Announcement

Collapse
No announcement yet.

বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয় ।। দ্বিতীয় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয় ।। দ্বিতীয় পর্ব

    বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়


    দ্বিতীয় অধ্যায় : সবর বা ধৈর্য
    ‘সবর’ শব্দের শাব্দিক অর্থ আটকে রাখা ও বাধা দেওয়া। বস্তুত মনকে উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা থেকে দূরে রাখা, জিহ্বাকে অভিযোগ ও অসন্তষ্টি প্রকাশ থেকে নিবৃত্ত করা এবং মুখ চাপড়ানো ও জামা ছেঁড়া থেকে বিরত থাকাই হলো সবর। আরও সহজে বললে বলা যায়, কুপ্রবৃত্তি ও শরিয়ানিষিদ্ধ কাজে সাড়া না দেওয়াকেই সবর বলে। ইসলামে সবরের অবস্থান, মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা এ অধ্যায় সবরের ফজিলত, তার গুরুত্ব ও অর্জনের উপায় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। দুটি পরিচ্ছেদে বিষয়গুলোর দালিলিক আলোচনা তুলে ধরছি।

    প্রথম পরিচ্ছেদ : সবরের ফজিলত ও গুরুত্ব
    কুরআন ও হাদিসে সবরের অনেক ফজিলত ও গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্নভাবে মুমিনদের এ গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহিত ও ক্ষেত্রবিশেষে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা তন্মধ্য হতে এখানে কিছু নস উল্লেখ করছি। প্রথমে থাকবে কুরআনের আয়াতসমূহ, এরপরে থাকবে হাদিসের বাণীসমূহ।
    প্রথমত, কুরআনে কারিম থেকে-
    এক : সবরকারীর প্রতিদান অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দেওয়া হবে।
    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন :
    أُوْلَئِكَ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُم مَّرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوا
    ‘তাদেরকে দুইবার করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছে।’ (সুরা আল-কাসাস : ৫৪)
    অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন :
    إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ
    ‘সবরকারীদের অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সুরা আজ-জুমার : ১০)
    দুই : সবর বা ধৈর্যধারণ হলো সফলতার সোপান।
    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন :
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
    ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা সবর করো, সবরে প্রতিযোগিতা করো, সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলি ইমরান : ২০০)
    তিন : সবর মানুষকে দ্বীনের ক্ষেত্রে ইমামত ও নেতৃত্বের উপযুক্ত বানায়।
    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
    وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ
    ‘আর আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করত; যেহেতু তারা সবর করেছিল। আর তারা আমার নিদর্শনাবলিতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখত।’ (সুরা আস-সাজদা : ২৪)
    চার : সবরকারীদের ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়।আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
    وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ . أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
    ‘তুমি সুসংবাদ দাও সবরকারীদের—যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী।” ওরা তারাই, যাঁদের প্রতি তাঁদের রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়। আর তাঁরাই হলো হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৭)
    সালাফের কেউ বিপদে পতিত হলে বলতেন, ‘আমার কী হলো! কেন আমি সবর করছি না? অথচ আল্লাহ আমার সাথে ওয়াদা করেছেন, সবর অবলম্বন করলে তিনি আমাকে এরূপ তিনটি নিয়ামত দান করবেন, যার প্রত্যেকটি দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছু থেকে উত্তম।’
    পাঁচ : বিপদাপদে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য সবরকে অন্যতম মাধ্যম বানানো হয়েছে।
    আল্লাহ তাআলা বলেন :
    وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ
    ‘তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা আল-বাকারা : ৪৫)
    ছয় : মানব ও শয়তানের চক্রান্ত থেকে বাঁচার অন্যতম একটি উপায় হলো সবর অবলম্বন।
    আল্লাহ তাআলা বলেন :
    وَإِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ لاَ يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ
    ‘তোমরা যদি সবরকারী হও এবং মুত্তাকি হও, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।’ (সুরা আলি ইমরান : ১২০)
    সাত : আল্লাহর সাহায্য লাভ করার অন্যতম মাধ্যম হলো সবর ইখতিয়ার করা।
    আল্লাহ তাআলা বলেন :
    بَلَى إِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ آلافٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُسَوِّمِينَ
    ‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই, যদি তোমরা সবর ও তাকওয়া অবলম্বন করো, আর তারা (শত্রুরা) দ্রুতগতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করে, তবে আল্লাহ পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।’ (সুরা আলি ইমরান : ১২৫)
    আট : সবরের জন্য ক্ষমা ও উত্তম প্রতিদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
    আল্লাহ তাআলা বলেন :
    إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
    ‘কিন্তু যারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ণ তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা হুদ : ১১)
    নয় : সবর করলে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়।
    আল্লাহ তাআলা বলেন :
    وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُواْ لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَمَا ضَعُفُواْ وَمَا اسْتَكَانُواْ وَاللّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ
    ‘আর কত নবি যুদ্ধ করেছে, তাঁদের সঙ্গে ছিল বহু আল্লাহওয়ালা। আল্লাহর পথে যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে তাঁরা হীনবল হননি, দুর্বল হননি এবং নত হননি। আর আল্লাহ সবরকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলি ইমরান : ১৪৬)
    দশ : সবর করাকে দৃঢ়সংকল্পের কাজ ও প্রশংসনীয় বলা হয়েছে।
    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
    وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
    ‘আর অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, এটি তো হবে দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ।’ (সুরা আশ-শুরা : ৪৩)
    লুকমান আ. তার সন্তানকে উপদেশ দিয়েছেন; কুরআনের ভাষায় :
    وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
    ‘সৎকাজে আদেশ কোরো, অসৎকাজে নিষেধ কোরো এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ কোরো। এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সুরা লুকমান : ১৭)

    দ্বিতীয়ত, হাদিসে রাসুল থেকে-
    এক : কোনো দুর্ঘটনা বা বিপদে সবর করে দুআ পড়লে আল্লাহ তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন।
    উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    مَا مِنْ مُسْلِمٍ تُصِيبُهُ مُصِيبَةٌ، فَيَقُولُ مَا أَمَرَهُ اللهُ: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا، إِلَّا أَخْلَفَ اللهُ لَهُ خَيْرًا مِنْهَا "، قَالَتْ: فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ، قُلْتُ: أَيُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ مِنْ أَبِي سَلَمَةَ؟ أَوَّلُ بَيْتٍ هَاجَرَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ إِنِّي قُلْتُهَا، فَأَخْلَفَ اللهُ لِي رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
    ‘কোনো বিপদাপন্ন মুমিন যদি আল্লাহর নির্দেশিত إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (অর্থ : নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করব।) দুআটি পাঠ করে اللهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا (অর্থ : হে আল্লাহ, আমাকে আমার মুসিবতে সওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করো।) দুআটি পড়ে, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে পূবের চাইতে উত্তম বদলা দান করবেন। উম্মে সালামা রা. বলেন, আবু সালামা রা. যখন মারা গেলেন তখন আমি মনে মনে ভাবলাম, আবু সালামা রা.-এর চেয়ে উত্তম মুসলমান আর কে আছে! তিনিই প্রথম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে হিজরত করেছিলেন। অতঃপর আমি সেই দুআটি পাঠ করলাম। তারপর মহান আল্লাহ আমাকে আবু সালামা রা.-এর স্থলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতো স্বামী দান করলেন।’ (সহিহু মুসলিম : ২/৬৩১, হা. নং ৯১৮, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
    দুই : সবরের বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
    আবু হুরাইরা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    يَقُولُ اللهُ تَعَالَى : مَا لعَبدِي المُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إلا الجَنَّةَ
    ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি যদি কোনো মুমিনের প্রিয়জনকে দুনিয়া থেকে নিয়ে যাই, আর সে সওয়াবের আশায় সবর করে, আমার কাছে তার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’ (সহিহুল বুখারি : ৮/৯০, হা. নং ৬৪২৪, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
    আনাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ ثُمَّ صَبَرَ عَوَّضْتُهُ عَنْهُمَا الْجَنَّةَ يُرِيدُ عَيْنَيْهِ
    ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যদি কোনো বান্দাকে তার অতিপ্রিয় দুটি বস্তু কেড়ে নিয়ে পরীক্ষায় ফেলি আর সে তাতে সবর করে, তাহলে আমি সে দুটির বিনিময়ে তাকে জান্নাত দান করি। আনাস রা. বলেন, বস্তু দুটি হলো, তার দুই চোখ।’ (সহিহুল বুখারি : ৭/১১৬, হা. নং ৫৬৫৩, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
    তিন : আল্লাহর মহান দরবারে অসুস্থ সবরকারীর জন্য উত্তম বিনিময়ের আলোচনা করা হয়।
    আতা বিন ইয়াসার রহ. সূত্রে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ بَعَثَ اللَّهُ إِلَيْهِ مَلَكَيْنِ، فيَقَولونَ: انْظُرَا مَاذَا يَقُولُ لِعُوَّادِهِ؟ فَإِنْ هُوَ إِذَا جَاءُوهُ حَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ رَفَعَا ذَلِكَ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ أَعْلَمُ، فَيَقُولُ: لِعَبْدِي عَلَيَّ إِنْ تَوَفَّيْتُهُ أَنْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَإِنْ أَنَا شَفَيْتُهُ أَنْ أُبْدِلَهُ لَحْمًا خَيْرًا مِنْ لَحْمِهِ، وَدَمًا خَيْرًا مِنْ دَمِهِ، وَأَنْ أُكَفِّرَ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ.
    ‘বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, আল্লাহ তার কাছে দুজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তাদেরকে বলেন, নজর রেখো, আমার বান্দা (অসুস্থতার খবর শুনে) দেখতে আসা লোকদের কী বলে। সে যদি তাদের সামনে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করে, প্রশংসা করে, ফেরেশতারা তা আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়—যদিও আল্লাহ সব জানেন। অতঃপর আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যদি মারা যায়, তবে আমার ওপর তার হক হলো, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যদি তাকে সুস্থতা দান করি, তবে তার (দেহের আক্রান্ত) মাংসপেশির বদলে আরও উত্তম মাংশপেশি দান করব এবং (দূষিত) রক্তের পরিবর্তে আরও উত্তম রক্ত দান করব। আর তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবো।’ (মুআত্তা মালিক : ৫/১৩৭৫, হা. নং ৩৪৬৫, প্রকাশনী : মুআসসাসাতু জায়িদ বিন সুলতান, আবুধাবি)
    চার : সবরকারীদের অনন্য মর্যাদা দিয়ে স্পেশালভাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
    আমর ইবনে শুআইব রহ. তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    إِذَا جَمَعَ اللهُ تَعَالَى الْخَلَائِقَ نَادَى مُنَادٍ: أَيْنَ أَهْلُ الْفَضْلِ؟ فَيَقُومُ نَاسٌ هُمْ يَسِيرٌ، فَيَنْطَلِقُونَ سِرَاعًا إِلَى الْجَنَّةِ فَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ، فَيَقُولُونَ: إِنَّا نَرَاكُمْ سِرَاعًا إِلَى الْجَنَّةِ، فَمَنْ أَنْتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: نَحْنُ أَهْلُ الْفَضْلِ، فَيَقُولُونَ: مَا كَانَ فَضْلُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: كُنَّا إِذَا ظُلِمْنَا صَبَرْنَا، وَإِذَا أُسِيءَ إِلَيْنَا غَفَرْنَا، وَإِذَا جُهِلَ عَلَيْنَا حَلُمْنَا، فَيُقَالُ لَهُمُ: ادْخُلُوا الْجَنَّةَ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ
    ‘আল্লাহ যখন (হাশরের ময়দানে) সকল মাখলুককে সমবেত করবেন, একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, মর্যাদাবানরা কোথায়? তখন অল্প কিছু মানুষকে দাঁড়াতে দেখা যাবে। তাঁরা দ্রুত জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। পথে ফেরেশতাদের সঙ্গে দেখা হবে। তাঁরা জিজ্ঞেস করবে, আপনারা কারা? তাঁরা উত্তর দেবে, আমরা মর্যাদাবান। ফেরেশতারা পুনরায় জানতে চাইবে, আপনাদের মর্যাদার কারণ? তাঁরা বলবে, আমাদের কষ্ট দেওয়া হলে সবর করতাম, আমাদের সাথে মন্দ ব্যবহার করা হলে ক্ষমা করে দিতাম আর আমাদের সাথে মূর্খতার মতো আচরণ করা হলে ধৈর্যধারণ করতাম। তারপর তাঁদের বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ করুন। সৎকর্মপারয়ণদের প্রতিদান কতই না উত্তম!’ (শুআবুল ইমান : ১০/৪২২, হা. নং ৭৭৩১, প্রকাশনী : মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ)
    পাঁচ : সবরের কারণে গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।
    আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    مَا مِنْ مُصِيبَةٍ تُصِيبُ المُسْلِمَ إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا عَنْهُ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا
    ‘মুমিনের জীবনে যত বিপদ আসে, প্রতিটি বিপদের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন; এমনটি কাঁটা ফুটলেও।’ (সহিহুল বুখারি : ৭/১১৪, হা. নং ৫৬৪০, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
    আবু সাইদ রা. ও আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :
    مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
    ‘মুসলিমের ওপর যে কষ্টক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এই সবগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহুল বুখারি : ৭/১১৪, হা. নং ৫৬৪১, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
    আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُشَاكُ شَوْكَةً، فَمَا فَوْقَهَا إِلَّا كُتِبَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ
    ‘মুমিনের দেহে যদি কোনো কাঁটাও ফোটে কিংবা আরও অধিক কষ্ট আসে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ সহিহু মুসলিম : ৪/১৯৯১, হা. নং ২৫৭২, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
    আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    مَا يَزَالُ البَلاَءُ بِالمُؤْمِنِ وَالمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ.
    ‘মুমিন নর-নারীর জীবনে, তাদের সন্তান-সন্ততিতে, ধন-সম্পদে একের পর এক বালা-মুসিবত আসতে থাকে; (আর তার পাপরাশি ক্ষমা হতে থাকে) এমনকি এক পর্যায়ে সে গুনাহবিহীন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হয়।’ (সুনানুত তিরমিজি : ৪/১৮০, হা. নং ২৩৯৯, প্রকাশনী : দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)
    আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :
    مَنْ وَعَكَ لَيْلَةً فَصَبَرَ , وَرَضِيَ بِهَا عَنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
    ‘যে ব্যক্তি একরাত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, তার পাপরাশি ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়—সে যেন সদ্যপ্রসূত এক শিশুতে পরিণত হয়।’ (শুআবুল ইমান : ১২/২৮৩, হা. নং ৯৪০২, প্রকাশনী : মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ)
    ছয় : পরিপূর্ণভাবে সবরকারীর আমলনামা না দেখেই জান্নাত দেওয়া হবে।
    আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরিল আ. থেকে বর্ণনা করেন :
    اللَّه تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: إِذَا وَجَّهْتُ إِلَى عَبْدٍ مِنِ عَبِيدِي مُصِيبَةً فِي بُدْنِهِ أَوْ مَالِهِ أَوْ وَلَدِهِ ثُمَّ اسْتَقْبَلَ ذَلِكَ بِصَبِرٍ جَمِيلٍ اسْتَحْيَيْتُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ أَنْصُبَ لَهُ مِيزَانًا أَوْ أَنْشُرَ لَهُ دِيوَانًا
    ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যদি আমার কোনো বান্দার দেহে বা সন্তুান-সন্ততিতে কিংবা ধন-সম্পদে মুসিবত দিই, আর সে যদি এই মুসিবতকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয় এবং পরিপূর্ণভাবে ধৈর্যধারণ করে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য ‘মিজান’ বা হিসাবের পাল্লা দাঁড় করাতে কিংবা তার আমলের নথিপত্র খুলতে লজ্জাবোধ করি।’ (মুসনাদুশ শিহাব : ২/৩৩০, হা. নং ১৪৬২, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)
    সাত : সবর বা ধৈর্যধারণ হলো সবচেয়ে বিস্তৃত ও উত্তম নিয়ামত।
    আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
    وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ
    ‘সবরের চেয়ে উত্তম ও বিস্তৃত কোনো নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (সহিহুল বুখারি : ২/১২৩, হা. নং ১৪৬৯, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
    আট : সবরের মাধ্যমে উন্নত মর্যাদায় পৌঁছানো হয়।
    জনৈক সাহাবি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
    إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ مَنْزِلَةٌ، لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلَاهُ اللَّهُ فِي جَسَدِهِ، أَوْ فِي مَالِهِ، أَوْ فِي وَلَدِهِগ্ধ قَالَ أَبُو دَاوُدَ: زَادَ ابْنُ نُفَيْلٍ: ্রثُمَّ صَبَّرَهُ عَلَى ذَلِكَ - ثُمَّ اتَّفَقَا - حَتَّى يُبْلِغَهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى
    ‘বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে যখন কোনো মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে যায়, আর সে যদি স্বীয় আমলের মাধ্যমে মর্যাদার সেই স্তরে উপনীত হতে না পারে, তখন আল্লাহ তার দেহে, সম্পদে কিংবা সন্তান-সন্ততিতে মুসিবত দান করেন এবং তাকে সবর করার তাওফিক দেন। এভাবে তিনি তাকে উদ্দিষ্ট মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন।’ (সুনানু আবি দাউদ : ৩/১৮৩, হা. নং ৩০৯০, প্রকাশনী : আল-মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)
    এমন আরও অনেক হাদিস ও আসার আছে, যা থেকে সবরের ফজিলত ও গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। এ পরিচ্ছেদে আমরা কুরআন ও হাদিস থেকে সবরের যে ফজিলত ও গুরুত্বের কথা জানতে পারলাম, জ্ঞানী মুমিনদের শিক্ষার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। এ নসগুলো সামনে রাখলে আমাদের জন্য যেকোনো বিপদ-মুসিবতে সবর করা সহজ হবে এবং আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকার মানসিকতা তৈরি হবে। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন।

    চলবে...

    **************
    Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

  • #2
    বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয় ।। প্রথম পর্ব
    https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232476%3B
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      যাজাকাল্লাহু খাইরান আখি!
      খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবরের মত মূল্যবান আখলাক অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
      মুহতারাম ভাইয়ের কাছে আবেদন। এই ধারাবাহিক পোস্ট সমাপ্ত হলে যেন পিডিএফ ও ডক ফাইল বানিয়ে দেওয়া হয়।
      দাওয়াহ,ইদাদ ও জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি খিলাফাহ কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ।

      Comment


      • #4
        Originally posted by ফোরামের সাথি View Post
        যাজাকাল্লাহু খাইরান আখি!
        খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবরের মত মূল্যবান আখলাক অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
        মুহতারাম ভাইয়ের কাছে আবেদন। এই ধারাবাহিক পোস্ট সমাপ্ত হলে যেন পিডিএফ ও ডক ফাইল বানিয়ে দেওয়া হয়।
        সহমত আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন আমীন।
        মুসলিম হয়ে জন্মেছি আমি ইসলাম আমার ধর্ম
        লড়বো আমি খোদার পথে এটাই আমার গর্ব।

        Comment


        • #5
          হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সবরকারীদের দলভুক্ত করুন ও জিহাদের পথে অটল-অবিচল রাখুন। আমীন
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment


          • #6
            Originally posted by abu ahmad View Post
            হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সবরকারীদের দলভুক্ত করুন ও জিহাদের পথে অটল-অবিচল রাখুন। আমীন
            আমিন ছুম্মা আমিন।

            Comment

            Working...
            X