Announcement

Collapse
No announcement yet.

“ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৩

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৩

    তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন-তৃতীয় পরিচ্ছেদ: মিশরের অভিযান সমূহ


    (পুর্ব প্রকাশের পর)
    ১০- অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট বাকি রয়ে গেছ, যা আমি শিক্ষাসমূহের সর্বশেষে আনার ইচ্ছা করেছিলাম। তা হল, আলোচ্য সময়ের ভেতরে যে জিহাদী অভিযানগুলো হয়েছে, তার উপকারিতা সমূহ।

    শুরুতেই সংক্ষিপ্তভাবে স্পষ্ট করতে হবে যে, জিহাদি অভিযানগুলোর লক্ষ্য কী?

    আমি যা মনে করি, মিশরের মত স্বৈরাচারী অহংকারী রাষ্ট্রগুলোতে, যেখানে ক্ষমতার সবগুলো সূতো ফেরাউন নিজের হাতে ধরে রাখে, নিজের সকল থাবাসহ উম্মাহর ঘাড়ের উপর চাপ দেয় এবং সর্বপ্রকার কঠোরতার সাথে যেকোন বিদ্রোহের চেষ্টা দমন করে, এ ধরণের দেশে জিহাদী অভিযানের উদ্দেশ্য সরকার পতন নয়। বরং তা দ্বারা দু’টি উদ্দেশ্য থাকে:

    এক. এটিই গুরুত্বপূর্ণ- সরকার পতনের ভূমিকা স্বরূপ জিহাদি অগ্রদলের পিছনে উম্মাহর শক্তিগুলোকে একত্রিত করা।

    দুই: বিরোধী পক্ষের সদস্যদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া এবং তাদেরকে নৈরাশ্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া, যা অগ্রবর্তী মুজাহিদ বাহিনী সরকারি বাহিনীর উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার সময় সরকারকে দ্রুত পতনের দিকে নিয়ে যাবে।

    এই চিন্তাধারার ভিত্তিতেই আমাদেরকে এমন সকল কার্যাবলী সম্পাদন করতে হবে, যা উম্মাহকে তাদের অগ্রদল মুজাহিদ বাহিনীর পেছনে একত্রিত করবে এবং এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, যা উম্মাহকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এমনকি এমন সকল কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে, যা উম্মাহ বুঝতে সক্ষম হবে না এবং তা উম্মাহকে জিহাদের পতাকাতলে একত্রিত করতে সাহায্য করবে না। কারণ এ ধরণের কাজের সর্বনিম্ন ক্ষতি হল: জান, মাল ও পরিশ্রম অনর্থক নষ্ট হওয়া।

    এই চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিগত সময়ের পর্যালোচনায় জিহাদি অভিযানগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: তাৎপর্যপূর্ণ অভিযান সমূহ, তাৎপর্যহীন অভিযান সমূহ এবং মাঝামাঝি অভিযানসমূহ।

    তাৎপর্যপূর্ণ অভিযান হল, যেগুলোতে এমন শত্রুকে আঘাত করা হয়েছে, যাদেরকে উম্মাহ ঘৃণা করে। আর তাৎপর্যহীন অভিযান হল, যেগুলো উম্মাহ বুঝে না অথবা এমন কাউকে আক্রান্ত করে, যাকে উম্মাহ ঘৃণা করে না।

    সুতরাং আমরা যখন স্মৃতিতে একথা উপস্থিত করব যে, উম্মাহর সবচেয়ে কঠিন শত্রু হল ইহুদি, অতঃপর আমেরিকান, অতঃপর তাদের সহযোগী চি‎হ্নিত দূর্ণীতিবাজগুলো, তাহলেই আমরা বুঝতে পারব যে, সবচেয়ে সফল অভিযান হল, যেগুলো ইহুদি, আমেরিকান এবং তারপর হুসনি মোবারককে টার্গেট করে করা হয়েছে। আর সবচেয়ে কম তাৎপর্যপূর্ণ হল, যেগুলোতে সরকার পক্ষের লোক, সাধারণ পুলিশ এবং ইরাক ও আফগান যুদ্ধের পূর্ববর্তী নন ইহুদি পর্যটকদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। তবে আফগান ও ইরাক যুদ্ধের পর এ দুই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর সদস্য ও স্বার্থসমূহের উপর আক্রমণকে তাৎপর্যপূর্ণ অভিযান হিসাবেই গণ্য করা হয়।

    আমেরিকা ও ইহুদীদেরকে আঘাত করা হলে অচিরেই সরকার থেকে তাদের আস্থা শেষ হয়ে যাবে এবং সরকারের কুৎসিত চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়বে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, তাবার ঘটনাবলীর পর সিনাইয়ে ইসরাঈলী নোংরা বাণিজ্য রক্ষা করার জন্য সরকার যে ঘৃণ্য আগ্রাসন চালিয়েছে তা।
    একারণে স্বার্থকতার দিক থেকে মিশরে সর্বোত্তম অভিযান হল যথাক্রমে:

    ক. ইহুদী গোষ্ঠী ও তাদের স্বার্থসমূহের উপর আক্রমণ
    খ. আমেরিকান গোষ্ঠী ও তাদের স্বার্থসমূহের উপর আক্রমণ।
    গ. আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো ও তাদের তাদের স্বার্থসমূহের উপর আক্রমণ।
    ঘ. হুসনি মোবারক ও তার দুই সন্তানের উপর আক্রমণ।
    ঙ. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নির্যাতনের সাথে জড়িত সাবেক ও বর্তমান পুলিশ অফিসারদের উপর আক্রমণ।

    ১১- সারকথা,

    বিগত চল্লিশ বছরে জিহাদি আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে, না সফল হয়েছে?

    উত্তর:

    ক. আমাদেরকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, ইসলামী আন্দোলনের মূল টার্গেট, তথা মিশরে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

    খ. কিন্তু ইসলামী জিহাদী আন্দোলন এ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেনি।এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হয়ত এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কয়েক প্রজন্মও লেগে যেতে পারে। লাগাতার দুই শতাব্দী জিহাদ করার পর শাম ও ফিলিস্তীনে ঝেঁকে বসা ক্রুসেডাররা সেখান থেকে বের হয়েছিল। অথচ সে সময় মুসলিম উম্মাহর কয়েকজন মুজাহিদ শাসক ও প্রশিক্ষিত সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী ছিল। যাদেরকে পরিচালনা করতেন ইজ্জুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম, নববী ও ইবনে তাইমিয়া রহ.দের মত মহান অনুসরণীয় ইমামগণ। এতদসত্ত্বেও ত্রিশ বছর বা পঞ্চাশ বছরে ক্রুসেডাররা বের হয়ে যায়নি। এমনিভাবে ইংরেজরা সত্তুর বছর যাবত মিশর দখল করে ছিল। ফরাসিরা একশ’ বিশ বছর আলজেরিয়া দখল করে ছিল।

    আমি যে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে দেখি, তা হল: ইসলামী জিহাদী আন্দোলন বিজয়ের পথে অনেক দীর্ঘ মানজিল অতিক্রম করে ফেলেছে। কারণ:

    ১- তার একটি সুস্পষ্ট চিন্তাগত আদর্শ আছে, যা সুপ্রমাণিত শরয়ী ভিত্তি ও তিক্ত চাক্ষুস বাস্তবতার আলোকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

    ২- জিহাদী আন্দোলন মুসলিম উম্মাহর সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর চিন্তা থেকে হারিয়ে যাওয়া বিষয়গুলো যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। যেমন শরীয়ার শাসনকর্তৃত্ব, সে সকল শাসকদের ধর্মত্যাগের জ্ঞান, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা শাসন করে না, সরকার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফরজ হওয়া এবং ইসলামের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্বকারী শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ফরজ হওয়া।

    ৩- এমনিভাবে জিহাদী আন্দোলন ইসলামের বিরুদ্ধে মিত্রতায় আন্তার্জাতিক শাসনব্যবস্থা এবং মিশরীয় শাসনব্যবস্থার মাঝে মজবুত সম্পর্ক প্রকাশ করে দিয়েছে।

    ৪- জিহাদী আন্দোলন শুধু এ সকল বিষয়গুলোর তাত্ত্বিক উপস্থাপনা করেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি। বরং নিজেদের আক্রমণপদ্ধতির মধ্যেও তা প্রয়োগ করেছে, যা কয়েকবার সরকারের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ভিতরে-বাহিরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

    ৫- পূর্বোক্ত বিষয়গুলোর ফলস্বরূপ, মুসলিম যুবকদের চিন্তা ও কাজের মধ্যে জিহাদী আন্দোলনের শক্তিশালী প্রভাব তৈরী হয়েছে, যা মিশরের বিশাল সংখ্যক যুবকের মাঝে জিহাদী চেতনা বিস্তার করতে সহায়তা করেছে। শুধু এতটুকুই নয়, জিহাদী আন্দোলন মিশরের জনগণের বিশাল সংখ্যকের উপর প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণ স্বরূপ, আনওয়ার সাদাত হত্যা মামলায় বিচারাধীন জনৈক ভাই আমার নিকট উল্লেখ করেন, একজন আইনজীবি আসামীদের খাঁচার নিকটে এসে খুব আশ্চর্য ও আবেগের সাথে বললেন: তোমরা কারা? তোমরা কোথা থেকে এসেছ??

    যেহেতু মুজাহিদ যুবকগণ আনওয়ার সাদাত হত্যা ও তার পরবর্তী জিহাদী অভিযানগুলোর মাধ্যমে দীর্ঘ নিরাশাবাদী উম্মাহর অন্তরে আশার আলো প্রজ্জলিত করেছেন। ইসলামী জিহাদী আন্দোলনগুলোর যেকোন পর্যবেক্ষক বুঝতে পারবেন যে, আন্দোলনের শুরুর সময়ের মাঝে আর বর্তমান অবস্থার মাঝে বাহ্যিক আকার, দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্টতা এবং তৎপরতা বৃদ্ধিতে সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।

    ৬- শুধু তাই নয়, মিশরের জিহাদী আন্দোলন তাদের আল কায়েদার মুজাহিদীন ভাইদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে তাদের কার্যকরিতা বিকশিত হয়েছে। তারা তাদের সাথে মিলে ক্রুসেডার ও জায়নবাদী হামলার বিরুদ্ধে ইসলামী যুদ্ধে জড়িয়েছে। এভাবে তারা সেসকল জিহাদী অগ্রদলের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, যাদের সাথে সমস্ত মুসলিম উম্মাহ সমকালীন ক্রুসেড হামলার বিরুদ্ধে জিহাদে মিলিত হয়েছে।

    গ. একারণে আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, সাধারনভাবে জিহাদী আন্দোলন উন্নতি ও অগ্রগতির পথেই আছে, যদিও অনেক দমনাভিযান ও অবরোধের কারণে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা ও পিছুটানও এসেছে।

    এজন্য ইসলামী জিহাদী আন্দোলনের উপর আবশ্যক হল এ লড়াই থামিয়ে না দেওয়া, বরং গোটা উম্মাহকে এই প্রতিরোধে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করা।

  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ
    মুহতারাম ভাই ধারাবাহিক ভাবে কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।
    আল্লাহ তাআলা লেখক,অনুবাদক,পোস্টকারী ভাইকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমিন
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

    Comment


    • #3
      খ. কিন্তু ইসলামী জিহাদী আন্দোলন এ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেনি।এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হয়ত এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কয়েক প্রজন্মও লেগে যেতে পারে। লাগাতার দুই শতাব্দী জিহাদ করার পর শাম ও ফিলিস্তীনে ঝেঁকে বসা ক্রুসেডাররা সেখান থেকে বের হয়েছিল। অথচ সে সময় মুসলিম উম্মাহর কয়েকজন মুজাহিদ শাসক ও প্রশিক্ষিত সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী ছিল। যাদেরকে পরিচালনা করতেন ইজ্জুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম, নববী ও ইবনে তাইমিয়া রহ.দের মত মহান অনুসরণীয় ইমামগণ। এতদসত্ত্বেও ত্রিশ বছর বা পঞ্চাশ বছরে ক্রুসেডাররা বের হয়ে যায়নি। এমনিভাবে ইংরেজরা সত্তুর বছর যাবত মিশর দখল করে ছিল। ফরাসিরা একশ’ বিশ বছর আলজেরিয়া দখল করে ছিল।

      এ বিষয়গুলো আমদের বুঝা খুবই জরুরী। দায়েশ ও খাওয়ারিজদের উদাহরণ তো আমাদের সামনেই আছে।
      আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment

      Working...
      X