্রশস্তকারী, সর্বজ্ঞাতা। (সূরা বাক্বরহ ২:২৪৭)

    উপরের আয়াত সমূহ থেকে স্পষ্ট যে আল্লহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা সম্মান, মর্যাদা ও মহত্ত্ব বৃদ্ধি করে দিবেন। যাকে ইচ্ছা রাজত্ব, জ্ঞান, দৈহিক শক্তি অথবা যে কোন অনুগ্রহ দান করবেন। কাউকে হয়ত আল্লহ সম্পদ দান করেছেন অথবা কাউকে দেননি তাই বলে বান্দা আল্লাহর অনুগ্রহ বন্টনের মধ্যে অধিকার সাব্যস্ত করতে পারবে না।
    আল্লহ তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সম্পদ দান করবেন, যাকে ইচ্ছা দিবেন না। একইভাবে যাকে ইচ্ছা জ্ঞান দান করবেন যাকে ইচ্ছা *দিবেননা। যাকে ইচ্ছা তার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করবেন, যাকে ইচ্ছা দিবেন না। এতে বান্দার কোন অধিকার নেই।
    কারো চেহারা যদি সুন্দর না হয়, আর শয়তান যদি তাকে ধোকা দেয় অমুক, অমুকের চেহারা সুন্দর তোমাকে আল্লহ সুন্দর চেহারা দিল না? আর এই ধোকায় পরে যদি সে আল্লহর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে, তবে তা হবে চরম অপরাধ আল্লহর অনুগ্রহে বান্দার কোন অধিকার নেই, আল্লহ যাকে ইচ্ছা তার অনুগ্রহ দান করবেন, যাকে ইচ্ছা দিবেন না। “আল্লহ যাকে যা দিয়েছেন তা দিয়েই তার পরীক্ষা নিবেন (সূরা আনআম ৬:১৬৫)।”
    যাকে ক্ষুধা দিয়েছেন, তার পরীক্ষা ক্ষুধা দিয়েই গ্রহণ করবেন। আর যাকে প্রাচুর্য দিয়েছেন, তার পরীক্ষা প্রাচুর্য দিয়েই গ্রহণ করবেন। আর আল্লহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা অর্পন করেন না। বান্দা সর্ব অবস্থায় আল্লহর শুকরিয়া আদায় করবে এটাই হওয়া উচিত এবং এটাই সঙ্গত। অপরাধীরা আল্লহর নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে পারবে না।

    বান্দা মন্দ যা কিছু পায় এটাও আল্লহর পক্ষ থেকে কিন্তু এটা বান্দা তার কৃতকর্মের ফল হিসেবে প্রাপ্ত হয়ঃ
    মহাবিচারক আল্লহ তার কিতাবে বলেন,
    وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ لِيَجْزِيَ الَّذِينَ أَسَاءُوا بِمَا عَمِلُوا وَيَجْزِيَ الَّذِينَ أَحْسَنُوا بِالْحُسْنَى [٥٣:٣١]
    আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লহরই। যারা মন্দ আমল করে তাদেরকে তিনি দেন মন্দ প্রতিদান এবং যারা সৎআমল করে তাদেরকে দেন উত্তম প্রতিদান। (সূরা নাজাম ৫৩:৩১)

    মহাজ্ঞানী আল্লহ তার কিতাবে আরও বলেন,
    أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ ۗ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِندِكَ ۚ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۖ فَمَالِ هَٰؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا [٤:٧٨]
    তোমরা যেখানেই থাক মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে যাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর এবং যদি তাদের উপর কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হয় তবে বলেঃ এটা আল্লহর নিকট হতে এবং যদি তাদের প্রতি অমঙ্গল নিপতিত হয় তবে বলে যে, এটা তোমার (রসূল) নিকট হতে হয়েছে, তুমি বলঃ সবকিছুই আল্লহর নিকট হতে হয়; অতএব ঐ সম্প্রদায়ের কী হয়েছে যে, তারা কোন কথা যেন বুঝতেই চায় না। (সূরা আন-নিসা ৪:৭৮)

    মুখতাসার যাদুল মা‘আদ (ইবনুল কাইয়্যিম) এ ‘উহুদ যুদ্ধের শিক্ষা’ অধ্যায়ে শেষ দিকে এই আয়তের পরে বলা হয়েছে, সুতরাং নিয়ামত অর্জিত হলে তা আল্লহর ফজল ও করমের ফলেই হয়ে থাকে। আর মসীবত নাজিল হলে তার পক্ষ হতে ন্যায় বিচার ও ইনসাফের কারণেই হয়ে থাকে।“

    সূরা আলে ইমরানে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা উহুদ যুদ্ধের কথাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,
    أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [٣:١٦٥]
    যখন তোমাদের উপর বিপদ উপস্থিত হলো বস্তুতঃ তোমরাও তাদের প্রতি তদানুরূপ দ্বিগুণ বিপদ উপস্থিত করেছিলে, যখন তোমরা বলছিলেঃ এটা কোথা থেকে? আপনি বলেদিন, এ বিপদ তোমাদের নিজেদেরই কারণে এসেছে, নিশ্চয় আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৬৫)

    “মুখতাসার যাদুল মা‘আদ (ইবনুল কাইয়্যিম) ঐ একই অধ্যায়ে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে মসীবতে তোমরা পড়েছ, তা তোমাদের হাতের কামাই। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইনসাফের সাথে আল্লহ তায়ালার ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক। এখানে তাকদীর তথা ভাগ্যের লিখন এবং বান্দার প্রচেষ্টা- উভয়টি সাব্যস্ত করা হয়েছে। আমল ও চেষ্টার সম্বন্ধ করা হয়েছে বান্দার দিকে এবং কুদরত তথা ক্ষমতার সম্বন্ধ করা হয়েছে আল্লহর দিকে। এখানে জাবরিয়া সম্প্রদায় তথা যারা বলে, বান্দা যা কিছু করে তার সবই আল্লহর পক্ষ হতেই হয়ে থাকে। তাতে বান্দার কোন হাত নেই। বান্দা কাঠের পুতুলের ন্যায় এবং শিশুর হাতের লাটিমের ন্যায়। শিশু লাটিম যেভাবে ঘুরায়, লাটিম সেভাবে ঘুরে বান্দার বিষয়টিও একই রকম। আল্লহ তাকে যেভাবে চালান, সেভাবেই চলে। বান্দার কোন স্বাধীনতা নেই। সেই সাথে এখানে কাদরীয়া সম্প্রদায় তথা যারা তাকদীর অস্বীকার করে যারা বলে বান্দার ভাল-মন্দ সকল কাজে বান্দা স্বাধীন। তাতে আল্লহর কোন হাত নেই, কুরআন ও হাদিসের দলীল উপরোক্ত দল দুটির কাঠোর প্রতিবাদ করেছে।”
    সূরা আন-নিসাতে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
    مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ ۚ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا [٤:٧٩]
    তোমার নিকট যে কল্যাণ উপস্থিত হয় তা আল্লহর পক্ষ থেকে এবং তোমার উপর যে অমঙ্গল নিপতিত হয় তা তোমার নিজ (কৃতকর্মের ফল) হতে হয়ে থাকে; এবং আমি তোমাকে মানব মন্ডলীর জন্যে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি; আর আল্লহ সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (সূরা আন-নিসা ৪:৭৯)

    উপরে উল্লিখিত আয়াত সমূহ থেকে স্পষ্ট যে বিপদ বা শাস্তি আল্লহর পক্ষ থেকেই আসে তবে এটা কারো উপরে জুলুম করে চাপিয়ে দেয়া হয় না বরং বান্দা নিজের কৃতকর্মের কারনেই বিপদে পরে, আল্লহ ন্যায় বিচারক বান্দা নিজের কৃতকর্মের কারণে আল্লহর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রাপ্ত হয়। আল্লহ কারো প্রতি জুলুম করা থেকে পবিত্র।

    বান্দা নিজের কৃত কর্মের কারণে বিপদে পরে এ বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করতে..
    দয়ালু ও মহাক্ষমাশীল আল্লহ তার কিতাবে বলেন,
    وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ [٤٢:٣٠]
    তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক পাপ/অপরাধ ক্ষমা করে দেন। (সূরা শুরা ৪২:৩০)
    সুতরাং বান্দা নিজের কৃত কর্মের কারনে বিপদে পরে, বান্দার সব অপরাধের শাস্তি আল্লহ দেন না বরং অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন। এ বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন আল কুরআনের এই আয়াত সমূহ,
    (সূরা বাক্বরহ ২:৩৪,৩৫,৩৬), (সূরা আরাফ ৭:২২), (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭,৮৮), (সূরা ইবরাহীম ১৪:২৮), (সূরা মুরসালাত :১৬- ১৮), (সূরা আরাফ ৭:৫), (সূরা তাওবা ৯:২৫)

    অতীতে যাদের উপর আল্লহর শাস্তি এসেছিলো এবং তা কি কারণে?

    মূসা (আঃ) এর কওমের লোকদের হৃদয়কে আল্লহ বক্র করে দিয়েছিলেন। মূলত তারা নিজেরাই ছিল অপরাধী যখন তারা নিজেরাই বক্র পথ বেছে নিল তখন আল্লহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন। এ ব্যাপারে মহাবিচারক আল্লহ তার কিতাবে বলেন,
    وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ لِمَ تُؤْذُونَنِي وَقَد تَّعْلَمُونَ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ ۖ فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ [٦١:٥]
    আর স্মরণ কর! মূসা তার স্বজাতিকে বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ যখন তোমরা জান যে, আমি তোমাদের নিকট আল্লহর রসূল! অতঃপর তারা যখন বক্রপথ অবলম্বন করলো তখন আল্লহ তদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন। আল্লহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সূরা সফ্ফ *৬১:৫)

    পৃথিবীর শুরু থেকে অনেক মানব সম্প্রদায় বিলীন হয়ে গেছে যারা মূলত তাদের অপরাধের কারনে ধবংস হয়ে গেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত এসব সম্প্রদায় সম্পর্কে আল্লহ তায়ালা বলেন,
    أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِم مِّدْرَارًا وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ [٦:٦]

    তারা কি দেখে না- তাদের আগে আমরা কত মানব-সম্প্রদায়কে কে ধ্বংস করেছি যাদের আমরা পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেমন তোমাদেরও প্রতিষ্ঠিত করি নি? আর আমরা মেঘমালা পাঠিয়েছিলাম তাদের উপরে অজস্র বৃষ্টিপাত করতে, আর তাদের নিচে দিয়ে ঝরনারাজি প্রবাহিত হতে দিয়েছিলাম, তারপর তাদের ধ্বংস করেছিলাম তাদের অপরাধের জন্য, আর তাদের পরে পত্তন করেছিলাম অন্য এক মানব-সম্প্রদায়ের। (সূরা আনআম ৬:৬)
    আল্লহর ফায়সালা অবশ্যই ন্যায় সঙ্গত এ ব্যাপারে ন্যায় বিচারক আল্লহ বলেন,
    وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ [١٦:٣٦]
    আল্লহর ইবাদত করবার ও ত্বগুতকে বর্জন করবার নির্দেশ দেয়ার জন্যে আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি; অতঃপর তাদের কতককে আল্লহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তাদের কতকের উপর পথ ভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল ন্যায় সঙ্গত ভাবেই; সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে। (সূরা নাহল ১৬:৩৬)
    সূরা ক্বফ এ আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরও বলেন,
    وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ وَقَوْمُ تُبَّعٍ ۚ كُلٌّ كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيدِ [٥٠:١٤]
    এবং আয়কার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায়; তারা সকলে রসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি কার্যকর হয়েছে। (সূরা ক্বফ ৫০:১৪)

    আল্লহর রীতির কোন পরিবর্তন নেই, আল্লহর শাস্তি নিরপরাধদের উপর নয় বরং অপরাধীদের উপরেই আসে।

    আল্লহ অপরাধীদেরকে বিপদ দেন যেন তারা ফেরৎ আসে, উপদেশগ্রহণ করে আর বিপদ দিয়েই তিনি বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন-

    এ সম্পর্কে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
    أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ [٩:١٢٦]
    তারা কি দেখে না যে প্রতি বছর একবার বা দুবার কোন না কোন বিপদে পতিত হয়ে থাকে? তবুও প্রত্যাবর্তন করে না, আর না তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা তাওবা ৯:১২৬)

    উপরের আয়াত থেকে একেবারেই স্পষ্ট যে, অপরাধী বান্দা ফিরে আসুক, তাওবা করুক, উপদেশ গ্রহণ করুক আর এ জন্যই আল্লহ তকে মাঝেই মাঝেই বিপদ দেন। আর আল্লহ অপরাধী বান্দাদের প্রতিও দয়ালু।

    বিপদ, সমস্যা, কমতি, ঘাটতি এসব দিয়েই আল্লহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন, মহান আল্লহ বলেন,
    وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ [٢:١٥٥]
    এবং নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন ও প্রাণ এবং ফল-শস্যের ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা করবো আর আপনি ঐসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন। (সূরা বাকারাহ ২:১৫৫)

  • #2
    নিয়ামত অর্জিত হলে তা আল্লহর ফজল ও করমের ফলেই হয়ে থাকে। আর মসীবত নাজিল হলে তার পক্ষ হতে ন্যায় বিচার ও ইনসাফের কারণেই হয়ে থাকে।
    আলহামদুলিল্লাহ, আপনার লেখাটা পড়ে ভাল লাগল। জাযাকাল্লাহ
    আশা করি নিয়মিত চালিয়ে যাবেন ভাই...!
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      মাশা আল্লাহ, উপকারী পোস্ট। বারাকাল্লাহু ফিক।
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment

      Working...
      X