Announcement

Collapse
No announcement yet.

কেন আমরা নির্যাতিত

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কেন আমরা নির্যাতিত

    আজ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে মুসলমানরা নির্যাতিত। জুলুমের পাতায় পিষ্ট হচ্ছে মুসলমানদের প্রতিটি সমাজ। মুসলিম মা বোনরা আজ লাঞ্ছিত। যুবতী কন্যাদেরকে প্রতিনিয়ত ......। যুবকদের পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। রেহাই দেওয়া হচ্ছে না শিশুদেরকেও। মুক্তি পাচ্ছে না বৃদ্ধরাও। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের প্রতিটি বাড়ি ঘর। গ্রামের পর গ্রাম বিরান করে দেওয়া হচ্ছে। মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত মুসলমানদের রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকায় মুসলমানদের জীবন্ত আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। মায়ানমারে মুসলমানদের শরীর করা হচ্ছে টুকরো টুকরো। পশুর মত জবাই করে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি শিশুদের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলা হচ্ছে। ইরাকী মুসলমানদের দিয়ে গুলির টার্গেট প্র্যাকটিস করা হচ্ছে। আবু গারিব ও গুয়ান্তানামো বে কারাগারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কয়েদিদের সংখ্যা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর এখন পরিণত হয়েছে জাহান্নামে। বাংলাদেশেও শাপলা চত্বরে শত শত আলেম ওলামাকে হত্যা করা হয়েছে। ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের পর থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে , তা শুনলে কোন ইমানদার মুসলমান স্থির থাকতে পারবে না। এ সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা যাক।
    আফগানিস্তানে লাখো মুসলমানকে শহিদ করা হয়েছে। মায়ানমারে হাজার হাজার......সিরিয়ায় লক্ষ লক্ষ ......।বসনিয়ায় এক দিনের হামলায় ৮ হাজার মুসলমানকে শহিদ করা হয়েছিল। এরকম করে মুসলমানদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, কয়েদ করা হচ্ছে। এদের অধিকাংশই কোন সশস্ত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল না। আর কি পরিমানে কয়েদ করা হয়, তা কল্পনাও করা যায় না। শুধুমাত্র ধারণা দেওয়া যেতে পারে যে, ইরাকে এধরনের শত শত কারাগার ছিল !
    অথচ এমন একটা সময় ছিল, যখন মুসলমানরা সারা দুনিয়া শাসন করেছে। কাফেররা সর্বদা মুসলমানদের ভয়ে তটস্থ থাকত। মুসলমানরা সবসময় কাফেরদের দেশে গিয়ে আক্রমণ করত। তারা কাফেরদের কাছে প্রথমে বার্তা পাঠাত যে, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো অথবা জিজিয়া দাও। যদি কাফেররা অস্বীকার করত, তাহলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। মুসলমানরা সংখ্যায় কম থাকা সত্ত্বেও তারা ঈমানের শক্তিতে জয়লাভ করত। আর যদি কাফেররা মুসলমানদের জিজিয়া দিত, তাহলে তাদেরকে নিজ দেশে শান্তিতে বসবাস করতে দেওয়া হত। জিজিয়া হল একটি অপমানজনক কর, আর এটা যুদ্ধ করে অর্জন করে নিতে হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

    قاتلوا الذين لا يؤمنون بالله ولا باليوم الاخر
    ولا يحرمون ما حرم الله ورسوله ولا يدينون دين الحق من الذين اوتوا الكتاب حتى يعطوا الجزيه عن يد وهم صاغرون.

    অর্থঃ তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না। (তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর) যতক্ষণ পর্যন্ত তারা করজোড়ে জিজিয়া প্রদান করে। (সূরা তাওবা-২৯)
    মুসলমানদের সামনে তাদের একেবারে অপদস্থ হয়ে জিজিয়া দিতে হত।মুসলমানরা তাদেরকে শাসন করত। ওমর রাজিয়াল্লাহু আনহু আইন করে দিয়েছিলেন যে, রাস্তায় যদি মুসলমান ও খ্রিস্টান একসাথে চলে, তাহলে মুসলমান চলবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে আর খ্রিস্টান এক পাশে সরে যাবে। খ্রিস্টান যদি ঘোড়সওয়ার থাকে, তাহলে মুসলমানের সামনে এলে ঘোড়া থেকে নেমে যেতে হবে।
    মুসলমানরা তখন অত্যন্ত আত্মমর্যাদাশীল ছিল। এজন্য এক উসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার প্রতিশোধ স্বরূপ ১৪০০ সাহাবী ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সাথে মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ করার শপথ নিয়েছিলেন। কি পরিমাণে আত্মমর্যাদাবোধ ছিল মুসলমানদের! এক উসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুর জন্য স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের গলা কাটতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। অথচ উসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করা হয় নি। গুজব ছড়ানো হয়েছিল মাত্র। রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের মৃত্যুর বাইয়াতের খবর পেয়ে কাফেররা ভয় পেয়ে গেল। যার কারণে তারা উসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুকে ছেড়ে দিল।
    মুতার যুদ্ধের ঘটনা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাসসানের শাসকের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে এক দূত পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সে ইসলাম তো কবুল করলই না, বরং দূতকে হত্যা করে ফেলল। দূত হত্যা প্রত্যেক যুগেই জঘন্য অপরাধ ছিল। এই অপরাধ কেউ ক্ষমা করত না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। অথচ তাঁর কাছে সেই পরিমাণ সৈন্য ছিল না। তবুও আল্লাহর রাসুল কোন ভয় করলেন না। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
    فلا تخشوهم واخشوني.
    অর্থঃ তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর। (সুরা মায়েদা-৩)
    অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
    أ تخشونهم، فالله احق ان تخشوه ان كنتم مؤمنين.
    অর্থঃ তোমরা কি তাদের ভয় করো? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিক যোগ্য হলেন আল্লাহ-যদি তোমরা মুমিন হও।
    এর পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
    قاتلوهم يعذبهم الله بايديكم ويخزهم وينصركم عليهم ويشف صدور قوم مؤمنين. ويذهب غيظ قلوبهم،
    অর্থঃ যুদ্ধ করো ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দিবেন। তাদের লাঞ্চিত করবেন। তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমুহ শান্ত করবেন। এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। (সূরা তাওবা-১৪, ১৫)
    এখানে লক্ষ করার বিষয়, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- তোমরা যুদ্ধ করো, শাস্তি দিবেন আল্লাহ, তোমাদের হাত দ্বারা। তাদেরকে করবেন লাঞ্চিত, তোমাদের করবেন জয়ী। এভাবে তিনি মুসলমানদের অন্তরসমুহ শান্ত করবেন। এবং মনের ক্ষোভ দূর করবেন। কারণ কাফেরদের অত্যাচারের কারণে মুমিনরা কষ্ট পেয়েছে। তাদের অন্তরে ক্ষোভ জমেছে। তাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। মন ভারাক্রান্ত হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন। আর কাফেরদের আজাব দেওয়ার পতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে আজাব দিবেন তোমাদের হাতে। নিজ কুদরতে শাস্তি তিনি দুনিয়াতে দিবেন না। এর জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট।
    যাইহোক আমি এখানে মুতার যুদ্ধের আলোচনা করছিলাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী প্রস্তুত করলেন। এই বাহিনীর সেনাপতি বানালেন জায়েদ বিন হারেসা রাজিয়াল্লাহু আনহুকে। এবং বললেন- জায়েদ শহিদ হয়ে গেলে জাফর হবে সেনাপতি। জাফর শহিদ হয়ে গেলে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা। সেও যদি শহিদ হয়ে যায়, তাহলে মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে কাউকে আমির বানিয়ে নিবে।
    এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাহিনিকে রওয়ানা করিয়ে দিলেন। যদিও এই বাহিনীটি ছোট ছিল। তবুও তারা বেরিয়ে পড়তে বিন্দু মাত্র ইতস্তত করলেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন-
    انفروا خفافا وثقالا وجاهدوا باموالكم وانفسكم في سبيل الله.
    অর্থঃ তোমরা বেরিয়ে পড় হালকা অবস্থায় অথবা ভারী অবস্থায় এবং আল্লাহর রাস্তায় জানমাল দিয়ে জিহাদ করো। (সূরা তাওবা-৪১)
    এই বাহিনী যখন মুতা প্রান্তরে পৌঁছল, তখন তারা দেখতে পেলেন যে, শত্রুবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা দুই লাখ। দেখে মনে হচ্ছিল মুসলমানদের এই বাহিনীটি যেন আত্মহত্যা করতে এসেছে। কাফেররা মনে করছিল, তাদের এক ফুঁতেই মুসলমানরা উড়ে যাবে। কিন্তু তারা তো মুসলমানদের বাহ্যিক দিকটিই দেখেছে, ভিতরটা তো দেখে নি। তো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। জায়েদ বিন হারেসা রাজিয়াল্লাহু আনহু এক হাতে ঝাণ্ডা নিয়ে কাফেরদের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন। তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। যুদ্ধ করতে করতে জায়েদ রাজিয়াল্লাহু আনহু শহিদ হয়ে গেলেন। জাফর বিন আবি তালিব রাজিয়াল্লাহু আনহু ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে নিলেন। জাফর রাজিয়াল্লাহু আনহু ঘোড়া থেকে নেমে গেলেন। তারপর তিনি ঝাণ্ডা নিয়ে এগিয়ে গেলেন। যুদ্ধ করতে করতে কাফেরের তলোয়ারের আঘাতে তাঁর ঝাণ্ডা ধরা হাতটি কেটে গেল। সাথে সাথে তিনি ঝাণ্ডাটি অপর হাতে নিয়ে নিলেন। কাফের এবার তাঁর এই হাতটিও কেটে ফেলল। তিনি দুইবাহু দিয়ে ঝাণ্ডা আঁকড়ে ধরলেন। কাফেররা তাঁর উপর আক্রমণ করতেই থাকল। তাঁর শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেল। তিনিও শহিদ হয়ে গেল।
    আব্দুল্লাহ বি রাওয়াহা রাজিয়াল্লাহু আনহু ঝাণ্ডা হাতে নিলেন। তিনি তখন একটি হাড্ডি চুষছিলেন। তিনি তা ফেলে দিয়ে বীরবিক্রমে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়লেন। যুদ্ধ করতে করতে তিনিও শহিদ হয়ে গেলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রাজিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের পর মুসলমানরা খালেদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহুকে আমির বানাল। আল্লাহ তায়ালা খালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহুকে অনেক যুদ্ধ কৌশল দান করেছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহনের আগেও যেমন বীর ছিলেন, তেমনি ইসলাম গ্রহনের পরেও ছিলেন। খালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহু এই যুদ্ধে রোমকদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে তাঁর হাতে নয়খানা তলোয়ার ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাঁর উপাধি ছিল সাইফুল্লাহু অর্থাৎ আল্লাহর তরবারি।
    এই ঘটনায় আমরা দেখতে পেলাম যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মুসলমানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে রোমকবাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। অথচ তৎকালীন সময়ে রোম সাম্রাজ্য ছিল পরাশক্তি। আজ আমেরিকাকে যেমন সবাই ভয় করে, তেমনিভাবে ঐ জামানায় রোমকে ভয় করত। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম হেকমত আর মাসলাহাতের দোহাই দিয়ে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকেন নি।
    যাইহোক, আমি আবার পূর্বের কথায় ফিরে যাই। মুসলমানরা তো তখন সারা দুনিয়াকে শাসন করত। কিন্তু এখন তারা কেন এত অপদস্থ? কেন লাঞ্চিত? কেন নির্যাতিত, নিপীড়িত? এখন কি মুসলমান সংখ্যায় কম? না, মুসলমানরা এখন সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা হাদিস থেকে নিব-
    عن ثوبان رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يوشك ان تداعى عليكم الامم من كل أفق كما تداعى الاكلة الى قصعتها. قيل يا رسول الله: فمن قلة يومئذ؟ قال: لا، ولكنكم غثاء كغثاء السيل يجعل الوهن في قلوبكم وينزع الرعب من قلوب عدوكم لحبكم الدنيا وكراهيتكم الموت.
    অর্থঃ হজরত সাওবান রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এমন একটি সময় আসবে যখন (অমুসলিম) জাতিসমহ একে অপরকে প্রতিটি অঞ্চল থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে খাবার ভর্তি পাত্রের দিকে (ক্ষুধার্ত ব্যক্তিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং) একে অপরকে (সেই আহার গ্রহনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য) আহ্বান করে। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ , এটা কি এজন্য হবে যে, আমরা তখন সংখ্যায় কম হব? তিনি বললেন, না, (তোমরা সংখ্যায় তখন অনেক থাকবে কিন্তু) তোমরা হবে বন্যার পানির ওপর ভেসে যাওয়া ময়লার মত। আল্লাহ তোমাদের অন্তরের মধ্যে “ওয়াহন” ঢুকিয়ে দিবেন এবং তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রভাব ও ভয়কে উঠিয়ে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! “ওয়াহন” কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা আর (আল্লাহর পথে) মৃত্যুকে ঘৃণা করা”।
    এই হাদিস দ্বারা বুঝা গেল যে, আমাদের এই অপদস্থতার কারণ হল দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা আর মৃত্যুকে ঘৃণা করা। আমরা যদি আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব আমাদের মধ্যে কি পরিমাণ দুনিয়ার ভালবাসা। দুনিয়া আমাদের শিরা উপশিরায় ঢুকে পড়েছে। যে দুনিয়াকে আল্লাহ তায়ালা ধোঁকা বলেছেন, সে দুনিয়ার পিছনে আমরা অবিচলভাবে লেগে রয়েছি। দুনিয়া কামাই করার জন্য জিবনকে তিলে তিলে ক্ষয় করে ফেলছি। আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, দুনিয়াই যেন সব। দুনিয়াই আমাদের মহব্বতের বস্তু। দুনিয়াকেই আমরা আমাদের মাহবুব বানিয়ে ফেলেছি। কিন্তু সেই মাহবুবে হাকিকির সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ আমাদের কয়জনের মধ্যে আছে? কাউকে যদি বলা হয়, তুমি এই আমলটা করো, তাহলে তুমি হাকিকি মাহবুবের দিদার লাভে ধন্য হবে, তখন আমাদের মধ্যে কয়জনকে এ ব্যাপারে আগ্রহি পাওয়া যাবে? পক্ষান্তরে কাউকে যদি দুনিয়ার কোন লাভবান ব্যবসার কথা বলে দেওয়া হয়, তাহলে অনেকেই এটার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাহলে এটি দুনিয়ার মুহাব্বত ও এর প্রতি ঈমান নয়ত কি?
    عن ابي موسى الاشعري رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من احب دنياه اضر باخرته. ومن احب اخرته اضر بدنياه فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى
    অর্থঃ আবু মুসা আশআরি রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- যে নিজের দুনিয়াকে মুহব্বত করল, সে নিজের আখিরাতকে ক্ষতি করল। আর যে নিজের আখিরাতকে মুহব্বত করল সে নিজের দুনিয়ার ক্ষতি করল। সুতরাং তোমরা লয়শীল বিষয়ের উপর চিরস্থায়ি বিষয়কে প্রাধান্য দাও।
    عن رافع بن خديج رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أحبَّ اللهُ عزَّ وجلَّ عبدًا حماه الدُّنيا كما يَظلُّ أحدُكم يحمي سقيمَه الماءَ
    অর্থঃ রাফে বিন খাদিজ রাজিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত , তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন, তখন তাকে দুনিয়া থেকে এমনভাবে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমরা রোগীকে পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখো।
    আগুন এবং পানি যেমন একসাথে থাকতে পারে না তেমনিভাবে মুমিনের অন্তরে দুনিয়া ও আখিরাত একসাথে হতে পারে না। যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতকে একসাথে অর্জন করতে চায়,তার উদাহরণ ঐ গোলামের মতো, যার দুজন মালিক রয়েছে, সে যখন একজনকে সন্তুষ্ট করল,তখন অপরজন অসন্তুষ্ট হয়ে গেল। সে জানল না কাকে সন্তুষ্ট করল কাকে অসন্তুষ্ট করলো। যে দুনিয়ার প্রতি মুহাব্বাত করল তার থেকে আখিরাতের ভয় চলে গেল । যে ইলমের পথে উন্নতি করল,সাথে সাথে দুনিয়ার প্রতিও মুহব্বত বৃদ্ধি পেল,সে আল্লাহর কাছে সব চেয়ে বেশী ঘৃণিত। সে আল্লাহ থেকে আরো দূরে সরে গেল।
    সালফে সালেহিনের একজন বলেন-
    وما هي إلا جيفة مستحيلةعليها كلاب همهن اجتذابهافإن تجتنبها كنت سلمًا لأهلهاوإن تجتذبها نازعتك كلابها.
    অর্থওঃ এই দুনিয়া কি? একটি পচা গলা দুর্গন্ধযুক্ত লাশ যার উপর কুকুর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যদি আপনি তা থেকে দূরে থাকেন , তাহলে আপনি নিরাপদ। আর যদি আপনি এই কামড়াকামড়িতে শরিক হন,তাহলে একে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত কুকুরগুলো আপনাকে নিয়ে লড়াই করবে।

    সাহাবায়ে ক্যারাম কেমন ছিলেন?তারা সবসময় আখিরাতকে দুনিয়ার উপর প্রাধান্য দিতেন। এই আশংকায় থাকতেন যে , না জানি আখিরাতের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়।
    একবার আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহু পানি পান করতে চাইলেন। কেউ একজন তাকে মধু মিশ্রিত পানি এনে দিল । তিনি যখন পানির পেয়ালা মুখের কাছে নিলেন, তখন কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি এত অধিক কাঁদলেন যে, তার কান্না দেখে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও কাঁদতে লাগলেন। দ্বিতীয়বার যখন পানির পেয়ালা মুখের কাছে নিলেন , তখন আবার কাঁদতে শুরু করলেন। অন্যরাও কাঁদতে লাগলেন। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুলের খলিফা! কোন কথা আপনাকে কাঁদাল? তিনি বললেন- একবার আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম,তিনি নিজের কাছ থেকে কোন জিনিসকে সরাচ্ছেন। অথচ তার কাছে কোন জিনিস দেখলাম না। সুতরাং আমি জিজ্ঞাসা করলাম ,হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কণ জিনিসকে দূরে সরালেন? তিনি বললেন- এটি দুনিয়া ছিল। যা আমার সামনে এসেছিল। আমি তাকে বললাম , যাও, আমার থেকে দূরে সরে যাও । তখন সে পুনরায় ফিরে এল এবং বলতে লাগল, নিশ্চয়ই আপনি তো আমার থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু আপনার পরবর্তীরা আমার থেকে বাচতে পারবে না।
    যা আখিরাতের চিন্তা থেকে মানুষকে গাফেল করে দেয় , তা হল দুনিয়ার মুহব্বত। আজ দুনিয়ার মুহব্বত আমাদের অন্তরে বাসা বেধে আছে। যার কারণে আজ দেড়শ কোটি মুসলমান সমুদ্রের ফেনার মত হয়ে গেছে। অথচ আমাদের উচিত ছিল যে , দুনিয়ার প্রতি অনীহা জন্মানো। । লয়শীল জীবনের উপর চিরস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দেওয়াটাই আমাদের কাম্য। এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
    যদি আল্লাহ হালাল রিযিকের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করে থাকেন, তাহলে ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের দিকে লক্ষ করুন যাদেরকে আল্লাহ মাল দৌলত দিয়েছিলেন। তারা কিভাবে দুনিয়ার পরিবর্তে আখেরাতের চিন্তায় বিভোর ছিলেন। আমাদের অনেকে এই সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের উদাহরণ দিয়ে বলে যে, তাদের অনেক মাল দৌলত ছিল। অথচ আমাদের অবস্থা তাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা সম্পদ পেয়ে তা বিলাসিতায় ব্যয় করি। কিন্তু অঢেল ধন সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তারা কখনো আখেরাত থেকে গাফেল হননি। আখেরাতের ভয় তাদের অন্তরে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। তারা তাদের সম্পদ নিজেদের আরাম-আয়েসের জন্য খরচ করতেন না। বরং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতেন। মানুষের কল্যাণে, উম্মাহর স্বার্থে ব্যয় করতেন। এজন্য দেখা যায় তাবুকের যুদ্ধের সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সমস্ত সম্পদ এনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এমনকি তিনি তার বেড়ায় হাত দিয়ে খুঁজছিলেন না জানি কোন সূচ সেখানে রয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন আপনি আপনার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছেন? তিনি বললেন তাদের জন্য আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি।
    ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর অর্ধেক সম্পদ নিয়ে এসেছিলেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বাহিনীর এক তৃতীয়াংশের ব্যয়ভার বহন করেছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে মদিনায় একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাণিজ্য কাফেলার সমস্ত সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিলেন।
    এরকম আরো অসংখ্য ঘটনা আছে। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পদ অর্জন করতেন। কিন্তু তারা তা দুনিয়ার জন্য খরচ করতেন না। এর দ্বারা তারা আখেরাতকে উজ্জ্বল করতেন। অথচ আমাদের অবস্থা....
    এখন আমাদের পরাজয়ের দ্বিতীয় কারণ আল্লাহর পথে মৃত্যুকে ঘৃণা করা সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা আল্লাহর পথে গমন করতে ভয় করি। মনে করি, আল্লাহর পথে গেলেই মারা যাবো। আর পেছনে বসে থাকলে বেশি দিন বেঁচে থাকব। অথচ আল্লাহ বলেন:
    اينما تكونوا يدرككم الموت ولو كنتم في بروج مشيدة.
    অর্থ: তোমায় যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান করো, তবুও। সুরা নিসা- ৭৮।
    সুতরাং যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু অবশ্যই আসবে। আর যখন আসবে তখন বিন্দুমাত্র আগেও হবেনা, পরেও হবে না। চাই সে যুদ্ধে গমন করুক অথবা না করুক। আর যুদ্ধে গেলেই যে সেখানে সে মৃত্যু লাভ করতে পারবে এমন ধারণা করা নিতান্তই ভুল। এমন অনেক মুজাহিদের ঘটনা আছে তারা বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এর স্পষ্ট উদাহরণ খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি জীবনে অসংখ্য যুদ্ধ করেছেন। রোম পারস্যের বিরুদ্ধে অনেকগুলো যুদ্ধে তিনি মুসলিম বাহিনীর সেনানায়ক ছিলেন। তার শরীরে এমন কোন জায়গা ছিল না যেখানে তীর তলোয়ার বর্শার আঘাতে জখম হয়নি। কিন্তু তিনি বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি বলেছিলেন আমি নিজেকে মৃত্যুর মাঝে ছুড়ে ফেলতাম কিন্তু মৃত্যু আমাকে ছুঁড়ে ফেলত। আমি কতবার মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু মৃত্যু আমাকে গ্রহণ করেনি। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল ওই রাত, যে রাতে আমি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে অপেক্ষায় আছি। কখন সকাল হবে আর আমি শত্রুর উপর আক্রমণ করব। আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমার ঘোড়া ও যুদ্ধাস্ত্র জিহাদের জন্য দান করে দিবে।
    যারা মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে জিহাদ থেকে দূরে সরে থাকে তাদের উচিত, খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া।
    كل نفس ذائقه الموت.
    অর্থ: প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।
    মৃত্যু তো একদিন আসবেই। আল্লাহর পথে জিহাদের ময়দানে গেলেও মৃত্যু হবে। পেছনে বসে থাকলেও মৃত্যু আসতে বিলম্ব করবে না। কিন্তু এই মৃত্যু তো মানুষকে মুর্দা করে দেয়। অথচ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বন্ধ করার জন্য যে যুদ্ধ করে শহীদ হলো, সে কখনো মরে না। তাকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
    ولا تقولوا لمن يقتل في سبيل الله أموات، بل احياء ولكن لا تشعرون.
    অর্থ: যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পারো না।
    তাদেরকে মৃত বলা যাবেনা, এতোটুকু নয়। বরং ধারণা করতে পর্যন্ত নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনের আরেক জায়গায় এসেছে-
    ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا، بل احياء عند ربهم يرزقون.
    অর্থ: আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না। বরং তারা জীবিত তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট রিজিক দান করা হয়।
    মৃতদের তো রিজিকের প্রয়োজন নেই। জীবিতদের রিজিকের প্রয়োজন হয়। শহীদরা যেহেতু জীবিত, সেহেতু তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট রিজিক দেওয়া হয়।
    শহীদের জন্য আল্লাহ তাআলা সাতটি পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন।
    1। শহীদের রক্তের প্রথম ফোটা জমিনে পড়ার পূর্বে সে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। জান্নাতে তার অবস্থানস্থল দেখিয়ে দেওয়া হয়।
    2। শহিদকে ঈমানের পোশাকে আবৃত রাখা হবে।
    3। কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
    4। কেয়ামতের দিন ভয়ঙ্কর প্রলয় থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
    5। শহীদের মাথায় মর্যাদার তাজ পরিয়ে দেয়া হবে যার একটা ইয়াকুত এর মূল্য দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু রয়েছে তার চেয়ে উত্তম।
    6। উত্তম হুরদের সাথে তাকে বিবাহ প্রদান করা হবে।
    7। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে হতে 70 জনের ব্যাপারে শহীদের সুপারিশ কবুল করা হবে।
    শহীদদের এত ফজিলত থাকা সত্ত্বেও আজ আমরা এই সম্মানজনক মৃত্যু থেকে দূরে রয়েছি। এজন্যই আমরা আজ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে মার খাচ্ছি। যখন থেকে আমরা মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে সামনে এগিয়ে চলবো, তখন আবার আমাদের নিকট আমাদের হারানো সম্মান ফিরে আসবে।
    প্রখ্যাত মুসলিম সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম বাহেলী। তিনি সমরকন্দ বুখারা জয় করে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। হয়তো তিনি চীনও জয় করে ফেলতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয়ে ওঠেনি। তাঁকে এক শত্রু জিজ্ঞাসা করেছিল- আমরা সংখ্যায় আপনাদের চেয়ে এত অধিক হওয়া সত্ত্বেও কেন আপনাদের কে পরাজিত করতে পারিনা? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এর কারন হল আমরা মৃত্যুকে জয় করেছি। (অর্থাৎ আমরা মৃত্যুকে ভয় করিনা)।
    মুসলিম উম্মাহর স্লোগান তো এমনই ছিল- তোমরা মদ ও নারীকে যতটা ভালোবাসো, আমরা মৃত্যুকে তার চেয়ে অধিক ভালোবাসি। আমরা আমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই। মৃত্যু ব্যতীত আমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করার কোন উপায় নেই।
    সুলতান ফতেহ আলী টিপুর এই উক্তিতো প্রসিদ্ধ- শিয়ালের মতো হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে সিংহের মতো একদিন বেঁচে থাকা উত্তম।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
    اذا تبايعتم بالعينه واخذتم اذناب البقر ورضيتم بالزرع وتركتم الجهاد سلط الله عليكم ذلا لا ينزعه حتى ترجعوا الى دينكم اي الى جهادكم.
    অর্থ: যখন তোমরা 'ঈনা' নামক সুদী কারবারে লিপ্ত হয়ে পড়বে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে। চাষাবাস নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে পড়বে। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকে পরিত্যাগ করবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন। এবং তা তিনি তুলে নিবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা দ্বীনের পথে ফিরে আসবে।

    রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
    جعل رزقي تحت ظل رمحي.
    আমার রিজিক বর্ষার ছায়া তলে রাখা হয়েছে।
    বর্ষার ছায়ার নিচে রিজিক রাখা এর অর্থ কি? এর অর্থ হলো জিহাদের মাধ্যমে গনিমত, জিজিয়া, ফাই, খেরাজ অর্জন হবে। এর দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করা। এটা বাদ দিয়ে ক্ষেত-খামার, রাখালী, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাঝে পুরোপুরি ডুবে গেলে চলবে না।
    ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জামানায় মুসলমানরা শাম বিজয় করেছিল। জর্ডানের ভূমিগুলো ছিল উর্বর। ফসল খুব ভালো হতো। ফসলের গাছ এত উঁচু হতো যে, পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে দেখা যেত না। তখন কিছু মুসলমান ক্ষেত-খামার করা শুরু করে দিল। কি খবর যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কানে গেল তখন তিনি ভীষণভাবে রেগে গেলেন। তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন, কখন ফসল পাকে। যখন ফসল পেকে গেল তখন তিনি সব জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।
    সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ এতে মনোক্ষুন্ন হলে তিনি বললেন- দেখো, ক্ষেত খামার করা ইহুদী-নাসারাদের কাজ। তোমাদের কাজ হল দিনের প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদে বেরিয়ে পড়া। চাষাবাদের দায়িত্ব ইহুদী-নাসারাদের হাতে ছেড়ে দাও। আর তোমরা আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য বেরিয়ে পড়ো। তারাই তোমাদেরকে চাষাবাদ করে খাওয়াবে। তারা জিজিয়া দিবে, খেরাজ দিবে তোমরা সেগুলো খাবে তোমরা কি দেখনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 'আমার রিজিক বর্শার ছায়াতলে আর যারা আমার বিরোধিতা করবে তাদের ভাগ্যে অপমান ও লাঞ্চনা অবধারিত।'
    তাহলে বুঝা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিজিক যদি গনিমতের মাধ্যমে আসে তাহলে এটাই সর্বোত্তম রিজিক। অবশ্যই তার ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ, গবাদি পশু পালন থেকে উত্তম হবে।
    ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ বলেন- সালাফদের একজনকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কেন নিজের স্ত্রী সন্তানদের জন্য খামার করেন না? উত্তরে তিনি বললেন: দেখো, আল্লাহ আমাদেরকে খামার বানাতে পাঠাননি। বরং খামারিদের কে হত্যা করে তাদের খামার ছিনিয়ে নিতে পাঠিয়েছেন।
    ইরাকের একজন মুজাহিদ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনাদের অর্থনৈতিক উৎস কি? তিনি বলেছিলেন, আমাদের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস হল, গনিমতের মাল। তবে মুসলমানরা যদি আমাদেরকে সাহায্য করে, তাহলে আমরা সাদরে গ্রহণ করি। তারা কখনো কারো নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করতেন না। গনিমতের অর্থ দিয়েই জিহাদের প্রয়োজন পূরণ করতেন।
    সুতরাং বুঝা গেল যে মুসলমানদের রিজিক বর্ষার ছায়াতলে। এটাই সবচেয়ে উত্তম রিযিক।
    কিন্তু আজ আমরা এই সম্মানিত রিজিক ছেড়ে বিভিন্ন দিকে ঝুঁকে পড়েছি।
    আজকাল অনেককে বলতে শোনা যায় যে, উম্মাহর এই দুরবস্থার কারণ হল জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, উৎপাদন ও শিল্প-কারখানা এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া।
    আবার অনেকে বলে, মুসলমানরা যদি (কাফিরদের ভাষায়) সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ (ইসলামের ভাষায় জিহাদ) থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখত, তাহলে এই দুরবস্থা হত না। অথচ তাদের কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লাঞ্ছনা থেকে মুক্তির উপায় হলো আল্লাহর দ্বীনের দিকে ফিরে আসা। আর দ্বীনের দিকে ফিরে আসার অর্থ হলো জিহাদের দিকে ফিরে আসা। কারণ কোন জিনিসটা ছেড়ে দেয়ার কারণে দিনের দিকে ফিরে আসার প্রয়োজন দেখা দিল, সেটা হলো জিহাদ।

  • #2
    মাশা আল্লাহ, অতি উপকারী পোস্ট। আল্লাহ কবুল করুন ও উত্তম জাযা দান করুন।

    মুহতারাম ভাই, পোস্ট আরো সাজানো গুছানো হলে ভাল হয়।
    যেমন-
    ১- আয়াত ও হাদীসের হারাকাতু যুক্ত করে দেওয়া।
    ২- বিশেষ জায়গাগুলো মার্ক/বোল্ড করে দেওয়া।
    ৩- যথা সম্ভব হাওয়ালা যুক্ত করে দেওয়া।
    ৪- লক্ষণীয় জায়গাাগুলো কালার করে দেওয়া।
    ৫- স্থানভেদে ফ্রন্ট সাইজ ছোট/বড় করা।
    ইত্যাদি।
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, অনেক মূল্যবান পোস্ট। আল্লাহ আপনার খেদমতকে কবুল করুন। আমীন
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X