Announcement

Collapse
No announcement yet.

“ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৬

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৬

    তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন- পঞ্চম পরিচ্ছেদ:দাগিস্তান: উপায় শেষ হওয়ার পর সাহায্য- প্রথম বিষয়: ককেশাসের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ভাবনা।


    দ্বিতীয় ভাগ:

    রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াইয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

    “আমি ককেশাশে ২৫ বছর অপেক্ষায় ছিলাম এ হাতটি আমার দিকে সম্প্রসারিত হওয়ার জন্য।”

    “আমরা কিছুতেই কাঁদব না, কিছুতেই দুর্বলতা প্রদর্শন করব না এবং কিছুতেই ভুলে যাব না।”


    ***
    রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াইয়ের ইতিহাসকে সংক্ষেপে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়:

    ১- অহংকারী রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াই।

    ক. ইমাম মানসুরের আন্দোলন।
    খ. ইমাম মানসুরের পর থেকে নিয়ে ইমাম শামিল রহ. এর আত্মপ্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত মুসিলম ককেশাশে জিহাদ।
    গ. ইমাম শামিল রহ. এর আন্দোলন।
    ঘ. ইমাম শামিল রহ. এর পরে মুসলিম ককেশাশে জিহাদ।

    ২-
    সেভিয়েত ইউনিয়ন ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াই।

    ৩- সেভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াই।

    ***
    ১- অহংকারী রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াই

    ক. ইমাম মানসুরের আন্দোলন। (১৭৮৫-১৭৯১)

    সপ্তদশ শতাব্দির শেষভাগে ১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার ক্ষমতায় বসে ‘বড় পেট্রিস’, যিনি তার তীক্ষ্ম মেধার আলোকে বুঝতে পেরেছিলেন, ককেশাশ দখল করার মাধ্যমে রাশিয়া কী পরিমাণ বড়ত্বের আসনে আসিন হতে পারবে। তিনি মুসলিম অঞ্চলগুলো দখল করার এক রাজনৈতিক অসিয়তও রেখে গিয়েছিলেন, যা তার পরবর্তীরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করেছে।

    ১৭২৯ সালে রাশিয়ান রাজা দ্বিতীয় কেট্রিনার সময় এল। সে বড় পেট্রিস এর নীল নকশার উপর চলল। সে দক্ষিণাঞ্চলীয় মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সাম্রাজ্যবাদি অভিযান শুরু করল।

    মুসলমানগণ প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে গেলেন। আজও পর্যন্ত তারা নিজ দেশের উপর এই রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন।

    ককেশাশে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিহাদের সর্বপ্রথম নেতা ছিলেন ইমাম মানসুর রহ.। তিনিই হলেন ককেশাশের প্রথম ইমাম। তিনি একজন চেচেন। আলদা গ্রামের অধীবাসী। দাগিস্তানে শরয়ী বিভিন্ন ইলম অর্জন করেন। তারপর নিজ দেশ চেচনিয়ায় ফিরে গিয়ে আল্লাহর দিকে এবং ইসলামী শরীয়াহ আঁকড়ে ধরার দিকে আহ্বান করতে থাকেন। এই দাওয়াতের সাথে ছিল উন্নত চরিত্র, মানুষের সাথে লেন-দেনে আমানতদারিতা ও সাদাসিধে জীবনযাপন। যা মানুষের মাঝে তার মর্যাদা উঁচু করে দিল এবং তিনি একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হলেন।

    তিনি উত্তর ককেশাশে রাশিয়ান বাহিনীগুলোর পৌঁছার সংবাদ শোনার সাথে সাথেই নিজ গ্রাম থেকে বের হয়ে রাশিয়ান জঙ্গীদের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান করেন। তার দাওয়াত ককেশাশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সকলে তার সাথে যুক্ত হয়।

    তিনি উত্তর ককেশাশের জনগণকে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে সফল হন। যদিও যুদ্ধকারী পক্ষগুলো পরস্পর সমান ও সমকক্ষ ছিল না এবং তুরস্কের উসমানীয় সালতানাত থেকে কোন ধরণের সাহায্যও লাভ হয়নি, এতদসত্ত্বেও ইমাম মানসুর ১৭৮৫ থেকে ১৭৯১ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর লাগাতার রাশিয়ান শক্তিগুলোকে একের পর এক পরাজয়ের গ্লানি ভুগিয়েছেন। রাশিয়ার পক্ষে ককেশাশের একটি অঞ্চলও দখল করা সম্ভব হয়নি।

    উসমানী খলিফা কোন একটি দূর্গে অবরূদ্ধ তুর্কিদেরকে রাশিয়ান বাহিনী থেকে মুক্ত করার জন্য ইমাম মানসুরের সাহায্য চাইল। ইমাম তাদেরকে মুক্ত করলেন এবং তাদের অবরোধ ভেঙ্গে দিলেন। কিন্তু জনৈক তুর্কি কমান্ডার হুসাইন বাতাল পাশা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করে আনাবা দূর্গের ফটকগুলো তাদের জন্য খুলে দিল। ইমাম মানসুর দূর্গের ভিতরে ছিলেন। তিনি নিজ লোকজন নিয়ে মোকাবেলা করতে করতে আহত হয়ে পড়ে গেলেন। তার তরবারি পড়ে গেল এবং ১৭৯১ খৃষ্টাব্দে তিনি বন্দি হলেন। তাকে শিকলাবদ্ধ করে রাশিয়ান রাণী কেট্রিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল, যে তাকে জীবিত দেখতে চেয়েছিল। তিনিই তার সেনাবাহিনীকে ন্যাক্কারজনক পরাজয়ের সম্মুখীন করেছিলেন। তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভূলুণ্ঠিত অবস্থায় দেখার পর সাংক্ট পিটারবুর্গে অবস্থিত শ্লেজারবুর্গ দূর্গে বন্দি করার আদেশ দেয় এবং সেখানেই ১৭৯৪ খৃষ্টাব্দে তাকে হত্যা করা হয়। কারণ তিনি কারাগারের প্রহরীদের উপর আক্রমণ করেছিলেন এবং তাদের একজনের খঞ্জর ছিনিয়ে নিয়ে তাকেই বিদ্ধ করেছিলেন। তাই আল্লাহ তার উপর ভরপুর রহমত নাযিল করুন এবং তাকে তাঁর জান্নাতের সুপ্রশস্ত বাগানে আবাস দান করুন।

    খ. ইমাম মানসুরের পর থেকে নিয়ে ইমাম শামিল রহ. এর আত্মপ্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত মুসিলম ককেশাশে জিহাদ

    শায়খ মানসুরের পর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে চেচনিয়ার লড়াই অব্যাহত থাকে, যাদের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন টায়ম্যান পিপলাট। কিন্তু তারা সবাই সফল প্রতিরোধের অবশ্য শর্ত হিসাবে ককেশাশি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। একই সময়ে রাশিয়া তাদের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করে এবং সেখানকার সাধারণ অধিবাসীদেরকে ব্যাপক উচ্ছেদের প্রস্তুতির পূর্বে কঠোরতা ও প্রভাব বৃদ্ধির হামলা শুরু করে। এই গোষ্ঠীগত উচ্ছেদ অভিযান বাস্তবায়িত হয় ‘নাগরিকত্ব’ ও ডাকাত নির্মূলের স্লোগানে। পক্ষান্তরে প্রকৃত সাম্রাজ্যবাদি রাশিয়ার নিয়ত ছিল ককেশাস অঞ্চলকে তার প্রকৃত জনগোষ্ঠী থেকে মুক্ত করা।

    চেচেনদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার শত্রুতার মূল কারণ ছিল সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি, যা চেচেন মুসলিমগণ ককেশাশের ইতিহাসে রচনা করেছেন। একারণে রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদি রাজনীতির নীতি-নির্ধারকরা বুঝতে পারল যে, উক্ত অঞ্চলে কর্তৃত্ব পূর্ণ করতে হলে অবশ্যই চেচেনদেরর প্রতিরোধ নিশ্চি‎হ্ন করতে হবে। জেনারেল ইয়ারমোলোভ- যিনি ব্যক্তিগত নিষ্ঠুরতা ও ত্রাসের সাথে পরিপূর্ণ পোড়ামাটি নীতিতে চলেছেন, তার লজ্জাস্কর বক্তব্যগুলো সেই মানসিকতাই প্রকাশ করে, যা ৪৫০ বছর যাবত চেচেন জনগণের সাথে রাশিয়ান রাজনীতি হিসাবে চলে আসছে। তিনি বলেন:

    “ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হব না, যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বশেষ চেচেনের মাথা যাদুঘরে না রাখা হবে।”

    ইমাম মানসুরের হত্যার পর রাশিয়ান সম্রাট কেট্রিন বৃহৎ ককেশাশ-নীতি প্রণয়ন করল। যার সারকথা হল, তুর্ক নদী ও কোলান নদীর তীরবর্তী দূর্গ ও বসতিগুলো দখল করা। যা পূর্বে কাযবীন নদী এবং পশ্চিমে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এভাবে সে সকল হেল্পলাইন বন্ধ করার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য উত্তর ককেশাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।

    তার নাতি সম্রাট ‘আলেকজান্ডার প্রথম’ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তার আল কুদস ও কনস্টান্টিনোপল পুনরুদ্ধারের টার্গেট বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। তাই তার প্রথম কাজ ছিল ১৮১৮ সালে চেচনিয়া পদানত করার প্রচেষ্টা। কারণ এটাই ছিল উত্তর ককেশাশে কায়সারী রাশিয়ার সর্বাধিক কট্টর শত্রু। রাশিয়া পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে। তাই চেচেন জনপদগুলো গুড়িয়ে দেয়। সমতল ভূমিগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। চেচেনগণ পাহাড়ে পালিয়ে যান এবং রক্তক্ষয়ী গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। ফলে রাশিয়া উক্ত অঞ্চল পদানত করতে অসমর্থ হয় এবং ভারি লোকসান গণে।

    ১৮২৮ খৃষ্টাব্দে ইমাম গাজী আদ-দাগিস্তানি রহ. রাশিয়ান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য জনগণের প্রচেষ্টাগুলো ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। আগ্রাসী রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য ইসলামী আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। নিজেই তার নেতৃত্ব দেন। ককেশাসিয়ানদেরকে নিজেদের মধ্যকার মতভেদ ছুড়ে ফেলতে এবং বিবাদ ভুলে যেতে আহ্বান করেন। ফলে তার আওয়ায ছড়িয়ে পড়ে। গোত্রগুলো তার পাশে এসে জড়ো হয়। তার নায়েব ও সহযোগী ছিলেন শায়খ মুহাম্মদ শামিল দাগিস্তানি।

    ইমাম গাজী রহ. অব্যাহতভাবে জিহাদ চালিয়ে যান। রাশিয়ানদেরকে একের পর এক পরাজয়ের সম্মুখীন করেন। অবশেষে একটি ককেশাশি গোত্র তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার সুযোগ পেয়ে যায় এবং তাকে অবরূদ্ধ করে রাশিয়ানদের জন্য পথ খুলে দেয়। কয়েকদিন যাবত অবরোধ চলতে থাকে। রাশিয়ান কামানগুলো তার অবস্থানে আঘাত হানতে থাকে। অবশেষে রাশিয়ানরা তাকে ও তার সঙ্গীগণকে শেষ করে দিতে সমর্থ হয়। শুধুমাত্র দু’জন ব্যক্তি বেঁচে যান। যাদের একজন হলেন শায়খ মুহাম্মদ শামিল রহ., যিনি গভীর ক্ষত নিয়ে পলায়ন করতে সক্ষম হন। আর ইমাম গাজী রহ. ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে হাতে তরবারী ধারণ করা অবস্থায় নিহত হন। আল্লাহর তার প্রতি প্রশস্ত রহমত নাযিল করুন।

    তার পর পতাকা বহন করেন কমান্ডার হামযাহ বেগ। তিনি দু’বছর পর্যন্ত ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যান। কিন্তু তিনিও নিকৃষ্ট বিশ্বাসঘাতকতার হাত থেকে রেহাই পেলেন না। তারই এলাকার একটি গ্রুপের প্ররোচনায় জনৈক বিশ্বাসঘাতক মুনাফিক তাকে নামাযরত অবস্থায় আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে হত্যা করে, যে গ্রুপটি শরীয়া আইন বাস্তবায়ন হলে নিজেদের বিপদের আশঙ্কা করছিল।

  • #2
    আমাদের প্রত্যেক সাথীর উচিত এ-ই সিরিজটি নিয়মিত পড়া।
    اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

    Comment


    • #3
      শরয়ী আইন ছেড়ে দিয়েই তো মুসলিমরা সব কিছু হারালো। যেই লোক শরয়ী আইনের বিরোধী সে তো স্পষ্ট কাফের।
      اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

      Comment


      • #4
        পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকে এই পর্যন্ত যতজন যতভাবে দ্বীনের পথে শাহাদাত বরণ করেছেন, আল্লাহ তাদের সবাইকে কবুল করুন ও জান্নাতের সবুজ পাখি হিসাবে কবুল করুন।
        আমরা যারা জীবিত আছি; যারা শাহাদাত প্রত্যাশী; আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে শাহাদাতের জন্য কবুল করেন ও দ্বীনের পথে কুরবান হওয়ার তাওফীক দেন।
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          আল্লাহ পোষ্টকারী ভাইকে উত্তম প্রতিদান দিন ৷ আমিন
          গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

          Comment


          • #6
            Originally posted by forsan313 View Post
            আমাদের প্রত্যেক সাথীর উচিত এ-ই সিরিজটি নিয়মিত পড়া।
            মুহতারাম ভাই!
            আমাদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু শব্দ (সাথী এ জাতীয় শব্দ) পরিহার করা উচিৎ!
            লিল্লাহি তাকবির! আল্লাহু আকবার!!

            Comment

            Working...
            X