Announcement

Collapse
No announcement yet.

নবীজির জান-মান রক্ষায় সাহাবায়ে কেরামের চেতনা ও আদর্শ (দ্বিতীয় পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নবীজির জান-মান রক্ষায় সাহাবায়ে কেরামের চেতনা ও আদর্শ (দ্বিতীয় পর্ব)

    রাসূলের প্রতিরক্ষায় হযরত তালহা রাযি. এর কারনামা


    عن قيس بن أبي حازم، قال: «رأيت يد طلحة التي وقى بها النبي صلى الله عليه وسلم قد شلت». صحيح البخاري (3724)

    কায়েস বিন আবু হাযেম রহ. বলেন, আমি তালহা রাযি. এর ঐ হাতকে অবশ অবস্থায় দেখেছি, যে হাত দিয়ে তিনি (উহুদ যুদ্ধে শত্রুদের আক্রমণ হতে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হিফাযত করেছিলেন। -সহিহ বুখারী: ৩৭২৪

    عن جابر بن عبد الله، قال: لما كان يوم أحد وولى الناس، كان رسول الله صلى الله عليه وسلم في ناحية في اثني عشر رجلا من الأنصار، وفيهم طلحة بن عبيد الله، فأدركهم المشركون، فالتفت رسول الله صلى الله عليه وسلم وقال: «من للقوم؟» فقال طلحة: أنا، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كما أنت» فقال رجل من الأنصار: أنا يا رسول الله، فقال: «أنت» فقاتل، حتى قتل، ثم التفت فإذا المشركون، فقال: «من للقوم؟» فقال طلحة: أنا، قال: «كما أنت»، فقال رجل من الأنصار: أنا، فقال: «أنت» فقاتل، حتى قتل، ثم لم يزل يقول ذلك، ويخرج إليهم رجل من الأنصار فيقاتل قتال من قبله حتى يقتل، حتى بقي رسول الله صلى الله عليه وسلم وطلحة بن عبيد الله، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من للقوم؟» فقال طلحة: أنا، فقاتل طلحة قتال الأحد عشر، حتى ضربت يده، فقطعت أصابعه، فقال: حس، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لو قلت بسم الله لرفعتك الملائكة والناس ينظرون، ثم رد الله المشركين» سنن النسائي (3149) وقال الذهبي في سير أعلام النبلاء (1/ 27) رواته ثقات. وقال الحافظ في فتح الباري (7/ 360) إسناده جيد

    জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন যখন কিছু লোক (যুদ্ধ হতে) ফিরে গেল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিকে বারোজন আনসার কর্তৃক বেষ্টিত ছিলেন, তাদের মধ্যে তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রাযি.-ও ছিলেন। মুশরিকরা তাদেরকে আক্রমণ করলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে বললেন, এ দলের জন্য কে আছো? তালহা রাযি. বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি পূর্বে যেমন ছিলে সেরূপ থাকো। তখন একজন আনসারী ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, হ্যাঁ তুমি। এ ব্যক্তি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেন। আবার তিনি লক্ষ্য করলেন এবং দেখতে পেলেন যে, মুশরিকরা আক্রমণ করছে, তিনি বললেন, এ দলের জন্য কে আছো? এবারও তালহা রাযি. বললেন, আমি। তিনি বললেন, তুমি পূর্বের মতই থাকো। এক আনসারী ব্যক্তি বললেন, আমি আছি। তিনি ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ তুমি। এ ব্যক্তিও যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেন।
    এরপর তিনি এভাবে বলতে থাকেন এবং আনসারীরা এক একজন করে বের হয়ে পূর্ববর্তীদের ন্যায় যুদ্ধ করে শহীদ হন। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রাযি. অবশিষ্ট থাকলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দলের জন্য কে আছো? তালহা রাযি. বললেন, আমি আছি। তিনি এগারো জনের যুদ্ধ একাই করলেন। পরিশেষে তার হাত অবশ হয়ে গেলো এবং হাতের আঙ্গুলগুলো কর্তিত হলো। এতে তিনি উহ্* শব্দের ন্যায় শব্দ উচ্চারণ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি বলতে ‘বিসমিল্লাহ', তা হলে তোমাকে ফিরিশতাগণ উপরে উঠিয়ে নিতেন, আর লোকেরা তা দেখতে পেতো। এরপর আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের ফিরিয়ে দিলেন। -সুনানে নাসায়ী: ৩১৪৯ হাফেয যাহাবী ও ইবনে হাজার রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

    রাসূলকে কষ্টপ্রদানকারী কাফেরদের প্রতি সা’দ বিন মুয়ায রাযি. এর মনোভাব

    عن عائشة: «أن سعدا، قال، وتَحَجَّرَ كَلْمُه للبرء، فقال: اللهم، إنك تعلم أن ليس أحد أحب إلي أن أجاهد فيك من قوم كذبوا رسولك صلى الله عليه وسلم وأخرجوه، اللهم، فإن كان بقي من حرب قريش شيء، فأبقني أجاهدهم فيك، اللهم، فإني أظن أنك قد وضعت الحرب بيننا وبينهم، فإن كنت وضعت الحرب بيننا وبينهم فافجرها، واجعل موتي فيها، فانفجرت من لبته فلم يرعهم، وفي المسجد خيمة من بني غفار، إلا الدم يسيل إليهم، فقالوا: يا أهل الخيمة، ما هذا الذي يأتينا من قبلكم؟ فإذا سعد يغذو جرحه دما، فمات منها رضي الله عنه ». رواه البخاري (3901) ومسلم (1769) قوله : (وتَحَجَّرَ كَلْمُه للبرء) الكلم: الجرح، وتحَجُّره: اشتداده حتى يصير مثل الحجر قويا لا وجع به، ووقع في رواية لأحمد: «وكان قد برئ حتى ما يرى منه إلا مثل الخرص». وهو الحلقة الصغيرة كالقُرط.

    আয়েশা রাযি. বলেন, সা’দ রাযি. (খন্দকের যুদ্ধে বাহুতে যে) আঘাত পান তা শুকিয়ে যাচ্ছিল (এবং তিনি ক্রমান্বয়ে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন)। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমার নিকট আপনার রাসূলকে যে সম্প্রদায় অস্বীকার করেছে, তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনার পথে যুদ্ধ করার চাইতে অধিক পছন্দনীয় বিষয় আর নেই। হে আল্লাহ! যদি কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করা এখনও বাকী থাকে তবে আপনি আমাকে জীবিত রাখুন, যেন আমি আপনার পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি। হে আল্লাহ! আমি মনে করি যে, আমাদের এবং তাদের মধ্যে আপনি যুদ্ধ রহিত করেছেন। যদি তাই হয়, তবে আপনি আমার এই ক্ষতস্থান প্রবাহিত করে দিন এবং এতেই আমাকে মৃত্যু (শাহাদত) নসীব করুন। তখন তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনু গিফারের একটি তাবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহের কারণে তারা ঘাবড়ে গেল। তখন তারা বলল, হে তাবুবাসী! তোমাদের দিক থেকে এ কি আসছে? দেখা গেল যে, সাদ রাযি. এর ক্ষতস্থান থেকে তখন প্রবল ধারায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল এবং এতেই তিনি ইন্তেকাল করেন। -সহিহ বুখারী: ৩৯০১; সহিহ মুসলিম: ১৭৬৯

    শাহাদাতের পূর্বে খুবাইব রাযি. এর অভিব্যক্তি

    কাফেরার খুবাইব রাযি. সহ আরো কয়েকজনকে বন্দী করে কুরাইশদের কাছে বিক্রি করে দেয়। কুরাইশরা বদরের যুদ্ধে তাদের যে আত্মীয়স্বজন নিহত হয়েছে তাদের প্রতিশোধস্বরূপ তাদেরকে হত্যা করে। খুবাইব রাযি. কে শুলিতে চড়ানোর পর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি এটা পছন্দ করো যে, মুহাম্মদ তোমার স্থলে শূলিতে থাকবে, আর তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে? তখন খুবাইব রাযি. যে জবাব দেন তাই প্রকৃত মুমিনের জবাব হওয়া দরকার, তিনি দৃপ্ত কন্ঠে বলেন,

    لا والله العظيم ما أحب أن يفديني بشوكة يشاكها في قدمه

    না, মহান আল্লাহর শপথ! আমি এটা পছন্দ করি না যে, নবীজির পায়ে সামান্য কাঁটা বিঁধবে আর এর বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে যাবো। -তবারানী, মুজামে কবীর: ৫২৮৪

    রাসূলের প্রতিরক্ষায় আবু তালহা রাযি.

    عن أنس رضي الله عنه، قال: لما كان يوم أحد انهزم الناس عن النبي صلى الله عليه وسلم، وأبو طلحة بين يدي النبي صلى الله عليه وسلم مجوب به عليه بحجفة له، وكان أبو طلحة رجلا راميا شديد القد، يكسر يومئذ قوسين أو ثلاثا، وكان الرجل يمر معه الجعبة من النبل، فيقول: «انشرها لأبي طلحة». فأشرف النبي صلى الله عليه وسلم ينظر إلى القوم، فيقول أبو طلحة: يا نبي الله، بأبي أنت وأمي، لا تشرف يصيبك سهم من سهام القوم، نحري دون نحرك.(صحيح البخاري: 3811 صحيح مسلم: 1811)

    আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবু তালহা রাযি. ঢাল হাতে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্মুখে প্রাচীরের ন্যায় অটল হয়ে দাঁড়ালেন। আবু তালহা রাযি. সুদক্ষ তীরন্দায ছিলেন। অনবরত তীর ছুড়তে থাকায় তাঁর হাতে দু’ বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। ঐ সময় তীর ভর্তি শরাধার নিয়ে যে কেউ তাঁর নিকট দিয়ে যেতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেই বলতেন, তোমার তীরগুলি আবু তালহার জন্য রেখে দাও।
    এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে শত্রুদের অবস্থা অবলোকন করতে চাইলে আবু তালহা রাযি. বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হউক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হয়তো শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে। আমার বক্ষ আপনাকে রক্ষা করার জন্য ঢাল স্বরূপ। -সহিহ বুখারী: ৩৮১১; সহিহ মুসলিম: ১৮১১

    মুহাম্মদ বিন মাসলামা কর্তৃক শাতিম কাব বিন আশরাফকে হত্যা

    جابر بن عبد الله رضي الله عنهما، يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لكعب بن الأشرف، فإنه قد آذى الله ورسوله»، فقام محمد بن مسلمة فقال: يا رسول الله، أتحب أن أقتله؟ قال: «نعم»، قال: فأذن لي أن أقول شيئا، قال: «قل»، فأتاه محمد بن مسلمة فقال: إن هذا الرجل قد سألنا صدقة، وإنه قد عنانا وإني قد أتيتك أستسلفك، قال: وأيضا والله لتملنه، قال: إنا قد اتبعناه، فلا نحب أن ندعه حتى ننظر إلى أي [ص:91] شيء يصير شأنه، وقد أردنا أن تسلفنا وسقا أو وسقين - وحدثنا عمرو غير مرة فلم يذكر وسقا أو وسقين أو: فقلت له: فيه وسقا أو وسقين؟ فقال: أرى فيه وسقا أو وسقين - فقال: نعم، ارهنوني، قالوا: أي شيء تريد؟ قال: ارهنوني نساءكم، قالوا: كيف نرهنك نساءنا وأنت أجمل العرب، قال: فارهنوني أبناءكم، قالوا: كيف نرهنك أبناءنا، فيسب أحدهم، فيقال: رهن بوسق أو وسقين، هذا عار علينا، ولكنا نرهنك اللأمة - قال سفيان: يعني السلاح - فواعده أن يأتيه، فجاءه ليلا ومعه أبو نائلة، وهو أخو كعب من الرضاعة، فدعاهم إلى الحصن، فنزل إليهم، فقالت له امرأته: أين تخرج هذه الساعة؟ فقال إنما هو محمد بن مسلمة، وأخي أبو نائلة، وقال غير عمرو، قالت: أسمع صوتا كأنه يقطر منه الدم، قال: إنما هو أخي محمد بن مسلمة ورضيعي أبو نائلة إن الكريم لو دعي إلى طعنة بليل لأجاب، قال: ويدخل محمد بن مسلمة معه رجلين - قيل لسفيان: سماهم عمرو؟ قال: سمى بعضهم - قال عمرو: جاء معه برجلين، وقال: غير عمرو: أبو عبس بن جبر، والحارث بن أوس، وعباد بن بشر، قال عمرو: جاء معه برجلين، فقال: إذا ما جاء فإني قائل بشعره فأشمه، فإذا رأيتموني استمكنت من رأسه، فدونكم فاضربوه، وقال مرة: ثم أشمكم، فنزل إليهم متوشحا وهو ينفح منه ريح الطيب، فقال: ما رأيت كاليوم ريحا، أي أطيب، وقال غير عمرو: قال: عندي أعطر نساء العرب وأكمل العرب، قال عمرو: فقال أتأذن لي أن أشم رأسك؟ قال: نعم، فشمه ثم أشم أصحابه، ثم قال: أتأذن لي؟ قال: نعم، فلما استمكن منه، قال: دونكم، فقتلوه، ثم أتوا النبي صلى الله عليه وسلم فأخبروه صحيح البخاري (4037) صحيح مسلم (1801

    জাবের বিন আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, (একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কাব বিন আশরাফের হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছো? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি চান যে আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হাঁ। তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ বলতে পারো। এরপর মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. কাব বিন আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে সাদকা চেয়ে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি।
    কাব বিন আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম! সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং অতিষ্ট করে তুলবে। মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. বললেন, আমরা তো তাঁকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। .....
    কা‘ব বিন আশবাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখো। মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. বললেন, কি জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখো। মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যাক্তি, আপনার নিকট কি করে আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখবো আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাখো। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে তাদেরকে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটাতো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি।
    অবশেষে তিনি (মুহাম্মদ বিন মাসলামা) তাকে (কা’ব বিন আশরাফকে) পুনরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব বিন আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপর তলা থেকে) নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছো? সে বলল, এইতো মুহাম্মদ বিন মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি) .... কাবের স্ত্রী বললো, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব বিন আশরাফ বলল, মুহাম্মদ বিন মাসলামা এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলেও তার যাওয়া উচিৎ। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. সঙ্গে আরো দুই ব্যাক্তি নিয়ে (তথায়) গিয়েছিলেন ... এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারী দিয়ে তাকে আঘাত করবে। ...
    সে (কাব) চাঁদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। ... কা’ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হাঁ এরপর তিনি মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে (আরেকবার শুঁকাবার জন্য) অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন। -সহিহ বুখারী: ৪০৩৭; সহিহ মুসলিম: ১৮০১

    রাসূলকে কষ্টপ্রদানকারীদের হত্যা করার ক্ষেত্রে সাহাবীদের প্রতিযোগিতা

    عن البراء بن عازب رضي الله عنه، قال: «بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى أبي رافع عبد الله بن عتيك، وعبد الله بن عتبة، في ناس معهم، فانطلقوا حتى دنوا من الحصن» فقال لهم عبد الله بن عتيك: امكثوا أنتم حتى أنطلق أنا فأنظر، قال: فتلطفت أن أدخل الحصن، ففقدوا حمارا لهم، قال: فخرجوا بقبس يطلبونه، قال: فخشيت أن أعرف، قال: فغطيت رأسي وجلست كأني أقضي حاجة، ثم نادى صاحب الباب، من أراد أن يدخل فليدخل قبل أن أغلقه، فدخلت ثم اختبأت في مربط حمار عند باب الحصن، فتعشوا عند أبي رافع، وتحدثوا حتى ذهبت ساعة من الليل، ثم رجعوا إلى بيوتهم، فلما هدأت الأصوات، ولا أسمع حركة خرجت، قال: ورأيت صاحب الباب، حيث وضع مفتاح الحصن في كوة، فأخذته ففتحت به باب الحصن، قال: قلت: إن نذر بي القوم انطلقت على مهل، ثم عمدت إلى أبواب بيوتهم، فغلقتها عليهم من ظاهر، ثم صعدت إلى أبي رافع في سلم، فإذا البيت مظلم، قد طفئ سراجه، فلم أدر أين الرجل، فقلت: يا أبا رافع قال: من هذا؟ قال: فعمدت نحو الصوت فأضربه وصاح، فلم تغن شيئا، قال: ثم جئت كأني أغيثه، فقلت: ما لك يا أبا رافع؟ وغيرت صوتي، فقال: ألا أعجبك لأمك الويل، دخل علي رجل فضربني بالسيف، قال: فعمدت له أيضا فأضربه أخرى، فلم تغن شيئا، فصاح وقام أهله، قال: ثم جئت وغيرت صوتي كهيئة المغيث فإذا هو مستلق على ظهره، فأضع السيف في بطنه ثم أنكفئ عليه حتى سمعت صوت العظم ثم خرجت دهشا حتى أتيت السلم، أريد أن أنزل فأسقط منه، فانخلعت رجلي فعصبتها، ثم أتيت أصحابي أحجل، فقلت: انطلقوا فبشروا رسول الله صلى الله عليه وسلم، فإني لا أبرح حتى أسمع الناعية، فلما كان في وجه الصبح صعد الناعية، فقال: أنعى أبا رافع، قال: فقمت أمشي ما بي قلبة، فأدركت أصحابي قبل أن يأتوا النبي صلى الله عليه وسلم فبشرته. صحيح البخاري (4040)

    وقال ابن إسحاق: لما قتلت الأوس كعب بن الأشرف استأذنت الخزرج رسول الله صلى الله عليه وسلم في قتل سلام بن أبي الحقيق وهو بخيبر، فأذن لهم. قال: فحدثني الزهري عن عبد الله بن كعب بن مالك قال: كان مما صنع الله لرسوله أن الأوس والخزرج كانا يتصاولان تصاول الفحلين، لا تصنع الأوس شيئا إلا قالت الخزرج: والله لا تذهبون بهذه فضلا علينا. وكذلك الأوس. فلما أصابت الأوس كعب بن الأشرف تذاكرت الخزرج من رجل له من العداوة لرسول الله صلى الله عليه وسلم كما كان لكعب؟ فذكروا ابن أبي الحقيق وهو بخيبر. (فتح الباري لابن حجر 7/ 342)

    বারা‘ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু রাফিকে (হত্যার) উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ বিন আতিক ও আবদুল্লাহ বিন উতবাকে একদল লোকসহ প্রেরণ করেন। যেতে যেতে তারা দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছালে আবদুল্লাহ বিন আতিক রাযি. তাদেরকে বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি যাই, দেখি কি করে সুযোগ করা যায়। আবদুল্লাহ বিন আতিক রাযি. বলেন, দুর্গের ভিতর প্রবেশ করার জন্য আমি কৌশল অবলম্বন করব। ইতিমধ্যে তারা একটি গাধা হারিয়ে ফেলল এবং একটি আলো নিয়ে এর সন্ধানে বের হল।
    তিনি বলেন, আমাকে চিনে ফেলবে আমি এ আশংকা করছিলাম। তাই (কাপড় দিয়ে) আমি আমার মাথা ও পা ঢেকে ফেললাম এবং এমনভাবে বসে রইলাম যেন আমি পেশাব করার জন্য বসেছি। তখন দ্বার রক্ষী ডাক দিয়ে বলল, কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে এখনই দরজা বন্ধ করার আগে ভিতরে ঢুকে পড়ুন। আমি প্রবেশ করলাম এবং দুর্গের দরজার পার্শ্বে গাধা বাঁধার স্থানে আত্মগোপন করে থাকলাম।
    আবু রাফির নিকট সবাই বসে রাতের খানা খেয়ে গল্পগুজব করল। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেল। যখন কোলাহল থেমে গেল এবং কোন নড়াচড়া শুনতে পাচ্ছিলাম না, তখন আমি বের হলাম। দুর্গের চাবি যে ছিদ্রপথে রাখা হয়েছিল তা আমি পূর্বেই দেখেছিলাম। তাই রক্ষিত স্থান থেকে চাবিটি নিয়ে আমি দুর্গের দরজাটি খুললাম।
    আমি মনে মনে ভাবলাম, লোকেরা যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে সহজেই আমি পালিয়ে যেতে পারব। এরপর দুর্গের ভিতরে তাদের যত ঘর ছিল সবগুলোর দরজা আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর সিঁড়ি বেয়ে আবু রাফির কক্ষে উঠলাম। বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে ঘরটি ছিল ভীষণ অন্ধকার। লোকটি কোথায়, কিছুতেই আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি তাকে ডাকলাম, হে আবু রাফি। সে বলল, কে ডাকছ? তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে আমি একটু এগিয়ে গেলাম এবং তাকে আঘাত করলাম। সে চীৎকার করে উঠল। এ আঘাতে কোন কাজই হয়নি।
    এরপর আবার আমি তার কাছে গেলাম, যেন আমি তাকে সাহায্য করব। আমি এবার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবু রাফি’ তোমার কি হয়েছে? সে বলল, কি আশ্চর্য ব্যাপার, তার মায়ের সর্বনাশ হোক, এইতো এক ব্যাক্তি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে, আবদুল্লাহ* বিন আতিক বলেন, তাকে লক্ষ্য করে পুনরায় আমি আঘাত করলাম, এবারও কোন কাজ হলো না। সে চীৎকার করলে তার পরিবারের সবাই জেগে উঠল। তারপর পুনরায় আমি সাহায্যকারীর ভান করে কন্ঠস্বরে পরিবর্তন করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এসময় সে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল (এ দেখে) আমি তরবারির অগ্রভাগ তার পেটের উপর রেখে এমন জোরে চাপ দিলাম যে, আমি তার হাড়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর আমি কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ির নিকট এসে পৌঁছলাম। ইচ্ছা ছিল নেমে যাব। কিন্তু (নামতে গিয়ে) আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম এবং এতে আমার পা ভেঙ্গে গেল। সাথে সাথে (পাগড়ী দিয়ে) আমি তা বেঁধে ফেললাম এবং আস্তে আস্তে হেঁটে সাথীদের নিকট চলে এলাম। এরপর বললাম, তোমরা যাও এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুসংবাদ দাও। আমি তার মৃত্যু সংবাদ না শুনে আসবো না। ঊষালগ্নে মৃত্যু ঘোষণাকারী (প্রাচীরে) উঠে বলল, আমি আবু রাফীর মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করছি। আবদুল্লাহ* বিন আতিক রাযি. বলেন, এরপর আমি উঠে চলতে লাগলাম। এ সময় আমার (পায়ে) কোন ব্যাথাই ছিল না। আমার সাথীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছার আগেই আমি তাদের ধরে ফেললাম এবং (গিয়ে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার (আবু রাফির) মৃত্যুর সংবাদ জানালাম। -সহিহ বুখারী: ৪০৪০

    ইমামুল মাগাযী মুহাম্মদ বিন ইসহাক রহ. ইমাম যুহরী রহ. এর সূত্রে আব্দুল্লাহ বিন কাব রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

    كان مما صنع الله لرسوله أن الأوس والخزرج كانا يتصاولان تصاول الفحلين، لا تصنع الأوس شيئا إلا قالت الخزرج: والله لا تذهبون بهذه فضلا علينا. وكذلك الأوس. فلما أصابت الأوس كعب بن الأشرف تذاكرت الخزرج من رجل له من العداوة لرسول الله صلى الله عليه وسلم كما كان لكعب؟ فذكروا ابن أبي الحقيق وهو بخيبر. (سيرة ابن هشام: 2/274؛ فتح الباري لابن حجر 7/ 342)

    আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন যে, ‘আউস’ ও ‘খাযরাজ’ গোত্রদ্বয় তার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করতো। আউস কোন কিছু করলে খাযরাজ বলতো, ‘আল্লাহর শপথ তারা এর দ্বারা আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারবে না। খাযরাজ কোন কিছু করলে আউসও তদ্রূপ বলতো। যখন আউস কাব বিন আশরাফকে হত্যা করলো, তখন খাযরাজ পরস্পর আলোচনা করলো, এমন কে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শত্রুতার ক্ষেত্রে কাবের মতো। তখন তাদের আবু রাফে বিন আবুল হুকাইক কথা মনে পড়লো। (এরপর তারা তাকে হত্যার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইলো) –সীরাতে ইবনে হিশাম: ২/২৭৪; ফাতহুল বারী: ৭/৩৪২
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    মাশা আল্লাহ, অনেক উপকারী ও তথ্যবহুল পোস্ট।
    আল্লাহ তা‘আলা আপনার ইলমে ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমীন
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      আল্লাহ্ সম্মানীত ভাইকে উত্তম বিনীময় দান করুন,
      খুবই প্রয়োজনীয় পোষ্ট, আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন।

      Comment


      • #4
        নবীজির জান-মান রক্ষায় সাহাবায়ে কেরামের চেতনা ও আদর্শ (প্রথম পর্ব)
        https://dawahilallah.com/showthread.php?21252
        গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ অনেক তথ্যবহুল পোষ্ট।
          সাহাবায়ে কেরামদের মত আমাদেরও শাতিম হত্যায় প্রতিযোগিতা করা দরকার।

          হে আল্লাহ! আপনি আমাদের আপনার মাকবুল বান্দাদের মত কবুল করুন । আমিন
          গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

          Comment


          • #6
            হে আল্লাহ! পোস্টকারী ভাইয়ের ইলমে বারাকাহ দিন ও আমাদেরকে উপকৃত করুন। আমীন
            হে আল্লাহ! আমাদের মাঝেও আব্দুল্লাহ বিন উনাইস রাযি. এর মত ব্যক্তি পয়দা করে দিন। যারা শাতিমদের গর্দান আলাদা করে দিবে।
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment

            Working...
            X