কিছু কিছু কথা বা ছোট ছোট লেখার মধ্যে আল্লাহ্* কখনো কখনো এমন কিছু ঢেলে দেন যে তা অনন্ত যৌবন লাভ করে। কোনো প্রকার জরা-জীর্ণতা কখনোই তাকে আর স্পর্শ করতে পারে না। খুব অনুভূতি হয়তো এগুলোতে নাও থাকতে পারে কিন্তু নিষ্ঠাবান শ্রোতা বা পাঠকের জীবনে এগুলো ঘূর্ণি ঝড়ের মত একটা ইউ-টার্ন ঘটিয়ে দেয়। গত চৌদ্দশ বছরে আল্লাহ্*র অনেক প্রিয় বান্দা এই ধরনের অনেক কথা বলে গেছেন। আমাদের যামানায় শাইখ আবদুল্লাহ্* আযযাম, শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরি, শাইখ আওলাকি রহিমাহুল্লাহ্*র কিছু কথাও আমার কাছে ঠিক তেমনই মনে হয়েছে। আল্লাহ্* এই তিনজনেরই শাহাদাতকে কবুল করুন। আমিন। আবার জীবিতদের মধ্যে শাইখ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি, শাইখ মাকদিসি হাফিযাহুমুল্লাহ্*র কথা থেকেও ঠিক তেমন অনুভূতি পেয়ে আসছি। আল্লাহ্* তাদেরকে তাঁর দুশমনদের হাত থেকে হেফাযত করুন এবং আমাদেরকে তাদের ইলম দ্বারা অনেক বেশী উপকৃত হবার তৌফীক দান করুন। আমিন।
দীর্ঘ দেড় দশকের বেশী সময় থেকে এইসব সত্যবাদীদের কথা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের নিষ্ঠাবান জীবনের উপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে এসেছি। তাদের বিভিন্ন মূল্যবান কথা থেকে যৎসামান্য যে কয়টা মণিমুক্তো কুড়োবার তাওফিক পেয়েছি তা দিয়ে নিজের জন্য ছোট ছোট মালা বানিয়ে আমার পকেট-নোটপ্যাডে টুকে রাখা আমার একটা নিয়মিত অভ্যাস। সময় পেলে একাকি এইসব নোট খুলে বারবার দেখা আর সিনার ভেতর খোদাই করে রাখার চেষ্টাতো আছেই। বিভিন্ন মজমায় প্রায়ই যেহেতু আমাকে “সঠিক মানহাজ কি এবং হক্বপন্থী কারা” টাইপ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়; তাই এ বিষয়ক মুযাকারার স্বার্থে বহুদিন।
আগেই সেরকমই একটা ছোট নোট লিখে রেখেছিলাম। এই নোট থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধারাবাহিক মুযাকারা করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। পরে সম্ভবত ২০০৭-২০০৮ সালে আমি এটা ব্লগ আকারে পাবলিশ করি। ২০১১ সালে আম্রিকি মোড়লদের ইশারায় আমাকে প্রথমে মিশরে পরে তুর্কিতে এবং সবশেষে নিজ দেশে বন্দী করার পর আমার অতি অখ্যাত ‘বান্দারেজা’ সাইটটা বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে আমার প্রায় সব লেখাই হাতছাড়া হয়ে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিনের বন্দী এবং গুম নাটকের প্রাথমিক পর্ব শেষে বিভিন্ন ব্লগ থেকে এবং অন্যান্য সোর্স থেকে কিছু কিছু লেখার সম্পূর্ণ অথবা খণ্ডাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এই লেখাটার কোনো হদিসই মিলছিলো না। অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, জেল থেকে বের হবার পর ঠিক এই লেখাটাই পুনরায় পাবলিশের জন্য আমার ইনবক্সে সবচেয়ে বেশী অনুরোধ পেয়েছি। পুরোনো পাঠকদের মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছিলো যেন আমি শুধু জীবনে মাত্র এই একটি লেখাই লিখেছি! যেন ঠিক এই লেখাটার কারণেই মানুষ আমাকে বান্দা রেজা নামে চেনে! ব্যাপক বিস্ময়ের সাথে বুঝার চেষ্টা করেছি কেন অধমের এই লেখাটাকে তারা এতটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। আল্লাহই এই রহস্যের ব্যাপারে সম্যক অবগত।
আলহামদুলিল্লাহ্* কিছুদিন আগে একাধিক ভাই লেখাটা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিঞ্চিৎ সম্পাদনের পর আপনাদের খিদমতে বিনয়ের সাথে আবার তা হাজির করলাম। তুচ্ছ বান্দার সামান্য এই লেখাটা দিয়ে যদি আল্লাহ্* কারো জীবনে সামান্যতমও কোনো ফায়দা পৌঁছান তবে বান্দা হিসেবে আমি তাঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
উম্মাহর একটি দল সব সময় হকের উপর লড়াইরত থাকবে
উম্মাহর একটি দল সব সময় হক্বের উপর লড়াইরত থাকবে
কষ্টিপাথর দিলামঃ পরখ করে দেখুন কারা সত্যের উপর অটুট!
স্বর্ণকাররা যেমন শুধু কারো কথার উপর নির্ভর না করে খাঁটি সোনা পরখ করতে কষ্টিপাথর ব্যবহার করে থাকেন, তেমনি বিভিন্নরকম ইসলামী দলের হক্বপন্থী হবার মৌখিক দাবীর উপর নির্ভর না করে হক্বপন্থীদের চিনে নিতে আল্লাহ্ তাআলাও দয়া করে আমাদেরকে কিছু দালিলিক কষ্টিপাথর দিয়েছেন, যেন আমরা বিভ্রান্ত না হই। আজ শিয়া, কাদিয়ানী বা পথভ্রষ্ট সুফীদের কথা বাদ দিলেও আহ্*লুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আর মধ্যেই বিভিন্ন দল বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে বলছে যে আমরাই হক্ব, আমাদের পন্থাই হক্ব পন্থা, কেউ বলছে আমাদের আন্দোলনই একমাত্র ঈমানী আন্দোলন, আবার কেউ বলছেন, সলিউশান ফর দা হিউম্যানিটি, এতসব দাবীদারদের মধ্য থেকে কাকে আমরা বেছে নেবো? চলুন দেখে নিই আমাদের কষ্টিপাথর কী বলে।
এধরণের পরিস্থিতিতে ঈমানদারদের হিফাজত করার জন্য আল্লাহ্ তাআলা কুরআনের কিছু আয়াতকে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কিছু হাদীসকে কষ্টিপাথরের মতো উপস্থাপন করেছেন। এই সব কষ্টিপাথর দিয়ে আমরা চাইলে সহজেই হক্বপন্থীদেরকে শনাক্ত করতে পারি। এ পর্যায়ে আমরা সত্যিকার হক্বপন্থীদের বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করার জন্য কুরআন-হাদিসে যেসব কষ্টিপাথর দেয়া হয়েছে তা থেকে কিছু উপস্থাপন করবো।
যারা হকের উপর আছেন কুরআনে তাদের নিদর্শনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে থেকে তারা যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায় তাহলে অচিরেই আল্লাহ এক এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা ঈমানদারদের প্রতি হবে বিনম্র এবং কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। (সুরা মাইদাঃ ৫৪)
এখানে আল্লাহ তাআলা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত জামা’আতের যে সিফাতগুলো বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে
১ – আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন
২ – তারা আল্লাহকে ভালবাসবে
৩ – তারা মুমিনদের প্রতি বিনম্র হবে
৪ – তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে
৫ – তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত থাকবে এবং
৬ – তারা নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না
আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ছয়টি গুণকে আল্লাহ্* তাআলা দ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যখনই কেউ দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে আল্লাহ্* খুব দ্রুতই তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোনো জাতিকে তাদের স্থানে নিয়ে আসবেন। তবে যাদেরকেই আনবেন তাদের মধ্যে এই গুণগুলো অবশ্যই থাকবে। অর্থাৎ এই গুণ বিশিষ্ট দলটিকে আল্লাহ্* তাআলা সবসময় বলবৎ রাখবেন।
বুদ্ধিমান এবং ঈমানদারের জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট। সত্যবাদীরা বলুন তো, এই আয়াত অনুসারে আমাদের সময়ের হক্বপন্থীদের খুঁজে বের করা কি খুব কঠিন? এই একটি আয়াত নিয়েও যদি সত্য অনুসন্ধানীরা কিছু পড়াশোনা করেন তাহলে অবশ্যই বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের নামে ভ্রান্ত দলগুলোর ধোঁকা থেকে বেঁচে থেকে সঠিক দলকে খুঁজে নিতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ্ যদি এই অধমকে তাওফিক দান করেন তবে খুব শীঘ্রই এই আয়াতে বর্ণিত প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্যের বিস্তারিত ব্যাখায় নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মতামত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ্।
হাদীসের ভাষায় সত্যপন্থীদের বর্ননাঃ
আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার স্বার্থে আমি শুধু দু’একটি হাদীস উল্লেখ করছি। আশা করি সত্যিকার ঈমানদারগণ উপকৃত হতে পারবেন ইনশা আল্লাহ্।
১ – সালামাহ বিন নুফাইল (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম, এমন সময় একজন লোক এসে তাকে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ, ঘোড়াগুলোকে (জিহাদের জন্য ব্যবহার না করে আস্তাবলে রেখে দিয়ে) অপদস্থ করা হচ্ছে এবং অস্ত্র নামিয়ে রাখা হয়েছে, আর কিছু লোক বলাবলি করছে যে, আর জিহাদ করতে হবে না, জিহাদ শেষ হয়ে গিয়েছে! রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
كَذَبُوا الآنَ الآنَ جَاءَ الْقِتَالُ وَلاَ يَزَالُ مِنْ أُمَّتِي أُمَّةٌ يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ وَيُزِيغُ اللَّهُ لَهُمْ قُلُوبَ أَقْوَامٍ وَيَرْزُقُهُمْ مِنْهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ وَحَتَّى يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ وَالْخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
তারা মিথ্যা বলছে! জিহাদ তো কেবল শুরু হয়েছে, আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর পথে জিহাদ করতেই থাকবে। বরং আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকে কারো কারো হৃদয়কে বক্র করে দিবেন যাতে তারা তাদের বিরদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং এবং এই কিতাল থেকে তাদেরকে তিনি রিযক্ব দান করবেন যতক্ষণ না ক্বিয়ামাত কায়েম হয় এবং আল্লাহ্*র ওয়াদা এসে যায়। ঘোড়ার কপালে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত রহমত থাকবে (সুনান নাসায়ি, হাদিস নং ৩৫৬১ – সাহিহ)
দেখুন যারা বলে এই যামানায় জিহাদের দরকার নেই তারা কতবড় মিথ্যুক। বরং জিহাদকে চালু রাখার স্বার্থে আল্লাহ্* কারো কারো হৃদয়কে বক্র পর্যন্ত করে দেবেন। আর ন্যূনতম বোধ-বুদ্ধি রাখে এমন কাউকে আশা করি এটা আর ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলতে হবে না যে এখানে সেই জিহাদের কথা বলা হয়েছে যেখানে ঘোড়া এবং অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, নফস বা অন্য কিছু নয়। আর হক্বের উপর এই লড়াই (يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ) কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। চাই খিলাফাহ থাক আর না থাক। চাই ইসলামী রাষ্ট্র থাক আর না থাক। তাই ‘ইসলামী-রাষ্ট্র’ বা ‘খলীফাকে’ যারা জিহাদের জন্য পূর্বশর্ত হিসাবে জুড়ে দিয়েছেন তাদের যুক্তি কতটা সঙ্গত?
ইমাম মুসলিম (রহঃ) এই প্রসঙ্গে তাঁর সাহীহ মুসলিম গ্রন্থের ‘কিতাবুল ইমারাহ’ মধ্যে “উম্মাহর একটি দল সব সময় হক্বের উপর লড়াইরত থাকবে” শিরোনামে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় রচনা করেছেন।
২ – জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لَنْ يَبْرَحَ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا يُقَاتِلُ عَلَيْهِ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ
এই দ্বীন সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানের একটি দল এই দ্বীনের সংরক্ষণের জন্য কিয়ামাত পর্যন্ত কিতাল (يُقَاتِلُ যুদ্ধ) করতে থাকবে। (সাহিহ মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস নং ৪৭১৭, ই.ফা. ৪৮০০)
দেখুন যারা বলে দ্বীন সম্পূর্ণ মিটে গিয়ে পরিপূর্ণ জাহিলিয়াত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; অতএব আমাদেরকে আবার নতুন করে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে, তাদের দাবী কতটা ভ্রান্ত। আসলে দ্বীন কায়েমই আছে, আমদের শুধু নিজেকে তাদের সাথে কাতারবদ্ধ করতে হবে যারা দ্বীনের সংরক্ষণের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। একটু আন্তরিক ভাবে খুঁজে দেখুনতো কারা সেই দল।
৩ – জাবির ইবন আব্দুল্লাহ্* (রাঃ) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
আমার উম্মাতের একটি ত্বইফা (অল্পসংখ্যক লোক বিশিষ্ট দল) কিয়ামাত পর্যন্ত হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কিতাল (যুদ্ধ) করতে থাকবে। এবং তারা বিজয়ী থাকবে। (সাহিহ মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস নং ৪৭১৮, ই.ফা. ৪৮০১)
এই ত্বইফার (طَائِفَةٌ) অস্তিত্ব যদি কিয়ামাত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে তাহলে আমাদের এই যুগেও অবশ্যই তা থাকবে। খুব কি কষ্ট হচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে? কেউ কেউ বলেন জিহাদ/কিতালের বা ত্বইফার জন্য খলীফা বা আমীরে-আম একটি পূর্বশর্ত। সেক্ষেত্রে তাইফা বা কিতাল যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে তাহলে তাদের শর্ত অনুযায়ী সেই তাইফা বা কিতালের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একজন আমিরে-আম বা খলীফাও থাকতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে হাজির করুক তাদের কল্পিত সেই আমিরে-আম বা খলীফা।
৪ – ইয়াজিদ ইবনে আসেম (রাঃ) বলেন, আমি মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানকে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। এটা ছাড়া আর কোনো হাদীস আমি তাকে বর্ণনা করতে শুনিনি। মুয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَلاَ تَزَالُ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের বুঝ দান করেন। মুসলমানের একটি দল সর্বদা হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কিতাল (যুদ্ধ) করতে থাকবে এবং তাদের বিরোধীদের উপর কিয়ামাত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। (সাহিহ মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস নং ৪৭২০, ই.ফা. ৪৮০৩)
সুবহানআল্লাহ্*, দেখুন এই যামানাতেও যারা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে সামান্য একে-৪৭ নিয়ে হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন তাদের অবস্থা। গোটা পৃথিবীর সকল পরাশক্তি এবং তাদের দোসররা সম্মিলিত ভাবেও তাদের সামান্যতম কাবু করতে পারছে না। বরং তাদের ভয়ে পুরো কাফের-মুনাফিক্বদের প্রাণ আজ প্রায় ওষ্ঠাগত। এর পরেও যারা বুঝবো না বলে মনে মনে পণ করে বসে আছেন তাদের থেকে আমরা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত ইনশা আল্লাহ্*।
৫ – আব্দুর রাহমান ইবনে শুমাসাহ আল মাহরি বলেন, আমি মাসলামা ইবনে মাখলাদের নিকট ছিলাম, এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনে আমার ইবনুল আস (রাঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম লোকগুলো যখন পৃথিবীর বুকে অবশিষ্ট থাকবে তখনই ক্বিয়ামাত হবে। তারা জাহিলী যুগের লোকদের চেয়েও নিকৃষ্ট হবে। তারা আল্লাহর কাছে যা-ই চাইবে তাই তাদের দেয়া হবে। আব্দুর রাহমান ইবনে শুমাসাহ বলেন, তারা এই আলোচনায় রত ছিলেন এমন সময় উকবা ইবনে আমের (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হলেন। মাসলামা তাকে বললেন, হে উকবা! আব্দুল্লাহ কী বলছে শুনুন। জবাবে উকবা (রাঃ) বলেনঃ তিনি অনেক অভিজ্ঞ। তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
لاَ تَزَالُ عِصَابَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى أَمْرِ اللَّهِ قَاهِرِينَ لِعَدُوِّهِمْ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ وَهُمْ عَلَى ذَلِكَ
আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদা আল্লাহর হুকুমের উপর অবিচল থাকার জন্য শত্রুর বিরুদ্ধে ক্বিতাল (লড়াই) করতে থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবে কিয়ামাতের মুহূর্ত এসে যাবে এবং তারা হক্ব প্রতিষ্ঠায় শত্রুর মোকাবেলা করতে থাকবে।
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। অতঃপর আল্লাহ এমন এক বায়ু প্রবাহিত করবেন যা কস্তুরীর মতো সুগন্ধযুক্ত এবং রেশমের মতো মোলায়েম। অতঃপর তা এমন কোনো ব্যক্তিকে অবশিষ্ট রাখবে না যার অন্তরে সামান্য পরিমাণও ঈমান আছে। তা তাদের সবাইকে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়ে দিবে। অতঃপর পৃথিবীতে কেবল নিকৃষ্টতম লোকগুলোই অবশিষ্ট থাকবে। আর তাদের উপর ক্বিয়ামাত কায়েম হবে। (সাহিহ মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ অধ্যায়, হাদীস নং ৪৭২১, ই.ফা. ৪৮০৪)
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই ঠিক বলেছেন, “যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না।” কোনো বোমারু বিমান বা চোরাগোপ্তা ড্রোন তাদের সামান্যতম ভীত করতে পারবে না। সাদাকালো-হলুদ মিডিয়া অথবা কোনো দরবারি ফতোয়া তাদের মনোবল এতটুকুও কমাতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সমঝোতার প্রলোভন কিংবা নানারকম হুমকি-ধামকির কোনোটাই তাদের প্ররোচিত করতে পারবে না।
আমরা তাদের স্বীকৃতি দেই আর নাই দেই তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না (১) আল্লাহ্* তাদের ঠিকই ভালবাসেন আর (২) তারাও আল্লাহ্*কেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। (৩) তারা নিজেদের রক্ত দিয়ে হলেও মুমিনদের রক্ষায় বিনম্র (৪) আর বি-৫২ বিমানের বিরুদ্ধে একে-৪৭ দিয়ে হলেও কাফেরদের প্রতি কঠোর। (৫) কেউ তাদের সহযোদ্ধা না হলেও তারা ঠিকই নির্ভীক চিত্তে জিহাদের ময়দানে অবিচল এবং (৬) রাম-সাম, যদু-মধু কারো নিন্দারই পরোয়া করার সময় তাদের নেই। এটা তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। আমরা তাঁর কাছেই হেদায়াতের প্রাচুর্য এবং দিশার জ্ঞান চাই। আবার একবার মিলিয়ে দেখুন সুরা মা’ঈদার ৫৪ নং আয়াত। মিলিয়ে দেখুন উল্লেখিত সবকটা হাদীস। দেখুন কাদের সাথে এর সবগুলো হুবহু মিলে যায়। খুবকি কঠিন? খুবকি অস্পষ্ট? নাকি দেখেও দেখতে চাচ্ছেন না?
এবার বিবেকবানদের বলছি, সত্য জানার এবং বুঝার জন্য সাত আসমানের উপর থেকে নাযিলকৃত ওহীর ইলমের উপর অর্থাৎ কুরআন এবং সহীহ হাদিসের উপর নির্ভর করুন। তাহলে অবশ্যই নিরাপদ থাকবেন। নিজের অথবা অন্য কারো কল্পনা প্রসূত আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। হয় সত্য বলুন, না হয় চুপ থাকুন। ধোঁকাবাজ নফস অথবা ভীতি প্রদর্শনকারি বাতিলের প্রভাবে ভ্রান্তি ছড়াবেন না। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সঠিক পথ দেখান এবং সঠিক পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন (আমিন)।
ওয়াসসালাম
বান্দা রেজা
Collected:
Results 1 to 7 of 7
-
03-31-2016 #1
- Join Date
- Feb 2016
- Posts
- 66
- جزاك الله خيرا
- 0
- 31 Times جزاك الله خيرا in 14 Posts
কষ্টিপাথর দিলামঃ পরখ করে দেখুন কারা সত্যের উপর অটুট!
Last edited by qasim; 04-02-2016 at 11:00 PM. Reason: Bolt
-
03-31-2016 #2
- Join Date
- Oct 2015
- Posts
- 1,028
- جزاك الله خيرا
- 0
- 2,354 Times جزاك الله خيرا in 769 Posts
جزاك الله يا بندا رضا
-
03-31-2016 #3
- Join Date
- Dec 2015
- Posts
- 509
- جزاك الله خيرا
- 5
- 778 Times جزاك الله خيرا in 339 Posts
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান, বরকত্ময় জীবন,উপকারি ইল্মে সমৃদ্ধ বানিয়ে দিন। রাস্তা পরিষ্কার, প্রতিযোগিতায় দৌড়ের গতি বাড়ানো দরকার, আমাদের ও এগিয়ে আসার তাওফীক নছীব হয়।
-
04-02-2016 #4
- Join Date
- Mar 2016
- Location
- sham
- Posts
- 103
- جزاك الله خيرا
- 75
- 70 Times جزاك الله خيرا in 37 Posts
জাযাকাল্লাহু খাইর।অাল্লাহ অাপনাকে উপকারি এলম দান করুন।
-
04-02-2016 #5
- Join Date
- Apr 2015
- Posts
- 30
- جزاك الله خيرا
- 6
- 101 Times جزاك الله خيرا in 23 Posts
ভাই qasim, আপনার পোষ্টটি মডারেশন করা হয়েছে, কারণ তাতে কিছু অশ্লীল ইংরেজি শব্দ ছিল। ভাই, দয়া করা দ্বীনি ফোরামে পোষ্টের ক্ষেত্রে অশ্লীল শব্দ বর্জনের চেষ্টা করুন। আল্লাহ আপনাদের জন্য সহজ করে দিন।
-
04-02-2016 #6
- Join Date
- Feb 2016
- Posts
- 66
- جزاك الله خيرا
- 0
- 31 Times جزاك الله خيرا in 14 Posts
লাইন নাম্বার টা দিন, আমি এখানে অশ্লীল কিছু দেখসিনা
-
04-02-2016 #7
- Join Date
- Feb 2016
- Posts
- 66
- جزاك الله خيرا
- 0
- 31 Times جزاك الله خيرا in 14 Posts
ভাই এর ফেসবুক ওয়েবঃ
https://web.facebook.com/bandareza313/
Similar Threads
-
গল্পটা একটু কষ্ট করে পড়ুনঃ
By কাল পতাকা in forum আল জিহাদReplies: 23Last Post: 11-28-2018, 11:59 AM -
কিছু উপদেশঃ– প্রথমে উটকে শক্ত করে বাঁধুন,
By abdullah afnan in forum তথ্য প্রযুক্তিReplies: 10Last Post: 01-14-2018, 06:40 PM -
আপনার কম্পিউটারের জন্য DNS jumper... খুব খুব দরকারী ।
By justice_remain in forum তথ্য প্রযুক্তিReplies: 2Last Post: 01-04-2016, 12:28 PM -
Jn || সুতরাং অপরাধীদের পথ সুস্পষ্ট হবে।
By Abu Waqas in forum অডিও ও ভিডিওReplies: 1Last Post: 08-17-2015, 11:35 PM